মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -২৯+৩০+৩১

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ২৯
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

অভিদ এগিয়ে যেতে গিয়েও সোহাদ রায়জাদার চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছে দেখে বাকা হাসি দিয়ে বিরবির করে বলে
” এখন তো মাত্র শুরু ! আরো কতোবার হার্ট এট্যাক করাবো তা তো ভাবনারও বাইরে।”
অভিদ তার বডগার্ডদের যতো দ্রুত সম্ভব সোহাদ রায়জাদাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বলে। কিছুক্ষণের মধ্যে এম্বুলেন্স চলে আসে। সোহাদ রায়জাদাকে স্কেচে করে নিয়ে যায়। অভিদ , রায়হানও তাদের গাড়ি করে বেরিয়ে যায়। আর রুহি এখনও হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে একটা লোক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে কেনো বুঝে উঠতে পারছে না রুহি। মিশু রুহিকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এসে রুহির কাধ ধরে ঝাঁকিয়ে বলে
” কিরে মূর্তির মতো এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো ?” রুহি মুখ কালো করে বলে
” লোকটা আমাকে দেখে অজ্ঞান হয়ে গেলো কেনো ? আমি কি দেখতে খারাপ নাকি ?”
রুহির কথা শুনে সবাই ফিকফিক করে হেসে দিলো। অনি হাসতে হাসতে বলে
” আরে ভাবি তুমি বোঝেনি ? অতি শোকে পাথর হয়ে যাওয়া কথা শুনেছো না ? চাচ্চুরও তেমনই হয়েছে আর কি। অতিরিক্ত খুশিতে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। যাই হোক তুমি চিন্তা করো না। শয়তানরা এতো সহজে মরে না।”
শেষের কথাটা রেগে বিরবির করে বলে অনি। রুহি শুনতে পায় না কথাটা। রুহি মন খারাপ করে নিজের রুমে চলে গেলো। সবাই সবার রুমে গিয়ে বসে পরে। সোহাদ রায়জাদার কথা তাদের মাথায় নেই বললেই চলে। যে কোনো সময় কারো সাথে যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে কিন্তু সবাই এটা ভালো করেই জানে সোহাদ রায়জাদা এতো তাড়াতাড়ি মরবে না। তাই তাদের এতো চিন্তা নেই আর অভিদ, রায়হান তো রয়েছেই তাই মাথা খাটিয়ে লাভ নেই।
সোহাদ রায়জাদার হসপিটালে আনতেই কেবিন নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক্ষণ পর কেবিন থেকে ডক্টর করে বের হতেই অভিদ উঠে স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করে
” পেশেন্টের কি হয়েছে ডক্টর ?”
” পেশেন্ট মিনি স্ট্রোক করেছে। আপনাদের ভাগ্যভালো বড় কিছু হয়নি। যদি তেমন কিছু হতো তাহলে অনেকটা প্রবলেম হতো। এইবারের মতো একদম ঠিকাছে তবে এক সপ্তাহের মতো রেস্ট নিতে হবে আর তিনদিন পর আবারও এসে কয়েকটা টেস্ট করিয়ে পেশেন্টের অবস্থা সম্পর্কে জেনে নেবেন।” অভিদ সৌজন্যতার হাসি দিলো। ডক্টর চলে যেতেই রায়হান উঠে এসে ক্ষিপ্ত গলায় বলে
” মিনি স্ট্রোকই করতে হলো একে ? করেছিস যখন তাহলে সবচেয়ে বড় স্ট্রোকটাই করতো !”
অভিদ বাকা হেসে বলে
” বড় স্ট্রোক করলে কি আর আমাদের কোনো লাভ হবে ? আমরা এতোদিন এতোকিছু করলাম এখন যদি স্ট্রোক করে মারাই যায় তাহলে আমাদের সব কষ্ট তো বৃথা। আর উনাকে কষ্ট দিয়ে মারবো বলেছিলাম যদি একবারেই মরে যায় তাহলে আমরা কি শান্তি পাবো ?”
রায়হান হালকা হেসে বলে
” তা তো পাবো না।” অভিদ আড়চোখে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে গম্ভীর গলায় বলে
” তুই কি তোর মুখে লাগাম দিবি না? এতোদিন তো আমরা একা ছিলাম এখন আমাদের সাথেই সোহাদ রায়জাদা থাকবে। একটু ভেবে চিনতে কথা বলিস দয়া করে নাহলে আমাদের সব কিছু শেষ হয়ে যাবে।” রায়হান ইনোসেন্ট ফেস করে বসে থাকে।
সন্ধ্যার পর অভিদ বাড়িতে এসেই নিজের রুমে চলে গেলো। আজকে সোহাদ রায়জাদাকে রিলিজ দেবে না আর সোহাদ রায়জাদাকে স্লিপিং ইনজেকশন দিয়ে রেখেছে তাই অভিদ, রায়হান চলে এসেছে।
অভিদ রুমে এসে রুহিকে দেখতে পেলো না। অভিদ ব্যালকনিতে গিয়ে দেখে রুহি দোলনায় ঘুমিয়ে রয়েছে। অভিদ রুহির কাছে এগিয়ে যেতে নিয়েও আবার ফিরে আসে। হসপিটাল থেকে এসেছে তাই আগে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াসরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ পর বেড়িয়ে আসে অভিদ। টাওয়ালটা রেখেই ব্যালকনিতে চলে যায়। রুহির সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে। রুহি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে। অভিদ মুচকি হেসে রুহি ঠোঁটে আলতো ভাবে নিজের ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে দিয়ে আবারও কপালে ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে দেয়। রুহি ঘুমের মাঝেই কেঁপে উঠে নড়েচড়ে ঘুমিয়ে পড়লো। অভিদ রুহিকে কোলে তুলে রুমে এসে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ব্ল্যাংকেট জড়িয়ে দের রুহির শরীরে। ঘুমের মাঝেই রুহির ভ্রু কুঁচকে যায়। অভিদ শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকে রুহির রিয়েকশন গুলো। হঠাৎ হুরমুর করে রায়হান রুমে ঢোকে পরে। অভিদ শব্দ শুনে চমকে রায়হানের দিকে তাকায়। অভিদ অবাক হয়ে বলে
” কি হয়েছে ? এভাবে তুফানের মতো ছুটে এলি যে ?” রায়হান ফোন বের করে কয়েকটা ছবি দেখায় অভিদকে। রাগে অভিদের কপালের রগ গুলো স্পষ্ট ভেষে উঠে। অভিদ দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” আসল মাথা কে এইটার ? এটাও কি সোহাদ রায়জাদার ?”
