মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -৩২+৩৩+৩৪

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৩২
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

সোহাদ রায়জাদা কিছু না বলে খাওয়া শুরু করে। সুপটা মুখে দিয়ে টেস্ট করতেই মুখ থেকে গরগর করে বেড়িয়ে যায়। দূড় থেকে তা দেখে রাইমা হেসে মুখ চেপে ধরে। সোহাদ রায়জাদা টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে চোখ, মুখের বারোটা বাজিয়ে বিরবির করে বলে
” এটা আবার কেমন টেস্ট ? এতো বাজে খেতে লাগছে কেনো ?”
সোহাদ রায়জাদা তার গার্ডকে দিয়ে সেই সার্ভেন্টকে ডাকায়। মিনিট দুই এক পর সেই সার্ভেন্ট এসে সোহাদ রায়জাদার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। সোহাদ রায়জাদা রাগিভাবে তাকিয়ে বলে
” এটা কি বানিয়েছো তোমরা ? এটার টেস্ট এরকম লাগছে কেনো ?”
সার্ভেন্ট ভয়ে ভয়ে বলে
” স্যার আমরা তো আমাদের দেওয়া চ্যাট লিস্ট থেকেই কিছু খাবার রেধে দিয়েছি। আমরা অনেক সেইফটি ভাবে রান্না করেছি খাবারে কোনো ঝামেলা হওয়ার উপায় নেই। কিছু মনে করবেন না। আপনি অসুস্থ হওয়ায়ই বোধয় খাবারের আসল টেস্ট পাচ্ছেন না।”
সোহাদ রায়জাদা কিছু বলতে গিয়েও বললো না। সার্ভেন্ট এর কথায় যুক্তি আছে। সোহাদ রায়জাদা গম্ভীর গলায় বলে
” ঠিকাছে যাও।” সার্ভেন্টটা দৌড়ে চলে যায় বাড়িতে। সোহাদ রায়জাদা আবারও খাওয়া শুরু করে। এক চামচ মুখে দিলেই ভেতরের সব কিছু বেড়িয়ে আসতে চায় কিন্তু সোহাদ রায়জাদা কোনো রকমে গিলতে থাকে। অর্ধেক খাওয়ার পর আর খেতে পারলো না। মিল্কশেক এর গ্লাসে চুমুক দেয়। অনেক খানি মিল্কশেক খেয়ে তার মুখের রঙ পাল্টে গেলো। তার কান দিয়ে ধোয়া বের হতে থাকে। মনে হচ্ছে মিল্কশেকে মরিচের গুড়ো দিয়ে ঠেসে দিয়েছে। সোহাদ রায়জাদা মিল্কশেক গিলে সাথে সাথে একটা মিষ্টি ঢুকিয়ে দিলো মুখে কিন্তু তাতেও শান্তি পেলো না। তিতার সাগর বইয়ে দিয়েছে মিষ্টিতে এরকম একটা টেস্ট পেলো। সোহাদ রায়জাদা সাথে সাথে বমি করে দিলো। বমি করতে করতে চেয়ার থেকে নিচে বসে পরে। তার দুই গার্ড দেখে সাথে সাথে অস্থির হয়ে পরে। তাকে কোনো রকমে উঠিয়ে আধমরা মানুষের মতো বাড়িতে নিয়ে যেতে থাকে।
আড়ালে দাঁড়িয়ে রাইমা আর রায়হান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রাইমা রায়হানকে নিয়ে আসে এন্টারটেইনমেন্ট দেখার জন্য। রায়হান হাসতে হাসতে পেট ধরে নিচে বসে পরে। গলা ফাটিয়ে হাসতে হাসতে বলে
” কি করেছো তুমি খাবারের সাথে ? কি অবস্থা হয়েছে বেচারার। ”
রাইমা হাসি চেপে ফিসফিস করে বললো
” মিল্কশেকে ৪ চামচ মরিচ দিয়েছি। চিকেন স্টু তে সয়াসস দিয়েছি ৭ চামচ আর লবণ দিয়েছি অনেক গুলো। আর মিষ্টিতে কি করেছি জানো ? হি হি হি… মিষ্টিকে তো আমি একটা নিউ রেসিপি বানিয়েছি। ফ্রিজ থেকে করোলা নিয়ে সেটাকে ব্লেন্ড করেছি তার পর সেটা চেপে চেপে রস আলাদা করে নিয়েছি। আর মিষ্টিগুলোকে চেপে চেপে সব মিষ্টি বের করেছি তারপর একটা পেনে করোলার সব রস ছেড়ে দিয়ে সেই মিষ্টি গুলো ছেড়ে দিয়েছি। তারপর সেগুলো উঠিয়ে দেখি কালারের কোনো চেঞ্জ হয়নি কিন্তু টেস্ট এতো বাজে !”
রায়হান, রাইমা আবারও জোড়ে জোড়ে হেসে দেয়। দুইজন হাসতে হাসতে তৃতীয় কোনো ব্যাক্তির হাসি শব্দ শুনতে পেলো। দুজন হাসতে হাসতে পেছনে তাকিয়ে দেখে মিশুও হাসছে।দুজন ভয় পেয়ে চুপ করে গেলো। মিশু জোড়ে জোড়ে হাসতে হাসতে বলে
” তোকে নোবেল দেওয়া উচিত। কিন্তু কিচেনে তো অনেক সার্ভেন্ট থাকে তাদের মাঝে তুই করেছিস কিভাবে এই কাজটা ?”
