মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -২৩+২৪+২৫

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ২৩
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

অভিদ ফিসফিস করে বলে
” রুহি দেখো তোমার পাশে সাপ বসে আছে।”
রুহি নড়েচড়ে আবার শুয়ে পরে। কিছুক্ষণ পর রুহি হুট করে চোখ খুলে চিৎকার দিয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে। অভিদ শব্দ করে হেসে উঠে। রুহি অভিদের গলা জড়িয়ে ধরে অভিদের কোলে বসে চেঁচাতে থাকে
” বাঁচাও বাঁচাও !”
রুমের দরজা সাউন্ড ফ্রুফ হওয়ায় কেউ বাইরে থেকে রুহির চিৎকার শুনতে পাবে না ভেবে অভিদ রুহির চিৎকার না থামিয়ে নিজে আরো জোড়ে হাসতে থাকে। অভিদের এমন হাসি দেখে রুহি চেঁচানো বাদ দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে অভিদের দিকে তাকালো। অভিদ হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা কিন্তু রুহি কোলে বসে থাকায় তা সম্ভব হলো না। রুহি বেডে অবাক তাকিয়ে দেখে কোনো সাপ নেই এখানে। রুহি স্বরে বলে
” আপনি হাসছেন কেনো ? আর কোথায় সাপ ?”
অভিদ নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। হাসি থামিয়ে অবাক হওয়ার ভান করে বলে
” সাপ ! সাপ কোথা থেকে আসবে তাও আমাদের রুমে?”
রুহি ভাবুক হয়ে বলে
” কিন্তু আপনিই তো আমাকে বললেন আমার পাশে সাপ। আমার ভালো করে মনে আছে।”
অভিদ হাসি থামিয়ে বলে
” বোধয় ঘুমের মাঝে কোনো স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছো। তবে যাই বলো না কেনো আমার কিন্তু এই সময়টা ভালোই লাগছে। ”
রুহি ভ্রু কুঁচকে তাকালো অভিদের দিকে। অভিদের কথার মানে বুঝতে পারলো না রুহি। অভিদ রুহির কোমড় পেঁচিয়ে ধরে রুহির ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয়। রুহির পুরো গায়ে কারেন্টের শক লাগে। রুহি চোখ বন্ধ করে নেয় সাথে সাথে। অভিদ রুহির গলায় আর ঘাড়ে নাক দিয়ে আলতো ভাবে ঘষতে থাকে। রুহি জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে অভিদের গায়ের জ্যাকেট খামঁছে ধরে। ছোট ছোট চুমু দিয়ে অভিদ ধীরেধীরে উপরে উঠতে থাকে। উপরে উঠতে উঠতে রুহির কাঁপাকাঁপা ঠোঁটের কাছে গিয়ে থেমে গেলো অভিদ। রুহির ঠোঁট গুলো অসম্ভব কাঁপছে আর রুহির অস্থিরতা তো বাড়ছেই। অভিদ আঙুল দিয়ে রুহির গালে স্লাইড করতে থাকে। রুহি চোখ বন্ধ রেখেই বড়সড় একটা ঢোক গিললো। অভিদ ধীরেধীরে তার মুখ এগিয়ে আনতে থাকে রুহির অধর জোড়ার দিকে। রুহি চোখ খুলতে গিয়েও পারে না। অভিদের নিশ্বাস গুলো আছড়ে পড়ছে তার মুখের উপর। অভিদ এক হাত রুহির কোমড়ে রেখে অন্য হাতে রুহির এক গালে রেখে রুহির অধর জোড়ার সাথে নিজের দুই অধর জোড়া এক করে দেয়। রুহির মাথা হ্যাং হয়ে যায় অভিদের এমন গুরুতর কাজে। রুহি চোখ বড় বড় করে অভিদের দিকে তাকালো। অভিদ চোখ বন্ধ করে নিজের তৃষ্ণা মিটিয়ে নিচ্ছে। রুহি নিজেও চোখ বন্ধ করে নিলো। অনেক্ষণ পর রুহির শ্বাস নিতে প্রবলেম হচ্ছে বুঝতে পেরে রুহিকে ছেড়ে দেয়। রুহি জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে থাকে। অভিদ ঠোঁট কামড়ে রুহির দিকে তাকায়। রুহি স্বাভাবিক হলেও নুয়ে থাকে লজ্জায়। অভিদের ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসিটা দেখা যায়। রুহি মাথা নিচু করে থাকায় কিছুই দেখতে পেলো না। অভিদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে গলা ঝেড়ে বলে উঠে
” হুম, যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। তোমাকে খাবার খেয়ে মেডিসিন খেতে হবে।” রুহি মাথা নাড়ালো। অভিদ ঠোঁট চেপে হাসতে থাকে রুহিকে দেখে। রুহি লজ্জায় মাথা নিচু করেই বেড থেকে নেমে এক দৌড়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো। অভিদ নিঃশব্দে গা দুলিয়ে হাসলো।
