মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -২০+২১+২২

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ২০
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

সোহাদ রায়জাদা প্রচণ্ড চালাক হওয়ায় এমনি এমনি ছাড়েনি তাদের। সাথে তার এক ছোট সিক্রেট গ্যাং কে পাঠিয়েছে যারা আড়াল থেকে তাকে সব ধরনের খবর দেবে।
অভিদও এতোদিনে কম চালাক হয়নি। সোহাদ রায়জাদার সব চালাকি বুঝতে পেরেছে। অভিদ সোহাদ রায়জাদার সিক্রেট গ্যাং এর চোখের আড়ালে পুলিশস্টেশনে যোগাযোগ করে। আর সেখানে জানায় তারা বিদেশ থেকে এসেছে কিন্তু এক মাফিয়া গ্যাং এর লোকরা তাদের পিছু পরে আছে। পুলিশরা অভিদ আর রায়হানের সাথে থেকে সবকিছুর খোঁজ খবর নিয়ে দেখে অভিদ সত্যি বলেছে। পুলিশের একটা গ্যাং এর কিছু লোক অভিদ আর রায়হান এর সাথে তাদের মিশে যায় যাতে সেই লোকদের ধরতে পারে।
অভিদ, রায়হানের সাহায্যে দুইদিনের ভেতর পুরো টিম সিক্রেট গ্যাং কে ধরে একেকজনকে জেলে ঢুকিয়ে নেয়। অভিদ, রায়হান শুধু একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসলো। দুজন স্টেশন থেকে বেড়িয়ে হোটেলের পথ ধরে। মাঝে অভিদ বলে উঠে
” রায়হান ! আমরা নিজেরা কিছু করি ? মানে বিজনেস টাইপ কিছু।”
রায়হান তার পা চালানো থামিয়ে দিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে
” বিজনেস ? বিজনেস করতে কি কি লাগে জানিস তো ? কতো কতো টাকা লাগবে যেগুলো আমাদের নিজেদের যোগার করা সাধ্য নয়। টাকার জন্য কি তুই সোহাদ রায়জাদার কাছে হাত পাতবি ?”
অভিদ ভ্রু কুঁচকে বলে
” তোর এসব কেনো মনে হচ্ছে ? আমি কি বলছি ওই লোকটার থেকে টাকা চাইবো ? আমি টাকা যোগাড় করবো। চারমাস পর তো আমার আঠারো বছর পূর্ণ হবে তাহলে দাদাই এর লিখে দেওয়া সম্পত্তি তো আমার হবে। সেখান থেকে কিছু টাকা লোন নেবো আর আমার জমানো প্রায় অনেক টাকাই রয়েছে। সেসব দিয়ে প্রথমে ছোটখাটো একটা কাজ শুরু করবো। তারপর যদি আমাদের ভাগ্যে কিছু থাকে তাহলে আমরা সাকসেসফুল হবো নাহলে দেখি কি হয়।”
রায়হান কিছুক্ষণ ভেবে বলে
” ঠিকাছে চেষ্টা করলে তো ক্ষতি নেই। করে দেখতেই পারি। তবে এতদিন আমরা কি হোটেলেই থাকবো ? আর ওই জানোয়ারকে কি বলে বোঝাবি ?”
অভিদ হাটতে হাটতে বলে
” দেখি কি করা যায়। আপাতত কয়েকদিন হোটেলেই থাকি আমরা।”
দুজন হাটতে হাটতে হোটেলের সামনে এসে পরে তখন রায়হান বলে উঠে
” অভিদ ! কালকে আমরা আমাদের বাড়িতে যাই ?”
অভিদ চমকে রায়হানের দিকে তাকালো। রায়হানের চোখ ছলছল করছে। অভিদেরও নিজের বাড়ির কথা মনে পরে গেলো। অভিদ মলিন স্বরে বলে
” বাড়িতে যাবি ? সেখানে কি বিভিন্ন সাজ সজ্জায় দিয়ে তৈরি ছোট বেলার সেই বড় বাড়িটা পাবি ? তোর কি মনে হয় সেই বাড়ির কোনো অস্তিত্ব আছে ? সোহাদ রায়জাদা কি বাড়িটা আদো রেখেছে ? নাকি ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে ?”
রায়হান বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে
” দেখতে চাই আছে কিনা। আমাদের বাড়ির একটুকু অংশের স্মৃতি রয়েছে কিনা ! একবার দেখতে তো কোনো সমস্যা নেই !”
অভিদ ধীর পায়ে হাটা ধরে আবারো। নিঃশব্দে বললো
” ঠিকাছে যাবো কাল।” রায়হান মুচকি হাসি দিলো। দুজন হোটেলে ভেতর চলে গেলো।
পরদিন সকাল হতেই দুজন ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে যায়। রায়হান ট্যাক্সিতে উঠতে উঠতে বলে
” আচ্ছা আমরা তো আমাদের বাড়ির এড্রেসই জানি না। আমরা খুঁজে বের করবো কি করে ?”
