মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -২৬+২৭+২৮

মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ২৬
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

রায়হান আর অভিদই প্ল্যান করে সব করেছে। সেই ডিল দিয়ে বাংলাদেশে আসা পিছিয়ে দেওয়া আবার সেই ডিল ক্যান্সেল করেই বিডিতে আসা এগিয়ে নিয়ে এসেছে। অভিদ আর রায়হানের প্রত্যেকটা প্ল্যান কাজ করছে। সোহাদ রায়জাদাও বোকার মতো তাদের ফাদে পা দিয়ে চলছে কিন্তু পরে কি হবে সেটা আদো কেউ জানে না।
আজকে ফ্রাইডে হওয়ায় অভিদ আজকে বাড়িতেই রয়েছে আর রুহি সেই সকাল থেকে এক জায়গায় বসে থেকে বিরক্ত হয়ে গিয়েছে। রায়হান আর মিশু তুষার, অনিকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে। দুজন এখানকার অলিগলি কিছুই চেনে না তাই রায়হান আর মিশু দুজনকে সব কিছু চিনিয়ে দেওয়ার জন্য একসঙ্গে বেড়িয়েছে। কৌশিকা রায়জাদাও বাড়িতে নেই বললেই চলে। তিনি বিডিতে আসার পর কিছুটা অসুস্থ হয়ে গিয়েছে তাই ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে। বাড়িতে সার্ভেন্টরা, বডিগার্ডরা আর অভিদ, রুহি ছাড়া কেউ নেই। আজকের ওয়েদারটাও অন্যরকম। হাড় কাপানো শীতের মাঝে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। রুহি গায়ের ম্যাজমেজে ভাবটা কাটিয়ে উঠে দাঁড়ায়। অভিদ রুহির পাশে বসে বসে ভিডিও গেম খেলছিলো রুহিকে উঠতে দেখেই গম্ভীর গলায় বলে উঠে
” কোথায় যাচ্ছো তুমি ? এখানে চুপচাপ বসে থাকো। এমনি মাথা ফাটিয়ে বসে আছো এখন আবার হাত, পা না ভেঙে ফেলো।”
রুহির মাথায় আগুন ধরে যায় অভিদের কথা শুনে। রুহি রেগে বলতে থাকে
” আমাকে কি মানুষ বলে মনে হয় না আপনার ? সকাল থেকে বিকেল হতে চললো কিন্তু আপনি আমাকে এখানেই বসিয়ে রেখেছেন ! নিজে তো ভিডিও গেম নিয়ে খুব enjoy করছেন আর আমাকে গরুর মতো বেধে রেখেছেন জেলখানায়।” অভিদ গেম রেখে উঠে দাঁড়ায় রুহির গালে হাত রেখে আদুরে গলায় বলে
” থাক বাবুই পাখি আর রাগ করো না। আমি তো তোমার ভালোর জন্যই বসিয়ে রেখেছি। বারবার নিচ থেকে আপ ডাউন করলে প্রবলেম হতে পারে। এরচেয়ে এক জায়গায় বসে থাকা ভালো না !” রুহি মুখ কুঁচকে রেগে বলে
” আরে রাখুন আপনার ভালো ! শরীর ভালোথাকলেই কি সব হয় ? একটা মানুষের মন ভালো না থাকলে শরীর ভালো থেকে লাভ কি ?”
অভিদ জোড়ে একটা শ্বাস নিয়ে বলে
” আচ্ছা সরি। বলো তুমি কি করতে চাও ? আমার সাথে গেম খেলবে ? বাইরে ঘুরতে যাবে ? নাকি কোনো রেস্টুরেন্টে যাবে ? কি করবে একবার বলো শুধু।”
রুহি আড়চোখে অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” আমি রান্না করতে চাই।” অভিদ বিস্মিত হয়ে রুহির দিকে তাকালো। রুহি ভ্রু কুঁচকে বলে
” কি হলো এভাবে কি দেখছেন ?”
অভিদ অবাক স্বরে বলে
” ততুমি রান্না করবে ? এই অবস্থায় ?”
রুহি ভাব নিয়ে বলে
” হ্যা করবো তো ? আমার ইচ্ছে করছে আজকের ওয়েদার এর সাথে মিলিয়ে কোনো স্পেশাল কিছু রান্না করি।” অভিদ দ্রুত পায়ে এগিয়ে দরজা লক করে দিলো। রুহির হাত চেপে ধরে বিছানায় বসিয়ে কড়া গলায় বলে
” রান্নাঘরে যাওয়ার হলে এই রুম থেকে এক পা ও বের হবে না।”
রুহি জেদ ধরে বলে
” না আমি যাবোই। আমি আজকে রান্না করবোই। আপনি আমাকে বাধা দিলে কিন্তু খুব খারাপ হবে !” অভিদ রাগি গলায় বললো
” তোমার কি মনে হয় আমি কোনোদিন যেতে দেবো তোমাকে ? যেখানে তোমাকে নিচে নামার পারমিশন দেইনি সেখানে তুমি ভাবলে কি করে তোমাকে আমি রান্নাঘরে যেতে দেবো ?”
রুহি দাঁত কিড়মিড় করে বলে
” যেতে দিতেই হবে আমাকে। নাহলে আমি বাড়িতে তুফান বইয়ে দেবো !”
