মেঘ_বৃষ্টি পর্ব=১৭

মেঘ_বৃষ্টি পর্ব=১৭
❤❤
রোদ-রোদেলা

#তানিয়া_আনিতা

মেঘের কথা শুনে বৃষ্টি অনেক অবাক হলো। কারণ মেঘ এমনভাবে কথা বলছে যেন সে আগে থেকে সব জানতো।মনে হচ্ছে একপ্রকার প্ল্যান। বৃষ্টির কেমন জাবি মেঘের কথায় ঘটকা লাগছে। তাই সে নিজের কনফিউশান দূর করার জন্য মেঘকে জিজ্ঞেস করল।,

——–আসলে আপনি কি বলতে চাইছেন তার মানে কি আপনি আগে থেকে সব জানতেন।কোনো প্ল্যান করে রেখেছিলেন।প্লিজ পরিষ্কার করে বলুন।

——-না আমি কোনো প্ল্যান করি নি। আসলে বিগত একমাস আগে বিদেশের এক কোম্পানির সাথে আমাদের একটা প্রজেক্ট নিয়ে ডিল হওয়ার কথা ছিল। আমি খুব করে চাইছিলাম যেন ডিলটা আমরা পায়।তাই ওনাদের সাথে এই নিয়ে অনেক কথা হয়।কিছু দিন আগে ওনারা কল করে জানান ওনারা দেশে আসছে বান্দরবান ভিজিট করতে।বর্তমানে ওনারা বান্দরবানের একটা রিসোর্টে উঠেছে। আর মা যখন বললেন আমাদের হানিমুনের জায়গা হিসেবে বান্দরবান চুস করেছেন তাই আমিও রাজি হয়ে গেলাম এতে একদিকে অফিসের কাজ ও হয়ে যাবে অন্য দিকে আমাদের হানিমুন ও সেরে ফেলতে পারবো।
,
,,
,
মেঘের সব কথা বৃষ্টি মন দিয়ে শুনছিল কিন্তু শেষের কথায় বৃষ্টি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল

——-হানিমুন সেরে ফেলবেন মানে কি বলতে চাইছেন অন্য কোনো মতলব আছে নাকি

——-আরে তুমি চোটে যাচ্ছো কেন আমাদের পরিবারের কাছে যেটা হানিমুন আমাদের কাছে সেটা একটা সফর মাএ তাই রেগে যাওয়ার দরকার নেই

——–ও আচ্ছা তো আপনি তো আবার কাল অফিসে যাবেন তাহলে জিনিস ঠিক করবেন কখন

——-সমস্যা নেই আমি কাল অফিস গিয়ে শ্রাবনকে সব বুঝিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আসবো তুমি তোমার সব কিছু ঠিক করে নিয়ে নিও।

বলে দুজনি শুয়ে পরে।সকালে উঠে মেঘ দ্রুত অফিসে চলে গেল আর বৃষ্টি নিজের জিনিস ঠিক করে আরও টুকটাক কাজ করে সারাদিন পার করল বিকেলে মেঘ অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিজের রুমে গিয়ে রেস্ট নিল।সন্ধ্যার পর মেঘ নিজের জিনিস ঠিক করার জন্য আলমারি খুলতেই দেখল মেঘের আলমারিতে তার কোনো কাপড় নেই। এবার মেঘের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। একদিকে তো তার অনুমতি ছাড়া কেউ তার আলমারি ধরেছে তার ওপর আলমারি থেকে কাপড় উধাও। বৃষ্টিকে ডাক দিতে যাবে এমন সময় বৃষ্টি রুমে ঢুকল।

——-আচ্ছা আমার আলমারি কি কেউ ধরেছে

——কেন

——-না আসলে আমি আমার কাপড় গুছানোর জন্য আলমারি খুলতেই দেখি কোনো কাপড় নেই তাই।

——ও দরকার নাই আমি সব গুছিয়ে রেখেছি তারপর ও একবার দেখে নিবেন যদি বাদ পরে তবে নিয়ে নিন।

বৃষ্টির কথা শুনে মেঘ যেন আকাশ থেকে পরল কারণ ঢ়ে মেয়ে তাকে সহ্য করতে পারে না সে কিনা তার কাপড় গুছিয়ে রেখেছে এটা যেন পুরো অবিশ্বাস্য।

——আচ্ছা তোমার কি মন ও শরীর ঠিক আছে। অসুস্থ হওনি তো

——-মানে

——না যে কিনা আমার ব্যাপারে এতো বিরক্ত সেই তুমি আমার কাপড় গুছিয়ে রেখেছো তাই অবাক হলাম

——-আসলে আপনার কাপড় গুছানো আমার ভুল হয়েছে বলেই চলে যেতে নিলে আবার পেছনে ফিরে
আচ্ছা আমাকে কি ওখানে ও শাড়ি পরতে হবে আসলে আমি শাড়িতে কম্পরটেবল নই।,বাসায় মায়ের কথা রাখতে শাড়ি পরি কিন্তু বাইরে তো আমি সামলাতে পারবো না।

——–না ওখানে তোমাকে শাড়ি পরতে হবে না তুমি যেটাতে স্বাচ্ছন্দবোধ করা তাই পরবে তোমার যেটা পছন্দ নই সেটা করতে আমি কখনো জোর করবো না

——–আমার ভালো লাগা খারাপ লাগা নিয়ে যদি আপনি সত্যি চিন্তা করতেন তাহলে আজ হয়তো আমাকে আপনার সাথে থাকতে হতো না