অভিদ হালকা হেসে বলে
” আমি কালকে চাচ্চুর সাথে ছোট বেলার ইমোশনাল কথা বলে কথার তালে তালে সেসব জায়গার নাম জেনে নিয়েছি। সো সেসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ”
রায়হান বড় একটা হাসি দিলো।
অভিদ রায়হান দুজন প্রথমে তাদের জেনে নেওয়া একটা জায়গায় গেলো। যেখানে অভিদদের বাড়ি ছিলো। অভিদ দুই একজনকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলে সেই বাড়ি আর নেই তবুও অভিদ জায়গাটা চিনে নিয়ে সেখানে আসে।
সেই জায়গার সামনে আসতেই অভিদের চোখে পানি টুইটুই করতে থাকে। ছোট বেলার দেখা সেই ডুপ্লেক্স বাড়িটার জায়গায় ১৫ তলা বিল্ডিং তৈরি হয়েছে। অভিদ কিছুক্ষণ চোখে পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। রায়হান অভিদের কাধে হাত রেখে বলে
” আয় সিকিউরিটি গার্ডের কাছে যাই।”
অভিদ ঢোক গিলে জড়ানো গলায় বলে
” সেখানে গিয়ে আর কি হবে ? যা দেখার তো দেখেই নিলাম।”
রায়হান অভিদের কথায় পাত্তা না দিয়ে অভিদকে জোড় করে সিকিউরিটি গার্ডের কাছে নিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে দুজন মুখে মাস্ক পরে নিলো যাতে না চিনতে পারে। দুজনকে দেখে দুইজন সিকিউরিটি গার্ড বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
সিকিউরিটি গার্ডের একজন বলে
” কি চাই এখানে ? কারো সাথে দেখা করতে আইছেন নাকি ?”
রায়হান আর অভিদ একে অপরের দিকে তাকালো। রায়হান আমতা আমতা করে বলে
” হ্যা আসলে আমরা একটা ইন্টার্ভিউর জন্য এসেছিলাম। আমরা জানতে পেরেছি এটা নাকি সেই লোকেরই নিজের বাড়ি তাই এখানে আসতে হয়েছে আমাদের।”
সিকিউরিটি গার্ড দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতে থাকে। রায়হান বুঝতে না পেরে তাকিয়ে রইলো। দুজন আবারও রায়হান আর অভিদের দিকে তাকিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলো। দুজন একে অপরের দিকে মাথা নাড়ে। রায়হান এবার বিরক্তর সঙ্গে বলে
” এই যে আপনারা কি শুরু করেছেন ? আমাদের কি ঢুকতে দিবেন নাকি দেবেন না ! এভাবে দার করিয়ে রেখে আমাদের হ্যারাস করছেন কেনো ?”
সিকিউরিটি গার্ডের একজন বলে উঠে
” আমরা করছি নাকি আপনারাই করতাছেন হেডাই বুঝতে চাইতাছি। আপনারা কি চোর ডাকাত নাকি অন্য কিছু ?”
রায়হান থতমত খেয়ে বলে
” মানে ? আপনি কিন্তু এখন আমাকে অপমান করছেন ! আমি বাড়ির মালিককে জানাতে বাধ্য হবো।”
সিকিউরিটিগার্ড রেগে বলে
” আপনারেই আগে কে বাঁচায় সেডা আমি দেখমু। আপনি দেখা করতে আইছেন কার লগে হেডা কন আগে।”
অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” আমরা অনয় রায়জাদার সাথে দেখা করতে এসেছি।”
দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। অভিদের মাথায় এবার রাগ চড়ে যায়। দুই অকর্মার ঢেঁকি শুধু মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আকাজ করে যাচ্ছে। তাদেরও সুযোগ নেই যে কিছু করবে। একজন বলে
” অনয় রায়জাদা ? মজা করতে আইছেন ? লোকটা তো কবেই আরেকজনের হাতে হত্যা অইছে। সাড়ে ১১ বছর হইয়া গেছে বেডা মরছে। হের ভাই সোহাদ রায়জাদা এখন তার সব কিছুতে রাজত্য করতাছে। এই যে বড় বিল্ডিং দেখতাছো এইডাও সোহাদ স্যার করাইছে। বাপে বাড়ি ভাইঙ্গা এসব করছে। পুরা বিল্ডিং বানানোর পর সব ফ্ল্যাট বেইচা দিছে শুধু একটা ফ্ল্যাট বাদে। আর হে নিজে এখন সুইজারল্যান্ড থাকে।”
অভিদ তার হাত মুঠিবদ্ধ করে নেয়। সোহাদ রায়জাদার প্রতি বারবার তার প্রতিশোধের গভীরতা বেড়ে যাচ্ছে। নিজের বাবার জায়গাটাকেও এক প্রকার বিক্রি করে দিয়েছে টাকার জন্য। এমন কি অভিদকে জায়ানাওনি।
রায়হান চোখ বন্ধ করে বড় একটা নিশ্বাস ফেলে অভিদকে উদ্দেশ্য করে বলে
” চল আর কিছু জেনে লাভ নেই।”
অভিদ আর রায়হান চলে আসে সেখান থেকে। অভিদ এবার রায়হান এর বাড়ির এড্রেসে চলে যায়। আগের মতো জিজ্ঞেস করে রায়হানের বাড়ি খুঁজে বের করে। তবে সেই জায়গায় আসতেই দুজনই বিস্ময়ে ছেয়ে গেলো। অভিদদের বাড়ি পুরো পরিবর্তন হলেও রায়হানের বাড়ির একটুও পরিবর্তন দেখা গেলো না। শুধু বাড়িটার উপর কিছুটা পুরোনো বাড়ির মতো দাগ পরে গিয়েছে। রায়হান অবাক স্বরে বলে
” এটা কিভাবে সম্ভব ? তোদের বাড়ির কোনো অস্তিত্ব নেই সেখানে আমার বাড়ির কোনো পরিবর্তনই হয়নি।” অভিদ নিজেও হা করে তাকিয়ে থাকে। রায়হান অভিদকে দেখে হেসে দেয়। অভিদ থতমত খেয়ে মুখ বন্ধ করে নেয়। রায়হানকে হাসতে দেখে অভিদ বলে
” দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসতেই থাকবি নাকি ? ভেতরে চল আমরা দেখি বাড়িটার ভেতরে মানুষ আছে নাকি নেই।” রায়হান হাসি থামিয়ে অভিদকে নিয়ে ভেতরে ঢোকে। দরজা খুলতে নিলে দেখে ভেতর থেকে বন্ধ সেটা। রায়হান কপাল কুঁচকে বলে
” কে থাকে এখানে ?”
