হিংস্রতায় ভালোবাসা পর্ব ৭

#হিংস্রতায়_ভালবাসা
#পর্ব_০৭
#রীমা_শারমিন

আহিল পাগলের মতো গাড়ি চালাচ্ছে। আর আমি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছি। বাসার সামনে এসে গাড়ি থামলো। আহিল গাড়ি থেকে নেমে আমাকে টেনে বের করলো। হাত ধরে টানতে টানতে বাগানে নিয়ে গেল ছুড়ে মারল। তারপর এদিক সেদিক কি যেন খুজতে লাগলো।আমি মাথা নিচু করে কাদতে লাগলাম। হঠাৎ করেই মনে হলো বৃষ্টি পড়ছে উপরে তাকাতেই বুঝলাম এটা বৃষ্টির পানি নয় আহিল পানির পাইপ দিয়ে পানি দিচ্ছে।

— কি করছেন আহিল,এভাবে ভিজিয়ে কেন দিচ্ছেন?
— খুব শখ তোর অন্য ছেলেদের শরীর দেখানোর তাই না?
— আহিল আ আপনি ভুল বুঝছেন, আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি!
— আচ্ছা,আচ্ছা, তুই ইচ্ছে করে করিসনি। অনিচ্ছায় অন্য ছেলের কাছ থেকে শাড়ি নিয়েছিস? আর এই কথা আমার বিশ্বাস করতে হবে?
— আমি সত্যি বলছি।
— চুপ, একদম চুপ।

পানির পাইপ ফেলে দিয়ে টানতে টানতে বাড়ির ভিতরে ফ্লোরে ছুড়ে মারতেই ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম। কপালের বেশ খানিকটা জায়গা কেটে গেছে টবের সাথে লেগে।
কিন্তু আহিল সেটা দেখেও না দেখার ভান করে রইল।কাটা জায়গা থেকে গলগল করে রক্ত বেরোতে লাগলো।

— এবার বল ওই ছেলে কে ছিল?
— আমি জানি না, সত্যি বলছি!
— আমার সাথে একদম মিথ্যে বলবি না প্রানো, তুই ওকে না চিনলে ও তোকে শাড়ি কেন দিয়েছে, বল?
জোরে ধমক দিয়ে বলল। আহিলের ধমকে কেপে উঠলাম। আহিল আবারও হাত ধরে হ্যাচকা টানে উঠিয়ে নিল আমাকে।পেছন থেকে হাত মুচড়ে ধরে আবারও জিজ্ঞেস করল, আমার হাত এদিকে ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে।

— সত্যি করে বল প্রানো কে ছিল ওই ছেলে, কি সম্পর্ক তোর ওর সাথে?
— আমি জানিনা জানি না আমি,, চিনি না ওই ছেলেকে হয়তো ভুল করে দিয়েছে ওই শাড়ি টা।
— বুঝতে পেরেছি আমি, তুই এভাবে বলবি না।তোকে দিয়ে কিভাবে কথা বের করতে হয় আমি খুব ভালো করেই জানি।

আহিল কথা বলতে বলতেই প্যান্ট থেকে বেল্ট খুলতে লাগলো।

— এখনো বল প্রানো কে ওই ছেলে?
— আ আমি জানিনা।

আহিল প্রচন্ড রাগে বেল্ট দিয়ে পেটাতে লাগলো। আমার কোন কথাই উনি শুনলেন না।এতবার করে বলার পরেও আমার কোন কথা বিশ্বাস করলেন না।ক্লান্ত হয়ে একসময় সোফায় বসে পড়ল।।

— এবার বল কে ছিল ওই ছেলে?
— আমি আপনাকে কতবার বলেছি আমি চিনিনা ওকে।
— ঠিকাছে চল আমার সাথে।

আমাকে নিয়ে সিড়ি দিকে যেতে লাগলেন। যেতে যেতে চিলেকোঠার ঘরে নিয়ে ফেলে দিলেন।

— আ আপনি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন আহিল?
— তুমি আজ এখানেই থাকবে জান!