রাইমা হেসে বলে
” আরে আমি কি গাধা নাকি এতো বড় রিস্ক নিয়ে এই কাজটা করবো ? আমি সব জিনিস নিয়ে গেস্ট হাউজের কিচেনে চলে গিয়েছিলাম তারপর সব শেষ করে আবার সেগুলো নিয়ে এসেছি। সার্ভেন্টরা সবাই যখন গার্ডেনে এসেছিলো তখন সেখানে একজন ছিলো তবে আমি কথা বলতে বলতে খাবারের ট্রে চেঞ্জ করে দিয়েছি।”
তিনজন একসাথে হাসতে থাকে।
নিলা দূড় থেকে তিনজনকে এভাবে হাসতে দেখে উঠে আসে। তিনজনের কাছে এসে কোমড়ে হাত রেখে বলে
” তোরা এখানে দাঁড়িয়ে একা একা হাসছিস কেনো ?”
তিনজন কোনো রকমে হাসি থামিয়ে নেয়। রায়হান মিটমিট হাসতে হাসতে বলে
” আমরা এন্টারটেইনমেন্ট দেখছিলাম তাই এতো হাসছি।”
নিলা আগ্রহ নিয়ে বলে
” কি এন্টারটেইনমেন্ট ? আমিও দেখবো !”
মিশু গলা ঝেড়ে চোখ বড় বড় করে মাথা নেড়ে বলে
” না না তোমার দেখা লাগবে না তুমি অনেক বড় হয়ে গিয়েছো এসব বাচ্চাদের এন্টারটেইনমেন্ট তোমার দেখার বয়স নেই। চলো তো !”
মিশু নিলাকে ঠেলে ঠেলে নিয়ে আসে সবার মাঝে। রাইমা, রায়হানও এসে বসে।
কিছুক্ষণ পর সবার খাওয়া দাওয়া শুরু হয়। সবাই গরম গরম চিকেন গুলো ফু দিয়ে দিয়ে খাচ্ছে আর অভিদ ঠান্ডা করে করে রুহিকে খাইয়ে দিচ্ছে সেগুলো দেখে সবাই মিটমিট করে হাসছে। রুহি লজ্জায় ভালো ভাবে মুখও খুলতে পারছে না। অভিদ রুহিকে দেখে ঠোঁট চেপে হাসতে থাকে।
পার্টি শেষ হয় রাত ১০টার দিকে। সবাই সবার রুমে চলে যায়। সোহাদ রায়জাদার কথা কারোরই মনে নেই।
অভিদ রুমে এসেই বিছানায় বসে রুহিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে চুমু বসিয়ে দেয়। রুহি চোখ বন্ধ করে স্মিত হাসলো। অভিদ রুহির ঘাড়ে থুতনি রেখে ধীর গলায় বলে
” বাবুই পাখি ! তোমাকে আমি আরো কিছু সত্যি বলবো আমার ব্যাপারে। কথা গুলো শোনার পর তুমি ভয় পাবে না তো আমাকে ?”
রুহি হালকা ঘার ঘুরিয়ে অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” আরো কি সত্যি ? আর ভয় পাবো কেনো ? ভয় পাওয়ার মতো কাজ না করলে কেনো ভয় পাবো ?” অভিদ আলতো হেসে বলে
” কিছুটা সেরকমই। তুমি এসবে ভয় পাও তাই কথাটা বললে ভয় পেতে পারো আমি জানি।”
রুহি আগ্রহ নিয়ে বলে
” আচ্ছা তাহলে বলুন তো ! দেখি কি এমন বলবেন যে ভয় পাবো !”
অভিদ রুহির চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলে
” বলবো তবে এখন না। আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে তোমাকে। আমি আমার কাজটা ঠিক করে নেই তারপর।”
রুহি হতাশার নিশ্বাস ফেলে বলে
” এখন যখন বলবেন না তাহলে কথাটা তুলেছেন কেনো ? এখন তো আমার ঘুমই হবে না।”
অভিদ মুচকি হাসলো। হুট করে রুহিকে টেনে নিজের বুকের উপর ফেলে দিয়ে বলে
” আমি আছি কি করতে মিসেস বাবুই পাখি ! আমি তোমাকে ঘুম পারিয়ে দিচ্ছি।”
রুহি লজ্জামাখা হাসি দেয়। অভিদ লাইট অফ করে রুহিকে বুকের উপর জড়িয়ে ধরে রেখে হেলান দিয়ে শুয়ে থাকে। রুহি চুপটি করে মাথা রেখে বসে থাকে। অভিদ রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। অভিদ মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার রুহির চোখ ঘুমে টান টান হয়ে যায়। রুহি আস্তে আস্তে ঘুমিয়েও পরে। রুহি ঘুমিয়ে গিয়েছে বুঝেও অভিদ রুহিকে নিয়ে সেভাবেই ঘুমিয়ে পরে।

সকালে ঘুম থেকে উঠতেই অভিদ খবর পায় বাড়িতে ডক্টর এসেছে। রুহিকে নিজেই ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছে তাই নিশ্চিত হলো রুহির জন্য আসেনি অন্যকারোর জন্য এসেছে। খোঁজ নিয়ে দেখে সোহাদ রায়জাদার জন্য এসেছে। অভিদ সাথে সাথে তার রুমে চলে গেলো। এসেই দেখে সোহাদ রায়জাদার চেকাপ চলছে। ডক্টরের চেকাপ করা শেষ হতেই অভিদ ডক্টরকে উদ্দেশ্য করে বলে
” উনার কি হয়েছে ডক্টর ?”
ডক্টর উঠে দাঁড়িয়ে বলে
” উনার শরীর খুবই দুর্বল। ভোর রাতে ফোন দিয়েছিলো আমাকে। আমার Emergency operation থাকায় আসতে পারিনি। উনার খেয়াল রাখবেন। আর কিছু মেডিসিন প্রেসক্রাইপ করেছি সেগুলো খাওয়াবেন।” ডক্টর চলে যেতেই অভিদ বিরক্তি গলায় সোহাদ রায়জাদাকে উদ্দেশ্য করে বলে
” তুমি আমাকে একবারও জানাওনি কেনো ?”
