হৃদয়সিন্ধুর_পাড়ে পর্ব ৬+৭

#হৃদয়সিন্ধুর_পাড়ে💕
পর্ব:৬ [থ্রিলার+রোম্যান্টিক]
#কায়ানাত_আফরিন
—নি…নিভ্র ভ..ভাই? ক..কি করছেন?
মৌনির কাপাঁকাপাঁ কন্ঠ শুনে একটা দুষ্টু হাসি হাসে নিভ্র। যা দেখে মৌনি ক্রমাগত ঢোক গিলেছে। এমনিতেও নিভ্রর ছোট ছোট কাজের জন্য নিভ্রর প্রতি সে দুর্বল। তার ওপর এমন মারাত্নক চাহিনীতে মৌনি কেমন যেন বেখেয়ালী হয়ে যাচ্ছে।
—কি করছি আমি? জাস্ট বলেছি যে আমরা প্রেমিক-প্রেমিকার মতো ঘুরবো। ভালো হবে না?
.
মৌনি এবার নিভ্রর দিকে তাকায়। পরনে স্কাই ব্লু শার্ট আর অগোছালো চুলের সাথে নিভ্রকে বেশ মানিয়েছে। মৌনির ধুকধুকানি ক্রমশই যেন বাড়ছে নিভ্রর এমন রূপ দেখে। কেননা মৌনির জানামতে নিভ্র খুব ডিসেন্ট একটা ছেলে। আর এই ডিসেন্টের পেছনে এত দুষ্টু চাহিনী যে লুকিয়ে আছে এ তিনদিনে মৌনি বিন্দুমাত্র তা ধারনা করতে পারেনি। কিন্ত তবুও নিভ্রকে ওর ভালোলাগে। নিভ্রর মায়াবী চাহিনী, মাতালকরা কন্ঠ , সবকিছুই অনেক ভালোলাগে। মৌনিকে এত অস্বস্তিতে পড়তে দেখে নিভ্র দূরে সরে আসে মৌনির থেকে। একটা স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গি রেখে বললো…..
.
—রিলেক্স মৌনি। I’m just kidding ! প্রেমিক-প্রেমিকার মতো ঘুরলেই তো আর আমরা প্রেমিক প্রেমিকা হয়ে যাবো না। তাই না?
অজান্তেই নিভ্রর এই কথাটি মৌনির বুকে একেবারে তীরের মতো বিঁধলো। নিভ্রর দৃষ্টিভঙ্গি বেশ স্বাভাবিক। তবে নিভ্রর কথায় মৌনির ভেতর বয়ে যাওয়া দু সেকেন্ডের উথাল-পাতাল ঝড়কে নিমিষেই শান্ত করে মৌনি। ব্যপারটি নিয়ে কখনোই এতো গভীরভাবে ভাবেনি। নিভ্র এমন একজন ছেলে যাকে যেকোনো মেয়েই মনে ধরতে পারবে। তাছাড়া নিভ্র ওকে help করছে , আর ও কি-না !
.
—কি হলো মৌনি? Any problem?
—না। তেমন কিছু না।
—ওকে। তাহলে রেডি হয়ে নাও। দেখি ! গাধাগুলো উঠেছে কি-না……..
.
নিভ্রর কথা শুনে মৌনি ফিক করে হেসে দেয়। নিভ্র ওর হাসির অর্থ বুঝে বলে ওঠে….
—ভুল বললাম নাকি? সবগুলা গাধাই তো !
.
.
———–
১০.
দুপুরের কর্কশ রোদ পেরিয়ে ঘনিয়ে এসেছে বিকেল। বিকেলের এই চমৎকার মুহূর্তে অটোরিকশা এগিয়ে চলছে চট্টগ্রামের বিখ্যাত পতেঙ্গা বীচের পথে। নিভ্রর পরনে সাদা চেক টিশার্ট ওপরে একটি সবুজ রঙের শার্ট। কালো চুলগুলো সবসময় কপালের কাছেই ফেলে রাখে সে। এদিকে নিভ্র আর মৌনিকে দেখে সোহান , তুর্য, নিশু আর লিজা চরম মজায় মেতে আছে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় থেকে এ পর্যন্ত মৌনির হাত এক সেকেন্ডের জন্যও নিভ্র ছাড়েনি। যেনো মৌনি একটা বাচ্চা মেয়ে আর ছেড়ে দিলেই যেন নিভ্র থেকে ছুটে অন্যদিকে দৌঁড়ে পালাবে। আর মৌনিও তেমন কোনো জোরাজুরি করেনি হাত ছাড়ার জন্য। নিভ্রর এই হাতটি মৌনির কাছে অনেক ভরসাযোগ্য মনে হয়। সে যদি পারতো তবে সারাজীবন এই হাত আর হাতের মালিককে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইতো।
.
