মেঘের পরে মেঘ-৬

মেঘের পরে মেঘ -৬

মৌলভীবাজার থেকে পরদিন সকালে নাবিলদের ফেরার কথা থাকলেও ওরা ফিরতে পারলো না।শায়েরী অসুস্থ হয়ে পরেছে।ভোর থেকেই প্রচন্ড জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে শরীর।এমনিতেই একদম শেষ রাতে ঘুমিয়েছে দুজন।শায়েরীকে নিজের কাছে টেনে ঘুমোতে চাইলেও পারেনি নাবিল।শায়েরীই দুরে সরে ছিল।ওয়াশরুম থেকে ফিরে গুটিশুটি হয়ে খাটের এককোনায় শুয়ে পড়েছিলো।নাবিল বেশ কয়েকবার নিজের দিকে টানলেও ফিরেনি।
শেষে নিজেই শায়েরীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে গেছে।ক্লান্ত শরীর,তাই ঘুম চলে এসেছিল নিমিষেই।
ভোরের দিকে নাবিলের ঘুম ভেঙে যায় গোঙানির শব্দে। ঘুমের ঘোরে দুজন দুদিকে ফিরে ঘুমিয়েছিল।নাবিল ঘুমঘুম চোখে শায়েরীর দিকে ফিরে।
শায়েরী তখন কাঁপছিলো আর গোঙানির মতো শব্দ করছিলো।
নাবিলের ঘুম কেটে যায় তখনি।দ্রুত এগিয়ে ওকে নিজের দিকে ফেরাতেই বুঝতে পারে শরীরে বেশ জ্বর। রুমে এসি চলছিলো।নাবিল প্রথমে এসিটা বন্ধ করলো।
এরপর ওয়াশরুমে গিয়ে তোয়ালে টা ভিজিয়ে এনে একপাশ টা দিয়ে শায়েরীর কপাল চেপে ধরলো।বেশ তাপ।কিছুক্ষন চেপে রেখে আবার অন্য পাশটা ধরে এভাবে কিছু সময় করে আবার তোয়ালে ভিজিয়ে এনে ওর পুরো শরীরটাকে মুছে দেয় কয়েকবার করে।
শরীরটা একটু ঠান্ডা হলেও তাপ কমলো না।
হঠাৎই মনে হলো ওর ব্যাগে ঔষধ থাকার কথা।বাইরে বেরুলে সবসময়ই ও কিছু ঔষধ নিজের কাছে রাখে।প্যারাসিটামল তার মধ্যে অন্যতম।এবারও আসার আগে দুই পাতা ঔষধ ব্যাগে ভরেছিলো নিজ হাতে।

নাবিল উঠে গিয়ে ব্যাগ হাতাতেই ঔষধ পেলো।কিন্তু খালি পেটে ঔষধ খাওয়াবে কিভাবে? রুমে তো খাবার কোন কিছু নেই।ভাবনা বাদ দিয়ে শায়েরী কে উঠিয়ে ঔষধ খাওয়ালো নাবিল।মেয়েটা এখনো কেঁপে কেঁপে উঠছে।এরপর শায়েরীকে এক হাতে শক্ত করে জড়িয়ে অন্য হাতে পানি পট্টি দিতে থাকলো।
ঘন্টাখানেক পর জ্বর নামলো।
নাবিল ঘড়ির দিকে তাকালো।সকাল সাড়ে ছয়টা।
শায়েরীকে শুয়িয়ে দিয়ে ও নামলো।

সাত টার সময় রওনা হওয়ার কথা।ওদের তো জানাতে হবে শায়েরী অসুস্থ। এ শরীর নিয়ে এতোটা পথ ও জার্নি করতে পারবে না।আরো অসুস্থ হয়ে পরবে।তার চেয়ে একটু সুস্থ হলে না হয় রওনা হওয়া যাবে।

_________

কবির দরজা খুলে দিলে নাবিল ভেতরে ঢুকলো।আশিক গোসল সেড়ে নিয়েছে।কবির মোটামুটি রেডি।তাপস ব্যাগে কি যেন খুজছে।ঘরে ঢুকে সবার দিকে এক নজর চোখ বুলিয়ে নিলো নাবিল।যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
কবির নিজের চুলে চিরুনি বুলাতে বুলাতে বললো,

“কি রে নাবিল,তোরা রেডি হোস নি এখনো?তোকে দেখে মনে হচ্ছে মাত্র উঠলি।কি খবর?সারারাত ঘুমোস নি? ”
বলেই হেসে উঠলো।

“এতো সুন্দর করে সব কিছু ঠিক করে দিলাম কি ঘুমিয়ে থাকার জন্য না কি?”
যোগ করলো তাপস।নিজের শার্টে পারফিউম স্প্রে করতে করতে আবারো বললো,

“তা কি হলো দোস্ত?সব খবর ভালো? ”
বলেই আরেক দফা হেসে নিলো।

“ও পরে শোনা যাবে।এখন ওকে ছাড়।রেডি হয়ে আসুক।”
বললো কবির।

“আমাদের এখন যাওয়া হবে না বোধহয়।”
বললো নাবিল।

“কেন?”
সবাই একযোগে বললো।

“শায়েরী খুব অসুস্থ। বেশ জ্বর। ”
কাচুমাচু হয়ে বললো নাবিল।

“বলিস কি রে?একরাতেই অসুস্থ করে ফেলেছিস?”
হাসতে হাসতে বললো তাপস।

“তুই থামবি।আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি। ”

“আচ্ছা ভাই।রাগতে হবে না।তা শায়েরী কি করছে?”
হাসি থামিয়ে সিরিয়াস গলায় বললো তাপস।