কিছুক্ষণ পর রুহি ফ্রেশ হয়ে বের হলো ওয়াসরুম থেকে। একই ভঙ্গিতে এসে বসে পরে। অভিদ হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে রুহিকে খাইয়ে দিতে থাকে। রুহির খাওয়া দেখে অভিদ রেগে ধমকের স্বরে বলে
” মুখে কি তালা মেরে রেখেছো নাকি ? ভালো করে হা করো ! মুখই তো খুলছো না তুমি তাহলে খাবার খাবে কি করে ? সব তো পড়েই যাচ্ছে প্লেটে।”
রুহি ধমক শুনে লজ্জার কথা ভুলে সোজা হয়ে বসে ভালো করে খেতে থাকে। খাওয়া শেষ করে অভিদ উঠে চলে যেতে নিলেই রুহি নিচু গলায় বললো
” আপনি খেয়েছেন ?” অভিদ মুচকি হাসি দিয়ে বলে
” হ্যা অনিকে খাইয়ে দেওয়ার সময় খেতে হয়েছে।” রুহি ভ্রু কুঁচকে অভিদের দিকে পুর্ণ দৃষ্টি দয়ে তাকিয়ে বলে
” অনি কে ?” অভিদ ঠোঁট বাকিয়ে হাসি দিয়ে বলে
” কালকে দেখতে পাবে। অনেকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো তোমাকে।”
রুহি আর কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই অভিদ বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। কিছুক্ষণ পর অভিদ আবার রুমে আসতেই রুহি বলে উঠে
” কিন্তু আমরা কার বাড়িতে আছি ? আর আমরা ইউরোপে কেনো এসেছিলাম ?”
অভিদ রুহির পাশ দিয়ে লাফিয়ে রুহির পাশের জায়গায় শুয়ে পড়লো। রুহি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। অভিদকে এমন লাফানো স্বভাবের রূপে দেখে অনেকটা অবাক লাগছে রুহির। অভিদ হাই তুলে বলে
” আমার খুব ঘুম পেয়েছে। তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো কালকে কথা হবে। গুড নাইট।” অভিদ অন্যপাশ হয়ে শুয়ে পরলো। রুহি মন খারাপ করে শুয়ে পড়লো। অভিদ তাকে কোনো কিছুই বলে না ভেবেই রুহির মন খারাপ হয়ে গিয়েছে। মাথা ব্যাথা থাকায় আবারও কিছুক্ষণের মাঝে রুহি ঘুমে তলিয়ে যায়। রুহির ঘনঘন নিশ্বাস ফেলার শব্দ পেয়ে অভিদ রুহির পাশ ফিরে। রুহির হাত টেনে নিজের কাছে এনে নিজের বাহুডোরে আগলে আরে রুহিকে। রুহিকে দেখতে দেখতে নিজেও এক সময় ঘুমে তলিয়ে যায়।

সকালে ফ্রেশ হয়ে রুমেই বসে রইলো রুহি। কিছুই চেনে না তাই রুহি রুম থেকেও বের হয়নি। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরের পরিবেশ দেখতে থাকে। অভিদ রুহির আগেই ঘুম থেকে উঠে গিয়েছিলো। কফি খেয়ে ফ্রেশ হয়ে এখন শাওয়ার নিচ্ছে। রুহি কানে হেডফোন গুঁজে পছন্দের একটা গান চালু করে দেয়।
অভিদ শাওয়ার থেকে বেরিয়েছে। দুই পা এগোতেই রুম থেকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা রুহিকে দেখতে পেলো। অভিদ শান্ত গলায় বললো
” রুহি ! ভেতরে এসো ব্যালকনিতে যাওয়ার দরকার নেই।”
রুহির কোনো নড়চড় না দেখে অভিদ ভ্রু কুঁচকে ফেলে। অভিদ রুহির পাশে দাঁড়িয়ে দেখে রুহি চোখ বন্ধ করে কানে হেডফোন গুঁজে গান শোনায় মগ্ন হয়ে আছে। অভিদের রাগ সপ্তম আকাশে উঠে যায় হেডফোন দেখে। দুই বোনের এই একটা বাজে অভ্যাস। রুহি তো ভালো না লাগলে কানে হেডফোন লাগায় কিন্তু মিশু তো সারাদিন কানে হেডফোন গুঁজে রাখে। অভিদ টান মেরে হেডফোন ছুটিয়ে নিলো। রুহি চমকে তাকালো। অভিদ রেগে বলে
” কানে হেডফোন লাগিয়ে রেখেছো ভালো কথা আমার কথা কি তোমার কানে যায় না নাকি ? আমরাও তো হেডফোন লাগাই কিন্তু তোমাদের মতো এভাবে এইভাবে কাজ হয় না কেনো বলো তো ? আমরা তো সবই শুনতে পাই কিন্তু তোমাদের কানের কাছে তো বোম ফাটালেও শুনতে পাবে না।” রুহি হা করে তাকিয়ে থাকে। অভিদ একটা হেডফোন নিয়ে এতো কথা কেনো শুনাচ্ছে তাকে ? রুহি মুখ ফুলিয়ে রুমে এসে পরে। পেছন পেছন অভিদও আসে। রুহি আড়চোখে অভিদের দিকে তাকাতেই রুহির চোখ কপালে উঠে গেলো। অভিদ শাওয়ার সেরে বেরিয়েছে তাও শুধু ট্রাওজার পড়ে। গা বেয়ে বিন্দু বিন্দু মুক্তোর মতন পানি পরছে। ভেজা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে সামনে এসে পড়েছে। রুহি একটা বড়সড় ঢোক গিলে সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। উফফ ! এই লোকটা এইভাবে বের হয়েছে কেনো? রুহি কাঁদোকাঁদো গলায় বলে
” আপনি এসব কি পরে বেরিয়েছেন ?”
