মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -১৭+১৮+১৯

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ১৭
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

কৌশিকা রায়জাদা নিশ্বাস ফেলে বলা শুরু করে
” আমার মা বাবার তিন ছেলে মেয়ে ছিলো। বড় ছেলে অনয় রায়জাদা, ছোট ছেলে সোহাদ রায়জাদা আর একমাত্র মেয়ে কৌশিকা রায়জাদা। আমার বাবা ছিলো একজন সম্পদশালী আর সবার পছন্দের একজন ব্যাক্তি। আবার টুকটাক লিখা লেখি ও করতেন। আমরা তিন ভাই বোনের ছোট থেকেই একসাথে থাকা হতো। একে অন্যের প্রাণ ছিলাম আমরা। বড় ভাইয়া যখন অনার্স শেষ করলো বাবা ভাইয়ার ঘাড়ে বিজনেস এর দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়। কারণ বাবার বয়স হয়েছে তাই সে এবার অবসর নিতে চান। বড় ভাইয়াও হাসিমুখ সব নিজের কাধে নিয়ে নেয়। সত্যি বলতে আমাদের তিনজনের মধ্যে ভাইয়াই ছিলো একমাত্র বাধ্য ছেলে। ছোট ভাইয়া ছিলো চালাক চতুর আর আমার মতে টাকা অপচয়কারি। বড় ভাইয়া বিজনেস এর হাল ধরার পর আগের তুলনায় ব্যাবসায় প্রচুর উন্নতি হতে থাকে। সময় বুঝে মা, বাবা তাদের পছন্দ মেয় রিমার সাথে ভাইয়ার বিয়ের দিয়ে দেয়। বিয়ের দেড় বছর পর অভিদ হলো। বাবা খুশি হয়ে তার যাবতীয় অনেক সম্পত্তি অবুঝ শিশু অভিদের নামে করে দেয়। বাবার মুখের উপর বড় ভাইয়ার কিছু বলতো না তাই সেইবারও বলেনি। বাবা ছোট ভাইয়ার নামে একটা বাড়ি দেয়। আর আমার এসব পছন্দ ছিলো না তবু বাবা আমার অনুমতি ছাড়া আমার জন্য ব্যাংকে কয়েক কোটি টাকা রাখে। সময় যেতে থাকে, অভিদ বড় হয় আর অনেক কিছু বদলাতে থাকে। ধীরে ধীরে ছোট ভাইয়ার মাঝেও বদল দেখা যায়। একদিন বাবা বাড়িতে প্রচণ্ড রেগে হাজির হয় এসেই ছোট ভাইয়াকে ডাকতে থাকে। চিৎকার শুনে আমঅরা সবাই নিচে নেমে গেলাম। ছোট ভাইয়া রুম থেকে বেরিয়ে বিরক্তর সঙ্গে বলে
” কি হয়েছে এভাবে চেঁচাচ্ছ কেনো ?” ভাইয়ার কথা শেষ হতেই বাবা ভাইয়ার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। ছোট ভাইয়া রেগে বলে
” তুমি শুধু শুধু আমাকে মারছো কেনো ?” বাবা রেগে বলে
” তোমাকে আমি শুধু শুধু মারছি ? তোমার ধারণা আছে তুমি কি করেছো ?”
তখন রান্নাঘর থেকে মা এসে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে
” কি হয়েছে তোমরা কি শুরু করেছো ? কি হয়েছে কি তোমাদের ?”
বাবা মায়ের সামনে গিয়ে বলে
” কি হয়েছে না কি করেছে সেটা জিজ্ঞেস করো তোমার ছোট ছেলেকে। তোমার পছন্দের যেই বাড়িটা ওর নাকে লিখে দিয়েছিলে সেটা বিক্রি করে ও ওর বন্ধুদের সাথে মদ গাজা খায়, পার্টি করে মেয়েদের নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আবার টাকা দিয়ে গেম খেলে বেড়ায়। তোমাকে আগেই বলেছিলাম এই বাড়িটা দিও না আমি অন্য একটা বাড়ি কিনে দেবো তোমার ছেলেকে। কিন্তু তুমি তো তোমার আদরের ছেলেকে বাড়ি না দিয়ে শান্ত হবে না। এবার শান্তি হয়েছে তোমার ?”