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় আর মেঘ বুঝতে পারে বৃষ্টি কথাটা দ্বারা কিসের ইঙ্গিত করেছে তাই আর কিছু না ভেবে আবারও নিজের কাজে মন দিল

রাত ৯ টা।মেঘের মা ওদের দুজনকে রুমে ডাকলেন। দুজনি রুমে যেতেই

——-মা ডেকেছো

——-হুমম তোদের সব কি গুছানো শেষ

——-হুম মা মোটামুটি সব গুছিয়ে রেখেছি

——ও আচ্ছা মনে করে বৌমার জন্য গরম কাপড় নিবি কারণ বান্দরবান যেহেতু পাহাড়ি জায়গা সাথে রয়েছে অনেক গাছ গাছালি। আমি শুনেছি সকালের দিকে ওখানকার আবহাওয়া অনেক ঠান্ডা। আর বৌমার তো ঠান্ডাতে এলার্জি আছে তাই ওখানে গেলে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে

বৃষ্টি তার শ্বাশুড়ির কথা শুনে অবাক হয়ে যায় কারণ বৃষ্টির ঠান্ডাতে সমস্যা সেটা ওর পরিবার ছাড়া বাইরের কেউ জানে না আর এখানে আসার পর কাউকে বলেনি তাহলে

——–মা আমার ঠান্ডায় সমস্যা আপনি জানলেন কি করে

——মা হয়ে যদি সন্তানের খবর না জানি তাহলে কে জানবে।আসলে বউভাতের অনুষ্ঠানে তোর মায়ের সাথে কথা বলতে বলতে ওনি বলে তুই নাকি ঠান্ডা একদম সহ্য করতে পারিস না বেশি ঠান্ডা বা পানি ধরলে অসুস্থ হয়ে পরিস

বৃষ্টি তার শ্বাশুড়ির কথা শুনে চোখের জল ছেড়ে দিল আর ওনি বুঝতে পেরো বৃষ্টিকে জরিয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন আর এতোক্ষণ পেছন থেকে মেঘ দাঁড়িয়ে দুজনের ভালোবাসা উপভোগ করছে।

——- মেঘ কাল কখন রওনা দিবি

——-এতো সকালে নাস্তা করে

——-কি বলিস তাহলে তো ফ্লাইটের দেরি হয়ে যাবে

——-না মা আমরা ফ্লাইটে যাবো না কারণ এমনিতেই দেশের বাইরে যাওয়া আসা করি ফ্লাইট দিয়ে তাই আমি চাই এবার আমরা ট্রেনে করে চট্টগ্রাম যাবো তারপর ওখান থেকে রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে সরাসরি বান্দরবান এতে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবো কি বলো বৃষ্টি

মেঘের কথা শুনে বৃষ্টি মাথা নাড়ল যার মানে হুমম

এরপর সবাই একসাথে ডিনার করে নিলো।মেঘ বৃষ্টি দুজনি ডিনার করে ঘুমাতে চলে গেল কেননা কাল অনেক লং জার্ণি তাই আজ ভালো করে ঘুমিয়ে নিবে যাতে কাল তেমন ক্লান্ত না লাগে।
,
,
,
,
পরের দিন সকালে সবাই নাস্তা করে মেঘরা বেরিয়ে গেল সফরের উদ্দেশ্য। প্রথমে গিয়ে তারা ট্রেনেট টিকিট কেটে নিজেদের জন্য আলাদা কামরা নিলো। ট্রেন আসতেই দুজনে কামরায় চলে গেল। বৃষ্টি জানলার পাশে বসে প্রকৃতি দেখছে আর মেঘ একটা বই পরছে আর আড়চোখে বৃষ্টিকে দেখছে বৃষ্টি সেটা বুঝতে পেরে

——-আমাকে কি আজকে বেশি সুন্দর লাগছে এভাবে আড়চোখে দেখছেন যে

——–তুমি তো সবসময় সুন্দর তোমার মাঝে আমি সব সময় নতুনত্ব দেখি সেটা কি বলতে হবে

——-হয়েছে আর বলতে হবে না আপনি আমার দিকে এভাবে তাকাবেন না আমার অস্বস্থি লাগছে।
.
.
.
.
.
.
বৃষ্টির কথা শুনে মেঘ বুঝতে পারল বৃষ্টি বিরক্ত হচ্ছে তাই সে তার জায়গা থেকে সরে গেল। দীর্ঘ ৮ ঘন্টার পর তারা চট্টগ্রাম পৌঁছলো।পৌঁছে তারা তাদের রিজার্ভ করা গাড়িতে উঠে বসলো। ততক্ষনে ধরণীর বুকে আধার নেমে পরল।চারদিক অন্ধকার নেমে এসেছে। কোথাও কিছু দেখা যাচ্ছে না। গাড়ির আলোতে যা দেখা যায়। গাড়ির চারদিক খোলা থাকায় শনশন করে বাতাস বইছে যার জন্য বৃষ্টির শীত লাগছিল। মেঘ সেটা বুঝতে পেরে ব্যাগ থেকে গরম কাপড় বের করে বৃষ্টির গায়ে জরিয়ে দিল।




রাত ১ঃ৩০। অবশেষে তারা একটা মডার্ণ হোটেলে পৌঁছালো।আগে থেকে তারা হোটেলের রুম বুক করে রেখেছিল তাই হোটেলে পৌঁছাতেই ম্যানেজার তাদের সাদরে গ্রহণ করে ওদের দুজনকে রুমে নিয়ে গেল। লম্বা পথ অতিক্রম করাই আর রাত বেশি হওয়ায় দুজনে ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়ল
,
,
,
,
পরের দিন সকালে…
,
,
,
,
চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here