মেঘের পরে মেঘ-৯

মেঘের পরে মেঘ -৯

শায়েরীর পরীক্ষা শুরু হয়েছে বেশ কিছু দিন হয়ে গেছে।চার টা পেপার শেষ।আর মাত্র দুটো পেপার।তারপর ও মুক্ত।
পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত শায়েরী কোন কাজ করে শান্তি পায় না।এটা ওর পুরোনো স্বভাব। এখনো পারে না।পরীক্ষার জন্য ওর সব কাজ মাথায় উঠেছে।এমনকি স্বামী স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কেও এসেছে শিথিলতা। শায়েরী সকালেই কাজ শেষ করে পড়তে বসে।সারাদিন সেখানেই থাকে নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে।রাতের খাবার নাবিল বাইরে থেকে আনে।

আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি।নাবিল এসেছে একটু আগেই পার্থক্য এই যে আজ বেশ রাত হয়ে গেছে। শায়েরীরও চিন্তা হচ্ছিলো বেশ।কেন এতো রাত হলো জিজ্ঞেস করেও উত্তর পেলো না শায়েরী। নাবিলকে কেমন ক্লান্ত মনে হলো।খাবারের ব্যাগ টা টেবিলের উপর রেখে ওয়াশরুমে ঢুকলো।

খাবারগুলো টেবিলে সাজিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো শায়েরী।নাবিল এলো।শায়েরী ভাত দিতে লাগলে নিষেধ করলো।

“আমি খাবো না।তুমি খাও।”

“খাবে না কেনো?”

“খেয়ে এসেছি।”

“কোথা থেকে খেয়ে আসলে?”

“তানজুদের ওখান থেকে।”

“সেখানে গিয়েছিলে বলেই কি দেরি হলো?”

“হ্যাঁ।আর বলো না,ওর বাচ্চা টা অনেক অসুস্থ। হাতে টাকা পয়সা নেই।কিছু টাকা ধারের জন্য কল করেছিলো।”

“দিয়েছো?”

“হ্যাঁ।প্রথমে ভাবলাম কিছু টাকা দিয়ে দেই।পরে ভাবলাম বাচ্চা টা অসুস্থ যখন গিয়ে একবার দেখেও আসি আর টাকাও দিয়ে আসি।গিয়ে ফেঁসে গেলাম।তানজু না খায়িয়ে ছাড়লোই না।”

“ঠিক আছে তাহলে ভাত খেতে হবে না।অন্য কিছু লাগবে?”

“এক কাপ চা হলে মন্দ হয় না।তবে তোমার পড়া থাকলে লাগবে না।”

“খাবার টা শেষ করেই আনছি।”

_______

“কি খবর নাবিল?আজকাল অনেক ব্যস্ত থাকো মনে হয়?দেখাই পাওয়া যায় না?”

বললো তুষার।

মৃদু হাসলো নাবিল।

“না ভাই।এই একটু কাজের প্রেশারে আছি আর কি।”

“কাজের প্রেশার থাকলে তো অফিসে থাকবে।তোমাকে তো পাঁচ টার পর ইদানীং পাওয়াই যায় না।কোথায় থাকো?তোমার বউয়ের খবর কি?ও সুস্থ আছে তো?”

“হ্যাঁ ও সুস্থ আছে।আসলে কিছুদিন হলো তানজুর বাচ্চা টার শরীর খুব খারাপ।”

“এ্যাই কিছুদিন আগেই না অসুস্থ ছিলো এখন আবার কি হলো?”

“আসলে বাচ্চা টার কিছু দিন পরপরই ঠান্ডা লাগে।আর ঠান্ডা লাগলে ওর অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়।”

“এখনো কি সেই সমস্যাই?”

“হুম।”

“তুমি বোধহয় রেগুলার সেখানে যাও?”

“হ্যাঁ।কিছুদিন যাবত রোজই যাচ্ছি। আসলে বাচ্চা টার জন্য খুব মায়া লাগে।”

“ছোট্ট একটা বাচ্চা, মায়া লাগাই স্বাভাবিক। তবুও আজ আমি তোমাকে কিছু কথা বলবো।শুনবে কি?”

নাবিল হাসলো।
“তুমি এতো ফরমার্লিটি করছো কেন?বলো না কি বলবে?”

তুষার একটানে বলে গেলো।
“নাবিল আমার মনে হয় তোমার আর তানজুর বাড়িতে যাওয়া উচিত নয়।ও একা একটা মেয়ে সেখানে থাকে।সেখানে বারেবার তোমার সেখানে যাওয়া টা ভালো দেখায় না।আমি জানি তুমি সেখানে কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে যাও না।কিন্তু আশেপাশের মানুষ এটা ভালো চোখে দেখবে না।কেউ মানবে না তুমি ওর বাচ্চা টাকে দেখতে যাও,ওর হেল্প করতে যাও।বরং এরই একটা খারাপ মানে বের করবে। নানা কথা বলবে।এমনো হতে পারে শায়েরীও তোমাকে সন্দেহ করবে।”

নাবিল হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকলো কিছু সময়। তারপর ধীরে ধীরে বললো,

“কি বলছো এসব?শায়েরী কেন আমাকে সন্দেহ করবে? আমি তো সন্দেহের মতো কিছু করছি না?”

“কিছু না করলেও একসময় এমনটা হতেই পারে।অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।”

“সত্যি? ”

“হ্যাঁ রে ভাই।যত মায়াই লাগুক ওর বাড়িতে আর যাস না।বাচ্চার জন্য খুব বেশি মায়া লাগলে নিজেরাই একটা দুনিয়াতে আনার ব্যবস্থা কর।”

তুষারের এই কথাটা বেশ মনে ধরলো নাবিলের।ঠিকই তো এবার একটা বাবু নিলে কেমন হয়? বছর তো প্রায় হয়েই এলো।তাছাড়া শায়েরীর পরীক্ষাও শেষ।এখনই তো সময় একজন নতুন অতিথি কে বাড়িতে আনার।আজই বাড়িতে গিয়ে বলতে হবে শায়েরীকে।

_______

“ওই ব্যাটা কে আহে রে নিত্তি নিত্তি অই ছেড়ির হোনে?”

“কুন আত্নীয় হইবার পারে।”

“ছ্যাড়া বাইচা থাকতে তো কোনদিন আইতে দেহি নাই।অহন তো দুয়েকদিন পরপরই আহে।ইয়ার লাগে নি?”

“অইবার পারে।জোয়ান মাইয়া একটু শক আললাদ তো থাকবারই পারে।”
খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠে বাকের।তমিজকে উদ্দেশ্য করে নিজেকে দেখিয়ে বলে,

“কেন রে,আমাগে চোকে দেহে না।আমরা কি কম যাই নিহি?এমুন শক আললাদ তো মিটাইবারই পারি।”
বলেই আবার একটু হাসলো।
সিগারেটে শেষ টান দিয়ে পায়ের তলায় পিষতে পিষতে বললো,

“খেয়াল করিছ তো কবে আহে আবার। এইবার খালি বাগে পাই একবার তানজু সুন্দরীর খবর নিমু।”

চলবে…..

মুনিরা মেহজাবিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here