রায়হান মাথা নেড়ে বলে
” নাহ এটা অন্যকারো। ওই এলাকার অনেক গুলো ছেলে মেয়েকে ড্রাগস এট্যাকটিভ বানিয়ে দিয়েছে। অনেক বয়স্ক মানুষও রয়েছে।”
অভিদ রাগে নিজের চুল টানতে থাকে। রুমে পাইচারি করতে করতে বলে
” কি করবো এখন ? বাড়িতে তো সোহাদ রায়জাদা না থাকলেও ওর লোকরা রয়েছে। ওরা নিশ্চই আমাদের বাইরে যেতে দেখলে চুপচাপ বসে থাকবে না ! আমাদের সাথে তো যাবেই।”
রায়হান শান্তনা দিয়ে বলে
” তুই চিন্তা করছিস কেনো ? আমি টিমের লোক জনকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি তো আগেই ওদের তৈরি থাকতে বলেছি। ওরা শুধু বলেছে তুই না থালকে ওদের কাজের প্রবলেম হয় তাই আমি তোর কাছে আসলাম।”
অভিদ শান্ত হলেও ক্ষোভ নিয়ে বলে
” ওদের পাঠা আর বলবি ওই লোকদের এমন অবস্থা করতে যেনো ওদের দেখে আমি শান্তি পাই। দরকার পড়লে তুই গোডাউনে নিয়ে ওদের শরীরে মসলা মাখিয়ে দিবি ভালো করে।”
রায়হান মাথা নেড়ে চলে যায়। অভিদ রুম রুহির দিকে ঘুরে চমকে গেলো। রুহি অভিদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে। অভিদ হাসি মুখে গিয়ে রুহির পাশে বসতেই রুহি বলে উঠে
” কাকে গোডাউনে নিয়ে মসলা মাখাবে ?” অভিদ ঢোক গিলে বলে
” তুমি কখন ঘুম থেকে উঠেছো ?”
রুহি হাই তুলে বলে
” এই তো মাত্রই কিন্তু আপনি কি জেন বলছিলেন। কিসে মসলা মাখানোর কথা বলছিলেন ?”
অভিদ আমতা আমতা করে বলে
” ম..মুরগি, মুরগিকে মসলা মাখানোর কথা বলছিলাম। কালকে আমরা সবাই বার্বিকিউ পার্টি করার প্ল্যান করছিলাম। তো রায়হানকে বলছিলাম কালকের চিকেন পিসগুলোতে ভালো করে মসলা মাখাতে হবে।”
রুহি মুখ কুঁচকে বলে
” কিন্তু আপনার ওই স্পেশাল গেস্ট না অসুস্থ ! তাহলে কালকে পার্টি করবেন কিভাবে ?”
অভিদ হালকা হেসে বলে
” কিছু হবে না। উনি এসব খাবে না। ওনার জন্য স্পেশাল আইটেম তৈরি হবে। আচ্ছা তোমার ঘুম যখন ভেঙেই গিয়েছে তাহলে চলো ছাদে যাই ।”
রুহির বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াসরুমে চলে গেলো। শীতের রাত তাই ঠান্ডা লাগবে ভেবে অভিদ রুহির জ্যাকেট বের করে নেয় আর নিজেরটাও খোঁজে কিন্তু পুরো কাপবোর্ড খুঁজেও সেটা পেলো। রুহি বেড়িয়ে আসতেই অভিদ জিজ্ঞেস করে
” রুহি তোমাকে যে সেইদিন একটা জ্যাকেট দিয়েছিলাম পড়ার জন্য সেটা কোথায় ?”
রুহি নিজের দিকে তাকিয়ে বলে
” এই তো আমি পড়ে আছি।” অভিদ ভ্রু কুঁচকে রুহির দিকে তাকায়। এতোক্ষণ ধরে একবারও খেয়াল করেনি রুহি তার জ্যাকেট পরে রয়েছে। অভিদ মুচকি হেসে বলে
” বাহ এই জ্যাকেটে তো তোমাকে দারুণ লাগছে ! আমি আগে খেয়ালই করিনি।”
রুহি কিছু না বলে স্মিত হাসলো। অভিদ এগিয়ে এসে বলে
” দাও আমার জ্যাকেটটা দিয়ে তোমারটা পরে নাও।”
রুহি জ্যাকেট ধরে ভ্রু কুঁচকে বলে
” কেনো দেবো আপনাকে এটা ? এটা আমার জ্যাকেট।”
অভিদ অবাক হয়ে বলে
” তোমার জ্যাকেট ? এটা তো আমার Favorite একটা জ্যাকেট। তুমি তোমারটা পরো।”
রুহি নাকচ স্বরে বল্র
” নাহ পরবো না আমি। এটা আমার পছন্দ হয়েছে এটা আমিই নেবো। দরকার পড়লে আপনি আমারটা পরে নিন। আর আপনি সেদিন আমাকে দিয়েছিলেন না ! তাহলে এভাবে ফেরত চাইছেন কেনো ?”