সোহাদ রায়জাদা ভাঙা গলায় বলে
” আমি তো জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমরা রাতে সবাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরেছিলে তাই আর জানাতে পারিনি।”
অভিদ সোহাদ রায়জাদার পাশে কিছুক্ষণ দুঃখি দুঃখি ভাব করে বসে থাকে। ইমোশনাল কথাবার্তা বলে চলে আসে।
বাইরে এসেই দেখে রায়হান হাই তুলতে তুলতে লিভিং রুমের সোফায় এসে বসেছে। অভিদ গিয়ে রায়হানের মাথা গাট্টা মেরে বলে
” কালকে এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েও এখন হাই তুলছিস ?”
রায়হান আবারও হাই তুলতে তুলতে বলে
” তো আর কি করবো ? তুই আমাকে কালকে এতো কাজ দিলি সেগুলোই তো শেষ করতে গিয়ে রাত ৩ টায় ঘুমাতে হয়েছে।”
অভিদ চারদিক তাকিয়ে রায়হানের পাশে বসে বলে
” সব কাজ কি ডান ?”
রায়হান বাকা হেসে বলে
” হ্যা। অল ডান জাস্ট পাসওয়ার্ড টা প্রয়োজন। এখন পাসওয়ার্ড কিভাবে পাবি ?”
অভিদ ঠোঁটে বাকা হাসি ঝুলিয়ে বলে
” সেটা আমার বা হাতের কাজ। আজই জেনে নেবো তবে জানিস মিস্টার সিনিয়ার অসুস্থ হয়ে পরেছে।”
রায়হান রাতের কথা মনে করে মুখ ঘুরিয়ে হেসে বলে
” নাহ শুনবো কিভাবে মাত্রই তুই বললি। তুই তো বলিস যা হয় ভালোর জন্য এটাও ভালোর জন্যই হয়েছে চিন্তা করিস না।” অভিদ রাগি চোখে রায়হানের দিকে তাকালে রায়হান দাঁত কেলিয়ে হেসে ব্রেকফাস্ট করতে চলে যায়।
দুপুরে অভিদ আর রায়হান বেড়িয়ে গেলো তাদের মিশনে। সোহাদ রায়জাদা তো আধমরা হয়ে শুয়েই রয়েছে সকাল থেকে। তার গার্ডরা তার বসে বসে ঝিমোচ্ছে তাই অভিদ আর রায়হান শান্তি মনে তাদের কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে।
গোডাউনে এসে তৈরি হয়ে চলে যায় সোহাদ রায়জাদার স্বপ্নের সেই ধন সমেত অফিসে। সেখানে গিয়েই প্রথমে দুজন গার্ড দিয়ে সব সিসিটিভি কন্ট্রোল রুমে আক্রমন চালায়। অভিদের এক গার্ড গিয়ে অফিসের দারোয়ানকে বলে অফিসের পেছনের দিকে আগুন লেগেছে। দারোয়ান চেক করার জন্য কিছুটা সামনে এগিয়েই দেখে সেখান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে। দারোয়ান দৌড়ে অফিসের ভেতরে ঢুকে চেঁচিয়ে বলতে থাকে
” আগুন লেগেছে অফিসে বেরিয়ে যাও সবাই। আগুন লেগেছে, আগুন !!” গ্রাউন্ড ফ্লোর খালি হয়ে যেতেই দারোয়ানের খেয়াল হয় আরো বাকি ১৯ টা ফ্লোরে মানুষ রয়েছে। দারোয়ান উপায় না পেয়ে একটা মাইক্রোফোন যোগার করে সবাইকে বলে আগুন লেগেছ। আধ ঘন্টার মাঝে পুরো অফিস খালি হয়ে গেলো। ধোঁয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে দারোয়ান তা দেখে ফায়ার সার্ভিস অফিসে ইনফরম করে।
ধোঁয়ার মাঝে অভিদ আর রায়হান অফিসের ভেতরে ঢুকে যায়। এতো ধোঁয়ার মাঝে কেউ দেখলো না তাদের।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৩৩
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

ধোঁয়ার মাঝে অভিদ আর রায়হান অফিসের ভেতরে ঢুকে যায়। এতো ধোঁয়ার মাঝে কেউ দেখলো না তাদের। অভিদের লোকরা বিল্ডিং এর সামনের দিকে আগুন ধরিয়ে দিলো।
এদিকে অফিসের ২০ তলা ফ্লোরে উঠে সোহাদ রায়জাদার কেবিনে ঢুকে যায়। কেবিনের ভেতরে একটা দরজা দেখে যেটার পাসওয়ার্ড রয়েছে। অভিদ আর রায়হান এই কাজ করার আগেই হাতে গ্লাভস পরে নিয়েছিলো তাই কোনো প্রবলেম হয়নি তারা পাসওয়ার্ড দিয়ে সিক্রেট রুমে ঢুকে যায়। ভেতরে একটা লকার খুঁজে পায়। অভিদ তাড়াতাড়ি করে সেটার পাসওয়ার্ড দিয়ে চাবি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লকার খুলে ফেলে। ভেতরে দুইটা ফাইল ছিলো যেগুলো কে সোহাদ রায়জাদার প্রাণ ভোমরা বলা যায়। অভিদ দুইটা ফাইল নিয়ে সেই কেবিনের উইন্ডো সাইডে গিয়ে দাঁড়ায়।
ইতিমধ্যে অফিসে পুরো আগুন ছড়িয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে। অভিদের লোকেরা আগে থেকেই সব কিছু প্রস্তুত করে রেখেছিলো। অভিদরা সেখানের মোটা দড়ি ছিলো সেটা দিয়ে দুজন ধীরেধীরে নামতে থাকে। নিচে এসে রায়হান দড়িতেও আগুন ধরিয়ে দিলো।
অভিদ, রায়হান আর ওদের লোকরা সেখান থেকে চলে গেলো।
এদিকে অফিসে আগুন লাগার কথা সোহাদ রায়জাদার কাছে পৌঁছে গিয়েছে। তিনি খবর শুনেই হতবাক হয়ে গিয়েছে। গার্ডদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে বলে
” এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিস কি ? আমাকে নিয়ে চল সেখানে।” গার্ডরা ভয় পেয়ে জলদি করে সোহাদ রায়জাদাকে নিয়ে যেতে থাকে। সোহাদ রায়জাদা পাগলের মতো ছটফট করতে থাকে।
কৌশিকা রায়জাদা তাকে দেখে তাচ্ছিল্য হেসে বিরবির করে বলে
” আজ তোমাকে দেখে সত্যি প্রমাণ পেলাম তোমার লোভ তোমাকে উপরে উঠিয়েও আজ কতোটা নিচে নামিয়ে দিচ্ছে।”
অভিদ নিজেকে বদলে অফিসে এসে পরে। রায়হান হাসতে হাসতে বলে
” আজকে পাসওয়ার্ড গুলো জানতে না পারলে হয়তো কাজগুলোই সম্পূর্ণ হতো না। কিন্তু জেনেছিস কিভাবে এগুলো ?”