“ঘুমোচ্ছে। একটু আগে ঔষধ দিয়েছিলাম।এখন জ্বর টা একটু কম মনে হলো।”

“ঠিক আছে ঘুমোক।তাহলে আমরা সকালে যাওয়াটা বাতিল করলাম।বিকেলের দিকে যদি শায়েরী একটু সুস্থবোধ করে তখন রওনা দেবো।ঠিক আছে? ”
বললো আশিক।

_________

সেদিন বিকেলেই ওরা সিলেট ফিরে এলো।শায়েরী এখন মোটামুটি সুস্থ বলা চলে।নাবিল ছায়ার মতো ওর সাথে থাকে।যখন যা কিছু প্রয়োজন সব টা নিজের হাতে খুব যত্ন নিয়ে করে ওর জন্য।
শায়েরী এমনিতেই নাবিলের ভালোবাসায় ডুবে ছিলো এখন যেন আরো বেশি ডুবলো।প্রথমে একরাশ সংকোচ থাকলেও ধীরে ধীরে ও তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে।
ও শুধু ভাবে একটা নতুন সম্পর্কে ঢুকলে বিশেষ করে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে ঢুকলো সবারই কি ওর মতো জড়তা থাকে?না কি শুধু ওর ক্ষেত্রেই এমনটা হচ্ছে?সেদিনের ইন্টিমেসির পর নাবিলই যেন ওর পুরো দুনিয়া।
যদিও নাবিল তা জানে না।ও তো ওর মতো করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সম্পর্কটাকে আরো সহজ করে তুলতে।

যার প্রথম ধাপ হিসেবে ও শায়েরীকে তুই বলা ছেড়ে এখন তুমি করে বলছে।মাঝে মাঝেই এটা সেটা নিয়ে ওর সাথে কথা বলছে।ওকে সহজ করার চেষ্টা করছে।
আর শায়েরী?যে কি না নাবিল কে সামনে পেলে রাজ্যের কথা জুড়ে দিতো সেই এখন নাবিলের সামনে সর্বদা মাথা নিচু করে থাকে।যেন নাবিল ওর মুখটা দেখলেও ওর লজ্জা। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

দীপা ওর অবস্থা দেখে একচোট মজা নিয়েছে।বলে,আর দুদিন পরেই তো তোমরা ঢাকায় ফিরে যাচ্ছো।তখন কি করবে?

শায়েরীও ভাবে,ঠিকই তো আজ বাদে কাল তো ফিরতেই হবে। তখন কি হবে?নাবিলের সব কিছু তো ওকেই করে দিতে হবে।সংসার বলে কথা।সংসারের কথা মনে হতেই মনের মধ্যে একরাশ ভালো লাগায় ভরে গেলো শায়েরীর।সংসার।ওর সংসার।না। শুধু ওর না।ওর আর নাবিলের সংসার।

_________

গতকাল শায়েরী নাবিল ঢাকায় এসেছে। প্রথমে নাবিল শায়েরীকে নিয়ে নিজের বাড়িতে উঠেছিলো।সেখানে সবাই রাজি থাকলেও নাবিলের বাবা শায়েরীকে মেনে নিলেন না।তার এক কথা,”এ বাড়িতে থাকতে হলে শায়েরীকে ছাড়তে হবে।যার বাবা তাকে এতো অপমান করেছে তার মেয়েকে তিনি কিছুতেই মেনে নিবেন না।”

নাবিল কোন কথা না বলে শায়েরীকে নিয়ে বের হয়ে এসেছে।এরপর এক হোটেলে রাত থেকে পরদিনই বেরিয়ে পরেছে বাসা খোঁজতে।সারাদিন খোঁজে নানা বন্ধুর সহায়তা নিয়ে অবশেষে দু কামরার ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করতে পেরেছে।রাতেই শায়েরীকে নিয়ে সেই ফ্ল্যাটে উঠে এসেছে নাবিল।

শায়েরী জানালো ফ্ল্যাট টা ওর ভীষণ পছন্দ হয়েছে।এরপর শায়েরীকে নিয়েই আবার বেরিয়ে পরলো অল্প কিছু কেনাকাটার উদ্দেশ্যে।কাল ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাকি কেনাকাটা করা যাবে।আপাতত যা না হলেই নয় তাই আনবে।তাছাড়া শায়েরী বলেছে একসাথে এতো কিছু না কিনে আস্তে আস্তে কিনলেই হবে।এতে না কি নাবিলেরও চাপ কম পরবে।
একটা তোশক, দুটো বালিশ,একটা চাদর,একটা জগ, একটা গ্লাস নিয়ে এই ছোট্ট সুন্দর ফ্ল্যাটে শুরু হলো ওদের নতুন সংসার।

চলবে…….

মুনিরা মেহজাবিন।

(বেশ কিছু দিন অসুস্থ ছিলাম।করোনার সমস্ত উপসর্গ চলে গেলেও অসুস্থ রইলাম আরো কিছু দিন।এখনো মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি বোধহয় সুস্থ নই।যাই হোক,যারা “মেঘের পরে মেঘ” এর পাঠক তাদের কাছে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত দীর্ঘদিন গল্প টি না পোস্ট করতে পারার জন্য। এটা ইচ্ছেকৃত ছিলো না।এখন থেকে নিয়মিত পাবেন।না পারলেও সপ্তাহে অন্তত দুদিন পোস্ট করবো।আর একটা কথা,গল্প টার যদি অনেকগুলো পর্ব হয় তবে পড়বেন তো?না কি বিরক্ত হবেন?”)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here