সুপ্ত অনুভুতি পর্ব ৭+৮

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_৭
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে বেলা ৩টায় এসে পৌঁছালাম সিলেটে৷ সবাই সবার ব্যাগপত্র টেনে টেনে রিসোর্টের বুক করা রুমে রাখছে৷তিন চারদিন থাকার প্ল্যানিং করেই আসা হয়েছে৷ একদিন বা দুইদিনে তো আর সব দেখা সম্ভব নয়৷আহিল ভাইয়ার এক ফ্রেন্ড নাকি সিলেটের তাকে দিয়েই রিসোর্ট বুক করিয়েছে৷
🍁🍁🍁🍁
আমরা সবাই লাঞ্চ করে রিসোর্টের চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম৷আদিল ভাইয়া আমাদের থেকে আগে আগে যাচ্ছেন৷ আমরা জৈন্তা হিল রিসোর্টে উঠেছি৷ রিসোর্টটা অনেক উঁচুতে৷ চারিদিকে পাহাড় আর পাহাড়৷ পাহাড়ার মধ্যে সবুজ গাাছগাছালি পাহাড়কে আরও মোহনীয় করে তুলেছে৷প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি মেঘালয় পাহাড়ের জলপ্রপাতও দেখা যায়৷ পাহাড়,ঝর্না,নদী সুনীল আকাশ ছাড়াও জৈন্তা হিল রিসোর্ট থেকে আরো চোখে পড়ে স্বচ্ছ পানির গভীর থেকে শ্রমিকদের পাথর তুলে আনার দৃশ্য৷ আমরা সব কিছু ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম৷ সিলেটের নেচার আসলেই মুগ্ধকর৷
সামান্তা সেলফি তুলতে তুলতে এসে বললো,,
.
“চল দৃশ্যটা ক্যামেরা বন্দী করে রাখলে মন্দ হয়না”৷ আমি সামান্তার কথায় হ্যাঁ মিলিয়ে সবাইকে ছবি তোলার জন্য বললাম কিন্তু কেউই ছবি তুলছেনা৷ আমি আর সামান্তা নিজেদের ছবি যা পারছি তুলছি৷
🍁🍁🍁🍁
রাতে খাবার খেতে এসে হলো সমস্যা৷ আমরা সবাই ডিনার করতে এসে পরেছি কিন্তু অনেক্ষন হয়ে গেছে আদিল ভাইয়ার কোনো খুঁজ নেই৷ সবাই বেশ চিন্তিত৷ আদনান ভাইয়া তো রেগে বোম৷ আহিল ভাইয়া,আদিব ভাইয়া ফোন করছে ফোন সুইচ অফ বলছে৷

আদনানঃকী মনে করেছে কী ও৷ ওর যা ইচ্ছা তাই করবে৷ একবারও ভেবেছে আমরা কতো চিন্তা করছি ওর জন্য৷ ও বোধহয় আমাদের কথা ভাবেনা কিন্তু আমরা তো ভাবি নাকি৷ এভাবে কাউকে না জানিয়ে হারিয়ে যাওয়ার মানে কী৷
.
আয়েশাঃতাহলে ওকে খোঁজে নিয়ে যা৷ হয়তো রিসোর্টের বাইরে আছে৷
.
আয়েশা আপুর কথা শুনে ওরা সব ভাইরা চলে গেলো আদিল ভাইয়াকে খুঁজতে৷ আহিল আর আদিব চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে ডাকছে কিন্তু আদিলের কোনো রেসপন্স নেই৷ ওরা রিসোর্ট থেকে অনেক দূরে চলে গেছে৷ রিসোর্টের আলো আর সেখানে পৌঁছাচ্ছে না৷ ওরা ফোনের টর্চ জ্বালিয়েছে৷ আরও কিছুটা দূর যাওয়ার পর চোখে পরলো আদিলকে৷ সে নদীর পারে একটা পাথরের উপর বসে আছে৷ আর এক ধ্যানে স্বচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে আছে৷ আদনান এগিয়ে এসে আদিলকে দাঁড় করিয়ে কষিয়ে তাপ্পর মেরে দিলো গালে৷