অভিদ বাকা হেসে বলে
” কেনো তুই জানিস না ? সোহাদ রায়জাদা কখনোই এসব পাসওয়ার্ড মনে রাখতে পারে না তাই তার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড থেকে ধরে সব ধরণের পাসওয়ার্ড একটা ছোট ডায়েরীতে লিখে রাখে।”
রায়হান মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বলে
” হ্যা সেটা তো আমিও জানি। ডায়েরীটা তো তার সাথেই থাকে অল টাইম। তুই হাতে পেলি কিভাবে ?”
অভিদ চেয়ারে বসে নিশ্বাস ফেলে বলে
” ঘুমিয়ে ছিলো তখন নিয়েছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে এই কাজটাই ছিলো আমার করা সব চেয়ে সহজ কাজ। এটা আমি না করে কোনো গার্ডকে দিয়ে করিয়ে নিলেই হলো। ”
রায়হান হেসে সামনের চেয়ারে বসে বলে
” তো এখন এখানে বসে বসে কি করবি। ওইদিকে তো সব কিছু অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।”
অভিদ এক ভ্রু উঁচু করে বলে
” আমরা কি এসবের কিছু জানি ? কিছুই জানি না। So, জাস্ট চিল। ফোন আসলেই জানতে পারবো আমরা। এখন কিছুই জানি না। চুপচাপ কাজ করতে থাক।”
রায়হান মাথা নেড়ে ল্যাপটপ খুলে বসে।
সোহাদ রায়জাদা সেখানে পৌঁছে দেখে বিল্ডিং এ এখনও আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে। সোহাদ রায়জাদা চেঁচিয়ে বলে
” কেউ ফায়ার সার্ভিসকে খবর দাও তাড়াতাড়ি।”
দারোয়ান এগিয়ে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলে
” স্যার আমি অনেক আগেই খবর দিয়েছি তাদের কিন্তু এখনও আসছে না তারা। আমাদের মাথা গোজার ঠাই পুড়ে যাচ্ছে আমরা কিভাবে থাকবো স্যার ?”
সোহাদ রায়জাদা তার বুকে ধাক্কা মারে দারোয়ান টান সামলাতে না পেরে মাটিতে পরে যায়। সোহাদ রায়জাদা রেগে বলে
” আমার স্বপ্নের অফিস পুরে যাচ্ছে আর তোরা আমার কানের সামনে এসে ঘ্যানঘ্যান করছিস ? নিজেদের কথা এতোই ভাবিস তাহলে অফিসটাকে আগুন ধরার হাত থেকে বাঁচালি না কেনো ?”
দারোয়ান মাটিতে বসেই কাঁদতে থাকে। তারমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসে পরে। সোহাদ রায়জাদা তার ফোন বের করে দ্রুত অভিদকে কল করে। অভিদ ফোন রিসিভ করতেই সোহাদ রায়জাদা অস্থির হয়ে বলে উঠে
” অভিস যতো দ্রুত সম্ভব এখানে চলে এসো। আমার অফিসে আগুন ধরে গিয়েছে। আমার সব শেষ হয়ে যাচ্ছে অভিদ তাড়াতাড়ি চলে এসো।”
অভিদ চেঁচানো স্বরে বলে
” হোয়াট ! চাচ্চু কি বলছো এসব? অফিসে আগুন ! কিভাবে সম্ভব ?”
