মেঘ_বৃষ্টি পর্ব=১৬

#মেঘ_বৃষ্টি পর্ব=১৬
❤❤
রোদ-রোদেলা

#তানিয়া_আনিতা

রাতে বাসায় ফিরে যে যার মতো ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর সবাই একসাথে খেতে বসলো। খাওয়ার মধ্যখানে মেঘের মা বলে উঠল

——-মেঘ একটা কথা বলার ছিল

——-হুমম মা বলো না কি বলবে

——-না বলছিলাম বিয়ে তো হয়েছে বেশ কিছুদিন হলো তোরা হানিমুনের বিষয়ে কি কিছু চিন্তা করলি না মানে হানিমুনে কোথায় যেতে চাস তাহলে সব ব্যবস্থা করতাম আরকি
.
.
.
.
কথা টা শুনে বৃষ্টির খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। বৃষ্টি চোখ বড় বড় করে একবার মেঘের দিকে একবার তার শ্বাশুড়ির দিকে তাকালো। মেঘও কিছুটা ঘাবড়ে গেল কেননা এই বিষয়টা তার মাথায় ছিল না আর মাও যে হঠাৎ এমন কিছু বলতে পারে তা মেঘের ধারণার বাইরে। তবুও নিজেকে ঠিক করে বলল,

——-মা সবে মাত্র বিয়ে হয়েছে আর এখন এই নিয়ে কথা বলার কি আছে পরে না হয় ব্যাপারটা ভেবে দেখবো
,
,
,
——-কি বলিস ভেবে দেখবি মানে বিয়ের পর পরই যদি হানিমুনে না যাস তবে সেটা আর কিসের হানিমুন রইল।সবকিছুর একটা সময় থাকে সেটা পেরিয়ে গেলে তার আমেজ আর থাকে না। হানিমুন ও হচ্ছে এমন একটা বিষয়। বিয়ের পরি নতুন দম্পতির কিছু আলাদা সময় কাটানোর জন্য এটা খুব সুন্দর মূহুর্ত আর তুই বলিস কিনা পরে।না না এটা সম্ভব না পরে বলতে বলতে দেখবি তুই ভুলেই গেছিস আর তুই তো আমার ছেলে আমি তোকে ভালো করেই চিনি, তাই আর কোনো কথা নই আগামি তিনদিনের মধ্যে আমি তোর হানিমুনের ব্যাবস্থা করবো।

——–কিন্তু মা এতো তাড়াতাড়ি তুমি কি করতে পারবে আর জায়গা কই পাবে।

——–সেটা তোর না ভাবলেও চলবে আমি ঠিক করে রেখেছি প্রথম হানিমুনে তোরা বান্দরবান যাবি ৭ দিনের জন্য এটা কাছেও আছে আর জায়গা হিসেবে ভালো।এরপর তোরা নিজেদের মতো সময় করে পরে আবারও নিজেদের পছন্দের জায়গায় যাবি।কিন্তু এখন এক সপ্তাহের জন্য তোরা বান্দরবান যাবি এটাই ফাইনাল।

——-কিন্তু মা অফিসে তো অনেক কাজ আছে

——-রাখ তোর কাজ তখন তুই একা ছিলি তাই কিছু বলি নাই এখন তোর পরিবার আছে সংসার হয়েছে তাই অফিসের পাশাপাশি তোকে সংসারে ও মনোযোগী হতে হবে।




বৃষ্টি এতোক্ষণ মা ছেলের কথা শুনছিল।বলতে গেলে নিরব দর্শক ছিল। বুঝে উঠতে পারছে না কি বলবে বা কি বলা উচিত। খেতে বসে এমন কিছুর সম্মুখীন হতে হবে তা তার কল্পনার বাহিরে ছিল। হানিমুনে যাবে তাও মেঘের সাথে অসম্ভব সেটা বৃষ্টি কখনো মেনে নিবে না। যে করেই হোক তাকে এ বিষয়টা আটকাতে হবে তাই সে কিছু একটা চিন্তা করতে লাগলো। তখনি তার শ্বাশুড়ি তার সম্মতির কথা জানতে চাইলো,

——-মা বৃষ্টি আমার যা বলার বলে দিয়েছি তোর কোনো আপত্তি নেই তো।

——-মা আপনি তো জানেন বিয়ের জন্য আমি এতোদিন অফিসে যায়নি এখন যদি বসকে বলি আমার আবারও ছুটির কথা ওনি তো কখনো রাজি হবেন না। তাই আমি বলছিলাম কি আপনি এটা কেন্সেল করে দিন আমরা না হয় পরে যাবো।

