মেঘ_বৃষ্টি পর্ব=১৮

#মেঘ_বৃষ্টি পর্ব=১৮
❤❤
রোদ-রোদেলা

#তানিয়া_আনিতা

গতকাল রাতে খুব বেশি ক্লান্ত থাকায় ঘুম থেকে উঠতে মেঘের অনেক দেরি হয়ে যায় উঠেই চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানার ওপরদিকে নজর যায়। দেখে বৃষ্টি বিছানায় নেই।বৃষ্টিকে বিছানায় না দেখে মেঘের ঘুম যেন উবে গেল।মেঘ বাথরুমের দরজার দিকে তাকাতে দেখল দরজা খোলা। দ্রুত বিছানা ছেড়ে মেঘ বারান্দায় গেল। সেখানে ও বৃষ্টি নেই। এই সাত সকালে এমন অচেনা জায়গায় বৃষ্টি কোথায় যেতে পারে মেঘ সেটা বুঝতে পারছে না।তাই দ্রুত নিচে নামতে যাবে তখনি বৃষ্টির সাথে দেখা হলো




——– আচ্ছা তোমার কোনো কান্ড জ্ঞান নেই এতো সকালে এই অচেনা জায়গায় তুমি কোথায় গেছো আমি রুমে তোমায় না পেয়ে খুজছিলাম। জানো আমার কতো চিন্তা হচ্ছিল। ইডিয়ট বলো কোথায় গিয়েছিলে। একটু চিৎকার করে।

——–আসলে আমার ঘুম তাড়াতাড়ি ভেঙে গেছিল তাই উঠে নামাজ পড়ে এদিকটায় বের হয়েছিলাম ভাবতে পারিনি আপনি এভাবে উঠে আমায় খুজবেন
,
,
,
,
,
মেঘের চিৎকারে বৃষ্টি কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। আর কাঁদো কাঁদো গলায় বৃষ্টি কথা গুলো বলে।বৃষ্টির এমন ফেস দেখে মেঘের কেমন জানি কষ্ট লাগে তাই নিজেকে শান্ত করে

——-ঠিক আছে আর কখন আমাকে না বলে কোথাও যাবে না ইনফেক্ট আমাকে ছাড়া কোথাও যাবে না আমার সাথেই থাকবে।গট ইট।
,
,
,
,
তারপর দুজনে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে মেঘলার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরে।মেঘলা বান্দরবানের অনেক ফেমাস জায়গা। দেখতেও অনেক সুন্দর। আঁকাবাকা, রাস্তা,ঝুলন্ত ব্রিজ,চারপাশে গাছের মেলা সাথে রয়েছে উপজাতিদের ছোট ছোট স্টল, তার ওপর অনেক সুন্দর একটা চিড়িয়াখানা,এভাবে প্রথমদিন অনেক ভালো কাটলো।




দ্বিতীয় দিন তারা গেল বিরাট বৌদ্ধ মন্দিরে যেটাকে সবাই স্বর্নমন্দির নামে চিনে।প্রাচীন কাল থেকে এই মন্দিরকে স্বর্নমন্দির নামে আখ্যায়িত করা হয়। ধারণা করা হয় এখানে স্বর্নের একটি মূর্তি আছে যাকে গিয়ে এই মন্দির নির্মিত হয়।এভাবে মেঘলা আর স্বর্নমন্দির ঘুরে দুদিন কেটে যায়।রাতে ফিরে ডিনার করে রুমে গিয়ে মেঘ বৃষ্টিকে বলে

——-শোনো আমাদের জিনিস সব ঠিক করে নাও আগামীকাল আমরা নীলাচল যাবো।সেখানে আমাদের অফিসের জন্য বিদেশি ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং হবে তারপর ওখানে কিছু দিন ঘোরার পর আমরা ঢাকায় রওনা দিব।

মেঘের কথা মতো বৃষ্টি সব গুছিয়ে নেই। তারপর বিছানায় শুতে যাবে ওমনি মেঘ বলে

——-আচ্ছা আরেকটা কথা বলতে চাই যদি তুমি অনুমতি দাও।

——-অনুমতির কি আছে বলে ফেলুন

——-আসলে আমরা তো কাল বিদেশি ক্লায়েন্টের সাথে ডিল করবো আর ওনাদের এটা বলা হয়েছে যে আমার ওয়াইফ ও আছে আমার সাথে তাই তোমার যদি কোনো সমস্যা না হয় তবে কাল একদিনের জন্য তুমি কি শাড়ি পরতে পারবে,জোর করবো না কিন্তু আমি চাই তুমি বাঙালি নারীদের মতো শাড়ি পরে ওনাদের সামনে যাও প্লিজ।
.
.
.
.
.
মেঘ খুব অসহায় ফেস নিয়ে কথা গুলো বলল বৃষ্টিকে।বৃষ্টি মেঘের দিকে চেয়ে আছে মেঘের এমন করুন কথা শুনে বৃষ্টি কি বলবে বুঝতে পারছে না।তাই মেঘের কথার উওর না দিয়ে শুয়ে পরল। বৃষ্টির কাছ থেকে উওর না পেয়ে মেঘ মন খারাপ করে নিজেও শুয়ে পরল।