অভিদ হেসে বলে
” আমি তোমারটা পড়বো ? সেইদিন কান ধরায় ছবি তুলে কতো নাচালে আমাকে আজকে তোমার জ্যাকেট পড়ে ছাদে গেলে তো আমি আরো ফানিভাবে ভাইরাল হয়ে যাবো।”
রুহি মুখ ফুলিয়ে বলে
” তবু দেবো না আমি এটা।” অভিদ হালকা হেসে বলে
” ওকে বাবুই পাখি। আমার এরকম আরো জ্যাকেট রয়েছে। আমি সেখান থেকে একটা পরে নিচ্ছি।”
রুহি রেগে বলে
” তাহলে এতোক্ষণ ছেঁচড়া দের মতো করছিলেন কেনো ?”
অভিদ রুহিকে চোখ মেরে বলে
” ভালোলাগে তোমকে জ্বালাতে।” রুহি চোখ বড় বড় করে তাকালো। অভিদ কাপবোর্ড থেকে নতুন একটা জ্যাকেট বের করে পরে নেয়। রুহিকে নিয়ে ছাঁদের উদ্দেশ্যে চলে গেলো।
রুহি ছাঁদে ঢুকেই অবাক হয়ে গেলো। এর আগে ছাঁদে আসা হয়নি রুহির। রুহি অবাক হয়ে বলে
” এতো সুন্দর ছাঁদ ? আমার তো আগে আসায় হয়নি।”
অভিদ রুহির হাত ধরে সুইমিংপুল এর পাশে বসে পরে।
” আচ্ছা আপনার বাগানে তো একটা সুইমিংপুল রয়েছেই তাহলে আবার ছাঁদে কেনো ?”
অভিদ এক হাত দিয়ে রুহির কোমড়ে হাত রাখে। রুহি। রুহি ঢোক গিলে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ রুহিকে টেনে নিজের ঘা ঘেঁষে বসিয়ে বলে
” কারণ আমার আর রায়হানের অনেক পছন্দ তাই দুইটা সুইমিংপুল।”
রুহি কিছু না বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। অভিদ রুহির মাথাটা নিজের কাধে রেখে হেলান দিয়ে বসে চেয়ারে। রুহি কিছু বললো না।

আজকে সোহাদ রায়জাদাকে রিলিজ দিতেই বাড়ি নিয়ে আসে। সোহাদ রায়জাদা অভিদকে নিয়ে ভাবছে। অভিদ কি সব জেনে গিয়েছে ? অভিদ কৌশিকা রায়জাদাকে কোথায় পেলো ? রুহিকে কিভাবে পেয়েছে ? যার মৃত্যু নিয়ে নিউজে এক প্রকার ঝড় বিয়ে গিয়েছিলো সেটা মিথ্যা কিভাবে হয় ? নাকি এই রুহি অন্যকেউ! অভিদের সারপ্রাইজ এখনও সোহাদ রায়জাদাকে ধোঁয়াশার মাঝে রেখে দিয়েছে।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৩০
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

অভিদের সারপ্রাইজ এখনও সোহাদ রায়জাদাকে ধোঁয়াশার মাঝে রেখে দিয়েছে। সোহাদ রায়জাদা রকিং চেয়ারে বসে বসে এসবই ভেবে যাচ্ছিলো। ভাবনার মাঝেই দরজা নক হওয়ার শব্দ কানে আসে। সোহাদ রায়জাদা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে অভিদ দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে। সোহাদ রায়জাদা হালকা হেসে বললো
” আরে অভিদ ! ভেতরে এসো।” অভিদ মুচকি হাসি দিয়ে রুমের ভেতরে আসে। সোফায় বসে কিছুটা মন খারাপ করার ভান করে বলে উঠে
” মিস্টার সিনিয়ার ! তোমাকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবো তুমি সত্যি কথা বলবে তো ? ”
সোহাদ রায়জাদার মনে কিছুটা ভয় ঢুকে যায়। অভিদ কি করবে ? কিছুটা আশংকা নিয়েই বলে
” হহ্যা বলো ! আমি তো তোমাকে সব সময় সত্যি কথাই বলি।”
অভির মুখ কালো করে বলে
” তুমি কি খুশি নও ফুপি আর রুহিকে দেখে ? আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার দেওয়া সারপ্রাইজ গুলো দেখে অনেক খুশি হবে। আমি জানতাম তুমি আমার খুশিতে খুব খুশি কিন্তু কালকে মনে হলো তুমি খুশি হওনি।”
সোহাদ রায়জাদা বড় একটা নিশ্বাস নিলো। তার সব ভাবনা তাহলে ভুল ছিল। অভিদ এখনও কিছুই জানে না। সোহাদ রায়জাদা জোড়পূর্বক একটা হাসি দিয়ে বলে
” অভিদ কি বলছো এসব তুমি ? ছোট থেকে তোমাকে আর রায়হানকে আমি তোমাদের নিজের ছেলের মতোন কোলে পিঠে করে মানুষ করে তুললাম। তোমাদের জন্য বিয়েও করিনি আজও আর তুমি এসব বলছো ? আমি খুব খুশি হয়েছি তোমার সারপ্রাইজ পেয়ে। ছোট বোনটাকে কতো বছর ধরে খুঁজেছি। আমি তো পেলাম না কিন্তু তুমি তাকে পেয়েছো এটার জন্য গর্ব হচ্ছে আমার।”
