হিংস্রতায় ভালোবাসা পর্ব ৮

#হিংস্রতায়_ভালবাসা
#পর্ব_০৮
#রীমা_শারমিন

মিটিংয়ের একপর্যায়ে আহিলের ফোনে একটা কল আসে। কথা বলা শেষ করে ফোনটা ডেস্কের ওপর রেখে মিটিং শুরু করল।আর তখনই ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে প্রানোর ছবি।

শি ইজ সো হট মিস্টার খান!! কথাটা বললেন মিটিংয়ে থাকা রাশেদ চৌধুরী।
কথাটা শুনে মুহুর্তের মধ্যে আহিলের চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করে। কিন্তু আহিল সেটা প্রকাশ না করে নিজেকে কন্ট্রোল করে বলে,,
— she is my wife, so don’t…. এখন কাজের কথায় আসা যাক।
— মিস্টার খান, রিয়েলি শি ইজ সো বিউটিফুল এন্ড হট।

এইবার আর আহিল সহ্য করল না,, এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে রাশেদ চৌধুরীর নাক বরাবর এক ঘুসি বসিয়ে দেয়।তারপর ওনার কলার ধরে ইচ্ছেমতো মারা শুরু করে।ফ্লোরে ফেলে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলে।

— how dare you,,তোর সাহস হয় কি করে আমার স্ত্রী সম্পর্কে এই কথা বলার। তোর সাহস হলো কি করে।

আহিল ওনাকে মারতে মারতে আধমরা করে ফেলে।
অফিসের স্টাফরা অনেক কষ্ট করে ওনাকে আহিলের হাত থেকে ছাড়ায়।রাশেদ চৌধুরীকে কোনমতে ফ্লোর থেকে উঠে দাড় করায় সবাই। কিন্তু উনি যাওয়ার আগে আহিলকে থ্রেট করে যায়।

— কাজটা তুই ভালো করলি না আহিল খান। এর প্রতিশোধ আমি নিয়েই ছাড়ব,যে মেয়ের জন্য আজ তুই আমাকে এভাবে অপমান অপদস্ত করলি, সেই মেয়েকে একদিনের জন্য হলেও আমার করে ছাড়ব।
— তুই এখান থেকে যাবি না তোকে জানে মেরে দেব।
— তোর ধ্বংসের শুরু হলো আহিল খান, মাইন্ড ইট।

লোকটা চলে যেতেই আহিল ওর সামনে থাকা ফাইলগুলো সব ফেলে দেয়। তারপর গাড়ি নিয়ে রেগে বেরিয়ে যায়।
এদিকে নয়না সামনে থেকে সব ঘটনা দেখে শকড হয়ে যায়।ও কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে একটা জোরে নিশ্বাস ছাড়ে।

— কি আহিল স্যারের ভুত নামল তোমার মাথা থেকে? (শেলি)
— ও মাই গড,হি ইজ সো কুল ইয়ার।
— স্যারকে তোমার এখনো কুল মনে হচ্ছে? কিভাবে?
— ও তুমি বুঝবে না মিস শেলি।
— আল্লাহ তুমি এই মেয়েকে সুমতি দাও।

শেলি চলে যাওয়ার পরে নয়না কিছুক্ষণ ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে তারপর কিছু একটা ভেবে বাকা হাসি দিয়ে নিজের কেবিনে চলে যায়।

আহিল বাসায় এসেই চোখ বন্ধ করে শোফায় গা এলিয়ে দেয়। তারপর প্রানোকে ডাকতে শুরু করল।

— প্রানো,প্রানো এক কাপ কফি নিয়ে এসো তো।

বেশ কিছুক্ষণ পরেও যখন প্রানো এলো না কফি নিয়ে তখন আহিল অনেক ক্ষেপে যায়। জোরে প্রানোর নাম ধরে ডাক দিতে গিয়ে থেমে যায়, কারণ ওর মনে পড়ে যায় প্রানোকে ও উপরে চিলেকোঠার ঘরে আটকে রেখে এসেছিল। আহিল তৎক্ষনাৎ দৌড়ে চলে যায় চিলেকোঠার ঘরের সামনে।। দরজা খুলে দেখে প্রানো এক কোনায় জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।।

— প্রানো চলো।

উঠে দাড়াতেই মাথা চক্কর দেয় আর পড়ে যাওয়ার আগেই আহিল আমাকে ধরে নেয়।।তারপর কোলে তুলে নিয়ে আসে রুমে। ভয়ে জ্বর চলে আসে আমার। আহিল ডাক্তার ডাকে বাসায়। ডাক্তার ওষুধ দিয়ে চলে যায়। আহিল সারাক্ষণ আমার পাশে আমার হাত ধরে বসে ছিল। হয়তো কিছু বলছিল কিন্তু আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না। আমি কেমন জানি একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম।উনি কিছু বলছেন সেটা দেখতে পাচ্ছি কিন্তু বুঝতে পারছি না। সারারাত আহিল মাথায় জলপট্টি দিয়েছে। সকালবেলা ঘুম ভেঙে দেখলাম আহিল আমার মাথার কাছে শুয়ে আছে।। আমি নড়ে উঠতেই আহিলও সজাগ হয়ে যায়।কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর আছে কি না।

— প্রানো এখন কেমন লাগছে তোমার?
— ভালো।
— তাহলে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও,আজ নিশার বাসায় যেতে হবে মনে আছে তো?

আমি তো একদমই ভুলে গেছিলাম। আমি উঠে চট করে ফ্রেশ হয়ে আসলাম। এসে দেখি আহিল কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফির মগে চুমুক দিয়ে ভাবছি, এই মানুষ টা আসলে এমন কেন? কখনো এত কেয়ারিং আবার মুহুর্তেই সেই হিংস্র রুপ! আসলে আসল উনি কোনটা??

