সেদিন বসন্ত ছিল পর্ব -১২+১৩

#সেদিন_বসন্ত_ছিল
#রাহনুমা_রাহা
#পর্বঃ১২

“আমি কি কাছে আসব?”
শব্দগুলো ঝনঝন আওয়াজে বাজতে লাগল আবরারের কানে।
আবরার কিছু বলছে না দেখে ইভানা পুনরায় বলল,
“আসব?”
আবরার স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“আসবে? এসো।”
কিন্তু হলো উল্টোটা। ইভানা না এগিয়ে পিছিয়ে গেল । আবরার ইভানার ভীতু মুখশ্রী দেখে হেসে উঠল গা কাঁপিয়ে।
হাসতে হাসতেই বলল,
“হয়েছে আমার সাহসী ললনা। আপনাকে আর পাকনামি করতে হবে না। নিজে লোভ দেখিয়ে এখন হাতটান মারছো?”
ইভানা মাথা নিচু করে হাত কচলে যাচ্ছে অনবরত।
আবরার এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে তাকাল। গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,
“তুমি কি পালিয়ে যাবে?”
ইভানা ভ্রু কুঁচকে তাকালে আবরার পুনরায় বলল,
“পালাবে?”
“পালানোর হলে আগেই পালাতাম। বিয়ে করে আপনাকে ফাঁসাব কেন?”
“তবে কি আমাকে রেপিস্ট মনে হচ্ছে?”
ইভানা চমকে উঠল। বিস্ময়ের সহিত বলল,
“আমি এটা বলেছি!”
আবরার হাত ঝাড়া দিয়ে বলল,
“বলো নি। তবে ভেবেছো। বিয়ে হয়েছে বলেই জোরপূর্বক নিজের অধিকার আদায় করে নেব। এটাই তো ভেবেছো তুমি। সেজন্যই নিজের ইচ্ছে না থাকা সত্বেও কাছে আসার কথা বলেছো। আমি যদি তোমার কথায় সায় দেই ভালো লাগবে তোমার? নাকি দাঁত কামড়ে সহ্য করে নেবে কেবল। মন থেকে কাছে আসার কথা বলেছো তুমি? সত্যি করে বলবে। আমার মন রাখতে নয়।”
ইভানা মাথা নিচু করে ফেলল। কিছু বলার চেষ্টাও করল না।
আবরার পুনরায় বলল,
“বিয়ে মানে শুধু শারিরীক সম্পর্ক নয় ইভানা। বাসর রাত কেবল মানে নর নারীর দেহের মিলনের রাতও নয়। বিয়ে মানে সারাজীবন একসাথে থাকার অঙ্গিকার। সুখে দুখে পাশে থেকে সাহস, ভরসা দেওয়ার অঙ্গিকার। সেখানে আমি যদি তোমাকে সম্পর্কের প্রথম প্রহরেই জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাতটা দিয়ে দেই তবে বাকী জীবন কাটাবে কি করে? পারবে ভালো থাকতে? নাকি মনের গহীনে যেখানে আমার বিচরণ থাকবে না, সেখানে এক টুকরো কষ্ট সযত্নে লালন করবে। প্রথম রাতে তোমার স্বামীর তরফ থেকে দেওয়া উপহার। এক টুকরো কষ্ট।”
“আই’ম সরি। কিন্তু আমি এতকিছু ভেবে বলিনি কথাটা। আমি ভেবেছি এটাই ন্যাচারাল। তাই…” মাথা নিচু করেই বলল ইভানা।
আবরার নরম গলায় বলল,
“তুমিও পালাচ্ছো না। আমিও রেপিস্ট নই যে নারীদেহ পেলেই খুবলে খেতে শুরু করব। তবে এত তাড়া কিসের? যাক না কিছু সময়। হোকনা কিছু প্রণয়। মনের প্রণয় না-হয় আগে ঘটুক। দেহের প্রণয় তো সময়ের অপেক্ষা মাত্র।”
ইভানা অবাক চোখে তাকিয়ে দেখল নিজের চিন্তাধারার বিপরীত মেরুর একজন মানুষ কে। কেউ এভাবেও ভাবে? না চাইতেও ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল। আবরার তা দেখে হেসে বলল,
“এএই তুমি হেসেছো। হেসেছো মানেই ফেঁসেছো।”
ইভানা মনে মনে বলল- আপনি গোলকধাঁধা আবরার। না ফেঁসে উপায় দেখছি না। আমি তো নরক ভ্রমণ করাতে চেয়েছিলাম আপনাকে। কিন্তু নিজেকেই স্বর্গে আবিস্কার করছি এখন।
“এই কাঁচাগোল্লা, নামাজ পড়বে না?”
ইভানা চকিতে তাকাল। ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কি নামে ডাকলেন?”
“কাঁচাগোল্লা। তোমাকে কাঁচাগোল্লার মতোই মনে হয়। কাঁচাটাই গিলে ফেলা যায়। গিলবো?”
ইভানা কিঞ্চিৎ সময় তাকিয়ে থেকে বিরবির করে বলল,
“ওহ গড। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। যার তার সাথে তো বিয়ে দেয় নি আমার আব্বাজান। এতো স্বয়ং আবরার ফাইয়াজ। এতক্ষণ ভদ্রলোক সাজার ভং ধরছিল। এইতো আসল রূপে আবির্ভূত হচ্ছে। ব্যাটা খচ্চর।”
আবরারের প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি দেখে জোর করে হেসে বলল,
“নামাজ। নামাজ পড়তে হবে তো। আসুন।”
আবরার মুচকি হেসে উঠে দাঁড়াল। আজ তো তার শুকরিয়া জানাতেই হবে আল্লাহর দরবারে। আট বছরের সাধনা তার সম্মুখে। তার এপার ওপারের সাথী। তার ভালবাসা।

