মুগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৩

#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ১৩
#Saiyara_Hossain_Kayanat

বউ সেজে বড় একটা ঘোমটা দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি শুভ্র ভাইয়ের রুমে। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে তাকিয়ে দেখলাম শুভ্র ভাই একটা শেরওয়ানি পরে রুমে ডুকলেন। শেরওয়ানির হাতা ঠিক করতে করতে আমার কাছে এসে বিছানায় বসে কিছুটা আদুরে কন্ঠে বললেন-

—”বউ সাজে তোমাকে একদম অনন্যময়ি লাগছে। ইচ্ছে করছে টুপ করেই তোমাকে খেয়ে ফেলি।”

শুভ্র ভাইয়ের এইরকম কথা শুনে আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। পরক্ষণেই শুভ্র ভাই আমার গালে সজোড়ে এক থাপ্পড় দিয়ে রাগে উচ্চস্বরে বললেন-

—”এই বেয়াদব এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন নির্লজ্জের মতো?? যা সর আমার বিছানা থেকে ঘুমাতে দে আমায়।”

আমি বিছানা থেকে উঠে পরলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি কি থেকে কি হয়ে গেল আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

হঠাৎ করে মনে হলো কেউ আমার উপর পানি দিচ্ছে আচমকা চোখ খুলে সামনে শুভ্র ভাইকে দাঁত বের হাসতে দেখে ভয়ে আঁতকে উঠলাম সাথে সাথেই বিছানা থেকে একপ্রকার লাফিয়ে উঠে ভয়ে গলা ফাটিয়ে দিলাম এক চিৎকার। আম্মু আর ভাইয়া আমার রুমে ছুটে আসলেন। ভাইয়া এসে আমাকে জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারছি। আসেপাশে তাকিয়ে দেখলাম এটা আমার রুম আর শুভ্র ভাই বিছানার পাশেই হাতে গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে আমি একটু আগে সপ্ন দেখছিলাম!!!! আর শুভ্র ভাই আমার মুখে পানি ছিটানোর কারণ আমার ঘুম ভেঙে গেছে!!

শুভ্র ভাই পানি গ্লাসটা রেখে খানিকটা বিরক্তিমাখা কন্ঠে আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললেন-

—” আন্টি তোমার মেয়েকে ভালো মানসিক ডাক্তার দেখাও বুঝলে… পাগল হয়ে গেছে তোমার মেয়ে। একে তো মরার মতো পরে পরে ঘুমাচ্ছে এতো ডাকার পরেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে যখন ওর চোখে মুখে পানির ছিটা দিলাম, তখনই চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়েই এমন পাগলের মতো চিৎকার দেওয়া শুরু করছে। একটুর জন্য ওর চিৎকার শুনে আমার কানের পর্দা ফেটে যায়নি।”

এতোক্ষনে আমি একটু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলেও শুভ্র ভাইয়ের কথা গুলো শুনে মুহূর্তে রাগ উঠে গেল। রেগেমেগে জ্বলে উঠে শুভ্র ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম-

—”একদম আজে বাজে কথা বলবেন না শুভ্র ভাই। পাগল আমি না আপনি হয়েছেন। তা না হলে….”

আর কিছু বলার আগে পাশ থেকে আম্মু হুংকার দিয়ে বলে উঠলো-

—”একদম চুপ অনু এগুলো কেমন ব্যবহার করছিস শুভ্রর সাথে!! দিন দিন বড্ড বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস তুই।”

আমি অসহায় মুখ করে মিনমিনে বললাম-

—”আম্মু উনিই তো আগে এসব শুরু করলেন।”

ভাইয়া অনেকটা বিরক্তি নিয়ে বললেন-

—”আরে চুপ করো তো তোমরা সবাই। এই অনু তুই বল কিসের জন্য চিৎকার দিয়েছিলি??”

আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরলাম ভাইয়ার এই প্রশ্নে। এখন আমি কি উত্তর দিব!! সপ্নে এই অসভ্য লোকটাকে দেখেছি এটা বলবো?? আমি কিছুটা ভেবে স্বাভাবিক ভাবেই বললাম-

—”আসলে ভাইয়া একটা ভয়ংকর সপ্ন দেখেছি। জানিস একটা রাক্ষস আমাকে খেয়ে ফেলতে চেয়েছিল তাই ভয়ে চিৎকার দিয়েছিলাম।”

শেষের কথাটা শুভ্র ভাইয়ের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললাম। ভাইয়া আমার কথা শুনে আমার মাথায় আস্তে একটা চাটি মেরে বললো-

—”তুই আর তোর এইসব আজব সপ্ন সবই বিরক্তিকর শুধু শুধু আমাদেরকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি ফাজিল মেয়ে। আম্মু চল তো নাস্তা দাও আমাকে।”

এই কথা বলেই ভাইয়া আম্মুকে নিয়ে চলে গেলো। শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি মুচকি মুচকি হাসছেন। এই মুহুর্তে ওনার হাসি দেখে আমার গাঁ জ্বলে যাচ্ছে। একটু পর শুভ্র ভাই বললেন-

—”ভার্সিটির জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই তোকে ডাকতে এসেছিলাম। রেডি হয়ে নে তাড়াতাড়ি আজ থেকে আমার সাথেই আসা যাওয়া করবি আমি আন্টিকে বলে রেখেছি।”

শুভ্র ভাই ওনার কপালে এসে পরা চুল গুলো ঠিক করেতে করতে এগিয়ে এসে আমার দিকে খানিকটা ঝুঁকে ফিসফিস করে বললেন-

—”আজকাল তাহলে আমাকে নিয়ে সপ্ন দেখাও শুরু করে দিয়েছো ঘুমন্তপরি!!”

