সুপ্ত অনুভূতি পর্ব ৯+১০

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_৯
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

আহিল ভাইয়া পাড়ে এনে রিংকিকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে আশেপাশের সবার দিকে একবার চোখ বুলালেন৷ কয়েকজন ছেলেরা রিংকির দিকে কেমন করে তাকাচ্ছে৷ আহিল ভাইয়া ব্যাপারটা বুঝে ভাইয়ার গা থেকে শার্ট খুলে রিংকির গায়ে জড়িয়ে দিলেন৷ রিংকি লজ্জা মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি আর সামু একেবারে বেকুব বনে গেছি৷ কী হচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছেনা৷

আরুহিঃওরে সামুরে আমারে কেউ ধর এতো ভালোপাশা দেখে আমি যে অজ্ঞান হইয়া যামু৷
.
সামান্তাঃহোতা হে কিয়া৷
.
আহিল ভাইয়া রিংকির কাছ থেকে এসে আমাদের সামনে দাঁড়ালেন তারপর কোমড়ে হাত গুজে বললেন,
বেশি পাকনা হয়ে গেছিস তোরা৷ দেখলি কিভাবে পানিতে পড়ে গেলো৷ তোরা তো আর ওকে তুলবিনা তাই আমিই তুললাম৷
.
সামন্তাঃ বুঝি বুঝি৷ মায়ের চাইতে মাসির দরদ বেশি হুহ৷
.
আহিল ভাইয়া কিছু না বলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো৷
আরুহিঃএই বেটা বেটির মনে আবার কি লাড্ডু ফুটছে আল্লাহই জানেন৷
🍁🍁🍁🍁
আয়েশা আপু ওরা সবাই চলে গেছে৷ দুটো গাড়ি আনাতে বেশ সুবিধাই হয়েছে৷এখন আমি,সামু,রিংকি,আহিল ভাইয়া যাবো৷ আমি আর সামু ব্যাক সিটে এসে বসেছি৷ রিংকি আমাদের কাছে আাসতে চাইলে ওকে ফ্রন্ট সিটে আহিল ভাইয়ার কাছে পাঠিয়ে দিলাম৷
আমি আর সামু এদেরকে ফলো করছি৷ কী সুন্দর একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে৷ চোখে চোখ পরতেই রিংকি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিচ্ছে৷

আরুহিঃচোখে চোখ যেই পরেছে এন্টার্নটিক নড়েছে৷
.
সামান্তাঃহৃদয়ের কানেকশনে তরতাজা সিগনাল৷
.
আহিল ভাইয়া আমার আর সামুর কাউয়া কন্ঠ মার্কা গান শুনে বিরক্তির সহিত বললেন,এটা কীরকম গান আর ওই তোরা ওতো ফলো করছিস কেনো বলতো?
.
আরুহিঃওহো বেশ করেছি ফলো করেছি করবোইতো৷
.
আহিলঃযা পারিস কর৷
🍁🍁🍁🍁
রিসোর্টে আসার পর থেকেই খেয়াল করছি রিংকি কেমন মিটিয়েমিটিয়ে হাসছে৷ আমরা কিছু বললে পাত্তাই দিচ্ছেনা৷

আরুহিঃবুঝলি সামু,এই বেটি আহিল ভাইয়ার প্রেমে পড়েছে৷ আর আহিল ভাইয়াও৷
.
হুম আমিও সেটাই ভাবছি৷ তবে রিংকিকে ভাবী বানাতে আমার কোনো আপত্তি নেই৷
.
আমাকে ভাবী বানাতে আপত্তি আছে??(আনমনে)
.
রুহি আর ইউ সিরিয়াস এটা তুই বলছিস৷ আই জাস্ট কা’ন্ট বিলিভ দিস ইয়ার৷
.
আমার যখন খেয়াল হলো আমি কী বলে ফেললাম তখুনি আমার মনে তক্তা+বাঁশ দিয়ে বারি শুরু হয়ে গেলো৷ আমি কী বললাম আমি নিজেই জানিনা৷
.
ধুর আমি সেভাবে বলিনি৷
.
হুম৷
🍁🍁🍁🍁
পরেরদিন আবার সবাই বেড়িয়েছি চায়ের বাগান ঘুরার জন্যে৷আমি, আহিল ভাইয়া,রিংকি,সামু আমরা একসাথে৷ আর বাকি সবাই এক সাথে৷ রিংকি আসার পর থেকেই আহিল ভাইয়া আমদের সাথে সাথে আছে৷ আমরা চায়ের বাগানে ঘুরার সাথে সাথে চা গাছের কুড়িও চুরি করছি আর ব্যাগে ঢুকাচ্ছি৷
হঠাৎই একটা ছোট মেয়ের দিকে চোখ পরলো মেয়েটি এক দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে৷