“রিফাত ভাই কোথায় নিয়ে যাচ্ছ তুমি আমাকে? এত রাতে কেউ একসাথে দেখে ফেললে মহা সর্বনাশ ঘটে যাবে। বলবে তো কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?”
রিফাতের হাতের শক্ত বাঁধনে আঁটকে আছে নোভার নরম কোমল হাতের কব্জি। ঘরে ঢুকে বিনা অনুমতিতে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে এসেছে রিফাত। নোভা তখন থেকে প্রশ্ন করেই চলেছে। কিন্তু রিফাত নির্বিকার। সম্মোহনীর ন্যায় নোভার হাত ধরে হেঁটেই চলেছে।
পায়ের চলন সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হতেই নোভা বাঁধা দিতে চেষ্টা করে বলল,
“রিফাত ভাই, তুমি পাগল হয়ে গেছো? বারোটা বাজতে চলল। এখন ছাঁদে নিয়ে যাচ্ছ কেন তুমি? ছাড়ো প্লিজ। কেউ দেখলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।”
রিফাত তবুও থামছে না দেখে সিঁড়িতে বসে পড়ল নোভা। বিরবির করে বলল, “এবার নিয়ে যাও দেখি। ঘাড়ত্যাড়া লোক।”
রিফাত চোখ গরম করে তাকিয়ে বলল,
“ভালোয় ভালোয় যাবি? নাকি কোলে তুলে নিয়ে যাব? চয়েস ইস ইউরস।”
নোভা তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“রগচটা লোক। চলুন। গিয়ে আপনার মহাকর্ম সেরে আসি।”
রিফাত মুচকি হেসে পুনরায় সিঁড়ি ভেঙে এগিয়ে যেতে শুরু করল।

ছাদে গিয়ে নিজের পরনের শার্টের দুটো বোতাম খুলতেই নোভা বিস্মিত হয়ে বলল,
“কি করছো রিফাত ভাই? শার্ট কেন খুলছো? এখন তো গরমকাল নয়। তোমার নিশ্চয়ই গরম লাগছে না।”
রিফাত ঠোঁট টিপে হেসে বলল,
“গরমই লাগছে। আশেপাশে এত হট জিনিস থাকলে পৌষ মাসেও গ্রীষ্মের অনুভূতি হয়। ও তুই বুঝবি না। এখন ঝটপট কাছে আয় তো।”
ততক্ষণে শার্টের তিনটে বোতাম খুলে বুকের একপাশ উন্মুক্ত করে ফেলেছে সে।
নোভার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। দুপা পিছিয়ে গিয়ে বলল,
“কাছে আসব মানে কি? পাগল হয়ে গেছো তুমি?”
রিফাত শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল,
“আচ্ছা তোর আসতে হবে না। আমিই আসছি।”
বলেই একপা একপা করে নোভার দিকে এগিয়ে গেল। নোভা পায়ে পায়ে পিছিয়ে গিয়ে চিলেকোঠার দেয়ালে লেপ্টে গেল। রিফাত দু’পাশে হাত রেখে ঝুঁকে আসতেই নোভা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“রিফাত ভাই, না প্লিজ।”
রিফাত হঠাৎই উচ্চশব্দে হেসে উঠল। হাসির তোড়ে গা কেঁপে কেঁপে উঠল। নোভা বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইল। হাসির কি বলল বোধগম্য হলো না তার। বিস্ময় কাটার আগেই আরও দ্বিগুণ চমক দিয়ে একটা মেহেদী টিউব হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“নোভা আমার বুকের বা পাশে একটা নাম লিখে দে তো। দেখবি রক্তের মত যেন দেখা যায়।”
নোভা স্তব হয়ে তাকিয়ে রইল কিছু সময়। রিফাত অক্ষি সম্মুখে তুড়ি বাজাতেই বলল,
“কার নাম লিখব? আর কেন লিখব?”
রিফাত লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিমা করে বলল,
“আমার গার্লফ্রেন্ড। বুঝলি, মেয়ে মানুষের মন বুঝা দায়। হঠাৎ তার ইচ্ছে হলো আমার বুকের বা পাশে তার নাম থাকা চাই। তাও আবার কেটে কেটে লিখতে হবে। তার চাই মানে এক্ষুণি চাই। কি করব বল? আমি তো এত সাহসী প্রেমিক নই। তাই মেহেদী দিয়েই কাজ চালাব। আর কাউকে ভরসা করতে পারছিলাম না। তাই তো তোকে নিয়ে এলাম। এখন ঝটপট লিখে দে তো। বেচারি অপেক্ষা করছে। রুমে গিয়ে ভিডিও কলে দেখাতে হবে।”