—আরে নিভ্র ! এইবার তো ওর হাত ছাড়। নাকি ফেবিকল লাগিয়ে দিয়েছিস হাতের মধ্যে? (সোহান)
নিভ্র চোখ গরম করে তাকাতেই সোহান চুপসে যায়। নিভ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলে………
.
—মৌনি এখানকার কিছুই চিনেনা তাই আমি কোনো রিক্স নিতে চাইনা আমি। ওর হাত ধরবো না তবে কি তোর হাত ধরে ঘুরঘুর করবো ব্যাটা?
.
—আসলেই তো সোহান ! বুঝতে পারছিস ব্যাপারটা কত ভয়ঙ্কর হবে? একটা ছেলে-মেয়ে হাত ধরে ঘুরলে তারা ভাই-বোন হবে , বন্ধু-বান্ধবী হবে, প্রেমিক-প্রেমিকা অথবা স্বামী-স্ত্রী হবে। আর দুজন জোয়ান ছেলে যদি হাতে হাত রেখে ঘুরে তবে তো………….নাউযুবিল্লাহ ! আমি আর মুখে আনতে চাচ্ছি না।
লিজা অবাক গলায় বলে ওঠে। নিভ্র এবার বিরক্ত । প্রচন্ড পরিমাণে বিরক্ত। লিজার এই একটা সমস্যা। কোনো কথা মুখে চেপে রাখতে পারে না।
—মুখে যুখন আনতেই চাস নি তবে মুখে আনলি কেন?একটা লাইন ছাড়া তো বাকি সবই বলেছিস যে তুই সোহান আর নিভ্রকে ইনডাইরেক্টলি ”গে” বলতে চেয়েছিস?
.
তুর্যর কথায় মৌনি নিজেকে আর স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। হাসি যেন নাকে-মুখে উপচে বেরিয়ে যাবে। ওদিকে সামনে বসা অটোওয়ালাও শরীর কাঁপিয়ে মৃদুস্রে হাসছে যা নিভ্রর চোখ এড়ায়নি। কি বিব্রতকর অবস্থা!
—আমি ওদের গে বলবো কেন ? আমি তো এটা বলেছি যে মানুষ ওদেরকে…….
.
—আল্লাহর ওয়াস্তে তুই থাম বইন ! আমি এবার মইরা যামু।(সোহান)
.
নিভ্রর বন্ধুগুলো চমৎকার মজার মানুষ। সবসময় হাসি-আনন্দে মেতে থাকে। সবাইকেই অল্প সময়ে আপন করে নিতে পারে যেমনটা মৌনিকে করেছে। মৌনিকে তারা বিন্দুমাত্র একা অনুভব করতে দেয়নি। সমাজ বলে এ দুনিয়ার মানুষ ধীরে ধীরে অধঃপতনে যাচ্ছে। কোনো বিপদে কেউ থাকেনা পাশে দাঁড়ানোর মতো। কিন্ত মৌনির কাছে ব্যাপারটা আজ ভুল প্রমাণিত হলো। ভালো মন্দ সবকিছুই এ সমাজে আছে। এ পৃথিবীতে যেমন খারাপ মানুষ আছে ; নিভ্রর মতো ভালো মানুষও আছে। সেদিন ভাগ্যের জোরে নিভ্রকে পেয়েছিলো সে। না পেলে হয়তো ওর পরিণতিটা অন্যরকম হয়ে যেতো।
—পতেঙ্গা বীচে এসে পড়েছি আমরা।
.