অভিদ ভ্রু কুঁচকে নিজের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বলে
” কেনো কি পরেছি ? মানে তুমি কি চাইছো তোমার সামনে আমি কিছু না পরেই বের হই ?”
রুহি সাথে সাথে কানে হাত দিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠে
” ছিহ ! এসব কি ধরনের কথা বলছেন ? লজ্জা সরম নেই নাকি আপনার ?”
অভিদ বাকা হাসি দিলো। রুহি ঢোক গিলে চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকালো আবারও। হঠাৎ পানির বিন্দু টপ করে তার কাধে পড়তেই রুহি কেপে উঠলো। রুহি গায়ে ঝাঁকুনি মেরে উঠে। রুহি সঙ্গে সঙ্গে পিছনে তাকিয়ে দেখে
অভিদ তার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। অভিদ তার চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে রুহির কাধে বিন্দু বিন্দু পানি ফেলছে। রুহি চোখ বন্ধ করে অসহায় গলায় বলে
” কি শুরু করেছেন আপনি ? শার্ট পড়ুন !”
অভিদ পেছন থেকে রুহির দিকে কিছুটা ঝুকে রুহির কানে ফিসফিস গলায় বলে
” পড়বো না। আজকে তোমাকে আদর করবো আমি।” রুহির হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে। মনে হচ্ছে অভিদের কথায় নেশাক্ত কোনো কিছু রয়েছে। অভিদ রুহিকে ঘুরিয়ে রুহির কোমড়ে হাত রেখে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় রুহিকে। রুহি ভীতু চাহনি দিয়ে তাকালো অভিদের দিকে। আর অভিদের ঠোঁটের কোণে বাকা হাসির বিরাজমান। রুহি ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে
” ক…কি কর…ছেন আপনি ?”
অভিদ রুহিকে আরো শক্ত বাধনে নিজের সাথে বেধে নেয়। রুহি জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে থাকে। অভিদ তার অধর জোড়া দিয়ে রুহির গলায় বিচরণ চালাতে থাকে। অভিদের এমন ছোঁয়ায় রুহির পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে।
রুহি চোখ বন্ধ করে রাখে। হুট করে অভিদ রুহির ঠোঁটে কামড় মেরে বসে। রুহি ব্যাথায় চোখ মুখ খিঁচে নেয়। অভিদ ঠোঁটে আলতোভাবে চুমু দিয়ে বলে
” আর কখনো কানে যাতে হেডফোন লাগাতে না দেখি আমার সামনে। এই শাস্তির কথাও মনে থাকে যেনো।”
রুহি রাগে ফুসতে থাকে আর ব্যাথায় কাঁদোকাঁদো চেহারা বানিয়ে অভিদের দিকে তাকিয়ে থাকে। অভিদ ঠোঁট চেপে হাসতে হাসতে তৈরি হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে বলে
” আমার সঙ্গে এসো নাহলে দরজা বন্ধ করে রেখে চলে যাবো।” রুহি ঠোঁটে হাত বুলিয়ে দৌড়ে অভিদের পিছু নেয়।।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ২৪
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

অভিদ ঠোঁট চেপে হাসতে হাসতে তৈরি হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে বলে
” আমার সঙ্গে এসো নাহলে দরজা বন্ধ করে রেখে চলে যাবো।” রুহি ঠোঁটে হাত বুলিয়ে দৌড়ে অভিদের পিছু নেয়। অভিদ জ্যাকেটের পকেটে তার ঢুকিয়ে শিশ বাজাতে বাজাতে ড্রইংরুমের সোহার গিয়ে বসে পরে। রুহি অভিদের পাশেই দাঁড়িয়ে থেকে চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পরে। অভিদ হঠাৎ হাক ছেড়ে ডেকে উঠে
” ফুপি ! কোথায় তুমি ? সবাইকে নিয়ে এখানে এসো।”
রুহি ভ্রু কুঁচকে আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে থাকে কে আসবে। কিছুক্ষণ পর রুম থেকে বেড়িয়ে আসে কৌশিকা রায়জাদা আর সিদ্দিকুর রহমান। পাশের দুই রুম থেকে রায়হান আর তুষার, মিশু আর অনি বেড়িয়ে আসে। অপরিচিত মুখ দেখে রুহি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। মিশু এসে রুহির পাশে দাঁড়িয়ে বললো
” মাথা ব্যাথা আছে আর ?” রুহি মাথা নেড়ে না করলো। অভিদ দাঁড়িয়ে সবাইকে দেখিয়ে রুহিকে উদ্দেশ্য করে বলে
” রুহি এরা আমার ফ্যামিলি। আমার ফুপি কৌশিকা রায়জাদা, ফুপা সিদ্দিকুর রহমান, তাদের ছেলে তুষার রহমান আর আমার বোন হৃদিয়া রায়জাদা অনি।”
রুহি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
অনি হা করে তাকিয়ে থাকে রুহির দিকে। হালকা গোলাকার মুখের গড়ন। গায়ের রংটা দুধে আলতার মতো সাদা। ঘন পাপড়িযুক্ত চোখ জোড়া। ঠোঁট গুলোও একদম গোলাপি। অভিদ ৬ ফুট কিন্তু রুহি তার কাধ সমান। অনি বড় একটা হাসি দিয়ে ছুটে গিয়ে রুহিকে জড়িয়ে ধরে আনন্দিত গলায় বলে
” ভাবি কেমন আছো তুমি ? শোনো আমি তোমার একমাত্র ননদিনী। আচ্ছা আমার চ্যাম্প কেমন আছে ?”