প্রথম দিকে কষ্টে বুক ফেটে কান্না এলেও শেষোক্ত বাক্যে মাথায় রক্ত চড়ে গেল নোভার।
মনে মনে বলল,”আচ্ছা! গার্লফ্রেন্ড কে ভিডিও কলে বুক দেখানো হবে? দেখাচ্ছি আমি।”

রিফাত তাড়া দিয়ে বলল,
“দে না পিচ্চি তাড়াতাড়ি। রেগে যাবে আবার। ভালবাসি তো। রেগে গিয়ে কষ্ট পেলে সহ্য করতে পারব না।”
নোভার আবার কান্না পেলো কিন্তু নিজেকে যথাসম্ভব ঠান্ডা রেখে বলল,
“কি নাম লিখব?”
“আমি স্পেলিং বলছি। তুই লেখ।”
নোভা মেহেদী টিউব হাতে নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাত বুকে ছোঁয়াতেই শিরশির করে উঠল শরীরের সমস্ত লোমকূপ। এত কাছে এসেও মাথা উঁচু করে প্রিয় পুরুষের মুখটা দেখার সাহস করতে পারল না। তার দেহের তীব্র পুরুষালী গন্ধ নাসিকা গ্রন্থি ভেদ করে পোঁছে গেছে অদূর গহীনে। চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে কাঁপা গলায় বলল,
“বলো।”
রিফাত বিনা দ্বিধায় বলল,
“এন ও, …”
এতটুকু লিখেই নোভা উৎসাহী কণ্ঠে বলল,
“তারপর? তারপর কি রিফাত ভাই?”
রিফাত লজ্জা পেয়ে বলল,
“এত তাড়া দিচ্ছিস কেন? বুঝতে পারছিস না আমি লজ্জা পাচ্ছি ওর নাম বলতে।”
আধিখ্যেতা দেখে নোভার গা জ্বলে উঠল। কিন্তু পরবর্তী বর্ণগুলো শোনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে হৃদয়।
কিঞ্চিৎ সময় পর রিফাত ধীর গলায় বলল,
“আর এ। টোটাল কি দাঁড়াল? এন ও আর এ। মানে নোরা। লিখেছিস?”
নোভার হাতদুটো থরথর করে কাঁপছে। কম্পিত হস্তেই শেষোক্ত বর্ণদুটো লিখল সে। তবে রিফাতের বলা ‘এন’ বদলে ‘ভি’ লিখে দিয়েছে। অতঃপর রিফাতের কলার টেনে নিজের মুখোমুখি এনে কড়া গলায় বলল,
“এই বুকে আমার নাম লেখা না হলে ঝাঁঝড়া করে ফেলব আমি এই কঠোর বুক। নয়তো আমার নামটাই পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলব। আশা করছি শেষেরটা আপনার জন্য মোটেও শুভ হবে না।”
রিফাত কলারে চেপে রাখা হাতদুটো ছাড়িয়ে মুঠোয় নিয়ে বলল,
“জোর করছিস? জোর করে ভালবাসা আদায় করবি?”
নোভা জলন্ত আগ্নেয়গিরি থেকে সুবিশাল জলপ্রপাতে পরিণত হলো।যেখানে বারোমাস কেবলই শীতলতা। উত্তপ্ততার কোনো বালাই নেই।
নিম্ন কণ্ঠে শুধালো,
“আমি যদি একদিন কালি মেখে কালো হয়ে যাই তবে কি সেদিন তুমি আমায় ভালবাসবে রিফাত ভাই?”
রিফাত হতাশ ভঙ্গিতে তাকাল। সে বোঝাবে এই পাগলিকে?
“নিজের স্বকীয়তা বিকিয়ে দিয়ে ভালবাসতে নেই নোভা। আর তুই যাকে ভালবাসা বলছিস তা মোটেও ভালবাসা নয়। সাময়িক মোহ। তুই এখনো ছোট। আগে বড় হ। ইউনিভার্সিটি যা। সেখানে রাজপুত্রের মত ছেলেদের সঙ্গে মিশে এই পাগলামির কথা মনে পড়লে হাসি পাবে তোর। তখন আর আমার প্রতি মোহ কাজ করবে না।”
“যদি তখনো পাগলামিটা থেকে যায় তবে ভালবাসবে? কথা দাও।” নোভার আত্নবিশ্বাসী উত্তর।
রিফাত অধৈর্য্য হয়ে বলল,
“আমি মরে গেলেও তোকে ভালবাসব না। পারলে ঝাঁঝরা করিস এই বুক।”
বলেই হনহন করে নেমে গেল ছাদ থেকে। পেছনে নোভা শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“তুমি আমাকে ভালবাসো রিফাত ভাই। নয়তো আমার নামটাই নিশ্চিহ্ন করে দিতে বলতে। নিজে ঝাঁঝরা হতে চাইতে না। কিন্তু কেন এত লুকোচুরি? কেনই বা ভালবেসেও অস্বীকার করছো? এরজন্য কি কেবলই আমার সৌন্দর্য দায়ী? তবে ধ্বংস হোক এই সৌন্দর্য। ঝলসে যাক এই অভিশপ্ত রূপ।”

