সুপ্ত অনুভুতি পর্ব ১৫+১৬

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_১৫
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম রিংকি এক হাত দিয়ে তার চোখ মুচছে আরেক হাত দিয়ে ব্যাগে কাপড় ঢুকাচ্ছে৷
রিংকির এই অবস্থা কেনো

আরুহিঃরিংকি কী হয়েছে তোর? তুই কাপড় কেনো ব্যাগে ঢুকাচ্ছিস? আজ চলে যাবি নাকি? কিন্তু তোর তো আরও চার পাঁচ দিন পারে যাওয়ার কথা৷
.
রিংকিঃছাড় রুহি আমি আর তোদের বাড়িতে থাকবোনা৷ আমি এক্ষুনি আমার নিজের বাড়ি চলে যাচ্ছি৷
.
আরুহিঃআহিল ভাইয়া জানে যে তুই চলে যাচ্ছিস৷
.
রিংকিঃসে জানলেই কী আর না জানলেই কী৷
.
আরুহিঃদেখ রিংকি আজ বিয়ে তাই এসব পাগলামু একদম করিস না৷ আর কী হয়েছে সেটাতো এটলিস্ট বলবি৷
.
রিংকিঃকী বলবো আমি৷ আমি যে কাল রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলাম সেটা আদিব ভাইয়া ভিডিও করেছে সে নাকি দেওয়ালের ওপারে ছিলো৷ সেটা দেখে সবাই হাসছে আদনান ভাইয়া আমাকে যেখানে দেখছে সেখানেই বলছে ধপাস ধপাস৷ তাছাড়াও একজন আমাকে খুব কটু কথা শুনিয়েছে৷
.
আরুহিঃআমি দেখছি৷ কিন্তু কিছুতেই আজ বাড়িতে যাবিনা৷
.
ওকে এতো জোড় কেনো করছিস রুহি৷ ও যাবেনা শুধু এ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য এসব করছে৷
.
আরুহিঃএসব তুমি কী বলছো রিমু আপু৷ ও কার এ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য এসব করবে৷

রুহিঃকার আবার আহিলের৷ আমি জানি সব কিছু৷ আর কী বলতো ও এতো বড় বাড়ি দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি তাইতো আহিলের গলায় ঝুলে পড়লো৷ আর আহিলেরও বা কী চয়েজ একেই চয়েজ করলো৷ ও কী আমার থেকে সুন্দরী নাকি৷
.
আরুহিঃহ্যাঁ সুন্দর তোমার চেয়ে শতগুণ সুন্দর নিজেকে আয়নায় দেখেছো কখনো পুরা বান্দরনির মতো লাগে তোমাকে৷
.
রিমুঃউফফ কাম অন রুহি তোর ঝগড়া করার স্বভাবটা একদমি গেলোনা৷ কোথায় এতদিন পর আসলাম একটু ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করবি তা না বান্ধবীর পক্ষ নিয়ে ঝগড়া করছিস বাই দ্যা ওয়ে আমি আদির কাছে যাচ্ছি দেখি আমার জান্টুসটা কী করছে৷
.
আদিল ভাইয়ার কথা শুনে ধক করে উঠলো আমার বুক৷ এই রিমু আপু যখন এসেছে তখন নিশ্চয় কোনো গন্ডগোল পাকাবে৷

রিংকিঃদেখলি রুহি তোর ফুফুর মেয়ে আমাকে লোভী মিন করলো৷ আমি থাকবোনা এখানে৷
.
আরুহিঃরিংকি রিমু আপু এমনই৷ তুই থাক আর ওকেও জ্বলতে দে৷
🍁🍁🍁🍁
দুপুর ১২টা বেজে ২০ মিনিট সবার সাজগোছ কমপ্লিট৷ আমরা লেহেঙ্গা পড়েছি আর ছেলেরা শার্ট কোট৷ সবাইকেই খুব সুন্দর লাগছে৷ রিমু আপু তার লেহেঙ্গা ধরে ধরে সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে৷ যেনো বুঝা যাচ্ছে হাঁটু পানির মধ্যে হাঁটছে৷
এসেই তার ভাব মারা শুরু হয়ে গেলো৷