আদনানঃকী মনে করেছিস তুই?? এভাবে একা একা এখানের আসার মানে কী এতো রাত্রে৷ এখানে সাপ ওতো থাকতে পারে৷ যদি কামড়ে দিতো তখন?? তুই বোধহয় আমাদের চিন্তা করিসনা কিন্তু আমরা তো করি৷
.
আদিলঃ কেনো এসেছো তোমরা?? আমাকে একা থাকতে দাও৷ একাকিত্বই এখন আমার একমাত্র সঙ্গি৷ মৃত্যু হলেও আমার কোনো আফসোস নেই৷
.
আদনানঃ আরেকটা চড় বসিয়ে দিবো৷ এসব কী বলছিস তুই হে৷ আমরা তোকে একা ছেড়েছিলাম বলে তুই এখন মৃত্যুকে বরন করে নিচ্ছিস৷ শোন আমরা সব সময় জোড়া ছিলাম আর জোড়াই থাকবো৷আর এরকম পাগলামু করবিনা৷
আদনানের কথা শুনে আদিল ওকে জড়িয়ে ধরলো৷

আদিলঃ আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছিস??
.
আদনানঃহুম৷
🍁🍁🍁
সবার সাথে আদিল ভাইয়াকে ফিরে আসতে দেখে সবাই চিন্তা মুক্ত হলো৷ অদ্রিতা আপু তো কেঁদেই দিয়েছে৷ কোন বোনেরই ভালো লাগবেনা এতো রাতে তার ভাই মিসিং হয়ে গেলে৷
🏜️🏜️🏜️🏜️
সকালে ঘুম থেকে উঠার পরই দেখছি ওরা চার ভাই আবার আগের মতো হয়ে গেছে৷ হেসে হেসে কথা বলছে আনন্দ করছে৷ ছবি তুলছে৷ আমরা এখন উসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে৷ কখনো এই এয়ারপোর্ট দেখেনি৷ এয়ারপোর্টের একদিকে চা পাতার বাগান৷ বেশ উন্নত৷ এয়ারপোর্টের পূর্বের দিকে তাকালে চোখে পড়ে ড্রিম ল্যান্ড পার্কের উচ্চ নাগরদোলা৷

আমরা সবাই এয়ারপোর্ট দেখার পর ড্রিম ল্যান্ড পার্কে আসলাম৷ এই পার্কটা নামের চাইতেও বেশি সুন্দর৷ আদিব ভাইয়া নাগরদোলার টিকিট কেটেছে৷ আমি,আয়েশা আপু,অদ্রিতা আপু,সামান্তা এতো উঁচু নাগরদোলা দেখে ভয়ে শেষ৷ অন্য সবার কথা বলতে পারবোনা কিন্তু আমার ভয়ে গলা কাঠ হয়ে গেছে৷ ভাইয়ারা আশ্বস্ত দিয়েছে তারা আমরা চারজনের সাথে একজন একজন করে বসবে৷ সামান্তা আর আদনান ভাইয়া,আয়েশা আপু আর আদিব ভাইয়া, অদ্রিতা আপু আর আহিল ভাইয়া,আমি আর আদিল ভাইয়া৷

নাগরদোলায় উঠার পর আমি ভাইয়ার চেয়ে ডিস্টেন্স রেখে বসেছি৷ নাগরদোলা ঘুরতেই আমার মনে হলো প্রাণ একেবারে বেড়িয়ে যাবে৷ আমি ভয়ে ভাইয়াকে দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম আর তার বুকে মাথা রাখলাম৷ উপরে উঠলে ভয় করেনা কিন্তু যখন নিচে নামে তখন খুব ভয় করে৷ কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম ভাইয়া তার হাত একটা আমারে পিঠে রেখেছে৷ আমি ভাইয়ার বুকে থেকে উঠে ভাইয়ার দিকে তাকালাম৷ ভাইয়া এক দৃষ্টিতে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে৷ আমি সরে আবারও ভাইয়ার হাত জড়িয়ে ধরলাাম৷ এছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই৷ সামান্তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও কেঁদে কেটে শেষ৷ আদনান ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আর ভাইয়া মিটিয়েমিটিয়ে হাসছে৷ আপু আর অদ্রিতা আপু তেমন ভয় পাচ্ছেনা৷ প্রায় পাঁচ মিনিট ঘুরার পর নাগরদোলা অফ হলো৷ আমি নেমেও টাল সামলাতে পারছিনা৷ মনে হচ্ছে এখনও ঘুরছি৷ অদ্রিতা আপুর হাত ধরে ধরে হাঁটছি৷