রুহি ভাবুক হয়ে বলে
” আমি তো ভালো আছি কিন্তু চ্যাম্পটা আবার কে ?”
অনি ফিকফিক করে হেসে বলে
” আরে চ্যাম্প হলো তোমাদের বাচ্চা। আমি তো ওকে চ্যাম্প বলেই ডাকবো।”
রুহি জিভ কেটে আলতোভাবে পেটে হাত রাখে।
কৌশিকা রায়জাদা এগিয়ে এসে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে অফসোস স্বরে বলতে থাকে
” কতো কষ্ট করেছিস তোরা। আজ যদি সুস্থ থাকতি তাহলে তোকে সব কিছু বলতে পারতাম।”
রুহি কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। সিদ্দিকুর রহমান, তুষার এসে একে একে রুহির সাথে কথা বলে। কিছুক্ষণ কথা বলার পর রুহির অস্বস্তি কেটে গেলো। সবাই এক সাথে বসে ব্রেকফাস্ট করে নেয়। সিদ্দিকুর রহমান বেড়িয়ে গেলো থানায় যাওয়ার জন্য। তুষার আর অনির ভার্সিটির ফ্রেশার ওয়েলকাম এর জন্য আয়োজন করতে হবে তাই তুষার অনিও চলে গেলো।
কৌশিকা রায়জাদা রুহি আর মিশুর সাথে বসে বসে গল্প করতে থাকে। অভিদ গিয়ে টিভি অন করে। চ্যানেল চেঞ্জ করতে করতে অভিদ একটা নিউজ চ্যানেলে গিয়ে থেমে যায়। নিউজ দেখে অভিদ উল্টো পাল্টা ভাবেই দৌড়ে রায়হানের রুমে ছুটে গেলো। অভিদ রুমে ঢুকেই চেঁচাতে থাকে
” রায়হান ! রায়হান কোথায় তুই ? এদিকে আয় ইম্পরট্যান্ট কথা রয়েছে।” রায়হানের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে অভিদ আরো জোরে জোরে চেঁচাতে থাকে। মিনিট দুইএক পর রায়হান ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে এসে রেগে বলতে থাকে
” শালার বাচ্চা ! একটু আস্তে কথা বলতে পারিস না ? এতো জোরে চেঁচানোর কি আছে ? তোর জন্য ওয়াসরুমে যেতে পারবো না দেখছি।”
অভিদ চুপ না থেকে কপাট রাগ দেখিয়ে বলে
” এতোক্ষণ লাগে ওয়াসরুমের কাজ শেষ করতে ? কাজের সময়ই তোর যতো অকাজ উড়ে আসে।”
রায়হান কিড়মিড় করে বলে
” এটা অকাজের কি আছে ? পাগল গয়েছিস তুই ? মনে হচ্ছে তাই।” অভিদ রেগে বলে
” তুই বেশি কথা বলছিস কিন্তু !”