কথাটা শেষ করেই শুভ্র ভাই উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে চলে গেলেন রুম থেকে। আর আমি ঠায় দাঁড়িয়ে আছি এক জায়গায়। ছিঃ আমি কি সপ্ন দেখলাম শুভ্র ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে!! ছিঃ ছিঃ……. এমনিতেই আমাকে পাগল বানিয়ে ফেলছে আর বিয়ে করলে তো শশুর বাড়ি নয় ডিরেক্ট পাগলাগারদ যেতে হবে আমাকে।

————————

মুখ গোমড়া করে গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি। সকালের কথা মনে পরলেই নিজেকে কেমন যেন পাগল মনে হয়। সব কিছু কেন যেন বিরক্তিকর লাগছে ভালো লাগছে না কিছু। পাশের সিটে বসে শুভ্র ভাই ড্রাইভিং করছে। ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম উনি বেশ মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। ভালো করে তাকিয়ে খেয়াল করে দেখলাম নীল রঙের একটা শার্ট পরে আছেন উনি। ওনার এই ফর্সা ত্বকে যেন এই রঙের শার্টটা বেশ মানিয়েছে। ওনার চুল গুলো বাতাসে কপালের সামনে এসে দুলছে। আমার ভাবনার মাঝে শুভ্র ভাই সামনের দিকে তাকিয়েই বললেন-

—”এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছিস কেন?? আজ আমাকে খুব হ্যান্ডসাম লাগছে না-কি!! অবশ্য আমাকে সব সময়ই হ্যান্ডসাম লাগে শুধু তোর চোখেই পড়ে না আমার দিকে।”

লজ্জায় অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। মনে মনে নিজেকেই বকা দিচ্ছি ছিঃ ছিঃ আমি তো কখনো ওনার দিকে ভালো করে তাকিয়েও দেখিনি তাহলে আজ কেন এমন নির্লজ্জের মতো করে তাকিয়ে ছিলাম!! ছিঃ ছিঃ

শুভ্র ভাই আমার দিকে একটু পর পর তাকাচ্ছেন মনে হচ্ছে কিছু একটা পর্যবেক্ষণ করতে চাইছে। আচমকাই একহাত বাড়িয়ে আমার কপাল আর গালে হাত দিয়ে বললেন-

—”তোর গাল গুলো এরকম লাল দেখাচ্ছে কেন অনন্য তুই ঠিক আছিস তো?? জ্বর এসেছে না-কি!!”

আমি ওনার হাত সরিয়ে দিয়ে একটু দূরে গিয়ে আমার গাল গুলো হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে অস্বস্তির হয়ে বললাম-

—”কই না তো শুভ্র ভাই গরমের জন্য হয়তো এমন হয়েছে। আমি একদম ঠিক আছি।”

শুভ্র ভাই একটু চুপ থেকে হঠাৎ করে বিশ্বজয়ী হাসি দিয়ে বললেন-

—”অনন্য তুই কি ব্লাশ করছিস নাকি!! আমার সামনে লজ্জা পাচ্ছিস তুই!!”

ওনার কথায় আমি লজ্জা পেলেও সেটাকে পাত্তা না দিয়ে রাগী গলায় বললাম-

—”চুপচাপ গাড়ি চালান তো শুভ্র ভাই আমার দেরি হচ্ছে।”

শুভ্র ভাই আর কিছু বললো না। ভার্সিটির সামনে এসে গাড়ি থামাতেই আমি যখন নেমে পরবো তখনই শুভ্র ভাই আচমকা আমার হাত ধরে ফেললেন। আমার কাছে ঝুঁকে এসে আমার চুল গুলো ঠিক করে দুই গাল টান দিয়ে বললেন-

—”তোমার লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া গাল গুলো যেন মুগ্ধতার আস্তো এক ভান্ডার। তোমার মুগ্ধতায় জ্বলে পুড়ে আমার রাত গুলো নির্ঘুম কাটাতে বাধ্য করেছো। এর শাস্তি তুমিও পাবে এখন তো মাত্র শুরু আস্তে আস্তে তুমিও পুড়বে প্রতিদিন অনন্যময়ি।”

শুভ্র ভাইয়ের এক একটা কথা যেন আমার কাছে খুব ভয়ংকর মনে হচ্ছে। লজ্জার মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। বুকের ভিতর যেন কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আমার। শুভ্র ভাই কি আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে নাকি!! আমি নিজেকে কোনো রকম সামলিয়ে শুভ্র ভাইকে দুই হাতে ধাক্কা দিয়ে খানিকটা দূরে সরিয়ে দিলাম। বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে রাগে জ্বলে উঠে বললাম-

—”আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টায় আছেন নাকি শুভ্র ভাই??”