“আপনি আমাকে আগে থেকে চিনতেন?”
ইভানার উত্তর শুনে আবরার শুকনো মুখে কেশে উঠল।
ইভানা চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“চিনতেন?”
“তুমি কি করে জানলে?” ভ্রু কুঁচকে বলল আবরার।
“আপনি তো আমার সামনেই রিফাত ভাইয়া আর শ্যামল ভাইয়াকে বললেন।”
আবরার মনে করার চেষ্টা করে বলল,
“রেস্টুরেন্টে?”
ইভানা মাথা নাড়াল।
” তোমাকে না বলেছিলাম কানে আঙুল দিতে।”
ইভানা মুচকি হেসে বলল,
“ওমা আপনি বলবেন আর আমি ওমনি না শুনে বসে থাকব? হাবা পেয়েছেন?”
“ওরে চিটার। তখন তো ঠিকই হাবার মতোই বসে ছিলে।”
ইভানা খিলখিল করে হেসে উঠল।
আবরার মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“নজর না লাগুক।”
ইভানা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিতেই আবরার এগিয়ে এসে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
“আমি তোমাকে ভালবাসি কাঁচাগোল্লা। তবে যেদিন ওই চোখে আমার জন্য ভালবাসা দেখতে পাব সেদিন বলব কিভাবে চিনি। কতটা চিনি। আর কতটা ভালবাসি।”

