সীমাহীন ভালোবাসার নীড় পর্ব -২৭ ও শেষ

#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ২৭
,
,
,
,
অন্ধকার রুমে হাত পা বাধা অবস্থায় পরে আছে আদ্রি ঠোঁটের কোণায় লেগে থাকা লাল রক্ত শুকিয়ে গেছে।মাথার বাম সাইড ফুলে নিল বর্ন ধারন করেছে। সারা মুখে ঘামে ভিজে গেছে।বড্ড মায়াবী লাগছে।

ব্যাথায় এক হারে কাতরাছে আদ্রি। কিন্তু আদ্রির আওয়াজ শুনার মতো কেউ নাই হাই পাওয়ারের ড্রাগ দেওয়ার কারনে চোখ দুইটা মেলতেও পারছেনা।

আদ্রিঃনির কোথায় আপনি। আপনার আদর পাখির যে আপনাকে খুব প্রয়োজন (বিরবির করে)

হঠাৎ দরজা খুলতেই এক ফালি আলো এসে আদ্রির চোখে এসে পরে। অনেক সময় পরে চোখে আলো পড়ায় সব ঝাপসা দেখছে।

আয়াজ ধীর পায়ে এসে আদ্রির সামনে বসে।
আদ্রিঃপা পানি পা নি।
আয়াজঃপানি নিয়ে আয়।

আয়াজ এর গার্ড পানি এনে দিলে সে পানি আয়াজ আদ্রিকে পান করায় দেয়।

আয়াজঃখুব কষ্ট হচ্ছে তাই না মায়াবতী। কিন্তু কষ্ট টা তো তুমি নিজেই নিজের জন্য বেছে নিয়েছো যদি তুমি আমার ভালোবাসাটা গ্রহন করতে তাহলে এতোটা সাফার করতে হতোনা। বিনা দোষে তুমি ফেসে গেলে।কিন্তু চিন্তা করোনা খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবো আমার রানী করে।
(আদ্রি কপালে লেগে থাকা রক্ত আঙুল দিয়ে মুছে ফেলে)

আদ্রিঃনি নির (বিড়বিড় করে)

আয়াজ নির এর নাম শুনে রেগে যায়। পাশে থাকা গ্লাস টা ফ্লোরে আছাড় মেরে দেয়।

আয়াজঃনির নির নির।আমি জানে মেরে ফেলবো এই নির কে।ভুলায় দিবো নির কে তোর মন মস্তিষ্ক থেকে তোর মন জুড়ে খালি একটাই নাম থাকবে সেটা হলো আয়াজ আয়াজ। তুই ভুলে যাবি যে কোন নির কোন সময় তোর জীবনে ছিলো তুই শুধু একজন কেই মনে রাখবি সেটা হলো আয়াজ। তোর অতিত বর্তমান ভবিষ্যত সব কিছুতে থাকবে আয়াজ। (ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে)

হঠাৎ করে সেখানে গুলির আওয়াজ ভেসে উঠে।লং হুডি পরা দুইজন যুবক প্রবেশ করে সেখানে।

নিরঃসেটা কোন দিন ও সম্ভব হবে না আয়াজ। আদর পাখি শুধু তার নির এর।যেমন নীড় ছাড়া পাখি দীশা হীন তেমন ই এই নির ছাড়া আদর পাখি ও দীশা হীন।

,
,
,
কিছু বুঝলেন না তো চলেন ফ্ল্যাশবেক এ।
আদ্রি নির এর উপর বিশ্বাস করতো কিন্তু সে জানতে চেয়েছিলো কোন মেয়ে ফোন দিয়েছিলো কি উদ্দেশ্য তার। তাই নির কে না জানিয়ে রওনা দেয় কিন্তু নির তো নির তার আদর পাখি কে এমনিতে ছাড়বে।

সেদিন যখন ফোন দিয়েছিলো নির সব শুনেছিলো কারন আদ্রির ফোন নির অনেক আগেই টেপ করায়েছিলো যার কারনে আদ্রি কার সাথে কথা বলতো সব জানতে পারতো সব শুনে নির মনে করেছিলো আদ্রি তাকে ভুল বুঝবে হয়তো নির এর বিরুদ্ধে স্টেপ নিবে ওকে ঘৃণা করবে কিন্তু নির কে ভুল প্রমান করে আদ্রি নির কে জিজ্ঞেস করে।কিন্তু নির জানতো তার আদর পাখি ব্যাপারটার গভিরে যাবে সে শান্ত হবেনা।

