শুচিস্মিতা পর্ব -১৩

#শুচিস্মিতা -১৩
Tahrim Muntahana

~ কি হয়েছে তারা? এমন ভাবে কথা বলছিস কেন?

আপায়ের কথায় তারা চুপ হয়ে যায়। কি বলতে যাচ্ছিল সে? এসব কথা পাঁচ কান না হ‌ওয়ায় ভালো। জোর করে মুখে হাসি ফুটায় সে,

~ এই যে তোমাদের থেকে দূরে চলে যাবো, কবে না কবে দেখা হবে। তাই বললাম!

আনতারা’র কথাটা ফারাহ’র মনে না ধরলেও আর কোন প্রশ্ন করলো না সে। বললো,

~ এসব নিয়ে একদম মন খারাপ করবি না তারা। এসব নিয়ে ভাবলে পড়ায় মন বসবে না, তোর এখন‌ প্রচুর পড়তে হবে‌। তাই দুনিয়া সব গোল্লায় দিয়ে তোর মন শুধু পড়াতেই দিয়ে রাখ!

আনতারা হালকা শব্দ করে হাসে। ফারাহ আবার বললো,

~ আমি কিন্তু যেতে পারবো না তারা, তোকেই আসতে হবে।‌ আসবি তো তারা?

আনতারা হ্যাঁ না কিছুই বলতে পারে না। ওইবাড়িতে যাওয়া মানেই তিক্ত স্মৃতির সম্মুখীন হ‌ওয়া, সে চায় না ওসব ভাবতে। তবে বোন কে না ও বলতে পারছে না। পারলে ঠিক আসতো ফারাহ সে জানে। তাই বুঝানোর স্বরে বললো,

~ তুমি একটু চেষ্টা করে দেখো না আপায়। না পারলে আমি যাবো, তুমি টেনশন নিও না!

খুশি হয় ফারাহ। আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয়। ফারাহ ফোন রাখতেই পারভিন বলে উঠে,

~ কেমন আছে আনতারা? কবে নাগাদ যাবে ঢাকা?

~ আলহামদুলিল্লাহ বড়ভাবী, ভালো আছে তারা। এক সপ্তাহের মধ্যেই র‌ওনা হবে। কেয়ার ট্রান্সফারের জন্য একটু লেট হচ্ছে। কয়েকদিন আগেই তো কলেজে ভর্তি হলো!

পারভিন আর কিছু বললো না, রান্নায় মন দিলো। ওদিকে তরকারি কাটতে কাটতে ফারাহ’র কথাই কানে ঢুকিয়ে নিচ্ছিলো রিনু। টপ করে বলে উঠলো,

~ একলা‌ একলাই ঢাকা যাবো নাকি? মাইয়া মানুষ রে এইভাবে ছাড়া ঠিক না বুঝছো ফারাহ। কে জানে কোন আকাম ঘটাই আসে। তার‌উপর চেহারার যা শ্রী!

হাসিখুশি মুখটায় নিমিষেই রাগ ভর করে। আগুন চোখে রিনুর দিকে তাকায় ফারাহ। পারভিন বিতৃষ্ণা কন্ঠে বললো,

~ কিসব কথা বলছো রিনু। কাজ ছেড়ে ওর সাথে কে যাবে? মাথা ঠিক আছে তোমার? কোথায় কি বলতে হয় জানো না?

~ কি এমন বলছি বড়ভাবী? যা সত্য তাই বলছি। ওইরকম চেহারা নিয়া আমাদের বাড়ির পোলারে রিজেক্ট করে, মাইয়ার গুমোর কত!