অভিদ চোখ রাঙিয়ে বলে
” একদম চুপচাপ বসে থাকো নাহলে আমি তোলার উপর তুফান বসাবো। একটা কথা বলো এই সময় তোমার মাথায় রান্না বাদে অন্য কোনো ইচ্ছার কথা মাথায় আসলো না কেনো ? কালকে কি পাগলের কামড় খেয়েছো তুমি ?”
রুহি অগ্নিচোখে অভিদের তাকায়। অভিদ আরো বড় বড় করে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে
” এই মেয়ে তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো ? এই অভিদ রায়জাদাকে ! চেনো আমাকে ? আমার সামনে কেউ চোখ তুলে তাকানোর সাহস করে না। আর তুমি আমাকে চোখ দেখাচ্ছো ? এক আছাড় মেরে ভর্তা বানিয়ে ফেলবো।”
রুহি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে কাঁদোকাঁদো গলায় বলে
” আপনি আমাকে আছাড় মারবেন ? পারবেন আপনি ? আপনি না আমার বাচ্চার বাবা ? বাচ্চা হওয়ার আগেই আমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করছেন আপনি ?”
অভিদ চোখ ছোট ছোট করে রুহির দিকে ঝুকে বলে
” ভালোই তো ব্ল্যাকমেইল করতে শিখে গিয়েছো।”
রুহি ঠোঁট বাকিয়ে হেসে অভিদের হাতটা নিজের পেটের উপর রেখে বলে
” এবার বলুন আমাকে রান্নাঘরে যেতে দেবেন। এবার কিন্তু কোনোভাবেই না বলতে পারবেন না।”
অভিদ চুপ করে তাকিয়ে রইলো রুহির দিকে। রুহির ঠোঁটের কোনে মিষ্টি একটা হাসি। অভিদ একটু ভেবে বলে
” ঠিকাছে পারমিশন দিলাম কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।” রুহি খুশিতে নাচতে গিয়েও অভিদের শর্ত শব্দটা শুনে থেমে গেলো। রুহি ঠোঁট উল্টে বলে
” কি শর্ত ?” অভিদ হেসে বলে
” আমিও তোমার সাথে রান্না করবো। মানে তোমার হেল্পিং হেন্ড হিসেবে। যদি তুমি রান্না করতে চাও তাহলে আমার সাথে করতে হবে আর নাহলে তোমাকে কিচেনের আশেপাশেও যেতে দেবো না। বুঝেছো ? এবার ভাবতে থাকো কি করবে তুমি।” রুহি মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। অভিদ ফুরফুরে মেজাজে রুহির গা ঘেঁষে বসে পরে। কিছুক্ষণ পর রুহি মিনমিন স্বরে বলে
” রাজি আমি।”
অভিদ মিটমিট করে হাসতে থাকে। দরজার লক খুলে দিতেই রুহি বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। পেছন পেছন অভিদও বেড়িয়ে যায়।
কিচেনে আসতেই দেখে সব সার্ভেন্টরা মিলে গল্পের আসর খুলে বসে আছে। একেকজন হাসাহাসি কররে করতে অন্যজনের গায়ে ঢলে পড়ছে। রুহি গিয়ে কিছু বলার আগেই অভি গিয়ে ধমক দিয়ে বলে উঠে
” কিচেনটা কে কি গল্পের আসর পেয়েছো তোমরা ? যেখানে যাও সেখানেই গল্প করা শুরু করে দাও কাজ রেখে। তোমাদের কি এভাবে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেরোনোর জন্য কাজে রাখা হয়েছে ? Remiss করে লাভ কি তোমাদের ? আর যদি দেখি কাজ রেখে গল্প শুরু করেছো তাহলে একেক জনকে রাস্তায় বসিয়ে দেবো ভিক্ষুকের প্লেট হাতে দরিয়ে।”
সার্ভেন্টগুলো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। নিজেদের কাজের জন্য আজ পর্যন্ত অনেক বকা খেয়েছে অভিদের কাছে।
অভিদ আবারও রাগি গলায় বলে
” এখনও দাঁড়িয়ে আছো কেনো তোমরা ? যাও কিচেন থেকে ! আমি বের না হওয়া পর্যন্ত কেউ জেনো ভেতরে না ঢোকে সেটাও খেয়াল রাখবে।”
সবাই মাথা নেড়ে ভয়ে দৌড়ে দৌড়ে বেড়িয়ে যায়। অভিদ রুহিকে নিয়ে ভেতরে ঢোকে। রুহি ঢুকেই কিচেনের চারপাশ দেখতে থাকে। নরমাল কিচেনের তুলনায় এই কিচেন রুম প্রচুর বড়। তবে খুব সুন্দর করে গোছানো রয়েছে। যেটা রুহি তার মনের কতো করে সাজিয়ে নিয়েছিলো।
রুহি ফ্রিজ থেকে একে একে সব কিছু বের করে নিতে থাকে। অভিদ দেখতে দেখতে বলে
” কি রাঁধবে তুমি ?”
রুহি জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে এখনও বাইরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। রুহি মুচকি হেসে বলে
” খিচুরি, ভর্তা, বেগুন ভাজা, আমের আচার।”
অভিদের চোখ চকচক করে উঠে। খাবারগুলো দুজনেরই খুব প্রিয়। অভিদ বাকি জিনিসগুলো উপর থেকে নামিয়ে নিতে থাকে। অভিদের হঠাৎ আচারের কথা খেয়াল আসতেই বলে
” আচার বানাবে কি করে তুমি ? আচার বানাতে কতো কিছু প্রয়োজন সেগুলো এখন কোথায় পাবে তুমি ?”