আরুহিঃও আল্লাহ্ গ মেয়েটা কী চা বাগানের মালিকের মেয়ে নাকি৷
মেয়েটি কপাল কুচকে কোমড়ে হাত দিয়ে এগিয়ে এসে বললো,,
“তোমরা ছা ফাতা নেও কেল্লাগি৷ ছা ফাতা দিয়া কিতা করতায় তোমরা৷

রিংকি এগিয়ে এসে ভেংচি কেটে বললো,,
“কেল্লাগি আবার ছা খাইবার লাগি ছা ফাতা নেই৷ তর কিতা অইছে গ৷ তুই কিতা মালিকের ফুরি নাতা৷
.
আমি আর সামু রিংকির সিলেটি ভাষা শুনে হাসতে হাসতে শেষ৷

“ওরে সিলেটিরেরররর😂😂
.
আহিল ভাইয়া ফোন বের করে রিংকির কথা ভিডিও করছে আর হাসছে৷

ওই তুমরা ইখান থেকি যাও খইলাম৷ নাইলে জানো নি কিতা করমু৷ সকলরে ডাক দিয়া ফিটা খাইয়াইমু৷
.
কত শখ৷ ওই যা ইখান থেকি আমরা কিতা বেশি ছা ফাতা নিতাছি নাতা কয়েকটা নিতাছি৷
.
ইতা দিয়া তোমরা কিতা করবায় গ৷
.
ইতা দিয়া আমরা ছা খাইমু গ৷
.
ইভাবে খায় নাতা৷
.
তে কিভাবে খায়৷
.
ওতা ফাতারে মিশিনও দিবো এরপরে মিশিন দিয়া গুরা গুরা কইরা ফাওডারের মতো বানাইবো৷ এরপরে ছা পাতি বানাইয়া ছার মাঝে দিলে কালার ওইবো৷
.
ছিনি গ আর কওয়া লাগতনা৷ ওখন আমরারে একটু সাধ দে ফাতা তুলাত৷
.
আইচ্ছা৷
মেয়েটি চায়ের কুড়ি ভাঙতে ভাঙতে বললো,

‘আইচ্ছা তোমরা কোনানের৷ কোনান থেকি আইসো৷ তোমার নাম কিতা৷ আর ওই পোলা কিতা তোমার জামাই নাতা৷
.
মেয়েটির কথা শুনে সামু হাসতে হাসতে মাটিতে পরে গেছে৷ আদিল ভাইয়াও মুখ টিপে হেসে তাকিয়ে আছে৷

রিংকি আমাদের সবার দিকে একবার তাকিয়ে বললো,, “আচ্ছা এখানে তো আরও দুজন আছে এদেরকে তো বললি না আমায় কেন বললি৷ আর উনি আমার জামাই না৷
.
না মানে দেখছি উনি তোমার ছবি তুলতাছইন আর হাসতাছইন৷
.
আর এরলাগি আমার জামাই অইগেছে৷
.
আইচ্ছা কও গ তোমরা কোনান থেকি আইসো৷
.
আমরা ঢাকা থেকে আইছি৷
.
ওহ আইচ্ছা৷
.
তে তোমার বাড়ি কই??
.
আমরার বাড়ি সুনামগঞ্জ ওখানো বেরানিত আইসি ঘুরবার লাগি৷ আইচ্ছা আমি যাই নাইলে আম্মু মারবা৷
.
আইচ্ছা যা৷
.
আহিল ভাইয়া রিংকির আর মেয়েটির কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ৷ তারপর হাসি বন্ধ করে বললেন,
আরেহ্ বাহ রিংকি তুমি তো খুব সুন্দর করে সিলেটি বাসায় কথা বলো৷ কোথায় থেকে শিখলে৷
.
ওই আমার প্রাইমারি স্কুলের এক ফ্রেন্ড সিলেটের ছিলো তার কাছ থেকেই শিখেছি৷
.
হুম খুব ভালো৷
.
সামান্তাঃরিংকি তোর বিয়ে হলে ভাইয়ার সাথে সিলেটি ভাষায় কথা বলিস৷
.
মানে??
.
কিছু না এমনি৷