রিমুঃআদিল আমাকে কেমন লাগছে৷
.
আদিলঃএক্সকিউজ মি আমার কাজ আছে আমি ঔদিকে যাচ্ছি৷
..
রিমুঃএই আদিলটা সব সময় আমার সাথে এমন করে৷ আদনান আমাকে কেমন লাগছে৷
.
আদনানঃওয়াও ইউ আর সো,,,সামান্তার চোখ রাঙানো দেখে আদনান একটা মেকি হাসি দিয়ে বললো,,একচুয়েলি ইউ আর সো আগলি৷
.
রিমুঃওয়াট৷ আমি আর আগলি ওহ মাই গড৷ আর ইউ কিডিং উইথ মি আদনান৷
রিমু আহিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে রিংকির দিকে তাকিয়ে আছে৷ রিমু বিরক্তি নিয়ে রিংকির দিকে এগিয়ে গেলো৷

রিংকিঃএই মেয়ে তুমি এখনও যাওনি৷
.
রিংকিঃস্যরি এটা আপনার বাড়ি নয় যে আপনি বললেই আমি চলে যাবো৷
.
আরুহিঃও কেনো যাবে ও আমাদের গেস্ট সো রেসপেক্ট হিম৷
.
সামান্তাঃতোমার এতো সমস্যা কেনো হচ্ছে বলোতো আমায়৷ আসলে কী চাও তুমি এটলিস্ট বলতো৷ এই জন্য শুধু মাত্র এই জন্য আমরা কেউ তোমাকে পছন্দ করিনা৷ তুমি আসলেই আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে একটা সমস্যা সৃষ্টি করো৷ যেমন আছো ঠিক তেমন থাকবা৷
.
রিমুঃওহ্ কাম অন সামু এখন কী তোর কাছ থেকে আমায় এডভাইস নিতে হবে নাকি৷ তুই ও না৷ তোর এই সাধারন বান্ধবীর জন্য আমার সাথে তর্কে জড়াচ্ছিস৷
.
আহিলঃকাকে তুমি সাধারন বলছো রিমু আমার রিংকি কিন্তু সাধারণের মধ্যেই অসাধারন৷ নেক্সট টাইম যদি ওর সাথে এভাবে কথা বলতে দেখি তাহলে আমার চাইতে কেউ খারাপ হবেনা গট ইট৷
.
রিমুঃহলো তো তোদের এবার শান্তি৷আর ওদের চার ভাইয়ের জন্য মেয়ের অভাব পড়েছে নাকি৷ আদিলও প্রেম করছে তাও তোর সাথে বিশ্বাস করতে পারছিনা৷ কী করে বিশ্বাস করবো বলতো ওই আদিল তো এক নাম্বারের লুজার একটা৷ছয় মাস আমার সাথে রিলেশনে ছিলো তারপর হঠাৎই একদিন আমায় ফোন করে বললো আমার সাথে নাকি সে কোনো সম্পর্ক রাখবেনা৷ তার নাকি আরেক মেয়েকে মনে ধরেছে৷ ভাবতে পারছিস রুহি৷ আর এটাও বলেছে আমার সাথে নাকি এতদিন টাইম পাস করেছে৷ দেখ ও তোর সাথেও টাইম পাস করছে কী না৷
.
“কে কার সাথে টাইম পাস করছে রিমু৷
.
আদিল ভাইয়ার কন্ঠ শুনে তার দিকে তাকালাম আমি৷ ভাইয়ার চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে৷মুখে রাগ স্পষ্ট৷

আসলে আদিল,,,

আদিল রিমুর গালে চড় দিতে গিয়েও থেমে গেলো৷ দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করলো৷
“আহিল কী বলে গেছে শুনিসনি৷আমি তোর সাথে কখন রিলেশনে গিয়েছিলাম৷ আর কোন মেয়েকে মনে ধরেছে আমার৷ যদি কোন মেয়েকে আমার মনে ধরে থাকে তাহলে সেটা শুধুমাত্র আরুহি৷ আর আজ বিয়ে তাই সিন ক্রিয়েট করতে চাইছিনা৷ তা না হলে আজ আমি তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিতাম৷
আদিল হনহনিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো৷
.
রিমুঃকত সাহস ওর ও আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিবে আমি এর আগেই চলে যাবো৷ বিয়ে শেষ হলেই চলে যাবো৷ থাকবোনা আর এই জাহান্নামে৷
🍁🍁🍁🍁
বর যাত্রী চলে এসেছে৷ সবাই তাদের আপ্যায়ন করায় ব্যস্ত৷ রিমুর কাজ পড়েছে বরের ভাই আর তার বন্ধুদের শরবত দিয়ে আসা৷ ট্রে হাতে শরবত নিয়ে গেলো উপরে৷ সবাইকে শরবত দেওয়া শেষ হয়ে গেলে চলে আসতে নিবে ওমনি ওর ওরনায় টান পড়লো৷ রিমু পিছনে একবার তাকিয়ে আর কোন কিছু না ভেবে ঠাসসস করে চড় বসিয়ে দিলো বরের ভাই আকাশের গালে৷ সবাই ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে৷ একটায় মুখে সবেমাত্র শরবত দিয়েছিলো এমন ভাবে হা করে তাকিয়ে আছে তার মুখ দিয়ে যে গলগল করে রক্তের মতো শরবত পড়ে পাঞ্জাবী ভরে যাচ্ছে সেদিকে তার কোনো খেয়ালই নেই৷