ওনার মুখে জান কথাটা শুনে গা গুলিয়ে এলো। যে মানুষ এত নিষ্ঠুর ভাবে নিজের স্ত্রীকে অত্যাচার করতে পারে তার মুখে আদরের ডাক শোভা পায় না। আহিল দরজা বাইরে থেকে লক করে চলে গেলেন, ফিরে এলেন ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে।। তারপর সেখান থেকে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। আর শরীরে যেসব জায়গায় ফেটে গেছে সেখানে মলম লাগিয়ে দিলেন।।আহিল উঠে দরজা অবধি গিয়ে আবার ফিরে এলেন। গাল চেপে ধরে বললেন,,

— জান ভেবো না আমি তোমাকে মাফ করে দিয়েছি। তুমি ততক্ষণ এই ঘরে থাকবে যতক্ষণ না আমাকে সত্যিটা বলো।
— আমি এখানে থাকতে পারব না আহিল, আপনি তো জানেন আমি অন্ধকারে একা ভয় পাই। আর এই ঘরে অনেক ইদুর তেলাপোকা আছে। আমি থাকব না আহিল,প্লিজ আমাকে নিয়ে যান।
— হা হা হা হা। আমি সব জানি। আর সব জানি বলেই তো তোমার জন্য এই শাস্তির ব্যবস্থা করেছি জান। তুমি যখনই আমাকে বলে দিবে তখনই তোমার শাস্তি শেষ।
— আমাকে বিশ্বাস করুন আমি জানি না।
— গুড নাইট জান।

আমি কতবার করে বললাম কিন্তু আহিল আমার কোন কথাই শুনলেন না। চলে গেল এভাবে রেখে। নিজেকে বাঁচাতে অন্য একটা নিরীহ লোককে কিভাবে আমি মৃত্যুর দিকে ঢেলে দিব? সারারাত দরজার কাছে বসেই কাটিয়ে দিলাম। আহিল একবারের জন্যও আসেন নি।

আহিল অফিসে বসে কাজ করছিল। তখনই ওর ম্যানেজার মিস্টার সিনহা কেবিনে আসে।

— হ্যাঁ আংকেল বলুন?
— আর আধাঘন্টা পরে একটা মিটিং আছে তোমার মনে আছে?
— হ্যাঁ, আমার মনে আছে আংকেল। আপনি নয়নাকে একটু আমার কেবিনে আসতে বলুন।
— হুম, আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।

কিছুক্ষণ পরে,,

— may i come in, sir?
— হুম, আসুন মিস নয়না।
— থ্যাংক ইউ স্যার।
— কিছুক্ষণ পরে যে মিটিং টা আছে, সব পেপার ঠিকঠাক আছে তো?
— জ্বি স্যার, সব রেডি আছে।
— গুড। it’s a very big deal for this company,mind it…. কোন ভুল যেন না হয়।
— শিওর স্যার।
— ওকে, আপনি এখন আসতে পারেন।

নয়নাকে যেতে বলার পরেও ও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল আহিলের দিকে। আহিল তুড়ি বাজাতেই ধ্যান ভাঙে ওর।

— মিস নয়না, কোথায় হারিয়ে গেছেন?
— স সরি স্যার।
— গেট লস্ট।

নয়না মুখ ভার করে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।তখনই সামনে পরে শেলি ওর কলিগ।

— কি ব্যাপার নয়না তোমার মুখ ভার কেন? স্যার কি আজকেও বকেছে ?
— হুম!
— তোমাকে কতবার বলেছি স্যারকে ইম্প্রেস করা সম্ভব নয়।স্যার কোন অফিসের কোন মেয়ের দিকে ফিরেও তাকায় না।
— কেন,উনি এমন গম্ভীর কেন? আনরোমান্টিক লোক একটা।
— কারণ, স্যারের বউকে স্যার সবচেয়ে বেশি ভালবাসে।আর ওনাদের লাভ ম্যারেজ।স্যারের বউও অনেক সুন্দরী! তাই স্যারের কাছে কোটি মেয়েই পাত্তা পায় না।
— দেখা যাবে, এই নয়নার পিছে হাজার টা ছেলের লাইন পড়ে আছে আর স্যারকে ইম্প্রেস করা কোন ব্যাপারই না।
— দেখ পারো কি না,কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, তুমি পারবে না।
— ওকে, চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টেড।আমি এখন মিটিংয়ে যাই।

চলবে………

ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here