সবটাই_তুমিময় পর্ব ২৭+২৮

#সবটাই_তুমিময়
#লেখনিতে-মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ২৭

অঙ্কুরের ম্যাচ শুরু হয়ে গেছে।টিভিতে দেখলাম অপোনেন্ট টিম টস হেরে ব্যাটিংয়ে।রোহান ভাইয়া বলছিলেন,আমি লাইভ দেখতে যেতে চাই কি না।মানা করেছি।উনি চলে গেছেন স্টেডিয়ামে।একটা জোরে শ্বাস নিয়ে রিমোটটা হাতে নিয়ে উঠে দাড়ালাম।এলিনার আসার সময় হয়েছে।সত্যিসত্যিই দরজায় নক পরলো।ছুটে গিয়ে দরজা খুললাম।এলিনা বললো,

-আহানিটা?আমার ট্রিপ শেষ।তুমি তো বলেছিলে আজ ঘুরবে।কোথায় ঘুরবে?

-আজকের খেলার বিষয়ে কিছু জানো?

-হ্যাঁ!চলো আজ বাইরে যাই?গ্রাউন্ড স্টেডিয়ামে ম্যাচ আছে আজ।ক্রিকেট ভালোবাসো তো?তোমার দেশ থেকে টিম এসেছে।সারপ্রাইজিংলি!ওই টিম এই হোটেলেই উঠেছে!

-তুমি জানো কোথায় রুম তাদের?

-হুম।এই করিডরের শেষে গিয়ে বা দিকেই তো!

-ওই রুমগুলোতে এখন কার ট্রিপ চলছে এলিনা?

-এসব আমি জানি না।এখন কারো ট্রিপ থাকার কথাও নয়।কারন ওনারা তো খেলতে গেছেন।

-ও।চলো যাই।

ওর হাত টানতে টানতে বেরিয়ে আসলাম।ও বললো,

-কোথায় যাচ্ছি আমরা?

-এইতো,এই ফ্লোরটাই ঘুরে দেখবো।

এলিনা থামলো।হতাশ গলায় বললো,

-এই করিডরে দেখার মতো কি আছে বলতে পারো?

-এমনি দেখবো।এরপর আর কিছুই চাইবো না তোমার কাছে।প্লিজ এলিনা।প্লিজ?

জোরে একটা শ্বাস ফেলে বললো,

-বেশ।চলো।

আমরা হাটতে লাগলাম।বেশ কিছুটা দুর এগোতেই এক শব্দ কানে আসলো দুজনের।চোখ চকচক করে উঠলো আমার।তবুও নিজেকে সামলে বললাম,

-এলিনা?শুনতে পাচ্ছো শব্দটা?

-হ্ হ্যাঁ।এটাতো সামনের রুমগুলোর কোনোটা থেকে আসছে বলে মনে হচ্ছে।

-চলো!

ওকে একপ্রকার টেনে নিয়েই এগোলাম।যে রুম থেকে শব্দটা আসছিলো,ওটা পেয়ে গেছি।এটাই অঙ্কুরের রুম।করিডোরে ওয়াইপার হাতে একটা ছেলে।হয়তো রুম পরিষ্কার করবে বলে এসেছে।এলিনাকে বললাম,

-এলিনা,এটা ফায়ার এলার্ম!আগুন লেগেছে এই রুমে!হোটেল অথোরিটির কাউকে ডাকো!খোলো এই রুম!

-কিন্তু ফায়ার এলার্মে এমন শব্দ?আর এলার্ম তো রুমের বাইরে থাকার কথা!ভেতর থেকে কেনো শব্দ আসছে?

-তুমি হোটেল তৈরীর সময় ছিলে না রাইট?কোথায় কোন টোন দিয়ে ফায়ার এলার্ম সেট করা তুমি জানবে কিভাবে?এতোসব ভাবার সময় নেই!দরজা খোলার ব্যবস্থা করো এলিনা!ভেতরে আগুন লেগেছে!

-ঠিক বলেছো তুমি আহানিটা!আমি এখনি কল করছি ম্যানেজার স্যারকে।

ঝাড়মোছ দিতে আসা ছেলেটা এতোক্ষনে মুখ খুলে আমতা আমতা করে কিছু একটা বললো।এলিনা বুঝেছে ওর ভাষা।আমাকে বললো ও বলছে,ও নাকি সবেমাত্র এই ঘর পরিস্কার করেছে।আগুন লাগে নি!আর ওউ কিছু করেনি।
ছেলেটার দিকে তাকালাম।ও ভয়ে আছে বোঝাই যাচ্ছে।বুঝলাম ওকে ভয় দেখানোই যায়।এলিনাকে বললাম,

-আমি নিশ্চিত ও পরিষ্কার করতে গিয়ে কোনো ঝামেলা করেছে।দেখো এলিনা,হোটেল ম্যানেজমেন্টের লোকজন এখনো আসছে না।তাদের ওখানেও তো এলার্মের সাউন্ড যাওয়ার কথা।আমি বলছি,তুমি চাবি নাও ওর থেকে।খোলো এই দরজাটা!কোনো বড় ক্ষতির আগেই….