রিমুঃমেয়ে দেখলেই লুচ্চামি করার শখ জাগে তাই না৷শুন তুই যদি মনে করিস আমি তোর মতোই লুচ্চি তাহলে ভুল ভাবছিস৷ আমি এসব অসভ্যতামী একদম পছন্দ করিনা৷ বরের ভাই আমাদের গেস্ট তাই আজকে ছেড়ে দিলাম তা নাহলে ঠাসস করে চড় মেরে তোর এক গাল আরেক গালে ঢুকিয়ে দিতাম হতচ্ছাড়া৷কোন সাহসে আমার ওরনা ধরে টান দিয়েছিস৷ ছাড় বলছি৷
.
আকাশঃআমি কোন দুঃখে আপনার ওরনায় ধরে টান দিতে যাবো৷আর চড় তো অলরেডি একটা দিয়েছেনই আবার বলছেন বরের ভাই গেস্ট তা নাহলে চড় বসিয়ে দিতেন৷ গেস্টদের সম্মানও করতে জানেন না দেখছি৷ কেউ গেস্টকে চড় দিয়ে আপ্যায়ন করায় সেটা প্রথম দেখলাম৷ ভালো করে তাকিয়ে দেখেন তো৷আপনার ওরানাটা আসলে কে ধরেছে৷

রিমু এবার ভালো করে তাকিয়ে দেখলো তার ওরনা সেন্ট্রার টেবিলের কোনার সাথে আটকে আছে৷ রিমু ওরনাটা ছুটিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বললো “স্যরি৷ বলে সে দ্রুত চলে গেলো৷

রাহুলঃআচ্ছা এই মেয়ে চড় দিলো একজনকে আর স্যরি বললো সবার দিকে তাকিয়ে যেন মনে হচ্ছে চড়টা একজনকে না আমাদের সবাইকে দিসে৷
#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_১৬
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

দেখতে দেখতে জীবন থেকে কীভাবে দু’বছর কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম না৷এই দু’বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও আমাদের ভালোবাসার কোন পরিবর্তন হয়নি৷ আজ আমার আর আদিল ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে আর আমি এখন বাসরঘরে বসে তার জন্যই অপেক্ষা করছি৷রিমু আপুও আমাদের সাথে স্বাভাবিক হয়ে গেছে৷সবাই অপমান করতো বেচারিকে ওর এমন ব্যবহারের জন্য কেউ ওকে ভালোবাসতো না৷ সবাই এভয়েড করতো৷ তাই আপু আমাদের সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছে৷ খুব নম্র ভদ্র হয়ে গেছে৷কয়দিন আগে তারও বিয়ে হয়েছে৷ অদ্রিতা আপুর একটা ছেলে হয়েছে আর আয়েশা আপু প্রেগন্যান্ট৷আদিব ভাইয়াও একজন সার্জন হয়ে গেছে৷ আর আহিল ভাইয়া সিবিআই৷ বড় আব্বু উনার কথা রেখেছেন আমাদের জোড়া জোড়া বিয়ে দিয়েছেন৷ সামান্তাও এখন হয়তো বাসরঘরে বসে আদনান ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছে৷
দরজা খুলার আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো আমার৷ তাকিয়ে দেখলাম আদিল ভাইয়া এসেছে৷ আমি খাট থেকে নেমে এগিয়ে গেলাম সালাম করবো বলে৷ ভাইয়ার সামনে গিয়ে নিচে ঝুকতেই ভাইয়া দুইকদম পিছিয়ে গেলো৷

“ভাইয়া সালাম করবো তো৷ পা সরাচ্ছো কেনো??
.
প্রথমে ভাইয়া ডাকা অফ কর৷
.
কেনো ভাইয়াকে তো ভাইয়াই ডাকবো৷ আসো আসো সালাম করবো৷
.
এখন আমি আর তোর ভাই নই স্বামী তাই আদিল বল৷
.
আদিল৷
.
“হুম৷ এখন ঠিক আছে৷”
আদিল এগিয়ে এসে আমায় কোলে তুলে নিলো৷