অভিদ বিরক্তকর গলায় বলে
” সেটা বাইরে থেকে কিভাবে জানবি তুই ? নক কর দেখ কেউ আছে কিনা।” রায়হান মাথা নেড়ে নক করে। কয়েকবার নক করতেই একজন মহিলা দরজা খুলে দেয়। রায়হান তাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো। ছোট বেলায় এই মহিলাকে সার্ভেন্ট হিসেবে রাখা হয়েছিলো। সে এখনও এখানে কি করছে ভাবতে থাকে রায়হান। কিছুক্ষণ চুপ থেকে রায়হান তার পরিচয় দিয়ে জিজ্ঞেস করে সে এখানে কেনো ?
মহিলা রায়হানকে পেয়ে কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করে রায়হান, অভিদের মা,বাবাকে নিয়ে। তারপর বলে রেদোয়ান আহমেদ নাকি তাকে এতো বছর ধরে এখানে রেখেছে সাথে আরো দুইটা ছেলে, মেয়ে থাকে আর মাসে মাসে তাকে সেলারি দিয়ে দেয়। রায়হান অভিদ কিছুটা অবাক হয় কথাটা শুনে। অনেক কথা বলার পর রায়হান আর অভিদ ঠিক করে ওরা এখন থেকে এখানেই থাকবে। দুজন তাদের প্ল্যান অনুযায়ী এখানেই শিফট হয়ে যায়। অভিদ সোহাদ রায়জাদার সাথে কথা বলে। পরে অভিদ জানায় সে নিজে কিছু করতে যায় তাই কয়েকমাস বাংলাদেশে থাকবে। সোহাদ রায়জাদা ও কিছু বলে না শুধু সায় দেয় কারণ সোহাদ রায়জাদার কাছে অভিদ একটা বোকা ছেলে। তার ধারণা ছিলো অভিদ কোনো কিছুই করতে পারবে না তাই সে বাধা দেয় না। কয়েকমাস পর অভিদের আঠারো বছর পূর্ণ হয়। অভিদ আর রায়হান খুব বড় করে নিজেদের মধ্যে সেলিব্রেশন করে। কারণ তারা ধরে নেয় এরপর থেকে তাদের জীবনের সব কিছু বদলে যাবে। কয়েকদিন পর অভিদ লয়ারের সাথে কথা বলে। এক মাসের মাঝে প্রায় অনেক টাকা নিজের ব্যাংক একাউন্ট থেকে লোন নেয়। তারপর দুজন মিলে ছোটখাটো একটা কাজ শুরুই করে। সাথে কয়েকজন অসহায় লোককে কাজে নেয়।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ২১
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

এক মাসের মাঝে প্রায় অনেক টাকা নিজের ব্যাংক একাউন্ট থেকে লোন নেয়। তারপর দুজন মিলে ছোটখাটো একটা কাজ শুরুই করে। সাথে কয়েকজন অসহায় লোককে কাজে নেয়। ধীরেধীরে বিজনেস বড় হতে থাকে কর্মচারীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় হলো আড়াই বছরের কাছাকাছি সময়ে অভিদের ব্যবসা টপ ১০ লেভেল এর মাঝে জায়গা করে নেয়। এতো অল্প বয়সে দুজনের পরিশ্রম আর প্রতিভা দেখে সবাই হতবাক হয়ে যায়। এতো কম বয়স সাথে এতো কম সময়ে একটা কোম্পানিকে এতো বড় জায়গায় নিয়ে আসা মোটেই সহজ ব্যাপার না। সবচেয়ে বেশি অবাক হয় সোহাদ রায়জাদা। অভিদকে তিনি ছোট বেলার থেকেই বোকা ভেবে এসেছিলো সব সময় চেয়েছিলো নিজের কাজে ব্যবহার করতে কিন্তু বোকা ভেবে তেমন কোনো গুরুত্ব দিতো না। অভিদ, রায়হান ধীরেধীরে তাদের পরিশ্রম বাড়াতে থাকে। এই কোম্পানি থেকে তাদের দুইটা Branch তৈরি হয় বাংলাদেশে। অভিদ রায়হান ধীরেধীরে অনেক উপরে জায়গা করে নিতে থাকে। নিজেদের উপার্জনে বাড়ি, গাড়ি সব করে নেয়। অভিদের মাথায় এবার সোগাদ রায়জাদার উপর প্রতিশোধ নেবার ব্যাপারটা গভীর ভাবে জেকে বসে। অভিদের পরিকল্পনায় রায়হান আর অভিদ অফিসের পাশাপাশি মাফিয়া পদে যোগ দেয়। তবে দুজন এই মাফিয়ার কথা গোপন রাখে কারণ তারা সোহাদ রায়জাদাকে এসব জানাতে দিতে চায় না। সোহাদ রায়জাদাকে