অভির মুখে হাসি রাখলেও চোয়াল শক্ত করে নেয় সোহাদ রায়জাদার এতো মিথ্যা শুনে। সোহাদ রায়জাদা বলে
” কিন্তু আমি ভাবছিলাম রুহির কথা। পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে গিয়েছিলো তোমার ওয়াইফ রুহি মারা গিয়েছে কিন্তু কাল রুহি আমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। একজত মৃত মানুষ কিভাবে বেঁচে আছে ? আচ্ছা এটা সত্যি রুহি তো নাকি অন্য কেউ ?” অভিদ অবাক স্বরে বলে
” কি বলছো এসব তুমি ? মিস্টার সিনিয়ার তুমি জানো না আমি রুহিকে ছাড়া কতোটা অসহায় ছিলাম ? ওর জায়গায় অন্যকাউকে কি করে আমি মেনে নেবো? রুহিকে ছাড়া তো আমি এক মুহূর্তও থাকতে পারবো না। ওই আমার রুহি। এক্সিডেন্টে রুহির অপারেশন এর সময় মিডিয়ার লোকেরা প্রচুর ঝামেলা করছিলো। তখন তো রুহিকে নিয়ে ভাবা ছাড়া এসব কথায় একদমই মাথা ঘামাইনি। একদিকে রুহি অন্যদিকে মিডয়ার লোক দের ঝামেলা ছিলো। তাই আমার বডিগার্ডদের একজন রেগে বলে ফেলেছিলো রুহি মারা গিয়েছে। সেই কথা থেকেই ওরা খোঁজ খবর না নিয়ে এসব নিউজ বানিয়ে ফেলেছিলো। রুহির অসুস্থতা নিয়ে আমিও ডিপ্রেশনে থাকায় এসব নিয়ে ঘাটাইনি।”
সোহাদ রায়জাদা মাথায় হাত দিয়ে বলে
” এতোকিছু হয়ে গিয়েছে ? আমার সাথে একবয়ার শেয়ার করতে পারতে তুমি। তাহলে কালকে এভাবে অসুস্থ হয়ে পরতাম না।”
অভিদ বাকা হেসে বলে
” আমি তো তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এমন কিছু হবে তা তো বুঝতে পারিনি।”
সোহাদ রায়জাদা নিশ্বাস ফেলে বলে
” হুম বুঝলাম।”
অভিদ আলতো হেসে বলে
” মিস্টার সিনিয়ার একটা কথা বলতে এসেছিলাম আমি। আসলে তুমি আসার খুশিতে আমি একটা পার্টি রেখেছিলাম কিন্তু তুমি অসুস্থ হয়ে গেকে তাই পার্টি ক্যান্সেল করে দিয়েছি আমি। তবে ঘরোয়া ভাবে একটা ছোট বার্বি কিউ পার্টি রেখেছি। সবাইকে থাকতে হবে তুমি অবশ্যই প্রেজেন্ট থাকবে সন্ধ্যার পর। যদিও তোমাকে ডক্টর এসব খাবার থেকে স্পেসে থাকতে বলেছে তাই তোমার জন্য ডক্টরের দেওয়া চার্ট লিস্ট থেকে কিছু একটা রান্না করে দেওয়া হবে। তুমি প্রেজেন্ট থাকলে আমি খুশি হবো।”
সোহাদ রায়জাদা হেসে বলে
” হ্যা, হ্যা অবশ্যই থাকবো আমি।” অভিদ হেসে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে।
রুম থেকে বের হতেই ফোনে নফেটিকেশন আসে। অভিদ নিফেটিকেশন অন করে দেখে কয়েকটা লাশের ছবি। অভিদ বাকা হাসি দিয়ে একপলক সোহাদ রায়জাদার দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
রুমে এসে দেখে রুহি কিছু পেপার নিয়ে ডিজাইন আর্ট করছে। অভিদ মুচকি হেসে গিয়ে রুহির পাশে বসে। রুহি অভিদের দিকে একবার তাকিয়ে একটা স্মিত হাসি দিয়ে আবার কাজে লেগে পড়েছে। অভিদ পাশে থাকা পেপার গুলো হাতে নিয়ে বলে
” তুমি এসব করছো কেনো ? এগুলো তো মিশু করে।”
রুহি হেসে বলে
” আমার অনেক ভালো লাগছে। আমার ইচ্ছে ছিলো ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করবো কিন্তু কিছুই তো হলো না।” অভিদ মলিন হাসলো রুহির আফসোস শুনে। অভিদ রুহির থুতনি ধরে মুখিটা উঁচু করে ধরে। রুহি কপাল কুঁচকে ইশারায় বলে
কি হয়েছে ? অভিদ হেসে বলে
” তুমি তো ডিজাইন নিয়েই পড়াশোনা করছিলে মিশুর সাথে। কিন্তু এমন একটা সময় তোমার এক্সিডেন্ট হলো যার কারণে সব কিছু উলট পালট হয়ে গেলো।”
রুহি উৎসুক চাহনি দিয়ে বলে
” সত্যি আমি ডিজাইন নিয়ে পরছিলাম ?”