এলিনা এগোলো।ছেলেটাকে ধমকে কিছু বললো।ও ছেলেটা কাচুমাচু হয়ে গেছে।চাবিটা বের করে দিলো সাথেসাথে।কিন্তু কান্না করেও দিয়েছে।কাদতে কাদতে আবারো কিছু বললো।এলিনাকে জিজ্ঞাসা করলাম কি বলছে।ও দরজা খুলতে খুলতে বললো,

-বলছে আমি কিছু করিনি ম্যাম।স্যারকে কিছু বলবেন না প্লিজ!আজকেই জয়েন করেছি!চাকরিটা আমার খুব প্রয়োজন!

একপলক তাকালাম ছেলেটার দিকে।কষ্ট হচ্ছিলো প্রচন্ড।চাইনি নিজের কাজে কাউকে এভাবে কষ্ট দিতে।তবুও তাই করতে হলো।দরজা খুলতেই এলিনাকে ঢুকতে না দিয়ে আগে আমি ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম।পুরো ঘর স্ক্যান করতেই বিনব্যাগের উপর অঙ্কুরের সেই ব্যাগটা চোখে পরলো,যে ব্যাগে ফাইল তুলেছিলেন উনি।সোজা এসে ব্যাগখুলে ফাইলটা হাতে নিয়ে নিয়েছি।খুলে দেখলাম ওটা সেই ম্যাচ ফিক্সিং ডিলেরই ফাইল।ওড়নায় পেচিয়ে লুকিয়ে ফেললাম ওটা।একমিনিটও লাগেনি পুরো ঘটনায়।চোখ পরলো বেডসাইড ছোট টেবিলটায় রাখা সেই শো পিসটায়।দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিলাম।

এলিনা আর ওই ছেলেটা হুড়মুড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো।হাতের রিমোটটা টিপে বন্ধ করে দিলাম শো পিসে বাজতে থাকা শব্দটা।জেনে বুঝে ইচ্ছে করে অঙ্কুরকে এমন উপহার দিয়েছিলাম।জানতাম,এটা ফেলে দেবেন না উনি।রুমেই রাখবেন।তার রুম খুজে পেতে,লক খুলতে এর চেয়ে ভালো কিছু মাথায় আসেনি আর।একহাতে পেছনে ফাইলটা ধরে রেখেছি।ওরা দুজনেই উকিঝুকি দিয়ে শব্দের উৎস খুজতে লাগলো।কিছু না পেয়ে,শব্দটাও থেমে গেছে দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেললো দুজনেই।বললাম,

-মনে হয় অন্য কোনো কিছুর শব্দ ছিলো।এজন্যই হোটেল অথোরিটির কাছে এলার্মের শব্দ পৌছায়নি।চলো যাই!

একমুহুর্ত দেরি না করে বেরিয়ে এলাম ওই রুম থেকে।রুমে এসে সবে ফাইলটা বালিশের নিচে রেখেছি,এলিনাও ভেতরে ঢুকলো।এগিয়ে এসে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মারলো।তারপর আমাকে ঝাকিয়ে বললো,

-কি করছিলে টা কি তুমি?দরজা কেনো লক করে দিয়েছিলে?

-আ্ আমি ভাবলাম,যদি তুমি ভেতরে ঢোকো আর তোমার কোনো ক্ষতি…

-শাট আপ আহানিটা!যদি সত্যিই আগুন লাগার মতো ঘটনা ঘটতো?তোমার যেকোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারতো!একাকি কেনো এতোবড় রিস্ক নিতে গেলে?

চোখ ভরে উঠলো আমার।দুদিনে এই মেয়েটা বেশ অনেকটাই আপন করে নিয়েছে আমাকে।আর আমি?আমি কি ওকে ঠকালাম না?ওকে একপ্রকার ব্যবহার করলাম না?ওই ছেলেটাকেও অকারনে কষ্ট দিলাম।করিডোরে থাকা সিসিক্যামে আমার সাথে ওদেরও দেখা যাবে।ফাইল হারানোর ঘটনায়,ওদেরকেও দায়ী করা হবে।যদিও কোনো ভুল করিনি আমি।যা করেছি,সবাইকে সত্যিটা জানাবো বলে করেছি।এর জন্য আমাকে বা ওদেরকে কোনোভাবে পস্তাতে হবে না।

-আহানিটা!

-হুম?হ্যাঁ বলো?

-ওসব ভুলে যাও।যা হবার হয়েছে।এটা বলো,এখন কি ঘুরতে বেরোবে?

-ন্ না এলিনা।আজ না।তুমি এসো।

-বেশ।আসছি।টেক কেয়ার।হুম?

মাথা নাড়লাম।ও বিছানায় থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে হাসিমুখে বেরিয়ে গেলো।ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।কষ্ট হচ্ছে,কান্না পাচ্ছে।চিৎকার করে কাদতে লাগলাম।আজ অঙ্কুরের সব সত্যিটা আমি প্রমানসমেত এখানকার নিউজ পোর্টালে পাব্লিশ করবো।পুরো পৃথিবী জানবে অঙ্কুর,আপনি কতোটা খারাপ একটা মানুষ।কেনো এসব করলেন অঙ্কুর?খুব কি দরকার ছিলো?কেনো একটা সাধারন মানুষ,ভালো মানুষ হতে পারেননি আপনি?কেনো?