সন্ধ্যার দিকে আমি আর আহিল গেলাম নিশার বাড়িতে।বাড়িটা বেশ সুন্দর করে সাজানো। আজ হলুদের অনুষ্ঠান কাল বিয়ে।আমি উপরে চলে যাই নিশার রুমে যেখানে ওকে সাজানো হচ্ছে। আর আহিল নিচেই থেকে যায় সবার সাথে। নিশার কাছে যেতেই নিশা দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণ পরে আমাকে ছেড়ে দিয়ে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকায়।

— তুই এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছিস?
— তুই কিরে প্রানো,, হলুদে কেউ ব্ল্যাক ড্রেস পড়ে? আমার বিয়ে হচ্ছে নাকি শোক দিবস পালন হচ্ছে একটু বলবি?
— আরে রাগ কেন করছিস, সবাইকে কি একরকম পরতে হবে সবসময়? সবাই হলুদ পরে তাই আমি ব্ল্যাক পরেছি , বুঝলি?
— অন্যকালার পরতে পারতি?
— ছাড় তো। এসব কোন ব্যাপার না।

বিয়েতে ব্ল্যাক খুব একটা কেউ পড়ে না আমিও জানি। কিন্তু আমি নিরুপায়। আহিলের কথায় বাধ্য হয়ে পড়তে হয়েছে।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে নিশা কনুই দিয়ে গুতা মারল।

— গুতা দিচ্ছিস কেন?
— তুই কোথায় হারিয়ে গেলি, তোকে ফিরিয়ে আনলাম।

নিশার সাথে অনেক গল্প করলাম। হলুদের অনুষ্ঠান শেষে মাস্ক পার্টির আয়োজন করা হয়। যেখানে মাস্ক পড়ে সবাই যার যার পার্টনারের সাথে ড্যান্স করবে। লাইট অফ করা থাকবে নিজের পার্টনারকে চিনে নিতে হবে ড্যান্স করতে করতে। আমি প্রথমে মানা করেছিলাম কারণ আমি তেমন ভালো ড্যান্স পারিনা আর তার চাইতে বড় কথা আহিল কখনোই এসব পছন্দ করে না।নিশা আমাকে একথা বলতেই আমার চোখের সামনে অন্ধকার দেখতে লাগলাম।

— প্রানো প্লিজ রাজি হয়ে যা না ড্যান্সের জন্য!
— দেখ নিশু, আহিল এসব পছন্দ করে না। ও খুব রাগ করবে।
— আমি জিজুকে মানাতে পারলে তুই রাজি হবি তো?
— তুই কখনোই ওনাকে রাজি করাতে পারবি না। আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।

প্রানো যখন ওয়াশরুম যায় তখন আহিলকে কল করে নিশা।

— হ্যাঁ নিশা বলো,কোন প্রবলেম?
— না জিজু। আপনার একটা পারমিশন লাগবে।
— কিসের?
— আসলে আমি প্রানোকে একটা ইয়াররিং দিয়েছি কিন্তু ও পড়তে চাইছে না কিছুতেই।
— কেন?
— ও বলছে যদি আপনি বলেন, তাহলে পড়বে।
— আচ্ছা তুমি প্রানোকে ফোন টা দাও আমি বলে দিচ্ছি।
— ও তো ওয়াশরুমে গেছে, আসলে আপনি শুধু বলবেন যেন আমার কথাটা মেনে নেয়।
— আচ্ছা।

তখনই প্রানো চলে আসে। প্রানোকে দেখে ফোনটা এগিয়ে দেয় ওর দিকে।

— এই নে জিজুর সাথে কথা বল।
— হ্যাঁ বলুন আহিল!
— আচ্ছা, আমাকে কি তুমি ছোট করতে চাও নাকি। আমি তোমার ইচ্ছের দাম দেই না এটা বুঝাতে চাও নাকি সবার কাছে।
— এসব আপনি কি বলছেন?
— ঠিকই বলছি, নিশা যেটা বলছে সেটা মেনে নাও।
— আপনি ভেবে বলছেন তো কি বলছেন?
— একদম আমার ওপরে কথা বলবে না।

একথা বলেই কলটা খট করে কেটে দিল আহিল। আমার পুরো কথাটাই শুনলো না।

— এবার হয়েছে মহারানী? চল একটু পরে অনুষ্ঠান শুরু হবে।

নিচে যেতেই সবাই রেডি হলো ড্যান্সের জন্য। আলো নিভিয়ে দেয়া হলো।সবার চোখে মাস্ক আমি অন্ধকারে বুঝতে পারছিলাম না আহিল কোথায়। আমি আহিলকেই খুঁজে যাচ্ছিলাম মনে মনে।।হঠাৎ করে মনে হলো আমার হাত ধরে কেউ টানছে। আমার মনে হলো এইটা আহিল। আহিলের মতোই ব্ল্যাক সুট পড়া। আমি বারবার জিজ্ঞেস করে যাচ্ছি আহিল আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু গানের জোরালো শব্দে সে কথা হয়তো ওনার কানে পৌঁছাচ্ছে না।হলরুম থেকে আমাকে টেনে গার্ডেনের এক কোনায় নিয়ে এসেছে।

— আরে আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন আহিল?
— আমি আহিল নই প্রানো।

একথা বলে চোখ থেকে মাস্ক খোলার পরে সামনে থাকা লোকটাকে দেখে আমি পুরো অবাক হয়ে গেলাম।এনাকে কখনোই আমি এভাবে আশা করিনি। তাও আবার এই বাড়িতে। কিভাবে সম্ভব??

চলবে…….

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here