——-কিরে তোকেও কি মেঘের রোগে পেলো নাকি কিসের পরে করছিস আমি তো বলেছি আমি সব মেনেজ করে ফেলেছি এখন তোদের কথায় কিছুই হবে না যদি দরকার পরে তোর বসের সাথে আমি কথা বলবো।
.
.
.
.
কথাটা শুনে বৃষ্টি ৪৪০ বোল্টের শকড খেল বসের সাথে কথা বলা মানে হচ্ছে মেঘের সাথে বলা। এরকম কিছু হলে তো তাদের দুজনি সমস্যায় পরবে।এদিকে মেঘের মনে চলছে অন্য চিন্তা। সে এতোক্ষণ না চাইলেও এবার চাইছে হানিমুনে যেতে। কারণ সেখানে গেলে সে বৃষ্টিকে ভালো করে টাইট দিতে পারবে সাথে অন্য একটা কাজও শেষ করে আসতে পারবে। তাই সে তার মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে বলতে লাগলো

——–না মা তোমাকে বলতে হবে না। বৃষ্টির বসের সাথে আমি কথা বলবো আমি জানি ওনি কখনো না করবে না আফটার অল একজন নতুন দম্পতির হানিমুনে ওনি কখনো বাধা দিবেন না তাই তুমি চিন্তা করো না আর বৃষ্টি তোমার বসের নাম্বারটা আমাকে দিও আমার নাম শুনলে ওনি আর না করবেন না।
,
,
,
,
বলেই বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। এদিকে মেঘের কথা আর ভাব দেখে বৃষ্টি রাগে গা জ্বলছে কিন্তু তার শ্বাশুড়ি সামনে থাকাই কিছু বলতেও পারছে না। সবাই খাবার খেয়ে ওপরে চলে গেল। বৃষ্টি টেবিল গুছিয়ে হন্তদন্ত করে রুমে গেল কারণ মেঘের এমন আচরণে বৃষ্টির মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে তাই তার এখন মেঘের সাথে এই নিয়ে কথা বলা দরকার।রুমে ঢুকেই দেখে মেঘ বিছানায় বসে অফিসের কাজ করছে বৃষ্টিকে দেখা মাএই মেঘ উঠে বসলো

——–কি সমস্যা আপনার

——-আমার আবার কি সমস্যা হবে আমি কি তেমন কিছু বলেছি

——-ও বলেন নি তো খাবার টেবিলে তাহলে কি করেছেন।আপনি হানিমুনে যাওয়ার জন্য রাজি হলেন কেন

——–আমি কই রাজি হলাম মা তো অনেক জোর করছিলেন তাই আমি আর কি বলবো আর তুমি তো মাকে চিনো না ওনি একবার যা ঠিক মনে করেন তাই করবে সেখানে অন্য কারো কথায় কান দিবেন না।

——–কিন্তু আমরা চাইলে তো মাকে মানা করতে পারতাম। কিন্তু মাঝখান থেকে তো আবার আপনি ও মাকে সাপোর্ট করলেন যার কারণে মা আরও বেশি জেদ ধরে বসলো।আমি বুঝতে পেরেছি আপনি ইচ্ছা করে এমনটা করেছেন😡

——–তোমাকে কিছু বললেও তুমি বিশ্বাস করবে না তার চেয়ে বরং তুমি যা মনে করো তাই

——–ওকে হানিমুনে তো যাবেন বলে মাকে কথা দিয়েছেন কিন্তু অফিস সেখানে কি বলবেন আমরা দুজন হানিমুনে যাচ্ছি।

——–সেটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না সেটা আমি মেনেজ করে নিবো

——–হুমম জানি তো আপনার তো আবার অনেক বুদ্ধি দেখি সেই বুদ্ধি কতোটা কাজে আসে

বলে রাগে গটগট করে নিজের বিছানা ঠিক করে শুয়ে পরল আর মেঘ বিছানায় বসে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মনে মনে

——– তুমি যখন আমার বুদ্ধির পরীক্ষা নিতে চাইছো তাহলে কাল দেখবে এই মেঘ আহমেদ কীভাবে নিজের বুদ্ধির প্রয়োগ করে বলে হেসে দিল।
,
,
,
পরের দিন সকালে দুজনে নাস্তা শেষ করে বেরিয়ে গেল। বৃষ্টি নিজের ডেক্সে বসে চিন্তা করতে লাগলো যে মেঘ কীভাবে সব ঠিক করবে। যদি ওলটা পালটা কিছু করে বসে। না না যদি তেমম কোনো প্ল্যান করে তবে বৃষ্টি সেটা কোনোভাবে মানবে না। এখন বৃষ্টির তার শ্বাশুড়ির ওপর বড্ড রাগ হচ্ছে। যদি ও বৃষ্টি তার শ্বাশুড়িকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু এমন একটা সিদ্ধান্তে নিবে সেটা কখনো ভাবতে পারে নি।হঠাৎ ফোনের শব্দে বৃষ্টি ভাবনা কাটলো স্ক্রিনে গিয়ে দেখলো মেঘ কল করেছে রিসিভ করতেই