অদ্রিতাঃকার কেমন লেগেছে জানিনা বাট আমার কিন্তু সেই লেগেছে৷ আমি আবারও আসবো৷
.
আরুহিঃতুমি আইসো বইন আমি আর জীবনেও আসবোনা৷ যদি আসিও এই নাগরদোলায় উঠবোনা৷ এ কী উঁচুরে বাবা৷ নাগরদোলা থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত দেখা যায়৷
.
সামান্তাঃশুধু কী তাই!! যখন পাহাড়ের দিকে তাকাই তখন মনে হয় ছিটকে পাহাড়েই পরে যাবো৷
.
আয়েশাঃএখন কোথায় যাবো তাহলে???
.
আদিবঃএখন পার্কের ভিতরে যাবো৷ সেখানে পুল আছে৷ পুলের মধ্যে বোটও আছে৷
.
আদনান ভাইয়া টিকিট কেটে আমাদের ভিতরে নিয়ে গেলো৷ সেখানে অনেক জায়গা নিয়ে পুল৷ আর সেখানে এক বোট আরেক বোটকে ধাক্কা দিচ্ছে৷ আর উপরে উঠছে৷

আরুহিঃসামু এখানে মজা হবে তাইনা???
.
সামান্তাঃহ্যাঁ দেখ কী সুন্দর একটা আরেকটাকে ধাক্কা দিচ্ছে৷ তুই আর আমি একসাথে বসবো৷
.
আরুহিঃআচ্ছা৷
.
অদ্রিতাঃআদি আমরা তো কাপড় আনিনি৷ বোটে উঠলে তো কাপড় ভিজে যাবে৷
.
আয়েশাঃআমি এনেছি, ব্যাগ আদিবের কাছে আছে৷

সবাই ড্রেস চেঞ্জ করে বোটে উঠে পরলাম৷ এখন বসেছি আমি সামু, অদ্রিতা আপু আর আয়েশা আপু,আদনান ভাইয়া আর আদিল ভাইয়া,আদিব ভাইয়া আর আহিল ভাইয়া৷ আমি আর সামু সামনের বোটে উঠেছি৷ যেমনি পিছন থেকে আরেক বোট ধাক্কা দিলো ওমনি আমি আর সামু একে ওপরকে খামচি মেরে ধরেছি৷ ও আল্লাহ্ গো এটাতো দেখছি নাগরদোলা থেকেও আরও ভয়ানক৷ পিছন থেকে আরেক ধাক্কা দিতেই আমি আর সামু একে অপরকে ছেড়ে দিয়ে পানিতে পড়ে গেলাম৷
ইয়া আল্লাহ পানি এতো গভীর কেনো শুনেছিলাম পুলের পানি গভীর কম হয়৷ কিন্তু এটাতে ভারী ডিপ৷ হয়তো পুলে পানি বেশি পরে গেছে৷ আমি নিজেই সাতার জানিনা তার মধ্যে আবার সামু আমার ঘাড় ধরে আছে৷
সামান্তা আর আরুহিকে পানিতে দেখে আদনান আর আদিল ও পানিতে জাম্প দিলো৷ আদনান সামান্তাকে আরুহির কাছে থেকে সরিয়ে নিজের কাছে নিয়ে গেলো৷ আর আদিল আরুহিকে৷ কোনোমতে দুটোকে কোলে করে পাড়ে নিয়ে গেলো৷
নিজেকে আদিল ভাইয়ার কোলে দেখে আমার দিকে তাকালাম ভালো করে আমি৷ কাপড় ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে গেছে৷ ভাইয়া আমাকে কোল থেকে নামাতেই আমি তারাতাড়ি ব্যাগ তেকে দুটো ওরনা বেড় করে একটা সামুকে দিয়ে আরেকটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নিলাম৷ আদিল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে৷ আমি তারাতাড়ি লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলাম৷ এমন পরিস্থিতিতে পরবো সিলেটে এসে কখনো ভাবিনি৷

আদনানঃসামু তুই এতো ভারী৷ আগে জানলে কোলে নিতাম না৷
.
সামান্তাঃএই তুমি জীম করো৷ আটচল্লিশ কেজির একটা মেয়েকেই কোলে নিতে পারোনা৷
#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_৮(বোনাস পার্ট)
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