মাও চুপ করে গেলো কারণ তার সবচেয়ে পছন্দের একটা বাড়ি ছিলো সেটা। ছোট ভাইয়া যে এমন কিছু করবে ভাবেনি তিনি। মার খুব মন খারাপ হয়ে গেলো। মা রান্না ঘরে চলে যেতেই বাবা আবারও ভাইকে বললো
” তুই এই বাড়ির ছেলে হয়ে এতোটা নিচে নেমে যাবি আমি ভাবতেও পারিনি। তোর জন্য শেষ পর্যন্ত বাড়ির মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি চলছে। বাইরে যেতেই সবাই আমার ছোট ছেলেকে নিয়ে আমাকে কথা শোনাচ্ছে। কোথায় আমার বড় ছেলেকে নিয়ে তো আজ পর্যন্ত কোনো কটু কথা বলেনি ওরা তাহলে তোমাকে নিয়ে কেনো এমন হবে ?” ছোট ভাইয়া কথা না বলে শুধু মাথা নিচু করে রাখে। তবে সে রেগে যাচ্ছে সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। বাবা আরও অনেক কিছু বলে ছোট ভাইয়াকে বকাঝকা করে। ছোট ভাইয়া রেগে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। সেইদিনের ঘটনাই শেষ হয়নি। ধীরে ধীরে ছোট ভাইয়ার বাড়িতে আসাও কমতে থাকে। কয়েকদিন পর বাবা এসে আবার বললো ছোট ভাইয়ার জন্মদিনে বড় ভাইয়া যেই গাড়ি গিফট করেছিলো সেটাও বিক্রি করে দিয়েছে। ছোট ভাইয়ার সব কাহিনী চলতেই থাকে মা, ভাইয়া, ভাবি বোঝালেও সে পাত্তা দিতো না। কথায় কথায় ঝগড়া করতো। এভাবে পুরো একবছর কেটে যায়। ভাইয়াজে নিয়ে চিন্তায় চিন্তায় একদিন হঠাৎ বাবার হার্ট এট্যাক হয়। সবাই বাবাকে নিয়ে হসপিটালে যেতে যেতেই বাবা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বাবাকে কবর দেওয়া হয়। বাড়িতে কান্নার রোল পরে কিন্তু অবাক বিষয় ছিলো বড় ভাইয়া কাঁদলেও ছোট ভাইয়ার চোখে একটা পানির ফোটাও ছিলো না। ভাইয়া হেসে হেসে সবার সাথে কথা বলছিলো। বাবার মৃত্যুর শোক কাটতেই মা আর বড় ভাইয়া ঠিক করে আমার বিয়ে দেবে। যদিও অর্থের কারণে না। বড় ভাইয়া ভালো ছেলে খুঁজে বের করে। মা, ভাইয়া একজন সৎ পুলিশ অফিসারের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে। কয়েকমাস পর বিয়ে হয় আমাদের। বিয়েতেও প্রচণ্ড ঝামেলা হয়েছিলো ছোট ভাইয়া বড় ভাইয়ার সাথে কথা বলে তার কোনো এক বন্ধুর প্রস্তাব নিয়ে। বড় ভাইয়া খোঁজ নিয়ে দেখে সে ভালো ছেলে না। চরিত্র ভালো না আর ছেলেটাও ভালো না। তাই বড় ভাইয়া সোজাসুজি না করে দেয়। ছোট ভাইয়া নানান ভাবে সেই ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করেছে কিন্তু বড় ভাইয়া এমন কোনো কিছুই করেনি। বিয়ের পর আমি আমার শশুড় বাড়িতে চলে যাই। তারপর ভাবি আর মার থেকে সব কথা শুনতে পেতাম। ছোট ভাইয়া দিন দিন আরো নিচুতে পৌঁছে যাচ্ছে। বিভিন্ন মেয়ে নিয়েও বাড়িতে আসা শুরু করেছে। মা বা ভাইয়া টাকা পয়সা না দিলে ভাইয়া বাড়িতে সুনামি বসিয়ে দিতো। আমিও বাবার বাড়িতে যাওয়া আসা শুরু করি। অভিদের পাচঁবছর বয়সে স্কুলে ভর্তি করা হয়। প্রথম দিন থেকেই অভিদের বন্ধু ছিলো রায়হান। আস্তে আস্তে রায়হানের সাথে অভিদের বন্ধুত্বও গভীর হয়ে যায়। রায়হানের মা, বাবারও আসা যাওয়া বাড়তে থাকে। এর মাঝে তুষার এর জন্ম হয় আর ছয় মাস পর অনির জন্ম হয়। বাড়ির বাচ্চাদের আমরা ফ্যামিলি প্রবলেম এর বিষয়টা থেকে দূড়ে রাখার চেষ্টা করতাম।
ছোট ভাইয়ের অবনতি হতে থাকে। ছোট ভাইয়া না বলে কয়ে বিজনেস এর টাকা পয়সা নেওয়া শুরু করে। বড় ভাইয়ার বিজনেসে ধীরে ধীরে লস শুরু হয়। কয়েক মাস এভাবে চলার পর ছোট ভাইয়া বড় ভাইয়াকে বলে তার বিজনেসটা ছোট ভাইয়ার নামে করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বড় ভাইয়া সাবধান হয়ে যায় কারণ ছোট ভাইয়ার জন্য এমনি বিজনেসে লস হচ্ছে। এখন কোম্পানি আগের মতো দাড় না করিয়ে ওনার চেঞ্জ হলে আরো প্রবলেম হতে পারে। তাই ভাইয়া বিজনেস তাকে দেওয়ার কথায় এগোয়নি। সেটা নিয়ে ছোট ভাইয়া প্রতিদিন সকালে উঠে ভাইয়ার সাথে ঝামেলা করতো। ভাইয়া মুখ ফুটে কিছু বলতো না শুধু ছোট ভাইয়ের কথা শুনতো। এভাবে দিনদিন চলতে থাকে। ছোট ভাইয়া আর বড় ভাইয়ার সম্পর্কের মাঝে অনেক বড় ফাটল ধরে। ফ্যামিলি প্রবলেম এর জন্য বাচ্চাদের ভালো করে টাইম দেওয়া হতো না তাই একদিন আমি অনিকে নিয়ে সাথে অভিদ, রায়হান, সিদ্দিকুর মিলে পার্কে যাই। সেই যমুনা ফিউচার পার্কে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলাম আমরা। