মায়াবতী পর্ব ১০

#মায়াবতী
#পর্ব_১০
#সুলতানা_পারভীন

অফিসে ঢুকতেই দ্বীপের কণ্ঠস্বর শুনে জাস্ট হা হয়ে গেল রাহাত আর মায়া। সত্যিই দ্বীপ ছেলেটা কিনা দেখার জন্য রুমের ভিতরে উঁকি দিলো রাহাত। হ্যাঁ, দ্বীপই। কিন্তু এই ছেলে ছাড়া পেল কি করে সেটাই বুঝতে পারছে না রাহাত। রাগে মাথাই কাজ করছে না বেচারার। মায়া কি ভাবছে চিন্তা করতেই আবার সবার গুনগুনানির শব্দে থমকে গেল।

-আসলেই দ্বীপ স্যার ঠিকই বলেছে। ওই মেয়েটা এসেছে হতেই স্যার পুরো বদলে গেছে–। কোন ইন্টারভিউ- কোন নিয়োগ ছাড়াও ধুম করে স্যারের পি.এ ও হয়ে গেছে–। একেবারে সাপের পাঁচ পা দেখেছে স্যার একটু সম্মান দেখানোয়-।

-ঠিক বলেছ–। কিছু একটা প্ল্যানিং করছে এই মেয়ে–। তাই এভাবে নাটক করে আমাকে অফিস থেকে বের করলো–। নিশ্চয়ই বড়সড় কোন প্ল্যানিং। এদিকে স্যার তো ভালো মানুষ–। এতো প্যাঁচঘোচ বুঝেই না–। ওই মেয়ে সেটারও ফায়দা নিচ্ছে—–।

-ঠিক বলেছেন দ্বীপ স্যার—। স্যার তো আমাদের সবার সাথেও কত ভালো ব্যবহার করেন–। আর বিপদে আপদে সাহায্যও করেন–। স্যারকে সরল সোজা পেয়ে—-।

রাহাতের চোখ রাগে লাল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গলা দিয়ে একটা শব্দও বের হচ্ছে না। মায়ার কথা মনে পড়তেই পিছনে ফিরে দেখলো মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে নিজের কেবিনে ছুটে ঢুকে গেছে। রাহাত বসার রুমের দিকে না গিয়ে মায়ার রুমের দিকে ছুটলো। মেয়েটা একে অসুস্থ! এর মধ্যে এসব মোটেই নিতে পারবে না। ওকে আগে সামলানো দরকার। ব্যাপারটা ভেবেই রাহাত মায়ার রুমের দিকে ছুটে এলো। রুমটা ভেতর থেকে লক করে ফেলেছে মায়া। রাহাতও উপায় না দেখে দরজায় নক করলো। কিন্তু মায়ার দরজা খোলার নামও নেই।

অনেকক্ষণ দরজা নক করেও যখন মায়া দরজা খুললো না তখন রাহাত নিজের রুমেই ফিরে গেল। গায়ের কোটটা ছুড়ে ফেলে গলার টাইটা টেনে খুলতে খুলতে ফোন মায়ার রুমের সাথে কানেক্ট করার চেষ্টা করলো। কল যাওয়ার কয়েক সেকেন্ড পর ফোনটা রিসিভ করলো।

-হ্যালো?

-মায়াবতী? একটু আমার রুমে এসো? প্লিজ?

-স্যার——–।

– It’s an order. Get it?

-আসছি স্যার—–।

মায়া রাহাতের রুমে এসে নক করতেই দরজাটা ঝট করে খুলে মায়াকে টেনে রুমে ঢুকিয়ে নিলো রাহাত। রুমের দেয়ালেই চেপে ধরলো মায়াকে।

-কি সমস্যা তোমার? সবসময় এমন করো কেন? কে কি বলছে সেটাই তোমার কাছে বড় হয়ে গেল?

-হ্যাঁ–। বড় হয়ে গেল–। কারণ আমরা আপনার মতো ধনী নই–। আপনি ১০০ টা খুন করলেও সেটা নিয়ে কেউ একটা কথাও বলবে না। আর আমাকে কাল কেউ খুন করে ডাস্টবিনে ফেলে গেলেও লোকে আমার নামেই মন্দ বলবে—–।

-কার এতো বড় সাহস তোমাকে নিয়ে কথা বলার? এক একটাকে খুন করে ফেলবো আমি–। তোমার দিকে আর কেউ বাজে নজর দিলে পুঁতে রেখে দিবো এক একজনকে–।

-কিসের অধিকারে? দয়া দেখাচ্ছেন? শুনুন–। আপনার এই দয়ার কারণে আমাকে আরো বেশি করে কথা শুনতে হবে—। এর চাইতে আমিই চলে যাব–। আর আসবো না—–।

-মায়াবতী? আমি তোমাকে দয়া দেখিয়ে এসব করছি? এটা তুমি মনে মনে বিশ্বাস করো?