আমরা চায়ের বাগান থেকে বেড়িয়ে গেলাম সবাই৷ এবার বিছানাকান্দি যাবো৷
🍁🍁🍁
আরুহিঃও আল্লাহ্ গ বিছানাকান্দি তো আরও সুন্দর৷ কী সুন্দর চারিদিকে পাহাড় পাথর৷ পানির উপরে আবার নৌকাও আছে৷
.
সামান্তাঃরুহি দেখ এতো কম পানিতে আবার নৌকাও আছে৷।
.
আদনান ভাইয়া আমাদের সবাইকে নিয়ে নৌকায় উঠলেন৷ পাথরের উপরে কী সুন্দর স্বচ্ছ পানি৷নৌকা পানির মধ্যেখানে আসতেই সামান্ত বলে উঠলো,,
“এমা এখানে এতো কম পানি৷”
কথাটা বলে সামান্তা পানিতে নেমে গেলো৷
.
সামান্তাঃও আল্লাহ গ এখানে তো কোমড় পানি এখন কী করবো আমি৷এ্যা এ্যা এ্যা৷
.
সামান্তার অবস্থা দেখে সবাই পেটে হাত দিয়ে হাসছে৷ ওদের হাসির জন্যে নৌকাও কাঁপছে৷ সামান্তা কোমড় পানিতেই দাঁড়িয়ে আছে৷ আদনান ভাইয়া হাত বাড়িয়ে দিলেন যাতে ভাইয়ার হাতে ধরে উঠে আসে৷ সামান্তা হাত ধরে নৌকার পাশে পা রেখে ভর দিয়ে উঠতেই সবাই নৌকা উল্টে পরে গেলো৷ আদনান ভাইয়া সামান্তাকে নিয়ে একেবারে পানির নিচে৷

সামান্তাঃও আমার আল্লাহ গ৷ আমি যে পানি খাইসি৷
.
আহিলঃরোমান্স করার আর জায়গা নাই পানির নিচে৷
.
আদিবঃআজ রোমান্স করার মানুষ নাই বলে৷

আদিব ভাইয়ার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো৷
ভাইয়ারা সবাই সাতার কাটছে আয়েশা আপু,অদ্রিতা আপু আর রিংকিও সাতার কাটছে৷ আমি আর সামান্তা শুধু নৌকায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছি৷
এখন প্রতিযোগিতা হবে কে কত দূর পানির নিচে ডুব দিয়ে যেতে পারে৷
সবাই ডুব দিয়েছে৷ আহিল ভাইয়া বেশি দূর যেতে পারলোনা শ্বাস নেওয়ার জন্য পানির উপরে উঠে এলো৷ রিংকি ও ডুব দিয়ে সাতার কাটছে৷ পানির নিচে কারও সাথে ধাক্কা খেয়েছে বলে আবার পানির নিচ থেকে উঠে এলো৷ ওর থেকে এক আঙুল দূরে আহিল দাঁড়িয়ে আছে৷ আর নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ রিংকি আহিলের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো৷আহিল ওর দিকে যেভাবে তাকিয়ে আছে এতে ওর মনে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে৷

আদিল ভাইয়া পানির উপর দিয়েই সাতার কেটে নৌকার কাছে আসছেন৷ হঠাৎ ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে আমি আদিল ভাইয়ার উপরে পরে গেলাম৷ ভাইয়া আমার কোমড় দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন৷ আমি সবার দিকে একবার তাকিয়ে সামুর দিকে তাকালাম সে নৌকায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দাঁত বের করে হাসছে৷ আর চোখ টিপ দিচ্ছে৷ বজ্জাত মাইয়া আমারে এভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে এখন দাঁত বের করে হাসছে৷ ইচ্ছে তো করছে সিলেটের সব পাথর এর দাঁতে ছুড়ে মারি৷

“রুহি তোকে ভেজা অবস্থাতে কিন্তু খুব সুন্দর লাগে৷” আদিল ভাইয়ার এমন কথা শুনে তারাতাড়ি সরে গেলাম আমি৷ ভাইয়া এমন কথা বলবে কখনো ভাবিনি৷ ভাইয়ার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম ভাইয়া কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে৷ আমি সামান্তার হাত ধরে নৌকায় উঠে পরলাম৷ আদিল ভাইয়া পানিতে থেকেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম৷
#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_১০
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

