#হৃদয়সিন্ধুর_পাড়ে💕
পর্ব:১০ [থ্রিলার+রোম্যান্টিক]
#কায়ানাত_আফরিন
.
–শোনো ডাক্তার হিসেবে আমি যেমনই হই না কেনো…….ছেলে হিসেবে আমি কিন্ত খুবই রোম্যান্টিক। নিজের সমস্ত ভালোবাসা প্রেয়সীর জন্য জমিয়ে রেখেছিলাম। এখন যেহেতু একটা প্রেয়সী পেয়ে গিয়েছি তাকে উজাড় করে ভালোবাসার দায়িত্বটাও আমার। কি বলো…….কিস করবা নাকি?
.
নিভ্রর শেষ কথা শুনে কান গরম হয়ে গিয়েছে মৌনির। ক্রমশ যেন অস্থিরতা বেড়েই চলছে। নিভ্রর চোখে-মুখে আছে একটা দুষ্টু হাসি যা দেখে মৌনির শ্বাস রুদ্ধ হওয়ার মতো উপক্রম। মৌনি কোনো কিছু না ভেবে নিভ্রর বুকে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আমতা আমতা করে বলে ওঠে………..
—আ-আমি এখন ব-বাথরুমে যাবো।
নিভ্রকে কোনো কথা বলার সময় না দিয়ে মৌনি তৎক্ষণাৎ বাথরুমে চলে যায়। নিভ্র খাটে চিৎ হয়ে শুয়ে সশব্দে হেসে চলছে। অপলক দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে সদ্য ঘুম থেকে ওঠা মৌনির মায়াবী মুখটার দিকে। বাথরুমের দরজাটি লাগানোর আগে মৌনি একবার মুখটা বের করে নিভ্রর দিকে তাকালো। নিভ্র খাটে শুয়ে একহাত মাথায় ভর দিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ঠোঁটে ঝুলিয়ে রেখেছে একটা মিষ্টি হাসি। নিভ্র চোখ মারতেই মৌনি খপ করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।
.
দরজায় হেলান দিয়ে মৌনি ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। কিছুক্ষণ আগের কথা ভেবে উঠতেই যেন শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ওর। এটা কোন নিভ্রকে দেখলো ? তবে নিভ্রও ওকে ভালোবাসে ! এটা ভাবতেই মোনির ঠোঁটে ফুটে এক চিলতে প্রশান্তির হাসি। জীবন কতটাই অদ্ভুদ তাই না?কখন কার সাথে কি হয়ে যায় কেউ টেরই পায় না। ওদের পরিচয়টা হয়েছিলো বেশ কাকতলীয়ভাবে। এককথায় নিভ্র ওর জীবনে দেবদূত হয়ে এসেছিলো। আর সেই দেবদূতের প্রেমের জালেই ও আটকে যায়। হৃদয় জানান দেয় নতুন কিছু অনুভূতির।
.
.
.
১৬.
রোজকার মত আজও সূর্য দেখাচ্ছে নিজের রোদের তেজ। চারিদিকে ভ্যাপসা গরমের আবেগহীন রাজত্ব। নিষ্প্রভ এই সময়টিতে নিভ্রর সাথে সময় কাটাতে চেয়েছিলো মৌনি কিন্ত নিভ্র কিছু মেডিক্যাল রিপোর্টস নিয়ে তড়িঘড়ি করে কোথাও যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। প্রত্যেকটা রিপোর্টসই যে মৌনির এ নিয়ে ওর বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। মৌনি চোখে-মুখে উদ্বিগ্নতা রেখে অস্ফুটস্বরে বললো………….
.
—আমার রোগটা কি খুবই ভয়ঙ্কর?