রায়হান অভিদকে থামিয়ে বলে
” ঠিকাছে ঠিকাছে। কি বলতে এসেছিলি সেটা বল।” অভিদ শান্ত হয়ে বসে বললো
” বিয়ের পরেরদিন যে মিডিয়ারা এসেছিলো তারা তো জানেই বর্তমানে যে, রুহি বেঁচে আছে। কিন্তু কথাটা যদি টিভিতে বা সোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে যায় তখন তো সোহাদ রায়জাদা সব জানতে পেরে যাবে আর আমাদের প্ল্যান এর বারোটা বেজে যাবে।”
রায়হান বাকা হাসি দিয়ে বলে
” তোর কি মনে হয় আমি আমার কাজ অপূর্ণ রাখি ? সবগুলোকে বুঝিয়ে দিয়েছি কি কি করতে হবে। সোহাদ রায়জাদা তার সারপ্রাইজ না দেখা পর্যন্ত কোনো খবরই ভাইরাল হবে না। পরে যা হবার হবে কোনো প্রবলেম নেই।”
অভিদ তাছিল্য স্বরে বলে
” অনেক তো সময় হলো এবার নাহয় খেলার আসল মোড় শুরু হবে ! বাংলাদেশে গিয়েই সোহাদ রায়জাদাকে নিয়ে রিসার্চ শুরু করবো। আর সোহাদ রায়জাদাকে ধ্বংস করে আমি আগে নিজের মাফিয়ার পরিচয়টা সামনে নিয়ে আসবো।”
রায়হান চিন্তিত হয়ে বলে
” কিন্তু রুহির কি হবে ? রুহি সুস্থ হবে কবে ? সোহাদ রায়জাদা যদি আবারও ওর উপর এট্যাক করে ?”
অভিদ দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” এবার আমার রুহির কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করলে ! ওকে মেরে ওর মাংস আমি বাঘ আর কুকুরকে খাওয়াবো। অনেক ধৈর্য ধরেছি রুহির বা আমার পরিবারের কারোর কিছু করলে সব ধৈর্যের বাদ ভেঙে দেবো।” রায়হান অভিদের কাধে হাত রেখে শান্ত হতে বলে। অভিদ আড়চোখে রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলে
” যাহ আমার কথা শেষ এবার যতোক্ষণ ইচ্ছে ওয়াসরুমে বসে থাক কেউ ডাকবে না। তুই বললে আমি দরজার বাইরে লিখে দেবো ‘ডোন্ট ডিস্টার্ব মি ‘!”
রায়হান অভিদকে তাড়া করতেই অভিদ দৌড়ে তার রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। রায়হান দরজায় ধাক্কিয়েও খুলতে পারলো না পরে অভিদকে বকতে বকতে রুমে ঢুকে গেলো।

অভিদ দরজা আধখোলা রেখে মোবাইল নিয়ে সোফায় শুয়ে পরে ধপ করে।
এদিকে রুহি গল্প করতে করতে কয়েকটা মিষ্টি, নুডলস খেয়েছে তাতেই পেট থেকে সব উল্টিয়ে বেড়িয়ে আসছে। রুহি ওদের বলে রুমে আসে। দরজা খুলে ঘরে পা রাখতেই রুহির গা গুলিয়ে আসে। রুহি মুখ চেপে ধরে ওয়াসরুমে ছুটে যায়। অভিদ শব্দ পেয়ে ঝটপট উঠে ওয়াসরুমে ছুটে যায়। রুহির চুল গুলো পেছন থেকে এক হাত দিয়ে আটকে অন্য হাতে রুহির পিঠ ঘষতে থাকে। রুহি চোখে মুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। সোজা হয়ে দাঁড়াতেই অভিদের বুকে মাথা এলিয়ে শরীরের ভর ছেড়ে দেয়। অভিদ রুহিকে দুই হাতে আগলে নিয়ে অস্থির হয়ে বলে
” রুহি ঠিকাছো তুমি ? এই রুহি !”
রুহি চোখ বন্ধ রেখেই ভাঙা গলায় জবাব দেয়
” হুম। যেতে পা..রবো নাহ আর।”
অভিদ রুহিকে কোলে তুলে নেয়। রুহি অভিদের বুকে মাথা রাখে। রুহিকে বিছানায় শুয়ে দিতেই রুহি বিছানার সাথে লেপ্টে যায়। অভিদ রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে
” বেশি খারাপ লাগছে ? কিছু খাবে ?”
রুহি ধীরে দুইপাশে মাথা নাড়িয়ে না করলো। অভিদ রুহির পাশে বসে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। কিছুক্ষণ পর রুহি হঠাৎ কাঁদোকাঁদো গলায় বলে উঠে
” আমি নিউ ভাইয়ার সাথে কথা বলবো।”
অভিদ হালকা হেসে বলে
” ঠিকাছে। বিকেলে কথা বলিয়ে দেবো।”
রুহি বায়নার স্বরে বলে
” নাহ এখনি।” অভিদ কিছু বলতে গিয়েও আটকে যায়। মেয়েটা এমনি অভিমান করে নিলা আর নিলয় ছাড়া বাড়ির আর কারো সাথে কথা বলে না। এখন কথা বলতে না দিকে আরো খারাপ লাগবে হয়তো। অভিদ ফোন এনে নিলয়ের নাম্বার ডায়াল করে ভিডিও কল দেয়। রুহি অভিদের হাত ধরে বেডে হেলান দিয়ে বসে। অভিদ রুহির পিঠের পেছন থেকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে রাখে। রুহি একবার হাতের দিকে তাকিয়ে আবার সামনে ফিরে তাকায়। নিলয়ের মুখ ভেসে উঠতেই রুহি ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়। নিলয় শব্দ করে হেসে দিয়ে বলে
” কিরে বোকা মেয়ে কথা না বলেই কান্না কাটি শুরু করেছিস কেনো ? তুই অনেক দূড়ে তাই তোর জন্য আজকে কোনো আইস ক্রিম আনতে পারবো না। তাই কেঁদে লাভ নেই। তবে তুই আসলে সব একসাথে দিয়ে দেবো। যাই হোক বল কেমন আছিস ?”