রুহি মুখ বাকিয়ে বলে
” আপনি কি বাড়ির কোনো খোঁজ খবর রাখেন না ? ফুপি অসুস্থ শরীর নিয়ে কতো রকমের আচার বানিয়েছে জানেন না আপনি?”
অভিদ মাথা নেড়ে না বলে। রুহি ভেংচি কেটে তার কাজে মন দেয় অভিদ নিঃশব্দে হাসলো রুহিকে দেখে। রুহি একে একে সব সবজি কেটে নিলো। অভিদও রুহির হাতে হাতে কাজ করতে থাকে। রুহি বেগুনের মশলা মাখাতে মাখাতে বলে
” আপনি কি রান্না করতে পারেন ?”
অভিদ মুচকি হেসে বলে
” হুম। আগে পারতাম না তবে আমাদের বিয়ের পর আমি রান্না শিখেছিলাম। মাঝে মাঝেই তোমাকে রান্না করে খাওয়াতাম। এটা আমার ইচ্ছে ছিলো বউকে রান্না করে খাওয়ানোর। তুমিও আমাকে কতোবার রান্না করে খাইয়েছো। জানো এসব বলতেও কষ্ট লাগে। তোমার তো কিছুই মনে নেই। না আমাকে মনে আছে আর না আমাদের কাটানো সেই সব সুন্দর মুহূর্তগুলোর কথা।”
অভিদের কথা শুনে রুহির হাত চালানো বন্ধ হয়ে গেলো। রুহি মলিন দৃষ্টিতে অভিদের দিকে তাকালো। অভিদ হাসতে হাসতে কাজ করছে।হঠাৎই রুহির মন খারাপ হয়ে গেলো। রুহি মাথা নিচু করে কাজ করতে থাকে।
তারও তো জানতে ইচ্ছে করে, কি হয়েছিলো সেই সময় গুলোতে। কেমন ছিলো সেই মুহূর্ত গুলো ! অভিদের বলা কথা গুলো কি সত্যি ছিলো কিনা !
কাউকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েও রুহি অজানা বাধায় আটকে চুপ হয়ে যায়।
অভিদ কাজ করতে করতে রুহির দিকে তাকায়। রুহির গাল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। অভিদ রুহির বাহু চেপে ধরে রুহিকে নিজের কাছে এনে অস্থির হয়ে বলতে থাকে
” কি হয়েছে রুহি কাঁদছো কেনো ? চোখে কি মশলা ঢুকেছে ? নাকি হাত কেটে ফেলেছো ? কি যে করো না তুমি ! এই জন্যেই না করছিলাম তোমাকে।” রুহি নিজের গালে হাত রেখে দেখে সত্যি তার চোখে পানি। রুহি এতোক্ষণ খেয়ালই করেনি। অভিদ রুহির গালে হাত রেখে বলে
” কোথায় ব্যাথা পেয়েছো তুমি? আমাকে বলো !”
রুহি ঢোক গিলে জড়ানো গলায় বলে
” আমার কবে সব কিছু মনে পরবে ? আমি কবে সুস্থ হবো ?এই ধোঁয়াশার মাঝে থাকতে আমার একদমই ভালো লাগছে না। অনেক খারাপ লাগছে আমার।”
অভিদ মুচকি হেসে রুহির কপালে চুমু দিয়ে বলে
” সব মনে পরবে তোমার। জানি না কবে মনে পরবে তবে তোমাকে এই ধোঁয়াশার ভেতর থেকে বের করার জন্য আমি আমাদের অনেক মুহূর্তের কথা তোমাকে বলতে পারি। তাতে একটু হলেও এই ধোঁয়াশার থেকে মুক্তি পাবে তুমি।”
রুহি ঠোঁট উল্টে বলে
” আমি শুনতে চাই এবং সব প্রমাণ সহ সত্যি জানতে চাই। আমি চাই না ধোঁয়াশার মাঝে কোনো মিথ্যা নিয়ে আকড়ে থাকতে।”
অভিদ হেসে বলে
” সব বলবো তোমাকে তবে আজ নয়। আজকের এই সুন্দর মুহূর্তটা নষ্ট করবে না একদম।”
রুহি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে মাথা নাড়ালো।
অভিদ আর রুহি দুজন আবারও তাদের কাজে লেগে পরে।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ২৭
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

অভিদ আর রুহি দুজন আবারও তাদের কাজে লেগে পরে। রান্না শেষ হতে হতে বিকেল শেষ হয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। খিচুরি, কয়েক রকম ভর্তা, বেগুন ভাজা করে রান্না শেষ করে। আচার বের করে রুহি সব কিছু গুছিয়ে রেখে দেয়। হঠাৎ অভিদ রুহির কোমড় ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। রুহি চমকে উঠে অভিদের কাজে। অভিদ আলতো হাতে রুহির কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিতে দিতে ধীর ধীরে বলে
” আজকে অনেক হট লাগছে তোমাকে ।” রুহি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে মুখ কুঁচকে বলে উঠে
” ছিঃ !”