সকালে উঠেই মেঘ হামি তুলতে তুলতে যেই না মেঝেতে পা দিবে ওমনি আয়নার দিকে চোখ যেতেই তার চোখ আটকে গেল। সে দেখছে তার সামনে কোনো পরী দাঁড়িয়ে আছে যদি ও পরীর মুখ দেখা যাচ্ছে না। পেছন থেকে দেখলো শাড়ি পরে লম্বা চুল ছেড়ে সামনের দিকে তাকিয়ে কি জানি করছে। ভালো করে লক্ষ্য করতেই দেখলো সামনে থাকা মেয়েটির চুল অনেক ঘন আর অনেক লম্বা বলতে গেলে হাটু ছুঁই ছুঁই। পরনে লাল রঙের শাড়ি তার সাথে সবুজ পার। এদিকে বৃষ্টি এয়ারিং পরে হালকা সেজে চুলগুলোকে ছোট একটা কাটা দিয়ে বেধে পেছন দিকে ছেড়ে দিয়েছে। তারপর পেছনে ফিরতেই হঠাৎ মেঘকে দেখে বৃষ্টি চমকে যায়।

———————+——————–

বৃষ্টি ভালো করে তাকাতেই বুঝতে পারল মেঘ তার দিকে অন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে তার চোখে মুখে অনেক নেশা। আর মেঘ গভীর নেশায় তলিয়ে যাচ্ছে কারণ এর আগে কখনো বৃষ্টিকে এমন রূপে দেখেনি তার ওপর এমন সাজে বৃষ্টিকে পুরোই অপরূপ লাগছে।মেঘের ইচ্ছে করছে বৃষ্টিকে ছুঁয়ে দিতে।তার ওপর বৃষ্টির এমন দীঘল কালো লম্বা চুল যা মেঘ এর আগে কখনো দেখে নি।কারণ মেঘ সবসময় বৃষ্টিকে হিজাবে দেখেছে আর বাসায় থাকতেও বৃষ্টি সবসময় মাথায় ঘোমটা দিয়ে রাখতো তাই কখনো বৃষ্টির এমন কেশ মেঘের নজরে পরেনি।মেঘ বুঝতে পেরেছে তার অগোচরে এতোদিন বৃষ্টির এমন রূপ লুকিয়ে ছিল আসলে লুকিয়ে ছিল নই লুকিয়ে রেখেছিল বৃষ্টি কখনো নিজেকে এমনভাবে প্রদর্শন করেনি।





মেঘের এখন বড্ড ইচ্ছে করছে বৃষ্টিকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে বৃষ্টির ওই চুলে মুখ গুজাতে।মেঘ আস্তে আস্তে বৃষ্টির দিকে এগোতে থাকে আর বৃষ্টি পেছতো।একসময় বৃষ্টি দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। আর না পেরে বৃষ্টি মেঘকে ডাকতে থাকে।কিন্তু মেঘের কানে বৃষ্টির ডাক পৌঁছাই না। পৌঁছাবে কেমনে মেঘ যে এক ঘোরের মাঝে আছে। তাই বৃষ্টির ডাকে তার কোনো হেলদোল নেই। মেঘ একদম বৃষ্টির কাছে চলে এসেছে ঠিক ততোটাই কাছে এসেছে যেখান থেকে একে অপরের শ্বাস প্রশ্বাসের গতিবেগ শুনতে পারছে।এদিকে বৃষ্টি কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।
,
,
,
,
,
,
আচমকা মেঘ একহাত দিয়ে বৃষ্টির কোমড় জরিয়ে ধরল আরেক হাত বৃষ্টির সামনে থাকা চুলগুলোকে সরিয়ে দিয়ে তার গলায় ঠোঁট ছুয়ে দিল। মেঘ এমন কিছু করতে পারে তা বৃষ্টি স্বপ্নেও ভাবেনি।মেঘের স্পর্শে বৃষ্টি পুরো ফ্রিজড।কি করবে বুঝতে পারল না। তাই এবার নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মেঘকে সজোরে ধাক্কা দিল। ঘোরের মাঝে থাকাই মেঘ এতোক্ষণ বুঝতে পারেনি কি করছে তাই তাল সামলাতে না পেরে একটু দূরে খাটের কোণায় ছিটকে পরে ফলে পায়ে অনেকটা ব্যাথা পায়।করুন দৃষ্টিতে বৃষ্টির দিকে তাকাতে দেখতে পায় বৃষ্টি রক্তিম চোখে চেয়ে আছে
,
,
,
,
——–ইউ ইডিয়ট হাউ ডেয়ার টু টাচ মি।আপনার সাহস কেমনে হলো আমার কাছে আসার আমাকে স্পর্শ করার আমি আপনাকে আগেও বলেছি আমার থেকে দূরে থাকুন কিন্তু আজ আপনি আমার….. ছিঃ কি মনে করেছেন নিজেকে আমি আবারও বলছি আমার দিকে হাত বাড়াতে আসবেন না নাহলে নিজের ক্ষতি করতেও আমি দুবার ভাববো না।বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মেঘ তখনও ঠাঁই বসে রইল।
.
.
.
.
.
প্রায় দেড় ঘন্টা পর মেঘ রেডি হয়ে নিচে নামল।দেখে বৃষ্টি রিসিপশনে বসে আছে অন্য মনস্ক হয়ে মেঘ গিয়ে বৃষ্টির সামনে থুড়ি বাজাইতে বৃষ্টি মেঘের দিকে তাকালো। মেঘ কিছু না বলে সোজা গাড়ির দিকে হাটা ধরল আট বৃষ্টি তার পেছনে পেছনে গেল।