আচ্ছা মানলাম!মানলাম আপনি আপনার মতো হয়েছেন।তবে আমাকে কেনো জড়ালেন নিজের সাথে।আপনি তো আমাকে প্রতিশোধের আগুনে জ্বালাবেন বলে বেছেছিলেন,তবে কেনো সেখানে এই অনুভব?আপনার প্রতিই কেনো এই অনুভুতিগুলো হচ্ছে আমার?ভালোবাসা শব্দটা আপনার সাথে যায় না।তবুও কেনো এই শব্দেই আপনার সাথে এক অদৃশ্য বাধন অনুভব হয় আমার?এখন না পারছি নিজের এই সর্বনাশা অনুভূতিকে সামলাতে,না পারছি আপনার বিরুদ্ধে চলতে।সবটা এখন আমার হাতে,তবুও সাহস পাচ্ছি না আপনার বিপরীতে চলতে অঙ্কুর! এজন্যই কি আপনি বলে গেলেন,আপনার বিশ্বাস জিতে গেছে?

অনেকটা সময় কান্নাকাটির পর বেরিয়ে এলাম ওয়াশরুম থেকে।নিজেকে শক্ত করে আরেকবার ফাইলটায় চোখ বুলিয়ে নিলাম।এগ্রিমেন্টে অঙ্কুরের সাইন।চোখ ভরে উঠলো আবারো।কিন্তু কাদি নি।বিছানা থেকে মোবাইলটা নিতে যাবো,ওটা নেই!চাদর উল্টেপাল্টে দিলাম।নাহ্!নেই ফোনটা!সারা ঘর তন্নতন্ন করে খুজলাম।কোথাও নেই আমার ফোন।মনে করতে পারছিলাম না বেরোনোর সময় নিয়ে বেরিয়েছিলাম কি না।দরজা খুলে বেরোতে যাবো,দরজা লক।খুলছেই না।অঙ্কুর তো নেই,রোহান ভাইয়াও স্টেডিয়ামে।তাহলে আমাকে ঘরে লক করে দিলো কে?

মাথা চেপে ধরে বিছানায় বসে পরলাম।সবটা ঠিকঠাকমতো করে,এই মুহুর্তে কোনোভাবেই হার মানতে পারি না আমি!অঙ্কুরের বিরুদ্ধে প্রমান আছে আমার কাছে।ওনাকে এক্সপোজ করতেই হবে আমাকে।বেশ!দেরিতেই হোক!তখন এই ফাইলের সাথে ওনার জিরো রানে আউট যাওয়ার খবরটাও একসাথে পাব্লিশ হবে।মানুষের কাছে তখন এই ফাইলের সত্যতাও প্রমান হবে।

কিছুক্ষন ওভাবেই বসে রইলাম।রিমোট নিয়ে টিভি অন করেছি।স্পোর্টস্ চ্যানেলে থামতেই হোস্ট চিৎকার করে বলে উঠলো,

“এন্ড ইটস্ আ সেঞ্চুরি ফ্রম এএসএ!”

দাড়িয়ে গেলাম আমি।শ্বাস থেমে গেছে একপ্রকার।ঠিক কি শুনলাম?যা শুনলাম তাই কি ঘটেছে?টিভিতে দেখালো সত্যিই এটা অঙ্কুর!ম্যাচে সেঞ্চুরি করে নিজের বিশেষ ভঙিমায় লাফিয়ে আকাশের দিকে পাঞ্চ ছুড়েছেন উনি!মুষ্ঠিমেয় প্রবাসী দর্শকস্রোতে উল্লাস।ঠিক কি ঘটেছে তা এখনো মানতে পারছি না আমি।বিশ্বাসই হচ্ছে না।ওনার তো এই ম্যাচে জিরো বলে আউট হওয়ার কথা।এমনটাই তো ডিল করেছিলেন উনি প্রদীপ সরকারের সাথে।তাহলে সেঞ্চুরি কেনো?এই মানুষটা ঠিক কি চায়?
#সবটাই_তুমিময়
#লেখনিতে-মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ২৮

প্রায় ঘন্টা দুই পর দরজা খুলে গেলো।ম্যাচ জিতেছে অঙ্কুরের টিম।এতোক্ষন দিশেহারার মতো বসে থাকলেও দরজা খোলার শব্দে বেড ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে গেলাম আমি।অঙ্কুর এসেছেন।দরজা চাবি দিয়ে লক করে চাবিটা বিছানায় ছুড়ে মেরে সোজা এগোলেন আমার দিকে।ওনার চেহারায় রাগ স্পষ্ট।ভয়ে শুকনো ঢোক গিললাম একটা।উনি সেই শো পিস টা হাতে নিয়ে আমার সামনে ধরে বললেন,

-সবটাই অভিনয় ছিলো অদ্রি?