পুরোনো কথা টেনে এনে ফারাহ’র রাগ টাকে যেন বাড়িয়ে দিলো। একপ্রকার গর্জে উঠলো সে,

~ খবরদার মেজ ভাবী, খবরদার। আমার বোন কে নিয়ে আর একটা কথা বললে আমি কিন্তু আপনাকে ছেড়ে কথা বলবো না। আমার বোনের চেহারা যেমন‌ই থাক, আপনার মতো কুৎসিত মন‌ নেই। একা গিয়ে কি করে, পরিবারের মান ডোবায় না গর্ব হয় সেটা আমার বাবা চাচা’রা বুঝবে। আপনাকে নাক গলাতে বলেনি‌‌ কেউ। আমার বাবা’র বাড়ি নিয়ে আরেকটা কথা বললে আপনার বাবার বাড়ির কেচ্ছা গুলো টেনে হিঁচড়ে বের করতে সময় লাগবে না আমার! তাই সাবধান!

হনহন করে নিজের ঘরে চলে গেল ফারাহ, পারভিনের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। তার বোন যখন প্রেমিক কে বিয়ে করে বাড়ি ছেড়েছিল, এইভাবেই কথা শুনিয়েছিল তাকে।‌ সে জবাব দিতে পারেনি, অথচ এখন তার বোনের সুখের সংসার। আজ যেন ফারাহ’র মাঝেই নিজের ক্ষতটা শুকিয়ে নিলো সে। রিনু তো বাবার বাড়ি কেচ্ছা’র কথা শুনেই চুপ মেরে গেছে। তার বাবার বাড়ির কেচ্ছাও তো কম নেই। এর জন্য‌ই বলে অন্যের চালে ঢিল ছুড়লে, নিজের চালে পাথর পড়বেই!

প্রকৃতির পরিবর্তন মানুষের চোখে কম বেশি পড়ে। মানুষ তার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়। যেভাবে পারে সেভাবেই তা হৃদয়ে ধারণ করে। ভাসিয়ে দেয় প্রকৃতির মাঝে।
প্রকাশ করে সেভাবেই। ছিন্ন মেঘের ছন্নছাড়া দল নিয়ে আকাশ চলছে। চলছে সূর্যের রাজত্ব। কখনো কখনো বিরহ বেদনা যাতনাও এসে হাজির হয়। প্রকৃতির মাঝেও আবার মানব জীবনেও। অতীত স্মৃতি বর্তমানকেও মাঝে মধ্যে উলটপালট করে দেয়, প্রশ্নের সম্মুখীন করে, ভাবতে বাধ্য করে। আশ্বিনের মাঝামাঝি সময়, নদীর পানি প্রায় কমে এসেছে। শেষের দিক হয়তো একবারেই থাকবে না, নাব্যতা হারিয়ে কাঙালিনীর মতো ছটফট করবে! তবে আনতারা’র গ্রামের নদী টা যে বিশাল! একেবারে পানি তলানিতে গিয়ে ঠেকে না কখনো। ডিঙি নৌকা সহজেই চলাচল করতে পারে। আনতারা এসেছে নদীর তটে, সাথে কেয়া। দুজন‌ই চুপচাপ গাছের ছায়াতলে বসে আছে। আনতারা’র দৃষ্টি নদীর পানিতে। আনতারা’র মন টা ভালো নেই বলেই কেয়া নিজের বাহারি আলাপের শুরুটা করতে পারছে না! তাই সে চুপচাপ ফোন নিয়ে ব্যস্ত।

আনতারা ভাবতে ব্যস্ত বিগত দিনগুলোর কথা। ছোট থেকে বড় হ‌ওয়া, তার জীবনে হুট করেই রাশিদ নামক পুরুষ টির আগমন, সর্বদা সঙ্গ দেওয়া, বিনিময়ে কষ্ট পাওয়া; মনের মধ্যে যেন পালাক্রমে ঘুরছে সব! এই যে মানুষ টা চলে গেল এখন পর্যন্ত সে খোঁজ জানে না, কন্ঠ শোনার সৌভাগ্য হয়নি! মন কি মানে? দু তিনটা নৌকা যেতে দেখে আনতারা’র মনে গানের উদ্ভব হয়,

“নাই বাইয়া যাও ভাটিয়ালী নাইয়া
ভাটিয়ালী নদী দিয়া!
আমার বন্ধুর খবর কইয়ো
আমি যাইতেছি মরিয়া!”