নিভ্র নির্লিপ্ত চোখে তাকায় মৌনির দিকে। মৌনির মুখমন্ডলে স্পষ্ট কৌতুহল দেখা যাচ্ছে। নিভ্র ওর হাত ধরে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পিনপন নীরবতা কেটে যাওয়ার পর নিভ্র বলে………
—দেখো মৌনি। এখন আমি যা বলবো প্রত্যেকটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে। তোমার একটা ভুল ধারনা ছিলো যে তোমার মানসিক রোগের কথা আমি তোমার থেকে লুকিয়েছি। ব্যাপারটা তা না। আমি সিউর ছিলাম না যে তোমার ”Overnight disorder” ছিলো-কি না ! প্রথম রাতেই তোমার লক্ষণগুলো দেখে আমার মনে সন্দেহ তৈরি হয়। কোনো তিক্ত অতীত গহীন রাতে স্বপ্ন হিসেবে আসা , প্রচুর আবেগী মন , মারাত্নক যৌন চাহিদা , অস্থিরতা , মানুষের ওপর আঘাত করে বসা এসব কিছুই এর স্বাভাবিক লক্ষণ। এমনকি এটাও হতে পারে যে আমার প্রতি তোমার যে অনুভূতি কাজ করছে তা এই রোগের কারনেই হয়তো।
.
নিভ্রর কাছ থেকে মৌনি নিজের হাত সরিয়ে নেয়। অবাক হয়ে বলে…..
—এসব কি বলছেন?ন-ন-না। আমার অনুভূতি কখনই কোনো রোগের মধ্যে পড়তে পারে না।
—মানসিক রোগ খুবই ভয়ঙ্কর মৌনি! তোমার হৃদয় শরীর সবকিছু আবদ্ধ করে নিতে পারবে এই মস্তিষ্ক; এমনকি তোমার অনুভূতিকেও। নাহলে তুমিই বলো ;তুনি একজন Mass communication এর student আর teenage এর মেয়েদের মতো তুমি আমাকে ট্রিট করো। আবার গতরাতে তো ছুড়ি নিয়ে আমায় আঘাতও করতে চেয়েছিলে……..
.
মৌনির চোখদুটো ছলছল করছে কিন্ত নিভ্রর দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। মৌনিকে সুস্থ করতে আবেগ নয় ; একজন সাইক্রেটিস্ট হিসেবে ওর চিকিৎসা করতে হবে।
—আমি কখনও কথা লুকোতে পছন্দ করি না মৌনি ; তাই সরাসরি তোমায় সবকিছু বলাম। আর তুমি ভয় পাবে না ; তোমায় সুস্থ করার দায়িত্ব আমার।
—আমিই কেন এ রোগের শিকার হলাম নিভ্র ভাই?
.
মৌনি কথা বলতে পারছে না। নিভ্রকে হারানোর ভয়টা আবারও জেঁকে বসেছে ওর মনে। নিভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে । তারপর প্রতিউত্তরে বললো…..
—তোমার ডোজ দেওয়া হয়েছিলো এটার। যাে তুমি ”Overnight Disorder” এর রোগী হয়ে ধীরে ধীরে তোমার মেমরি হারিয়ে ফেলো। আমার মনে হয় তোমায় যারা মারতে চেয়েছে তারাই এ কাজ করেছে পেনড্রাইভটা কোনোভাবে তাদের হস্তক্ষেপে রাখার জন্য।
.
—আমি কি তবে আপনাকেও ভুলে যাবো?
—ভুলতেও পারো।
মৌনির কান্নার বাধ যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে। ওকে আবারও অস্থির হতে দেখে নিভ্র আর কিছু বলে না। আপাতত এতটুকু ওকে জানতেই হবে। রোগী তার রোগ সম্পর্কে না জানলে কখনোই ঠিক হতে পারবে না। নিভ্রর বুক ফেটে যাচ্ছে ভেতরে ভেতরে ওর কষ্ট দেখে কিন্ত মৌনির সামনে সে নির্বিকার।
—আপনি এখন কোথায় যাচ্ছেন।
—এখানকার একটা রিসার্চ ল্যাবে। চিন্তা নেই একঘন্টার মধ্যেই এসে পড়বো। ইমারজেন্সি না হলে কখনোই যেতাম না কিন্ত তোমার সুস্থতার জন্য হলেও আমায় যেতে হবে। খাবার সময়মতো খেয়ে নিও মৌনি।
.
একথা বলেই নিভ্র চলে যায়। এই পুরো বাসাটিতে মৌনি এখন একা। চারিদিকে গরমের লীলাখেলায় মৌনি ক্রমশ যেন হাপিয়ে উপেছে। পানির তেষ্টাও পেয়েছে প্রচুর। মৌনির হঠাৎ মনে পড়লো যে নিভ্রর ইমেইল দিয়ে গতকাল যে প্রফেসরকে পেনড্রাইভের ডেটাবেজটা পাঠিয়েছিলো সেটা কি আদৌ গিয়েছে?