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দেখতে পাই পুরো বাড়ি অন্ধকারে ছেয়ে ছিলো। আমরা অন্ধকারের মাঝেই কয়েক পা এগিয়ে ভেতরে যাই। হঠাৎই লাইট জ্বলে উঠে আর আমরা সবাই সামনের দৃশ্য দেখে স্তব্ধ হয়ে যাই। লিভিং রুমের পুরোটা অংশ জুড়ে রক্তের মাখামাখি ছিলো। মাঝে পাচঁ পাচঁটা লাশ পরে ছিলো। রায়হানের মা,বাবা, বড় ভাইয়া, ভাবি আর মায়ের মৃত লাশ ছিলো। আর পাশে উন্মাদের মতো বসে বসে হাসছিলো ছোট ভাইয়া। আমার কোল থেকে অনি পরে যেতে নিকে সিদ্দিকুর ধরে নেয়। অভিদ, রায়হান, তুষার তিনজন রক্ত দেখে চিৎকার করে কান্না করতে থাকে। সিদ্দিকুর ছোট ভাইয়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে রেগে বলে
” কি করেছেন আপনি ? আপনি আপনার পরিবারকেই মেরে ফেললেন ? আপনি এতোটা নিচু কি করে হতে পারেন ? এই বাচ্চাগুলোর কি হবে একবারও ভেবে দেখেছেন ? আপনাকে এখনই আমি জেলে ঢোকানোর ব্যবস্থা করছি।”
ছোট ভাইয়া কোনো কথা না বলে শুধু হাসতে হাসতে এগিয়ে আসে আমাদের দিকে। আমি অতি শোকে পাথর হয়েছিলাম। কোনোদিকে খেয়াল ছিলো না আমার। ভাইয়া এসেই তুষারের গলায় ছুরি চেপে ধরে হাসতে হাসতে বলে
” আমাকে জেলে পাঠাবি ? তুই আমাকে জেলে পাঠাবি ? তাহলে দেখ তোর ছেলেকে কোথায় পাঠাই আমি।” তুষারের গলায় ছুরি দিয়ে টান দেওয়ার আগে আমার হুশ আসে আর আমি সাথে সাথে ভাইয়ের পায়ে পড়ে যাই। ভাইয়ের কাছে আকুতি মিনতি করে কান্না করতে করতে বলি
” ভাইয়া কিছু করো না দয়া করে। ওদের কিছু করো না। সব কিছুই তো কেড়ে নিয়েছো আর কি চাই তোমার ? আমাদের ছেড়ে দাও। আমার বাচ্চাগুলোকেও ছেড়ে দাও তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।” ভাইয়া হাসতে হাসতে বল
” তাহলে তোর জামাই কে বল এসব পুলিশ গিরি জেনো আমার সামনে এসে না দেখায়। আমি কিন্তু তোদেরও একটা ছুরির টান দিয়ে শেষ করে দিতে পারি।” আমি সিদ্দিকুরের কাছে আকুতি মিনতি করি কিছু না করার জন্য। সিদ্দিকুরকে অনেক কষ্টে রাজি করলে ভাই বলে
” শোন তোদের ট্রানফার করে দিচ্ছি আমি। তোদের এই বাংলাদেশের সীমানার কাছে যেনো না দেখি। আর যদি দেখি তাহলে মনে রাখিস তোদের সাথে যেই বাচ্চাগুলো আছে সেগুলোরও শেষ দিন হবে সেটা। আর যদি কোনো চালাকি করার চেষ্টা করিস বা পুলিশকে জানাস তাহলে তো দেখবিই কি করি।” অভিদ, রায়হান, তুষার, অনিকে বাঁচানোর জন্য আমরা ওর শর্তে রাজি হয়ে যাই। একদিনের মাঝে ইন্ডিয়া চলে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। এয়ারপোর্টে এসে ভাইয়া হঠাৎ বলে উঠে
” অভিদ আর রায়হান আমার কাছে থাকবে। বাকিদের তোরা নিয়ে যা।” আমি ওদের ছেড়ে আসতে নারাজ ছিলাম তাই অনেক চেষ্টা করি জোড় করি ওদের সাথে নিয়ে আসার জন্য কিন্তু কোনোভাবেই আনতে পারিনি। শেষে ভাইয়া অভিদের মাথায় গান ঠেকিয়ে বলে আমরা না গেকে অভিদ রায়হানকে সহ আমাদেরও মেরে ফেলবে। আমরা বুকে পাথর চেপে চলে যাই। ইন্ডিয়া গিয়েও সিদ্দিকুর শান্ত ছিলো না। ছোট ভাইয়ের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য আর অভিদ রায়হানকে আমাদের কাছে আনার জন্য অনেক চেষ্টা করে। পরে জানতে পারলাম S.R. মাফিয়া নামের লোকটাই সোহাদ রায়জাদা পড়ে আমরা হাল ছেড়ে দিলাম। আমাদের পুরো পরিবারের মৃত্যুর নিউজ টিভিতে দেখানো হয় আর সেখানে ভাই নিজের মুখে বলে S.R. মাফিয়া গ্রুপের লিডার আমাদের পুরো পরিবারকে মেরে ফেলেছে।”
কৌশিকা রায়জাদা তার কথা শেষ করে থামে। সবার চেহারায় থমথমে হয়ে আছে শুধু অনি নিরবে কাঁদছে। অভিদ শান্ত গলায় বলে উঠে
” তুমি তো আরো একটা সত্যি জানোই না।”
সবাই জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে অভিদের দিকে তাকায়।#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ১৮
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

অভিদ শান্ত গলায় বলে উঠে
” তুমি তো আরো একটা সত্যি জানোই না।”
সবাই জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে অভিদের দিকে তাকায়।
সিদ্দিকুর রহমান কপাল কুঁচকে বলে
” আরো সত্যি মানে ? আর কিসের সত্যি ?”