লিজার কথায় অটো থেকে নেমে পড়ে সবাই। ভাড়া মিটিয়ে সবাই এগিয়ে যেতে থাকলো চট্টগ্রামের এই বিখ্যাত পর্যটন স্থানটির দিকে। মৌনির মধ্যে কাজ করছে চরম রকমের উত্তেজনা। সমুদ্র ও এর আগেও একবার দেখেছিলো কুয়াকাটার শিক্ষাসফরে। কিন্ত তখনকার উত্তেজনা আর এখনকারটা বেশ আলাদা। সিড়ি পেরিয়া সবাই নেমে গেলো সুসজ্জিত এই বালুর কাছে। এগিয়ে যেতে থাকলো মৌনি। ওর হাত এখনও নিভ্রর হাতের বন্ধনে আবদ্ধ। কিন্ত সেদিকে মৌনির ভ্রুক্ষেপ নেই।
পশ্চিম আকাশের লালচে আভার সাথে সূর্য এখন পানি ছুই ছুই। সে দৃশ্য যে ঠিক কতটা রোমাঞ্চকর হতে পারে মৌনির তা ধারনা ছিলো না। আবেশে নিভ্রর হাত আরও গভীরভাবে আঁকড়ে ধরে সে। ফলে নিভ্র একটা মায়াবী চাহিনী দিয়ে মৌনির দিকে তাকায়। মৌনির অপরূপ মুখশ্রীতে অবাকের যেন বিরাট এক পাহাড় যা দেখে নিভ্রর ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি ফুটে ওঠে। নিভ্র এটাই চায় যে মৌনি এ সৌন্দর্যের ভীড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলুক। ভুলে যাক নিজের সকল ডিপ্রশন , একাকিত্ব আর অসহায়তা।
—ধন্যবাদ নিভ্র ভাই। আমায় এত সুন্দর একটি জায়গায় নিয়ে আসার জন্য।
.
—পা ভিজাবে?
মৌনি তাকায় নিভ্রর দিকে। নিভ্রর চোখগুলো অদ্ভুদ এক কথা ব্যক্ত করছে।
—মানে?(মৌনি)
—বললাম সমুদ্রে পা ভিজাবে নাকি?
—হুম………
—চলো তবে আমার সাথে।
আচমকাই নিভ্র কোলে তুলে নেয় মৌনিকে। মৌনির চোখ এবার ছানাবড়া। আবেশে নিজের দুহাত দিয়ে আকঁড়ে ধরে সে নিভ্রর কাধ আর গলা। ব্যস্ত স্বরে নিভ্রকে প্রশ্ন করলো….
.
—এ-কি? আমায় কোলে তুললেন কেন?
.
—একটু অপেক্ষা করো।
.
নিভ্র নিশুকে ইশারা করে বলে দেয় যে ওরা দুইজন অন্যদিকে যাচ্ছে। সমুদ্রের পানিরাশির সাথে থাকা বালুগুলো পেরিয়ে নিভ্র আসে নির্জন একটি কোণায়। পতেঙ্গার মেইন সাইট থেকে এখানে জনমানব অনেক কম। যারা আছে তাদেরও দুরত্বের কারনে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।
—আমি তোমায় নামালেই তুমি আমার পায়ের ওপর ভর দিকে দাঁড়াবে।
নিভ্রর প্রতিটি কথাই মৌনির কাছে গোলকধাঁধা থেকে কোনো কম কিছু মনে হলো না। বিস্ময়ের চরম ধাপে উঠে মৌনি বলেই ফেললো……..
.
—পাগল হয়েছেন আপনি? খামোখা আমি কেনো আপনার পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াবো?
.
—যা বলেছি আগে সেটা করো তো !
.
নিভ্র ওকে কোল থেকে নামিয়ে দিতেই মৌনি নিভ্রর পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ায়। তাল সামলাতে না পেরে মৌনি পরেই যাচ্ছিলো কিন্ত নিভ্র ওর দু বাহু এমনভাবে চেপে রেখেছে মৌনির পক্ষে কখনোই পড়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। মৌনি এবার নিভ্রর অনেকটাই কাছে। টান টান উত্তেজনা কাজ করছে মৌনির মনে। নিভ্রর প্রতি ও দুর্বল হতে না চাইলেও নিভ্র বাধ্য করে মৌনিকে নিভ্রর মায়ায় ফেলতে। নিভ্রর চোখের সাথে নিজের চোখের দৃষ্টি মিলিয়ে ফেললেই মৌনি স্থির হয়ে যায়। ডুবন্ত সূর্যের তীর্যক আলোতে নিভ্রকে ভয়ংকর পরিমাণ সুন্দর লাগছে। বাদামী চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে স্ফটিকের মতো। লালচে ঠোঁটের নকশাতে মৌনি যেন হারিয়ে যাচ্ছে। নিভ্রকে এত সুন্দর যেন কখনোই লাগেনি আজকের মতো।
হঠাৎ সমুদ্রের ঠান্ডা পানি রাশি চমৎকারভাবে নিভ্র আর মৌনির পা স্পর্শ করলো। এমন ঠান্ডা পানির প্রবাহ মৌনির শিরা-উপশিরায় চরম মাত্রার শীতলতা নিয়ে যাচ্ছে। নিভ্রর শার্টটি আঁকড়ে ধরতেই নিভ্র স্বতস্ফূর্ত একটা হাসি দিয়ে প্রশ্ন করলো….
—কেমন লাগলো ব্যাপারটা?
.
—চমৎকার। কিন্ত কেন এরকম লাগলো আমার?
