শুভ্রনীড়,পর্ব:২

#শুভ্রনীড়
#পর্ব০২
#Shamu_Choudhury

শুভ্রার জ্ঞান ফিরলে বুঝতে পারে তার হাত-মুখ বাঁধা। পুরো রুম তমসাচ্ছন্ন। তার মনে হচ্ছে এই অন্ধকারে নিজেও নিজেকে খুজে পাবেনা।
অন্ধকারে কিছু বলতেও পারতেছেনা আর তার নিজেকেও এত ক্ষুধার্ত লাগছে মনে হচ্ছে এক যুগ ধরে কিছু খায়নি সে। হঠাৎ করে সে কিছু পায়ের শব্দ শুনতে পেল একটু পর কিছু লোক দরজা খুলে রুমে লাইট জালালো। সে প্রথমে ঝাপসা দেখলেও আস্তে আস্তে ভাল ভাবে তাকিয়ে দেখে, আগের দিন যারা তাদের বাসায় এসেছিল তারা। শুভ্রা ঘাবড়ে যায় ভয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সামিহা এখনও তার পাশে জ্ঞানহীন অবস্থায় আছে। সে সামিহাকে ডাকতে চাইলেও পারেনা মুখ বাঁধা লোকটি তার মুখ খুলে দিলে শুভ্রা কাঁদতে কাঁদতে সামিহাকে ডাকে সে ভাবে সামিহার কিছু হয়ে যায়নি তো ,,,

__সামিহা, এই সামিহা?? উঠ প্লিজ

-সে এখন উঠবেনা তার মনে হয় ঘুমের ডোজ বেশি পরেছে(ভাঙা ভাঙা বাংলায় এক লোক বলে উঠল)

_মমমানে? কি বলতেছেননন? ওর কিছু হবেনা তো?(শুভ্রা ভয় পেয়ে)

___(লোকটি শুভ্রার কথায় স্বাভাবিক ভাবেই বলে উঠল) চিন্তা করবেন না ম্যাম। কাল যখন উনি(সামিহা) আপনার জন্য স্যুপ বানিয়েছিল, তখন আমি স্যার এর কথায় ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেই। আমি আপনার বাসাতেই লুকিয়ে ছিলাম কেননা,স্যার আপনাদের উপর নজর রাখতে বলেছিল। হঠাৎ করে ওই ম্যামের ফোনে কেউ ফোন করে উনি ফোন নেয়ার জন্য কিচেনের বাহিরে গেলে আমি সেই সুযোগ বুঝে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেই। আর আপনারা এত চিন্তিত ছিলেন যে, রুমে অন্য কেউ আছে আপনারা তা বুঝতেই পারেন নি।

__আমাদের ছেড়ে দিন প্লিজ(কাঁদতে কাঁদতে শুভ্রা বলে উঠল )

__সরি ম্যাম, আমি আপনাদের হেল্প করতে পারবোনা। স্যার যা বলবে তাই করতে হবে। আপনারা কাল যখন প্যাকিং করেন তখন আমি জানতে পেরে স্যার কে ইনফর্ম করি। পরে স্যার রাস্তা টা কিভাবে জনশুন্য করেছে তা আমি জানিনা। আর আপনারা বের হওয়ার আগে স্যুপ খেয়েছিলেন তাই পরে ঘুম ধরেছিল। কিছু লাগলে শুধু দরজায় একবার টোকা দিবেন, আমরা দরজার কাছেই থাকবো।

এর মাঝে সামিহা জেগে উঠলে শুভ্রা তাকে সব বলে দেয়। লোকটি যাওয়ার আগে তাদের হাত পা খুলে দেয়। পুরো রুমে একটা মাত্র দরজা। কোন জানালা নাই যে, বাহিরের দৃশ্য দেখবে। তাদের সবকিছু একটু বেশি অন্য রকম লাগছে, বুঝে উঠতে পারেনা তারা কোন আসলে কোথায় আছে।

ভয় পেয়ে সামিহা বলে উঠে,,
__আমরা কোন জায়গায় আছি রে শুভ্রা? এই সব আমাদের সাথে কি হচ্ছে? আমরা কোনো ভাবে এদের সাথে জড়িত নেই তো? আমার খুব ভয় হচ্ছে রে। (সামিহা ভয় পাচ্ছে দেখে শুভ্রা তার গালে হাত দিয়ে বলল)

___ভয় পাস না সামিহা। আমি আছি তো। আর আমি কিছুই জানিনা। শুধু জানি আমার ইউভী কে খুজে বের করতে হবে। বাকি সব মেনে নিবো শুধু ইউভী কে চাই। লোকটি বলেছে আমরা নাকি একদিন বেহুশ ছিলাম এর মাঝে আমাদের অন্য দেশে আনে। আর আমান ইউভী নয় তো? আমি তো তাকে অনেক বছর হল দেখিনি। সেই ছোট বেলায় দেখেছি। হতে পারে চাচ্চুর খুনের জন্য আমাদের তার আসল পরিচয় দিচ্ছেনা? হয়ত তার কোন ভুলের জন্য চাচ্চু মারা গেছে( কথাগুলো বলতে বলতে শুভ্রা কান্নায় ভেঙে পরে)