অভিদ মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। রুহি আগ্রহ নিয়ে বলে
” তাহলে তো আমার সিট খালি রয়েছে। আমি আবার যাওয়া শুরু করি ?”
অভিদ গম্ভীর চেহারায় রুহির দিকে তাকায়। রুহি থতমত খেয়ে মুখ বন্ধ করে নেয়। অভিদ শান্ত গলায় বলে
” আমি নিজেও চাই তুমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করো। তুমি চাইলে কালকে থেকে ক্লাসে জয়েন করতে পারো কিন্তু একটা প্রবলেম এর জন্যেই আমি বারবার এটা নিয়ে ভেবেও পিছিয়ে গিয়েছি।”
রুহি ভ্রু কুঁচকে বলে
” কি প্রবলেম ?” অভিদ দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে
” আসলে আমার তো কম শত্রু নেই। তারা সুযোগ পেলেই আমার উপর এট্যাক করে। এমনিতেই তোমার এতোবড় একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। আবার যদি ওরা কেউ এট্যাক করে ? আর তুমি এখন একা নেই আমাদের সন্তানও রয়েছে। সেই ভয়েই আমি এগোচ্ছি না এসব নিয়ে।”
রুহি ভেবে দেখে অভিদ ঠিকই বলছে। অভিদ রুহির কোলে থাকা হাতের উপর হাত রেখে বলে
” তবে তুমি চাইলে তুমি অনলাইনেই সেই কোর্স কম্পলিট করতে পারো সাথে আরো বিভিন্ন কোর্সও করতে পারো। তুমি রাজি থাকলে আমি রায়হানকে বলবো আজই কথা বলতে সবার সাথে।”
রুহি বিস্মিত হয়ে যায়। খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে
” সত্য ? আমি অনলাইন কোর্স করতে পারবো ?”
অভিদ হেসে মাথা নাড়ালো। রুহি খুশিতে একটা চিৎকার দিয়ে উঠে। হঠাৎ অভিদের উপর ঝাঁপিয়ে পরে। অভিদ চমকে যায় এমন আক্রমনে। রুহি খুশিতে অভিদের গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু বসিয়ে দেয়। অভিদ এবার অবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে রাখে। রুহি খুশিতে কি করছে সেদিকে তার খেয়ালই নেই। রুহি অভিদের গলা ছেড়ে উৎফুল্ল গলায় বলে
” থ্যাংকিউ অনেক অনেক থ্যাংকিউ আপনা….।”
অভিদের গালে হাত দেখে রুহির মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। রুহি কি করেছে অভিদের গালে হাত দেখে এখন বুঝতে পারে। রুহি কাঁদোকাঁদো হয়ে জিভ কেটে মাথা নিচু করে বসে থাকে। অভিদ নিঃশব্দে হাসলো রুহিকে দেখে। রুহির গালে স্লাইড করতে করতে দুঃখি স্বরে বলে
” তুমি একাই আমাকে আদর করলে কেনো ? আমিও তো তোমাকে একটু আধটু আদর করতে চাই। আগে বলতে তাহলে দুজনে একসাথে কাজ সেরে নিতাম।”
লজ্জায় রুহির কান থেকে গরম ধোয়া বের হতে থাকে। রুহি লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয় আবারও। অভিদ রুহির মুখটা আবারও উঁচু করে ফিসফিস গলায় বলে
” উঁহু আমাকে লোভ দেখিয়ে এখন তুমি নিজেই যদি দূড়ে স্বরে যাও তাহলে কি করে হবে ?”
রুহিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অভিদ রুহির মাথায় পেছন থেকে হালকা ভাবে এগিয়ে নিয়ে এসে দুই অধর জোড়া এক করে দেয়। অভিদ অন্য হাত রুহির এক কোমড়ে রাখে। রুহির শরীরে শীতল শিহরণ হতে থাকে। রুহি অভিদের শার্ট খামঁছে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয়।
দুজন তাদের ছোঁয়া উপভোগ করতে থাকে।
অনেক্ষণ পর অভিদ রুহিকে ছেড়ে দিলো। রুহি অভিদের বুকে মুখ লুকিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে। অভিদ মিটমিট হাসতে থাকে।

আজকেও অভিদ অফিসে গেলো না। সোহাদ রায়জাদাও সারাদিনে নিচে নামলো না। বিকেলের দিকে সবাই লিভিং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো কিছুক্ষণ পর অভিদ উঠে চলে গেলো বাইরে। রুহি কিছু বলতে গিয়েও বললো না।
অনেক্ষণ পর…
সবাই গল্প করতে ব্যস্ত তখন ঝড়ের গতিতে কেউ একজন দৌড়ে এসে রুহিকে জড়িয়ে ধরে। রুহি ভয় পেয়ে জোড়ে চেঁচিয়ে উঠে। সবাই চমকে তাকিয়ে থাকে। রাইমা বিরক্তিকর গলায় বলে
” কিরে আপুই তুমি এতো জোড়ে চিৎকার দিলে কেনো ? আমার কানটা ফেটে গেলোরে। ইশশশ !”
রাইমা কান ঝাড়তে থাকে। রুহি চোখ বড় বড় করে বলে
“তুই এখানে ? কখন এসেছিস ?”