.
—সমুদ্রে পা ডোবানোটা সবাই কমবেশি ইন্জয় করেছে কিন্ত কেউ কি তা বালুর স্পর্শ ছাড়া করতে পারবে?কখনোই না। সমুদ্রের পাড়ে পা ভেজানো মানেই বালুর স্পর্শ পেতে হবে। কিন্ত লবণাক্ত এই ঠান্ডা পানিতে বালুর স্পর্শ না পেয়ে শুধু ঠান্ডা পানিতে নিজেকে বিলিয়ে দেবে এর থেকে উত্তম অভিজ্ঞতা হয়তো আর হবেনা যেটা তুমি করেছো।
.
মৌনি কিছুক্ষণ ভেবে দেখলো ব্যাপারটা আসলেই তাই। পায়ে বালুর স্পর্শ যেন না লাগে নিভ্র তাই কোলে তুলে ওকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসলো। আবার দাঁড়াতেও বললো নিভ্রর পায়ের ওপর ভর দিয়ে। মৌনি নিভ্রকে যতই দেখছে ততই যেন অবাক হচ্ছে । গতানুগতিক জীবনের পাল্লায় সবকিছু একঘেয়েমি লাগতে শুরু করেছিলো মৌনির কাছে। কিন্ত নিভ্র তাকে জীবনের নতুন চাঞ্চল্যতার মাঝে ডুবে থাকতে শিখিয়েছে। শিখিয়েছে জীবনের অভিজ্ঞতার পাল্লাকে ভারী করতে….নতুনভাবে বাঁচতে।

—নিভ্র ভাই আপনি এত ভালো কেন?
—মানে?
—এই যে আমায় এত সাহায্য করছেন , আমায় নতুনভাবে জীবনটাকে উপভোগ করা শিখাচ্ছেন অপরিচিত হওয়া সত্ত্বেও।
.
নিভ্র মলিন হাসি হাসে। মৌনি সে হাসির দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। মুখের ওপর আছড়ে পড়ছে অবাধ্য চুলগুলো। নিভ্র সে চুলগুলো নরম হাতে কানের পেছনে নিয়ে যায়।
—এখনও কি আমরা অপরিচিত…….মৌ !
.
নিভ্রর এই ”মৌ” নামটি অন্য মাত্রার বিস্ময়ে নিয়ে গেলো মৌনিকে। বুকের হার্টবিট যেন এবার বন্ধ হয়ে গেলো। নিভ্রর উত্তপ্ত নিঃশ্বাসের ভারে নুইয়ে পড়ছে সে। নিভ্র আবারও বললো…….
—বারবার অপরিচিত বলো কেন? মনে করবে আমি তোমার শুভাকাঙ্খী। তোমার বিপদে আল্লাহ আমায় পাঠিয়েছে তোমার বন্ধু হিসেবে পাশে থাকার জন্য। কিন্ত আমাদের সম্পর্কে বন্ধুত্বের মতো না। যা তুমিও জানো আর আমিও জানি। হয়তো এর থেকেও কম নয়লে বেশি কিছু। তাই আমি তোমার শুভাকাঙ্খী হিসেবে থাকতে চাই। আর তুমি হবে আমার বিশেষ জন।
.
নিভ্রর প্রতিটি কথাতেই মৌনি একপ্রকার হারিয়ে গেলো। গোধূলী আকাশটা এখন অনন্য রূপের মনে হচ্ছে মৌনির কাছে। অদূরেই বীচের কোল ঘেষে তৈরি পথটি সুসজ্জিত হয়েছে আলোয়। মৌনি মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে……
.
—নিভ্র ভাই। আপনাকে না ভয়ঙ্কর রকমের সুন্দর লাগছে !
—সুন্দর আবার ভয়ঙকর হয় নাকি? জানতাম না তো?
—হ্যাঁ হয় তো। এমন সুন্দর যেটা দেখলেই বুকে তোলপাড় শুরু শহয়ে যায় এটাকে বলে ভয়ঙকর সুন্দর।
—তাহলে তো দেখছি ডাক্তারি ছেড়ে ভূতের কাজ শুরু করতে হবে যাতে মানুষ আরও ভয় পায়। মানুষ আমায় ডাকবে ”ভুতুরে নিভ্র” বলে।
.