রুহি নাক টানতে টানতে বলে
” ভালো। তুমি কেমন আছো ?”
অভিদ নাক কুঁচকে বলে
” এই কান্না বন্ধ করো কিছু হলেই কান্নাকাটি করো শুধু।”
রুহি মুখ ফুলিয়ে নেয়। নিলয় হেসে দেয়। তিনজন অনেক্ষণ কথা বললো। কথার এক পর্যায়ে রুহির বাড়ির কথা উঠে। রুহি মুখ কালো করে রাখে। বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করে না। শুধু চুপচাপ বসে থাকে আর অভিদ, নিলয় রুহিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বাড়ি নিয়ে কথা বলতে থাকে।
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে রুহি ঘুমিয়ে পরে।
১ সপ্তাহ কেটে যায়। কালকে রুহিরা সবাই বাংলাদেশের ফ্লাইটে উঠবে। সবাই প্যাকিং কররে ব্যস্ত।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ২৫
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

১ সপ্তাহ কেটে যায়। কালকে রুহিরা সবাই বাংলাদেশের ফ্লাইটে উঠবে। সবাই প্যাকিং করায় ব্যস্ত।
অভিদ অনেক আগে থেকেই খেয়াল করেছে রুহি বিছানায় মুখ কালো করে বসে রয়েছে। অভিদ প্যাকিং করতে করতে আদুরে গলায় বলে
” রুহি ! কি হয়েছে তোমার ! মন খারাপ কেনো ?”
রুহি অভিদের দিকে একবার তাকিয়ে ফোন হাতে নিলো। অভিদ তার প্রশ্নের কোনো উত্তর পেলো না। অভিদ প্যাকিং শেষ করে রুহির সামনে এসে বসে গম্ভীর গলায় বলে
” কি হয়েছে উত্তর দিচ্ছো না কেনো আমার প্রশ্নের ?”
রুহি ঠোঁট উল্টে বলে
” অনি, ফুপি, ফুপা , ভাইয়াকে অনেক মিস করবো।”
অভিদ এক ভ্রু উঁচু করে বলে
” আচ্ছা আমাকে কোনোদিন মিস করেছো তুমি ?
অফিসে গেলে তো একবারও আমাকে ফোন করে দেখো না। আর এখানে কয়েকদিন থেকেই সবাই মিস করবে বলছো ?”
রুহি মুখ ফুলিয়ে বলে
” আপনি আর ওরা কি এক নাকি?” অভিদ চোখ ছোট ছোট করে বলে
” কেনো আমাদের মধ্যে কিসের পার্থক্য ?”
” ওরা তো সবাই ফ্যামিলি। অনিও আমার বোনের মতো হয়ে গিয়েছে আর আপনি তো…. ”
অভিদ ভ্রু নাচিয়ে বলে
” কি আমি ? কি হই আমি তোমার বলছো না কেনো ?”
রুহি আমতা আমতা করে বলে
” আমার হাজবেন্ড।” অভিদ রুহির দিকে কিছুটা ঝুকে বলে
” শুধু হাজবেন্ড ? আর কিছু না ?”
রুহি অভিদের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে বলে
” আর কি ?”
অভিদ রুহির দিকে ঝুঁকতে ঝুঁকতে রুহির উপর আধশোয়া হয়ে যায়। রুহি বারবার ঢোক গিলছে অভিদকে দেখে। অভিদ রুহির ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলে
” শুধু হাজবেন্ড না তোমার সব কিছুই আমি।”
রুহি অবাক হয়ে নিজের ঠোঁটের উপর হাত ছুঁয়ে রাখে। অভিদ মুচকি হাসি দিয়ে আবার রুহির গালে ঠোঁট ছুঁয়ে উঠে বসে। রুহি চোখ বড় বড় করে অসহায় চাহনি দিয়ে অভিদের দিকে তাকিয়ে থাকে। অভিদ রুহির পাশে শুয়ে বলে
” ফুপি, তুষার, অনি সবাই যাচ্ছে আমাদের সাথে শুধু ফুপা বাদে। ফুপা এখানকার থানার অফিসার তাই বেশিদিনের জন্য ছুটিতে গেলে থানায় প্রবলেম হতে পারে।”
রুহি অবাক হয়ে বলে
” তার মানে সবাই যাচ্ছি আমরা ? কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন শুধু আমরা চলে যাবো এখান থেকে।”
অভিদ মাথা নেড়ে বলে
” হ্যা আমরাই তো যাবো। আমাদের সাথে আমার ফ্যামিলিও যাবে। শুধু তোমাকে রেখে যাবো।”
রুহি ভেংচি কেটে অন্যদিকে ফিরে তাকায়। অভিদ মোবাইল টিপতে টিপতে হঠাৎ ওর চোখ রুহির পেটের উপর যায়। রুহির পেট আগের তুলনায় কিছুটা বড় দেখাচ্ছে। অভিদের মাথায় হুট করে এক রাশ পাগলামো এসে হানা দেয়।অভিদ রুহির পাশে বসে রুহির কোমড় জড়িয়ে ধরে। রুহি ঘাড় কাত করে অভিদের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললো। অভিদ রুহির চেহারা দেখে ঠোঁট চেপে হাসে। রুহি বুঝতে পারলো না অভিদের কাজ কর্ম। অভিদ রুহির পেটের উপর থেকে কামিজ উঠিয়ে রুহির পেটে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। রুহির পুরো শরীরে কাটা দিয়ে উঠে অভিদের ছোঁয়ায়। রুহি চোখ বন্ধ করে নেয়। অভিদ বারবার ছোট ছোট চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিতে থাকে। রুহি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
” ক..কি ক…রছেন আ..পনি ?”
