শুধু তুই ৩ পর্ব -০২

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ২
#Tanisha Sultana

“কেউ প্রপোজ করলে ইয়েস ওর নো যে কোনো একটা বলতে হয়। এভাবে সিংহের মতো গর্জে উঠে বাঘের মতো হুংকার ছাড়তে হয় না। মেবি এটা আপনার ফাস্ট প্রপোজ তাই সারপ্রাইজ হয়ে গিয়ে এভাবে চেচালেন। রাইট?
বুক ভরা সাহস নিয়ে আদির চোখের দিকে তাকিয়ে বলে নিধি। আদি টাসকি খেয়ে যায়। একটু আগেও মেয়েটা কাঁদছিলো। চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট ছিলো। আর এখন কতো সাহসিকতার সাথে কথা বলছে। চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে আছে আদি।
” আপনার মুখে সিগারেটের গন্ধ। মেবি দুই তিন দিন ব্রাশ করেন নি। শুনেন ক্লোজ আপ দিয়ে রেগুলার ব্রাশ করবেন। এতে কি হবে বলেন তো? মেয়েরা ক্লোজ আপের গ্রাণে আপনাকে প্রপোজ করবে। কাছে কাছে চলে আসবে। পিছু ছাড়বে না। এতে আপনার প্রপোজ পাওয়ার অভ্যাস হয়ে যাবে। কেউ প্রপোজ করলে কি বলতে হয় সেটাও জেনে যাবেন। চারপাশে মেয়ে কিলকিল করবে। এই যে আমি ব্রাশ করছি আর আপনি চম্বুকের মতো আমার কাছে কাছে চলে আসছেন।
একবার দাঁত গুলো দেখিয়ে বলে নিধি।
আদি ভরকে যায়। সত্যিই নিধির খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে। আদি সরে যায়। নিধি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
“কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছো মনে আছে তোমার?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে আদি।
” আদিল চৌধুরীর সামনে। আমি কাউকেই ভয় পায় না। খুব সাহসী আমি।
চোখে পানি জমা ছিলো সেগুলো ভালো করে মুছে বলে তানহা।
“এই মেয়ে
আদি আবার গর্জে উঠে আঙুল তুলে বলতে যায়। কিন্তু পেছন ঘুরে দেখে নিধি নেই। আদি কপালে ভাজ ফেলে এদিক সেদিক খুঁজে।
নিধি নিচে বসে আছে। আদি নিচের দিকে তাকাচ্ছেন না।
” আমাকে একদম ধমকাবেন না। ধমক দিলে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমি অসুস্থ হয়ে গেলে আপনার নামে পুলিশে কমপ্লেন করবো বলে দিলাম।
নিধি নিচে বসেই বলে। আদি নিচের দিকে তাকায়।
“আর ইউ মেড
আদি রেগে বলে।
” নো। এই এম এ গুড গার্ল। যাচ্ছি।
আর হ্যাঁ আই লাভ ইউ সো মাচ। আপনার বকার প্রেমে পড়ে গেছি। বিয়েটা এখনই না। কয়েকদিন পরে করবো।

বলেই নিধি দৌড় দেয়। আদি মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়ায়। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। একটা মেয়ের এতোকিছু বললো। একটুও ভয় পেলো না আদিকে।
নিধি রুম থেকে বেরিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। তখনই ওর কাজিনের দল আসে।
নিধি তো ভয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। শেষমেশ চোখ পড়লো জানালার দিকে। ওর কাজিনরা উঁকি মারছে। তখনই সাহস সঞ্চয় হয়। আর আদিকে এতো কিছু বললো।

“সত্যি সত্যি প্রেমে পড়লি না কি রে? রনি পিঞ্চ মেরে বলে।
নিধি লাজুক হেসে দৌড়ে চলে যায়।

সেদিন আর আদির সামনে যায় নি নিধি। সেই রাতেই ফেসবুকে আদিল চৌধুরী নামটা দিয়ে সার্চ দেয়। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেয় আদিকে। পুরো প্রোফাইল ঘুরে দেখে। কভারে আদির সাথে একটা মেয়ে পিক। আদি মেয়েটার পায়ে নুপুর পড়াচ্ছে।
নিধি ভেংচি কাটে পিকটা দেখে। একদিন আমার পায়েও নুপুর পড়াবেন মিস্টার আদি। মনে মনে বলে নিধি।

সামনেই টেস্ট পরিহ্মা। কাজিনের বিয়ের জন্য এতোদিন কোচিং এ যেতে পারে নি। আজ যাচ্ছে। সাজুগুজু করতে ইচ্ছে করছে না। তাই যেমন ছিলো তেমনভাবেই চলে যায়। কোচিং খুব বেশি দুরে না।