নিভ্রর ল্যাপটপটা সাথে সাথেই গিয়ে অন করে মৌনি। সব ডেটাবেজ এর 50% ঠিকঠাকমতো গিয়েছে দেখে একটা প্রশান্তির হাসি হাসে। এবার আর কোনো ভয় নেই। একবার ওই জহির শেখ সহ পুরো গুষ্ঠিকে ফাঁসির পাল্লায় ফেলতে পারলেই কাজ হয়ে যাবে। শীঘ্রই ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।
মৌনি এসব ভাবতেই তাচ্ছিল্যের ভাব নেয়। কারন ওই জহির শেখের ছেলে রিদান শেখের জন্যই ওর জীবন আজ এখানে দাঁড়িয়েছে। মৌনি হলো প্রচন্ড আত্নবিশ্বাসী একটি মেয়ে। জীবনের সব শখ আবেগ ভুলে নিজের পড়ালেখা আর ক্যারিয়্যারকেই সবার উপরে দেখতো। মেয়ে হিসেবেও ছিলো প্রচুর সাহসী। কিন্ত ও অনুভব করতে পারছে ওর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো পরিবর্তন হয়ে আসছে। ভয়, প্রেম, ভালোবাসা এসব কিছুর মোহে পড়ে ভুলে যাচ্ছে নিজের লক্ষ্যকে। এদিক দিয়ে আবার রয়েছে নিভ্র। এককথায় সবকিছু কেমন যেন প্রহেলিকার মতো জালের আবরণ ঘিরে ধরেছে তাকে।
.
.
.
আচমকা থাই গ্লাসভাঙ্গার ঝনঝন শব্দে তান্ডব তৈরি করলো এই নীরব পরিবেশ। ভাবনার জালে আটকে থাকা মৌনিও যেন বাস্তবে ফিরে এসেছে। কিসের শব্দ ছিলো এটা?তখনই ভাঙ্গা বড় থাই গ্লাসের স্থান দিয়ে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে বেশ কয়েকজন লোক। হাতে গান দেখতেই মৌনির শরীরে হিম ধরে গিয়েছে। এইসব জিনিস আগে ওর কাছে স্বাভাবিক লাগলেও এখন প্রচন্ড ভয় পায় মৌনি। নিজের শরীরের ভারসাম্য যেন হারিয়ে গিয়েছে। কাপাকাপা স্বরে বলে ওঠে……..
.
—ক-ক-কে ত-তোমরা?
—চট্টগ্রামের হাওয়া খেয়ে আমাদের ভুলে গেলে নাকি মৌনি?তোমার যমরাজ এসে পড়েছে।
.
পেছন থেকে কারও পরিচিত কন্ঠ পেতেই মৌনি স্তব্ধ হয়ে গেলো। ভয়ে গায়ে ওর কাটা দিয়ে উঠেছে। পেছনে ঘুরে সে যাকে দেখলো মৌনি ভাবতেও পারেনি যে সে এখানেও এসে পড়বে। দু কদম পিছিয়ে গেলো সে। আগন্তুকটি আর কেউ না স্বয়ং রিদান।ডাইনিং টেবিলে চেয়ারে বসে পায়ের ওপর পা তুলে আপেল চিরিয়ে যাচ্ছে। বাম হাতের গানটি দিয়ে কপাল স্লাইড করতে ব্যস্ত সে।
মৌনির প্রচুর ভয় হচ্ছে রিদানকে দেখে। এককথায় অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেছে।”যমরাজ” কথাটা শুনেই সে বুঝে গিয়েছিলো ব্যাক্তিটা রিদান।
মৌনিকে এতটা ভয় পেতে দেখে রিদান তৃপ্তির হাসি হাসে। চেয়ার থেকে উঠে সজোরে ওর কাছে গিয়ে কষে একটা থাপ্পড় মারতেই মৌনি ফ্লোরে পড়ে যায়। মৌনি কি করবে বুঝতে পারলো না। রিদানকে দেখে ওর স্নায়ু কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তবুও অনুনয়ের স্বরে বললো…..
.
—র-রিদান !আমায় ছ-ছেড়ে দ-দিন প্লিজ।
—পেনড্রাইভ কোথায়?