“আরে আরে কী করছো নামাও নিচে নামাও সালাম করবো তো৷
.
এসবের আর দরকার নেই জান৷
🍁🍁🍁🍁
সকালে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো সামান্তা৷ আদনানকে চিল্লিয়ে ডাকতে লাগলো৷

“ওই সামুর বাচ্চা ঘুমাতে দে৷ বিয়ে হতে না হতেই কী শুরু করছিস৷(চোখ বুঝে ঘুম ঘুম কন্ঠে)
.
ওই আদনানের বাচ্চা আমার শাড়ি গায়ে দিয়ে ঘোমাচ্ছো কেনো৷
.
তাহলে তোর গায়ে কী৷
.
“কেনো আমার গায়ে তো আমার ড্রেসই”৷
সামান্তা আদনানকে দু-হাত দিয়ে টেনে তুললো৷
আদনান তাকিয়ে দেখলো সত্যি ওর গায়ে সামান্তার শাড়ি প্যাচানো৷
.
আসলে কাল রাতে আমার খুব ঠান্ডা লাগছিলো৷ তুই ব্লাঙ্ককেট তোর কাছে নিয়ে গেছিলি৷ আমি টেনে একটুও আনতে পারিনি৷ তাকিয়ে দেখলাম আমার পাশে তোর শাড়ি তাই শাড়ি দিয়ে প্যাচিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম৷
.
কাল থেকে তুমি সোফায় ঘুমাবা আর আমি খাটে৷তোমার টানাটানির জন্য আমি ঘুমাতে পাড়িনা৷
.
তোর শখ থাকলে তুই গিয়ে সোফায় থাক৷ আমি আমার খাট তোর জন্য সেক্রিফাইজ করতে পারবোনা৷
.
তাহলে আমি গিয়ে রুহির কাছে ঘুমাবো৷
.
রুহি এখন আর সিংগেল না মিংগেল হয়ে গেছে সো এখন ওর কাছে শুতে গেলে তোকে লাত্তি মেরে আবার আমার কাছেই পাঠাবে৷
🍁🍁🍁🍁
সকাল সকাল আদিলকে আমার খুব কাছে দেখে মনটা আনন্দে ভরে গেলো৷ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে সিল্কি চুলগুলো কপালে এসে পড়েছে আর মৃদু বাতাসে উড়ছে৷ ছেলেরাও এতো সুন্দর হয়৷ ভাবতেই আনন্দ লাগছে যে সে এখন থেকে আমার স্বামী৷
ওপাশের রুম থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে৷ নিশ্চয় এই দুজন ঝগড়া লাগছে৷ আল্লাহ্ বিয়ের পরের দিনই কী শুরু করসে আল্লায় জানে৷
আমি ফোন হাতে নিলাম সামুকে ফোন দিবো৷ আজ ও আর আমি সবার জন্য নাস্তা বানাবো৷ ফোন হাতে নিয়ে উঠতেই আদিল আমাকে টেনে ওর বুকের ওপর ফেলে দিলো৷

“তুমি কখন জাগলে?
.
যখন তুই খুব মনোযোগ দিয়ে আমায় দেখছিলিস তখন৷ এমন ভাবে দেখছিলিস আমার খুব লজ্জা করছিলো৷
.
আচ্ছা ছাড়ো আমি আমার স্বামীকে দেখেছি কার বাপের কী৷ আর তোমারই বা এতো লজ্জা এলো কোথা থেকে৷
.
হুম সেটাই৷ কার বাপের কী৷
🍁🍁🍁🍁
আমি আর সামান্তা মিলে নাস্তা বানিয়ে ডাইনিংয়ে রাখছি৷ আদিল আর আদনান ভাইয়া সোফায় বসে আছে৷
রিংকি আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে সিড়ি বেয়ে দৌড়ে নিচে নামলো৷

রিংকিঃএই দেখি দেখি৷
.
সামান্তাঃকী দেখবি৷
.
রিংকিঃতোদের গলা দেখি
.
আরুহিঃকেনো দেখবি৷
.
রিংকিঃআরে এমনি৷
হুম তোদের গলায় এই লাল লাল দাগ কিসের৷