___নিজেকে সামলা শুভ্রা এভাবে ভেঙে পরলে হবে না । আমাদের সবকিছুর রহস্য বের করতে হবে। হতে পারে ইউভীকে এই আমান মারছে । যাই হোক তুই শক্ত হো প্লিজ।,,,,,,(সামিহা এইসব বলতে বলতে আশে-পাশে তাকালো, হঠাৎ করেই রুমে থাকা একটি ক্যালেন্ডার এর উপর তার চোখ গেল খুশিতে তার চোখ চিক চিক করে উঠল আর সে শুভ্রা কে বলল)

___শুভ্রা দেখ একটা ক্যালেন্ডার নিশ্চয়ই এইটাতে কোন ঠিকানা দেওয়া থাকবে আমারা তাতেই জেনে যাব কোথায় আছি।

শুভ্রা ক্যালেন্ডার হাতে নিয়ে জানতে পারলো তারা এখন জার্মানে আছে এর মাঝেই আবার দরজা খুলে যায়।

_শুভ্রা ম্যাম আপনাদের কে স্যার কিছু খেয়ে নিতে বলেছে। আপনারা আমাদের সাথে আসুন বেশি চালাকি করবেন না,নয়ত হিতে বিপরীত হবে।

(শুভ্রা আর সামিহা ভয়ে ভয়ে তাদের সাথে যেতে লাগল,যাওয়ার সময় শুভ্রা দেখল একটা দেয়ালে শুভ্রার ছোট বেলার ছবি টাঙানো পাশেই এক টেবিলে ডায়েরি রয়েছে। শুভ্রা অনেক অবাক হয় আর কৌতুহল বশত একটু কাছে এগিয়ে যায় আর খেয়াল করে তার বাবার ডায়েরিতে যে রকম একটা চিন্হ ছিল ঠিক সে রকম টাই এতে আঁকানো। তার অবাকের সীমা ছাড়িয়ে যায়। এইটা এখানে কিভাবে আসল সে কিছু বলে উঠবে তার আগে লোকটি তাকে বলে এখানে কি করছেন তাড়াতাড়ি আসেন।___)

পড়ে তারা খাবার খাওয়ার পর লোকটি তাদের আগের রুমে রেখে যায়। শুভ্রা সামিহাকে সব খুলে বলে। সামিহা শুনে তাকে বলল

-সব বুঝলাম কিন্তু আমানের সাথে আংকেলের কি সম্পর্ক? আর আংকেলের ডায়েরি এখানে আসল কিভাবে তার উপর তোর ছোট বেলার ছবি। আমার মনে হয় আমান অনেক আগে থেকে তোকে চিনে

___কিছুই বুঝতেছিনা রে আমাদের এখান থেকে বের হওয়া লাগবে কিন্তু সামিহা লোকটি বলেই গেল দরজার ঐখানে সবাই পাহাড়ায় থাকবে কিভাবে বাহিরে যাব?
এক কাজ করি আমি দরজায় টোকা দেই যে আসবে তাকে অজ্ঞান করে আমরা বাহিরে যাব (শুভ্রা সামিহাকে বলল)

রাত গভীর আর অন্ধকার হলে সামিহা দরজায় টোকা দেয়। তাদের ভাগ্য ভাল শুধু একজন ই পাহাড়া দিচ্ছিল। সে রুমে আসা মাত্রই শুভ্রা তাকে ঢাক্কা মারে তার হাতে লাইট ছিল সেই লাইট দূরে ছিটকে পড়ে। শুভ্রা সুযোগ বুঝে লাইট তুলে নেয় তার মাথায় বারি মারে। সামিহা লোকটার মুখ চেপে ধরে যাতে সে চিৎকারে করতে না পারে। পরে তারা যেতে লাগলেই শুভ্রা দেখে লোকটির মাথা থেকে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। সামিহা এক টুকরো কাপড় সংগ্রহ করে মাথায় বেধে দেয় তারপর তারা বেরিয়ে পড়ে । তারা বুঝতে পারেনা তাদের কোথায় যাওয়া উচিত কার সাহায্য নিবে তারা? কি এমন করেছে যে এত কিছু তাদের সহ্য করা লাগতেছে । তারা বাহিরে এসে দেখে ঘুটঘুটে অন্ধকার লোকটার কাছে চাবির গোছা থাকায় তারা পুরোপুরি বের হতে পেরেছে। বের হয়ে ভাল ভাবে দেখে এইটা একটা বাংলো যার নাম আমান’স স্কোয়াড। তারা হাটতে হাটতে অনেক দূরে এসে পড়ে চারদিকে শুধু গাছ আর বালি হঠাৎ এক জায়গায় এসে শুভ্রা থেমে যায় সে সামিহাকে বলল