সত্যিই সে মরে যাচ্ছে, ভেতর থেকে একদম শেষ হয়ে যাচ্ছে। কেউ দেখতে পারছে না, কেউ বুঝতে পারছে না। আনতারা’র গুণগুণ করে বলা গান কেয়া শুনলো। হুট করেই তার মনটাও খারাপ হয়ে গেল। এতদিনের সন্দেহ টা যেন গাঢ় রূপ নিলো। হুট করেই বলে উঠলো,

~ আপায়, মিস করছো রাশিদ ভাই কে?

চমকালো আনতারা, চোখের দৃষ্টি তার বড় বড় হয়ে এলো। কি বলে এই মেয়ে। কোথাও যেন খানিক লজ্জাও পেল, ওইদিন‌ই না কত বড় বড় কথা বলে বুঝালো‌। অথচ আজ‌ই সে ওইসব কথার মান এভাবে খোয়ালো। কেয়া সেসবে গেল‌ই না বরং দুঃখ প্রকাশ করে বললো,

~ আপায় আমি না তোমার কাছ থেকে একটা বিষয় লুকিয়েছি। রাশিদ ভাইয়ের সাথে আমার কথা হয়, তোমার সব খবর‌ই আমি তাকে বলেছি, প্লিজ আপায় রাগ করো না।

হঠাৎ আনতারা’র কি হলো সে জানে না, কেয়া কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। আতকে উঠলো কেয়া, অবিশ্বাস্য লাগছে তার কাছে। তার আপায় রাশিদ ভাইয়ের জন্য কাঁদছে?

~ আমি পারছি না কেয়াফুল! নিজের কাছেই বারবার হেরে যাচ্ছি। দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি। একদিকে আমার পরিবার, আমার স্বপ্ন আরেকদিকে রাশিদ ভাই। একটাকে ছেড়ে আমি আরেকটাকে ধরতে পারছি না‌। আমার কষ্ট হচ্ছে কেয়াফুল। আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে! আমি সত্যিই হেরে যাচ্ছি নিজের কাছে!

কেয়া’র চোখটাও ভিজে আসে। তাজা অনুভূতি গুলো যেন তার মনটাকেও অশান্ত করে দেয়। ছোট্ট কেয়া হুট করেই বড়দের মতো আপায় কে বুঝানোর স্বরে বলে উঠে,

~ চিন্তা করো না আপায়। তুমি তোমার স্বপ্নের পথেই এগিয়ে যাও, আর সব রাশিদ ভাই দেখে নিবে। তোমাকে পাওয়ার জন্য রাশিদ সব কিছু করতে পারবে। আর তুমি যখন সফল হবে তখন দেখবে কেউ ই আর না করবে না, মেনে নিবে। আমার ভরসা আছে রাশিদ ভাইয়ের উপর। তুমি শুধু এখন পড়াশোনা করো, আর মাঝে মাঝে একটু রাশিদ ভাইয়ের খবর নিও, তাহলেই হবে!

~ ছোট চাচি এখনো কথা বলবে না? চলেই তো যাবো দুদিন পর!

নিজের রুমে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মিসেস কামরুন্নাহার। একটু পর আবার রাতের রান্না চাপাতে হবে। এর মধ্যে আনতারা’র কথায় চাপা শ্বাস ফেলেন তিনি‌। সেদিনের পর কেটে গেছে এগারো-বারো দিন। ঠিক ভাবে কথা বলেনি সে। ইচ্ছে করেই বলেনি, কেমন যেন অস্বস্তি তে পড়ে গিয়েছিল। আনতারা’র কথায় আর মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারলেন না, হাত দিয়ে ইশারা করে কাছে ডাকলেন। আনতারা জলদি পায়ে ছোটচাচির পাশে বসলো মাথা নত করে। আনতারা আবার বললো,

~ আমি আমার স্বপ্ন পূরণে একটুও গাফিলতি করবো না ছোট চাচি।‌ তোমার ভরসার মান ঠিক রাখবো। ক্ষমা করবে না আমায়?