নিভ্রর কথায় খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো মৌনি। নিভ্র ওর হাসি দেখে প্রশান্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললো। এই মেয়েটাকে এভাবেই সুস্থ করে তোলতে হবে। মানসিক রোগ কতটাই অদ্ভুদ তাই না? কখন যে মস্তিষ্কে জায়গা করে নেয় তা ধারনাই করতে পারে না মানুষ। কিন্ত তার থেকেও হৃদয়ের রোগটা নিভ্রর কাছে আরও মারাত্নক লাগে। মৌনি নামের এই মেয়েটা অজান্তেই ওর হৃদয় দখল করে নিচ্ছে যা নিভ্র বুঝতে পারছে কিন্ত প্রতিক্রিয়া করতে পারছে না। মৌনির নামটা ভাবলেই ওর সম্পূর্ণ মনমস্তিষ্ক যেন হয়ে যায় নির্বাক শ্রোতার মতো।
.
নিভ্রকে এত গহীনভাবে মৌনির দিকে তাকাতে দেখে মৌনি স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়। আজকের মতো এতটা সুন্দর সন্ধ্যা মৌনির কখনও অনুভব হয়নি। ক্রেডিটটা অবশ্যই দিতে হবে নিভ্রকে।
—ধন্যবাদ নিভ্র ভাই।
—You’re most welcome……..চলো ফিরে যাই এখন?
—অবশ্যই।
এবার দুজনে একটু দুরত্ব নিয়ে হাঁটা শুরু করলো। নিভ্র নিজের পাতলা শার্টি মৌনিকে দিয়েছে হাতে রাখার জন্য। সমুদ্রের গর্জনের মধুর শব্দে বারবার হারিয়ে যাচ্ছে দুজনে। মৌনি বারবার আড়চোখে নিভ্রর দিকে তাকাচ্ছে। নিভ্রর প্রতিটা মুভমেন্ট ওর নজর কেড়ে নিচ্ছে। কিশোরীর মতো বলতে মন চাচ্ছে যে…….”এই ছেলেটার ওপর ক্রাশ খাইলাম গো” । কিন্ত ওদের ব্যাপার ভিন্ন। তবুও মৌনির এ অবাধ্য মন তা মানতে নারাজ। তবে সত্যিই সে নিভ্র নামে এই ছেলেটার প্রেমে পড়ে গেলো না তো?
.
.
.#হৃদয়সিন্ধুর_পাড়ে💕
পর্ব:৭ [থ্রিলার+রোম্যান্টিক]
#কায়ানাত_আফরিন
১১. রাত প্রায় পোনে দুইটা। বাড়ির সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকে মুখরিত হয়ে উঠেছে সারা পরিবেশ। কিন্ত নিভ্র সেসব পরোয়া না করে বেলকনিতে চেয়ার পেতে কোনো একটি বিষয় নিয়ে গুগল ঘাটাঘাটি করতে মগ্ন। ফর্সা কপালে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে চিন্তার ভাঁজ। এই মৃদু বর্ষার শীতল রাতেও তার নাকের ডগায় বিন্দুপরিমাণ ঘাম লেপ্টে আছে। মৌনির যে ”Overnight disorder” এর মতো একটা ভয়ঙ্কর রোগ আছে নিভ্র আগেই তা আন্দাজ করতে পেরেছিলো। তবে তা যে এত ভয়ঙ্কর পরিমাণে ওর অস্তিস্তে বিরাজ করবে তা ধারনা করতে পারেনি। অথচ মেয়েটা কতটাই না স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করে বেড়াচ্ছে !
মৌনির এ রোগের কোনো স্পেসিফিক চিকিৎসা এখনও বাংলাদেশে হয়নি কারন এটা ইউরোপ থেকে উৎপত্তি হয়েছে যার একটি ডোজ মৌনির অগোচরেই ওর শরীরে দেয়া হয়েছিলো। তবে বিশেষ কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে এই আর্টিকেল পড়েই নিভ্র স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। মাঝে মাঝে নিভ্র অনেক অবাক হয়ে যায় নিজের কাজগুলো দেখে। এই পর্যন্ত বেশ কয়েকটি অপারেশনে সে সাক্সেসফুল হয়েছে সে………আবার কখনও কখনও বিফলও হয়েছে । কিন্ত মৌনির প্রতি ওর যেই চিন্তাটি কাজ করে ; নিভ্রর মনে পড়েনা কখনও অন্য কারও প্রতি এমন অনুভূতিটা কাজ করেছিলো কি না।
.
—একি নিভ্র? এখনও ঘুমাসনি?
তুর্যকে সামনে দাঁড়াতে দেখে নিভ্র ল্যপটপটা বন্ধ করে রাখে। চোখে মুখে বেশ ক্লান্তির ছাপ। ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলে উঠলো…….
—না। একটু রিসার্চ করছিলাম।
.