কথাটা শুনে আমি আদিল আর আদনান ভাইয়ার দিকে তাকালাম ওরা একজন আরেকজনের দিকে চুরের মতো তাকাচ্ছে৷

আরুহিঃপিঁপড়া কামড় দিসিলো৷ তাই না সামু৷
.
রিংকিঃহ্যাঁ পিঁপড়া অনেক বড় পিঁপড়া৷
.
আরুহিঃসর তো আমাদেরও সময় আসবে৷
🍁🍁🍁🍁
আমি আর সামু মিলে খাবার সার্ভ করছি৷ মা আর চাচীমনি আমাদের দিকে তাকিয়ে মিটিয়েমিটিয়ে হাসছেন৷

মাঃবাহ আমাদের সামান্তা আর আরুহি তো দেখছি খুব সংসারী হয়ে গেছে৷ কী সুন্দর একরকম শাড়ি পড়েছে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে৷ খুব ভালো লাগছে৷

চাচীমনিঃহুম আমার মনে হয় এখন আমরা একটু অবসরে যেতে পারবো৷ আর কাজ কর্ম করতে হবেনা৷

বাবাঃশুধু কী তোমারই অবসরে যাবে আমরা দুই ভাই ওতো অবসরে যাবো৷

মাঃকীভাবে?

বড় আব্বুঃকেনো এখন থেকে আদনান আর আদিল বিজনেস দেখাশুনা করবে৷ সামাম্তা আর আরুহি সংসার সামলাবে আর আদনান আদিল ওরা দুই ভাই অফিস৷

মাঃকী তোমরা অফিসে যাবে তো৷

আদনানঃহ্যাঁ মা যাবো৷ এখন তো বউ আছে সংসার আছে বাচ্চা কাচ্চা হলে তাদেরকে কী খাওয়াবো তাই না আদিল?

আদিলঃহুম৷

আদিব সবার দিকে ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে আছে আর আহিল নাক ফুলিয়ে নিজের খাবার শেষ করছে৷

মাঃকী হলো আদিব আহিল তোমরা মুখ এরকম করে রেখেছো কেনো৷

আদনানঃহ্যাঁ তোরা এমন হুতুম পেঁচার মুখ করে রয়েছিস কেনো৷

আদিবঃহ্যাঁ এখন তো আমাদের তোমাদের কাছে হুতুম পেঁচার মতোই মনে হবে৷ বউ পাইছো না এখন তো আমরা কেউ না৷

আদিলঃওহ্হহ বুঝতে পারসি৷ তোরাও বিয়ে করবি তাইতো৷ কিন্তু এখন না৷ আহিল তুই সিবিআইতে আগে জয়েন কর আর আদিব তুই ডক্টর তাই তোর কাজ হসপিটালে থাকা রোগ্যকে আরোগ্য করা৷ আরও পরে তোদের বিয়ে দিবো৷

বড় আব্বুঃআগে তোমরা প্রতিষ্ঠিত হও তারপর আমরা তোমাদের বিয়ে নিয়ে ডিসকাস করবো৷
🍁🍁🍁🍁
সোফায় বসে আমরা সবাই গল্প করছি৷ আদনান ভাইয়া বাবা, মা,বড় আব্বু,চাচীমনি তাদের বিয়ের গল্প বলছে বাবা আর বড় আব্বু নাকি একসাথে বিয়ে করেছিলেন৷হঠাৎই আমার চোখ পড়লো মেইন ডুরে দাঁড়িয়ে থাকা একটা মেয়ের দিকে৷ দেখে বেশ স্মার্ট মনে হচ্ছে৷বেশ কিছুক্ষণ লাগলো ওকে চিনতে৷

আরুহিঃআরে এটাতো নিলা আপু৷
.
আমার কথা শুনে সবাই থাকালো৷ নিলা দৌড়ে এসে আদিলকে জড়িয়ে ধরলো৷

নিলাঃআদিল কেমন আছো৷ আর কেমন দিলাম সারপ্রাইজ৷
.
আদিলঃভেরি ব্যাড৷ তুমি আসবে আগেতো বলোনি৷
.
নিলাঃবললে সারপ্রাইজ দিতাম কী করে৷
.
নিলা আমার সাথে আর সামুর সাথে হ্যান্ডশেক করলো৷

