শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে পর্ব ৭

#শ্রাবণ_দিনের_বৃষ্টিতে 🖤
#পার্ট_৭
#Writer_Liza_moni

হিতৈষী তৈরি হয়ে ড্রইং রুমের সোফায় গিয়ে বসল।প্রান্ত হাতের ঘড়ির বেল্ট লাগাতে লাগাতে ড্রইং রুমে যাওয়ার সময়,,
খাইলো এক ধাক্কা। মাথা তুলে সামনে তাকিয়ে দেখে আয়রা হাত দিয়ে মাথায় মালিশ করছে।প্রান্তর কাঁধের সাথে বারি খেয়ে মাথাটা গেল বেচারির।

প্রান্ত শান্ত চোখে আয়রার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো,,
পিচ্চি মেয়ে চোখে দেখতে পাও না?

আয়রা রেগে বললো,,
দামড়া হাতি আপনি চোখে দেখতে পান না?আর পিচ্চি পিচ্চি করেন কেন ? আমাকে আপনার কোন দিক থেকে পিচ্চি মনে হয়? আমি এইবার এইচএসসি পরীক্ষার দিবো বুঝলেন বুইড়া দাদু।

প্রান্ত কেবলা কান্তর মতো আয়রার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে বললো,, আমাকে দাদু বানিয়ে দিলো। অথচ এখন ও বিয়েই করলাম না।

এইচএসসি পরীক্ষা দিবা মাত্র। আমার কাছে তুমি সত্যিই পিচ্চি। আমার অনার্স শেষ। এখন ঘুরে বেড়াচ্ছি। এখান থেকে গিয়ে আব্বুর অফিসে জয়েন হয়ে যাবো।

আপনার থেকে এত কথা আমি শুনতে চাইনি হুঁ। আয়রা একটা ভেংচি কেটে চলে গেল। আয়রার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে প্রান্ত ঠোঁট উল্টে হাসলো। প্রথম দিন মেয়েটাকে দেখে মনে হয়েছিল ভাজা মাছ উলটে খেতে জানে না।
.
.
হিতৈষীর এখন ঘুরতে যাওয়ার একদম মুড নেই। মূলত দীপ্তর সাথে দেখা করার জন্য তৈরি হয়েছে সে। আয়রা আর প্রান্তই যাবে ঘুরতে। হিতৈষী টাউনে চলে যাবে।

তিন জন মাকে বিদায় দিয়ে বের হলো। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সি এন জির জন্য অপেক্ষা করছে। অপেক্ষার প্রহর শেষ করে সিএনজি এসে দাঁড়ায় তাদের সামনে। সিএনজি চালক জালাল মিয়াকে দেখে সালাম দেয় আয়রা আর হিতৈষী।কোথাও যাওয়ার সময় জালাল মিয়ার সিএনজি করেই যায় তারা।

জালাল মিয়া চোখ বড় বড় করে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে প্রান্ত‌কে।

আব্বা তোমার চোখ গুলি এমন সবুজ কা?

জালাল মিয়ার কথা শুনে প্রান্ত হাসলো।প্রান্ত কিছু বলার আগেই আয়রা বলে উঠলো,,
আরে চাচা উনি তো এলিয়েন।ভিন গ্রহের প্রাণী। ভুল করে আমাদের পৃথিবীতে চলে আসছে।

এলিয়েন,,এইডা আবার কেমন?

আরে চাচা আপনি বুঝবেন না। আপনি হলেন আগে কার যুগের মানুষ।

জালাল মিয়া হাসলেন।প্রান্ত চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আয়রার দিকে। আমি এলিয়েন? ভুল করে পৃথিবীতে আসছি? দাঁড়াও পিচ্চি তোমার শাস্তি আমি দিমু।

চোখ গুলিন সুন্দর আছে। বলতে হয়।
.
.
হিতৈষী হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,,আহ চাচা সিএনজি স্টার্ট দিবেন নাকি?পরে কথা বলিয়েন।

টাউনে আসলে হিতৈষী সিএনজি থেকে নেমে যায়। রাস্তার ওপর পাশে দীপ্তকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল আয়রা। হিতৈষী কে আর কারন জিজ্ঞেস করলো না। এখন এই প্রান্ত না কান্ত এর সাথে সারা দিন আমাকে একা থাকতে হবে।

হিতৈষী কে টাউনে নেমে যেতে দেখে প্রান্ত আয়রাকে জিজ্ঞেস করলো,,
এই পিচ্চি,,
তোমার বোন এখানে নেমে গেলো কেন?