আদিল ভাইয়া আর আদনান ভাইয়া আমাদের পাড়ে রেখে আবারও বোটে উঠে পরলো৷আরও কতগুলো মেয়েরাও উঠেছে৷ মেবি ওরা পিকনিকে এসেছে৷আমি আর সামান্তা ভেজা শরীর নিয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছি৷ এক বোট আরেক বোটকে ধাক্কা দিয়েই যাচ্ছে৷ ধাক্কা ধাক্কির এক পর্যায়ে একটা মেয়ে ছিটকে পানিতে পরে গেলো৷ আমি আর সামান্তা মেয়েটাকে পানিতে পরতে দেখে হাসতে হাসতে শেষ৷ আমরা এই মুহুর্তে ভুলে গেছি যে একটু আগে আমরাও পানিতে পরেছিলাম৷ মেয়েটা ভাইয়াদের দিকে তাকিয়ে হেল্প হেল্প করছে৷ ওরা হেল্প করবে দূরের কথা দাঁত আরও কেলিয়ে হাসছে৷
একটা ছেলে পুলে নেমে পরলো৷ তারপর মেয়েটার কাছে গিয়ে বললো সে মেয়েটাকে হেল্প করবে৷ মেয়েটি ভাইয়াদের দিকে একবার তাকিয়ে সাতরে পাড়ে চলে এলো৷

সামান্তাঃওরে রুহি রে বেটি তো বারি বজ্জাত৷দেখলি সাতার জানে তারপরও কিভাবে অভিনয় করলো৷ এরে তো নবেল দেওয়া দরকার৷
.
আরুহিঃহুম সবই ভাইয়াদের কোলে উঠার ফন্দি বুঝলি৷
.
সামান্তাঃতার মানে আমাদের যখন ভাইয়ারা কোলে নিয়েছিলো তখন আমাদের খুব রোমান্টিক কাপল লাগছিলো আর এটা দেখেই এদের জেলাস+কোলে উঠার শখ হয়েছে৷
.
আরুহিঃএকটু বেশিই ভাবিস তুই৷ আমাদের রোমান্টিক কাপল লাগতে যাবে কেন?আমরা ভাইয়ার কোলে উঠেছি হাসবেন্ডের কোলে উঠিনি৷
.
সামান্তা কিছু না বলে মুচকি হেসে আদনান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো৷৷

“এই বেটির মনে আবার কী চলছে আল্লাহ্ই জানেন৷
🍁🍁🍁🍁
পার্ক থেকে রিসোর্টে এসেছি বেলা ২টায়৷ এখন আবার সবাই জাফলং যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি৷ জৈন্তি হিল রিসোর্ট থেকে জাফলং মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে৷ তাই এখন যাওয়া যাবে৷
রিংকির ফোন দেখে আমার বুক ধক করে উঠলো৷
রিংকিকে তো জানানোই হয়নি যে আমরা সিলেট এসেছি৷ বেচারি শুনলে খুব কষ্ট পাবে৷ আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করলাম৷

“হ্যালো রিংকি৷
.
রুহি তুই আমার সাথে এতো বড় অন্যায় কিভাবে করলি৷ তোরা সিলেটে এলি আর একবারও আমাকে বললি না৷ এতটা পর হয়ে গেছি আমি৷
.
প্লিজ বইন রাগ করিস না৷ আমার একদম মনে ছিলোনা৷ তারাহুরোর মধ্যে আসা হয়েছে৷
.
আচ্ছা ঠিকাছে৷ কিন্তু আমি তো সিলেট এসে গেছি৷ এখন তোরা কোথায় আমি তো জানিনা৷
.
কীহ!!!! তুই সিলেট এসেছিস বাট হাউ??
.
কেনো বাস দিয়ে৷ কাল আহিল ভাইয়া দেখেছি তোদের সবার গ্রুপ ছবি ফেইসবুকে আপলোড দিয়েছে৷ আর ক্যাপশন দিয়েছে সিলেটের বিকেল বেলা৷ তখুনি বুঝতে পারলাম তোরা সিলেট আছিস৷ মা বাবাকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে সকালেই রওনা দিলাম একটু আগে পৌঁছিয়েছি৷
.
কোথায় আছিস তুই এখন৷
.
উসমানী মেডিকেলের পাশে৷
.
এখান থেকে তো অনেক দূর৷আচ্ছা আমি কাউকে পাঠাচ্ছি৷ বাই৷
রিংকির সাথে কথা বলে বাইরে বেড়িয়েই দেখলাম আহিল ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে৷