নিলাঃআচ্ছা আমি বুঝতে পারছিনা সামান্তা আর আরুহি একরকম শাড়ি পড়েছে তাও বিবাহিত মেয়েদের মতো৷
.
আহিলঃও তোমাকে তো বলাই হয়নি সামান্তা আর আরুহির বিয়ে হয়ে গেছে৷
.
নিলাঃমাই গড৷ তোমাদের বিয়ে হয়ে গেছে তা তোমাদের হাসবেন্ড কোথায় আর কী করে তারা৷
.
আদিবঃহাসবেন্ড তোমার পাশেই আছে৷
.
নিলাঃওয়াট৷ বাট কোথায়??
.
আহিলঃআদিল আর আদনান৷
.
নিলাঃকীহ্ আদিল বিয়ে করে ফেলেছে তাও আরুহিকে কিন্তু কেন?খালামনি তো আমাকে বলেছিলো আমার সাথে আদিলের বিয়ে দিবে তাহলে আরুহির সাথে কেনো?আর এই মেয়ের মধ্যে কী এমন দেখলো যে ওকে বিয়ে করে নিলে৷ওর চেয়ে তো আমিই অনেক সুন্দর৷

আদিবঃহ্যাঁ চাচীমনি বলেছিলো কিন্তু কথাতো আর দেয়নি৷ আর সবসময় রুপের এতো অহংকার করো কেনো৷ আমার বোন তোমার চেয়ে কোন অংশে কম নয়৷
.
নিলাঃদেখা আছে৷৷
.
আদিলঃনিলা আমার আরুহিকে পছন্দ তাই আরুহিকে বিয়ে করেছি ওকে আমি ভালোবাসি৷ আর তুমি কানাডায় থাকো আই হোপ তোমার জন্য ছেলের অভাব নেই৷
.
নিলাঃহ্যাঁ অভাব নেই কিন্তু তোমার মতো ছেলেদের অভাব আছে৷ কেনো তুমি ওকে বিয়ে করলে আদিল কেনো৷
.
আদিলঃআমার মনে হয়েছে তাই বিয়ে করেছি৷ তোমাকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই৷ নিজের সীমায় থেকো৷ সীমা লঙ্ঘন করোনা৷
চল আরুহি৷
আদিল আমাকে টেনে রুমে নিয়ে গেলো৷

আদিলঃআরুহি তুই নিলার কথায় একদম কিছু মনে করিস না৷এই মেয়ে গায়ে পরা টাইপের৷অহংকারী৷
.
আমি মাথা নাড়ালাম৷ কিন্তু সত্যি বলতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে৷

আদিল ল্যাপটপ নিতে নিতে বললেন,জানিস রুহি বাবা আমাাদের হানিমুনের জন্যে মালদ্বীপের টিকিট কেটেছে৷
.
ওয়াও রিয়েলি৷
.
জ্বী ম্যাডাম৷
.
আমার খুব শখ মালদ্বীপে যাওয়ার৷ সেখানকার পরিবেশ, ওয়েদার,ন্যাচার খুব সুন্দর বিশেষ করে পানি৷
.
হুম৷
🍁🍁🍁
খালামনি আদিল বিয়ে করেছে তাও আরুহিকে কিন্তু কেনো আমি ওর চাইতে খারাপ নাকি৷
.
নিলা আমার ছেলে ওকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে৷ আর আদিল কাকে বিয়ে করবে না করবে সেটা ও নিজে ডিসাইড করবে৷ বিয়ে তো সে করবে আমরা না৷ তাই আমার মনে হয় তোমার এসব বিষয়ে নাক না গলানোই ব্যাটার৷ তাছাড়াও আরুহি আমার নিজের মেয়ের মতোই সামান্তাকে আর ওকে আমি কোনদিন আলাদা চোখে দেখিনি৷ তাই আরুহি আমার পুত্রবধূ হওয়াতে আমার কোন আপত্তি নেই৷ আই হোপ আমি কী বলছি তুমি বুঝতে পারছো৷
🍁🍁🍁
আদিল আর আরুহি ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে৷ বাতাসে আরুহির আঁচল উড়ছে চুল উড়ছে আর সেটা আদিল মুগ্ধ হয়ে দেখছে৷ টব থেকে একটা কাঠগোলাপ এনে চুলের একপাশে গুজে দিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো৷

“তোকে এই রুপে খুব সুন্দর লাগছে রুহি৷আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি৷ ”
আদিল কথাটা বলে আরুহির কানে চুমো দিলো৷

আরুহিও মুচকি হেসে আাকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো৷

আদিলঃআই লাভ ইউ৷
.
আই লাভ ইউ টু৷

চলবে♥️

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ আসল ভিলেন কিন্তু এসে গেছে😒😒)
চলবে♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here