শুধু তুই ৩ পর্ব -২৫

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ২৫
#Tanisha Sultana

“কি হলো? বাঁদরের মতো লাফাচ্ছো কেনো?
আদি আবার ভাত মাখাতে মাখাতে বলে। নিধি দেয়ালে সাথে মোবাইল বেঁধে রেখেছিলো। সেটা খুলে আনে।
আদি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
” একচুয়েলি আপনার এক্স আমাকে কল করেছিলো। আর সে আমাকে থ্রেড করেছে। বলেছে আপনার থেকে দুরে যেতে। তো আমি বলেছি আপনি আমাকে ভালোবাসেন। সে বিশ্বাস করলো না৷ তো এখন এই ভিডিওটা তাকে পাঠাবো।
এতোখনে নিধির এতো রাগ দেখানোর উদ্দেশ্য বুঝলো।
“বাঁদরামি বাদ দিয়ে খেতে খাওয়াটা শেষ করো।
প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলে আদি।
নিধি এসে বসে। আদি ভাত মুখের সামনে ধরে।
” সত্যিই ভালোবাসেনা না? নিধি আদির চোখের দিকে তাকিয়ে বলে।
“নাহহহ একটু বাসি না। আদি সোজাসাপ্টা বলে দেয়।
” পবলেম নাই। মনা বলেছে ভালোবাসাটা আস্তে আস্তে হয়।
নিধি বকবক করছে আর খাচ্ছে। আর আদি মন দিয়ে নিধির কথা শুনছে। ধীরে ধীরে নিধির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। বাচ্চামোগুলোকে ভালো লাগে। আদি বেশি করে ভাত মুঠো করে নিধির মুখে পুরে দেয়।
” এতো স্টুপিট কেনো তুমি?
হুট করে বলে আদি। নিধি ভ্রু কুচকে তাকায়। মুখে এতো বেশি ভাত ঢুকিয়েছে যে ভাত না শেষ হওয়া ওবদি কথা বলা যাচ্ছে না। নিধি জোরে জোরে চিবতে যাচ্ছে তাতে লাভ হচ্ছে না। গাল ব্যাথাকরছে।
আদি ঠোঁট মেলে দেয়।
“খাওয়ার সময় বেশি কথা বলতে নেই
নিধি রাগী দৃষ্টিতে তাকায় আদির দিকে।
পাক্কা এক মিনিট পরে নিধির মুখের ভাত ফুরায়।
” আপনি না
নিধি আঙুল তুলে বলতে যায়। আদি আঙুলটা ধরে
“খাবো আমি। প্রচন্ড খিধে পেয়েছে। তোমাকে তো খাওয়ালাম। এবার আমি খাই?
নিধি আর কিছু বলে না। পানি খায়। আদি নিজের জন্য খাবার বেরে খেতে থাকে। কলিং বেল বেজে ওঠে। নিধি গিয়ে দরজা খুলে দেয়। ইভা এক গাল হাসি নিয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
” আপু তুমি
নিধি খুশি হয়ে বলে।
ইভা ভেতরে ঢোকে।
“তোমাদের নিতে এসেছি।
” কোথায়?
“মানিকগঞ্জ। আর দুইদিন পরে আমার আর রাফিনের বিয়ে। ইভা লজ্জা পেয়ে বলে।
নিধি লাফিয়ে ওঠে। নিজের দেশে যাবে কতোদিন পরে।
” আমি যেতে পারবো না। কাজ আছে।
মুখে ভাত পুরে চিবতে চিবতে বলে আদি।
“বললেই হলো? তোকেও যেতে হবে। জাস্ট কয়েকদিনের বেপার। না করবি না প্লিজ
মুখটা কালো করে বলে ইভা।
” উনি না গেলে নাই। আমি তো যাবোই। ইসসস কতো সুন্দর করে সাজুগুজু করবো। ঘুরবো ফিরবো। আপু আমি কিন্তু তোমার মতো করেই সাজবো।
হাত নাচিয়ে নাচিয়ে বলে নিধি।
“ঠিক আছে।
এখন তারাতাড়ি গিয়ে প্যাকিং করে নাও।
নিধি এক দৌড়ে চলে যায়। ইভা আদির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
” তুই যাবি না?
আদি কিছু বলে না৷ নিজের মতো খেতে থাকে।
“তুই না গেলেও পবলেম নাই। তোর বউ তো যাচ্ছে। আমার আবার সুন্দর সুন্দর স্মার্ট স্মার্ট কাজিন আছে। যদি তোর পিচ্চি বউকে পটিয়ে নেয়। তাহলে তো তুই বিধবা হয়ে যাবি রে দোস্ত
আদির পিঠ চাপকে বলে ইভা।
আদি বিষম খায়। নিধি পানি এগিয়ে দেয়। এক নিশ্বাসে পুরো গ্লাস ফাঁকা করে দেয় আদি।
“চল না রে।
অনুরোধের সুরে বলে ইভা।
” হুমমমম
আদি হুম বলাতে ইভা খুশি হয়ে যায়।

বিকেল বেলাতেই ওরা বেড়িয়ে পড়ে ইভাদের বাড়ির উদ্দেশ্য। ইভার পরিবারে বাবা মা কাকিমা আর কাকাতো ভাই ছাড়া আর কেউ নেই।
আদি ডাইভ করছে ইভা আর নিধি পেছনে বসে আছে। নিধিকে খুব খুশি দেখাচ্ছে। আদি ভাইভিং এর ফাঁকে ফাঁকে গাড়ির আয়নায় নিধিকে দেখছে। অদ্ভুত একটা মায় আছে এই মেয়েটার মধ্যে।