চলবে…#সেদিন_বসন্ত_ছিল
#রাহনুমা_রাহা
#পর্বঃ১৩

“একি তুমি সকাল সকাল গোসল কেন করেছো?”
আবরারের এহেন মন্তব্যে ইভানা ভ্রু কুঁচকে তাকাল।
আবরার ভাবার ভঙ্গিমা করে পুনরায় বলল,
“যতদূর মনে পড়ছে আমি তো কিছু করিনি। ওয়েট ওয়েট তুমি আমার ঘুমের সুযোগ নিয়েছো? আমি ঘুমিয়ে ছিলাম সেই সুযোগে তুমি আমার সর্বস্ব লুটে নিয়েছো। ছিহ! এটা করতে পারলে তুমি? একবারও করুণা হলো না এই অধমের উপর? হে আল্লাহ আমায় তুলে নাও তোমার কাছে। এই মুখ আমি কাকে দেখাবো, কিভাবে দেখাবো?”
শেষোক্ত কথাগুলো কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে কম্বলে মুখ লুকোনোর বৃথা চেষ্টা করল।
ইভানা কিয়দংশ সময় হতভম্বের ন্যায় তাকিয়ে থেকে নিজের দিকে তাকাল। করুণা হচ্ছে তার। নিজের প্রতি। অদূর ভবিষ্যৎ চিন্তা করতেই কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের অস্তিত্ব টের পেল।
কিঞ্চিৎ সময় পর ধীর গলায় বলল,
“আপনি যে সবসময় ইবলিশ মার্কা মাইন্ড নিয়ে ঘুরে বেড়ান সেটা আমি জানি। তাই বলে ক্ষণে ক্ষণে তা বোঝাতে হবে?”
আবরার পুনরায় কিছু বলার আগেই ইভানা হাত জোর করে বলল,
“আল্লাহর দোহাই উঠুন। উঠে ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি বাইরে যাব। বের হলে মা তার ছেলের কথা জানতে চাইলে কি বলব? পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে?”
আবরার উঠে বসতে বসতে বলল,
“ওকে, ওকে। আমি উঠছি। পাঁচ মিনিট দাও। আমিও গোসল সেরে আসছি। না জানি কি কি করেছো। ইয়া মাবুদ! আমার তো ভাবতেই সাত কম্বলের নিচে যেতে ইচ্ছে করছে।”
ইভানা চোখ গরম করে তাকাতেই হেসে বলল,
“ড্রয়ারে হেয়ার ড্রায়ার আছে। চুল শুকিয়ে নাও। নয়তো কিছু না করেও লজ্জা পাবে। আমি আসছি। খবরদার একা বের হবে না। কেউ ডাকলেও না। আমি নতুন সকালটায় বউয়ের সঙ্গে সবার সামনে যেতে চাই। তাছাড়া একা গেলে কিন্তু খোঁচা খেতে হবে। লাজে রাঙা হয়ে শেষে এই ঘরেই আশ্রয় নিতে হবে। নয়তো এখানে।”
বুকে আঙুল দিয়ে দেখালো আবরার।
ইভানা আঙুল উঁচিয়ে ওয়াশরুমের দরজা দেখিয়ে বলল,
“পাঁচ মিনিটের দশ সেকেন্ড অলরেডি চলে গেছে।”

সাজিদ ও ইফতির জন্য কফি নিয়ে দরজায় কড়া নাড়ল নোভা। মূহুর্তের মধ্যেই ইফতি দরজা খুলে হাস্যজ্বল মুখে বলল,
“নোভাপু! ভেতরে আসুন।”
নোভা মৃদু হেসে প্রায় সমবয়সী ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এখন না ভাইয়া। আপনি কফি নিন। কিছুক্ষণেই খাওয়ার জন্য ডাকবে। আরেকজন কোথায়?”
ইফতি কফি নিয়ে চুমুক দিয়ে বলল,
“সাজিদ ভাইয়া ঘুমোচ্ছে এখনো। আপনি কি ডেকে দিয়ে যাবেন?”
নোভা অপ্রস্তুত বোধ করল। তাড়াহুড়ো করে বলল,
“আপনিই ডেকে তুলুন। নয়তো কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে। যদি না ওঠে তবে বলবেন। আবার পাঠিয়ে দেব।”
ইফতি মুচকি হেসে বলল,
“ঠিক আছে আপু।”

নোভা তাড়াহুড়ো করে কিচেনে আসার পথে শ্যামলের সাথে ধাক্কা খেয়ে প্রায় পড়েই গেছিল। শ্যামল হাত ধরে সামলে নিয়ে বলল,
“আহ কি সিন মাইরি! এক্কেবারে রোমান্টিক ফিল্ম। হিরো হিরোইন চলার পথে ধাক্কা লেগে প্রেমে পড়ল। আহা আহা! শুধু একটা রোমান্টিক গানের অভাব। ব্যাকরাউন্ড মিউজিক কোনটা হলে ভাল হতো সুইটহার্ট? এ জীবনে যারে চেয়েছি, আজ আমি তারে পেয়েছি। এটাই বেস্ট তাই না?”
নোভা কোমরে হাত রেখে চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“শ্যামদা, তুমি কি জানো তুমি দিন দিন ভীষণ নাটুকে হয়ে যাচ্ছ? সায়মা আপু তোমাকে সামলায় কি করে বলো তো?”
শ্যামল সুর করে বলল,
“নাটক ছাড়া দুনিয়া চলে না।”
নোভা হেসে বলল,
“ওটা হবে পাগল ছাড়া দুনিয়া চলে না।”
“ওই একই হলো। যাহা লাউ তাহাই বেগুন।”
নোভা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ার উপক্রম। হাসির তোড়ে থেমে থেমে বলল,
“যাহা লাউ তাহাই কদু। বেগুন কোত্থেকে পেলে তুমি শ্যামদা?”
শ্যামল গাল ফুলিয়ে বলল,
” ধুর, আমি আর কিছু বলবই না।”
নোভা মুখে আঙুল দিয়ে হেসে হেসে বলল,
“আমি আর হাসব না।”
“তুমি এখনো হাসছ সুইটহার্ট।”
নোভা বহু কষ্টে হাসি থামিয়ে কিঞ্চিৎ সময় পর পুনরায় ফিক করে হেসে উঠল। শ্যামল আর কিছু বলল না। হাসুক না একটু। কাল থেকে তো কেবল গোমড়া মুখই নজরে পড়ছে দুজনের।
শ্যামলকে কিচেনের দিকে যেতে দেখে গলা বাড়িয়ে বলল,
“শ্যামদা ওদিকে কোথায় যাচ্ছ তুমি?”
শ্যামল পেছনে ঘুরে বলল,
“রিফাতের মাথা ব্যথা করছে। তাকাতে পারছে না যন্ত্রণায়। দেখি চা টা কিছু পাওয়া যায় কিনা।”
নোভার হাসি মুখ মূহুর্তেই শ্রাবণের মেঘের রূপ নিল। অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল ঠিক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যার মত।
নিভে যাওয়া কণ্ঠে বলল,
“আমি করে দিচ্ছি।”
শ্যামল কিছু একটা ভেবে বলল,
“ও রুমে আছে। তুমি কি দিয়ে আসতে পারবে সুইটহার্ট? আসলে আমার একটু কাজ আছে। পারবে?”
নোভা জোরপূর্বক হেসে বলল,
“ঠিক আছে।”