এক ঘন্টা পর তারা নীলাচল পৌঁছাল।সেখানে গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকল।ঢুকতেই দেখলো ৩ জন বিদেশি মানুষ বসে আছে। দুজন মেয়ে একজন ছেলে।মেঘকে দেখে তারা স্বাগতম করলো।মেঘ বৃষ্টিকে দেখিয়ে তাদের কাছে পরিচয় দিল।তারা বৃষ্টির রুপের অনেক প্রশংসা করল।তারপর তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলল।মেঘের সাথে কথা বলার পর তারা তাদের সিদ্ধান্ত জানালো ইংরেজিতে যার অর্থ

——–দেখুন মি. মেঘ আপনাদের সব ডকুমেন্ট, পারফরমেন্স অনেক ভালো। কিন্তু আমরা যেহেতু অনেক বড় কোম্পানি তাই আপনাদের মতো অনেকে আমাদের এই ডিলটা চাই তাই আমরা আপনাদের ডিলটা দিতে পারবো কিনা তা এখন কথা দিতে পারছি না। আমাদের সব কোম্পানির সাথে মিটিং করতে হবে এরপর বিচার করে দেখা যাবে আপনাদের সাথে ডিল হবে কি হবে না। এর জন্য ৩-৬মাস সময় লাগতে পারে।
,
,
,
,
,
মেঘ ও তাদের কথায় সাই দেয়।এরপর তারা নাস্তা করে ঘুরতে বের হয়। হাওয়ায় গাড়ি করে তারা নীলাচল পৌঁছে। তারপর সবাই অনেক ঘোরাঘুরি করে দুপুরে খেয়ে সেখান থেকে রওনা দেয় পাশের নদ দেখতে।সেখানে পৌঁছে তারা একটা বড় সাম্পানে উঠে। এদিকে মেঘ বৃষ্টির নজর আড়াল করে বৃষ্টিকে দেখতে থাকে।আজ বৃষ্টিকে বড্ড বেশি সুন্দর লাগছে। মেঘ না চাইতে বারবার বৃষ্টিকে দেখছে।বৃষ্টি ছবি তুলতে ব্যস্ত।মেঘ বৃষ্টির দিক থেকে চোখ সরিয়ে বিদেশি ক্লায়েন্টের সাথে কথা বলতে থাকে।
,
,
,
,
,
হঠাৎ পানির শব্দে মেঘ ফিরে তাকাই। দেখতে পায় বৃষ্টি নেই। আসলে ছবি তুলতে তুলতে বৃষ্টি সাম্পানের একদম কিনারায় চলে আসে আর সাম্পান একটু মোর ঘুরাতেই বৃষ্টি পানিতে পড়ে যায়। মেঘ আর কিছু না ভেবে পানিতে ঝাপ দেয় তারপর বৃষ্টিকে পারে তুলে।দেখে বৃষ্টি ততক্ষণে জ্ঞান হারিয়েছে। মেঘ বৃষ্টির পেটে চাপ দিয়ে পেট থেকে পানি বের করে তারপর বৃষ্টিকে নিয়ে একটা হোটেলে উঠে। ডাক্তার আসলে বৃষ্টিকে দেখে কিছু মেডিসিন দেয়।রাতের দিকে বৃষ্টির জ্বর আসলে মেঘ সারারাত তার সেবা করে। দুদিন হয়ে যায় বৃষ্টির জ্বর নামছে না।মেঘের মা কল করলে মেঘ এ ব্যাপারে কিছু বলে না আসলে বৃষ্টি বলতে মানা করেছে নাহলে ওনি অনেক টেনশনে থাকবেন। অবশেষে সাতদিন পর তারা ঢাকায় ফিরে। কিন্তু তখনও বৃষ্টির জ্বর ছিল। বাড়িতে ফিরে এক সপ্তাহ বৃষ্টি বেড রেস্টে ছিল। সপ্তাহ খানেক পর বৃষ্টি কিছুটা সুস্থ হয়।তারপর আবারও অফিসে জয়েন করে।এভাবে কেটে যায় ৩ মাস।
,
,
,
,
,
৩ মাস পর……..
,
,
,
,
,
চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here