মৌনি নিশ্চুপ।
—আমি জানতাম তুমি বলবে না। এখন আমার আর কিছুই করার নাই বেবি! (মৌনির গাল চেপে ধরে) তিলে তিলে শেষ করবো আমি তোমায়।
একথা বলেই রিদান ওর মুখের সামনে একটা স্প্রে করতেই চোখ দুটো ভারী হয়ে আসে ওর। অজান্তেই নিভ্রকে ওর মন কল্পনা করে চলছে কিন্ত বাস্তবতাটি ভিন্ন। তবে কি নিভ্র ওকে বাঁচাতে আসবে না আগেরবারের মতো………..
.
.#হৃদয়সিন্ধুর_পাড়ে💕
পর্ব:১১ [থ্রিলার+রোম্যান্টিক]
#কায়ানাত_আফরিন
.
১৭.মৃদু আলোর হাতছানিতে মৌনির চোখ খুলছে ধীরে ধীরে। আফসোস! হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে বিধায় ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারছে না। মাথায় মৌনি অনুভব করতে পারছে অসহ্য যন্ত্রনা। চোখ খুলতেই সে দেখতে পারলো আবছা একটা অবয়বকে। ঘরের মৃদু আলোতে সেই অবয়বের কালো ছায়াটাই দেখা যাচ্ছে যে রকিং চেয়ারে বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মৌনিকে দেখতে ব্যস্ত।মৌনি অস্পষ্ট স্বরে বলে ওঠলো………
—র-রিদান!
তখনই মৃদু আলোর ঘরটা হয়ে যায় আলোময়। হ্যাঁ , রকিং চেয়ারে রিদানই বসে আছে। চোখের দৃষ্টি অসম্ভব তীক্ষ্ণ। আর এই দৃষ্টিকেই প্রচন্ড ভয় পায় মৌনি। রিদান বাকা হাসি দিয়ে বলে ওঠলো…….
—বাহ ! তোমার সিক্স সেন্স দেখি ভালোই কাজ করে। মানতে হবে।
মৌনি হাত পা বাঁধা অবস্থায়৷ই পেছাতে থাকে। যদিও রিদান ওর থেকে অনেক দূরে। তবুও অস্থির হয়ে উঠছে মৌনি। ভয়ে যেন তটস্থ হয়ে গিয়েছে। রিদান ঘাত টা হালকা কাত করে মৌনিরদিকে তাকায়।গালে টোল পড়া হাসিটা অনেকের কাছে সৌন্দর্যের বস্তু হলেও রিদানের সেই হাসিটা মৌনির বুক কাপিয়ে তোলে। আকুতির স্বরে রিদানকে বললো……..
—র-রিদান ! ক-কেন এমন ক-করছেন?
রিদান এবার উঠে এসে মৌনির সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে। রিদানকে কাছে আসতে দেখেই মৌনি পিছে দেয়াল ঘেষে বসে আছে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে অনবরত নোনা জল। রিদান ব্যঙ্গ সুরে বললো…….
—ওহহো! মৌনি বেবি দেখি ভয় পেয়ে গেলো। তো…….কেমন লাগছে এখানে……?
একথাটা বলেই রিদান পকেট থেকে একটা সিগারেটের বের করে জ্বালাতে থাকে। মৌনি কিছুই বুঝতে পারছে না যে রিদান ঠিক কি করতে চাচ্ছে।
রিদান আবার জিজ্ঞেস করলো……….
—অনেক উড়াউড়ি করেছো তুমি। আমার জীবনে তোমার মতো এমন দুঃসাহসী মেয়ে দেখিনি। আর এজন্যই তুমি আবার চোখে আটকে গেলে না চাওয়া সত্ত্বেও। You know what……তোমার দুঃসাহসীটা আমার মোটেও পছন্দ না। তুমি আমার সম্পদ আর আমার কথামতো চলবে। আমি চাইলে আজীবন তোমায় আটকে রাখবো আর আমি চাইলেই তোমায় শেষ করবো। তবুও এই জীবনে আমার থেকে তুমি ছাড়া পাবে না।
—কতদিন থাকবো? একদিন না একদিন তো তোমার থেকে ছাড়া পেয়েই যাবো।
.