সোহাদ রায়জাদা অস্থির ভাবে বলে
” জানি না আমি কিছু। জলদি চলে এসো তুমি।”
সোহাদ রায়জাদা ফোন কেটে দেয়। অভিদ আর রায়হান বেরিয়ে পরে এখানে আসার জন্য।
ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা তাদের মতো করে চেষ্টা করছে আগুম নেভানোর কিন্তু আগুন নিভলেও আগুন ধীরেধীরে উপরের দিকে উঠে বেরেই যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা তাদের কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। সোহাদ রায়জাদা একবার দৌড়োদৌড়ি করছে আবার ফায়ার সার্ভিসের লোকদের উপর চেঁচাচ্ছে।
অভিদ আর রায়হান গাড়ি থেকে নেমে অফিসের অবস্থা দেখে বাকা হাসি দিলো। দুজন সামনে যেতেই তাদের চোখ পরে দারোয়ানের দিকে। তিনি এখনও মাটিতে বসে কেঁদে চাচ্ছে। এখানে অফিসের সব লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে কেউ কেউ কাঁদছে কেউ কেউ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে। রায়হান গিয়ে দারোয়ানকে উঠিয়ে দাড়ঁ করিয়ে বলে
” কাঁদবেন না যা হবার তা তো হয়েই গিয়েছে।”
দারোয়ান কাঁদতে কাঁদতে বলে
” কেমনে কান্না থামামু হেডা কউ বাবাজান। আমার ঘরে একটা নাতি আছে। মা বাপ মইরা গেছে। আমার নাতিডা এহন না খাইয়া মরবো। এও দুরদশা দেখতে হইবো আমি ভাবতেও পারিনাই।”
রায়হান, অভিদ মলিন চেহারায় একে অপরের দিকে তাকালো। রায়হান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে
” আমি আর অভিদ আছি। আমরা আপনাদের সবার কিছু না কিছু একটা ব্যবস্থা করে দেবো। আপনারা আমাদের উপর বিশ্বাস করতে পারেন।শান্ত হয়ে বসুন আমরা এদিকটা দেখছি।”
দারোয়ান চুপচাপ কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে একটা জায়গায় বসে থাকে। অভিদ আর রায়হান সোহাদ রায়জাদার কাছে যায়। সোহাদ রায়জাদা তাদের পেয়ে এক জায়গায় বসে দুঃখের কান্না কাঁদতে থাকে। তা দেখে দুজনের মনে শান্তি বইতে থাকে।
আগুন নেভাতে নেভাতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। অফিসের অবস্থা দেখে সোহাদ রায়জাদার বুকে আবারও ব্যাথা উঠে গেলো। মিডিয়ার লোকেরাও অনেক আগে উপস্থিত হয়েছে। সবাইকে প্রশ্ন করছে কিভাবে আগুন লেগেছে। কেউ কিছু বলতে পারছে না। অভিদ, রায়হান সোহাদ রায়জাদাকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় আর কয়েকজন গার্ডকে সেখানেই রেখে যায়।
হসপিটালে চেকাপ করানোর পর ডক্টর আবারও সাবধান করে দেয় আর তার বেশি বেশি হাস খুশি রাখতে বলে। অভিদ আর রায়হান, সোহাদ রায়জাদাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
বাড়িতে এসেও টিভিতে একই নিউজ। সোহাদ রায়জাদাকে রুমে রেখে লিভিং রুমে এসে বড় একটা শ্বাস নিয়ে বসে দুই ভাই। রুহি মলিন স্বরে বলে
” কি থেকে কি হয়ে গেলো ! চাচ্চুর এতো কষ্টে তৈরি করা অফিসটা এক নিমিষেই আগুনে পুরে ছাই হয়ে গেলো। ”
অভিদ আড়চোখে রুহির দিকে তাকিয়ে বলে
” তোমাকে এতো বড় বড় কথা ভেবে মাথা ব্যাথা করতে হবে না। চুপ করে অনি,মিশু, নিলা, রাইমাদের কাছে গিয়ে বসে বসে গল্প করো। যাও, আর তোমালে বলেছিলাম না বারবার উপর নিচে আপ ডাউন করবে না ! যাও, জলদি উপরে যাও।”
রুহি মুখ ফুলিয়ে কোলে থাকা কুশনটা অভিদের পাশে ঝুরে মেরে রাগ দেখিয়ে উঠে চলে যায় উপরে। রায়হান ফিকফিক করে হেসে দেয়। কৌশিকা রায়জাদা চিন্তিত বলে
” ভাইয়ের কি খবর ? অফিস কিভাবে পুরলো ?”
অভিদ চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বাকা হেসে বিরবির গলায় বলে
” O.R.R মাফিয়া কিং পুড়িয়েছে। আমার প্রতিশোধের জাল তো ছড়িয়ে দিতে শুরু করে দিয়েছি।”
কৌশিকা রায়জাদা বিস্ময়ের গলায় বলে
” তুই ? তুই এসব করেছিস ? ”
অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” হ্যা আমিই করেছি। আমি আগেই বলেছি সোহাদ রায়জাদাকে আমি আমার প্রতিশোধের জালে পেঁচিয়ে মেরে ফেলবো।”
কৌশিকা রায়জাদা শান্ত গলায় বলে
” আমাকে একবার বলতে পারতে তাহলে আর এতো চিন্তা করতাম না। যাই হোক ভাইয়ের কি অবস্থা ?”
রায়হান ঠাট্টার স্বরে হেসে বলে
” তোমার ভাই লাঠির মতো ভেঙে বিছানায় গুড়ো হয়ে পরে আছে।”
তুষার বসে বসে ফোন টিপছিলো রায়হানের কথা কানে আসতেই চোখ বড় বড় করে বলে
” মানুষও লাঠির মতো ভেঙে গুড়ো হয়ে যায় ? ভাইয়া তোমাদের এতো শক্তি ? একটা মানুষকে লাঠি বানিয়ে ভেঙে ফেলেছো ?”
তুষারের কথায় তিনজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিকফিক করে হেসে দিলো। তুষার নিজের বোকা কথা বুঝতে পেরে লজ্জা পেয়ে গেলো।
রাত বারোটার দিকে সোহাদ রায়জাদার ফোনে কল আসে আননোন নাম্বার থেকে।
সোহাদ রায়জাদা কষ্ট করে ফোন হাতে নিয়ে নাম্বার দেখে রিসিভ করে ভাঙা গলায় বলে
” হ্যালো কে ?”
ফোনের অপরপাশ থেকে অপরিচিত একটা গলা ভেষে আসে।
” কেমন লাগলো মিস্টার অভিদ রায়জাদা ? নিজের স্বপ্নের অফিস চোখের সামনে পুরে যেতে দেখে নিশ্চই কষ্ট হয়েছে ? আমার এর থেকে হাজার গুন বেশি কষ্ট লেগেছিলো তোমার আসল রূপ দেখে। তোমার জন্য নিজের আপন মানুষদের হারিয়ে।”
সোহাদ রায়জাদা রাগে ফুসতে ফুসতে বলে
” কে তুই ? তুই আমার অফিসে আগুন ধরিয়েছিলি ? তোকে আমি ছাড়বো না। তোকে আমি নিজের হাতে মেরে ফেলবো। কে তুই ?”