অভিদ ঠোঁট চেপে হেসে বলে
” ছিঃ আবার কি ? যা সত্যি তাই বলেছি।তোমাকে দেখে আমার ইচ্ছে করছে কোলে বসিয়ে আদর করতে থাকি।” রুহি অভিদের বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে
” কি বলছেন কি এসব আপনি ? আপনার মুখের লাগাম ছুটে গিয়েছে।”
অভিদ হেসে রুহির নাকে কামড় বসিয়ে দিয়ে বলে
” আমার মুখের লাগাম বিয়ের পর থেকে ছোটা শুধু নিজের মুখটাকে কন্ট্রোল করে রাখি তবে আজকে আর রাখতে পারলাম না। তোমাকে দেখে আমার আগের কথা মনে পরে গিয়েছে। রান্না করার সময় আমরা কতো রোমেন্স করতাম ! তাই না ?”
রুহি লজ্জায় মুখ নুয়ে নেয়। অভিদ ঠোঁট চেপে হাসতে থাকে রুহিকে দেখে। এর মাঝে হঠাৎ বাইরে থেকে অনি আর মিশুর চিৎকার শুনতে পেলো। রুহি অভিদের হাত ছাড়িয়ে নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইলে অভিদ আরো শক্ত করে রুহিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। রুহি বিরবির করে বলে
” আরে ছাড়ুন জলদি। ওরা এসে পড়বে তো !”
অভিদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠে
” আসলে আসবে। আমার বউকে আমি আদর করছি এতে অন্যায়ের কিছু তো দেখছি না। যদি অন্যের বউ এর সাথে এমন করতাম তাহলে অন্য কথা ছিলো।”
রুহি তাও জোড় করে নিজেকে অভিদের থেকে ছাড়িয়ে নিলো। অভিদ কিচেন থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে রুহির ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট এক করে দেয়। দুই মিনিট পর রুহিকে ছেড়ে বাইরে পা বাড়ায়। রুহি লজ্জা পেয়ে দেয়ালের সাথে মাথা ঠুকরে দেয় আর সাথে সাথে আগের জায়গায় ব্যাথা পেয়ে কুকড়ে উঠে মাথা ঘষতে ঘষতে রুহি কিচেন থেকে বেড়িয়ে আসে।
রায়হান, তুষার, মিশু, অনি চোখ ছোট ছোট করে অভিদের দিকে তাকিয়ে আছে। এদের এভাবে তাকিয়ে থাকার কারণ বুঝতে না পেরে অভিদ নিজেও ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। রুহি কিচেন থেকে বেড়িয়েই সবার তাকিয়ে থাকা দেখে অবুঝ গলায় বলে
” সবাই এক অপরের দিকে এভাবে তাকিয়ে রয়েছো কেনো ?”
সবাই এবার তাদের দৃষ্টি সরিয়ে রুহির দিকে তাকালো। রুহি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখতে থাকে সবাইকে। রুহি আবারও ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে ? নিরবতা ভেঙে অনি বলে উঠে
” তোমরা দুজন রান্নাঘরে কি করছিলে ?”
রুহি থতমত খেয়ে অভিদের দিকে তাকালো। অভিদ চোখ ছোট করে গম্ভীর গলায় বলে
” কি করছিলাম মানে ? আমরা কি করছিলাম তোদের বলবো কেনো ?” অনি এগিয়ে এসে মুখ ফুলিয়ে বলে
” কেনো বলবে না কেনো ?” রায়হান মিটমিট করে হাসতে হাসতে বলে
” অনি! বড় ভাই আর ভাবি কি করছিলো সেটা তোমাকে জানতে হবে না। এটা ওদের সিক্রেট ম্যাটার।” সবাই এবার মুখ টিপে হাসতে থাকে। রুহি লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখে আর পায়ের আঙুল দিয়ে ফ্লোর খুটতে থাকে। অভিদ রায়হানের দিকে এক ভ্রু করে তাকিয়ে বলে
” কিসের পারসোনাল ম্যাটার ? আমরা রান্না করছিলাম এতে পারসোনাল ম্যাটার এর কি আছে ?” সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। রায়হান রুহির দিকে তাকিয়ে অবাক স্বরে বলে
” আসলেই তো তোরা এখানে কি করছিলি ? তুই সত্যি রুহিকে নিয়ে রান্না করছিলি ? তুই কিভাবে কিচেনে আসতে দিয়েছিস ?”
অভিদের মুখ চুপসে যায়। মিনমিন গলায় বলে
” ম্যাডামের নাকি বোর লাগছিলো তাই রান্না করার ভুত চেপেছিলো মাথায়।” তুষার হা করে তাকিয়ে থেকে বলে
” বাব্বাহ ! দ্যা গ্রেট অভিদ রায়জাদাও নিজের বউ এর কথা শোনে ! আমি তো ভেবেছিলাম ভাইয়া সব সময় ভাবিকে ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখে নিজের পাশে।” অভিদ বিরক্তর চাহনি নিক্ষেপ করে তুষারের দিকে। মিশু হেসে বলে
” অভিদ রায়জাদা যতো বড়ই সেলিব্রিটিই হোক না কেনো ভাইয়া সব সময় রুহির জন্য সব কিছু করতে পারে। বলতে গেলে রুহির প্রতি ভাইয়ার ভালোবাসা অসমপরিমাণ। কোনোদিন কেউ সেই ভালোবাসা চুকিয়ে দিতে পারবে না এমনকি রুহিও না। রুহি নিজেও ভাইয়াকে খুব বেশি ভালোবাসে।” রুহি চোখ তুলে একবার অভিদের দিকে তাকিয়ে আবারও মাথা নামিয়ে নেয়। অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” এবার দ্রুত সবাই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো নাহলে কেউ রুহির রান্না করা খাবার খেতে পাবে আবার কেউ পাবে না।”
সবাই তাদের হাতের জিনিস গুলো নিয়ে দৌড়ে উপরে যায়। যেতে যেতে একেকজন ধাক্কা ধাক্কি করতে করতে নিজেদের রুমে ছুটে যায়।

অভিদ সার্ভেন্টদের ডেকে বলে খাবার গুলো সার্ভ করার জন্য। অভিদ রুহিকে নিয়ে বাগানে চলে যায়। চারদিক একদম অন্ধকার হয়ে রয়েছে শুধু আকাশের চাঁদটা দেখা যাচ্ছে। রুহি এসেই কাপঁতে থাকে শীতের কারণে। অভিদ রুহিকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে
” বেশি ঠান্ডা লাগছে বাবুই পাখি ? গরম করে দেবো তোমাকে ?” রুহি লজ্জায় চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। দাঁতেদাঁত চেপে বিরবির করে বলে
” আপনি আপনার মুখে লাগাম দিন ! এসব কেমন কথা বলছেন আপনি ?”