ভাইয়া আমার একটা হেল্প করবে??
.
কী হেল্প??
.
একচুয়েলি রিংকিকে আনতে যেতে হবে৷ ও আমাদের সিলেট আসার খবর শুনে চলে এসেছে৷ এখন উসমানী মেডিকেলের পাশে আছে৷ প্লিজ ভাইয়া তুমি তারাতাড়ি যাও৷
.
আচ্ছা যাচ্ছি৷ ওকে বলে রাখিস এক পাও যাতে না নড়ায়৷ আর সবাইকে বলে দিস জাফলং যাতে চলে যায় আমি রিংকিকে নিয়ে সেদিক থেকে চলে যাবো
🍁🍁🍁🍁
আদিল উসমানী মেডিকেলের কাছে গিয়ে রিংকিকে খুঁজে চলেছে৷ এতো বড় মেডিকেল কোন দিকে থাকবে সেটা ওতো জানেনা৷ হঠাৎই আহিলের চোখ পরলো দূরে একটা মেয়ে ব্রেঞ্চে বসে আছে৷ পরনে একটা শর্ট কুর্তি আর প্যান্ট গলায় স্কার্ফ পেছিয়ে রেখেছে৷ চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে একপাশে এনে রেখেছে৷ মুখও ভালো করে দেখা যাচ্ছেনা তবে আহিলের ডাউট হচ্ছে এটাই রিংকি৷ তাই সে তার ডাউট দূর করার জন্য মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলো৷ মেয়েটার মুখ দেখে নিশ্চিন্ত হলো আহিল না এটা রিংকিই৷

“ম্যাডাম চলুন৷ ”
আহিলের কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো রিংকি৷ সে ভাবতেই পারছেনা আহিল ওকে নেওয়ার জন্য এসেছে৷
.
কী হলো চলো৷
.
রিংকি আহিলের সাথে চলে গেলো৷ আহিল কারে উঠে ড্রাইভিং সিটে বসেছে আর রিংকি ব্যাক সিটে৷

“এই যে মিস আমাকে কী আপনার ড্রাইভার মনে হয়৷ ব্যাক সিটে বসেছো কেনো ফ্রন্ট সিটে এসে বসো৷

রিংকি যেন এটাই চাইছিলো৷ আহিলের বলতে দেড়ি ওর ফ্রন্ট সিটে যেতে দেড়ি নেই৷ তারাহুরো করতে গিয়ে একেবারে হোঁচট খেয়ে আহিলে উপরে পরে গেলো৷ রিংকি তারাতাড়ি সরে যেতেই ওর চুলে টান অনুভব করলো৷ ভালো করে তাকিয়ে দেখলো ওর চুল আহিলের শার্টের বোতামের সাথে আটকে গেছে৷ রিংকি আলতো করে ওর চুল ছাড়াচ্ছে৷ পরে যেতে নিতেই আহিল রিংকির কোমড় ধরে আবার উপরে উঠালো৷ রিংকি তো লজ্জায় লাল নীল হয়ে গেছে৷ লজ্জা মাখা মুখ নিয়েই সে আহিলের দিকে তাকালো৷ আহিলও ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ রিংকি তারাতাড়ি চুল ছাড়িয়ে সিটে বসে পরলো৷ আহিলও একটা মুচকি হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো৷

অনেকবারই রিংকি আর আহিলের চোখাচোখি হয়েছে৷ দুইজন দুজনের দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে৷ চোখে চোখ পরার সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিচ্ছে৷ এসব করতে করতেই ওরা জাফলং পৌঁছে গেলো৷
🍁🍁🍁🍁
রিংকিকে দেখে আমি আর সামু দু’জনেই দৌড়ে গেলাম৷ আয়েশা আপু আর অদ্রিতা আপুও ভিষন খুশি৷আপুদেরও রিংকির কথা খেয়াল ছিলোনা৷ আদনান ভাইয়ারা গেছে বিরিয়ানি আনার জন্যে৷কিছুক্ষন হেটে হেটে দেখার পর সবাই বসে পরলাম জাফলংয়ের বড় বড় পাথরের উপরের৷ আমি একটা জিনিস অনেক্ষন যাবত খেয়াল করছি রিংকি খুব লজ্জা পাচ্ছে৷ আশ্চর্য এতো লজ্জা পাওয়ার কী আছে৷ আগে তো এতো লজ্জা পেতে দেখেনি৷