অপরপাশ থেকে অট্টহাসির শব্দ ভেষে আসে। হাসতে হাসতে বলে
” আমাকে মারবি তুমি ? আমার মনে হচ্ছে আমি জোকস শুনছি। যাই হোক, আমাকে মারার প্ল্যান করতে থাকো ‘অল দ্যা বেস্ট’ আর আমি তোমাকে তিলে তিলে মারতি থাকি। দেখা যাক কার বেশি ক্ষমতা ! সোদার রায়জাদা জেতে নাকি O.R.R. মাফিয়া কিং জেতে।”
সোহাদ রায়জাদা বুকে হাত দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে
” O.R.R. তোকে আমি সামনে পেলে তো মেরেই ফেলবো অনেক হিসেব বাকি রয়েছে। লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ক্ষতি করছিস আরে সাহস থাকলে সামনে থেকে লড়াই করে দেখা !”
অভিদ হাসতে হাসতে বলে
” আমি তো সামনে থেকেই লড়াই করছি কিন্তু আফসোস তুই চিনতে পারছিস না। চিন্তা করিস না আর জাস্ট কয়েকটা দিন অপেক্ষা কর। আমি নিজেই তোর সামনে আসবো। তবে আমাকে চিনতে দেখে নিজেকে সামলে রাখতে পারবি তো ? তোকে মারার পর পুরো পৃথিবীর সামনে নিজের পরিচয় আনবো আমি। প্রস্তুতি নিতে থাক।”
সোহাদ রায়জাদা রেগে ফোনটা দেয়াল বরাবর ছুড়ে মারে। দামি ফোনটা নিমিষেই ভেঙে গুড়ো হয়ে গেলো।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৩৪
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

সোহাদ রায়জাদা রেগে ফোনটা দেয়াল বরাবর ছুড়ে মারে। দামি ফোনটা নিমিষেই ভেঙে গুড়ো হয়ে গেলো। সোহাদ রায়জাদা জোড়ে চেঁচিয়ে উঠে। বুকে ব্যাথা অনুভব হতেই বুকে হাত দিয়ে রাগে কাপঁতে থাকে। সোহাদ রায়হান রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বেডের পাশ টেবিল থেকে কাচের জগটা মাটিতে ফেলে দিলো।
এদিকে অভিদ আর রায়হান ল্যাপটপের সামনে বসে সোহাদ রায়জাদার রাগ দেখছে। জগটা ভেঙে ফেলায় রায়হান চোখ বড় বড় করে বলে
” অভি দেখ ! এই শালা আমার পছন্দের জগটা ভেঙে ফেললো।” অভিদ ফিকফিক করে হেসে দেয়। রায়হান দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” তুই হাসছিস কেনো ? তোকে ভেঙে দেবো এখন আমি। এই শালাকে যদি আমি নিজের হাতে না মারি তাহলে আমি নিজেও মরে শান্তি পাবো না।”
রায়হান রাগে ফুঁসতে থাকে। অভিদ হেসে রায়হানের কাধে হাত রেখে বলে
” সেসব তো করতেই হবে। এখন যা অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।”
রায়হান মাথা নেড়ে বলে
” ঠিকাছে তুইও চল। রুহি বোধয় ঘুম থেকে জেগে বসে আছে।” অভিদ জিভ কেটে বলে
” ইশশশ ওর কথা খেয়ালই ছিলো না। জেগে গেলে তো রুহি ভয় পাবে। চল তাড়াতাড়ি।”
অভিদ সব লাইট,ল্যাপটপ অফ করে সিক্রেট রুম থেকে বেড়িয়ে সেটা লক করে দেয়। তারপর স্টাডি রুম লক করে দুজন দুজনের রুমে চলে যায়। অভিদ বিড়ালের মতো কোনো শব্দ ছাড়া রুমে ঢোকে। বিছানায় বসে দেখে রুহি ঘুমাচ্ছে বেশি এদিক থেকে ওদিক ছটফট করছে বেশি। অভিদ ভয় পেয়ে রুহির কাছে এগিয়ে যায়। রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে চিন্তিত স্বরে বলে
” ছটফট করছো কেনো ? কোনো প্রবলেম হচ্ছে ? রুহি ডক্টরের কাছে যাবে?”
রুহি ঘুম ঘুম চোঝে অভিদের দিকে তাকায়। মাথা নেড়ে বলে
“নাহ কোনো প্রবলেম হয়নি। আমার খুধা পেয়েছে।”
অভিদ অবাক হয়ে বলে
“এতো রাতে খুধা পেয়েছে তোমার ?” রুহি উঠে বসে বাচ্চাদের মতো মাথা নেড়ে হ্যা বলে। অভিদ হতাশার সঙ্গে বলে
” এখন খাবার কোথায় পাবো? আচ্ছা রাতে কি খাবার খাওনি আজকে ?”
রুহি ঠোঁট উল্টে বলে
” খেয়েছি তো কিন্তু আজকে বেশি খুধা লাগছে। আচ্ছা আপনি কিছু রেঁধে আনুন না !” অভিদ অসহায় ভাবে তাকালো রুহির দিকে। রুহি মুখ ফুলিয়ে বলে
” ঠিকাছে ফ্রিজ থেকে একটা ড্রিংক্স এনেদিন সেটাই খেয়ে নিচ্ছি।” অভিদ ভেবে বলে
” আচ্ছা এখন নুডলস আর স্ট্রোবেরি শেক বানিয়ে দিলে খেতে পারবে তো ? নাকি আরো কিছু বানিয়ে দেবো ?”