” ও একা না আমিও এসেছি। আমাকেও দেখ।”
রুহি গলার আওয়াজে সামনে তাকায়। নিলাকে দেখে রুহি খুশি হয়ে গেলো। মিশু আর রুহি দৌড়ে তার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে।
পেছন থেকে একজন বডিগার্ড এসে একটা লাগেজ উপরে নিয়ে গেলো আর অভিদও আসে।
রুহি অবাক হয়ে বলে
” তোমরা হঠাৎ এখানে ? আমাকে একবারও জানালে না কেনো ?” নিলা হেসে বলে
” অভিদ ভাইয়া আমাদের বলেছিলো তোদের কিছু না জানানোর জন্য তাই কিছুই জানাইনি। যদিও আজকেই আমাদের আসার প্ল্যান হয়েছিলো।” রুহি অভিদের দিকে তাকালো। অভিদের সেদিকে খেয়াল নেই। রাইমা ইতিমধ্যে সবার সাথে কথা বলা শুরু করে দিয়েছে সাথে অভিদও যোগ দিয়েছে। নিলাকে নিয়েও কৌশিকা রায়জাদার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
কিছুক্ষণ কথা বলে অভিদ রায়হানকে বলে রুহির অনলাইন কোর্সের জন্য সব কিছু ঠিক করে দিতে। রায়হানও অভিদের ডিসিশনে খুশি হয়।
সন্ধ্যা হতেই পার্টর সব কিছু তৈরি হতে থাকে অভিদের বাড়ির গার্ডেনে। ফ্যামিলি পার্টি হলেও বড় গার্ডেনটা খুব সুন্দর করে বিভিন্ন ধরণের লাইটিং আর কিছু ডিজাইনার ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো হয়। গার্ডেনের একটা জায়গায় আগুন ধরানো হয়। অভিদ একজন সার্ভেন্টকে দিয়ে সোহাদ রায়জাদাকে নিচে ডাকায়। কিছুক্ষণ পর সোহাদ রায়জাদা নিচে আসে। রাইমা তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৩১
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

অভিদ একজন সার্ভেন্টকে দিয়ে সোহাদ রায়জাদাকে নিচে ডাকায়। কিছুক্ষণ পর সোহাদ রায়জাদা নিচে আসে। রাইমা তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। সোহাদ রায়জাদা খেয়াল করলেও কিছু বললো না। রাইমা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ রুহি এসে বলে
” কিরে দেখেছিস তো উনি কেমন ? তর বলা বর্ণনার সাথে তার একটুও মিল নেই।”
রাইমা শব্দ করে হেসে বলে উঠে
” কে বলেছে মিল নেই? দেখছো না চেহারাটা পুরোই শয়তানদের মতো দেখতে ! আর দেখেই বোঝা যাচ্ছে খারাপ একটা লোক।”
রুহি ভ্রু কুঁচকে সোহাদ রায়জাদা দিকে তাকায়। সোহাদ রায়জাদা মুখটা গম্ভীর বানিয়ে আগুনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে শুধু অন্যদিকে তার খেয়াল নেই বললেই চলে। রুহি চোখ ঘুরিয়ে রাইমার দিকে তাকিয়ে বলে
” কই আমার তো তেমন লাগছে না।”
রাইমা বিরক্তি চাহনি দিয়ে বলে
” হয়েছে তোমার আর বোঝার দরকার নেই। তুমি চোখে চশমা লাগিয়ে বসে থাকো নাহলে ওই লোকটাকে গিয়ে মাথায় তুলে নাচো।” রাইমা গিয়ে আগুনের কাছে বসে পরে। রুহি মুখ ফুলিয়ে অভিদের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। অভিদ আগুনের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো রুহির মুখ দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে
” কি হয়েছে তোমার ?” রুহি মাথা নেড়ে বলে
” কিছু না।” অভিদ কিছু না বলে একহাতে রুহির কোমড় জড়িয়ে ধরে রুহিকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। রুহি চোখ বড় বড় করে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, সবার সাথে কথা বলছে। রুহি অভিদের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও অভিদ আরো জোড়ে আকড়ে ধরে ধীর গলায় বলে উঠে
” আরেকবার যদি ছাড়ানোর চেষ্টা করো তাহলে সবার সামনে কোলে তুলে নেবো আর সারারাত কোলেই বসিয়ে রাখবো।”
অভিদের এমন হুমকি শুনে রুহির রিতিমতো চমকে যায়। এটা কেমন থ্রেট ? রুহি ঘাপটি মেরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। অভিদ আর রুহির বরাবর সোহাদ রায়জাদা অগ্নিচোখে দুজনকে দেখে যাচ্ছে। সোহাদ রায়জাদার ইচ্ছে করছে মাঝে থাকা আগুন নিয়ে রুহির গায়ে লাগিয়ে দিতে। প্রথম থেকে রুহিকে তিনি তার পথের কাটা বলে মনে করেন। রাইমা গিয়ে কৌশিকা রায়জাদার পাশে বসে। কৌশিকা রায়জাদা হেসে বলে
” কিছু বলবে ?”
রাইমা ঘন ঘন মাথা নেড়ে বলে
” হুম বলবো তো। আচ্ছা আন্টি তোমার ভাই কি খেতে অপছন্দ করে ?”
কৌশিকা রায়জাদার মুখের হাসি গায়েব হয়ে যায়। চোয়াল শক্ত করে সোহাদ রায়জাদার দিকে তাকায়। সোহাদ রায়জাদা তখনও রুহির দিকে তাকিয়ে আছে বিষাক্ত চোখে। রাইমা কৌশিকা রায়জাদার হাত ধরে আবার ডাকতেই কৌশিকা রায়জাদা রাইমার দিকে তাকায়। রাইমা আবদার স্বরে বলে
” বলো না আন্টি !”