অভিদ একদম মাটিতে মিশিয়ে সামনে থেকে আঘাত করতে চায়। অভিদ, রায়হান O.R.R. মাফিয়া গ্রুপ নামে সিলেক্ট করে তাদের টিমকে। সোহাদ রায়জাদাকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্য থাকলেও ধীরেধীরে তাদের এই মাফিয়া গ্রুপও সবার মাঝে জায়গা করে নেয়। সবার মনে প্রথমে এদের নিয়ে ঘৃণা থাকলেও ছোট বড় সবাই O.R.R. গ্রুপকে ভালোবাসতে থাকে। ওদের এই মাফিয়া গ্রুপের নাম প্রথমে বাংলাদেশের মাঝে থাকলেও পরে অনেক দেশে ছড়িয়ে যায়। যারা লুকিয়ে অনৈতিক কাজ করে থাকে তাদের সব কাজ নষ্ট করে পুলিশের হাতে তুলে দিতো অভিদের টিম। তবে অভিদ প্রত্যেকটা কাজের লিডারদের নিজে শাস্তি দিতো। নারী, শিশু পাচার কারীদেরও শাস্তি দিতো। এই মাফিয়া গ্রুপও নেপাল, সুইজারল্যান্ড, লন্ডন, আমেরিকা সহ আরো কয়েকটা দেশে ফ্যামাস। সবাই O.R.R গ্রুপকে মাফিয়া কিং গ্রুপ হিসেবে জানে তবে সবার কাছেই এখনও অজানা এই মাফয়া গ্রুপ এর লিডার কে বা কারা। অভিদরাও জানতে পারে সোহাদ রায়জাদা শুধু অন্যের জিনিস নিতে না সাথে ড্রাগস সেল, নারী পাচার সহ অনেক খারাপ কাজের সাথেই যুক্ত রয়েছে। এবার অভিদ, রায়হান মোটেও অবাক হয়নি সোহাদ রায়জাদার অপকর্মের কথা শুনে। যে নিজের পরিবারের ছয় ছয়টা মানুষকে খুন করতে পারে তার কাছে এসব হাতের ময়লা বলা চলে। অভিদের পাঠানো এক লোককে সোহাদ রায়জাদার অফিসে পাঠায় কর্মচারী রূপে। অভিদের প্ল্যান অনুযায়ী লোকটা খুব সুক্ষ্মভাবে অভিনয় করে সোহাদ রায়জাদার প্রিয় হয়ে যায়। অভিদের কথা মতো সেই অফিসের যতো সিক্রেট ফাইল ছিলো সব চুড়ি করে অভিদের হাতে তুলে দেয়। অভিদ সেটা দিয়ে সোহাদ রায়জাদার সেই সাধের অফিস ডুবিয়ে দেয়। সোহাদ রায়জাদা বুঝতে পারে না তার সাথে কে এমন করেছে। অনেক খোঁজা খুঁজির পরও কোনো হুদিস পায়নি তার। অভিদ একে একে সোহাদ রায়জাদার ড্রাগস গোডাউন, নারী পাচার কারির ব্যবসা ডুবিয়ে দিতে থাকে। শত শত কোটি টাকার লস হতে থাকে সোহাদ রায়জাদার। লসে সোহাদ রায়জাদার মাথা হ্যাং হয়ে যাওয়ার অবস্থা ছিলো। তখন অভিদ সোহাদ রায়জাদাকে ফোন করে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে হেল্প করার প্রস্তাব দেয় সোহাদ রায়জাদার অবস্থা আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো হয়। সেই টাকা দিয়ে আবারও সোহাদ রায়জাদা অনৈতিক কাজ শুরু করে। তার কোম্পানির সেই শাখা আগের জায়গায় উঠাতে না পারলেও আবার সব ধরনের অনৈতিক কাজ শুরু করে। অভিদও হুট হাট করে এট্যাক করে তার কোটি কোটি টাকা লস করিয়ে দেয়। বারবার এমন হতে থাকায় সোহাদ রায়জাদা প্রচুর ক্ষেপে যায়। কে তার এতো ক্ষতি করছে সেটা খুঁজে বের করার জন্য উঠে পরে লাগে। অনেক কষ্টে সেই মানুষটার পরিচয় জানতে পারে। O.R.R. Mafiya king তার সাথে এসব করছে তবে এর চেয়ে বেশি কিছু আজও খুঁজে বের করতে পারেনি। নামের ফার্স্ট ওয়ার্ডের উপর সন্দেহ করে অভিদ আর রায়হানের উপর খোঁজ লাগায় কিন্তু অভিদ রায়হান আগে থেকেই সব বুঝতে পারে। যার কারণে সোহাদ রায়জাদার সন্দেহের ফলাফলও শুন্য ছিলো। অভিদের ২৪ বছর বয়সে অভিদ তার কোম্পানিকে টপ লেভেলে এনে দাড় করায়। এসব নিয়ে প্রচুর এওয়ার্ড পেতে থাকে। প্রায় দেড় পর অভিদ রুহিকে দেখতে