রুহি মাথা নেড়ে বলে
” নাহ এতেই অনেক হয়ে যাবে আমার।”
অভিদ মুচকি হেসে বলে
” তাহলে চলো।” অভিদ রুহিকে নিয়ে নিচে কিচেনে এসে পড়ে। অভিদ নুডলস সিদ্ধর জন্য বসিয়ে ফ্রিজ থেকে স্ট্রোবেরি, মিল্ক বের করে স্ট্রোবেরি শেক বানাতে থাকে। রুহি অভিদের পাশে বসে ঘুমে ঢুলতে থাকে। অভিদ রুহিকে দেখে মিটমিট করে হাসে। কিছুক্ষণ পর অভিদ নুডলস, স্ট্রোবেরি শেক বানিয়ে আর কিছু ফ্রুটস কেটে রুহির সামনে রাখে । রুহি গালে হাত দিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছে। অভিদ নিঃশব্দে হাসতে হাসতে রুহির গালে নুডলস এর গরম বাটিটা লাগিয়ে দেয়। রুহি ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠে। অভিদ হেসে বলে
” ঘুম পেয়েছে তোমার?” রুহি মুখ ফুলিয়ে অভিদের হাত থেকে বাটিটা নিয়ে নেয়। গিয়ে টেবিলে বসে খেতে থাকে। অভিদ বাকি খাবার গুলো নিয়ে আসে। রুহি কয়েক চামচ খেয়ে অভিদের মুখের সামনে এক চামচ নুডলস ধরে। অভিদ মুচকি হেসে মুখে তুলে নেয়। রুহি একে একে সব খাবার শেষ করে ফ্রুট অর্ধেক খেয়ে টেবিলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নেয়। অভিদ অবাক হয়ে বলে
” এই মেয়ে ঘুমাচ্ছো কেনো ? বাকি খাবার শেষ করো।” রুহি হাই তুলে বলে
” আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। আপনি খেয়ে নিন বাকিটা।” অভিদ রুহির হাত টেনে উঠিয়ে বসায়। রুহি কাঁদোকাঁদো চেহারায় তাকাতেই অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” ফ্রুটস খাবে নাকি এখন বকা খাবে ? আমার বকা তো এখনও খাওনি। এবার কিন্তু কড়াকড়ি বকা দেবো !”
রুহি মুখ ফুলিয়ে বলে
” আপনি বলেছিলেন শুধু নুডলস আর স্ট্রোবেরি শেক দেবেন কিন্তু এতো ফ্রুট দেওয়ার কি দরকার ছিল ?” অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” কি দরকার ছিলো মানে ? ফ্রুটে কতো পুষ্টি, ভিটামিন থাকে জানো না ? বাচ্চা আর তোমার জন্য এটা খুবই প্রয়োজনীয় খাবার।”
রুহি মুখ কুঁচকে বলে
” আমার অনেক পুষ্টি হয়েছে আর লাগবে না। আপনিও তো সারাদিনে কম কাজ করেন না ! আপনারও তো পুষ্টির প্রয়োজন আপনি এগুলো খান।” অভিদ রেগে বলে
” রুহি ! পুরো খাবার শেষ করো নাহলে এখন মার দেবো।” রুহি চোখ বড় বড় করে বলে
” আপনি আমাকে মারবেন ? ফুপ্পিকে বলে দেবো আমি।”
অভিদ ভেঙিয়ে বলে
” ফুপ্পিকে বললে মনে হচ্ছে আর মার দেবো না ! কথা না শুনলেই মারবো। এবার এটা শেষ করো।”
রুহি বাকি খাবার খেতে নারাজ। রুহি সাহস করে একটা ফ্রুট স্লাইস নিয়ে অভিদের মুখে ভরে দেয়। অভদ রেগে তাকাতেই রুহি উঠে দৌড়ে উপরে চলে যায়। অভিদ সব কিছু কিচেনে রেখে উপরে চলে যায়। উপরে গিয়ে দেখে রুহি ইতিমধ্যে গভীর ঘুমে ভাসছে। এটা দেখে আর কিছু করা হলো না অভিদের। অভিদ রুহিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।

বেশ কয়েকদিন কেটে গেলো। সোহাদ রায়জাদা এখনও অসুস্থই। তার স্বপ্নের সেই অফিস এক নিমিষেই পুরে গিয়েছে তাতে একদম ভেঙে পড়েছে । অফিসে যেভাবে আগুন ধরেছিলো সেটা নিয়ে পুলিশরা অনেক খোজা খুঁজি করলো কিছু না পেলেও লকার থেকে ফাইল উধাও এসব নিয়ে সন্দেহ করেছে কেউ প্ল্যান করে আগুন ধরিয়েছে। সোহাদ রায়জাদা নিজেই জানতে পেরেছে কে আগুন ধরিয়েছে তাই পুলিশকে এসব করায় বাধা দিলো। তার মাথায় এখন শুধুমাত্র O.R.R. মাফিয়া কিং এর কথা ঘুরছে।
অভিদ, রায়হান নিজেদের অফিস আর নতুন কোনো প্ল্যান নিয়ে ব্যস্ত। অভিদ, সোহাদ রায়জাদাকে বলেছে তার অফিস আগের মতো করে দেওয়ার জন্য সবরকম সাহায্য করবে। সোহাদ রায়জাদাও প্রচণ্ড খুশি হয়েছিলো কিন্তু পুলিশ যখন বলেছে তার লকার থেকে সেই ফাইল চুড়ি হয়েছে তখনই সব আশা ভেঙে যায়।
সোহাদ রায়জাদা এবার ঠিক করেছে আবার অনৈতিক কাজ শুরু করবে। এখানে আসার জন্য সেগুলো বন্ধ রেখেছিলো আপাতত কিন্তু এখন আবার শুরু করবে।
অনিকে এখানকার ভার্সিটিতে ভর্তী করিয়ে দিয়েছে। তুষার ইউরোপেই তার কোর্স শেষ করে এখানে এসে পড়বে তাই তুষার কোনো কিছু করেনি। সিদ্দিকুর রহমান তার উপর মহলে এপ্লিকেশন করেছে ট্রানফারের জন্য। যদিও বাংলাদেশে ট্রান্সফার চাওয়ায় সেটা মঞ্জুর হতে অনেকটা সময় লেগে যাবে ততোদিনে তুষার তার কোর্স কম্পলিট করে নেবে বলেছে।