নিরবে শুধু তাকিয়ে রইলাম তারদিকে।উনি শো পিসটাও বিছানায় ছুড়ে মারলেন।আমার দুহাতের কনুইর উপরের দিকে চেপে ধরে বললেন,

-তোমার এই উপহার,ওই সহমর্মিতা,কাছে আসা,আমার টেক কেয়ার করা,আমার প্রতি…আমার প্রতি তোমার অনুভব হওয়া,আমাকে দেখানো সে ফিলিংসগুলো,এসবের একটুও সত্যতা নেই অদ্রি?সবটা নাটক ছিলো?

চোখ নামিয়ে নিলাম।জবাব দেওয়ার কিছুই খুজে পাচ্ছিলাম না।আমার মন জানে,যা করেছি,মন থেকে।ওনার প্রতি দুর্বল হয়ে পরেছি আমি।কিন্তু কর্তব্যের কাছে সে দুর্বলতাকে হার মানিয়েছিলাম।অঙ্কুর আবারো বললেন,

-বলো অদ্রি?জবাব দাও?আজকে অন্তত বলো?তোমার মনে কি আছে?

চুপ রইলাম।উনি ঝাড়া মেরে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,

-ভাগ্যিস তোমার অভিনয়কে সত্যি ভেবে নেইনি।নইলে হয়তো অনেকবড় ভুল করে ফেলতে তুমি।আর তার মাশুল আমাদের দুজনকেই দিতে হতো।

এবার অবাক চোখে তাকালাম আমি।উনি শান্ত গলায় বললেন,

-তোমার কি মনে হয়?এতো সহজে এএসএ’র রুমে ঢুকে যাবে তুমি?আর রুমে ঢুকে একদম চোখের সামনেই ফাইলটা পেয়ে গেলে?ডোন্ট ইউ থিংক,এটা একটু বেশিই সহজভাবে হয়েছে তোমার জন্য?

-মানে?

-যেভাবে প্লান করেছিলে,হয়তো সেভাবেই হয়ে যেতো।যদি আমি তোমার কথা বিশ্বাস করে নিতাম আর এলিনার জায়গায় অন্যকেউ থাকতো।কথার জালে মানুষকে ফাসানোটা বেশ ভালো পারো তুমি।কিন্তু আমি চান্স নিতে চাইনি।ইচ্ছে করেই রুমে তোমার চোখে পরার মতো জায়গায় ফাইল রেখেছিলাম।তুমি জানোও না,রুমের বাইরের করিডরের সিসিক্যাম নষ্ট করে দিয়েছিলো ওই স্টাফবয়।আর তোমার রুমের দরজা এলিনা লক করেছে।তোমার ফোনটাও ওই নিয়ে গেছে।আমি বলেছিলাম ওকে।

বিস্ফোরিত চোখে তাকালাম।তারমানে এবারও সবটা টের পেয়েছিলেন উনি।অঙ্কুর শান্ত গলায় বললেন,

-প্রশ্ন করো অদ্রি!সব প্রশ্নের জবাব দেবো তোমাকে আজ!এখন!প্রশ্ন করো!

-আপনি….সবটা জেনেবুঝে এসব কেনো করলেন আপনি?

-তুমি‌ বলেছিলে না?আমার স্বীকারোক্তির অপেক্ষায় থাকবে?হাহ্!দেখার ছিলো,তোমার কথায় সত্যতা কতো?

-আপনার তো ম্যাচে জিরো রানে আউট হওয়ার কথা ছিলো।এমনটাই ডিল করেছিলেন আপনি!তাহলে…তাহলে সেঞ্চুরী কেনো?

অঙ্কুর থামলেন।পরপরই চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলেন,

-বলেছিলাম না?যারা অঙ্কুরকে ভালোবাসে,তাদের ভালোবাসার দাম অঙ্কুর দেবে।ম্যাচ তো জিততেই হতো আমাকে!

-জেতার জন্যই‌ যদি খেলবেন,তাহলে প্রদীপ সরকারের সাথে ডিল করেছিলেন কেনো?টাকা কেনো ‌নিয়েছেন তার থেকে?তাকেও তো ঠকালেন!

-প্রদীপ সরকারের মতো মানুষ ঠকানোটাই ডিসার্ভ করে।সেদিন প্রদীপ সরকারের সাথে আমি ডিল না করলে,দলের অন্য তিনজন ক্রিকেটার ডিল করতো।সেদিন আমি টাকা না নিলে ওই টাকায় আরো তিনজনকে কিনে নিতো প্রদীপ সরকার।টিম ক্যাপ্টেন হিসেবে এটুকো খবর পেয়েছিলাম আমি।এগারোজনের বিশ্বস্ততাই ক্রিকেটের ভিত্তি অদ্রি।আটজনের নয়।তাই ভাবলাম,নিজের কাধেই এ গুরুদায়িত্বটা নেই।

-যদি জানতেনই আপনার টিমমেম্বারস্ টাকার কাছে নিজেদের বিক্রি করে দেবে,তাদের বিরুদ্ধে স্টেপ নিতে পারতেন।প্রদীপ সরকারের বিরুদ্ধে স্টেপ নিতে পারতেন।দুটোর কোনোটাও করেন নি কেনো?