অভিদ রুহির পেটে একটা ডিপ কিস দিয়ে সোজা হয়ে বসে রুহির গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে ধীর গলায় বলে
” আমার বাচ্চাকে আদর করছি। তোমারও আদর চাই নাকি ?”
রুহি লজ্জায় টমেটো হয়ে গেলো অভিদের কথা শুনে। অভিদ রুহির কানের লতিতে জোড়েসড়ে
কামড় দিয়ে বসে। রুহি ব্যাথায় কুকড়ে উঠতেই অভিদ ছেড়ে দেয় রুহিকে। অস্থির হয়ে বলে
” সরি সরি রুহি আমি খেয়াল করিনি জান। বেশি ব্যাথা পেয়েছো তুমি ?”
রুহি কান ঢলতে ঢলতে রেগে অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” তো ব্যাথা পাইনি ? আমাকে দেখে কি আপনার রবোট মনে হয় নাকি যে ভেঙে ফেললেও ব্যাথা পাবো না।”
অভিদ কাঁদোকাঁদো চেহারায় দুই কানে হাত রেখে বলে
” সরি বাবুই !” অভিদকে দেখে রুহির পেট ফেটে হাসি আসতে থাকে। রুহি হাসি আটকাতে না পেরে ফিকফিক করে হেসে দিলো। অভিদ কান ছেড়ে বলে
” কি হলো হাসছো কেনো তুমি ?”
রুহি তার ফোন হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে বলে
” আবার কান ধরুন তো !”
অভিদ কিছু বুঝতে না পেরে আবার আগের মতো কান ধরে বসে। রুহি সময় নষ্ট না করে সাথে সাথে কয়েকটা ফটো ক্লিক করে নেয়। অভিদ অবাক হয়ে বলে
” ছবি কেনো তুললে তুমি ?”
রুহি পেট ধরে হাসতে হাসতে ছবি দেখিয়ে বলে
” দেখুন আপনার ছবি। আপনার মতো এতোবড় মানুষ কিনা আমার জন্য কান ধরে রাগ ভাঙাচ্ছেন ?”
অভিদ মুচকি হেসে বলে
” তোর জন্য আমি আমার প্রাণ দিয়ে দিতেও রাজি তবে যতোদিন বেঁচে থাকবো শুধু তোকে চাই। আমার রুহি বাবুই পাখিকে।”
রুহি অভিদের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে গলা ঝেড়ে বলে
” আচ্ছা এটা যদি আপনার Facebook page আর instagram এ পোস্ট করে দেই তাহলে কেমন হবে ?”
অভিদ চোখ বড় বড় করে রেগে বলে
” পাগল নাকি ? আমার এসব ছবি তুমি ফেসবুকে পোস্ট করবে কেনো ? আমাকে বলতে তাহলে আমি কয়েকটা সুন্দর পোজ দিতাম ! এইসব ছবি ডিলিট করো এখনই।”
রুহি হাসতে হাসতে বলে
” একদমই না। সবগুলো ছবি আমি আপলোড করবো।” অভিদ বুঝ দেওয়ার জন্য বলে
” দেখো রুহি এমন কিছু করো না। তোমার জন্য খুবই বিপদ হবে। আর আমার এমন ফটো দেখলে সোশাল মিডিয়ার সবাই আমাকে নিয়ে ট্রল না শুরু দেয় ! প্লিজ এসব কিছু করবে না।”
রুহি ভ্রু কুচকে বলে
” আমার বিপদ কিসের বিপদ আমার ?” অভিদ হন্তদন্ত হয়ে বলে
” সেটা তুমি বুঝবে না আমার ফোনটা দাও তুমি।”
রুহি মোবাইল উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে বলে
” এটা আপনার ফোন ? কই আমি তো দেখছি এটা আমার ফোন ! আচ্ছা আমি কি আজকাল চোখে কম দেখছি নাকি ?”