——–ওকে স্যার।
,
,
,
তারপর বৃষ্টি উঠে মেঘের কেবিনের দিকে হাটা ধরল। কেবিনের দরজা খুলতেই দেখলো মেঘের কেবিনে টিনা আর শ্রাবন।বৃষ্টি তাদের সাথে কুশল বিনিময় করে একটা চেয়ারে বসলো। মেঘ বলতে শুরু করল

——- আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। তো যে জন্য আপনাদের ডাকা হয়েছে আসলে একটা নতুন বিদেশি কোম্পানির সাথে আমাদের প্রজেক্টের ব্যাপারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করতে হবে, যদি তাদেরকে আমরা কনভিন্স করতে পারি তবে অনেক বড় একটা প্রজেক্টের কাজ আমরা পেয়ে যাবো যার মাধ্যমে আমাদের অনেক লাভ হওয়ার সম্ভবনা আছে। বর্তমানে ওনারা বান্দরবান রিসোর্টে আছে৷ তাই আগামি পরশু এক সপ্তাহের জন্য আমরা ওখানে যাবো।ওনাদের সাথে মিটিং এর সকল কাজ শেষ করে আমরা ঢাকায় ফিরবো।

টিনা–মেঘ তাহলে আমি আমার সব কিছু ঠিক করে নি

——–কেন

——-কেননা তুমি তো বলেছেন মিটিং এর জন্য বাইরে যাবে আর আমি তো তোমার পিএ সে সুবাদে তো আমারও তোমার সাথে যাওয়া উচিত তাই না।

——–হুমম কিন্তু আমার এই ডিলে তুমি যাবে না, যাবে মিস বৃষ্টি কেননা এই প্রজেক্টের সকল দায়িত্ব আমি ওনাকে দিয়েছি তাই আগামি সফরে ওনি আমার সাথে যাবেন।আর আপনাদের ডেকেছি মূলত এতোদিন যখন আমরা থাকবো না সেহেতু অফিসের সকল কাজ আপনাদের দেখতে হবে মানে তোমাকে আর শ্রাবনকে।

——-সমস্যা নেই স্যার আপনি চিন্তা করবেন না আপনি নিশ্চিন্তে আপনার কাজ সম্পূর্ণ করে আসেন এদিকটা আমরা সামলে নিবো।(শ্রাবন)

——-ওকে তাহলে এখন সবাই যার যার কাজ করেন আর মিস বৃষ্টি আজকে থেকে আপনার সকল প্যাকিং করে নিন মনে রাখবেন আগামি পরশু দিন কিন্তু আমাদের সফর শুরু তাই কাল আপনাকে আর অফিসে আসতে হবে না।
.
.
.
.
.
.
বলে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ডেবিল হাসি দিল বৃষ্টি বুঝতে পেরে চোখ লাল করে চলে গেল আর টিনা তো রেগে এর আগে বের হয়ে গেছে। বৃষ্টি নিজের ডেক্সে বসে দুহাতকে ঘষতে ঘষতে বলতে থাকে
,
,
,
——–কতো বড় শয়তান ছেলেরে বাবা আমি তো ভেবেছিলাম কিছুই করতে পারবে না কিন্তু এতো দেখি আগে থেকে অনেক কিছু ভেবে রেখেছে কি সুন্দর করে সবটা সাজিয়ে বলে দিল।কিন্তু ডিলের যে কথাটা বললো এটা কি আদো সত্যি আমরা তো যাচ্ছি হানিমুনে, যদি ফিরে আসার পর সবাই ডিলের কথা জিজ্ঞেস করে তাহলে কি উত্তর দিবে ওনি।হুমম এটা জিজ্ঞেস করতে হবে।
,
,
,
রাতে বাসায় ফিরে বৃষ্টি খেয়ে রুমে গেল।গিয়ে দেখে মেঘ কোথাও নেই তাই সে বারান্দায় গেল,গিয়ে দেখে মেঘ দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে বৃষ্টি নিঃশব্দে মেঘের পাশে গিয়ে দাড়ালো,

——কি হলো কিছু বলবে

বৃষ্টি খানিকটা অবাক হয়ে

——-আমি তো এসেছি নিঃশব্দে তাহলে আপনি বুঝলেন কেমনে

——–তুমি আওয়াজ না করলেও আমি তোমার অস্তিত্ব টের পাই কারন আমার অস্তিত্বে যে তুমি মিশে আছো।
বাদ দাও বলো কি বলতে চাও

——–আসলে আপনি যে বললেন আমরা একটা প্রজেক্টের কাজে বান্দরবান যাচ্ছি সত্যি বলতে তো আমরা কোনো প্রজেক্টের কাজে যাচ্ছি না তাহলে মিথ্যা বললেন কেন যদি ফিরে আসার পর সবাই জিজ্ঞেস করে তাহলে কি উওর দিবেন এতে তো সবাই কষ্ট পাবে।

——-কে বলেছে আমি মিথ্যা বলেছি আমি তো কোনো মিথ্যা বলেনি যা বলেছি সত্যি

——-মানেনননননন😮
,
,
,
,
,
,
চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here