হিয়ার মাঝে পর্ব ১

বড় আপুকে দেখতে এসে পাত্রপক্ষ যখন আমাকে পছন্দ করে চলে গেলো সৎ মা চুলের মুঠি ধরে বলে,, তোর মা আমার সংসারে এসে ঢুকেছিলো আর তুই এসে আমার মেয়ের সংসার এ ঢুকতে চাইছিস।বেঈমানি কি তোর রক্তে আছে মৃথিলা।কেনো ঢং করে পাত্র পক্ষের সামনে যেতে হলো তোকে।নিজের গায়ের রং সুন্দর বলে কি আমার মেয়েকে অযোগ্য প্রমান করতে চাস।তোকে না বলেছিলাম পাত্র পক্ষের সামনে যাবি না।বল কি জন্য গিয়েছিলি।মা আমাকে বেশ মারতে মারতে বলে বেরো এ বাড়ি থেকে খাইয়ে পরিয়ে একটা কাল সাপ পুষছি।

আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম মা আমি ইচ্ছা করে যায় নি।আমি কিভাবে বুঝবো পাত্র রান্না ঘরে প্রবেশ করবে।নবনিতা আপুর বিয়ে ভেঙে যাক আমি সেটা কখনোই চাই নি।প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও মা।ছোটো বোন কি বড় বোনের ক্ষতি চাইতে পারে।

মা আমার গাল টিপে ধরে বলে কিসের বোন।ও তোর মায়ের পেটের বোন না। তুই ওর সৎ বোন।আর তুই আমার সতীনের মেয়ে হস।

এমন সময় নবনিতা আপু এসে আবার আমার চুলের মুঠি ধরে বলে কি সমস্যা তোর।আমার চেয়ে গায়ের রং ভালো বলে সব সময় মানুষের সামনে আমাকে ছোট করতে চাস।নিজে সুন্দরী সেটা জাহির করতে চাস তাইনা।মা জানো আমাকে সব সময় এটা শুনতে হয় আশরাফ সাহেব এর ছোটপক্ষের মেয়ে পরীর মতো আর বড় পক্ষের টা অত বেশী সুন্দর না।মা আমার এই দুইপক্ষ কথাটা শুনতে মোটেও ভাল লাগে না।কেনো আমাকে এটা শুনতে হবে।বন্ধুরা বলে তোর ছোট বোনটার সাথে রিলেশন করিয়ে দে পরীর মতো দেখতে।মা আজ পাত্র পক্ষ আমাকে রিজেক্ট করলো। ওর জন্য কোনদিন আমার বিয়ে হবে না মা।বাবা কেনো ওর মাকে বিয়ে করেছিলো।বাবার জন্য আজ আমাকে মানুষের সামনে ছোট হতে হয়।আমার বন্ধুরা আমাকে রেখে কেনো ওকে পছন্দ করে।সব জায়গা ও আমার চেয়ে বড়।

মা তখন বাজখাই গলায় বলে ওঠে,,,,,

ওর মা রূপ দেখিয়ে তোর বাবার মাথা ঘুরিয়েছিলো।আমার সংসারে কাল হয়ে ঢুকেছিলো আর আজ তোর সংসার হওয়ার আগেই ওর বাঁধা।আমার সাজানো সংসার টা তছনছ করে ভেঙে চুরে গুড়িয়ে দিয়েছিলো।আমি আজ ও ভুলিনি সেইসব কষ্টের কথা।ওর মা আমার জীবনের সব থেকে বড় অভিশাপ।আর আজ ও সেই এক ই লাইনে যাচ্ছে।যাবে না ক্যানো ওর মার রক্ত যে ওর শরীরে আছে।ওদের রক্তে আছে অন্যর সংসারে ঢোকা।কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে সেটা হবে না।আমার মেয়ের সংসারে আমি কোনদিন ওর ছায়া পড়তে দিবো না।

আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম মা আপু প্লিজ আমার মৃত মায়ের নামে এর এগুলা বলো না।সেতো আর এ দুনিয়ায় নেই।আজ যদি মা বেঁচে থাকতেন তাহলে আমি মাকে নিয়ে এখান থেকে চলে যেতাম।কিন্তু মা তো নেই তোমরা ছাড়া আমার কেউ নেই।তুমি কেনো বার বার আমাকে সতীনের মেয়ে বলো মা।আমার খুব কষ্ট হয়।