রিদান হেসে ওঠে। হাসিটা মৌনির কাছে ভালো লাগলো না। কারন রিদানের এই হাসির পেছনে ভয়ঙ্কর কোনো অর্থ আছে। রিদান আচমকাই কষে একটা চড় মারে মৌনিকে। চড়টা এতই জোরে ছিলো যে মৌনির নাক থেকে রক্ত ছিটকে পড়ে। মৌনি আবারও হাইপার হয়ে উঠছে। রিদান গালটা চেপে ধরে মৌনির। চিৎকার করে বলে ওঠে…….
.
—তুই মরে যাবি তবুও আমার কাছ থেকে ছাড়া পাবিনা। তোর এই মানসিক রোগটা কখনও আমায় ভুলতে দেবে না তোকে। (একটা লম্বা নিঃশ্বাস নেয় রিদান) আমি লাস্টবার জিজ্ঞেস করবো Where is the pendrive Damm !
.
রিদানের ধমক শুনে মৌনি কেপে উঠে। রিদানকে বেশ ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। যেন এই মুহূর্তে উত্তর না দিলে এখনই শেষ করে ফেলবে ওকে। মৌনি কিছুই বলবে না। দরকার পড়লে ও মরে যাবে কিন্ত পেনড্রাইভটা রিদানের হাতে দেবে না। মৌনিকে চুপ থাকতে দেখে রিদান ওর গাল ছেড়ে অন্যদিকে মুখ ফেরায়।
—বলবে না তো তাইনা…..well….
.
জ্বলন্ত সিগারেটটা এবার মৌনির হাতে চেপে ধরতেই চিৎকার দিয়ে ওঠে মৌনি। ব্যথায় ছটফট করে চলছে কিন্ত রিদানের মুখে কোনো ভাবান্তর নেই। যেন পাষাণ হৃদয় নিয়েই সে এ পৃথিবীতে জন্মিয়েছে। মৌনি চিৎকার করে বলে ওঠে…….
—ব-ব্যাথা লাগছে আমার।
—এটা তোমার আগে ভাবা উচিত ছিলো।
মৌনি আর পারছে না সহ্য করতে। চোখের সামনে সবকিছু ঘোলাটে হয়ে আসতেই মৌনি চোখ বন্ধ করে দেয়ালে হেলে পড়ে। রিদান তা দেখে সিগারেটটা নিয়ে আবার রকিং চেয়ারে গিয়ে বসলো।
—So sad মৌনি। তোমার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র interest নেই। কিন্ত কি করবো বলো?আমাদের কালো কাজের এতবড় একটা প্রুফ তুমি যোগাড় করেছো তোমাকে কি এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া যাবে? অন্যান্য মেয়েদের যেমন হাল করি , তোমারও ঠিক তেমনই হাল করবো।
.
.
.
১৮.
ঘরে ভারসাম্যহীনভাবে বসে আছে নিভ্র। একপাশে রক্তের ছিটেফোটা আবার থাই ভাঙ্গা দেখে নিভ্রর শ্বাস আটকে আসছে।ঘরের এমন বেগতিক অবস্থা দেখে সোহান, লিজা , নিশু , তুর্য সবাই অবাক। তুর্য একটু সাহস করে বলে ওঠলো……
—মৌ-মৌনির য-যদি কিছু হয়ে……..
–কিছু হবে না মৌনির! আমি ওকে আবার ফিরিয়ে আনবো।
নিভ্র চিৎকার করে বললো। মৌনির চিন্তায় মাথাটা ওর ফেটে গেলেও সে বারবার নিজেকে স্বাভাবিক করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। মৌনি কোথায় আছে , কিভাবে আছে , কে-ই বা ওকে নিয়ে গেলো নিভ্রর কিছুই জানা নেই। হঠাৎই একটু শান্ত হলো সে। পরিস্থিতি কঠিন হলে চিন্তা না করে বুদ্ধি দিয়ে কাজ করতে হবে।
লিজা এবার বললো…….
—কি ভাবছিস তুই !