___সামনে দেখ সামিহা মনে হয় এইটা কোন গ্রাম, এগিয়ে গেলে বুঝতে পারবো। ওইযে ওখানে মনে হয় কেউ আছে। চল এগিয়ে যাই।

(তারা বাসার কাছে এসে দরজায় কড়া নারতেই তাদের মাথায় কেউ বারি দেয়। শুভ্রার মাথা ফেটে গলগলিয়ে রক্ত বের হয় সামিহার মাথা দিয়ে রক্ত বের না হলেও তার বেশ লেগেছে। সে শুভ্রার এই অবস্থা দেখে কি করবে ভেবে পায়না। অপরপাশের লোকটি দমে যায়না সে আবার তাদের মুখে ক্লোরোফর্ম মাখানো রুমাল চেপে ধরে তাদের অজ্ঞান করে৷ সে লোক টি তাদের এক রুমে বন্দি করে চলে যায়, তার
বন্ধুদের জানাতে যে সে আজ রাত্রি ভজনের জন্য দুইটা শিকার ধরেছে ।

_______
তুমি আমাকে মানুষ ভেবেছো, এইটা কি তোমার ভুল নয়?
__ তাররর মমমানে স্যার?

-তোমাকে আমি বলেছিলাম এ্যালেক্স সবাই বলে আমার ছায়াটাও নাকি হিংস্র সেখানে এই ইউভী কি তুমি বুঝে নাও।তোমার উচিত হয়নি আমার কথা অমান্য করা।
তুমি শুভ্রা কে ছাড়া একা কেন আসলে? এইটাই তোমার সবচেয়ে বড় ভুল এ্যালেক্স।

এই টুকু শুনে লোকটি ভয় পেয়ে যায় আকুতি কন্ঠে ইউভী কে বলে উঠে,,,,
___আমাকে মাফ করে দিন স্যার, আর কখনো এমন হবেনা, আমার ছোট ছোট দুইটা বাচ্চা আছে প্লিজ স্যার দয়া করুন।

কোন কথাতেই ইউভীর মন ভরেনা সে এ্যালেক্স কে নিয়ে রেইনবো ব্রিজ এর সবচাইতে উঁচু স্থানে দাড়িয়ে,যেখানে সাধারণ মানুষ কখনো আসার সাহস করবেনা । সে এ্যালেক্স কে বিদায় জানিয়ে হাসতে হাসতে ব্রীজের উপর থেকে ফেলে দেয়। ইউভী এ্যালেক্স কে বলেছিল শুভ্রা কে যে কোন মূল্য এ এনে দিতে। কিন্তু এ্যালেক্স একা এসে বলে সে গিয়ে দেখে শুভ্রা কে আগেই কারা কিডনাপড করে। এলেক্স তাদের পিছু নিলে কিডনাপাররা নাকি তাদের গাড়ি বোম্বসহ উরিয়ে দেয়। ভাগ্যক্রমে এ্যালেক্স বেঁচে ফিরে। তবুও তার শেষ রক্ষা হল না। এ্যালেক্স এত উঁচু থেকে পরার জন্য তার শরীর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মাথা পুরো থেতলে যায় তার শরীরের রক্তে পুরো জায়গা রক্তাক্ত হয়ে যায়। মানুষের হৌ-হুল্লোড় পরে যায়। হয়ত কেউ ইউভী কে দেখতে পায়নি দেখতে পেলেও মুখটা অস্পষ্ট নিচু থেকে কেউ এত উঁচু তে থাকা কোন মানুষের কোন কিছুই অনুমান করতে পারবেনা।

(পরনে তার ক্যাজুয়াল শার্ট, নিচের অংশে জিন্স, হাতে বড় আর মোটা ডায়ালের ঘড়ি দেখেই মনে হচ্ছে ব্রান্ডডেড। চোখ তার পিঙ্গলবর্ণ। ঠোঁটের কোণে তার ডেভিল হাসি। কোন মেয়ে কে ঘায়েল করতে তার হাসি যথেষ্ট। এক হাতে তার “হেকলার অ্যান্ড কোচ এইচকে৪১৬ অ্যাসল্ট রাইফেল”। এই রাইফেল একটি মাস্টারপিস। মারণ-ক্ষমতার বিচারে তৈরি এই তালিকার অষ্টম আগ্নেয়াস্ত্র এটি। আক্ষরিক অর্থেই কুখ্যাত মার্কিন এম৪ বন্দুকের জার্মান ভার্সন। সবাইকে আতঙ্কিত দেখে তার খুশি যেন ধরেনা, হ্যা সে এইটাই চাই সবাই তাকে ভয় পাক এর আসল রহস্য সে কাউকে জানতে দিবেনা)

রেইনবো ব্রিজ থেকে নেমে ইউভী শুভ্রা কে খুজতে বের হয়। কেন এ্যালেক্স শুভ্রা কে না নিয়ে একা আসলো? কে তাকে নিয়ে গেছে? যেই নিয়ে যাক তাকে ছাড়বেনা
সে জানতে পেরেছে শুভ্রা এখন ইন্দোনেশিয়ার কোন দ্বীপে রয়েছে।

__আমি আসছি শু। তোমাকে যে আমার চাই চাই চাই (ডেভিল স্মাইল দিয়ে ইউভী বলে উঠল )

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here