কিন্তু নির জানতো না আয়াজ অন্য কোন প্লানিং করে রেখেছিলো। আয়াজ আদ্রিকে রেস্টুরেন্টের বাহির থেকে কিডনাপ করে। আর নির ছিলো রেস্টুরেন্টে এর ভিতরে।আয়াজ আদ্রিকে ড্রাগস পুস করে তাকে তাদের বন্ধ ফ্যাকটারির রুমে রেখে বেরিয়ে যায়।

নির এর একটু সময় লেগে যায় জায়গাটা খুজে বের করতে।কারন যে জায়গায় আদ্রিকে রাখা হয়েছিলো সেখানে ট্রাকার কাজ করছিলোনা।

______

বর্তমানে,,
আয়াজ যেয়ে নির এর কলার চেপে ধরে।নির আদ্রিয়ান কে ইশারা করে বলে আদ্রিকে চেক করতে। আদ্রিয়ান ছুটে যায় সেখানে।

নির আয়াজ এর হাত নিজের কলার থেকে সরায়ে আয়াজ এর নাক বরাবর ঘুষি দেয় আয়াজ ও নির এর গালে ঘুষি মেরে দেয়। এক পর্যায়ে নির সুযোগ বুঝে আয়াজ এর মাথায় আঘাত করে।আয়াজ নিচে বসে পরে।

নির আয়াজ কে গুলি করতে যাবে তার আগেয় আদ্রিয়ান নির কে ডাক দেয়

আদ্রিয়ানঃনির আদ্রির পার্লস রেট একদম নাই হয়ে যাচ্ছে ওকে দ্রুত হস্পিটালে নিয়ে যেতে হবে।

নির আদ্রির কাছে যেয়ে আদ্রিকে কোলে তুলে নেয়
নিরঃআদর পাখি চোখ খুলো এই দেখো তোমার নির এসে গেছে এখনি তোমাকে হস্পিটালে নিয়ে যাবো তোমার কিছু হবেনা

আদ্রি আধো আধো চোখ খুলে নির এর মুখ টা দেখে হেসে দেয়।হাসিতে ছিলো এক আকাশ সমান বেদনা। ভালোবাসার মানুষ দের থেকে দূরে যাওয়ার ভয়।আপন মানুষ গুলোকে আর দেখতে না পাওয়ার বেদনা।

নির আদ্রিকে নিয়ে বাহিরে যাওয়ার জন্য পা এগুতে নিলেই আয়াজ গুলি করে দেয়। গুলির নিশানা ভুলে লেগে যায় আদ্রির হাতে।

নির আর আদ্রিয়ান নিশ্বাস যেনো সেখানেই আটকে যায়। সময় টা যেনো স্থির হয়ে যায়।আয়াজ ও থমকে যায় সে ভাবেনি গুলিটা তার ভালোবাসার মানুষ টার রক্ত ঝরাবে।

আয়াজ কিছু বলতে যাবে তার আগেয় নির আদ্রিকে নিজের ঘাড়ে নিয়ে পকেট থেকে গান বের করে আয়াজ এর বুক ঝাঝড়া করে দেয়।

আয়াজঃভালোবাসি মায়াবতী খুব ভালোবাসি। আই লাভ ইউ মাফ করে দিয় পারলে এই অধম টাকে পারিনি তোমাকে আগলে রাখতে (অনেক কষ্টে কথা গুলো বলে মাটিতে লুটিয়ে পরে)

____

নির আদ্রিকে কোলে নিয়েই হস্পিটালে প্রবেশ করে রক্তে নির এর হাত মেখে গেছে।ছেলে হয়েও সে আজকে কান্না করছে।চোখ জোড়া বেয়ে পানি পড়ছে অবিরাম।

আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি স্ট্রেচার নিয়ে এসে আদ্রিকে শুয়ায় দেয়।ডাক্তার রা ও চলে আসে।নাম্বার ওয়ান বিজন্যাস ম্যান এর কোলে ছিলো দেখে বিনা ফর্মালিটি করেই ওটিতে নিয়ে যাওয়া হলো।

___
ওপরেশন থেয়াটারের সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়লো নির। আদ্রিয়ান ও পাথরের মতো বসে পড়লো চেয়ারে।