বিছানাকান্দির বড় বড় পাথরের উপরে বসে আছি সবাই৷ ভেজা শরীর নিয়ে তো আর গাড়ি করে যেতে পারবোনা৷ কাপড় কিছুটা শুকালে তারপর যাবো৷ আদিল ভাইয়া আমার পাশে একটা পাথরে বসে আছে৷ আমি একবারো ভাইয়ার দিকে তাকাইনি৷ সামান্তা আর আদনান ভাইয়া একজন আরেকজনের দিকে দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে৷ রিংকি আর আহিল ভাইয়ারও সেম অবস্থা৷
“আশ্চর্য এদের মনের সুপ্ত অনুভূতিগুলো কী তাহলে আস্তে আস্তে ভালোবাসায় রুপান্তরিত হচ্ছে৷”

আদিব ভাইয়া পাথরের উপর বসে বসে পানিতে ঢিল ছুড়ে মারছে৷ আর অসহায় দৃষ্টি নিয়ে পানির দিকে তাকিয়ে আছে৷

আরুহিঃভাইয়া পানিতে কিন্তু কোনে জলপরী নেই যে তোমার ঢিল ছুড়া দেখে পানির উপরে এসে তোমাকে দেখে পাগল হয়ে তোমার গলায় ঝুলে পড়বে৷
.
আদিবঃসব সময় বাজে কথা বলিস কেনো৷ একটা গার্লফ্রেন্ড পাওয়ার জন্য দোয়া ওতো করতে পারিস৷ ভালো করে চেয়ে দেখ আমাদের আশেপাশে কতো রোমান্টিক কাপল ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ (আদনান ভাইয়াদের দিকে ইশারা করে৷)
.
আরুহিঃহুম সেটা আর বলতে৷
🍁🍁🍁🍁🍁
গাড়িতে সবাই বসে আছি৷ ফ্রন্ট সিটে বসেছে আহিল ভাইয়া আর রিংকি৷ আর ব্যাক সিটে আমি,আদিব ভাইয়া সামান্তা আর আদনান ভাইয়া৷
আদিব ভাইয়া এদের সবার দিকে মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে৷

আরুহিঃকী হয়েছে ভাইয়া??(ফিসফিসিয়ে)
.
আদিবঃআজ কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই বলে৷ দেখ এরা কী সুন্দর একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে৷
.
আরুহিঃচিন্তা মাত কারো ভাইয়া৷ খুব শীগ্রই তোমার গার্লফ্রেন্ড আসতে চলেছে৷
🍁🍁🍁🍁🍁
রাত দশটা বাজে৷ সামান্তা আর রিংকি গল্প করছে৷ আর আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে রিসোর্টের বাইরের দৃশ্যটা দেখছি৷ চাঁদের আলোতে রিসোর্টের চারপাশ আরও সুন্দর লাগছে৷ নিচে তাকাতেই দেখলাম কে যেন দাঁড়িয়ে আছে সবুজ ঘাসের উপরে৷ সাদা শার্ট কালো জিন্স এই দুই কালার তো আদিব ভাইয়া পড়ে৷ ভাইয়া এতো রাত্রে এখানে কী করছে নিশ্চয় গার্লফ্রেন্ডের ভুত ঘাড়ে চেপেছে৷

আমি নিচে চলে গেলাম ভাইয়ার কাছে৷ পিছন থেকে ভাইয়ার কাঁধে হাত রাখলাম আমি৷ ভাইয়াও আমার হাতে হাত রেখে ঘুরে আমার দিকে তাকালেন৷

একি এটাতো আদিল ভাইয়া৷

আদিলঃরুহি তুই এতো রাত্রে এখানে কী করছিস??
.
কই এতো রাত দেখতে পাচ্ছোনা রিসোর্টের মানুষগুলো এখনও জীবিত আছে৷
.
তো তোর কী মনে ওরা মরে যেত?
.
আমি ঘুমানোর কথা বলছি৷ ওরা ঘুমায়নি৷
.
ভাইয়া আমার হাত উনার কাঁধ থেকে নামিয়ে উনার দুইহাত দিয়ে মুঠো করে ধরলেন৷