অভিদ কপাল চাপড়ে বলে
” আরে হ্যা, হ্যা এটা তোমরা ফোনই কিন্তু ছবি গুলো ডিলিট করো প্লিজ !”
রুহি মাথা নেড়ে না করে। অভিদ আর রুহি ফোন নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে যায়। রুহি ফোনটাকে লুকিয়ে নিলেও অভিদ বারবার ফোন নেওয়ার চেষ্টা করছে এভাবে ফোন নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে করতে রুহি বেডের একদম শেষ পর্যায়ে এসে পরে। দুজনের একজনও খেয়াল করলো না। রুহি অভিদকে বলে
” এই যে আমি ফেসবুকে আপলোড করে দিলাম।”
রুহি এসব বলে ভয় দেখাতে দেখাতে রায়হানের কাছে ছবিগুলো সেন্ড করে দেয়। অভিদ রাগে ফুসফুসতে কিছু বলার আগেই রুহি খাটের কোণা থেকে চিৎকার দিয়ে পরে যায়। রুহি একা পরেনি। নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে অভিদের শার্ট খামঁছে ধরেছিলো যার কারণে টান সামলাতে না পেরে অভিদও রুহির উপর গিয়ে পরে। রুহি পড়ার আগে মাথাটা গিয়ে বেডের পাশ টেবিলে বারি খায়। অভিদ রুহির গালে হাত রেখে আলতোভাবে চাপড় দিয়ে ডাকতে থাকে
” রুহি ! এই রুহি ঠিকাছো তুমি ? বাবুই পাখি ! এই রুহি !”
রুহির মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে। রুহি মাথায় হাত রাখতেই হাতে তরল কিছু অনুভব করে হাত সামনে আনে। হাতটা রক্তে লাল হয়ে আছে তা দেখে রুহির মাথায় ব্যাথা বাড়তে থাকে। ব্যাথা বাড়তে বাড়তে রুহির চোখের সামনের সব অন্ধকার হয়ে যায়। অভিদের শার্ট খামঁছে ধরা হাতটাও ঢলে পরে গেলো। অভিদ তাড়াতাড়ি উঠে বসে রুহিকে কোলে উঠিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়। চেঁচিয়ে দুইবার রায়হানকে ডাকতেই সবাই এসে উপস্থিত হয়। রুহির মাথার এক পাশ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। রায়হান দ্রুত একজন বডিগার্ডকে ইনফরম করে ডক্টর ডেকে আনার জন্য।
অভিদ রুহির পাশে বসে রুহির মাথার ব্লিডিং বন্ধ করার চেষ্টা করে কিন্তু কোনোভাবে কোনো রকমের কাজ হচ্ছে না। অভিদ অস্থির হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর তিনজন বডিগার্ড ধরে বেধে একজন ডক্টরকে এনে বসায়। ডক্টর উঠে চলে যেতে নিলে অভিদ আর রায়হানের ধমক শুনে ভয়ে রুহির ট্রিটমেন্ট করতে থাকে। অনেক কষ্টে রুহির ব্লিডিং বন্ধ করা হয়। ডক্টর অভিদের সাথে কথা বলে ভয়ে ভয়ে একপ্রকার দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো। সবাই বেড়িয়ে গেলে অভিদ রুহির পাশে বসে থাকে।
পরেরদিন রুহির কিছুটা বেটার ফিল করে তাই সবাই তাদের ফ্লাইটের জন্য রওনা দেয়।
বাংলাদেশে ফেরার পরদিনই রায়হান অভিদের সেই ছবি নিয়ে অনেক মজা করলো। ফেসবুকে আপলোড করার ভয়ও দেখালো। অভিদ শুধু রুহির দিকে মুখ ফুলিয়ে রেখে তাকিয়ে ছিলো। রুহি মুখ টিপে হাসছিলো। দুইদিন পর……
সোহাদ রায়জাদার স্বপ্নের সেই ডিল ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছে আজকে। এতোবছর ধরে অপেক্ষা করছিলো সেই অফিসের সাথে কন্ট্রাক্ট করার। সেই স্বপ্নটা পূরণ হচ্ছে বলে সোহাদ রায়জাদা অনেক পার্টি দিয়ে সেলিব্রেশন করছিলো কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে তারা কন্ট্রাক্ট ক্যান্সেল করে দিয়েছে। সোহাদ রায়জাদার মাথা ফুটন্ত আগুনের গোলার মতো হয়ে রয়েছে। সেই অফিসে Owner কে পেলে এখনই মেরে ফেলতো সেটাই ভাবছে সোহাদ রায়জাদা। রাগের মাথায় নেক্সট উইকই বাংলাদেশের ফ্লাইট ফাইনাল করে।
এদিকে অভিদ আর রায়হান সোহাদ রায়জাদার কাজে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রায়হান আর অভিদই প্ল্যান করে সব করেছে। সেই ডিল দিয়ে বাংলাদেশে আসা পিছিয়ে দেওয়া আবার সেই ডিল ক্যান্সেল করেই বিডিতে আসা এগিয়ে নিয়ে এসেছে।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here