মিশুও তার ডিজাইনের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। নিলা কয়েকদিন আগেই বাড়িতে চলে গিয়েছে। সে তার অফিস নিয়েই ব্যস্ত। তুষার আর নিলার মাঝে অনেকটা গভীর সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। কিন্তু কেউ নিজেদের অনুভূতির কথাই জানে না। রাইমা এখনও এখানেই রয়েছে। রাইমা সোহাদ রায়জাদার সাথে আরো কিছু করার জন্য অপেক্ষা করছে। কৌশিকা রায়জাদা সারাদিন কোনো না কোনো কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে যায়।
রুহি অনলাইনে ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করছে। মিশুও রুহিকে প্রচুর হেল্প করে। ফ্রি টাইমে কিছু কোর্স নিয়েও ঘাটাঘাটি করছে।
প্রতিদিন অভিদ রুহির সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে তারপর অফিসে যায়। কিন্তু আজকে অভিদ, রায়হান সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট করেই অফিসে চলে গিয়েছে। আজকে অফিসে ইম্পরট্যান্ট মিটিং রয়েছে তাই।
আজকে সকাল থেকেই রুহির শরীর ভালো নেই বললেই চলে কিন্থ রুহি অভিদকে কিছু বলেনি। সকাল থেকে রুমেই বসে রয়েছে। কিছু না খেয়েও প্রতিদিনের তুলনায় আজকে বেশি বমি হচ্ছে আর মাথা ঘুরছে রুহির।
নিচে বসে সব মেয়েরা গল্প করছে। তুষার অভিদদের সাথে অফিসে চলে গিয়েছে অফিসে ঘুরবে বলে। কৌশিকা রায়জাদা অনেকগুলো বাচ্চাদের কাপড় হাতে নিয়ে দেখছে। এগুলো অভিদ, রায়হান, অনি, মিশি, রাইমা, তুষার মিলে কালকে শপিং করে এনেছে। কৌশিকা রায়জাদা সব দেখে নিশ্বাস ফেলে বলে
” এতো জামাকাপড় কেনার কি দরকার ছিলো ? বাচ্চা পৃথিবীর মুখ দেখতে এখনও অনেক সময় বাকি।”
অনি বিরক্তকর গলায় বলে
” উফফ মনি ! আমরা এতো শখ করে চ্যাম্প এর জন্য এতো কিছু কিনলাম আর তুমি এসব বলছো ?”
পেছন থেকে সোহাদ রায়জাদা বলে উঠে
” চ্যাম্প কে ?” সবাই তার দিকে তাকায়। কৌশিকা রায়জাদা হাতে ইশারায় অনিকে চুপ থাকতে বলে। অনি মুখ বন্ধ করে বসে থাকে। উত্তর না পেয়ে সোহাদ রায়জাদা ভারী স্বরে আবারও বলে উঠে
” কি হলো বলছো না কেনো ? কে এই চ্যাম্প ?”
রাইমা বলে উঠে
” চ্যাম্প হচ্ছে আমার বাড়িতে এক কুকুরের বাচ্চা
ছিলো তার নাম চ্যাম্প। তার জন্য কালকে আমরা এত্তো শপিং করেছি।”
সোহাদ রায়জাদা সব গুলো কাপরের দিকে তাকালো। এখানের সব গুলো বাচ্চা ছেলে আর মেয়ের কাপড়। সোহাদ রায়জাদা রেগে ধমল দিয়ে বলে
” এই তুমি মজা করছো আমার সাথে ? এগুলো যে বাচ্চা দের কাপড় সেটা আমি নিজেই দেখতে পাচ্ছি এগুলো তুমি কুকুরকে পড়াবে ? বোকা পেয়েছো আমাকে ?”
রাইমা ক্ষেপে বলে
” বোকা কেনো পাবো ? আপনি তো বোকাই। এগুলো কুকুরকে পড়ানো যাবে না কে বলেছে আপনাকে ? এগুলো তো আমি আপনাকেও পড়াতে পারবো। বিশ্বাস না হলে এখানে আসুন আমি পরিয়ে দেখাচ্ছে।” সবাই সশব্দে হেসে উঠে। সোহাদ রায়জাদা এক ধমক দিয়ে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে উপরে যেতে থাকে। অনি ভ্রু কুঁচকে বলে
” রাইমা তুমি আমার ভাইয়া আর ভাবির বাচ্চাকে কুকুরের বাচ্চা বললে ?”
রাইমা জিভ কেটে বলে
” সরি। আসলে আমাদের বাড়িতে সত্যিই একটা কুকুরের বাচ্চা ছিলো। আপুই ওটাকে পালতো। আপুর বিয়ের আগে মারা গিয়েছে বাচ্চাটা। এখন বুঝতে না দেওয়ার জন্যই আপুই এর বাচ্চাকে এসব বলতে হয়েছে। ক্ষমা করে দিও আল্লাহ !”
রাইমাদের চেষ্টা শেষ পর্যন্ত সফল হয় না। উপরে উঠতে উঠতে তাদের কথোপকথন সোহাদ রায়জাদা শুনতে পেয়ে গিয়েছে। উপরের সিরিতে দাঁড়িয়ে থাকায় কেউ দেখেনি তাকে। সোহাদ রায়জাদার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। অভিদ, রুহির সন্তান ! কথাটা ভাবতেই তার মাথা সব ফাকা হয়ে গেলো। তার মানে এই সন্তান হলেই তার সব প্রোপার্টি হাত ছাড়া। এতোদিনের সব কষ্ট সব জলে ভেসে যাবে ? এটা কিছুতেই হতে দেবে না। সিউর হওয়ার জন্য সোহাদ রায়জাদা দ্রুত পায়ে অভিদের রুমের দিকে চলে যায়।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here