কৌশিকা রায়জাদা আলতো হেসে বলে
” আমি তো ষোলো বছর আগের পছন্দ অপছন্দের কথা জানি। এখন যদি নতুন কোনো পছন্দ অপছন্দ থেকে থাকে তাহলে সেটা তো বলতে পারবো না। এর চেয়ে ভালো তুমি রায়হান বা অভিদকে জিজ্ঞেস করো। ওরা তো তাকে ভালো করে জানে।”
রাইমা মাথা নেড়ে রায়হানের কাছে চলে যায়। মিশু রায়হান গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। মিশু রায়হানের হাত জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মাথা রেখে গল্প করছিলো রাইমা কিছু না বলে সোজা তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। মিশু রাইমাকে দেখে দ্রুত হাত সরিয়ে ছিটকে সড়ে যায়। রাইমা তা দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে
” এমন ভাব করছো জেনো কিছু জানি না আমি ? বাড়ির সবাই জানে তোমাদের কাহিনী। এখন এমন ছিটকে ছুটকে লাভ নেই। যা দেখার দেখে নিয়েছি।”
মিশু ধমক দিয়ে বলে
” একদম চুপ ! বেশি কথা শিখেছিস তুই। রুহি ঠিকই বলে তুই তোর বন্ধুদের সাথে মিশে বেশি পেকে যাচ্ছিস।”
রাইমা ভাব নিয়ে বলে
” এতোই যখন পেকে গিয়েছি তাহলে নিজেরা বিয়ে করে এই অসহায় মেয়েটাকে বিয়ে করার সুযোগ করে দাও তাড়াতাড়ি।”
মিশু রেগে বলে
” এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দেবো। মাত্র কলেজে ভর্তী হয়েছে আর এখনই বিয়ে বিয়ে শুরু করেছিস ? কাকাই কে বলবো আমি ?”
রায়হান মিশুকে থামিয়ে বলে
” আহ ! এতো বকছো কেনো ? শালিকা মানুষ যদি এমন না করে তাহলে আর কে করবে ?”
মিশু রায়হানকে চোখ রাঙিয়ে বলে
” হ্যা তোমরাই তো একে বাদর বানাচ্ছো। বাদরের দল তো বাদরই হবে তাই না ?” রায়হান কান ঝাড়ার ভান করে। মিশু রায়হানের কাজে রেগে চলে যায়। রায়হান আর রাইমা হেসে দেয়। রায়হান হাসি থামিয়ে বলে
” তো কিসের জন্য আমাকে মনে পড়লো শালিকা ?”
রাইমা একটু এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলে
” তোমাদের চাচ্চুর কি কি খাবার পছন্দ, অপছন্দ ?”
রায়হান হেসে বলে
” হঠাৎ এই প্রশ্ন ? কি দুষ্টুমি করবে গো ?”
রাইমা বাকা হেসে বলে
” করবো তো অনেক কিছুই। আমার আপুকে মারার প্ল্যান করেছিলো না ? এবার আমি এই লোকটাকে জব্দ করবো। যতোদিন থাকবো লোকটাকে থেরাপির উপর রাখবো।”
রায়হান শব্দ করে হেসে উঠে রাইমাও হেসে দেয়।
রায়হান হাসতে হাসতে বলে
” যেকোনো তিতা আর ঝাল জিনিস উনার একদম অপছন্দ। উনি মিষ্টি প্রচুর পরিমাণে খায়। তিনিবেলা মিষ্টি ছারা তার খাওয়াই কম্পলিট হয়না।”
রাইমা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে
” পেয়ে গিয়েছি। এবার কি কি উনার সাথে করি তুমি শুধু দেখবে। আচ্ছা আমি যাই।”
রাইমা চলে যেতেই রায়হান মিশুর কাছে ছুটে যায় তার রাগ ভাঙাতে হবে তাই।
কৌশিকা রায়জাদা সিদ্দিকুর রহমানের সাথে কথা বলতে বলতে বাগানের অন্যপাশে এসে পরে। কথা শেষ করতেই পেছনে ফিরে ভয় পেয়ে যায়। সোহাদ রায়জাদা দাঁড়িয়ে ছিলো পেছনে। কৌশিকা রায়জাদা বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে
” পেছন থেকে এসে ভয় দেখানোর স্বভাবটা এখনও বদলাওনি দেখছি !”