“রুহি তুই আমাকে ক্ষমা করেছিস? দেখ আমি আর এমন কোনদিন করবো না৷তোর কথা না বলা মেনে নিতে পারছিনা আমি৷
.
আমারও মনে হচ্ছে ভাইয়াকে ক্ষমা করে দ্বিতীয় বার সুযোগ দেওয়া উচিত৷আমি ভাইয়ার হাতের উপরে হাত রেখে মুচকি হাসলাম৷ ভাইয়া উনার দু-হাত আমার কানের দুপাশে রেখে কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলেন৷ আমি এখনো যেখানে দাঁড়িয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি৷ ভাইয়ার আচরনগুলো খুব ভাবাচ্ছে আমায়৷ কী হয়েছে ভাইয়ার আগেতো এমন করতে দেখিনি কোনদিন৷ আমারও কেন জানিনা খারাপ লাগেনি৷ কপালে হাত রেখে মুচকি হেসে চলে এলাম সেখান থেকে৷
🍁🍁🍁
সামান্তা আমি তোকে কিছু বলতে চাই বস আমার পাশে
.
ভাইয়া তুমি এতো রাত্রে আমাকে ডেকে আনলে কী দরকার বলোতো৷
.
কই বেশি রাত হয়নি মাত্র ১০টা বাজে সবাই জেগে আছে৷
.
কী দরকার বল??
.
আদনান পিছন ঘুরে পকেটে দুইহাত গুজে আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,,

“সামু আমি তোকে ভালোবাসি৷তোর জন্য আমার মনে যে সুপ্ত অনুভূতিগুলো ছিলো সেগুলো সিলেটে এসে ভালোবাসায় পরিনত হয়েছে৷কারণ সিলেটে এসে আমরা প্রায়ই খুব কাছাকাছি থেকেছি৷ আর কালই আমরা সিলেট থেকে চলে যাচ্ছি৷ তাই আমার মনে হলো সিলেটে থাকতেই আমার মনের কথাটা তোকে বলি৷আর আমি এটাও জানি যে তুইও আমাকে ভালোবাসিস৷ আর আমাকে মাফ করিস আমি তোকে বোনের চোখে দেখতে পারলাম না৷

সামান্তা মাথা নিচু করে সব শুনছে৷ কিছু বলতে পারছেনা৷ওর মন বলছে আদনানের কথায় সাড়া দিতে কিন্তু মুখ খোলে কিচ্ছু বলতে পারছেনা৷
আদনান সামান্তার দুই কাঁধে হাত রেখে রাখলো,,
.
সামু ইউ সে সামথিং৷আমি জানি আমি যা করছি সেটা ঠিক না কিন্তু মনকে কে বুঝাবে৷ মন যে কারও কথা শুনেনা৷
.
তবুও সামান্তা কিছু বলছেনা মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে আছে আদনান সামান্তার দিকে একবার তাকিয়ে চলে যেতে নিতেই
সামান্তা মুখ তুলে তাকালো তারপর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,,

ভ,,ভাইয়া আমিও তোমাকে ভালোবাসি অনেক
আদনান মুচকি হেসে চলে গেলো৷ সামান্তা এক জায়গাই দাঁড়িয়ে আছে আর মিটিয়েমিটিয়ে হাসছে৷
🍁🍁🍁🍁
রুমে কেউ নেই বলে রিংকি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নাচছে৷ওর নাচার মধ্যেই কোথা থেকে আহিল চলে এলো৷ রিংকির এমন অবস্থা দেখে সে তারাতাড়ি পিছন ফিরলো৷ রিংকি একবার নিজের দিকে তাকিয়ে আহিলের দিকে তাকালো তারপর তারাতাড়ি খাটে রাখা ওরনা গায়ে দিয়ে আহিলের দিকে এগিয়ে গেলো৷

“আহিল ভাইয়া আপনি এখানে৷
.
ওই আসলে রুহি তোমাকে নিচে ডাকছে৷
.
ও আচ্ছা চলুন৷
.
আহিল আর রিংকি নিচে গেলো কিন্তু কোথাও আরুহি বা সামান্তা নেই৷

“ভাইয়া এখানে তো কেউ নেই৷
.
আমি এখানে তোমাকে কাউকে খুঁজার জন্য আনিনি৷ আমার মনের অনুভূতিগুলোকে খুঁজার জন্য এনেছি৷
.
ভাইয়া এসব আপনি কী বলছেন৷
.
হুম আমি ঠিকই বলছি,,আচ্ছা রিংকি আমাকে দেখলে কী তোমার অন্যরকম ফিলিং হয় না৷ আমি জানি হয়৷ আমার মনে যে অনুভূতিগুলো আছে সেই অনুভূতিগুলো তোমার মধ্যেও আছে
.
“আপনি আমাকে এসব কেন বলছেন৷
.
কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি শুনেছো তুমি৷ আমি তোমাকে ভালোবাসি৷ এতদিন বুঝতে পারিনি কিন্তু এই দুইদিন ধরেই আমার মনে হচ্ছে তুমি ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ৷ তোমার কি মতামত তুমি সেটা জানিয়ো৷ আমি তোমাকে চাপ দিবোনা আমাকে তুমিও ভালোবাসো কথাটা বলার জন্য৷ তুমি টাইম নাও যত টাইম লাগে৷