নিরঃএমনটা হওয়ার কথা ছিলোনা আদর পাখি।এই ভাবে যেওনা ছেড়ে। তুমি ছাড়া যে আমি একা। তুমি বিহীন এই নির জীবন্ত লাশ হয়ে যাবে। আ…… (চিৎকার করে উঠে)

উপস্তিত সব ডাক্তার নার্স পেশেন্ট থমকে যায়। এতোটা ভালোবাসা আদৌও কেউ বাসতে পারে জানা ছিলোনা কারো। সবার চোখেই পানি চলে আসে।কেউ জানেনা আদর পাখি কে কি সম্পর্ক এই ছেলেটার সাথে তার কিন্তু সবার মন থেকেই বেরিয়ে আসে

এই মেয়েটাকে সুস্থ করে দেও আল্লাহ।

আদ্রিয়ান এর চোখের সামনে ভেসে উঠে ছোট আদ্রির ছবি।সদ্য ফুটন্ত গোলাপ এর ন্যায় কোমল বাচ্চাটা কে যখন আদ্রিয়ান এর কোলে দেওয়া হয়েছিলো আদ্রিয়ান খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেছিলো।সব সময় নিজের কাছে রাখতো বোনকে।কিন্তু তখনি ফুটে উঠে বোনের কান্না মাখা মুখ গুলো। রোজ রোজ অপমান হতে দেখেও চুপ করে শুনে যাওয়ার অপরাধ।

আদ্রিয়ানঃফিরে আয় সোনা বাচ্চা ভাইয়া প্রমিজ করছে আর কোন দিন এমন হবে না। তুই না আমার সব কথা মানিস ফিরে আই বোন আমার। ভাইয়ার যে তোকে ছাড়া আর কেউ নেই। ফিরে আয় কলিজাটা(মনে মনে)

১ ঘন্টা পরে ডাক্তার বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে।
নির এর যেনো জানে পানি ফিরে আসে।

নিরঃডাক্তার আমার আদর পাখি কেমন আছে। ঠিক আছে তো বলেন না।(বাচ্চাদের মতো)
ডাক্তারঃআমি জানিনা আমি কি বলবো একদম ম্যাজিকেল ছিলো ব্যাপারটা। আমরা ডাক্তার রা আশা ছাড়ে দিয়েছিলাম কিন্তু পেশেন্ট ছাড়েনি সি ইজ এবসুলেটলি ওল রাইট। কিছু মাস লাগবে হাত ঠিক হতে ফুল বেড রেস্ট এ রাখবেন উনাকে। ওল দা বেস্ট ইয়াং ম্যান।

নির যেনো ভাষা হারায় ফেলেছে।কি ভাবে আল্লাহ কে শুকরিয়া করবে তার জানা নাই। আদ্রি জ্ঞান ফিরতে দেরি আছে ওইদিকে এশার আজান এ দিয়ে দিয়েছে। জীবনে প্রথম বার নির গেলো মসজিদে শুধু ওই একা না আদ্রিয়ান ও গেলো।

দুইজনে নামাজ পরে আল্লাহর দরবারে কোটি কোটি শুকরিয়া জানিয়ে আদ্রিয়ানকে হস্পিটালে পাঠিয়ে গেলো নিজের গোডাউনে।

হাত পা দড়ি দিয়ে পরে আছে আয়াজ এর আম্মু। উনাকে আগে ধরে তার কাছ থেকেই ঠিকানা যেনে আদ্রির কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলো নির।

আয়াজ এর আম্মুর পুরো শরীর রক্তে লাল হয়ে আছে।ওকে দেখে নির এর চোখ জোড়ায় আগুনে পরিনর হলো যেনো চোখ দিয়ে ভস্ম করে দিবে।।।।
#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ২৮ (সমাপ্তি)
,
,
,
,
,
অন্ধকার রুম থেকে ভেসে আসছে চিৎকার সাথে বাঘের গর্জন। আসিফার(আয়াজ এর আম্মু)শরীর কে কামড়ে কামড়ে খাচ্ছে দুইটা বাঘ। মাস দুই এক হলো না খেয়ে থাকা হিংস্র বাঘ দুইটার আহার এখন আসিফা।কিছুক্ষন পরে সব শান্ত হয়ে যায় বাঘের গর্জন আসিফার চিৎকার।