সোহাদ রায়জাদা হেসে বলে
” নিজেকে যদি বলদে ফেলি তাহলে কি আর নিজের চাওয়া পাওয়া পূরণ করতে পারবো ? যেসবের এতো কিছু সেইসবই যদি না পা তাহলে এতো খুন করে আমার লাভ কি হলো।”
কৌশিকা রায়জাদা তাচ্ছিল্য হেসে বলে
” তোমার থেকে এসব কথাই আশা করছিলাম। যাই হোক, একটা কথা বলছি তোমাকে। রুহির দিকে আবারও চোখ তুলে তাকাবে না। রুহির এক্সিডেন্ট কিভাবে হয়েছে সেটা অভিদ জানতে না পারলেও আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি। তুমি ছাড়া এমন কিছু করার সাহস আর কারোর নেই। তোমাকে হাড়ে হাড়ে চেনা হয়ে গিয়েছে আমার। তুমিই প্রোপার্টির জন্য এমন করেছো।”
সোহাদ রায়জাদা হেসে বলে
” বাহ ভালোই তো বুঝতে শিখেছিস আমাকে ! ঠিকই বলেছিস আমিই করিয়েছিলাম সেসব। অভিদের বাচ্চা হলে অভিদের বাবার সহ অভিদের এতো প্রোপার্টির মালিক তো আবার সেই বাচ্চা হতো তাহলে আমার এতো কষ্ট আর ধৈর্যের ফল তো কিছুই পেতাম না। তাই সরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু কিছুই তো হলো না এই রুহির। বলতে হবে কৈ মাছের প্রাণ ছিলো। তবে এবার বাঁচিয়ে রাখার মতো কোনো রিস্ক নেবো না। এবার আমিই আমার হাতে ওকে মারবো।”
কৌশিকা রায়জাদা রেগে শক্ত গলায় বলে
” একদম মুখ সামলে কথা বলবে আর রুহি যদি আবারও কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করো তাহলে তুমি নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে না সেটা আমি বলছি। রুহির যদি কিছু হয় তাহলে তোমাকে অভিদ কোনোদিনও বাঁচতে দেবে না।”
কৌশিকা রায়জাদা আলতো হেসে বলে
” আর ভয় পেয়ো না এখনও তোমার অকর্মের কথা অভিদকে জানাইনি। তবে তুমি যদি আবারও আমার পরিবারের কিছু করার চেষ্টা করে তাহলে আমি চুপ থাকবো না।”
সোহাদ রায়জাদা কৌশিকা রায়জাদার মুখে চেপে ধরে শক্ত হাতে। দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” মুখটা খুললেই তুই তোর স্বামি আর ছেলের লাশ দেখতে পাবি তোর সামনে কথাটা মাথায় রাখবি।”
সোহাদ রায়জাদা রাগে ফুসফুসতে সেখান থেকে চলে গেলো। কৌশিকা রায়জাদা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। অভিদ আর রুহির সন্তানের কথা জানলে সোহাদ রায়জাদা কোনো না কোনো অঘটন ঘটিয়ে দিতে চাইতো তাই সেসব নিয়ে মুখ খুলেননি তিনি।
কিছুক্ষণ পর সবাই গিয়ে আগুনে চারপাশে বসে পরে। অভিদ আর রায়হান দূড়ে বসে তাদের প্ল্যান নিয়ে কথা বলছে। রুহি এক দৃষ্টিতে অভিদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
লোকটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে। তাকে এখন পর্যন্ত কোনো কষ্ট দেয়নি। সত্যি হয়তো তাকে ভালোবাসে কিন্তু মুখ ফুটে তাকে কথাটা এখনও বলতে শোনেনি তাই রুহি শুধু অনুভব করে অভিদের ছোট ছোট ভালোবাসা। রুহি অভিদকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। কিছুক্ষণ পর সোহাদ রায়জাদা আবারও নিচে নেমে আসে। তার সাথে দুইটা গার্ড থাকে সব সময়। তারাও পেছন পেছন এসে দাঁড়ায়। তাকে দেখে অভিদ, রায়হান তাদের কথা রেখে অনিদের সাথে বসে কলেজ লাইফের গল্প করতে থাকে। অভিদ রুহির পাশে বসে রুহির হাত চেপে ধরে। রুহি এবার হাত ছাড়ানোর কোনো চেষ্টা করলো না। কিছুক্ষণ পর রাইমা এসে রুহির অন্যপাশে বসে পরে। রুহি ভ্রু কুঁচকে সন্দেহী গলায় বলে
” তুই এখন কোথা থেকে এসেছিস ? এতোক্ষণ কোথায় ছিলি তুই?”
রাইমা বিরক্তিকর চেহারা বানিয়ে বলে
” উফফ আপুই আমি ওয়াসরুমে ছিলাম। এমন ভাবে বলছো যেনো লুকিয়ে লুকিয়ে Bf এর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।”
রুহি মুখ ভেঙিয়ে বলে
” তার থেকে ডেঞ্জারাস কাজ করতে গিয়েছিলি তুই। আমি তোকে এক ফোটাও বিশ্বাস করি না। যা দুষ্টু হয়েছিস তুই!” রাইমা ভেংচি কাটে। সবাই মিলে এবার ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পরে।
এর মাঝেই একজন সার্ভেন্ট একটা ট্রেতে খাবার নিয়ে আসে। অভিদদের থেকে অনেকটা দূড়ে মিনি টেবিলের উপর রেখে দেয়। সোহাদ রায়জাদা গিয়ে চেয়ারে বসে পরে। অভিদ গিয়ে বলে
” আমাদের চিকেন তো এখনও হয়নি তাই তোমার খাবার আনতে বলেছি তুমি খেয়ে নাও।”
সোহা রায়জাদা হেসে মাথা নাড়ায়। অভিদ আবার গিয়ে নিজের জায়গায় বসে পরে। খাবারের ঢাকনা তুলতেই দেখতে পায় তার পছন্দের সুপ সাথে কয়েকটা মিষ্টি আর স্ট্রোবেরি শেক । তবে সবগুলোর কালার কেমন যেনো হয়ে রয়েছে। সোহাদ রায়জাদা কিছু না বলে খাওয়া শুরু করে। সুপটা মুখে দিয়ে টেস্ট করতেই মুখ থেকে গরগর করে বেড়িয়ে যায়। দূড় থেকে তা দেখে রাইমা হেসে মুখ চেপে ধরে।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..
চলবে~ইনশাল্লাহ……..
চলবে~ইনশাল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here