মা তখন আরো কতগুলো গালি গালাজ করে বলে এসব ন্যাকা কাঁন্না না করে সব প্লেট গুলা ধুয়ে পানি মুছে সোকেজ এ উঠাও।সারাদিন এ কিছুই খাই নি।আপুকে দেখতে আসবে বলে সকাল থেকে রান্নাঘরের কাজে বিজি আছি।মা আপুকে বারবার খাইয়ে দিচ্ছে অথচ আমাকে একবার ও খেতে ও বলে নি।এ বাড়িতে আমার কখনো এমন সাহস হয় না যে ক্ষুদা লাগলে নিজে নিয়ে কিছু খাবো তাহলে খাবারের থেকে মাইর বেশী হবে আর উঠে আসবে আমার মৃত মায়ের নামে গাদা খানেক গালি।ছোট বেলা থেকে আপু খেয়ে কিছু থাকলে আমি খেয়েছি না হলে না।আমি হাজার চেষ্টা করেও মায়ের মেয়ে হয়ে উঠতে পারিনি।মা কিছুতেই আমাকে মেনে নিতে পারেন না।আমাকে কষ্ট দিতে পারলে উনি শান্তি পান।

সেদিন সন্ধায় ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে আছি।মন টা বড্ড বেশী বিষন্ন।সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে।রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে।কমলা রঙের আভা চারদিক কমলা কমলা আভা হয়ে আছে।প্রকৃতি কমলা কালারের সাজে সজ্জিত হয়েছে।হঠাত সিঁড়ি দিয়ে যেনো কারো পায়ের আগমণ। কেউ উঠে আসছে পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে।আমি পেছনে তাকিয়ে দেখলাম না।আমার সেই মুড নেই তাকিয়ে দেখার।

হঠাত অচেনা কেউ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে উচু করে বলে কিরে পুচকি।আমি চমকে গেলাম কে এই অচেনা মানুষ এভাবে উচু করে ধরেছে। বললাম ছাড়ুন আগে কে আপনি?এ বাসায় কার পারমিশনে ঢুকেছেন।অসভ্য, অভদ্য,লোক ছাড়ুন আগে বলছি।আমার বুক দুরু দুরু করে কাঁপছে আমার।

ওপাশের মানুষ টা কালো জিন্স,কালো শার্ট,কালো সানগ্লাস মুখে খোচা দাঁড়ি, ঠোঁট দুইটা গোলাপি নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মৃদু মৃদু হাসতে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বলে এক্সকিউজ মি ম্যাডাম আমাকে কি গুন্ডা লাগে।আম্মুর এই ইনোসেন্ট ছেলেটাকে অসভ্য,গুন্ডা বানিয়ে দেওয়া হলো।

আমি তোতলিয়ে বললাম কেএএএ আপনি? আমাকে ছাড়ুন প্লিজ।

উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে আমার দিকে এক পা দু’পা করে এগোতে এগোতে বলেন আমি অসভ্য তাইনা।তাহলে হালকা একটু অসভ্যতা করি।আই থিংক তোমার সাথে আগে কেউ অসভ্যতা করে নি।তাই অসভ্যতা নিয়ে তেমন কোনো আইডিয়া নেই।এই যুগে সব কিছু সম্পর্কে একটু আইডিয়া না থাকলে হয় না।তাই তোমার অসভ্যতা সম্পর্কে একটু আইডিয়া থাকা উচিত।

আমি ভয়ে ঢোক গিলছি বারে বার।বুকের মাঝে কয়েকশত ভোল্টেজ এ ধুকপুক করছে।মা বা আপু এসে দেখে ফেললে আমাকে মেরেই ফেলবে।এমনি তে অশান্তির শেষ নেই আমার।এখন যদি আবার এই বিষয় টা দেখে ফেলে তাহলে মা তিল থেকে তাল করবে।আজ হয়তো এ বাড়িতে আমার শেষ দিন হবে।ছাদের কর্ণারে চোখ বন্ধ করে ওয়াল ঘেষে বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে আছি আমি ভাবছি লোকটা কিছু অনর্থ ঘটিয়ে ছাড়বে।বেশ কয়েকমিনিট পরে দেখি কারো কোনো সাড়া শব্দ নেই।আস্তে করে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি আমার থেকে বেশ কয়েক হাতের দূরত্ত্বে দাঁড়িয়ে আছে মানুষ টা।প্যান্টের পকেটে হাত গুজে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।

ভ্রু নাচিয়ে বলেন বাটপার বাপের মতো বাটপারি কথা শিখেছো তাইনা।

আমি হা করে তাকিয়ে আছি উনার দিকে। কে এই আজব মানুষ। আমার বাবাকে টেনে কথা বলছে ক্যানো?আমি এবার একটু মুড নিয়ে বললাম খবর দার বাবা তুলে কথা বললেন না বলে দিচ্ছি।

লোকটি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন বাহ বাবা ভক্ত মেয়ে।

আপনি আমাকে বাটপার বললেন ক্যানো?