এই চিৎকারের মতোই আদর পাখির রাস্তার কাটা তার নিরের কাছে পৌঁছানোর। এখন আর কোন বাধা নাই কোন ঝড় নাই।

তাদের ভালোবাসার সীমাহীন নীড় এর সকল বাধা এখানেই সমাপ্ত দুইজনার নতুন জীবনের শুরু হবে হয়তো অন্যভাবে।।।

——-

২ বছর পরে,,,

আদ্রিয়ান হস্পিটাল থেকে বাসায় ফিরে ক্লান্ত হয়ে সোফায় শরীর এলিয়ে দেয়।
প্রচুর পানির তেষ্টা পেয়েছে কিন্তু ফ্রীজ পর্যন্ত যাওয়ার শক্তি নেয় তার।

হঠাৎ চুড়ি ঝুন ঝুন আওয়াজ কানে এসে বারি খেতেই ভ্রু জোড়া কুচকে যায় আদ্রিয়ান এর চোখ জোড়া খুলে সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে যায় কারন তার সামনে লাল বেনোরসি পরে দাঁড়ায় আছে নওমি পানির গ্লাস হাতে নিয়ে।

আদ্রিয়ান অবাক হয় সাথে সাথে ভাবে হয়তো এটা তার ভ্রম কারন নওমি এখানে কি করে আসবে।

আদ্রিয়ান চোখ ডোলে ভালো করে তাকাতেই দেখে এখনো নওমি ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

নওমিঃকি গো এই ভাবে কি দেখছো গো আমার বুঝি লজ্জা লাগেনা।।
(লজ্জা পাওয়ার ভান করে)
আদ্রিয়ানঃতুমি এখানে কি করে তোমার না লন্ডনে থাকার কথা(অভিমানী কন্ঠে)
নওমিঃহুম গেছিলাম তো আর তুমিও আটকাও নি তোমার এক মাত্র বউ কে (ভেংচি দিয়ে)
আদ্রিয়ানঃমা মানে(অবাক হয়ে)
নওমিঃমানে আমার সব মনে পরে গেছে মিস্টার হ্যান্ডসাম
(আদ্রিয়ান এর গলা জরায় ধরে)
আদ্রিয়ানঃকি সত্যি মানে কিভাবে কি(নওমিকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরতে লাগলো)

নওমিঃআগে থামো তারপরে তো বলবো
আদ্রিয়ানঃনা এই ভাবেই বলো (কোলে তুলে)
নওমিঃতুমি তো জানোই আনার যাওয়ার কোন ইচ্ছা ছিলোনা তোমাকে ছাড়া বাট ভাইয়ার কথা তোমার কাছে আমার পড়াশুনো হবেনা। আমার ও তাই মনে হয়েছিলো একবারে পড়াশুনো করে তোমার যোগ্য হয়ে ফিরবো। কিন্তু সেখানে যাওয়ার মাস কয়েক পরেই মাথা ব্যাথা করছিলো প্রচুর চোখের সামনে ঝাপসা কিছু ছবি ফুটে উঠছিলো স্পষ্ট না। কিন্তু ধীরে ধীরে ব্যাথা বারতে লাগলো আর এইদিকে সৃতিগুলোও স্পষ্ট হয়ে গেলো।

আর দেন দুইদিন বেড রেস্টে থেকে কালকের ফ্লাইটে এসে আজকে এখানে।বুঝলে মিস্টার হ্যান্ডসাম।(কপালে কিস করে)

আদ্রিয়ানঃএতো কিছু হয়ে গেলো আর তুমি কাউকে জানানো প্রয়োজন মনে করলে না কি ভেবেছো নিজেকে হ্যা (নিচে নামায়ে ঝাড়ি মেরে)

নওমিঃওলে আমার জামাই টা রাগ করেছে বাট আজকে নো রাগ আজকে ওনলী আদর।
আদ্রিয়ানঃলন্ডনে যেয়ে দেখছি ভালোই রোমেন্টিক হয়ে গেছেন।
নওমিঃথাক গেলাম আমি

নওমি যেতে নিলেই আদ্রিয়ান হাত ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে দুই হাত দিয়ে নওমির কোমড় জরায় ধরে উচু করে ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।