পায় ভার্সিটির ফাংশনে। রুহিকে পছন্দ করে খোঁজ খবর নিয়ে বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। আনিল আহমেদ অবশ্য প্রচুর অবাক হয়েছিলো প্রস্তাবে। অভিদকে তিনি ভালো করেই জানতেন তাও অভিদের সাথে খোলাখুলি কথা বলে জানতে চেয়েছিলো কেনো বিয়ে করতে চায়। সবার সামনে অভিদের সোজাসুজি উত্তর ছিলো সে রুহিকে ভালোবেসে ফেলেছে আর সারাজীবন আগলে রাখবে। আনিল আহমেদ অনেক ভেবে চিনতে বিয়েতে রাজি হয়েছিলো। রুহি, মিশু একই বয়সের আর একই ইয়ারের ছিলো। দুজনের স্বপ্নও এক ছিলো কিন্তু রুহি পরিবারের বাধ্য মেয়ে হাওয়ায় বাবার এক কথায় বিয়ের পিরিতে বসে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সব কথা সোহাদ রায়জাদাকে জানাতে থাকে। সোহাদ রায়জাদা রেদোয়ান আহমেদকে পাঠায় অভিদের সাথে থাকায় জন্য। অভিদ রেদোয়ানকে নিজের কারাগারে বন্দি করে নেয়। রেদোয়ানের থেকে যা অজানা সব কিছু জেনে নেয়। বিয়ে হওয়ায় অভিদ খুব খুশি ছিলো। বিয়েটা রুহিও মেনে নেয়। ধীরেধীরে রুহিও অভিদকে ভালোবাসতে থাকে। কয়েকমাস পর অভিদ রুহির স্বপ্নের কথা জানতে পারে। রুহিকে পড়াশোনা করার জন্য আবার মিশুর সাথে এডমিশন করিয়ে দেয়। দুজন আবার আগের মতো পড়াশোনা করতে থাকে। অভিদের কোম্পানি ওয়ার্ল্ডের টপ ৪ এ রানিং এ জায়গা করে নেয়। সেখান থেকেও এওয়ার্ড পায়। অভিদ প্রত্যেকটা সময় নিজের সাথে রায়হানের কথাও বলে। দুজন একে অপরের প্রাণ ছিলো। রায়হানও মিশুকে পছন্দ করতে থাকে। একদিন রায়হান সাহস করে তার মনের কথা বলার পর মিশু অনেক রেগে যায়। কয়েকদিন রাগারাগি করার পর দুজনের সম্পর্ক শুরু হয়। এদিকে সোহাদ রায়জাদার ওদের সুখ দেখে মাথায় আগুন জ্বলতে থাকে। অভিদের সন্তান হলে অভিদের সব কিছু সেই সন্তানের হয়ে যাবে ভেবেই সোহাদের মাথায় রুহিকে মেরে ফেলার জন্য গভীর ভাবনা ঘুরতে থাকে। সেইভাবেই রুহির ক্লাস শেষে রুহিকে কিডন্যাপ করে। মিশু অভিদকে ফোন দিয়ে জানালে অভিদ সাথে সাথে বেড়িয়ে যায়। এদিকে মাঝ রাস্তায় সোহাদ রায়জাদার লোকদের গাড়ির ব্রেকফেইল হয়।গাড়ি আঁকাবাকা চলতে চলতে একটা জঙ্গলের রোডে চলে যায়। সেখানে সব লোক গাড়ি থেকে লাফ দিলেও রুহির চোখ মুখ বাধা থাকায় রুহি বের হতে পারে না। গাড়ি বার্স্ট হয়ে রোডের নিচে পরে যায়। তবে বার্স্ট হওয়ার আগেই রুহি গাড়ি থেকে খাদে পরে যায়। রুহি খাদে পড়তেই রুহির মাথা একটা পাথরে গিয়ে বারি খায় আর গাছপালার ডালে শরীরে অনেক ক্ষত সৃষ্টি হয়। অভিদ, রায়হানদের রুহিকে খুঁজে বের করতেও অনেক বেগ পেতে হয়। অনেক খোঁজা খুঁজির পর রুহিকে খুঁজে পায়। রুহিকে দেখার পর অভিদের পুরো পৃথিবীই থমকে গিয়েছিলো। পুলিশকে ইনফরম করা হয়। রায়হান রুহির অবস্থা দেখে রুহিকে হসপিটালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। অভিদকে নিয়ে হসপিটালে যায়। রায়হান রুহির বাড়ির সবাইকে ইনফরম করে সব জানায়। বাড়ির সবাই ছুটে আসে তখন। অভিদ রুহির জন্য পাগলামো করতে থাকে।