আয়রা ডোন্ট কেয়ার ভাব করে বললো,,
আমার দুলাভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেছে।

প্রান্ত একটা বড় সড় ধাক্কা খেল।
সিরিয়াসলি? তোমার হিতৈষী আপু প্রেম করে? নাকি মজা করছো?

আপনি কি আমার তালতো ভাই লাগেন যে মজা করবো?
আর এই যুগের মেয়েদের প্রেমিক থাকতেই পারে।এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে?

না,,, দেখে মনে হয় না।
.
.
আলি কদম সেনানিবাসের সামনে এসে দাঁড়ায় সিএনজি।সবার আগে আলি কদম সেনানিবাস, তার পর আলি কদম গুহা,এর পর চিংড়ি ঝর্ণা,,আর সবার শেষে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে যাবে বললো আয়রা।

সেনানিবাসে নামতেই আয়রার চোখ পড়লো সেখানের চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে থাকা এক আর্মির দিকে। চেকপোস্টে ডিউটি করা সৈনিকদের সাথে কথা বলছে।
আর্মিটা আয়রার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। আয়রা হঠাৎ প্রান্তর হাত জড়িয়ে ধরে ঐ আর্মির দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে চোখ মারলো।

আর্মি লোকটার নাম রাহুল। বর্তমান জোন কমান্ডারের রানার। বান্দরবান ক্যান্টারমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ে আয়রা।নবীন বরণ অনুষ্ঠানে এই রাহুলের সাথে দেখা হয় আয়রার। রাহুল দেখতে সুন্দর।আর্মি রানাররা বেশিরভাগ একটু সুন্দর হয়।ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে আয়রা একটু বেশি শাহস দেখায়।ফ্রেন্ডদের সাথে ডেয়ার ধরে রাহুল কে ইচ্ছে মতো বকে সে।হুদাই কি সব বলে সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে বাঁচে।
রাহুল আয়রার পাগলামি দেখে প্রেমে পড়ে গিয়েছিল।
তখন থেকেই কলেজের প্রোগ্রামে রাহুল কে দেখা যেতো। আয়রার আবার আর্মির উপর এলার্জি আছে।

রাহুলের জন্য আয়রার বেস্ট ফ্রেন্ড রাইমা পাগল। কিন্তু রাহুল আয়রাকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার থেকে রাইমা রাহুল কে দেখলেই গিলে খাবে এমন ভাব করে।

রাহুল ভ্রু কুঁচকে আয়রাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। রাহুল কে এগিয়ে আসতে দেখে আয়রা প্রান্তর হাত খামচে ধরে।প্রান্ত অবাক হয়ে আয়রার দিকে তাকিয়ে আছে।
এই পিচ্চি তুমি আমার বউয়ের আমানত নষ্ট করছো কেন?হাত ছাড়ো।

চুপ বুইড়া দাদু। বেশি কথা বলবেন না।
.
.
রাহুল আয়রাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। রাহুলের মোটামুটি সব কিছু আয়রার ভালো লাগলে ও মুখে দাড়ি নেই।এক দম ক্লিন শেভ করা।যার জন্য রাহুলকে আয়রার চামড়া ছিলা মুরগির মতো মনে হয়। কেমন মেয়ে মেয়ে ভাব।

রাহুল কে আসতে দেখে প্রান্ত ভ্রু কুঁচকালো। রাহুল প্রান্তর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রান্ত চোখ দিয়ে ইশারা করলো যেনো কিছু না বলে।
আরেএএএ,,,
আয়রা যে,, কেমন আছো?

আয়রা মুচকি হেসে বললো আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?

এই তো আছি। রাহুল প্রান্তর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো উনি কে?