অভিদ শব্দ করে হেসে উঠে রুহির লজ্জামাখা মুখ দেখে। গায়ের জ্যাকেট খুলে রুহির গায়ে দিয়ে বলে
” আমি না বলা পর্যন্ত এটা খুলবে না একদম।”
রুহি মুখ বাকিয়ে জ্যাকেটটা পড়ে নেয় ভালো করে। ফিসফিস গলায় বলে
” আপনার ঠান্ডা লাগে না ?”
অভিদ মুচকি হেসে রুহিকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে
” তুমি আমার পাশে থাকলে আর কিছুই লাগে না আমার।” রুহি মাথা নিচু করে আলতো হাসলো। অভিদ রুহিকে নিয়ে সুইমিংপুল এর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। রুহি নিচে বসে পানিতে পা ভিজানোর জন্য প্রস্তুতি নিতেই অভিদ ধমক দিয়ে বলে উঠে
” রুহি এখানে বসছো কেনো তুমি ? একটু আগেই তো ঠান্ডায় কাঁপছিলে এখন কাঁপা কাঁপি কোথায় গেলো তোমার ?পানি দেখলেই নাচতে ইচ্ছে করে তাই না ? পড়ে যে ঠান্ডা লাগিয়ে বসাবে সেদিকে খেয়াল আছে ? ”
রুহি মুখ ফুলিয়ে আবার উঠে দাঁড়ায়। অভিদ রুহির কোমড় জড়িয়ে ধরে। অভিদের ঠান্ডা হাতের ছোঁয়ায় রুহির সর্বাঙ্গ কাঁপুনি দিয়ে উঠতেই রুহি চোখ বন্ধ করে নেয়। চোখ খুলে রুহি পিটপিট করে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ পানির দিকে তাকিয়ে রয়েছে আর রুহিকে এক হাতে বাচ্চাদের মতো আগলে রেখেছে। অভিদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠে
” রুহি কালকে থেকে আমি অনেকটা ব্যস্ত থাকবো। হয়তো দুই একদিন আগের মতো আর কেয়ার বা খোঁজ খবর নিতে পারবো না। তুমি রাগ করবে না তো ?”
রুহি মাথা নেড়ে না বললো। অভিদ মুচকি হেসে রুহির কপালে ডিপ কিস করে। একটু পর চিন্তিত হয়ে বলে
” আরেকটা কথা পরশু আমাদের বাড়িতে স্পেশাল কেউ একজন আসবে। আমি ব্যস্ত থাকলেও তুমি নিজের খেয়াল রাখবে আর অনি, মিশু, তুষারের কাছে থাকবে সব সময়। কোনো কিছু হলে আমাকে বলবে আর সব সময় তার থেকে দূড়ে দূড়ে থাকবে।” রুহি ভ্রু কুঁচকে বলে
” এমন কে আসবে যে এভাবে বলছেন ?”
অভিদ হালকা হেসে বলে
” আসবে অনেক স্পেশাল একটা মানুষ। তুমি ধীরেধীরে সব জানতে পারবে।” রুহি আবারও কিছু বলতে নিলে তুষার বাইরে এসে দুজনকে ডাকাডাকি শুরু করে। অভিদ রুহিকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসে। এসেই দেখে সবাই টেবিলে প্লেট পেতে বসে আছে। রুহি শব্দ করে হেসে দিলো সবাইকে দেখে। অভিদ টেবিলে বসে পরে। রুহি সবার প্লেট সুন্দর করে ডেকোরেট করে দেয়। চেয়ার টেনে বসার সময় কৌশিকা রায়জাদার কথা মাথায় আসতেই বলে
” ফুপি কি ঘুমিয়ে আছে ? আমাদের সাথে খাবে না ?”