ইভাদের বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত আটটা বেজে যায়। আদিদের বাড়ি বেশি দুরে নয়। আদি চেয়েছিলো বাড়ি যেতে কিন্তু ইভা আর ইভার মা বাবা যেতে দেয় নি।
আদি নিধি ইভার মা বাবা আর কাকিমার সাথে কথা বলছিলো।
হঠাৎ কেউ নিধির নাম ধরে ডাকে
“নিধিরা নিধি
নিধি আদি দুজনই চমকে যায়। কারণ এখানের কারও নিধিকে চেনা সম্ভব নয়।
নিধি পেছনে তাকিয়ে দেখে সৌরভ এক গাল হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
” তুমি এখানে? ইসসয় জানো আমার মন বলছিলো তুমি আসবে।
নিধির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে সৌরভ।
নিধিও একটু হাসে। আদি কপালে দুটো ভাজ ফেলে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
“তুই ওকে চিনিস? সৌরভের মা বলে।
” হুমম চিনি তো। সেইদিন দেখা হয়েছিলো। জানো মা খুব ভালো মেয়ে।
সৌরভ বলে।
সৌরভের চোখ যায় নিধির পাশে বসা আদির দিকে।
“স্যার আপনি? অবাক হয়ে বলে সৌরভ।
” হুমমম আমি। তোমার বোনের বিয়ে খেতে এসেছি।
“কেনো এসেছেন? আদি চোখ পাকিয়ে তাকায় সৌরভের দিকে
না মামনানে ভালোই হয়েছে এসেছেন। কোনো অসুবিধা হলে আমাকে ডাকবেন।
কথা ঘুরিয়ে বলে সৌরভ।
নিধি বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে আদি আসাতে সৌরভ বেশ বিরক্ত।
” আমি চেন্জ করবো। একটা রুম দেখিয়ে দাও
সৌরভ নিয়ে যায় আদিকে। নিধিও আদির পেছন পেছন যায়। রুমে এসে লাগেজ রেখে সৌরভ বলে
“স্যার আপনার বোনটা কিন্তু খুব মিষ্টি।
নিধি চোখ বড়বড় করে তাকায় সৌরভের দিকে। আদি বিরক্ত হয়ে রাগী গলায় বলে
” ও আমার বোন না বউ। এখন তুমি এখান থেকে যাও
সৌরভ বউ কথাটা খুব স্পষ্ট শুনে নি৷ তাই কোনো রিয়েক্ট না করে নিধির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে চলে যায়।

সৌরভ চলে যেতেই আদি দরজা বন্ধ করে দেয়। শার্টের বোতাম খুলতে থাকে। মারাক্তক গরম পড়েছে। মাথার ওপর সেলিনফ্যানটা ভো ভো করে ঘুরছে। যতটা ফ্যানের আওয়াজ হচ্ছে তার থেকে কম বাতাশ লাগছে।
নিধি ধারাম করে শুয়ে পড়েছে। এতোটা জার্নি করে বেশ ক্লান্ত নিধি।
“সৌরভের সাথে মিশবা না।
নিধির পাশে বসে বলে আদি।
” উনি আমার জুতো ছিড়েছে। জুতো না দেওয়া পর্যন্ত ওনার সাথে মিশবো।
নিধি চোখ বন্ধ করে বলে।
“বললাম তো মিশবা না। আমি কিনে দেবো তোমায় জুতো।
রেগে বলে আদি। নিধি ধাপ করে চোখ খুলে।
” বিয়ের এতোদিন হয়ে গেলো কখনো কিছু দিয়েছেন? দেন নাই। এখন একজনের ওপর জেদ করে আমাকে কিছু দিলে আমি নেবো না। বাচ্চা হতে পারি কিন্তু বোকা না। হেসে হেসেই বলে নিধি। কিন্তু হাসির পেছনে লুকিয়ে আছে একরাশ অভিমান। যা আদি বুঝতে পারে। কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পায় না।

নিধি একটু এগিয়ে এসে আদির কোলে মাথা রাখে। আদি চমকে যায়।
“থাকি এভাবে? আদির দিকে তাকিয়ে বলে নিধি। নিধি কিছু বলে না। চুপ থাকা সম্মতির লহ্মণ ভেবে নিধি সরে যায় না। আদির হাতটা টেনে এসে নিধি নিজের মাথায় রাখে।
” হাত বুলিয়ে দেন।
আদেশের সুরে বলে নিধি। আদি বাধ্য ছেলের মতো নিধির চুলে বিলি কাটতে থাকে। নিধির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
“জানেন আমার ক্লাসমেট মনা। ওর বর ওকে কতো ভালোবাসে৷। জড়িয়ে ধরে কিস করে আরও কতো কিছু। আপনি করেন না কেনো?
নিধি এরকম কথায় আদি কেশে ওঠে।
“বলেন না?
” তুমি বাচ্চা। আগে বড় হও।
আদি বিলি কাটতে কাটতে বলে।
“আমার সাথে এক বেডে ঘুমান না কেনো?
পাল্টা আবার প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় নিধি।
আদি এবার কি বলবে বুঝতে পারছে না।
“ভালো লাগে না তাই।
আদি মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কথাটা বলে।
” ওহহহহ
নিধি মন খারাপ করে বলে।
“একন থেকে আমরা এক সাথেই থাকবো। আদি বলে। নিধি তাকায় না আদির দিকে। উঠে লাগেজ খুলে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
” আমার অভিমানী ফুল
আদি আপন মনে বলে

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here