-বিষয়টা অতোটাও সোজা নয়।ওই‌ তিনজনকে বের করে,এটুকো সময়ে নতুন করে টিম ফর্মেশন সম্ভব ছিলো না।তাছাড়া ওদের মতো স্ট্রাইকারস্ও কম আছে।যদি টিম করেও ফেলতাম,তাদের মধ্যে থেকেও কাউকে যে প্রদীপ সরকার কিনে নিতো না,তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।তাই ওদের অগোচরেই কেসটা হ্যান্ডেল করার এই একটাই উপায় ছিলো।নিজেই বিক্রি হয়ে যাওয়ার নাটক করা।আর রইলো বাকি প্রদীপ সরকারের কথা?তাকে এতো সহজে,এতো ছোট বিষয়ে ফাসাবো বলে তো সেদিন তার ক্লাবে যাইনি।তার শাস্তি তো আরো ভয়ানক হওয়ার ছিলো!আর তাই হয়েছে!

-ম্ মানে?

অঙ্কুর এগিয়ে এসে টিভি অন করে‌ দিলেন।দেশীয় চ্যানেলে থামতেই দেখলাম সেখানে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে দেখানো হচ্ছে,

“সাংবাদিক দম্পতি আকাশ ইলিয়াস ও অনিতা মেহরানকে হত্যার দায়ে বিখ্যাত সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ প্রদীপ সরকার আটক!পনেরো বছর পর আজ আকাশ-অনিতার গাড়ি বিস্ফোরনে তার জড়িত থাকার প্রমান মিলেছে।প্রদীপ সরকারের হয়ে যে ট্রাক ড্রাইভার তাদের গাড়ির এক্সিডেন্ট ঘটিয়েছিলো,তার স্বীকারোক্তিসহ বেশ কিছু প্রমানের প্রেক্ষিতে আজ আটক করা হয় প্রদীপ সরকারকে।জানা গেছে,জাল টাকার ব্যবসারও বিশাল কারবারি ছিলো তার।এর প্রমান আকাশ-অনিতা পেয়ে যাওয়ায় তাদেরকে খুন করার জন্য লোক লাগিয়েছিলো প্রদীপ সরকার।”

এটুকো দেখেই চোখ দিয়ে টপটপ‌ করে পানি পরতে লাগলো আমার।ফাকা মাথা নিয়ে দৌড় লাগাচ্ছিলাম রুম বেরিয়ে আসবো বলে।অঙ্কুর হাত ধরে থামিয়ে দিলেন আমাকে।হাত মোচড়াতে মোচড়াতে চেচিয়ে বললাম,

-আমাকে ছেড়ে দিন অঙ্কুর!ছেড়ে দিন!ওই নোংরা লোকটাকে আমি খুন‌ করে ফেলবো!মেরে ফেলবো তাকে!হাত ছাড়ুন আমার অঙ্কুর!ছেড়ে দিন প্লিজ!

-শান্ত হও অদ্রি।

-কিভাবে শান্ত হবো?ওই লোকটার জন্য আমি আজ অনাথ অঙ্কুর!ওনাকে শাস্তি না দেওয়া অবদি শান্তি নেই আমার!

-কি করবে তুমি?কি করতে পারবে?শুধু নিজের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই না!এজন্যই তোমাকে সিডনে নিয়ে আসা।কতোবার বুঝিয়েছি তোমাকে।রাগ কমাও।কন্ট্রোল ইওরসেল্ফ।

আমি থামলাম।সত্যিই তো!কোথায় যাবো আমি?এই মুহুর্তে কিই বা করার আছে আমার?টিভি বন্ধ করে দিয়ে অঙ্কুর একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন আমাকে।এবার আমি চিৎকার করে কাদতে লাগলাম।অঙ্কুর শক্ত করে জরিয়ে রেখেছেন আমাকে।জোরে জোরে কাদতে কাদতে বললাম,

-ওই লোকটা আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে অঙ্কুর।সব শেষ করে দিয়েছে আমার।আমার বাবা মার কাছ থেকে আলাদা করে দিয়েছে আমাকে।খুন করেছে আমার বাবা মা কে।আমাকে অনাথ করে দিয়েছে ওই লোকটা অঙ্কুর!আমার সর্বোস্ব কেড়ে নিয়েছে ওই প্রদীপ সরকার!আমাকে নিয়ে চলুন অঙ্কুর!ওদেশে নিয়ে চলুন আমাকে!ওকে নিজের হাতে মেরে ফেলবো আমি!ভয়ংকরভাবে!ওকে…ওকে আমি শাস্তি দেবো অঙ্কুর!ও তো আমার দোষী!পুলিশ কেনো সাজা দেবে ওকে?ওর কাজের জন্য তো আমি ভুগেছি।তাইনা?বলুন?আমি সাজা দেবো ওকে!আইন নয়!আমাকে প্লিজ নিয়ে চলুন অঙ্কুর!নিয়ে চলুন!

