হিয়ার মাঝে পর্ব ২

#হিয়ার_মাঝে
২.
#WriterঃMousumi_Akter

সৎ মা ঠাসস শব্দে দুই গালে দুইটা চড় মেরে বলে জীবনে কি খাওয়া ছাড়া কিছুই শিখিস নি তুই।তরকারির ঝোল টা ফেলে কিভাবে নিরবের শার্ট টা নষ্ট করলি।বিয়ে দিলে সেদিন ই তাড়িয়ে দিবে।কারন এমন অনুক্ষনে মেয়ে কেউ একদিন ও তার বাড়িতে রাখবে না।আমার মতো তো সবাই না।

মা নিরব কে বলেন….

“বাবা নিরব শার্ট টা খুলে দাও তো।যে নষ্ট করেছে সেই ধুয়ে দিবে।আর আমাকে বলে যা ওই শার্ট টা কেচে এখনি ফ্যানের নিচে দে নইলে পরে আর দাগ টা যাবে না।”

আমি মায়ের কথা গুলো হা করে তাকিয়ে শুনছিলাম।আমার ক্ষুদায় পেট জ্বলছিলো।এক্ষুনি পড়ে যাবো এমন অবস্থা।

মা আমাকে বলে এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস। এখন তোর খাওয়া হবে না আগে শার্ট কেচে নিয়ে আয়।

আমার ক্ষুদায় মাথাটা ঘুরাচ্ছিলো মনে হচ্ছিল এখনি কিছু খেতে না পারলে আমার জান বেরিয়ে যাবে।পুরা শরীর কাঁপছিলো।

আমি নিরবের দিকে নিরব দৃষ্টিতে বুঝিয়ে দিলাম শার্ট টা আমাকে খুলে দিন।

নিরব আমার মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।হাত ধরে আমাকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলে এখানে বসো।বলেই একটা প্লেটে ভাত বেড়ে এগিয়ে দিলো আমার সামনে।নিরবের জন্য রাখা মাছ, মাংস নিরব আমার প্লেটে তুলে দিয়ে বললো নাও খাওয়া স্টার্ট করো।

নবনিতা আপু সাথে সাথে বলে ওঠে একি নিরব ভাই আপনি এটা কি করছেন।ও আপনার শার্ট নষ্ট করে ফেলছে আর আপনি ওকে আপনার খাবার দিচ্ছেন বলেই আমার প্লেট থেকে মাছ,মাংস নিরব এর প্লেটে দিতে গেলো আর নিরব সাথে সাথে নবনিতা আপুর হাত টা ধরে বলে নো।

নবনিতা আপু বলে কি হলো নিরব ভাই।

শার্ট নষ্ট হয়েছে এতে তো এমন কোনো ক্ষতি হয় নি এখানে ওর কোনো দোষ ছিলো না আন্টি। ও ছোট মানুষ ভুল হতেই পারে এভাবে মারাটা উচিত হয় নি।তাছাড়া ওর শরীর উইক খুব।দেখেই মনে হচ্ছে অনেক ক্ষুদা লেগেছে।আমরা খাচ্ছি ও কেনো আমাদের খাবার সার্ফ করে দিবে।ও এ ফ্যামিলির মেম্বার।ও আরো বেশী আদরের কারণ ও এ বাসার পুচকি।ও খেয়ে থাকলে তবেই বাকিরা খাবে এটাই নিয়ম।

জীবনে প্রথম কাউকে দেখলাম আমার হয়ে কথা বলতে।এই জীবনে প্রথম পায়ের নিচের একটু শক্ত মাটি পেলাম।খাবার গুলো যেনো বহুকাল পরে তৃপ্তি করে খেলাম।মনে হচ্ছে জন্মের পর এই প্রথম ভাল মাছ মাংস খেলাম।

ওয়াশ রুমে গিয়ে নিরবের শার্ট টা ক্লিন করতেছিলাম এমন সময় ব্রাশ করতে করতে নিরব ওয়াশরুমে আমাকে দেখে আমার দিকে এগিয়ে এলো। নিরবের শার্ট টা দেখে নিরব আমার হাত থেকে ওর শার্ট টা নিয়ে বলে একি তুমি এখন রাতের বেলা কাচাকাচি করছো কেনো?যাও পড়তে বসো।লেখাপড়া নেই তোমার।

-কোন ক্লাসে পড়ো তুমি।

-মিহি কন্ঠে উত্তর দিলাম ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে।

-উনি বলেন,এস এস সি এর রেজাল্ট কি।

-জিপিএ ৫.