—আমার ল্যাপটপটা নিয়ে আয় তো।
লিজা ল্যাপটপটা নিয়ে আসতেই নিভ্র ল্যাপটপটা খুলে ইমেইল চেক করলো। সেখানে মৌনি প্রফেসর এনায়েতউল্লাহকে যেই ডেটাবেজটা পাঠিয়েছিলো সেটার ড্রাফ্ট এখনও আছে দেখে মনে একটা আশার আলো জাগে। একে একে সব ডেটাগুলো চেক করেই নিভ্র বুঝলো আসল ঘটনা। কে এই রিদান ! মৌনির সাথে কি ওর সম্পর্ক , কি ওর রোগের এই কারন। ল্যাপটপটা রেখেই নিভ্র সোফায় নিজের গা এলিয়ে দেয়। একদৃষ্টিতে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে নিভ্র মনে সুক্ষ্ণ একটা পরিকল্পনার জাল বুনতে ব্যস্ত।
—কি ভাবছিস নিভ্র?(নিশু)
—মৌনিকে নিয়ে আসার রাস্তা পেয়ে গেছি।
—মানে? কিভাবে?(সোহান)
—খুব বেশি কঠিন না। ওই রিদানের ঠিকানাটা আগে জানতে হবে। তবেই আমার আধা কাজ হয়ে যাবে?
—ম-ম-মানে? ও-ওই রিদান শেখ? ভাই মৌনির আশা ছেড়ে দে। রিদান শেখ খুবই নির্দয়, পাষাণ আর ভয়ঙ্কর একটা মানুষ্। একবার টিভিতে একটা নিউজ দেখেছিলাম যে তার একটা সম্পত্তিতে বস্তি ছিলো বলে কিভাবে বস্তি উজাড় করে দিচ্ছিলো। পলিটিক্যাল পাওয়ার আছে বলে কেউ তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না। আর তুই সেখান থেকে মৌনিকে নিয়ে আসবি? (সোহান)
নিভ্র প্রখর চোখে সোহানের দিকে তাকায়।
—রিদান শেখের কাছে হয়তো অনেক পাওয়ার আছে কিন্ত আমি এমন কোনো পাওয়ারই ইউজ করবো না। আমি খেলবো হচ্ছে বিরাট একটা মাইন্ড গেম যেই গেম এর খপ্পড়ে পড়ে রিদান শেখ কিছুই করতে পারবে না।
—কিন্ত কিভাবে?
—ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে নিশু……….ভায়োলেন্ট মাথায় কখনোই কোনো কিছু করা যায় না।
নিভ্রর স্বাভাবিক কন্ঠ শুনে সবাই যেন ধাপে ধাপে অবাক হচ্ছে। নিজের প্রিয়জন যখন নিখোঁজ হয়ে যায় একজন স্বাভাবিক মানুষ অবশ্যই চিন্তিত হয়। কিন্ত নিভ্রর বিষয়টা সেদিকে ভিন্ন।নিভ্রর তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পর্কে সবাই ভালোমতো জানে তাই এই খেলাটা যে খুবই জমে ওঠবে সে বিষয়ে সবাই নিশ্চিত।
—একটা প্রবলেম আছে?
নিভ্রর কথা শুনে ওরা নিভ্রর দিকে তাকায়।
—কি প্রবলেম? (লিজা)
—মৌনি ! ওর মানসিক অবস্থাটা খুবই অবনতির দিকে যাচ্ছিলো। আর রিদান যদি ওকে physically বা mentally torture করে তবে……….
.
—তবে কি?
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে নিভ্র। তারপর বলে…….”ওর মেমরি লস হতে পারে।”
.
—কি? (সবাই একসাথে)
—হ্যাঁ।
—আল্লাহই জানে মেয়েটার কি অবস্থা।
নিভ্র নিশ্চুপ। মেয়েটার মায়াবী চেহারাটা ভালোমতই দেখেছে সে। প্রতিটা রাতে ও মানসিক যন্ত্রনায় ছটফট করেছে শুধুমাত্র ওই খারাপ মানুষগুলোর জন্য। মেয়েটার জীবনকে একপ্রকার দুর্বিসহ করে তুলেছিলো। মৌনির শরীরে যদি একটা আঁচও লাগে তবে কাউকে ছাড়বে না সে। নিভ্র একদৃষ্টিতে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠলো…….
.
— আমি চ্যালেন্জ করলাম ফ্রেন্ডস একদিনের মধ্যেই মৌনিকে ফিরিয়ে আনবো।
.
.
.
.
~চলবে
.
.
~চলবে~
আজকে লিখতেই বসেছি সাড়ে সাতটা বাজে। তাই পোস্ট করতে দেরি হয়ে গেলো।