ড্রয়িং রুমে নববধূর ছায়া পড়তেই একদল উৎসুক দৃষ্টি নিপতিত হলো তার উপর। ইভানা এত দৃষ্টি দেখে ঘাবড়ে গিয়ে আবরারের সঙ্গে প্রায় লেগে দাঁড়াল। আবরার বুঝতে পেরে মৃদুস্বরে বলল,
“রিল্যাক্স কাঁচাগোল্লা। এরা সবাই বাড়ির লোক, কাছের মানুষ। ভয় পেও না। আমি আছি তো।”
ইভানা নিচু গলায় বলল,
“আমার ভয় কমছে না তো। প্লিজ কিছু করুন।”
আবরার আরও একটু কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,
“জড়িয়ে ধরব? তাহলে আর ভয় করবে না। এটা হান্ড্রেড পারসেন্ট গ্যারান্টি যুক্ত অফার।”
ইভানা সরু চোখে তাকাতেই এক বয়স্কমত মহিলা হাতের ইশারায় ডেকে বললেন,
“কি গো মাইয়া, হারারাইতে মন ভরে নাই? এহন তো ছাড়ো আমার নাতিডারে।”
ইভানা বিস্ফোরিত চোখে একবার ভদ্রমহিলার দিকে তাকাল তো একবার আবরারের দিকে তাকাল।
ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে মিহি কণ্ঠে বলল,
“আসসালামু আলাইকুম।”
ভদ্রমহিলা সালামের উত্তর না দিয়ে পুনরায় বললেন,
“আমি আবরারের বাপের ফুপু। ওর দাদী হই। তুমি হইলা আমার নাতবউ। হুনো মেয়ে কয়ডা কতা কই। আইজকা হইলো তোমাগো বউভাত। বিয়ার প্রথম সকাল। আইজ সকলের পায়ে হাত দিয়া সালাম করা তোমার কর্তব্য। আবরারের বাপ মায় আমারে মায়ের সম্মান দেয়। কিন্তু তুমি নতুন বউ হইয়া আমার পায়ে হাত দিয়া সালামডা করলা না? যাও এহনই সক্কলের পায়ে হাত দিয়া সালাম করো।”
ইভানা গো মেরে দাঁড়িয়ে থেকে নরম গলায় বলল,
“কিন্তু দাদী পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা তো ইসলামে নিষিদ্ধ।”
ভদ্রমহিলা সরু চোখে তাকিয়ে বললেন,
“কি কয় মাইয়া? বিয়ার পর গুরুজনের পায়ে হাত দিয়া সালাম কইরা দোয়া লউন লাগে। নইলে সংসার টিকব কেমনে? বছর গড়াইতেই বাচ্চা হইব কেমনে?”

আবরার বিস্মিত হয়ে বিরবির করে বলল,
“যাহ বাবা! সবার দোয়ায়ই যদি বাচ্চা হয় তবে আমি আছি কি করতে?”