অভিদ সোফায় হেলান দিয়ে বসে হালকা হেসে বলে
” দাদা ভাইয়ের হার্ট এট্যাক এর কারণে মৃত্যু হয়নি। সেটাও সোহাদ রায়জাদা প্ল্যান করে করেছে।” কৌশিকা রায়জাদা অবাক হয়ে বলে
” মানে ? বাবাকেও ভাইয়াই মেরেছিলো? কিন্তু তুই কিভাবে জানিস এসব কথা?”
অভিদ তাছিল্য ভরা হাসি দিলো। রায়হান দীর্ঘনিশ্বাস বললো
” সোহাদ রায়জাদায় সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু মানে তার ডান হাত রেদোয়ান আহমেদ এর কারণেই সব জানতে পেরেছি আমরা।” সবার বিস্ময় ভরা চাহনি দেয়।
অতীত…………
অনয় রায়জাদাকে বিজনেসের হাল ধরতে দেওয়ায় সোহাদ রায়জাদার মনে মনে কিছুটা হিংসে জন্মে কারণ তার মতে তার বাবা সব সময় অনয় রায়জাদাকে বেশি ভালোবাসে। সোহাদ রায়জাদা তার সব কথা তার বেস্টফ্রেন্ড রেদোয়ান আহমেদ এর সাথে শেয়ার করতো। রেদোয়ান আহমেদ ছিলো লোভী আর সে খারাপ কাজ করতো। রেদোয়ান সোহাদের সব কথায় তার সঙ্গে তাল মিলাতো আর কুবুদ্ধি দিতো। সব সময় সোহাদ রেদোয়ানের সঙ্গেই থাকতো ধীরেধীরে রেদোয়ানের স্বাভাব চরিত্র সোহাদের উপর প্রভাব ফেলতে থাকে। সোহাদও ধীরেধীরে খারাপ পথে চলে যায়। রাত ভর পার্টি, মেয়ে নিয়ে থাকা এসব করে বেড়াতো। এসব করার জন্য সোহাদের দরকারের চেয়ে বেশি টাকা খরচ হতো বাড়িতে এসব বললে টাকা দেবে না তাই বন্ধুদের থেকে ধার দেনা করতে থাকে । ধার দেনার যখন সাত লাক্ষ পার করে তখন একে একে সবাই সোহাদকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু সোহাদের কাছে একমাত্র সম্পত্তি সেই বাড়িটা ছাড়া কিছুই ছিলো না আর বাড়িতে জানালে তার বাবা তাকে নিয়ে অনেক ঝামেলা করবে এসব ভেবে সোহাদ সেই বিলাশ বহুল বাড়িটা মাত্র দশ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দেয়। ধার দেনা দেওয়ার পর হাতের টাকা দিয়ে সব বন্ধুরা মিলে ট্যুরে যায়। ট্যুরে গিয়ে তাদের সাথে পরিচয় হয় একটা গ্যাং এর সাথে। সেটা একটা ছোট খাটো মাফিয়া গ্যাং ছিলো। পরিচয় হওয়ার পর রেদোয়ান তাদের সাথে সেই গ্রুপে যোগ দেয় সাথে সোহাদকেও জোড় করে তার সঙ্গি হিসেবে নিয়ে নেয়। সোহাদ সেই গ্যাং এ থেকে থেকে আরো হিংস্র হয়ে যায়। তাদের সাথে যুক্ত হয়ে আড়ালে মানুষও খুন করতে থাকে। ইচ্ছে মতো টাকার অপচয় করতে থাকে। দিন দিন বাড়ি থেকে বাবাও এসব নিয়ে ঝামেলা করতে থাকে। একদিন রেদোয়ান সহ দুইজন সোহাদের দুঃখের কথা শুনে হাসি ঠাট্টার সাথে বলে তার বাবাকে জীবন থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য।সোহাদের মাথায় কথাটা সরু ভাবে গেঁথে যায়। সোহাদ রেদোয়ানকে নিয়ে প্ল্যান করতে থাকে। রেদোয়ানও তার মাথায় যতো প্ল্যান ছিলো সব বলে দেয় কারণ রেদোয়ান ভেবেছিলো সোহাদ কোনোদিন তার জন্মদাতা পিতাকে মারতে পারবে না। এসব ভেবে সোহাদের সব কথায় সায় দিতো। কিন্তু একদিন সোহাদ গভীর রাতে রেদোয়ানকে ফোন করে বললো
” জরুরি একটা কাজ আছে আমার বাড়িতে আয়।” এতো রাতে বাড়িতে ডাকায় রেদোয়ান কিছুটা অবাক হয় তাই বলে
” কেনো এতো রাতে এসে কি করবো ? তোর বাড়িতে তো সবাই ঘুমাচ্ছে আর আমিও ঘুমাচ্ছি। এখন আসতে পারবো না।”
সোহাদ রেগে বলে
” সবাই ঘুমিয়ে রয়েছে দেখেই তোকে ডাকছি। এখনই না আসলে তোর সঙ্গে আমার সব সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে। তুই তাড়াতাড়ি আয়।” সোহাদ ফোন কেটে দিতেই রেদোয়ান সোহাদকে বকবকতে বেড়িয়ে গেলো। সোহাদ দের বাড়িতে আসার পর সোহাদ রেদোয়ানকে নিয়ে চুপচাপ তার বাবার ঘরে ঢুকে গেলো। কিন্তু বাবাকে দেখতে পেলো না। রেদোয়ান বিরক্ত হয়ে বলে
” তুই কি শুরু করেছিস ? এতোরাতে আমাকে ডেকে তোর মা,বাবার রুমে কেনো এনেছিস ?”