উনি কিছুই বলেননি।কতোক্ষন কেদেছি,চেচিয়েছি হিসেব নেই।উনি শুধু শক্ত করে জরিয়ে রেখেছেন আমাকে।সময়ের সাথে কান্না কমে আসলো।ওনার বুকে মুখ গুজে ফুপাতে লাগলাম শুধু।একটা সময় পর বাস্তব মনে পরতেই তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,

-এসব কথা আপনাকে কেনো বলছি আমি?মানলাম ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে আপনাকে ভুল বুঝেছি।কিন্তু এটা তো সত্য,আপনার মা,আফরা খানম,মানে আমার মনিমা,আমার জন্য আপনাকে ছেড়েছে বলে,আমাকে কষ্ট দিতে চান আপনি!অপমান করতে চান!আপনি তো আমার কষ্টে খুশি হন!কেনো বলছি আমার অনাথ হওয়ার কথা?কেনো বলছি আমার কষ্টের কথা আপনাকে?

অঙ্কুর আবারো একটানে বুকে জরিয়ে নিলেন আমাকে।কাদতে লাগলাম।উনি আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,

-আ’ম সরি অদ্রি।রাগে হিতাহিত বোধ লোপ পেয়েছিলো আমার।সত্যিই তোমার উপর প্রচন্ড রাগ ছিলো আমার।তোমার কারনে মা থেকেও মাতৃহারা ছিলাম আমি।মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত।থামাতে পারি নি নিজেকে,তোমার উপর রাগ করা থেকে!থামাতে পারিনি।তাইতো সারোগেশন,বেবির জন্য বিয়ে,চুক্তির বিয়ে এতোসব কড়া কথা শুনতে হয়েছে তোমাকে।

চোখ দিয়ে পানি পরছেই আমার।উনি মাথা তুলে ধরলেন আমার।চশমা খুলে চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললেন,

-পুরো নিউজটা দেখো নি তুমি।

আবারো টিভি অন করলেন অঙ্কুর।ওখানে এখনো প্রদীপ সরকারকে নিয়েই বলা হচ্ছে।

“একের পর এক প্রদীপ সরকারের আরো অনেক কুকীর্তির প্রমান দিয়ে চলেছে পুলিশ।ক্রিকেটার এএসএ’র বাবা,বিখ্যাত বিজনেসম্যান অনিক আফতাবের শাইন এক্সপোর্ট এন্ড ইম্পোর্ট কোম্পানি আত্মসাৎ করছেন সমাজসেবক নামে খ্যাত এই লোক।জানা গেছে,চারবছর আগেই মারা গেছেন অনিক আফতাব।তাকে ঠকিয়ে শাইন এক্সপোর্ট এন্ড ইম্পোর্টকে মৃত্তিকা এক্সপোর্ট এন্ড ইম্পোর্ট করে নিজের নামে চালাচ্ছেন প্রদীপ সরকার।এএসএ নিজে এনশিওর করেছে সবটা।তার কথাতেই মুলত প্রদীপ সরকারের বিরুদ্ধে প্রমানের জন্য ইনভেস্টিগেশন শুরু করেছিলো বলে জানিয়েছে পুলিশ।পুলিশের ধারনা প্রদীপ সরকার অনিক আফতাবের বিদেশে আকস্মিক মৃত্যুতেও জড়িত।”

কথাগুলো শুনেই আগে মনিমার কথা মনে পরলো। ফুপাতে ফুপাতে পাগলের মতো বলতে লাগলাম,

-অঙ্কুর!আপনার বাবা…অঙ্কুর,মনি‌মা এই নিউজ দেখলে…মনিমা সহ্য করতে পারবে না!আমি কথা বলবো মনিমার সাথে!মনিমা….

-শান্ত হও অদ্রি।মা জানে সবটা।

-কি?

-হ্যাঁ।মাকে সবটা জানিয়েই এসেছি এখানে।

মাথা ফাকা ফাকা লাগছিলো আমার।কি থেকে কি হয়েছে?উনি কি কি জানতেন?কি করে জানতেন?অঙ্কুর আমাকে বিছানায় বসিয়ে দিলেন।ব্যালকনির দিকে ফিরে দাড়িয়ে হাত মুঠো করে বললেন,

-বাবাকে ঠকিয়ে শাইন এক্সপোর্ট এন্ড ইম্পোর্ট পুরোটাই নিজের নামে করে নিয়েছিলো প্রদীপ সরকার।এই শোক বাবা সহ্য করতে পারেনি।হ্যাঁ,বরাবরই টাকাই তার সব ছিলো।স্ট্রোক করে কানাডার এক হসপিটালে এডমিট ছিলো সে।দেখতে গিয়েছিলাম তাকে।মৃত্যুর আগে তার সমস্ত দোষ স্বীকার করেছিলো বাবা।তার ভুলগুলো বুঝতে পেরেছিলো।মায়ের সাথে করা অন্যায়,আমাকে ভুল বোঝানো,এমনকি আমাকে সময় না দেওয়া নিয়েও প্রচন্ড আক্ষেপ করেছে সে।তার কাছ থেকেই জানতে পারি,তোমার বাবা মায়ের মৃত্যুর জন্য প্রদীপ সরকারই দায়ী।সেই লোক হায়ার করিয়ে এক্সিডেন্টটা করিয়েছিলো।হয়তো…হয়তো তাদের মৃত্যুতেই বাবা প্রথমবারের মতো পস্তাচ্ছিলো।তাইতো সবটা স্বীকার করেছিলো আমার কাছে।আর তার স্বীকারোক্তিই আমাকে সবটা ভুলতে বাধ্য করেছে।তাই তার শেষ ইচ্ছাকে ছোট করতে পারিনি।সে চেয়েছিলো প্রদীপ সরকারের শাস্তি হোক।এজন্য তারই সাথে হাত মিলিয়ে তাকে এক্সপোজ করতে চেয়েছিলাম।লাইক এজ ইউ!