নিধির একটা বেস্ট ফ্রেন্ড আছে জিসান। নিধি কোচিং এস সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জিসানের জন্য অপেক্ষা করছে। হঠাৎ নিধির চোখ পড়ে কোচিং এর বাম পাশের রাস্তায় আদি। গাড়ির সাথে চিপে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। নিধি। নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে।
” ধুর প্রতিদিন সাজুগুজু করে আসি ওনার দেখা পায় না। আজ ফকিন্নির মতো এসেছি আজ আজকেই সামনে আসছে। এভাবে তো ওনার সামনে যাওয়া যাবে না ভাববে আর কোনো জামা নাই।
এসব মনে মনে ভাবছে নিধি।
কোচিং এর ভেতর ঢুকে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখছে আদিকে।
“এমন ভাবে সাজুগুজু করেছে মনে হচ্ছে মেয়ে দেখতে যাচ্ছে। আপনি শুধু আমার। কাউকে আসতে দেবো না আপনার লাইফে। তুমি শুধু আমার আর আমি শুধু তুমি।
মনে মনে বলছে আর মুচকি মুচকি হাসছে তানহা।

” ওই কারে দেখোস
জিসান নিধির মাথায় গাট্টি মেরে বলে। নিধি জিসানকে দেখে আরও বেশি খুশি হয়।
“জিসান এই এম ইন লাভ
” কিহহহহহহহ
জিসান চমকে ওঠে বলে।
“সত্যি। ভালোবাসি রে। তিন চারটা ধমক খেয়ে মনটা উড়ে উড়ে চলে গেলো।
গলা ছেড়ে গাইতে ইচ্ছে করছে রে
” প্রেম জেগেছে আমার মনে বলছি আমি তাই
তোমায় আমি ভালোবাসি তোমায় আমি চাই”
নিধি ঘুরতে ঘুরতে বলে।
জিসান নিধির হাত ধরে নিধিকে থামায়।
“কোথায় তোর এই এম ইন লাভ
নিধি জানালা দিয়ে ইশারা করে। জিসান সেদিকে তাকিয়ে দেখে একটা পাগল বোতল কুড়াচ্ছে।
” এটা তোর লাভ
গালে হাত দিয়ে বলে জিসান। নিধি লজ্জা মাথা হাসি দিয়ে বলে।
“হুমমম। দেখতে একটু কেমন কেমন বাট ভীষণ লাগে আমার।
” সত্যি বলছিস?
নিধিও তাকায়। সাথে সাথে নিধি চমকে ওঠে। জিসান ওর দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসে।
“বেশ মানাবে তোদের দুজনকে।
নিধি রেগে দুম করে জিসানকে কিল দেয়।
” এটা না। চলে গেছে।
“আহারে।
শোন আমি থাকতে পারবো না। ভাইার জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি। তোকে বলতে এলাম।
” ওকে যা
নিধি ছিটে বসে গালে দিয়ে আদির কথা ভাবে। জিসান চলে যায়।

দশটায় কোচিং শেষ হয়। নিধি নাচতে নাচতে বাসায় যাচ্ছে। বাসায় ঢোকার আগেই বেশ মানুষের সরগম শুনতে পায়।
“কি বেপার বাড়িতে মেহমান আসলো না কি? ইসসসস আদি বেবি যদি আসতো। মন খারাপ করে বলে নিধি।

কলিং বেল বাজাতে হয় না। দরজা খোলাই ছিলো তাই নিধি ভেতরে ঢুকে পড়ে। ড্রয়িং রুমে জিসান বসে আছে। ক
জিসানের পাশে আদি তারপাশে একজন মহিলা। অন্য সোফায় নিধির বাবা আর তার পাশে একজন লোক। নিধি আদিকে দেখে খুশিতে মুখটা হা করে ফেলে। বাবা আর ভালো জামা পড়া থাকলে এখনই দৌড়ে আদির কাছে চলে যেতো। জামার দিকে তাকিয়ে নিধি মন খারাপ করে।
” ভালো একটা জামা পড়লে কি হতো? ধুররররররর

হঠাৎ নিধির মা নিধিকে হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায়।
“মা এতো মানুষ কেনো?
” তোকে দেখতে আসছে।
মা একটা শাড়ি বের করতে করতে বলে।
“আমাকে দেখার কি আছে? আর আগেও তো দেখছে।
” আরে গাঁধি তোর বিয়ের সমন্ধ নিয়ে আসছে।
“কার সাথে?
” ছেলেটার নাম মনে হয় আদি
তানহা মাকে ধরে লাফিয়ে উঠে। খুশিতে গদগদ।
“বিয়ের কথা শুনলে মেয়েরা কাঁদে আর তুই লাফাচ্ছিস কেনো?
মা অবাক হয়ে বলে।
” তুমি বুঝবে না। দাও শাড়িটা পড়ে আসি।
নিধি শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

চলবে

আগের পর্বটা ইভা নাম দিয়ে শুরু করছিলাম। পরে নাম চেঞ্জ করে নিধি দিছি। তো ভুলে কয়েক জায়গায় ইভা থেকে গেছিলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here