-অন্তত বাইরের মানুষগুলো যা বলছে তার চাইতে এটা বিশ্বাস করলে হয়তো নিজের কাছে ছোট হব না——-।

——————————

-স্যার–। ছাড়ুন—। হাতে ব্যথা পাচ্ছি—–।

রাহাত কিছু না বলেই মায়ার হাতটা ছেড়ে দিল। মায়া আবার ছুটে বেরিয়ে গেল চোখ মুছতে মুছতে। দরজা খোলা আর বন্ধের সময়টাতেও বাইরের বসার ঘরের সবার গুনগুনানির আওয়াজটা রাহাতের কানে এসে লাগলো। নিজেকে আর কোনমতেই সামলাতে না পেরে বসার ঘরে এসে দাঁড়ালো রাহাত। সবাইকে একসাথে দেখে ধমকে উঠলো।

-এখানে কি হচ্ছে? অফিসে কি তামাশা করতে এসেছেন আপনারা?

——————————

– আর এই লোকটা এখানে কেন? গার্ডস? ও এখানে এলো কি করে! ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ওকে এক্ষুণি বের করো—-।

-স্যার?

-জাস্ট শাট আপ–। কি পেয়েছ কি তোমরা? সবাইকে নিজের মতো করো থাকার আর কাজ করার সুযোগ দিয়েছি আমি–। কখনো কাউকে একটা বাজে কথা বলেছি? নাকি অপমান করেছি কোন ভুল হলে! আর বিনিময়ে কি করলে তোমরা?

-স্যার আসলে——?

-কি আসলে?

-স্যার–। আপনার পি.এ আসলে—।

– কি? মায়া কি করেছে তোমাদের? সেদিন এতো কিছু ঘটনা নিজেরা দেখার পরও তোমাদের কাছে ওরই দোষ? ওই লম্পটটা একেবারে ফেরেস্তা? মায়ার লয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন করার সাহস পাও কি করে তোমরা? চিনে ওকে? সি ইজ মাই ফিয়োনসে—। দুদিন বাদে ওর সাথেই আমার বিয়ে হবে–। আর তোমরা আমার অফিসে জাস্ট একটা জব করেও সাহস হয় কি করে ওর নামে কিছু বলার? হাউ ডেয়ার ইউ?

-স্যা—স্যার?

-মায়াকে পছন্দ করে ড্যাড নিজে আমার পি.এ করে দিয়েছে–। এতোগুলো সময় যেন আমরা নিজেদেরকে বুঝতে পারি তার জন্য দিয়েছে–।

-স্যার–। আসলে আমরা জানতাম না—-।

-না জেনেই একজনের নামে আজেবাজে কথা রটাবে কেন? আর তোমাদের ব্যবহারে ও কি রিএ্যাক্ট করবে আমি তো সেই টেনশনেই মরে যাবো মে বি–। ও যদি আমার লাইফে না থাকে-তাও তোমাদের এই গাধামির জন্য তবে একজনেরও চাকরি থাকবে না মাথায় রাখো–। সব কটার লাইফ যদি আমি হেল না করে ছেড়েছি তো আমিও—।

-সরি স্যার–। সরি স্যার–। আর কখনো এমন ভুল করবো না স্যার।

-সরি আমাকে না–। মায়াকে গিয়ে বলো সবাই।

-জি স্যার—–।

রাহাত নিজেই একটা হালকা দম নিলো। এতোক্ষণ নিজের মতো করে বানিয়ে কথাগুলো বলেছে। কারণ মায়াকে সে নিজের করে চায়। বিয়ে করলে এই মায়াবতীকেই করবে। কিন্তু ব্যাপারটা আজকেই সামাল না দিলে সারাজীবন নানা রকম অপবাদ বয়ে বেড়াতে হবে মায়াকে। অফিসের বসের সাথে প্রেম করে বিয়ে করেছে৷ বা সম্পত্তির লোভে বিয়ে করেছে। সত্যটা কেউ দেখতে চাইবে না। যখন কেউ সত্যটা মানবেই না তখন সেটা জানারও দরকার নেই।

সবাই ভ্যাঁবাচ্যাঁকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখে ভ্রু কুঁচকে রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই দেখলো পিয়ন হাতে একটা কাগজ জাতীয় কিছু নিয়ে ছুটে তার দিকে এসেছে।

-কি হয়েছে শফিক?

-স্যার? মায়া ম্যাডাম চলে গেছে-।

-মানে?

মায়া চলে গেছে শুনে রাহাতের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। কি বলছে? মায়া চলে গেছে মানে কি! কোথায় গেছে? কেনই বা গেল?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here