——

অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মেহের। চোখ দুইটাতে পানি স্পষ্ট। দুই বাচ্চার জননী সে। টুইনস বেবি হয়েছে। স্বামি সন্তান সব থাকলেও আলাদা এক শূন্যতা তার মাঝে। আলাদা এক অপরাধ বোধ কুরে কুরে খাছে তাকে।
আজকে শপিং এ গেছিলো মেহের দুই বেবিকে নিয়ে সেখানে দেখা হয় তার শাশুড়ী সাথে।তিনি মেহের কে দেখেও না দেখা করে দুই নাত্রীর সাথে কথা বলতে লাগে।

যাওয়ার সময় বলে যায় একটাই কথা
“দুই ছেলের মা তুমি দোয়া করি আমার মতো যেনো তোমাকে তাদের থেকে দূরে থাকতে না হয়।

মেহের এর মনটা তখন থেকে একপ্রকার বিষিয়ে আছে। খালি মনে হচ্ছে তার জন্য ছেলে আর মায়ের মধুর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে।

সে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে তাদের অনেক আগে। সে বাড়িতে রিয়াজ আর তার ছেলে দের প্রবেশ এর অনুমতি থাকলেও মেহের এর প্রবেশ এর অনুমতি নেয়।

রিয়াজ তার বউ কে বেছে নিয়েছে ঠিক কিন্তু হয়তো মনে মনে তার বুকটাও হয়তো পুরে কারন বাবা মা ছাড়া কেমন লাগে সে জানে।

নিজেকে কারো বাহুডোরে আবদ্ধ পেয়ে মাথা টা তার বুকেই এলিয়ে দেয় মেহের। তার সকল প্রশান্তির ঠিকানা যে এটা তার সীমাহীন ভালোবাসার নীড় যে এটা।

রিয়াজঃকি হয়েছে আমার বাবুর আম্মুটার
(মেহের এর ঘাড়ে মুখ গুজে)
মেহেরঃআমাকে মাফ করে দিও রিয়াজ আমার জন্য আজকে তুমি তোমার বাবা মার থেকে দূরে
না আমি তোমার।লাইফে আসতাম না তোমার আর আম্মুর মাঝে এই দূরত্ব সৃষ্টি হতো
রিয়াজঃকে বলেছে আমার আর আমার আম্মুর মাঝে দূরত্ব
মেহেরঃমানে
রিয়াজঃচলো আমার সাথে

রিয়াজ মেহের কে নিয়ে নিচে যায় আর নিচে যেয়ে অবাক হয়ে যায় কারন রিয়াজ এর পুরো পরবার সেখানে উপস্থিত আর সবার হাতে একটা করে বেলুন যার উপরে লিখা হ্যাপি বার্থ ডে।মেহের সবাইকে দেখে খুশি তে লাফিয়ে উঠে কিন্তু পরক্ষনেই সবার মাঝে রিয়াজ এর আম্মুকে না থেকে হাসি মাখা মুখটা অন্ধকার হয়ে যায়।

সেটা দেখে সবাই দুই দিকে ভাগ হয়ে যায় মেহের সামনে তাকাতেই তার চোখ দুইটা চিকচিক করে উঠে কারন তার শাশুড়ী তার দুই নাতীকে নিয়ে সোফায় বসে আছে।

মেহের কাপা কাপা পায়ে যেয়ে শাশুড়ীর সামনে হাটু গেড়ে বসে।

মেহেরঃমা আপনি এসেছেন আমি বলে বুঝাতে পারবোনা কতোটা হ্যাপি আমি।ধন্যবাদ মা
শাশুড়ীঃআমাকে মাফ করে দিস রে মা আমি নিজের জেদ নিয়ে এতোটাই অন্ধ ছিলাম যে তোর দিকটা দেখিই নি কিন্তু আজকে নির রিয়াজ আদ্রি আমাকে বুঝালো তখন আমি বুঝলাম যে আমি কতোটা ভুল ছিলাম।

(মেহের এর শাশুড়ী যখন বাজার থেকে বাসায় ফিরে তখন তার অনেক মন খারাপ ছিলো নাতিদের কাছ থেকে দূরে আসার কষ্ট। তিনি সব কিছুর জন্য মেহের কে দোষী করছিলো কিন্তু কিছু ক্ষন পরে সেখানে রিয়াজ নির আদ্রি যায়। আর উনাকে সব কিছু বলে যে মেহের এর বাবা মা কি করে মারা যায় মেহের কি ভাবে মানুষ হয়েছে কতোটা কষ্টে থেকেছে। মেহের এর শাশুড়ীর ও মন গলে যায়)