~ তুই নিজের স্বপ্ন পূরণ করে দেখা আনতারা, আমি কামরুন্নাহার তোকে কথা দিচ্ছি ছেলেটা যেই হোক, যেমন‌ই হোক, সে পর্যন্ত যদি তোর সাথে থাকে আমি পৃথিবীর সাথে লড়াই করে হলেও তোদের এক করবো! ছোট চাচির উপর ভরসা আছে তো?

আনতারা’র চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। ছোট চাচির কথা মানেই একশো তে একশো। রাশিদ কে পাওয়ার আশাটা যেন দ্বিগুন হারে বেড়ে গেল। এবার থেকে সে নিজের সবটুকু সময় ব্যয় করবে পড়ালেখায়। রাশিদ ভাই কে পেতে হলেও যে তাকে পড়তে হবে! মিসেস কামরুন্নাহার আনতারা’র উজ্জ্বল মুখশ্রী দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রয়, তার মেয়ে এতটাই ডুবে গেছে যে নিমিষেই মুখশ্রীতে পরিবর্তন এনেছে। খানিক হাসলো সে, আমিরের জন্য তিনিও পাগলামি করেছিল। দেখতে যাওয়ার পর যখন শুনেছিল বিয়ে হবে না! যৌথ পরিবারে বিয়ে দিবে না, চারটে দিন না খাইয়ে ছিলেন তিনি! সে বুঝে ভালোবাসা! তার‌ও যে ভালোবাসার মানুষ রয়েছে! আনতারা অনেকদিন পর ছোট চাচির কোলে মাথা রাখে, চোখ বুজে জোরে শ্বাস নেই। এতদিনের কষ্ট টা যেন হাওয়া হয়ে যায়। আনতারা’র মনে হলো ছোট চাচি কে রাশিদ ভাইয়ের কথা জানানো উচিত,

~ ছোট চাচি, ছেলেটা কে শুনবে না?

শুনতে ইচ্ছে মিসেস কামরুন্নাহারের করে‌। কার ভাবনায় মেয়ে তার গা ভাসালো জানবে না? প্রশ্নাত্মক চাহনিতে তাকিয়ে থাকে। আনতারা বড় সড় এক ঢোক গিলে বললো,

~ রাশিদ ভাই!

মাথায় বিলি কেটে দেওয়া হাতটা ঈষৎ কেঁপে উঠলো। মিসেস কামরুন্নাহার অবাক চোখে তাকিয়ে র‌ইলেন আনতারা লজ্জামাখা মুখটার দিকে। মনের মধ্যে একটা ভয়‌ও কাজ করলো। দিয়ে দিলো তো কথা, তবে কি সে পারবে কথা রাখতে? কিভাবে পারবে? ঝটপট বললেন,

~ রাশিদ? সত্যি বলছিস তুই? কিভাবে সম্ভব এটা? জেনেশুনে আগুনে ঝাঁপ দিয়েছিস তুই!

করুণ দৃষ্টিতে তাকায় আনতারা, নিভে যায় মিসেস কামরুন্নাহার। আনতারা’র নেত্রপল্লবে তখন রাশিদ নামক পুরুষ টির মুখশ্রী বিচরণ করছে। নরম কন্ঠে বললো,

~ দুটো বছর তো কম না ছোট চাচি। যে মানুষটি আমার জন্য দুটো বছর এমন ছন্নছাড়া জীবন পাড় করছে, নিজের ক্যারিয়ার, সম্মান ভুলে বখাটে হয়েছে তার ভালোবাসা বার বার প্রত্যাখ্যান‌ কি করে করতাম ছোট চাচি? আমি হাজার বার পিছিয়ে আসতে চেয়েছি শেষমেষ নিজের কাছেই হেরে গেছি ছোট চাচি। তাই তো সেদিন রাতে ছুটে গিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্বাস করো আমাদের মাঝে খারাপ কিছুই হয়নি। রাশিদ ভাই তো অনুমতি ছাড়া আমাকে স্পর্শ‌ই করে নি কখনো। মেয়ে রা তো পুরুষের চোখের ভাষা বুঝতে পারে, আমার জন্য রাশিদ ভাইয়ের‌ চোখে ভালোবাসা, মায়া, আবদার ছাড়া কিছুই পাই নি। আমি তো পাথর নয় ছোট চাচি, রক্তে মাংসে গড়া এক ভালোবাসার কাঙালিলী!