সেদিন ক্লাবের বাইরে যখন তুমি প্রদীপ সরকারের লোকের কাছে ধরা পরেছিলে জানতে পারলাম,একটা মেয়েকে কোনোভাবেই ওই পরিস্থিতিতে মানতে পারছিলাম না আমি।মেয়েটাকে বাচাতে হবে,মাথায় কিচ্ছু আসছিলো না এটা ব্যতিত।তাই প্রদীপ সরকারকে বুঝিয়ে তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে আসি।জানতাম ও বিশ্বাস করবে না আমাকে।অবশ্যই তোমার খোজ করবে।ওকে মর্গে এক অন্য মেয়ের ডেডবডিও‌ দেখিয়েছি।বুঝিয়েছি,ওটা তুমি।ওকে লয়ালটি দেখাতে ক্লাবের ম্যাচে প্রথমবার জিরো রানে আউট হয়েছিলাম আমি।দেখিয়েছি,বাবা আর আমার মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই।তার মৃত্যুর বিষয়ও লুকিয়ে গেছি।তোমার বেচে থাকার মতো।তবুও!তবুও প্রতিমুহুর্ত ভয়ে থেকেছি তোমাকে নিয়ে।এজন্যই পুরো পৃথিবী থেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম একপ্রকার!

সবটা প্রথম থেকে মনে পরতে শুরু করলো আমার।সত্যিই আমাকে লুকিয়ে রেখেছিলেন উনি।কিন্তু তার আমার সম্পর্ক লুকাতে না,আমাকে প্রদীপ সরকারের হাত থেকে লুকোতে।অঙ্কুর বললেন,

-সিক্রেট রিপোর্টার অদ্রির আসল পরিচয় জানতে পেরে রাগ বাড়ে আমার।তুমি আমারই মায়ের কাছে মানুষ হওয়া,আহানিতা সিদরাতুল!তখন তখন ঠিক করে নিয়েছিলাম,তোমাকেও সে কষ্ট দেবো আমি,যে কষ্ট আমার মা পেয়েছে।সন্তান থেকে দুরে থাকার যন্ত্রনা।তোমার জন্য আমি মায়ের থেকে দুরে থেকেছি,তোমার নিজের সন্তানও তার মাকে কাছে পাবে না।এজন্যই‌ সারোগেসির কথা বলেছিলাম তোমাকে!তোমাকে কষ্ট দেবো বলে!

উনি একটু থামলেন।জিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে আবারো বলতে লাগলেন,

-তারপর মনে পরলো তোমার মা বাবা হারানোর কথা।যখন এটা জানবে,তখন এমনিতেও কষ্ট হবে তোমার।তাই বেবির বিষয়ে আর ফোর্স করিনি তোমাকে।এরপর থেকে বরাবরই একটাই ভাবনা ছিলো আমার।যতোদিন না প্রদীপ সরকার ওর কুকর্মের প্রমানসমেত ধরা পরছে,তোমাকে যে করেই হোক,ওর আড়াল রাখতে হবে।ওকে জানতে দেওয়া যাবে না তুমি বেচে আছো।তাই দীপক তালুকদারের নিউজ ভোরের বাংলা ছেড়ে টিভিতে পাব্লিশ করাই,তোমাকে বাসায় আটকে রাখি।

কিন্তু সবটা আবারো পাল্টে যায় মায়ের অসুস্থ্যতার জন্য।মনে হয়েছিলো,আমার থেকে দুরে গেলেই তোমার ক্ষতি হয়ে যাবে।তাই বিয়েটার জন্য বাধ্য করি তোমাকে।সেদিন যে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ হয়েছিলো,ওটা আগের বানানো পেপার।ওই মুহুর্তে নতুন কোনো পেপার্স বানানোর সুযোগ হয়নি।ভেবেছিলাম এ বিষয়ে কিছুই জানাবো না তোমাকে।আমার ভালোব্….