ইভানা পুনরায় বলল,
“এটা ইসলাম বিরুদ্ধ দাদী। দোয়া করার হলে এমনিই করবেন।”
ভদ্রমহিলা এবার চটে গেলেন। কঠোর গলায় বললেন,
“আমারে ইসলাম শিখাইতাছ মাইয়া? আমার তিনকাল গিয়া এককালে ঠেকছে। এহন আমি তোমার কাছে শিখুম? এই হইলো বয়স বেশি মাইয়া বিয়া করনের ফল। শিক্ষিত মাইয়া বিয়া কইরা লাভ কি? যদি গুরুজনরে সম্মানই না করে। আগেই কইছিলাম এত বড় মাইয়ার লগে বিয়া দিস না। সংসারে সুখ আইব না। কিন্তু কে হুনে কার কতা। এরছে আমার স্বপ্না কত ভালো আছিল। সবে সতেরো বছরে পা দিছে। যেমনে পারত গড়াইয়া নিত। একটা কথাও অমান্য করত না। ফাহিমার কপালে আল্লাহয় সুখ লেহে নাই। অকালে স্বামী হারাইয়া কষ্টে বড় করা পোলাডার বিয়া দিল কিনা এই মাইয়ার লগে। হায় কপাল!”
আবরার কঠিন মুখে কিছু বলার জন্য এগিয়ে আসতেই ইভানা বাহুতে আঁকড়ে বাঁধা দিল। মুখের দিকে তাকিয়ে মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে ইশারা করল ঝামেলা না করতে।
আবরার শুনলো। কিন্তু কিছু তো বলতেই হবে তাকে।

মুখ হাসি হাসি করে ভদ্রমহিলার পায়ের কাছে বসে বলল,
“কি যেন বললে দাদী? আমার বউ বয়স্ক? তোমার স্বপ্না সবে সতেরো তাই না? সতেরো বছরের বাচ্চা বিয়ে করে আমাকে কি বাল্যবিবাহের দায়ে ফাঁসাতে চাইছিলে তুমি? আর কি যেন বলেছিলে? বাচ্চা রাইট? ষোলো সতেরো বয়সী মেয়ে বিয়ে করে আমি বাচ্চার মুখ কবে দেখতাম? আগে তো বিয়ে করা বাচ্চা পেলে বড় করতে হতো। নাকি বউ শুধু বাচ্চা পয়দা করার মেশিন? ছোট বয়সে বাচ্চা জন্ম দিয়ে মরে গেল , ব্যস আমি আবার আরেকটা কিশোরী ধরে বিয়ে করে ফেললাম। সে মরে গেল, অতঃপর আরেকটা। এভাবে চলতেই থাকল। ছেলে মানুষ কি-না। বিয়ে করা তো ব্যাপারই না। বিয়ের বাজারে আমাদের আবার বহুত দাম। আমার বয়স কত জানো দাদী? ত্রিশ বছর। এই বয়সে ষোলো বছরের বাচ্চা বিয়ে করলে সে কি করে আমার মত বুড়ো মানুষের মন বুঝবে? তাছাড়া আমি তো তার বহু আগেই বুড়ো হয়ে মরে যাব। তখন কি আমার মা তার ছেলের বউয়ের আবার বিয়ে দেবে?”
ফাহিমা করিম চেঁচিয়ে বললেন,
“আবরার। থাম । এভাবে বলিস না বাবা। কথার কথায়ও বলিস না। যে যন্ত্রণা নিয়ে আমি তোদের মানুষ করেছি, সেই যন্ত্রণা ইভানার জন্য নিয়ে আসিস না। থেমে যা না বাবা। মরার কথা এভাবে বলতে নেই।”
আবরার মায়ের কাছে গিয়ে বুকের একপাশে জড়িয়ে ধরে বলল,
“ওফ মা। মরার কথা বললে হায়াত বাড়ে জানো না? শুধু শুধু ভয় পায়। আমার মা তো সাহসী। সব পরিস্থিতি সামলাতে জানে। পারবে না আমি না থাকলে ওই ছোট্ট মেয়েটাকে সামলে নিতে?”
ফাহিমা করিম আবরার কে জোর করে ছাড়াতে চেয়ে বললেন,
“ছাড় আমাকে। একদম ছুঁবি না তুই আমাকে। ছাড় বলছি।”
আবরার হেসে বলল,
“দেখলে কাঁচাগোল্লা? তোমার শ্বাশুড়ি কেমন নাটুকে মহিলা?”
ফাহিমা করিম চিমটি কেটে বললেন,
“থাম বাপ আমার। এখানে তোর বান্ধবী ছাড়াও আরও লোকজন আছে।”
আবরার ছেড়ে দিয়ে হাত ডলতে ডলতে বলল,
“আহ মা। তুমিও না বাচ্চাদের মত চিমটি দাও। আরে বাবা আমার বউ। আমি যে নামে ইচ্ছা ডাকি। তাতে কার কি? ইচ্ছে হলে কাঁচাগোল্লা ডাকব। ইচ্ছে হলে রসগোল্লা। কি হবে তাতে? পাশের বাসার ভাবী কে তো ডাকতে যাইনি তাই না?”
ফাহিমা করিম হেসে বললেন,
“এত বউ পাগলা হওয়া তোদের জাতেই মানায়। বাপের মত হয়েছে একেবারে। বউ তো আর চলে যাচ্ছে না তাই না? এত বাড়াবাড়ি করলে বাচ্চা মেয়েটা তো অস্বস্তিতে পড়বে।”
আবরার মুচকি হেসে বলল,
“বাপের ছেলে বাপের মত হব না তো ওই পাড়ার আবুল কাকার মত হব? কি যে বলো না তুমি মা। ছেলেদের হয়েছে যত জ্বালা। বউকে ভালবাসলে বউ পাগলা। আবার ভাল না বাসলে নারী নির্যাতনের মামলা। যেদিকেই যাও ফাঁসবে সেই তুমিই। নারী হচ্ছে অবলা জাতি। অথচ এরাই কিন্তু পুরুষদের চালনা করে। হয় ভালবেসে নয়তো সর্বনেশে।”
ফাহিমা করিম দু’হাত বুকের সাথে গুঁজে বললেন,
“হয়েছে নাটুকেপনা?”
আবরার অমায়িক হেসে বলল,
“আজকের মত হলো। কাল নতুন এপিসোড দেখতে চোখ রাখবেন আমাদের চ্যানেলে, ঠিক এই সময়ে। আজকের মত আমি আবরার ফাইয়াজ বিদায় নিচ্ছি। সপ পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আর আমাদের সাথেই থাকুন।”
ফাহিমা করিম মুচকি হেসে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালেন। পেছনে চলল ইভানাও।
নোভা চায়ের কাপ সাথে দুটো ব্রেড এবং অমলেট ট্রেতে সাজিয়ে যাওয়ার সময় ফাহিমা করিম দেখে বললেন,
“কার খাবার নোভা?”
নোভা বিচলিত ভঙ্গিতে বলল,
“রিফাত ভাইয়ের। মাথা ব্যথা করছে তার। শ্যামদা বলল চা পাঠাতে। তাই ভাবলাম হালকা নাস্তা করে একটা মেডিসিন নিয়ে নিলে কমে যাবে।”
ফাহিমা করিম মেয়ের দায়িত্ববোধ দেখে মৃদু হেসে বললেন,
“আচ্ছা যাও। কাজের চাপে ছেলেটার খেয়ালও রাখতে পারি না আমি। এসে আমাকে জানিও কেমন হলো। ঔষধ আমার ঘরের ড্রয়ারে আছে। নিয়ে যেও।”
নোভা মাথা নাড়িয়ে পা বাড়ালো কাঙ্খিত গন্তব্যের উদ্দেশে।