ভীষণ ভাবে চমকায় মিসেস কামরুন্নাহার। ব্যক্তিগত ভাবে রাশিদ কে তার ভীষণ পছন্দ। কত ভালো ছাত্র ছিলো, হঠাৎ করে এভাবে ভবঘুরে হ‌ওয়ায় তিনি অবাক হয়েছিলেন, ভেবেছিলেন ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে, খারাপ বন্ধুদের সাথে মিশে এমন হয়েছে কিন্তু আজ দুটো বছর পর জানলো ছেলে নষ্ট হয়নি! প্রেমে পড়ে অন্ধ হয়ে গেছে। তার মেয়েকে ভালোবেসে সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়েছে। এর পরেও কি তার কোনো কথা থাকতে পারে? বিরোধীতা করলেও যে সে বিবেকের কাছে হেরে যাবে, দৃষ্টি মেলাতে পারবে দুটো মানুষের কাছে। তার এই মেয়ে কে যে কেউ এতটা ভালোবেসেছে জেনেই কেমন যেন চোখ ভিজে আসতে চায় তার, মনে প্রাণে চাইতো স্বপ্ন পূরণে কেউ মেয়েটিকে সাথ দিক, উজাড় করে ভালোবাসুক। আজ তার চাওয়া পূরণ হয়েছে। নিজের মধ্যেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে আনতারা কে বললো,

~ আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিলাম আনতারা! যে ছেলেটা আমার মেয়ে কে এতটা ভালবাসে তাকে আমি কি করে কষ্ট দিই? তুই নিজের স্বপ্ন পূরণ করে সবাইকে দেখিয়ে দিবি, সাথ দিবে রাশিদ! আমার বিশ্বাস এই ছেলেটা তোকে ঠকাবে না। তুই আর যাই করিস আমি বাঁধা দিবো না, তবে নিজের স্বপ্ন কে ভুলে যাস না। এবার আমি আমার মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে নিশ্চিন্ত হলাম! আমি সবসময় তোদের সাথে আছি, শুধু আমার ভরসার মানটা রাখিস!

আনতারা জাপটে ধরে ছোট চাচিকে। তার তো বিশ্বাস ই হচ্ছে না ছোটচাচি সব মেনে নিয়েছে। এখন মনে হচ্ছে সেদিন রাতেই বলে দিলে ভালো ছিলো, তাহলে আর এতদিন বিরহ ব্যাথায় সারা অঙ্গ পুড়াতে হতো না! মেয়ের খুশি তে মিসেস কামরুন্নাহারের মন ভালো হয়ে যায় একদম‌। আনন্দ চিত্তে রান্না ঘরের দিকে ছুটে, আজ মন মতো রান্না করবে মেয়েদের জন্য। না জানি আবার কবে এভাবে খাওয়াতে পারবে। ছোট চাচির উল্লাস দেখে আনতারা হাসে। হাসি যেন মুখ থেকে এখন সরছেই না। এতক্ষণ ছোট চাচি কে এসব বলেছে মনে করে খানিক লজ্জাও লাগে, হাজার হোক মা তো! নিজের ভালোবাসার কথা অকপটে কিভাবে বলে দিলো, তখন কি হয়েছিল কে জানে! শুধু মনে হয়েছিল জানালে হয়তো সমাধান হতে পারে। হয়েছেও! আনতারা হেসে চোখ বুজে স্বস্তির শ্বাস নেয়। ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি বজায় রেখে বলে উঠে,

~ এভাবেই সবার মন জয় করে একদিন আমি আপনার হবো রাশিদ ভাই! ছোট্ট একটা সংসার হবে। ভালোবাসায় ঘেরা সংসার। পাকা চুলের খোঁপায় শিউলি ফুলের বিচরণ করবেন, আমি লাঠি ধরে থাকা কাঁপা কাঁপা হাত নাড়িয়ে আনন্দ উল্লাস করবো!

আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতির ভারসাম্য বজায় রাখার চিরন্তন নিয়মে দিনের পরিধি ক্রমশ ছোট হচ্ছে, বড় হচ্ছে রাত। জলবায়ুর পরিবর্তনে আশ্বিনের মাঝামাঝি থেকেই স্বচ্ছ শিশির ভিজিয়ে দেয় তৃণরাজি, বৃক্ষরাজির সবুজ পত্রপল্লব।
মাটি হয় নরম, ভেজা। বিস্তৃর্ণ মাঠ, মাটির উপর সবুজ ঘাসের আস্তরণ, দূর্বাঘাসের ডগায় শিশির কণা, প্রকৃতির স্নিগ্ধ কোমল রূপ; শহরের প্রকৃতিতে গা ভাসিয়েছে রাশিদ। অপরূপা’র মায়ার পড়ে প্রকৃতির মাঝে বিচরণ করতে করতে কখন যে মনের কোণে নিজের‌ও এক সুক্ষ্ম ভালোবাসা জমা রেখেছিল প্রকৃতির প্রতি, একটু টের পায়নি সে। টের পেল‌‌ তো শহরে এসে। যখন শহুরে ভিড়ভাট্টায় হাঁসফাঁস লাগছিলো তখন খুব করে টের পেয়েছিল তার মন ভাসতে চাইছে গ্রামের সেই স্নিগ্ধ প্রকৃতির মাঝে। দৌড়াতে চাইছে অপরূপা কে অনুসরণ করে! অনেক খুঁজে তার ফ্ল্যাট থেকে প্রায় আধা ঘন্টার পথ দূরের এই মাঠ টি পেয়েছে রাশিদ। শহুরে পার্ক গুলোও আগের মতো নেই, কপোতকুপোতির অভাব নেই, অভাব নেই অশ্লীলতার! গাছপালায় ঘেরা পার্ক গুলোও হয়তো প্রাণ হারিয়েছে কোলাহলে!
খোলা মাঠে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে রাশিদ, ভেজা মাটির গন্ধ নিচ্ছে জোরে জোরে নাক টেনে। অপরূপা কে বড্ড মনে পড়ছে এখন। যদিও সে ভুলে না, তবে আজ খবর নেওয়া হয়নি! তাই হয়তো বেশী বেশী মনে পড়ছে। কতদিন কন্ঠ শুনে না, দেখে না; তার কি হৃদয় পুড়ে না? দুঃখ লুকিয়ে হাসা টা যে কি কষ্টের রাশিদ ঢের বুঝতে পারছে। তার শুচিস্মিতা যে তাকে ঘৃণা করতে বলেছে! তবে সে পারছে না কেন?
রাত প্রায় সোয়া বারোটা বাজে! এত রাতে বাইরে থাকা ভালো নয় জেনেও আজ যাওয়ার তাড়া দিচ্ছে না সে। শোয়া থেকে উঠে বসে রাশিদ। যতদূর চোখ যায় দেখে নেয়, নিস্তব্ধ পরিবেশে। কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ’‌ও শোনা যাচ্ছে না। এবার ফিরতে হবে, উঠে দাঁড়িয়ে ফোনের ফ্লাস জ্বালিয়ে হাঁটা ধরে। মনের কোণে একটা কথাই ঘুরঘুর করছে,

~ তোমাকে ঘৃণা করতেও সাহস লাগে শুচিস্মিতা, আমি হয়তো এতটা সাহসী হতে পারিনি!

চলবে..?

(ছোট বলবেন না। আজকে সেরকম সময় করতে পারিনি, অল্পসময়েই যতটুকু পেরেছি‌। কালকে এই সময় ই গল্প দিবো! সবাই কে রমাদান মোবারক! শুকরিয়া!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here