আয়রা লাজুক হেসে বললো,, আপনার বোনের জামাই।

এটাকেই বলে আসল ছ্যাকা। বানাতে চেয়েছিলাম বউ হয়ে গেছে ভাবি,,,বিড়বিড়িয়ে বললো রাহুল।

আয়রার কথায় প্রান্ত চোখ গুলো কে বড় বড় করে তাকালো।এই মেয়ের মাথায় কী সমস্যা আছে নাকি? একদম জামাই বানাই দিলো।

রাহুল ভাইয়াআআআআ,,

থাক আয়রা । ভাইয়া বলে এত বড় করে অপমান করা লাগবে না।বলে ফেলো,,

আমাদের সেনানিবাস ঘুরিয়ে দেখানোর দায়িত্ব আপনার।

আমার তো সবে ডিউটি শেষ হলো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। তোমরা ক্যান্টিনে গিয়ে বসো। আমি 10
মিনিটে আসছি।

আচ্ছা। রাহুল প্রান্তর দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে কিছু একটা বুঝালো।প্রান্ত হাসলো।

রাহুল চলে গেলে আয়রা প্রান্ত হাতকে ঝাঁকি দিয়ে ছেড়ে দূরে সরে গেল। আয়রার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে প্রান্ত বললো,, আমার হাত কে তুমি কি পাইছো?

আয়রা প্রান্তর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হেসে বললো
সরকারি হাত পাইছি।

প্রান্ত আর কিছু না বলে ক্যান্টিনের দিকে হাঁটা ধরলো। আয়রা ও পিছনে পিছনে হাঁটতে লাগলো।
.
.
রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে হিতৈষী আর দীপ্ত। হিতৈষীর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। দীপ্ত মাথা নিচু করে বসে আছে।

হিতৈষী টিস্যু দিয়ে চোখের পানি মুছে দীপ্তর দিকে তাকিয়ে বললো,,
কোনো উপায় নেই কী আমাদের সম্পর্কটা কে জীবন রাখার?

দীপ্ত হিতৈষীর দিকে তাকিয়ে বললো,, কী করে হিতৈষী?মা যে দিব্বি দিয়েছে।

কী দিব্বি?

দীপ্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,
আমি যদি তোমাকে বিয়ে করার কথা আরেক বার বাড়িতে বলি তাহলে মায়ের মরা মুখ দেখবো।

হিতৈষীর বুকের বাঁ পাশে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে তার হৃদয় টা।

হিতৈষী ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। মিনিট খানেক চুপ করে থাকার পর দীপ্তর ডান হাতটা আলতো করে ধরে বললো,,
তুমি বিয়েটা করে নাও।সব ভালোবাসা তো আর পূর্নতা পায় না। আমার ভালোবাসাটা ও না হয় অপূর্ণ রয়ে যাক। পরিবার সব সময় ভালো কিছুই চায়। তোমার হবু বউ হয় তো সব দিক দিয়েই তোমার জন্য পারফেক্ট। আমি নই। আমার মতো এতিম মেয়ে তোমার যোগ্য না।
আমি চাই না তুমি দোটানায় আটকে থাকো।আজ থেকে তুমি মুক্ত।অন্য কারো আকাশে গিয়ে ডানা মেলে মুক্ত আর স্বাধীন পাখির মতো উড়ে বেড়াও। আমি কখনো তোমাকে কিচ্ছু বলবো না। সবাইকে নিয়ে সুখে থাকো।

দীপ্ত বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কিছুই বললো না সে হিতৈষীর কথার উত্তরে।অর্ডার করা হট কফি দুটো কুল কফি হয়ে গেছে। হিতৈষী ও বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।

দীপ্তর উদ্দেশ্যে বললো,,
আমি আসছি দীপ্ত। কোনো না কোনো দিন আমাদের এই শহরে আবার দেখা হবে। সেদিন আমরা অপরিচিত থাকবো। খুব আপন হয়ে ও পর হয়ে গেলাম। তোমার বিয়েতে কিন্তু আমি আসবো। ইনভাইট করো না নাইবা করো।বর বেশে তোমাকে দেখার লোভ টা আমার রয়েই গেল।তার জন্যই যাবো।
ভালো থেকো আসি।

হিতৈষী চলে যেতে নিলে দীপ্ত হিতৈষীর হাত ধরে টান মেরে নিজের কাছে এনে সবার সামনে হিতৈষী
কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।এই মেয়েটাকে ছেড়ে থাকতে তার ভীষণ কষ্ট হবে।কী করবে সে? তার যে সব দিক থেকেই পথ বন্ধ একটা পথ ছাড়া।সে পথে না গেলে যে তার মাকে হারিয়ে ফেলবে।

হিতৈষীর বুকের মাঝে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সম্পর্কের শেষটা এত জঘন্য সুন্দর হয় কেন?শুরুটা তো রঙিন ছিল।শেষটা ধূসর রঙের চেয়ে ও বেরঙিন কেন হয়?

চলবে,,, 🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here