তুর্য মলিন হাসে নিভ্রর কথা শুনে। একটা মেয়ের জন্য ওর এত দরদ দেখে তুর্য বেশ অবাকই হচ্ছে।
—মৌনির জন্য চিন্তা করছিস না?
—হ্যাঁ।
—আচ্ছা আমাকে একটা কথা বল্ তো। এই মেয়েটা অসুস্থ মানলাম। বাট তুই জানোস না ওর সাথে থাকলে তোর লাইফের রিক্স আছে?
—মানে?
—এমন ভাব করছিস যেন কিছুই তুই জানিস না। নিভ্র think carefully ! এই মেয়েটাকে তুই প্রথম পেয়েছিলি গুলিবিদ্ধ অবস্থায়। ওকে মারার জন্য একটা ক্রাইম গ্যাং পড়ে আছে। দোষটা ওর না। মৌনি যেই বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করছে এই ক্ষেত্র্রটা খুবই রিস্কি……….
.
এবার ক্ষেপে ওঠলো নিভ্র। অনেকটা উচ্চস্বরে বলে ওঠে……….
—তো কি বলতে চাস তুই? আমি তাহলে এই বিপদে ওকে ছেড়ে দিবো……..
—ছেড়ে দিবি কেনো? তোর সিকিউরিটির একটা,,,,,,,,,
—জাস্ট শাট আপ স্টুপিড ! তুই আমার ফ্রেন্ড বলে বেশি কিছু বলবো না। একটা কথা ভালোমতো শুনে রাখ। মৌনি যতদিন আমার সাথে থাকতে চাবে ততদিনই ও থাকবে। ওর ফুল সিকিউরিটির দায়িত্ব আমি নেবো। ওকে সুস্থও করবো আমি।
এর জন্য আমার যদি রিস্ক নিতে হয় তবুও আমি রাজি। এই ব্যাপারে তোর মুখে আর একটা কথাও আমি না শুনি তুর্য।
.
এটা বলেই নিভ্র থেমে যায়। রাগে তার গা কাঁপছে। তুর্য এই প্রথম নিভ্রকে এত পরিমাণ রাগতে দেখলো। নিভ্র তুর্যকে পরোয়া না করেই উঠে চলে গেলো নিজের ঘরে। আর তুর্য বাকরুদ্ধ। নিভ্রর এই কাজে মুখে মিহি হাসি ফুটলো তুর্যের। আনমনে বলো……
—তোর পার্টনার পেয়ে গিয়েছিস তুই। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
.
.
—————
পূব দিগন্তে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে সূর্যের রেখা। বাইরে বহমান ফুরফুরে বাতাস। ছাদের একপ্রান্তে মৌনি দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে কখন আকাশটা পরিষ্কার হবে। কাপাকাপা হাতে নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে সে। ফুরফুরে বাতাসের ওর মনে প্রশান্তির বদলে এলোপাথারি ঝড় বয়ে দিচ্ছে। মোবাইলটা অন করতেই দেখলো ওর আব্বু-আম্মু বন্ধু আর প্রফেসরের অনেকগুলো মিসডকল। বাবার সাথে যদিও নিভ্রর ফোন দিয়ে কথা হয়েছে কিন্ত মৌনি তাকে বলেনি যে ও এখন ঢাকায় নেই। কিন্ত প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ করাটা এখন খুব প্রয়োজন। প্রফেসর এ সময় মর্নিং ওয়াকে বের হবে তাই আর কিন্ত না ভেবে প্রফেসরের নম্বরে কল দিলো মৌনি……..। দু’তিনবার রিং হওয়ার পরই প্রফেসর কল ধরলো। ব্যতিব্যস্ত স্বরে বললেন……
.
—হ্যালো , মৌনি ! কোথায় তুমি? ঠিকাছো তো? তিনদিন ধরে তোমায় কলের ওপর কল করে যাচ্ছি বাট নো রেসপন্স…….
—আমি এখন চট্টগ্রামে আছি স্যার।
.
প্রফেসরকে কথা বলতে না দিয়েই মৌনি ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে। মৌনির কথা শুনে অপরপাশে থাকা এনায়েতউল্লাহ সাহেব খানিকটা অবাক হয়ে যায়।
—চট্টগ্রামে আছো মানে? আমাদের দুদিন পর সব ফাইল জমা দিতে হবে আর তুমি…….wait ! তুমি ঠিকাছো তো মৌনি?