সোহাদ রেগে গেলো রেদোয়ানের কথা শুনে। রেদোয়ানকে বাইরে এনে বলে
” তুই কি বুঝতে পারছিস না কেনো ডেকেছি? আর না বুঝতে পারলে শুধু আমার সাথে থাক। দেখেই পরে বুঝে যাবি সব।”
রেদোয়ান আর কিছু বললো না। সোহাদ রেদোয়ানকে নিয়ে তার বাবার স্টাডি রুমে গেলো। সোহাদের বাবা ঘুমাচ্ছিলো চেয়ারে মাথা এলিয়ে। সোহা চুপচাপ পকেট থেকে একটা ইনজেকশন আর সিরিজ বের করে। রেদোয়ান অবাক হয়ে বলে
” কি করছিস কি এগুলো ? কিসের ইনজেকশন এটা ?”
সোহাদ শয়তানি হেসে বলে
” এই ইনজেকশন দিলে বাবা মারা যাবে আর কেউ বুঝতে পারবে না কিভাবে মারা গিয়েছে। সবাই শুধু জানবে হার্ট এট্যাকে মারা গিয়েছে।”
রেদোয়ান হতবাক হয়ে যায় সোহাদের কথা শুনে। রেদোয়ান কিছু বলার আগেই সোহাদ তার কাজ শেষ করে ফেলে। রেদোয়ান চেঁচিয়ে বলে উঠে
” কি করেছিস এটা তুই ?”
সোহাদ রেদোয়ানকে নিয়ে জলদি রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। সোহাদ রেদোয়ানের দিকে রেগে তাকিয়ে বলে
” তুই পাগল ? এতোবড় চিৎকার করলি কেনো ?”
” আমি তো চিৎকার করেছি তুই কি করেছিস এটা ? নিজের বাবাকে মেরে ফেলার জন্য এসব ? তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস ?”
সোহাদ হিংস্রের মতো বলে
” হ্যা, হ্যা পাগলই হয়ে গিয়েছি আমি। এখন থেকে আমি যা চাই তাই পাবো নয়তো সবার প্রাণ কেড়ে নেবো।” সোহাদ রেদোয়ানকে বিদায় করে ঘুম দেয়। সকাল বেলা থেকেই তার বাবা বুকের ব্যাথা ভুগতে থাকে। শরীরের অবনতি দেখে সবাই ভয় পেয়ে যায়। হসপিটালে নিতে নিতে রাস্তায় মারা যায়। বাড়িতে বাবার মৃত্যুতে শোকের আভাস তখন সোহাদের কাছে একটা আননোন নাম্বার থেকে কিছু মেসেজ আসে। ব্ল্যাকমেইল এর ম্যাসেজ। রেদোয়ানই অন্য নাম্বার দিয়ে সোহাদকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। সোহাদকে বলে তার চাহিদা মতো টাকা না দিলে বাবাকে মারার কথা সবাইকে বলে দেবে। সোহাদও ভয় পেয়ে যায়। সোহাদ প্রথমবার বিজনেসের ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা নিয়ে দিয়ে দেয়। পরে খোঁজ লাগায় এসব ব্ল্যাকমেইল কে করছে কিন্তু কোনো খোঁজ পায় না সোহাদ। রেদোয়ানকে সন্দেহ করলেও রেদোয়ান কোনো রকমে সন্দেহের হাত থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু রেদোয়ান প্রতিনিয়ত সোহাদকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা নিতে থাকে। এদিকে মাফিয়স গ্যাং এর আসল লিডার পুলিশের কাছে কোনোভাবে ধরা পরে যায় তাই পুরো গ্যাং ছড়াছড়ির মতো অবস্থা হয়। একদিন সবাই মিটিং এ বসে আর শেষে সবার সম্মতিতে সোহাদকে লিডার করা হয়। তাদের মাফিয়া গ্যাং এর নাম দেওয়া হয় S.R. mafiya group. ধীরেধীরে পুরো গ্যাংটার নাম কয়েকটা দেশে ছড়িয়ে পরে। কিছু ক্ষমতাবান মানুষকে সোহাদ নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। এভাবেই রাজত্ব চলতে থাকে সোহাদের। বাড়ির সম্পত্তির উপর চোখ পরে। সব কিছু নিজের নামে করে নিতে চায় কিন্তু কিছুই হয়না শেষে সবাইকে মেরে ফেলার প্ল্যান করে।
কিন্তু মেরে ফেললেও ঝামেলা ছিলো কারণ সব কিছুই তো অভিদের নামে লিখা। অভিদকেও মেরে ফেললে সবকিছু অনাথ আশ্রম আর বৃদ্ধাশ্রমে দান হয়ে যাবে। একদিন কৌশিকা বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে চলে গেলো। সোহাদ বাইরে থেকে এসেই অনয় রায়জাদাকে ডাকতে থাকে।
রায়হানের মা, বাবা লিভিং রুমেই বসে বসে রিমা আর অনয়ের সাথে কথা বলছিলো। সোহাদকে দেখে চারজন দাঁড়িয়ে যায়। অনয় অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিলো সোহাদের ডাক শুনেই ছুটে বেড়িয়ে আসে রুম থেকে। সোহাদের সাথে রেদোয়ানও ছিলো। অনয় সোহাদ এর সামনে দাঁড়িয়ে বলে
” কি হয়েছে এভাবে ডাকছিস কেনো ?”
সোহাদ রেগে বলে
” এভাবে ডাকছি কেনো ? জানো না তুমি কিছু ? তুমি অফিস থেকে টাকা দিতে না করেছো কেনো আমাকে ?”