মিশু বলে
” নাহ ফুপিকে দেখে এসেছি আমি। এখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ফুপির জন্য রেখে দিলেই হবে।” রুহি মাথা নেড়ে বসে পরে। সবাই খাওয়া দাওয়া শুরু করে। অভিদ মন দিয়ে খাচ্ছে আর রুহির দিকে তাকাচ্ছে । অনেকদিন পর রুহির রান্না করার খাবার খাচ্ছে তাই অভিদ খুবই খুশি। সবাই খেতে খেতে রুহির প্রশংসায় ভরিয়ে ফেলে। খাওয়া দাওয়া শেষে অনি, মিশু, রুহি, অভিদ, রায়হান, তুষার সবাই গল্পের আসর বসায়। আজকে কোথায় কোথায় ঘুরেছে কি কি দেখেছে সব কিছু বলছে আর অনি, মিশু তাদের শপিং দেখাচ্ছে। অনি শেষে ছোট ছোট কয়েকটা বাচ্চার কাপড় বের করে। রুহি সেগুকো হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে উৎফুল্ল গলায় বলে
” ওয়াও ! কত্তো কিউট। কিন্তু এগুলো কেনো কিনেছো তুমি ?”
অনি আহ্লাদী স্বরে বলে
” এগুলো আমি আমার চ্যাম্প এর জন্য এনেছি। চ্যাম্প যখন হবে তখন এগুলো পড়াবে। ছোট হাতে, পা মোজা পড়াবে কত্তো কিউট লাগবে।”
রুহি অনির কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। অভিদ রুহির মুখের হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে। হাসলে তার স্বপ্নের নারীটাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগে।

আজকে বাড়ির রূপ বদলে দেওয়া হচ্ছে বলা যায়। গতকাল থেকে অভিদ একদমই ব্যস্ত তবুও রুহিকে বারবার ফোন করে খোঁজ খবর নিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর সোহাদ রায়জাদার ফ্লাইট ল্যান্ড করবে। আজকে তিনি বিডিতে পা রাখছেন। অভিদ, রায়হান গত কাল থেকেই নিজেদের নরমাল ভাবে সাজিয়ে নিয়েছেন যাতে সোহাদ রায়জাদা এসেই কোনো সন্দেহ না করেন।
তাকে বড় বড় সারপ্রাইজ দেবার জন্যে বাড়িটাকে ভালো করে সাজিয়ে দিচ্ছে অভিদ। যদিও বাড়িতে নেই অভিদ, রায়হান। রুহি উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছে তবে এখনও জানে না কে আসছে। কোনো ছেলে নাকি মেয়ে এটাও জানে না।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ২৮
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

রুহি উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছে তবে এখনও জানে না কে আসছে। কোনো ছেলে নাকি মেয়ে এটাও জানে না। রুহি বিরক্ত হয়ে মিশুর রুমে চলে গেলো। গিয়ে দেখে মিশু ল্যাপটপে নিলা আর রাইমার সাথে কথা বলছে। রুহি গিয়ে মিশুর কাধে মাথা রেখে বসে পরে। রুহি মুখ কালো করে বলে
” কি এমন স্পেশাল মানুষ আসবে বুঝতে পারছি না আমি। আমাকে বললোও না কে আসবে।” রাইমা হেসে বলে
” তুমি তো কোনো কালেই চিনতে পারবে না তাহলে বলে কি করবে ?” রুহি চোখ রাঙিয়ে বলে
” চুপ একদম ! তুই মনে হয় চিনবি ?”
রাইমা চুলগুলো ঝাড়া দিয়ে পেছনে নিয়ে ভাব নিয়ে বলে
” অবশ্যই আমি সবাইকেই চিনি আর এটা তো বলতে গেলে আমাদের বাড়িরই মানুষ। তো চিনবো না কেনো ? তার সম্পর্কে সবই জানি আমি। ”
রুহি এক ভ্রু উঁচু করে তাচ্ছিল্য স্বরে বলে
” আসছে আমার সব জান্তা মানুষটা। আচ্ছা বলতো কে সেই মহান ব্যাক্তিটা ? আর বল দেখতে কেমন। যদি তোর বলা কথায় মিল না পাই তাহলে মিথ্যা কথা বলে তোর বন্ধুবান্ধবের সাথে এতো ঘোরাঘুরি সব এক মিনিটে বন্ধ করে দেবো আমি।”
রাইমা ভেংচি কেটে বলে
” ঠিকাছে বলছি তাহলে শোনো। একটা অর্ধবুড়ো লোক আসবে। তার গুলো সাদা কালো মিশ্রণের। লোকটা দেখতে সাদা, শয়তান বুড়োর মতো। মাঝে মাঝে রাক্ষসের মতো হা হা করে হেসে দেয়। হাসলে দেখতে পাবে মাড়ির কাছের একটা দাঁত নেই। তার মাথায় কুবুদ্ধির একটা ড্রাম রয়েছে। তাতে হাত দিলেই ধাম করে বেজে উঠে। আর তোমার দিকে দেখবি বারবার এমন ভাবে তাকাবে যেন তোমাকে একা পেলে এখনই খেয়ে ফেলবে। অভি ভাইয়া আর রায় ভাইয়া লোকটাকে মিস্টার সিনিয়ার রায়জাদা বলে ডাকে। তবে রায় ভাইয়া মাঝে মাঝে রেগে গেলে লোকটাকে অনেক বকে।”
রুহি বোকার মতো তাকিয়ে থাকে রাইমার দিকে আর মিশু, নিলা দুইজন হাসতে হাসতে দুই খাটে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রাইমা ভাব নিয়ে বলে
” এবার যদি লোকটা এমন দেখতে না হয় তাহলে আমাকে বলবে। আমি রাতে চোরের মতো গিয়ে লোকটার মাথা টাক বানিয়ে দিয়ে আসবো।”
রুহি রেগে বলে
” উল্টা পাল্টা কথা বলবি তুই আবার তুই নিজেই ওই লোককে টাক বানাবি ? উচিত তো তোকে টাক বানিয়ে দেওয়া।” রাইমা আবারও একটু ভাব নিয়ে বলে
” হুহ ! চুল কাটার সময় আমার কাছে আসতে পারবে নাকি ? এক দৌড়ে নিলা আপ্পির শশুড় বাড়ি চলে যাবো।” বলে দৌড়ে চলে গেলো।
তিনজনের হঠাৎ একজন পুরুষের হাসির শব্দ কানে আসে। সবাই পেছনে তাকায়। তুষার হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসে পরে। রুহি হেসে বলে
” কি ব্যাপার তুষার বাবু ! এতো হাসি আসছে কেনো তোমার ?”
