শুকনো বকুলের মালা গাঁথিব পর্ব -০৫

#শুকনো_বকুলের_মালা_গাঁথিব
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_৫

ঝর্না বেগম কারো সম্পত্তি বিষয়ক কথা বলছিল এটা নুর শুনতে পেলেও কার সম্পত্তির বিষয়ে বলছে এটা অনুমান করতে পারল না। তবুও নুরের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খিলে গেল। ইচ্ছে হলো কথোপকথন গুলো ক্যামেরা বন্ধী করে রাখতে।
জোর করে কারো সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার প্লান করছে আর সেগুলোর প্রুফ রাখবে না তা কি হয়।
নুরের মাথায় এটা একবার আসল যে ওর বাবার সম্পত্তি নয়ত আবার। কিন্তু তখন মনে পড়ল যে সে তো এমনিতেও ওর বাবার স্ত্রী তাই সম্পত্তি তো এমনিই পাবে তাই বিষয়টায় তেমন একটা গুরুত্ব দিল না। কিন্তু এই বিষয়টাই যে কত সিরিয়াস একটা ইস্যু হতে পারে এটা ওই মোটা মাথায় ঢুকল না।

নুর ওর চাচির সাথে তাদের বাসায় চলে যায়। জেরিন এর কাছে ওর মায়ের এই রুপ যেন একদম অচেনা লাগছিল। ওর মা যে সদ্য মা হারানো একটা মেয়ের সাথে এমন করবে এটা কল্পনার বাহির ছিল। নুরের বাড়িতে নুর থাকবে না সেখানে জেরিন কীভাবে থাকে। নুর যাওয়ার পর পরই সেও তার বাবার কাছে চলে যায়।

নুর চলে যাওয়ায় ঝর্ণা বেগম যতটা না খুশি হয়েছিলেন তার থেকে বেশি কষ্ট পেলেন জেরিন চলে যাওয়ায়। তিনি তো মনে মনে ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন তিনি তার মেয়েকে নিয়ে এখানে থাকবেন। কিন্তু তার মেয়েটা হয়েছে একদম উল্টো। সব আচরন বাবা- চাচ্চুদের মতো হয়েছে। কেন ঝর্ণা বেগমের মতো হলো না এই নিয়ে আফসোস এর শেষ নেই ঝর্না বেগমের।



রশিদ সাহেব রাতে বাসায় এসে বাসাটা কেমন চুপচাপ দেখতে পেলেন। তখন বিষয় টা গুরুত্ব দিলেন না ভাবলেন সবাই হয়ত যার যার রুমে রয়েছে। তাই তিনি রুমে চলে গেলেন। রুমে গিয়ে দেখতে পেলেন ঝর্ণা বেগম কাকে যেন বারবার ফোনে ট্টাই করে যাচ্ছে। কিন্তু অন্যপাশ থেকে কোনো রেসপন্স না আসায় বারবার ফোন করেই যাচ্ছিলেন। এদিকে রশিদ যে বাসায় এসেছে সেই ব্যাপারটা দেখেও যেন ইগনোর করে গেলেন। এ বিষয়টা মোটেও ভালো লাগল না রশিদ সাহেব এর। তবুও কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলেন।

রশিদ সাহেব খেতে বসার আগে নুরের রুমের সামনে গেলেন। নুরের রুম এর দরজা একদম খোলা। যতই সামনের দিকে যাচ্ছিলেন কেমন যেন একটা শুন্য শুন্য অনুভব করছিলেন। ভিতরে গিয়ে রুমে ঢোকার আগে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেন

– নুর আমি কি ভিতরে আসব।

তিন চার বার জিজ্ঞেস করার পরও যখন কোন রেসপন্স পেলেন তখন তিনি রুমের ভিতরে গেলেন। গিয়ে দেখেন পুরো রুম খালি। নুরের কোথাও কোন ড্রেস, বই, প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিছুই রুমে নেই। পুরো রুমটা খালি পড়ে আছে। রশিদ সাহেবের বুকটা কেমন খা খা করে উঠল। তার নিজের ভিতরে অপরাধ বোধ কাজ করতে লাগল। তার বারবার মনে হতে লাগল তার করা অপরাধের জন্যই তার মেয়ে হয়ত বাসা ছেড়ে চলে গেছে। তিনি উল্টো ঘুরে হাটা ধরলেন। দ্রুত পায়ে পৌছালেন ঝর্ণা বেগমের রুমে।

ঝর্না বেগম রশিদ সাহেব এর ছুটে আসা দেখেই বুজতে পারলেন হয়ত নুরকে না দেখেই ছোটাছুটি করছে। তাই ঝর্ণা বেগম বলে উঠলেন

– এত চিন্তার কিছু হয় নি। মহারানী হারিয়ে যায় নি। তার চাচি এসে নিয়ে গেছে। এত বড় মেয়ে হারিয়ে নিশ্চয়ই যাবে না। খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।

এতদিন যখন জায়েদা বেচে ছিল যতদিন ঝর্ণাকে বাহিরে বাহিরে থাকতে হয়েছে সে কয়দিন যেন ঝর্নার মুখ থেকে মধু ঝড়ে পড়ত। তাইতো ঝর্নার পক্ষ পাতি করে সেদিন ভাই, বোন সমাজ সবার বিরুদ্ধে গিয়েছিল। কিন্তু সেই ঝর্ণার রুপ যেন আসতে না আসতেই চেন্জ হয়ে গেল। ভাষাও কেমন চেঞ্জ হয়ে গেছে। রশিদ সাহেব ভাবেন এসব বিষয় নিয়ে পরে কথা বলবেন। তাই জিজ্ঞেস করেন