অনয় শান্ত গলায় বলে
” কারণ অফিসে এখন প্রচুর লস হচ্ছে তোর কারণে। তুই কয়েকটা দিন অন্তত কষ্ট কর চল। বিজনেসটা আবার আগের জায়গায় দাড় করাই তারপর তোর হাতে তুলে দেবো আমি।”
সোহাদ চেঁচিয়ে বলে
” চাই না আমার আগের অফিস। এখন যেমন আছে তেমন হলেই চলবে। আমার শুধু অফিস চাই। তুমি আমাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করার কে ? আমার সব কিছু চাই এক্ষুনই।” রেদোয়ান বুঝতে পারলো কিছু একটা বড়সড় ঝামেলা হবে তাই আগে থেকেই নিজের ফোনের ভিডিও অন করে আড়ালে রেখে দেয়। অনয় সোহাদকে বোঝানোর জন্য বলে
” দেখ ভাই আমার কথা বোঝার চেষ্টা কর। তুই এখনই চাইলে কিছুই পাবি না। সবুরে মেওয়া ফলে। তুই আর কিছুদিন ধৈর্য ধর আমি তোর হাতে প্রত্যেকটা জিনিস তুলে দেবো।”
সোহাদ চেঁচিয়ে বলে তার এখনই লাগবে। অনয়ও বোঝানোর চেষ্টা করে। সোহাদ কথা কাটাকাটি করতে থাকে অনয়ের সাথে। বাড়ির সবাই দুজনকে থামাতে চাইলেও সোহাদকে কোনোভাবে থামাতে পারে না। এক পর্যায়ে সোহাদ রেগে টেবিল থেকে কাচের জগ নিয়ে অনয়ের মাথায় সজোড়ে বারি দিয়ে বসে। অনয় মাথা ধরে বসে পরে। অনয়ের নাথা থেকে প্রচণ্ড রক্ত পড়তে থাকে। রিমা আর অনয়ের মা চিৎকার করে অনয়ের কাছে ছুটে যায়। রায়হানের বাবা সোহাদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে রেগে বলে
” কি করেছেন আপনি ? সম্পত্তির জন্য নিজের ভাইকে মেরে ফেলবেন নাকি ?”
সোহাদ চেঁচিয়ে বলে
” হ্যা মেরে ফেলবো। সবাইকে আজকে মেরে ফেলবো আমি।”
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ১৯
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

সোহাদ চেঁচিয়ে বলে
” হ্যা মেরে ফেলবো। সবাইকে আজকে মেরে ফেলবো আমি।”
সোহাদ রাগে দিশেহারা হয়ে কি করছে নিজেও জানে না। সোহাদ টেবিলের উপরে থাকা ধারালো ছুরিটা হাতে নেয়। ছুরি নিয়ে অনয় রায়জাদার কাছে এগিয়ে যায়। অনয় এর সামনে ছুরি ধরে দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” বল, তুই সব আমার হাতে তুলে দিবি কিনা এই মুহূর্তে।”
অনয় মাথায় হাত রেখে ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে বলে
” ভাই তুই আমার কথা বোঝার চেষ্টা কর ! আমি সব দিয়ে দেবো তোকে শুধু কিছু সময় দে আমাকে।”
সোহাদ চেঁচিয়ে বলে উঠে
” সময়, সময়, সময় আরো কতো সময় চাই তোর ? আমার পুরো জীবনটাই নষ্ট করে দিলি তুই। তোকে আর বাঁচিয়ে রাখবো না আমি। তোদের প্রত্যেককে মেরে ফেলবো আজ। আর তোর ছেলের নামেই তো সব রয়েছে তাহলে ওকে দিয়েই আমার সব কাজ হয়ে যাবে। তোদের কাউকে দরকার নেই আমার।”
রিমা সোহাদ এর পা ধরে বলতে থাকে
” ভাই প্লিজ এমন কিছু করবেন না। আমরা সব দিয়ে দেবো আপনাকে। আমাদের ছেড়েদিন আমাদের কিছু হয়ে গেলে আমাদের ছেলে মেয়েরা এতিম হয়ে যাবে। দয়া করে কারো কিছু করবেন না।” সবাই আকুতি মিনতি করতে থাকে কিছু না করার জন্য কিন্তু সোহাদ কারো কথা কানে নিলো না। হিংস্র প্রানীর মতো অনয়ের বুক বরাবর ছুরি বসিয়ে দেয়। অনয় বুকে হাত রেখে কয়েক মিনিটের মাঝেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। সবাই চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। সোহাদ রিমার চুলের মুঠি ধরে উঠিয়ে দাড় করিয়ে হাতে আর পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। অনয়ের মা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে দুইটা লাশের দিকে। সোহাদ শয়তানি হাসি দিয়ে তার মায়ের দিকে এগিয়ে আসে। তিনি বুঝে গেলেন তাকেও ছাড়বে না তার গর্ভের ছেলে। তার দমবন্ধ হয়ে আসে বড় ছেলে আর বউ এর লাশের দিকে তাকিয়ে। বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে তিনি। কিন্তু তিনিও রেহাই পেলেন না সোহাদ ছুরি এগিয়ে তাকে আঘাত করার আগেই নিশ্বাসবন্ধ হয়ে মাটিতে ঢলে পড়েন। রায়হানের বাবা এসব দৃশ্য দেখে সাথে সাথে পুলিসস্টেশনে কল করে বসে। রেদোয়ান তা দেখে চেঁচিয়ে বলে
” শু***শা** তুই এতো সাহস কাকে দেখাস ? তুই পুলিশের কাছে ফোন দিয়েছিস কেনো ? তুই নিজে এখন রেহাই পাবি তো ?”
