মেঘ_বৃষ্টি ❤❤পর্ব=১৫

#মেঘ_বৃষ্টি
❤❤পর্ব=১৫
রোদ – রোদেলা

#তানিয়া_আনিতা

অফিসের সব কাজ মোটামুটি শেষ করে বৃষ্টি তৃনাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। যেহেতু অনেকগুলো ফাইল এখনো বাকি আছে তাই কিছু ফাইল ব্যাগে করে নিয়ে নিল যাতে বাসায় গিয়ে সেগুলো শেষ করতে পারে।বৃষ্টিদের বেরোনের পরই মেঘ বৃষ্টির ডেক্সে যায়।কিন্তু বৃষ্টিকে দেখতে না পেয়ে নিজেও বেরিয়ে পরে।
,
,
,
,
,
বৃষ্টি বাসায় এসেই সোফায় ধপ করে বসে পরল কারণ সারাদিন এতো কাজ করার পর তার আর শরীর শক্তি নেই।হঠাৎ তার সামনে কেউ একজন সরবতের গ্লাস এগিয়ে দিল। সাথে সাথে বৃষ্টি সেটা খেয়ে নিল।চোখ তুলে দেখে আর কেউ নয় তার শ্বাশুড়ি। তিনি বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে

——-কিরে মা কেমন কাটল আজকে অফিসের দিন।বস কি কিছু বলেছে

——-হুমম মা ভালো আর বসও কিছু বলেনি।

——-ও আচ্ছা যা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আমি নাস্তা দিচ্ছি।
.
.
.
.
.
বৃষ্টি আর কিছু না বলে রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।শাওয়ার নিয়ে চুলে গামছা পেচিয়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে সামনের দিকে তাকাতেই থতমত খেয়ে গেল।কারন বিছানারব ওপর মেঘ বসে আছে। দুহাত বিছানার উপর রেখে ওপরের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। হঠাৎ ওয়াশরুমের দরজার শব্দ পেয়ে যেইনা সামনে চোখ খুলে তাকালো, দেখল বৃষ্টি তার সামনে দাড়িয়ে আছে।



মেঘ আরেকটু ভালো করে লক্ষ্য করতেই দেখতে পেল বৃষ্টির পরনে এ্যাশ কালারের শাড়ি, শাড়ির কুচিগুলো যদি ও ভালো করে গুছানো নয় তবুও বৃষ্টির মধ্যে একপ্রকার সৌন্দর্যতায় সেটা আর প্রভাব ফেলছে না, চুলগুলো টাওয়ালে মোড়ানো, সামনের কাটা চুলগুলো পুরো কপালে ছড়িয়ে আছে, মুখে বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা,তার ওপর সদ্য গোসল করে আাসায় শরীরের সাথে শাড়িটা ভালো করে লেপ্টে আছে যা বারবার মেঘকে কাছে টানছে,সব মিলিয়ে বৃষ্টিকে অনেক আকর্ষনীয় লাগছে, মেঘ না চাইতেও তার চোখ দুটো বৃষ্টির দিকে চলে যাচ্ছে। এদিকে বৃষ্টি বেশ অস্বস্তিতে পরে গেলো। কেননা এভাবে কোনো ছেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে সেটা যে কোনো মেয়ের জন্য খুবই বিরক্তিকর। বৃষ্টির মুখে কিছুটা বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠল।মেঘ সেটা ভালো করে উপলব্ধি করতে পেরেছে তাই নিজের চোখ সরিয়ে আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। বৃষ্টি নিজেকে ঠিক করে মাথায় কাপড় দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে এসে গেল।গিয়ে দেখে তার শ্বাশুড়ি তাদের জন্য টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছে। বৃষ্টিকে দেখা মাএই তিনি তাকে টেনে খেতে বসালেন।এর কিছুক্ষন পর মেঘ ও চলে আসলো।দুজনে একসাথে নাস্তা করে মেঘ টিভি দেখতে গেল আর বৃষ্টি সব গুছিয়ে রান্না ঘরে গেল তার শ্বাশুড়িকে সাহায্য করতে।
,
,
,
,
,
রাতের ১১ টা।সবাই ডিনার শেষে যার যার রুমে চলে গেল। বৃষ্টি রুমে গিয়ে ফাইলগুলো নিয়ে বসলো কেননা কালকের মধ্যেই সব গুলো ফাইল জমা দিতে হবে।বৃষ্টি বিছানা ঠিক করে নিজের কাজ করতে লাগলো। এদিকে মেঘ বিছানায় শুয়ে আছে কিন্তু ঘুম আসছেনা কারন আলো জ্বললে মেঘের ঘুম আসেনা।মেঘ এপাশ ওপাশ করছে কিন্তু বৃষ্টির সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই সে নিজের মতো কাজ করতে লাগলো। এবার মেঘ কিছুটা রাগ নিয়ে উঠে বসলো,

——-কি সমস্যা তোমার আলোটা অফ করতে পারছো না দেখছো না আমার ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে।