আটকে গেলেন উনি।আবারো বললেন,

-এখানকার জন্য তোমার ফ্লাইট টেক অফ হওয়ার সাথেসাথেই প্রদীপ সরকারের বিরুদ্ধে সব প্রমান আমার হাতে এসে যায়।চারবছর ওকে ফলো করার ফল,ওর আশেপাশের লোকজনকে কিনে নেওয়া,ভয় দেখানোর ফল।ওগুলো পুলিশকে হ্যান্ডওভার করেই ম্যাচ খেলতে এসেছি।মা জানে সবটা।এখানে আসার আগের রাতটা তার কাছেই ছিলাম।কেদেছি দুজনে মিলে।তাকেও তো কম কষ্ট দেইনি।চারবছর আগে অভিমানে।আর এ চারবছর,অনুতাপে।

এনিওয়েজ,রাইট নাও,প্রদীপ সরকার আমার হাজারটা সেঞ্চুরীর জন্য টু শব্দটাও করতে পারবে না।নাইবা তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে।তোমারই বাবা মায়ের মৃত্যুর দায়ে শাস্তিভোগ করছে সে।সো,তোমার এখন আর কোনো বিপদ নেই।আমার দায়িত্বপালন শেষ।

অঙ্কুর থামলেন।কিছুক্ষন শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।তারপর সিগারেটের প্যাকেট বের ব্যালকনির দিকে এগোলেন।অনেকটা সময় নিরবতা।জলভরা চোখে পেছন থেকে ধোয়া ওড়াতে দেখলাম তাকে।সিডনের পশ্চিমাকাশ গোধুলীর আলোতে লাল হতে শুরু করেছে।জড়তা ভেঙে আমিই এগিয়ে গিয়ে তার সামনে দাড়ালাম।উনি আমাকে দেখেই সবে জ্বালানো নতুন সিগারেটটা ফেলে দিলেন।নিস্প্রান দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধীর গলায় বললাম,

-সবটাই দায়িত্ব ছিলো?সবটা শুধু আমার সেইফটির জন্য করেছেন আপনি?

-হ্যাঁ।

-আমাকে নিয়ে কেনো ভেবেছেন এতো?

উনি উত্তর না দিয়ে তাচ্ছিল্যে হাসলেন।যা দেখে বুক ভারি হয়ে আসছে আমার।ধরা গলায় বললাম,

-আ্ আমাকে ক্ষমা করা যায় না অঙ্কুর?

-ক্ষমা?তুমি কেনো ক্ষমা চাইছো?একজন মেয়েকে সারোগেসি,এগ্রিমেন্টাল বিয়ে,বেবির জন্য বিয়ে,এসব বললে সে প্রতিবাদী ব্যবহার করবে,এটাই স্বাভাবিক।আমি তো তোমাকে দোষ দেইনি অদ্রি।

-ঠকিয়েছি আপনাকে।

উনি মৃদ্যু হেসে হাসি থামিয়ে দিলেন।শান্তভাবে বললেন,

-আমি মানি না তুমি ঠকিয়েছো আমাকে।আমার সবসময় মনে হতো,সবটা বাস্তব,সবটা মন থেকে করছো তুমি।

-তবে কেনো বলছেন আপনার সবটা দায়িত্ব ছিলো?কেনো বলছেন শুধু আমার সেইফটি আসল কারন ছিলো?কেনো বলছেন না,আপনি আমাকে ভালো…

ওনার আবারো সেই তাচ্ছিল্যের হাসি।
আমাকে বলার সুযোগ না দিয়ে উনি দু আঙুলে কপালটা ডলে বললেন,

-আমরা কালই‌ বিডিতে ফিরছি।যদিও টিম তিনদিন পরে যাবে।আমি কোচকে বলেছি,পারসোনাল রিজন।তুমিও একই ফ্লাইটে যাচ্ছো।তবে রোহানের সাথে।আসছি।

বেরিয়ে যাচ্ছিলেন উনি।দরজায় থেমে গিয়ে পেছন ফিরে অদ্ভুতভাবে হেসে বললেন,

-তুমি মুক্তি চেয়েছিলে না?মুক্তি দেবো তোমাকে,যে অঙ্কুর বারবার সেরোগেসি নিয়ে কথা বলে অপমান করেছে তোমাকে,তার থেকে।যে অঙ্কুর বলেছে,বিয়েটা বেবির জন্য,তার থেকে।মুক্তি দেবো তোমাকে এই দু বছরের চুক্তির বিয়ে থেকে।ডোন্ট ওয়ারি।

বেরিয়ে গেলেন উনি।বেডে বসে কাদতে লাগলাম।তার সাথে যা করেছি,এ ব্যবহার প্রাপ্য আমার।তার বলা এই মুক্তি চাইনা আমি।কিন্তু জোরও করতে পারি না তাকে।বারবার যে যে কারনে ঠকিয়েছি তাকে,তাকে ভুল বুঝে ভুল প্রমান করতে চেয়েছি,আজ সে সবগুলো কারন ভুল প্রমানিত হয়েছে।আপনার বলা হেরে গিয়েও জিতে যাওয়ার শান্তি হয়তো এটাই অঙ্কুর।আপনার বিশ্বাস জিতে গেছে অঙ্কুর।কিন্তু আমি পারলাম না সেই বিশ্বাসে নিজেকে বাধতে।আপনাকে অপরাধী ভাবার মতো এতোবড় অন্যায়ের পর,কোনো অধিকার নেই আমার।কোনো অধিকার নেই আবারো সে বিশ্বাসে বিশ্বাসী হতে বলার।কোনো অধিকার নেই!

#চলবে…
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here