তুষার হাসতে হাসতে বলে
” ভাবি তোমার বোন এগুলো কি বলে গেলো ?”
রুহি আলতো হেসে বলে
” ও এমনই সব সময় উল্টো পাল্টা কথা বলে। যাই হোক তুমি এখানে এসো তোমাকে আমার আপুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।” তুষার হাসি থামিয়ে এসে রুহির পাশে বসে। রুহি নিলাকে উদ্দেশ্য করে বলে
” উনি হচ্ছে আমার বড় আপু, নিলা আপু। আর আপু উনি হচ্ছেন তুষার রহমান ফুপির ছেলে।” দুজন দুজনকে সালাম দিয়ে টুকটাক কথাবার্তা বলে। কিছুক্ষণ কথা বলে নিলা ফোন কেটে দিলো। তুষার রুহি আর মিশুর সাথে কথা বলছিলো বন্ধুর ফোন পেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। পেপার, ল্যাপটপ নিয়ে বসে কিছু ডিজাইন দেখবে বলে। কিছুক্ষণ পর রুহি গা গুলিয়ে আসতেই নিজের রুমে ছুটে গেলো।

অভিদ, রায়হান বাড়িতে ঢুকে পেছনে ঘুরে মুখে প্লাস্টিক হাসি নিয়ে বলে
” Welcome to my home palace.”
পেছন থেকে সোহাদ রায়জাদা মুখে বড় একটা হাসি ঝুলিয়ে পায়ের জুতো জোড়ার গট গট শব্দ করতে করতে ভেতরে আসে। তার পেছনে পেছনে দুইজন গার্ড এসে দাঁড়ায়। রায়হান তাদের দেখে দাঁতেদাঁত চেপে ধরে। সোহাদ রায়জাদা অভিদের ঘাড় চাপড়ে বলে
” এই নাহলে আমার ছেলে ! নিজের যোগ্যতায় এতোবড় বাড়ি তৈরি করে নিলো। দেখতে হবে তো কার কাছে বড় হয়েছে।”
অভিদ টেডি স্মাইল দিয়ে মনে মনে বলে
” তা তো দেখতেই হবে। তোর কাছে বড় হয়েছিলাম দেখেই সব সত্য জানতে পেরেছি। আর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে আজ এখানে পৌঁছেছি আমি। ”
সোহা রায়হাদা অভিদকে বলে
” কি ভাবছো অভিদ ?”
অভির মাথা নেড়ে হেসে বলে
” নাহ কিছু না, এসো বসবে এসো। কতো বড় লং জার্নি করে এসেছো তুমি!”
সোহাদ রায়জাদা হেসে বলে
” না না আমি ঠিকাছি। পুরো সময় তো শুধু ঘুমালামই।”
অভিদ সোহাদ রায়জাদাকে জোড় করে বসিয়ে দেয়। সোহার রায়জাদা শুধু হাসছে আর বারবার পুরো বাড়িতে চোখ বুলাচ্ছে। রায়হান অভিদের পাশে বসে বলে
” মিস্টার রায়জাদা যখন একদমই টায়ার্ড না তাহলে তার সারপ্রাইজ গুলো দিয়েদে।”
সোহাদ রায়জার চোখ মুখ চকচকে করে উঠে। উৎফুল্ল কন্ঠে বলে
” আরে হ্যা সারপ্রাইজ এর কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। তোমার সারপ্রাইজ দেখার জন্য সেই কবে থেকে এক্সাইটেড হয়ে আছি আমি।”
অভিদ গলা ঝেড়ে হেসে বলে
” সারপ্রাইজ দেওয়া শুরু করলে তো তুমি ওভার এক্সাইটেড হয়ে হার্ট এট্যাক না করে ফেলো ! তাই বলছিলাম রেস্ট নিয়ে, খেয়ে দেয়ে তারপর সারপ্রাইজ দেখবে ।”
সোহা রায়জাদা হা হা করে হেসে দেয়। রায়হান মুখ কুঁচকে মুখে হাসি ঝুলিয়ে তাকায়। সোহাদ রায়জাদা হাসতে হাসতে বলে
” আমি আর হার্ট এট্যাক ? আমার সম্পর্কে তোমার এখনও ধারণা হয়নি অভিদ। এমন কোনো সারপ্রাইজ নেই যার জন্য আমার হার্ট এট্যাক হবে। তুমি তোমার সারপ্রাইজ নিয়ে এসো।”
অভিদ হেসে উঠে যায়। রায়হানও অভিদের সাথে আসে। রায়হান ফিসফিস করে বলে
” কি করবি এখন ? ফুপিদের আনবো আমি ?”