পাচঁ ঘন্টার পর রুহির অপারেশন শেষ হয়। ডক্টর বেড়িয়ে জানায় রুহির মাথায় গভীর ভাবে আঘাত লেগেছে যার কারণে তার কিছু স্মৃতি মুছে যাবে বা কোমায় চলে যাবে। অভিদ কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিলো এই কথা শুনে। রুহির জ্ঞানন ফেরার পর সবাই বুঝতে পারে রুহির দেড় বছরের আগের কোনো স্মৃতি মনে নেই। ডক্টর সাথে বলে দেয় রুহিকে কোনোদিন জোড় করে মনে করাতে চাইলে ওর ব্রেন স্টোক হতে পারে তাই কোনো প্রেশার দেওয়া যাবে না মাথায়। আর কোনোদিন মনে পড়লে এমনি পড়বে। এমন অবস্থায় অভিদকেও হসপিটালাইসড করতে হয়। এদিকে টিভি, নিউজে সব জায়গায় খবর ছড়িয়ে পরে অভিদ রায়জাদার স্ত্রী মারা গিয়েছে।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ২২
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

এমন অবস্থায় অভিদকেও হসপিটালাইসড করতে হয়। এদিকে টিভি, নিউজে সব জায়গায় খবর ছড়িয়ে পরে অভিদ রায়জাদার স্ত্রী মারা গিয়েছে।
কেউ আসল খবর জানতে পারে না। সোহাদ রায়জাদাও এই নিউজ দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। অভিদের খোঁজ নেওয়ারও চিন্তা করে না। অভিদ রুহিকে দেখে অসুস্থ হয়ে পরে রায়হান অভিদকে সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে থাকে। অভিদ সুস্থ হয় তবে ডক্টর নিষেধ করার রুহির সামনে যেতে পারতো না। এক সপ্তাহ পর অভিদ আর আনিল আহমেদকে ডাকা হয় ডক্টরের কেবিনে। দুজনই বিদ্ধস্ত অবস্থায় গিয়ে সেখান উপস্থিত হয়। ডক্টর দুজনের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে
” আপনাদের থেকে একটা কথা লুকানো হয়েছে। সেটা বলতেই আজ এখানে ডেকেছি।”
অভির ভাঙা গলায় বলে
” আবার কি বলতে চান ?”
ডক্টর একটা রিপোর্ট এগিয়ে দিয়ে বলে
” মিসের রুহি এক মাসের প্রেগন্যান্ট। ওনার অবস্থা ক্রিটিকাল থাকায় আমি কাউকে জানাইনি এই কথা। এক্সিডেন্টে মাথায় আঘাত লেগেছিলো তাই ভাগ্যক্রমে বাচ্চার কিছু হয়নি। যদিও এমন অবস্থায় বাচ্চাকে বাঁচানো যায় না কিন্তু আপনারা সত্যিই ভাগ্যবান তাই বাচ্চার কোনো রকম ক্ষতি হয়নি।”
অভিদ মূর্তির মতো বসে থাকে। রুহির এই অবস্থায় এমন একটা খুশির খবর শুনে অভিদ বুঝতে পারছে না কিরকম রিয়েক্ট করবে। আনিল আহমেদ খুব খুশি হলেও রুহির অবস্থার কথা ভেবে নিজের খুশি দমিয়ে নেয়।
দুজনের এরকম থমকে থাকা চেহারা দেখে ডক্টর সব বুঝতে পারলো। শান্ত ভাবে বলে
” আপনাদের অবস্থা বুঝতে পারছি কিন্তু বাচ্চার কথাটা ভেবে দেখবেন। আপনারা চাইলে Operation করাতে পারেন তবে পেশেন্টের অবস্থা ক্রিটিকাল হতে পারে।”
ডক্টরের কথা অভিদের কর্ণপাত হতেই অভিদ ঝড়ের গতিতে চেয়ার ছেড়ে উঠে ডক্টরের কলার চেপে ধরে চেঁচিয়ে বলতে থাকে
” তোর সাহস কি করে হয় এসব বলার ? কিসের অপারেশন হ্যা? কিসের অপারেশন ? আরেকবার এসব কথা বললে তোর অপারেশন করিয়ে উপরে পাঠিয়ে দেবো আমি।” ডক্টর ঢোক গিলে বলে
” আমি তো জাস্ট মতামত জানত্র চেয়েছিলাম করবেন কিনা। আপনার অনুমতি ছাড়া তো এসব কখনো হবে না। আপনি শুধু শুধু আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন।”
আনিল আহমেদ উঠে অভিদকে ছাড়িয়ে আনে। অভিদকে ডক্টরের কেবিন থেকে বাইরে এনে আনিল আহমেদ বলে
” কি করছিলে তুমি এসব ? এমনটা করা ঠিক হয়নি। আর রুহির এই অবস্থায় বাচ্চা! কিভাবে কি হবে বুঝতে পারছি না আমি।”
অভিদ শক্ত গলায় বলে