——-তো আমি কি করবো দেখছেন না কাজ করছি কালকের মধ্যে সবগুলো কমপ্লিট করতে হবে

——-তো অফিসের কাজ অফিসে করবে এখানে করার কোনো মানে হয়না

——-আপনি বললেই হলো এতোগুলো কাজ একদিনে দেওয়ার আগে ভাবার দরকার ছিল আমি পারবো কিনা, এখন কিছু বলে লাভ নেই আমার কাজ যতক্ষণ না শেষ হয় ততক্ষণ আমি আলো বন্ধ করবো না। এবার আপনি ঘুমালে ঘুমান না হলে বসে থাকুন আপনার ব্যাপার বলে আবারও কাজ করতে থাকে।
,
,
,
মেঘ বেশ বুঝতে পারল বৃষ্টি তাকে জব্দ করার জন্য এমন করছে তাই কথা না বাড়িয়ে ওপাশ হয়ে শুয়ে পরল। আর বৃষ্টি মনে মনে হাসতে লাগলো, দেখাা চান্দু আমাকে দিয়ে এতে কাজ করানো আজ তো আপনাকে আর ঘুমাতে দিবনা দরকার পরলে সারারাত কাজ করবো আলো জ্বালিয়ে তবুও আপনাকে ঘুমাতে দিব না বলে শয়তানি হাসি দিল।
.
.
.
.
.
রাত ২টা।মেঘ এখনো জেগে আছে। কেননা লাইটের আলোতে মেঘ কোনোভাবে ঘুমাতে পারছে না।এবার মেঘ প্রচন্ড রেগে গেল।যেইনা পাশ ফিরে বৃষ্টিকে কথা শুনাতে যাবে,গিয়ে দেখে বৃষ্টি কাজ করতে করতে ফাইলের ওপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। মেঘ বৃষ্টির এমন কান্ড দেখে হেসে দিল।তারপর বিছানা ছেড়ে বৃষ্টির কাছে গিয়ে তাকে ঠিক করে শুয়ে দিল। ফাইলগুলো হাতে নিয়ে দেখে বেশ কিছু কাজ রয়ে গেছে তাই সেগুলো নিজে কমপ্লিট করে সব গুছিয়ে লাইট অফ করে নিজেও শুয়ে পরল।
,
,
,
সকালে ঘুম থেকে উঠে বৃষ্টি নামাজ পড়ে প্রতিদিনের ন্যায় সকল কাজ করে দ্রুত অফিসে চলে গেল।কেননা কালকে তার কাজ পুরো শেষ হয়নি তাই ভেবেছে অফিসে গিয়ে বাকি কাজ শেষ করবে।কিন্তু অফিসে গিয়ে ফাইল হাতে নিতেই বৃষ্টির চোখ ছানাবড়া। কারণ সব ফাইলের কাজ শেষ কিন্তু বৃষ্টির স্পষ্ট মনে আছে সে অর্ধেক কাজ শেষে ঘুমিয়ে পরেছিল তার মানে……

হঠাৎ ফোনের শব্দে বৃষ্টির ঘোর কাটলো।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে

——–মিস বৃষ্টি ফাইল গুলো নিয়ে আসুন

——-জ্বি স্যার।

বৃষ্টি ফাইলগুলো নিয়ে মেঘের রুমে গেল। আর মেঘের রুমে ঢুকেই ফাইলগুলো মেঘের দিকে এগিয়ে গেল।মেঘ ভালো করে চেক করে নিলো।

——-হুমম সব তো ঠিক আছে আপনি এখন যেতে পারেন মিস বৃষ্টি। কথা টা বলে মেঘ একটু থেমে বলল

——-সরি এখন তো আর আপনি মিস নন মিসেস তো কি ডাকবো মিসেস বৃষ্টি নাকি মিসেস মেঘ বলে হেসে দিল। আর বৃষ্টি চোখ মুখ লাল করে মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল।

হঠাৎ শরীর খারাপ হওয়ায় রোদেলা আজ কলেজ যায় নি। রুমে বসে কিছু নোট দেখছিল কিন্তু কালকের কথা মনে পরতেই আনমনে হেসে দিল তারপর আস্তে আস্তে মোবাইল টা হাতে নিয়ে কল দিল।রোদ ড্রয়িংরুমে বসে অফিসের কিছু কাজ করছিল হঠাৎ আননোন নাম্বার থেকে কল দেখে রিসিভ করতেই

———আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন

——-ওলাইকুম আসসালাম জ্বি ভালো কে বলছেন

——- বাহ স্বর শুনে বুঝতে পারছেন না এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন

রোদ কিছুটা আনদাজ করতে পেরে বলল

——- না ভুলি নাই আসলে মাথায় ছিল না যে আপনি হতে পারেন তো কেমন আছেন। আজ কলেজ যাননি

——–জ্বি ভালো আসলে একটু মাথা পেইন করেছে তাই আর কলেজ যায় নি।তো আক কি ফ্রী আছেন

——-হুমম কেন বলুন তো।

——-না কালকে তো আমার সাথে কফি খেতে বলেছিলাম আপনার সময় হয়নি যদি আজকে সময় করে আমার সাথে এক কাপ কফি খেতেন

——–ওকে সময় আর ঠিকানা বলুন আমি চলে যাবো।

রোদেলা সব ঠিক করে বলে লাইনটা কেটে দিল আর বারান্দায় দাঁড়িয়ে আপনমনে হাসতে লাগলো। রোদ সোফায় আরেকটু হেলান দিয়ে বলল

——-আমার পাতা ফাদে তুমি নিজেই এসে ধরা দিলে রোদেলা এখন শুধু তোমাকে বন্দী করার পালা।মেঘ আহমেদ এবার দেখবে কীভাবে আমি কাটা দিয়ে কাটা তুলি বলে পৈশাচিক হাসি দিল………….
.
.
.
.
.
.
.
চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here