—এখনও আল্লাহর রহমতে বেঁচে আছি স্যার । ক’দিন লুকিয়ে থাকবো এভাবে জানিনা। সেদিন রিদান শেখের লোকদের কাছ থেকে একটুর জন্য বেঁচে ফিরি আমি। আমায় আটকানোর জন্য আমার পায়েও শুট করেছিলো।
তারপর একে একে মৌনি নিভ্রর কথাও খুলে বলে প্রফেসরকে। সব শুনে এনায়েতউল্লাহ সাহেব চিন্তায় পড়ে যান মেয়েটির জন্য। এভাবে ওর জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে পেনড্রাইভ দেওয়া উচিত হয়নি উনার যা ভালোমতই এখন বুঝতে পারছেন।
.
—স্যার পেনড্রাইভটা যতদ্রুত সম্ভব আমার কাছ থেকে নিয়ে নিন। এই দুর্নীতির কাজটি যেভাবেই হোক বন্ধ করতে হবে। নাহলে হাজারো মানুষের ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যাবে ফেক সার্টিফিকেটের পাল্লায় পড়ে।
—পেড্রাইভটা কোথায় এখন?
.
—আমার কাছেই আছে।
.
—তোমার কাছে এর 50% সফটকপি আছে না? যতদ্রুত সম্ভব তা আমার ইমেইলে পাঠাও। আপাতত অল্প এভিডেন্স দিয়েই ব্যাপারটা মেনেজ করি। পারবে তো?
.
—হুমমম।
—আচ্ছা তাহলে আর বেশি কথা বলবো না। ঢাকায় এই মুহূর্তে আসার একটুও প্রয়োজন নেই। Take care of yourself young girl !
.
কথা শেষ হওয়া মাত্রই মৌনি মোবাইল সুইচ অফ করে রাখে। প্রফেসরের সাথে কথা বলার পর মনের তিক্ততাটি একটু কমেছে মৌনির। মাঝে মাঝে মনে একটা ভয় কাজ করে। আগে এ জীবন চলে গেলেও ওর আফসোস লাগবে না এমন একটা ভুল ধারনা কাজ করতো ওর মনে। কিন্ত ব্যাপারটা ভুল। নিভ্র ওর জীবনে আসার পর থেকেই জীবনটা অন্যভাবে দেখতে শিখেছে মৌনি। আচ্ছা , একদিন তো একদিন নিভ্র থেকে সে সরে আসবে । তখন কি নিভ্রর মৌনি নামের এই মেয়েটির কথা মনে পড়বে? নাকি না? এরকম হাজারো উল্টা-পাল্টা চিন্তার মধ্যেই পেছন থেকে ভেসে এলো এক অতিপরিচিত সুর।
.
—আজকে এত সকালে উঠলে যে?
কন্ঠটি আর কারও না ; নিভ্রর। নিভ্রর চোখে চোখ পড়তেই মৌনির হৃদকম্পন যেন বন্ধ হয়ে গেলো। নিভ্র ঘুম থেকে উঠেই এখানে চলে এসেছে। চোখদুটোতে এখনও রাজ্যের ঘুম। ঠোঁটদুটো কেমন যেন টকটকে লাল লাগছে মৌনির কাছে। মৌনি প্রতিউত্তরে বললো…….
—ঘুম আসছিলো না তাই ছাদে এলাম। আপনার এ অবস্থা কেন?
—ছাদের দরজা খোলা দেখেই ছুটে চলে এলাম। এ বাড়িতে সকালে ছাদের দরজা খুব কম সময়ই খোলা থাকতে দেখা যায়।
—ওহ্।
নিভ্র খেয়াল করলো মৌনির চোখে-মুখে হালকা দুশ্চিন্তার ছাপ। বারবার কিছু বলতে চেয়েও বারবার যেন আটকে যাচ্ছে।
—কি হয়েছে মৌনি?
—না……..কিছুনা।
মৌনির এই উত্তরটা নিভ্রর কেন যেন পছন্দ হলো না। ভ্রু কুচকে বললো…..
—Are you sure? কিছু লুকাচ্ছো না-তো আবার?
.
নিভ্রর এ প্রশ্ন শোনামাত্র মৌনি নিজের ওড়নার পেছনে মোবাইলটি আরও সাবধানতার সাথে লুকিয়ে রাখে যাতে নিভ্র বিন্দুমাত্র তা আন্দাজ করতে না পারে।
—না……না। কিছু লুকাচ্ছি না।
.
—okay…….নিচে চলো তাহলে…….রোদে পুরে তো নাহলে ছারখার হয়ে যাবে।
—হুম। আপনি চলেন আমি আসছি।
.
.
.
১২.