আমাকে অসভ্য বললে তার জন্যই বললাম বাবার মতো বাটপারি কথা।এনি ওয়ে ছোট বেলা লাফিয়ে লাফিয়ে ঘাড়ে উঠতি ওপ্স সরি এখন আর তোমাকে তুই বলা যাবে না।তুমি তো অনেক বড় হয়ে গিয়েছো।বাট দেখতে পিচ্চি ই আছো।

এমন সময় পেছন থেকে নবনিতা আপু ডাকে নিরব ভাই আসুন মা খাবার দিয়েছে। লোকটা সাথে সাথে নিচে চলে গেলো।

আমার সাথে থাকা মানুষ টার নাম তাহলে নিরব।বাট কে উনি?আগে তো দেখি নি আর চিনি ও না।

নবনিতা আপু আমার কাছে এসে রুক্ষ কন্ঠে বলেন এখানে এসে গায়ে হাওয়া লাগাচ্ছিস।নিচে যে এত কাজ পড়ে আছে সেদিকে কি খেয়াল আছে তোর।

আপু উনি কে?

উনি নিরব ভাই।আব্বুর বন্ধুর ছেলে।তুই খুব ছোট বেলা দেখেছিস। আমার ই তাই ভাল একটা মনে নেই।তবে ফেসবুকে উনার ছবি আর চ্যাটিং করে বেশ পরিচিত ভাইয়ার সাথে।উনি আব্বুর সব থেকে ঘনিষ্ট বন্ধুর একমাত্র ছেলে নিরব।লেখাপড়া শেষ করে আজ ই বাংলাদেশে এসছেন।অনেক দিন বিদেশ গিয়েছেন তাই দেশ এ ঘুরতে এসছেন। উনার কিন্তু খুব রাগ।নরমালি থাকেন দেখে বোঝা যায় না।তাই উনার যত্নের যেনো ত্রুটি হয় না।আম্মুদের পাশের রুম টা সুন্দর করে সাজিয়ে দে উনার জন্য।বলেই আপু চলে গেলো।আমি গুটি গুটি পায়ে নিচে গেলাম।

ডাইনিং টেবিলে খাবার দেওয়া হয়েছে বাবা কয়েক দিনের জন্য বিদেশ গিয়েছেন তাই আপু,মা আর নিরব নামের লোক টা ডাইনিং এ বসে আছে খাবারের জন্য।মা আমাকে বলে দাঁড়িয়ে না থেকে খাবার গুলো দে।ছেলেটা অনেক দূর থেকে এসছে কত সময় না খাওয়া।আমি চুপচাপ কিছু না বলে খাবার দিতে লাগলাম।

সারাদিন না খেয়ে থাকায় শরীর খুব দূর্বল লাগছিল।ইচ্ছা হচ্ছিলো সব খাবার একাই খেয়ে ফেলতে পারবো। জন্মের পর থেকে কোনদিন পরান ভরে কিছু খেতে পারি নি।আপু কত যত্নে বড় হচ্ছে।বাবার টাকার অভাব না থাকা সত্ত্বেও আমার জন্য সব কিছুতে অভাব তাদের।বাবার আদর ও সেভাবে আমার পাওয়া হয় নি।

এমন সময় তরকারী দিতে গিয়ে নিরবের গায়ে ঝোল পড়ে যায়।আর এই অপরাধে কঠিন শাস্তি পেতে হলো আমাকে….

চলবে,,,

#হিয়ার_মাঝে
১.
#WriterঃMousumi_Akter

(আসসালামু আলাইকুম।প্রথম পর্ব কেমন হয়েছে জানিনা।ভাল লাগলে রেসপন্স করবেন অবশ্যই। আপনাদের ভাল লাগার উপরে বাকিটা দিবো।
ভালবাসা সবাই কে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here