বিরিয়ানির প্যাকেট আনা হয়েছে ৫টা কিন্তু আমরা মানুষ ৯জন৷ শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে একটা দুজনে ভাগ করে খাবে৷ আমি আর আদিব ভাইয়া, আদিল ভাইয়া আর আয়েশা আপু,আদনান ভাইয়া আর সামান্তা,আহিল ভাইয়া আর রিংকি৷আর অদ্রিতা আপু একা একটা৷ যদিও নিজের ভাগ থেকে আমাদেরও দিয়েছে৷
সবাই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে শুধু আমি ছাড়া৷আমি মাংস নিতে যাই ওমনি আদিব ভাইয়া মাংস নিয়ে মুখে পুরে ফেলে৷ বিরিয়ানি মাংস ছাড়া খেতে ভালো লাগে নাকি৷ সবার দিকে একবার চোখ বুলালাম৷ ওরা সবাই কতো সুন্দর করে খাচ্ছে৷ আয়েশা আপু আদিল ভাইয়াকে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে,একজন আরেকজনকে মাংস বেছে দিচ্ছে৷ সামান্তা মাংস পেলে আদনান ভাইয়াকে দিচ্ছে আর ভাইয়া পেলে সামান্তাকে দিচ্ছে আহিল ভাইয়া আর রিংকির সেম অবস্থা৷ অথচ আমাকে দেখো আদিব ভাইয়া সব মাংস খেয়ে আমাকে দারচিনি,এলাচি,তেজপাতা,কাঁচামরিচ বেছে দিচ্ছে৷ এরকম ভাই থাকলে শত্রুর দরকার পরেনা৷আমি রেগে আমার এটু হাত দিয়েই আদিব ভাইয়ার চুল টানতে শুরু করলাম৷ ইচ্ছে মতো টেনে তারপর ছাড়লাম৷ আদিব ভাইয়া চুলে হাত দিয়ে নাকের কাছে এনে ঘ্রাণ শুকলেন৷

“এমা আল্লাহ্ গো৷ আমি এত দামী জেল দিসিলাম চুলে এখন দেখি আমার চুলে খালি বিরিয়ানির গন্ধ করে৷
.
মাংস যে খাইসো ওইটার প্রমাণ৷
🍁🍁🍁🍁🍁
খেয়েদেয়ে আবারও আমরা জাফলংয়ের চারিদিক দেখছি৷ কি সুন্দর পাথর আর সবুজে ঘেরা পাহাড়৷ ইন্ডিয়াও দেখা যায়৷ অনেক স্টুডেন্টদেরও দেখা যাচ্ছে হয়তো স্কুল থেকে থেকে পিকনিক করতে এসেছে৷ রিংকি পানির নিচে পাথর দেখে ধপাস ধপাস করে পাথরে হাটতে লাগলো৷ আমি আর সামু ওর পিছু পিছু আছি৷ আহিল ভাইয়া ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছে৷ রিংকি হাটঁতে হাঁটতে হিল জুতো মুচরে ধপাস করে পরে গেলো পানিতে৷পাথরও ছিলো ব্যাথা তো পেয়েছে নিশ্চয়৷
রিংকিকে দেখে আমি আর সামু হেসে কুটিকুটি৷ আজ খালি একের পর এক পরছেই পরছে৷ ধপাস ধপাস,ধপাস ধপাস৷ রিংকি বাকি ছিলো এবার রিংকি ও পরে গেলো৷ রিংকি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ ওর এমন চাহনি দেখে আমরা আরও বেশি হাসছি৷
আহিল ভাইয়া দৌড়ে এসে আমার কাছে ক্যামেরা দিয়ে চলে গেলেন রিংকির কাছে৷ তারপর কোন কিছু না ভেবে কোলে তুলে নিলো ওকে৷রিংকি লজ্জায় মুখ লুকালো আহিল ভাইয়ার বুকে৷ আর ভাইয়ার মুখেও কেমন এক হাসি৷ আমি আর সামু তো অবাক, হায় আল্লায় আজ এসব কী হচ্ছে৷ আমার তো মনে হচ্ছে সিলেট এসে কোনো এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে৷

চলবে♥️

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ আপনাদের কথা রাখতে তো আমি দুই পার্ট দিলাম এবার আপনারা আমার কথা রাখতে কী একটু গঠনমূলক মন্তব্য করবেননা🥺]
চলবে♥️

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ আজকের পার্ট কার কেমন লেগেছে একটু বলবেন দয়া করে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here