রিংকির আহিলে কথা শুনে চোখে পানি চলে এসেছে যাকে ছয় মাস ধরে ভালোবেসে এসেছে আজ সেই ভালোবাসার কথা বলছে৷ রিংকি গুটিগুটি পায়ে আহিলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো৷

“যদি বলি আমার টাইম নেওয়ার দরকার নেই আমি আজই আমার মতামত বলবো তাহলে???
.
আহিল কথাটা শুনে রিংকির দিকে তাকিয়ে রইলো৷

রিংকি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,আমিও আপনাকে ভালোবাসি আপনার অনেক আগে থেকেই৷ কথাটা বলে সে একমুহূর্তও না দাঁড়িয়ে দৌড়ে চলে গেলো৷ আহিল চাঁদের দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে মারলো৷
🍁🍁🍁🍁🍁
রুমে এসে পায়চারি করছি আমি৷ রিংকি আর সামুর ব্যাপার কিছুই মাথায় ঢুকছেনা৷ দুইটা খাটের দুইদিকে শুয়ে আছে আর মাঝেমধ্যে মুচকি হাসছে৷

আরুহিঃএই তোদের কী হইসে বলতো৷
.
সামান্তাঃআগে বল তোর কী হয়েছে??
.
আরুহিঃআব আমার ক,,কই কিছু হয়নি তো৷
.
সামান্তাঃআমরা সব দেখেছি তাই লুকিয়ে কোন লাভ নেই৷ আদিল ভাইয়া তোকে প্রপোজ করেছো তাইনা৷ শুন রুহি আজ আমার কাছে মনে হচ্ছে প্রপোজ ডে কারন আমাদের চার ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাই আজকে প্রপোজ করেছে৷
.
আরুহিঃমানে??
.
সামান্তাঃমানে হলো আহিল ভাইয়া রিংকিকে প্রপোজ করেছে আর আদনান ভাইয়া আমাকে এন্ড আদিল ভাইয়া তোকে৷
.
আরুহিঃতোরা ভুল ভাবছিস৷ আমাদের মধ্যে তেমন কিচ্ছু হয়নি আর ভাইয়াও আমায় প্রপোজ করেনি আর কেনই বা করবে৷ আহিল ভাইয়া আর আদনান ভাইয়া তোদের প্রপোজ করেছে কারন ওরা তোদের ভালোবাসে কিন্তু আমরা একজন আরেকজনকে ভালোবাসিনা৷
.
রিংকিঃকিন্তু আমরা যে দেখলাম তোরা একজন আরেকজনের হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে ছিলিস৷
.
আমি ওদের দুটোকে সব কিছু খুলে বললাম৷ সামু একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,,বুঝলাম আদিল ভাইয়ার মনে তোর জন্য ফিলিংস আছে শুধু সেটাই না ভাইয়া তোকে ভালোবাসে কিন্তু তুই সেটা বুঝতে পারছিসনা৷
.
আরুহিঃকচু বাসে এসব একদম না৷ঘুমুচ্ছি আমি৷
🍁🍁🍁
আদনান আর আহিল আদিল,আদিবকে ওদের প্রপোজের কথা বলছে৷ আদিল ওদের কথা শুনে হাসছে কিন্তু আদিব ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে আছে৷ শেষে না পেরে হাতের কাছে বাটি ছিলো সেটাই আহিলের মাথায় ছুঁড়ে মারসে৷

আদিবঃওই চুরেল তোরে না কইসিলাম আমরা একসাথে প্রেম করবো তাহলে এবার তুই আমারে রেখে নিজে প্রেম করছিস৷ মীর জাফর কোথাকার৷

আহিলঃদেখ ভাই অনেকদিন ধরে তোর লাগি অপেক্ষা করছি কিন্তু তোর তো কোন মেয়েকে পছন্দই হয়না৷
.
আদিবঃতোরা সব সিংগেল থেকে মিংগেল হইয়া ডাবল হয়ে যাবি৷ আর আমি সিংগেল সিংগেলই থাকবো৷
.
আদিলঃশুধু তুই না আমিও সিংগেল আছি৷ ওরা দুজন একসাথে প্রেম করবে আর তুই আর আমি একসাথে৷

চলবে♥️
চলবে♥️

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here