রায়হানের বাবা আতংকিত চাহনিতে রেদোয়ানের দিকে তাকালো। রায়হানের মা কাঁদতে কাঁদতে বলে
” আমাদের কিছু করবেন না দয়া করে। আমরা কিছু বলবো না পুলিশকে। আমাদের ছেড়ে দিন আমাদের সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে।”
সোহাদ কোনো কথা না বলে রায়হানের মায়ের শরীরেও ছুরি চালিয়ে দেয় তা দেখে রায়হানের বাবার হাত থেকে ফোন ফ্লোরে পরে ভেঙে যায়। রায়হানের বাবা দৌড়ে রায়হানের মায়ের কাছে যায়। রায়হানের মাকে এক হাতে আগলে নিতেই সোহাদ আবার তার দিকে এগিয়ে আসে। রায়হানের বাবা চেঁচিয়ে বলে
” একদম এগোবে না। আর এক পা এগোলেই আমি পুলিশকে সব বলে দেবো।” সোহাদ অট্টহাসি দিতে থাকে। হাসতে হাসতে বলে
” তুই বেঁচে থাকলে তো তুই জানাতে পারবি ! বোকা ছেলেদের মতো কথা বলিস কেনো ? মানুষ লজ্জা দেবে তো !”
রায়হানের বাবা ছলছল চোখে সোহাদের দিকে তাকিয়ে বলে
” দয়া করে ছেড়ে দাও। আমাদের সন্তান গুলোর কি হবে ? ওরা এতিম হয়ে যাবে। দয়া করে আমাদের ছেড়ে দাও। আমি আমার স্ত্রীকে হসপিটালে নিয়ে যাই। ও সুস্থ হলে আমরা আমাদের সন্তান নিয়ে এই দেশ ছেড়ে চলে যাবো।”
সোহাদ হাসতে হাসতে এগিয়ে আসতে থাকে। রায়হানের বাবা আকুতি করে কাঁদতে থাকে কিন্তু সোহাদের পাশান মনে কারো চিৎকারের মুল্য পায়নি। সোহাদ একই ভাবে রায়হানের বাবার উপর আঘাত করে। পুরো লিভিং রুম রক্তাক্ত হয়ে থাকে। মাঝে পাচঁ পাচঁটা লাশ পরে আছে।
সোহাদ ছুরিটা ছুড়ে ফেলে দেয় আর বসে অট্টহাসি হাসতে থাকে। রেদোয়ান শুধু চেয়ে দেখছে তাকে। কোথা থেকে কোথায় এসেছে এই ছেলেটা সেটাই ভাবছে রেদোয়ান। রেদোয়ান তার ফোন হাতে নিয়ে ভিডিও করা অফ করে দেয়। রেদোয়ান সোহাদের কাছে গিয়ে বলে
” এখন কি করবি তুই ? এতোগুলো মানুষকে মেরে ফেললি তার উপর তোর নিজের পরিবারের লোক ছিলো তারা। পুলিশ তোকে ছাড়বে ?”
সোহাদ অগ্নিচোখে রেদোয়ানের দিকে তাকায়। রেদোয়ানের কপাল বেয়ে ঘাম ঝরতে থাকে সোহাদের এমন রূপ দেখে। সোহাদ ভারী গলায় বলে
” তোকে কি শুধু শুধু এনেছি ? কোনোভাবেই যাতে আমার কথা এর মাঝে না আসে সেই ব্যবস্থা করবি আর কৌশিকা আসার আগেই সব করতে হবে। কিছু উলট পালট হলে কিন্তু তোকে আমি ছাড়বো না !” রেদোয়ান ঢোক গিলে মাথা নাড়ালো।
রেদোয়ান তার কয়েকটা লোককে ডাকিয়ে নেয়। কিন্তু তাদের কাজ শুরু হওয়ার আগেই কৌশিকা চলে আসে। সোহাদও ভয় পেয়ে ওদের মেরে ফেলার ভয় দেখায়। [ কৌশিকা রায়জাদাদের কাহিনী আগে বলা হয়েছে তাই আর রিপিট করছি না। ]
কৌশিকাদের বিদায় করার পর সোহাদের লোকরা আসে। রেদোয়ান আর সোহাদ ওদের নিয়ে একে এক সব কিছু করে নেয় নিজের নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য। সব কাজ শেষে রেদোয়ান বলে
” এবার পুলিশকে ফোন দে। নাহলে পাড়া প্রতিবেশি আর বাকি লোকরা এমনি ধরে নেবে যে এসব আমরা করেছি।”
সোহাদ ভ্রু কুঁচকে বলে
” তো কি বলবো পুলিশকে ? এসব কে করেছে?”