– নুর তো সেদিন যেতে চাচ্ছিল না কিন্তু আজ হঠাৎ কেন গেল।

– তা আমি কি জানি।

– তুমি নিশ্চয়ই কিছু বলেছ নয়ত যাওয়ার কথা না।

– সেটা গিয়ে তোমার মেয়ের কাছেই জিজ্ঞেস কর।

তেড়া তেড়া কথা রশিদ সাহেব এর সহ্য হলো না। তাই ঝর্নাকে শাসাল

– বেশি বাড় বেড় না ঝর্ণা ফল কিন্তু ভালো হবে না। ইদানিং দেখছি মানুষকে রেসপেক্ট করাটাও ভুলে যাচ্ছো। যাই হোক তোমার সাথে পরে কথা বলছি।

এরপর রশিদ সাহেব না খেয়েই আবার বেড়িয়ে পড়েন বড় ভাইয়ের বাসার উদ্দেশ্য। বড় ভাই এর ফ্লাট অতটা দূরেও নয়। বাসা থেকে বের হলে পাঁচ মিনিট এর বেশি লাগে না। এক বাসার ছাদ থেকে অন্য বাসার ছাদ দেখা যায়।

বাসার বাহিরে বাইকের হর্ন এর শব্দ পেয়ে মুচকি হাসি দেন খালিদা বেগম। তার বুজতে বাকি নেই যে কে এসেছে। উপরে যত যাই বলুক নুরকে ছাড়া তার এক মুহুর্ত ও চলত না আগে এত তাড়াতাড়ি সেসব ভুলে যাবে কি করে। নিজের অপছন্দে জায়েদা বেগমকে বিয়ে করার পর কখনো ঠিকঠাক মতো বাড়িতে ফিরত না রশিদ। সবার সাথে ঠিকঠাক ভাবে কথাও বলত না। কিন্তু এই নুর যখন কোল জুড়ে আসল তখন সবটা যেন বদলে গিয়েছিল। মেয়েকে এক মুহুর্তের জন্য চোখের আড়াল হতে দিত না। খালিদা বেগমের এসব ভাবনার মাঝেই ডোরবেল বেঝে ওঠে। খালিদা বেগম যেন দরজার সামনে দাড়িয়েই অপেক্ষা করছিলেন। ডোরবেল বাঝার সাথে সাথেই দরজা খুলে দেন।

– বুজলেন কীভাবে আমি এসেছি।

– বাসার নিচে এসে এভাবে অনবরত বাইকে হর্ন তুমি ছাড়া আর কে বাজাবে।

বড় ভাবির কথার বিপরীতে রশিদ ও মুচকি হাসি দেয়।

– ভাবি…

– হুম বলো।

– ইয়ে মানে নুর কোথায়?

– নুর কোথায় মানে। নুর তো এখানে আসে নি।

– আপনি মজা করছেন তাই না ভাবি।

– মজা কেন করতে যাব।

– তাহলে কোথায় গেল আমার মেয়েটা।

– এখন এত ভালোবাসা কেন দেখাচ্ছো? সেদিন কোথায় ছিল ভালোবাসা। সেদিন তো ছোট বউয়ের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সমাজের সামনে সবার মাথা হেট করলে। একটা বার মেয়ের কথা জানতে চাইলে না।

– স্যরি ভাবি। তখন কি করে ফেলেছি নিজেও বুজতে পারছি না এখন। কিন্তু কেন যেন এটা অনুভব হচ্ছে অনেক বড় কোন ভুল হয়ে গেছে। হয়ত এই ভুলের খেসারত আমাকেই দিতে হবে। সামনে কি অপেক্ষা করে আছে বুজতে পারছি না।

– যাক ভাই শান্ত হয়ে বসো। আমি নুরকে ডেকে দিচ্ছি।

রশিদ সাহেব নুরকে বোঝালেন বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু নুর যেতে রাজি হলো না। রশিদ সাহেব বললেন

– নুর মা চলো। ওটা তো তোমার ই বাসা।

– বাবা আমার বাসা ঠিক আছে। কিন্তু নতুন মা যেভাবে আচরন করে তাতে আমি রিয়াক্ট করে ফেলি। শত হোক সে আমার থেকে বড়। তার সাথে খারাপ আচরন করা আমার ঠিক না। তাই আপাতত কিছু দিন দূরে থাকি। তারপর যদি সে আমাকে সহ্য করতে পারে তাহলে না হয় যাব।

রশিদ সাহেব নুরকে বোঝাতে ব্যার্থ হয়। তারপর নুরকে বলেন আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে থেকো। আর আমি অফিস থেকে প্রতিদিন এখানে এসে তোমার সাথে দেখা করে যাব।




বেশ কয়েক দিন এভাবেই কে’টে যায়। কিন্তু রশিদ আর ঝর্নার সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হতে থাকে। ঝর্নার আবদার রশিদ যেন এখনই তার সব সম্পত্তি থেকে অর্ধেক তার নামে করে দেয়। কারন রশিদ সাহেব এর মৃত্যুর পরে তার ভাইয়েরা এটা নিয়ে ঝামেলা করতে পারে। কিন্তু রশিদ সাহেব ঝর্না বেগমের আবদার রাখতে রাজি নন। এ নিয়ে প্রতিটা দিন তাদের মধ্যে ঝগড়া চলতেছে। এর মধ্যে একদিন ঝর্ণা বেগম আর রশিদ সাহেব এর ঝগড়া তুমুল পর্যায়ে চলে যায়। একসময় তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। রশিদ সাহেব যেন দ্বিতীয় বিয়ে করার মজাটা হারে হারে টের পাচ্ছে।

#চলবে

( )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here