অভির বাকা হেসে বলে
” নিয়ে আয়। তারপর রুহিকে নিয়ে আসবি।”
রায়হান মাথা নেড়ে চলে যায়। অভিদ গিয়ে সোহাদ রায়জাদার পাশে বসে। অভিদ সোহাদ রায়জাদার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে থাকে। কথা বলতে বলতে কিছুক্ষণ পর সোহাদ রাজাদার খেয়াল হলো তার সামনে তিনজন ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে আছে। অভিদ গিয়ে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো। সোহাদ রায়জাদা মাথা তুলে তাকায়। অভিদ মুচকি হেসে বলে
” তোমার প্রথম সারপ্রাইজ !” বলে অভিদ সরে দাঁড়াল। দুইজন অল্প বয়সি ছেলে মেয়েকে চিনতে পারলো না। তবে মাঝে থাকা অর্ধ বয়স্ক মহিলাকে দেখে সোহাদ রায়জাদা দাঁড়িয়ে পড়লো। তাকে ভালো করে চিনে উঠতে কিছুটা সময় লাগলো সোহাদ রায়জাদার। চিনতে পেরে বিস্ময় নিয়ে বলে উঠে
” কৌশিকা ?”
কৌশিকা রায়জাদা হেসে বলে
” চিনতে পেরেছো তাহলে ? আমি তো ভেবেছিলাম আমাকে কোনোদিন চিনতেই পারবে না তুমি।” সোহাদ রায়জাদা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। অভিদ এগিয়ে এসে অভিমান হওয়ার ভান করে বলে
” মিস্টার সিনিয়ার ! তুমি বলেছিলে আমার ফুপিকে তুমি অনেক খুঁজেছো কিন্তু পাওনি। আজ আমার ফুপিকে আমি খুঁজে পেয়েছি তুমি খুশি নও ? পাশে দেখো কে কে রয়েছে ! আমার বোন অনি আর তুষার। কতো বড় হয়ে গিয়েছে তাই না ?”
সোহাদ রায়জাদা অভিদের কথা শুনে ধরে নিলো অভিদ এখনও পর্যন্ত কিছুই জানে না। সোহাদ রায়জাদা জোড়পূর্বক হাসি ঝুলিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে বলে
” হহ্যা! আমি খু…শি হবো না কেনো ? খুব খুশি তাই তো ভালো করে কথাই বের হচ্ছে না আমার মুখ দিয়ে।” সোহাদ রায়জাদা আরো জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে। অভিদ তার আড়ালে বাকা হাসি দেয়। চিন্তিত চেহারায় এগিয়ে এসে বলে
” মিস্টার সিনিয়ার তোমার কি কিছু হয়েছে ? তোমাকে কেমন লাগছে মনে হচ্ছে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছো ।”
কৌশিকা রায়জাদা তাচ্ছিল্য হেসে বলে
” হ্যা আমার ভাইয়া অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে তাকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে যাও নাহলে কখন মরে পরাপারে চলে যাবে টেরও পাবে না।”
সোহাদ রায়জাদা বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে অগ্নিচোখে কৌশিকা রায়জাদার দিকে তাকায়। কোনো রকমে হাত বারিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে পানির গ্লাসটা নিয়ে পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করে। অভিদ আবারও বলে
” তুমি ঠিকাছো চাচ্চু? নাকি হসপিটালে নিতে হবে ?”
সোহাদ রায়জাদা জোড়পূর্বক হেসে হেসে বলে
” নাহ ঠিকাছি আমি। আসলে এতোবছর পর নিজের বোনকে দেখে খুশিতে অসুস্থ হয়ে গিয়েছি এই আর কি। আচ্ছা আমি এখন রুমে যাই !” সোহাদ রায়জাদা দ্রুত পায়ে সেখান থেকে চলে যেতে নিলেই অভিদ তাকে থামিয়ে বলে
” আরে কোথায় যাচ্ছো ? আরেকটা সারপ্রাইজ রয়েছে তোমার জন্য। এটা দেখে আরো খুশি হয়ে যাবে তুমি।”
সোহাদ রায়জাদা আর কিছু দেখবে না বলে মাথা নাড়ালেও অভিদ শুনলো না। অভিদ সোহাদ রায়জাদাকে জোড় করে দাড়ঁ করিয়ে রাখে।
কিছুক্ষণ পর রায়হান রুহিকে নিয়ে সিরি দিয়ে নিচে নামতে থাকে। রুহি মাথা নিচু করে হেটে আসছে। রুহিকে দেখে সোহাদ রায়জাদার মাথায় বাজ পড়লো। সোহাদ রায়জাদা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
রুহি নিচে নেমে তার সামনে এসে দাঁড়ায়। সোহার রায়জাদার মাথা পুরোপুরো ভাবে ঘুরে উঠে। একজন মৃত মানুষ তার সামনে সুস্থ সবল ভাবে কিভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ? সোহাদ রায়জাদার বুকে চিনচিন ব্যাথা করে উঠে। সোহাদ রায়জাদা বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে নিচে পরে গেলো। অভিদ এগিয়ে যেতে গিয়েও সোহাদ রায়জাদার চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছে দেখে বাকা হাসি দিয়ে বিরবির করে বলে
” এখন তো মাত্র শুরু ! আরো কতোবার হার্ট এট্যাক করাবো তা তো ভাবনারও বাইরে।”

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here