-ওয়াও গ্রেটফুল। অনেক মেধাবী স্টুডেন্ট তুমি।বলেই নিরব নিজের শার্ট ক্লিন করতে থাকে।শার্ট ক্লিন করার পর আমার হাতে দিয়ে বলেন এবার এটাকে শুকাতে দাও।

নিরব নবনিতা আপুকে বলে এসো তোমাদের দুই বোন কে আজ আমি বই পড়ায়।নবনিতা আপু বলে মিথু ও পড়বে নিরব এর মুখের উপর কিছু বলতে পারে নি কিন্তু আমার সাথে পড়বে এটাতে ঘোর আপত্তি তার।চেয়ার টেবিলে বসেছি বই নিয়ে।নিরব নবনিতা আপুকে বলে তোমার এস এস সির রেজাল্ট কি।

-ভাইয়া A-।

-এত বাজে রেজাল্ট কিভাবে হলো শুনি।লেখাপড়ার এমন হাল হলে টুনির মা ও ছেলের বৌমা বানাবে না বুঝলে।লেখাপড়াতে অনেক বেশী মনোযোগ দিতে হবে।

-জ্বী ভাইয়া এখন থেকে চেষ্টা করবো।

-এইতো গুড গার্লস।মিথু কিন্তু ছোট মানুষ রেজাল্ট অনেক ভাল।জিপিএ ৫ পেয়েছে।

-নবনিতা আপু বলে ভাইয়া ওর পাশে একটা ভাল স্টূডেন্ট বসেছিলো যার টা দেখে ওর রেজাল্ট ভালো।।ও সারাদিন বই পড়ে না ঠিক ভাবে স্কুলে যায় না কিভাবে ওর রেজাল্ট ভাল হয় শুনি।

-তার মানে মিথু এতই ট্যালেন্ট যে এত ফাঁকিজুকির মাঝেও এত সাংঘাতিক রেজাল্ট। তাহলে তো মিথুকে একটা স্পেশাল গিফট দিতেই হয়।

-আপু চেচিয়ে বলে নিরব ভাই আসার সাথেই আমার বদনাম বলা হয়ে গিয়েছে তাই না। তুই নিজে কত ভাল স্টূডেন্ট, আমি কত খারাপ স্টুডেন্ট এসব বলে আমাকে ছোট করাটাই তোর উদ্দেশ্য তাইনা।বাবা আসুক বাড়ি হয় এ বাড়িতে তুই থাকবি না হলে আমি থাকবো।চেচামেচি শুনে মা এগিয়ে এসে বলেন কি হয়েছে নবু।নবনিতা আপু আমার নামে এক গাদি মিথ্যা বলে দিলো আমি নাকি তার নামে অনেক মিথ্যা বলেছি।

মা আমাকে আবার বকাঝকা শুরু করলো।

করবেই না কেনো ওর মায়ের রক্ত ই তো ওর শরীরে।ওর মা তোর বাবার কাছে আমার বদনাম বলে বলে নিজে এ বাড়িতে এসে উঠেছিলো।সবার কাছে আমাকে খারাপ প্রমান করার চেষ্টা করতো।এই পুরা ফ্যামিলির পায়ের নিচে রেকেহছিলো আমাকে।সবাই কে যাদু টোনা করেছিলো।কুটকাচালি ওর রক্তে আছে।

আমি কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।

নিরব মা কে বলে আন্টি আপনি প্লিজ মাথা ঠান্ডা করেন।এভাবে উত্তেজিত হলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।মিথু আমাকে কিছুই বলে নি।আমি জাস্ট দুজনের রেজাল্ট শুনেছিলাম এটুকুতে আপনারা মেয়েটাকে অত বেশী বকা দিলেন কেনো?