দুপুরের ঠা ঠা রৌদ্দুরের প্রবাহে পরিবেশ যেন চৌচির হয়ে গিয়েছে।গতরাতে যেমনই ফুরফুরে বাতাস ছিলো এখন তেমনই বিদীর্ণ গরম। মানুষ ছাড়া ছোট্ট এই বাড়িটা একেবারেই নিস্তেজ মনে হলো মৌনির কাছে। নিভ্র কোনো একটা জরুরি কাজের জন্য ইমিডিয়েটলি বাইরে যেতে হয়েছে। সম্ভবত নিভ্রর একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্সেল আসবে যেটা নিভ্রকেই নিয়ে আসতে হবে। আর নিভ্রর সব বন্ধুরা যার যার কাজে চলে গিয়েছে। এই কারনবশত মৌনিকে সময়টা পার করতে হচ্ছে অনেকটাই একা।
.
এই বাড়িটাতে প্রচন্ড পরিমাণে বই আছে যা পড়ে যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের দিন অনায়াসে কেটে যাবে। তাই মৌনি চিন্তা করলো সময়টা না হয় বই পড়েই পার করে দেওয়া যাক। নিভ্রর রুমে যায় সে। ঘরটা মোটামোটি গোছানোর মধ্যেই অগোছালো। খাট আর ড্রেসিংটেবিল পরিষ্কার। তবে স্টাডি টেবিলটা বেশ অগোছালো হয়ে আছে।
দেয়ালে রয়েছে নিভ্রর হাস্যোজ্জ্বল একটি ছবি। মৌনি কিছুক্ষণ সে ছবিটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে টেবিলের দিকে অগ্রসর হলো। সেখান থেকে একটা বই উঠাতে গেলেই আচমকা বইয়ের মাঝ থেকে টুপ করে একটি কাগজ পড়লো। মৌনি কাগজটা উঠিয়ে নিয়ে দেখে একটা মেডিকেল রিপোর্ট। রিপোর্টে নিজের নাম দেখে আরও অবাক হয় সে।
রিপোর্টে স্পষ্ট লেখা আছে—–Overnight Disorder (Positive)
Blood group A+
আরও অনেক কিছুই লেখা লিখা ছিলো যা মৌনি বুঝতে পারলো না পড়ে। তবে ওর কোনো রোগ আছে?আর নিভ্র ভাই এতবড় একটা সত্য ওর থেকে লুকিয়ে রাখলো ? কেন? চিন্তায় মাথা ভার হয়ে যাচ্ছে।মৌনি বুঝতে পেরেছে নিভ্রর এতদিনের সব কেয়ার চিন্তা ওকে সুস্থ করানোর জন্যই ছিলো ; মৌনিকে সে কোনোদিনই ভালোবাসেনি।
.
ধপ করে নিচে বসে পড়লো মৌনি। চোখ দিয়ে বেয়ে পড়তে অবলীলায় অশ্রু। মাথার মধ্যে আবারও চিনচিন ব্যাথা শুরু হয়েছে। চোখের সামনে সব কিছু ঘোলাটে হয়ে আসছে। আটকে যাচ্ছে নিঃশ্বাস। কিন্ত কেন? মৌনি ভাবছে এই রোগটার জন্যই কি তবে……….
শরীরটা মেঝেতে নেতিয়ে পড়তেই মৌনি বুঝতে পারছে যেকোনো মুহূর্তে জ্ঞান হারাবে সে। নাক দিয়ে তরল রক্ত অনুভব করতেই মুখে ফুটিয়ে তুলে এক তাচ্ছিল্যের হাসি। নিভ্র থাকতে ওর কিছু হবে না তা মৌনি জানে। কিন্ত মৌনি এখন নিঃশেষ হতে চায়। দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে চায় নিভ্র নামের এই অস্তিত্ব থেকে।
.
.
.
.
~চলবে~
পর্বটা একটু অগোছালো হয়ে গিয়েছে। আজ লেখার ইচ্ছে ছিলো না। তবুও অগোছালো করে একটা পার্ট দিলাম।
.
~চলবে~
প্রথমত অনেক দুঃখিত এত দেরী করে পোস্ট করার জন্য। গল্প লিখা আমার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো কিন্ত তা পোস্ট হচ্ছিলো না। গত পর্বটিতেও এই সমস্যায় পড়েছি সার্ভার ডাউন হওয়ার কারনে। তাই আজ ১২০০+ ওয়ার্ড দিয়ে গল্প লিখলাম।
মৌনি আর নিভ্রর গল্পের জন্য যারা দুদিন অপেক্ষা করছিলেন পর্বটি ভালোলাগবে ইনশাল্লাহ। গঠনমূলক কমেন্টের অপেক্ষায় থাকবো।
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here