রেদোয়ান কিছুক্ষণ ভেবে বলে
” বলবি S.R. মাফিয়া গ্রুপের লোকরা বাড়িতে এট্যাক করেছিলো। তাদের অনয় রায়জাদার সাথে ডিল কনফ্রাম হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু তারা খারাপ লোক তাই অনয় রায়জাদা সব ক্যান্সেল করে দিয়েছে। এই কারণে তারা রেগে বাড়িতে এট্যাক করেছে।”
রাতের আগেই বাড়িতে পুলিশরা আসে। আশেপাশের মানুষের কারণে পুরো বাড়ি মানুষে গমগম করতে থাকে। পুলিশের জিজ্ঞেসা বাদের সময় এলে সোহাদ আর রেদোয়ান খুব সুক্ষ্ম ভাবে সবগুলোর উত্তর দেয় আর কান্নার অভিনয় করে। পুলিশরা লাশ পোস্টমর্টেম এরজন্য নিয়ে যায়।
পরদিন কৌশিকা দের ফ্লাইটে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য আসার সময় রেদোয়ান সোহাদকে বলে
” শোন অভিদ আর রায়হানকে তুই তোর কাছে রেখে দিবি। কারণ অভিদের নামেই তো বাকি সব সম্পত্তি আর রায়হানের মা,বাবারও কিছু থাকতে পারে। ওদের আঠারো বছর হলে দুজনই তাদের প্রাপ্য সম্পত্তি পাবে তখন তো তুই এসব পাবি।আর অভিদ রায়হানকে নিজের মনের মতো করে তৈরি করবি। বুঝেছিস ?”
সোহাদ রেদোয়ানের দিকে রেগে তাকিয়ে বলে
” তোর কি মনে হয় আমার মাথায় বুদ্ধি নেই ? আমি জানি আমাকে কি কি করতে হবে। তুই চুপ থাক নাহয় তোকেও সবার মতো উপরে পাঠিয়ে দেবো।” রেদোয়ান ভয় পেয়ে চুপ করে থাকে।
ফ্লাইটের টাইমে কৌশিকা আর সিদ্দিকুরকে ভয় দেখিয়ে অভিদ আর রায়হানকে রেখে দেয় নিজের কাছে। কৌশিকারা চলে যায়।
সোহাদ অভিদ আর রায়হানকে নিয়ে বাড়ি চলে আসে। অনয়, রিমা, অনয়ের মা, রায়হানের মা, বাবার মৃত্যুর তদন্ত করার পর তাদের কবর দিয়ে সোহাদ সেইদিন রাতেই তার যাবতীয় জিনিস নিয়ে ফ্লাইটে উঠে বসে। সুইজারল্যান্ডের এক বড় শহরে থাকা শুরু করে। অভিদ, রায়হানকে বড় করতে থাকে। অভিদ, রায়হান নিজেদের মা, বাবা, বোনের জন্য অনেক কেঁদেছে তবে সোহাদ কখনো তাদের কান্নার পরোয়া করেনি। কান্না করলে একটা ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখতো। ছোট বাচ্চা ছেলে গুলো মা,বাবার ভালোবাসা না পেয়ে মনে কষ্ট নিয়েই বড় হতে থাকে। অভিদ, রায়হানের এগারো বছর বয়স তখন দুজনই মোটামুটি সব বুঝতে পারতো। একদিন তারা কার্টুন দেখার বাহানায় রেদোয়ানের ল্যাপটপ নেয়। এই বয়সে ফরেইনার হওয়ায় তারা ল্যাপটপ চালানোতে পারদর্শী ছিলো। কিন্তু দুজন কার্টুন দেখা শেষে উল্টো পাল্টা বাটন ক্লিক করতে থাকে ইচ্ছে করে। করতে করতে একটা ভিডিও সামনে আসে। রায়হান কার্টুন ভেবে সেই ভিডিও ক্লিপ অন করতেই দেখতে পায় তাদের মা, বাবাদের সেই মর্মান্তিক মৃত্যু আর তাদের আর্তনাদ। অভিদ আর রায়হানের মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে যায়। দুজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। রায়হান কাঁদতে কাঁদতে বলে
” ভাই চাচ্চুই আমাদের আম্মু, আব্বু দিদাকে মেড়েছে। আমাদেরও কি মেরে ফেলবে চাচ্ছু ?”
অভিদ কাঁদতে কাঁদতে বলে
” আমারাও আম্মু,আব্বুদের কাছে চলে যাবো কিন্তু আমার বনুকে কোথায় পাবো ?”
রায়হান চোখ মুছে নেয় নিজের চোখ থেকে। জড়ানো গলায় বলে
” আমরা বড় হয়ে বনুকে খুঁজে বের করবো। আমরা এই খারাপ লোকটার থেকে দূড়ে চলে যাবো। তাহলে আমাদের আর চাচ্চু মারতে পারবে না।”
অভিদ কাঁদতে কাঁদতে বলে
” আমরা একদিন অনেক বড় হয়ে এই লোকটাকে মেরে ফেলবো। আমাদের মা, বাবাকে মেরেছে। আমরা এই লোকটাকে মেরে ফেলবো।”
রায়হানও মাথা নাড়ায়। দুই বাচ্চা ছেলের মাথায় কি ঢুকে ছিলো একমাত্র তারাই জানে। দুজন একেবারেই এতোদূরে চলে যেতে পারে না কিন্তু ধীরেধীরে নিজেদের সোহাদের থেকে দূড়ে সরিয়ে নিতে থাকে। ধীরেধীরে অভিদ আর রায়হান হতে থাকে সোহাদ রায়জাদার মতো হিংস্র। শুধুমাত্র তাদের পরিবারের জন্য। পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষকে যেভাবে কষ্ট দিয়েছে সেই কষ্ট দিতে চায় সোহাদ রায়জাদাকে। সতেরো বছর বয়সে দুজন কলেজ ট্যুরের এক বাহানায় বাংলাদেশে পারি জমায়। সোহাদ রায়জাদা প্রচণ্ড চালাক হওয়ায় এমনি এমনি ছাড়েনি তাদের। সাথে তার এক ছোট সিক্রেট গ্যাং কে পাঠিয়েছে যারা আড়াল থেকে তাকে সব ধরনের খবর দেবে।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..
চলবে~ইনশাল্লাহ……..

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here