একথা বলেই গাড়ি থেকে নেমে পরলাম আর শুভ্র ভাই হাসতে হাসতে বললেন-

—”আমি এসে নিয়ে যাবো তোকে তাই একা একা পাকনামি করে চলে যাস না।”

আমি কিছুই বললাম না ওনার কথায়। আমার হার্ট এখনো খুব দ্রুত লাফাচ্ছে। এই রকম ভয়ংকর সিচুয়েশনে এর আগে কখনো পরিনি। এই অসভ্য লোকটা আমার সামনে আসলেই আমার কেন জানি দোম বন্ধ হয়ে আসে। একে তো অসভ্য তার উপর দিন দিন সাংঘাতিক রকমের মানুষ হয়ে উঠছেন উনি।

——————

বেশ কিছুক্ষন ধরে সামনে বসে থাকা এই বেস্ট ফ্রেন্ড নামক প্রানীটার অসহ্যকর হাসি সহ্য করছি। যার জীবনে এমন বেস্ট ফ্রেন্ড আছে তার হয়তো আলাদা করে কোনো শত্রুর প্রয়োজন হয় না। আজ এতো দিন পর মিমশি গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে এসেছে। ভেবেছিলাম আজ ভার্সিটিতে এসে ওর সাথে আমার সব কষ্টের কথা গুলো বলে নিজেকে একটু হাল্কা করবো। কিন্তু না এই হারামি আমার সব কথা শুনে প্রায় আধ ঘন্টা যাবত হেসেই যাচ্ছে থামার কোনো নামই নেই। আর ওর হাসি দেখে আমার গাঁ জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। নাহ…. এই মেয়ের এরকম অসহ্যকর হাসি আর সহ্য করতে পারছি না। ডান হাত উঠিয়ে দিলাম এক থাপ্পড় মিমশির পিঠে। সাথে সাথেই হাসি থামিয়ে পিঠে হাত দিয়ে অসহায় কন্ঠে বললো-

—”উফফফ অনন্যা এতো জোরে কেউ মারে?? তোর কি একটুও মায়া হলো না আমার জন্য।”

—”চুপ থাক ফাজিল মেয়ে। সেই কতক্ষণ ধরে পাগলের মতো হেসে যাচ্ছিস। আমি কি তোকে কোনো হাসির কথা বলেছি নাকি!”

মিমশি আবারও হাসতে হাসতে বললো-

—”দোস্ত তোর প্রেমকাহিনীটা জোসসসসস।”

আবারও মিমশির পিঠে থাপ্পড় দিয়ে বললাম-

—”এইইইইই তুই এখানে প্রেমকাহিনী কোথায় দেখলি??”

মিমশি কিছুটা ভাব নিয়ে বলল-

—”সবাইকে নিজের মতো বলদ মনে করিস না অনন্যা। তোদের সব কথা শুনে যে কেউ বলে দিতে পারবে তোরা দুইজন একে অপরের প্রেমে পাগল হয়ে গেছিস।”

মিমশির কথা শুনে আমার রাগ হুহু করে বেড়ে গেলো। জোরে এক ধমক দিয়ে বললাম-

—”একদম চুপ থাক হারামি। আবার যদি এইসব কথা বলিস তাহলে এক থাপ্পড় দিয়ে তোর দাঁতগুলো সব ফেলে দিবো।”

আমার ধমক খেয়ে মিমশি চুপসে গেলো। বেশ কিছু সময় চুপচাপ থাকার পর আবার নেকামোর সুরে বলে উঠলো-

—”দোস্ত আমার না তোর শুভ্র ভাইকে দেখতে ইচ্ছে করছে। ফোন দিয়ে আসতে বল প্লিজ….”

আমি ভাবলেশহীন ভাবেই বললাম-

—”ফোন করা লাগবে না কিছুক্ষণ পর এমনিতেই আমাকে নিতে আসবে।”

মিমশি উত্তেজিত হয়ে বলল-

—”বাহ… উনি তোকে নিতেও আসবেন!! তোর শুভ্র ভাই তো দেখছি তোকে চোখে হারায়।”

মিমশির কথায় জ্বলন্ত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম-

—”তোর শুভ্র ভাই, তোর শুভ্র ভাই করছিস কেন বার বার আমি কি শুভ্র ভাইকে কিনে নিয়েছি নাকি যে আমার হবে।”

“কিছু কিছু জিনিস কিনতে হয় না এমনিতেই নিজের করে নেওয়া যায়।”

পেছন থেকে এই কথা শুনে আমি আর মিমশি দুজনেই পেছনে তাকালাম।

চলবে…..

(আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম। ভালোবাসা❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here