নিজের রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখ বন্ধ করে ফেলল ইভানা। আবরার খালি গায়ে আলমারিতে কিছু খুঁজছে। ইভানার উপস্থিতি বুঝতে পেরে তাকিয়ে দেখল তার রমণী চোখ বন্ধ করে আছে। মুচকি হেসে এগিয়ে এসে মুখের উপর ফু দিল আবরার। ইভানা কেঁপে ওঠে সময় নিয়ে চোখ খুলল। আবরার তখনো সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। আবার চোখ বন্ধ করতেই আবরার ধমকের সুরে বলল,
“একদম না। তাকাও। তাকিয়ে থাকবে। আমি যতক্ষণ রেডি হব তুমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে। প্রয়োজনে এসে শার্ট পরিয়ে দেবে। শার্টের বোতাম লাগিয়ে দেবে। চোখ বন্ধ করা চলবে না।”
ইভানা অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল,
“আমি পারব না প্লিজ।”
আবরার চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“কেন?”
ইভানা মাথা নিচু করে বলল,
“আমার কেমন কেমন লাগে।”
আবরার ঠোঁট কামড়ে হাসল। ফিসফিস করে বলল,
“কেন আগে ছেলে দেখো নি?”
ইভানা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,
“আপনি তো ছেলে নন।”
আবরার দুপা পিছিয়ে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। কুঞ্চিত ভ্রু যুগল অপরিবর্তিত রেখেই বলল,
“মানে? ছেলে নই তবে কি?”
ইভানা এগোলো। পায়ে পায়ে এগিয়ে আবরারের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে দম নিল। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“পুরুষ।”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here