” রুহি সুস্থ হলেই আমি ওকে আবার বিয়ে করবো যাতে রুহি সবটা নিজের মতো সাজিয়ে নেয়। আর আমাদের বিয়ে হয়েছে সেটা রুহিকে কোনোভাবে জানতে দেবেন না।”
আনিল আহমেদ অবাক হয়ে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদের মাঝে শান্তনা বিরাজ করছে। এর মাঝে রায়হান আসে আনিল আহমেদ রায়হানকেও সব জানায়। রায়হানও অভিদের কথায় সহমত দেয়। আনিল আহমেদ এবার চিন্তায় পরে যায়। তিনি বলে সবার সাথে কথা বলে দেখবে।
আরো এক সপ্তাহ পর রুহিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। রুহি তখনও জানে না সে প্রেগন্যান্ট।
আনিল আহমেদ সবার সাথে কথা বলে অভিদকে জানায় তারা অভিদের প্রস্তাবে রাজি। রুহি ধীরেধীরে সুস্থ হতে থাকে। রুহি একদিন নিজের রিপোর্ট দেখতে গিয়ে প্রেগন্যান্ট এর কথাও জেনে যায়। রুহি নিজেকে নিয়ে উল্টো পাল্টা কথা ভাবতে থাকে। বাড়ির সবাই তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু কোনো কাজ হয় না।
এদিকে সোহাদ রায়জাদা রুহির বেঁচে থাকার কথাটা তখনও জানতো না। অভিদের উপর নজর রাখার জন্য তিনি একজনকে পাঠায়। রুহি পুরোপুরিভাবে সুস্থ হওয়ার পর আনিল আহমেদ তাকে বিয়ের কথা বলে। রুহি বিয়েতে রাজি ছিলো না বাচ্চার কথা ভেবে। সেই বাচ্চা কার ছিলো সে জানতো না তাই অভিদকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়।

বর্তমান…….
সবাই স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। একটা মানুষ কিভাবে এতো খারাপ হয় ? এতো খারাপ হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত তার প্রাপ্য শাস্তি পায়নি। কৌশিকা রায়জাদা টলমল চোখে অভিদের পানে তাকিয়ে বলে
” শেষ পর্যন্ত কিনা তুইও সোহাদ ভাইয়ের পথ বেছে নিলি ?”
অভিদ তার জায়গা থেকে উঠে এসে কৌশিকা রায়জাদার হাত মুঠোয় নিয়ে জড়ানো গলায় বললো
” ফুপি তোমার কি আমার উপর বিশ্বাস নেই ? আমি শুধুমাত্র সোহাদ রায়জাদার উপর প্রতিশোধ নেবার জন্য এই পথে নেমেছিলাম কিন্তু আমি নিজেও ভাবতে পারিনি এভাবে জড়িয়ে যাবো। যদিও আমি অকারণে কাউকেই মারি না। প্রত্যেকের দোষের কারণে শাস্তি পায় আমার কাছে। বিশ্বাস করো ফুপি আমি বা রায়হান আজও কোনো নির্দোষ মানুষকে মারিনি।”
কৌশিকা রায়জাদা অভিদের মাথায় হাত বুলিয়ে কাঁদতে থাকে। রায়হান কৌশিকা রায়জাদার অন্যপাশে বসে জড়িয়ে ধরে বলে
” ফুপি এবার কান্না বন্ধ করো ! এতোবছর পর আমাদের পেয়েছো এখনও কি কাঁদবে ?”
অনি দৌড়ে এসে অভিদের পাশে বসে অভিদের হাত জড়িয়ে ধরে আনন্দিত গলায় বলে
” আমার ভাইয়ারা কতো সাহসি দেখেছো মনি ? দেখবে ওই সোহাদ রায়জাদাকে তার প্রাপ্য শাস্তি নিয়েই ছাড়বে ভাইয়া।” রায়হান মুচকি হেসে অনির গালে হাত রাখে।
সিদ্দিকুর রহমান বলে উঠে
” কিন্তু আমি তো এখনও অভিদের বউ কে দেখতে পেলাম না সে কোথায় ? তাকে দেখার জন্য আমার মনটা উতলা হয়ে আছে। অভিদের সুত্রেই হোক আমি দাদা ভাই হবো বলে কথা !”
তুষার তাল মিলিয়ে বলে
” হ্যা ঠিক বলেছে বাবা। আমার কিউট ভাবিটা কই ? ভাইয়া ভাবিকে দেখাবে না ?”
কৌশিকা রায়জাদা চোখ মুছে বলে
” তোদের ভাবির মাথা ব্যাথা করছিলো তাই ঘুমিয়ে গিয়েছে। অতীতের কথা জানতে জানতে তো অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। এখন সবাই ঘুমিয়ে পরো কাল নাহয় সবাই নতুন বউকে দেখবে !”