মেহেরঃধন্যবাদ আমাকে সীমাহীন_ভালোবাসার জন্য
রিয়াজঃতোমাকে সীমাহীন ভালোনা বাসলে যে আমি আমার নীড় হারা হয়ে যাবো কারব তুমিই যে আমার #সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
(মেহের কে এক হাত দিয়ে আগলে নিয়ে)

_———-

নির এর বুকে মাথা রেখে আরামসে আইস্ক্রীম খাছে আদ্রি। আর নির বিরক্ত নিয়ে শুয়ে আছে হাজার বার বারন করার স্বর্তেও হাজার মেলোড্রামা করে আইস্ক্রীম হাতিয়ে নিয়েছে আদ্রি।

৯ মাস চলছে আদ্রির প্রেগ্ন্যাসির। আগের থেকে অনেক গুনে গলুমলু হয়ে গেছে।চেহারায় আলাদা এক উজ্জ্বলতা ফুটে উঠেছে।গাল দুইটা আগের তুলনায় ফুলে গেছে। মনে হয় দুই গালে কেউ রঙ মেরেছে আগের তুলনায় চুলটাও আরো বেরেছে।

নির এখন সারা সময় আদ্রির আশেপাশে থাকে। আদ্রির সব কিছু নিজে দেখে। একদম বাচ্চাদের মতো আগলে রাখে তাকে। আদ্রিও যেনো নির এর ভালোবাসায় নিজের ছোটবেলা ফিরে পেয়েছে।হাজারো আবদার তার। একটু কিছুতে ছোট বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে রেখে দেয়।

আদ্রি নিজের মতো করে আইস্ক্রিম খাচ্ছে হঠাৎ করে পেটের ভিতরে ব্যাথা উঠলো কিন্তু সে দিকে পাত্তা দিলোনা সে মনে করলো বেবি হয়তো কিক করছে। কিন্তু হঠাৎ করে ব্যাথা টা বেশি হতেই আদ্রির ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলো। নির ঘাবড়ে গেলো। তার বুজতে বাকি নেয় কিসের ব্যাথা।

—–
ওটির সামনে পায়চারি করছে নির। ঘেমে ন্যায় একাকার সে। তার গলাটা যেনো বার বার শুকিয়ে যাচ্ছে।।

অনেক সময় পরে সাদা তোয়ালেতে পেচিয়ে এক সাদা ফুটফুটে ফুলের মতো কোমল সদ্য জাত বাচ্চাকে নিয়ে এলো ডাক্তার নির এর সামনে।

নির এর চোখ মুগ্ধতাই ভরে গেলো। ঘুমন্ত রাজ কন্যাকে দেখে তার যেনো আদ্রির কথা মনে পরে গেলো একদম হুবাহু।

নির বেবিকে কোলে তুলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো আদ্রির কথা
ডাক্তার তাকে ভিতরে যেতে বললো।নির বেবিকে নিয়েই ভিতরে গেলো।

আদ্রির চোখ বেয়ে দুই ফোটা অশ্রু বেরিয়ে এলো। সে কোনদিন ভাবেনি তার কপালে এতো সুখ লিখা আছে।চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষ আর তার নিশানি

নির মেয়েকে আদ্রির পাশে শুয়ায় দিলো।

আদ্রি মেয়ের কপালে কিস করে দিলো আর নির আদ্রির কপালে।
আদ্রিঃআমার আর কিছু চাওয়ার নাই আজকে আমার জীবন পরিপূর্ণ। ধন্যবাদ নীর তোমার #সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়ে আমাকে ঠায় দেওয়ার জন্য। আমার লাইফে আসার জন্য আমাকে পূরর্ণতা দেওয়ার জন্য।

নিরঃধন্যবাদ তোমাকে আমার জীবন বদলানোর জন্য আমার জীবন টাকে সুন্দর করার জন্য আমাকে ভালোবাসার জন্য আমাকে আমার রাজকন্যার আর আমার রাজরানী দেওয়ার জন্য

নির/আদ্রিঃআমাদের #সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড় আজকে সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ। ভালোবাসি ভালোবাসি সীমাহীন ভালোবাসি।

সমাপ্তি!!!!!!!
চলবে!!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here