বাবা নিরব তুমি অনেক কিছুই জানোনা।আমার পুরা জীবন টা ওরা মা মেয়ে মিলে শেষ করে দিয়েছে।আমি ভুলতে পারিনা সেই খারাপ দিন গুলোর কথা।একমাত্র ওর মায়ের জন্য আমার জীবনের সব সুখ শান্তি নষ্ট হয়ে গেছিলো।বাবা নিরব তুমি ভুলেও ওর কাছাকাছি বেশী যেও না।ওর কাছাকাছি থাকলে তোমার ও ক্ষতি হবে।

আন্টি ভেবে দেখুন ওর মা যেটা করেছিলো সেটা ওর মায়ের ভুল।ও একটা নিশপাপ শিশু হয়ে এ পৃথিবীতে এসেছে।এখানে ওর কোনো দোষ নেই।

বাবা নিরব আমি কিছুতেই ওই মেয়েকে মেনে নিতে পারিনা।আমার পক্ষে মেনে নেওয়াটা সম্ভব নয়।

আন্টি নবনিতার পরে আপনার আর একটি মেয়ে হলে তাকে ও তো ভালবাসতেন।ভেবে নিন না মৃথিলা আপনার সেই মেয়ে হয়ে জন্ম নিতো।মেয়েটার মা নেই,পৃথিবীতে আপন বলতে আপনি আর নবনিতা আর আঙ্কেল ই আছে।আপনারা ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করলে ও কোথায় যাবে বলুন আন্টি।

নিরব মৃথিলার চরিত্র হুবহু ওর মায়ের মতোই হয়েছে।ও আমার নবনিতার সাথে সব কিছুতে পাল্লা দেই।ও সব জায়গা নবনিতাকে ছোট করে।

আন্টি আমি বিষয় টা দেখবো।তবে মৃথিলার উপর থেকে রাগ অভিমান সব তুলে নিন।দেখবেন মানসিক শান্তি পাবেন।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কাঁদছি আর একা একা মায়ের সাথে কথা বলছি।

মা আমাকে কেউ ভালবাসে না।সবাই শুধু ভুল বোঝে।কেনো আমাকে একা করে চলে গেলে।আমাকে কেনো নিয়ে গেলে না মা।আজ বাইরের একটা মানুষের কাছে আমাকে ছোট করছে ওরা।মা আমিতো ওদের আপন করে নিয়েছি কিন্তু ওরা আমাকে আজ ও ভালবাসে নি মা। আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও মা।

এমন সময় নিরব বেলকনির গ্রিল ধরে বলে আহা আজকের আকাশ টা বেশ সুন্দর। কোথাও কোনো মেঘ নেই কিন্তু এত বৃষ্টি কোথা থেকে এলো।আহা আই লাভ রেইন।বৃষ্টিতে মন খুলে গান গাইতে মন চাই।আফসোস একটা প্রিয় জন নেই থাকলে তাকে নিয়ে রোমান্টিকতার দেশে পাড়ি জমাতে পারতাম।

আমার কাঁন্না কখন যে থেমে গিয়েছে নিজেই টের পাই নি।আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি আপনি বৃষ্টি পেলেন কোথায়।পাগল হয়ে যান নি তো।এই ফুটফুটে প্রকৃতির মাঝে বৃষ্টির ফোটা কোথায়।

বৃষ্টি হচ্ছে আমার মনে
বৃষ্টি হচ্ছে কারো চোখে
এই বৃষ্টি প্রকৃতির দেওয়া নয়
এই বৃষ্টি কারো মনের ভীষণ অভিমান।

আমি উনার কথার কিছুই বুঝলাম না।উনাকে বললাম এইযে কোন বৃষ্টি।
নিরব আমার দিকে তাকিয়ে বলে বৃষ্টি এখন থেমে গিয়েছে। বৃষ্টি থামাতেই এত আয়োজন আমার।মিস মৃথিলা চোখের এই মূল্যবান পানি অকারণে ঝরালে কখনো কাঁদতে চাইলে তো আর কাঁদতে পারবে না।আমি নিরব কে বললাম কেউ কি আর ইচ্ছা করে কাঁদতে চাই।

হুম চায় তো।মানুষ এর জীবনে অনেক প্রাপ্তি আছে,সাফল্য আছে সুখ আছে সেগুলা পেলে আনন্দে কাঁদতে ইচ্ছা করে পাগলি।

আমি নিরব কে বললাম আপনি ঘুমোতে যান,আমিও যায়।আর আমার সাথে অকারণে কথা বলবেন না প্লিজ তাহলে অকারণে অশান্তিতে জডিয়ে যাবেন আপনি।আর আমি সেটা চাই না।বলেই রুমে এসে সুয়ে পড়লাম।

চলবে,,,

(পাঠক পাঠিকাদের কাছে অনুরোধ রইলো কমেন্ট করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here