অনি বায়নার স্বরে বলে
” না আমি এখনই দেখবো। এতো উত্তেজনা নিয়ে রাতে ঘুম হবে না আমার। ভাইয়া আমাকে ভাবির কাছে নিয়ে চলো না ! আমি দেখেই চলে আসবো ভাবির ঘুমের ডিস্টার্ব করবো না। প্লিজ !”
অভিদ বাকা চোখে রায়হানের দিকে তাকায়। রায়হান খেয়াল করে না সেটা। অভিদ বাঁকা হেসে বলে
” তোদের ভাবি কি একটা নাকি ? রায়হানের বউ ও তো এসেছে। তাকে দেখে এখন মনের উত্তেজনা কিছুটা কমিয়ে নিতে পারিস। আর রুহিকে নাহয় সকালে দেখবি।”
সবাই অবাক হয়ে রায়হানের দিকে তাকালো। রায়হান চোখ বড়বড় করে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ দাঁত কেলিয়ে হাসে। সিদ্দিকুর রহমান অবাক হয়ে বলে
” তোমরা দুজনই বিয়ে করে ফেলেছো ?”
রায়হান ঢোক গিলে বলে
” না ফুপা অভিদ মিথ্যা বলছে আমি এখনও বিয়ে করিনি।”
সবাই অভিদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। অভিদ হেসে বলে
” মিশু রুহির বোন ওর সাথে রায়হানের রিলেশন চলছে অনেক আগে থেকে। বিয়ে হয়নি তবে হয়ে যাবে কয়েকমাস পর।”
কৌশিকা রায়জাদা উত্তেজিত হয়ে বললো
” কই দেখি দেখি ! রায়হান মিশুকে ডাক। রুহির সঙ্গে তো কাল কথা হবে এখন তোর বউকে দেখেই মনটা শান্ত করুক সবাই।” রায়হান মাথা নিচু করে হেসে উঠে যায় সেখান থেকে।
কিছুক্ষণ পর মিশুকে নিয়ে আসে। মিশু সবাইকে সালাম দেয়। কৌশিকা রায়জাদা উঠে মিশুকে এনে নিজের পাশে বসিয়ে মিশুর থুতনিতে হাত রেখে হা করে দেখতে থাকে। আনন্দিত গলায় বলে
” মাশাল্লাহ ! দুই হুর পরী এসেছে আমার দুই ছেলের জন্য। আমি তো মিশুকে তখন খেয়ালই করিনি।”
মিশু লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। তুষার মুখ কালো করে নিচু গলায় বলে
” কিন্তু ওকে দেখে তো আমি ক্রাশ খেয়েছিলাম ! শেষে কিনা আমার ক্রাশ আমার ভাবি হয়ে গেলো !”
সবাই জোড়ে জোড়ে হেসে দেয়। রায়হান গম্ভীর গলায় বলে
” একদম ভাবির দিকে নজর দিবি না বাচ্চা ছেলে।” তুষারের মুখ দেখে অনি হাসতে হাসতে শেষ। মিশুও হাসছে তুষারকে দেখে।
অভিদ কিছুক্ষণ পর বলে উঠে
” ফুপি ! আমি তোমাদের নিয়ে যেতে চাই। তোমরা এখন থেকে আমার সাথে থাকবে। ছোট থেকে তো মাকে পেলাম না কিন্তু আজ তোমাকে পেয়েছি। তুমিই আমার মা হয়ে আমার কাছে থাকবে আর অনি তুষার ফুপাও বাংলাদেশে থাকবে।”
কৌশিকা রায়জাদা পলক ফেলে বলে
” সেসব পরে আগে নিজেদের আনন্দের মুহূর্ত গুলো উপভোগ কর।”
অভিদ কিছু না বলে শুধু হাসলো। রাত গভীর হতে হতে সবাই যার যার রুমে চলে গেলো। মিশু অনির সাথে থাকবে তাই দুজন আগেই চলে গিয়েছে।
অভিদও নিজের রুমে চলে আসে। এসে দেখে রুহি ঘুমের মাঝে হাত বুলাচ্ছে পাশের খালি জায়গায়। অভিদ ঠোঁট চেপে হাসলো রুহির কাজ দেখে। রুহি আরো একদিন এমন করতে দেখে অভিদ। রুহি পাশে কাউকে না পেয়ে এখন উঠেই ভয়ে কাঁদতে থাকবে অভিদ জানে সেটা। অভিদ চুপচাপ রুহির পাশে বসে রুহির সেই হাতটা নিজের হাতে মুঠোয় পুরে নেয়। রুহি অভিদের হাত জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। অভিদ মুচকি হাসলো। অভিদ ফিসফিস করে বলে
” রুহি দেখো তোমার পাশে সাপ বসে আছে।”
রুহি নড়েচড়ে আবার শুয়ে পরে। কিছুক্ষণ পর রুহি হুট করে চোখ খুলে চিৎকার দিয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে। অভিদ শব্দ করে হেসে উঠে।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here