হয়ত পর্ব ১০

#হয়ত
পর্ব:-১০
.
তাপৌষি দিশার ঘরের দিকেই যাচ্ছিল ব্লাউজ পায়েল ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। রাত তিনটে বেজে গেছে। দিশা এখনো জেগে আছে কী না এটাও ভাবনার বিষয়। হঠাৎ পা দুটো থেমে গেলো কারও কবিতা আবৃত্তি শুনে।
‘এক শতাংশ মেঘ হবো
তোমার আকাশের।
তোমার লাল বর্ণের রঙিন আকাশে
আমার সাদা তুলোর মেঘ ভাসবে।
আলো আঁধারের মিছিল উঠবে মাঝে মাঝে,
মিশে যাবো তখন দুজনে দুজনাতে
এক আকাশ হয়ে শুধু তোমার আকাশে।
.
এক শতাংশ কালো বজ্রধর মেঘ হবো
তোমার বাড়ির উপর ভেসে বেড়াবো,
তোমার ঈশৎ মন খারাপের দিনগুলিতে
এক পশলা বৃষ্টি হয়ে ঝরবো।
বৃষ্টির জল ছন্দ তুলবে চারপাশে
হালকা জলের ঝাপটায় ভিজবে তুমি
আমি তখন তোমায় দেখে
এক বিশ্ব সমান শান্তি খুঁজে নিবো।
.
তুমি বললে এক বিশাল আকাশ হবো
রাতের আকাশ।
তারায় তারায় বিস্তৃত থাকবে সে আকাশ।
পূর্ণিমার চাঁদ আলো ছড়াবে তোমার আঙিনায়,
ভালোবাসাময় এক পৃথিবীর সূচনা হবে সেই পূর্ণিমায়।
শুনছো?
জোনাকি পোকার দলকে আমন্ত্রণ জানাবো।
আলোয় আলোয় সজ্জিত করবো তোমার চারপাশ।
সেই বিশাল আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে
রঙিন স্বপ্ন বুনবো দুজনে
একসাথে এক আকাশ হয়ে।’

চোখদুটো খুলে দরজার পাশে দাঁড়ানো তাপৌষিকে দেখতে পায় বর্ষণ।
-‘ তাপৌষি? এত রাত অবধি জেগে আছো যে?’
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে তাপৌষি উত্তর দেয়,
-‘ দিশা আপুর কাছে যাচ্ছিলাম। আপনার আবৃত্তি শুনে দাঁড়ালাম। মন মুগ্ধকর আবৃত্তি। কবিতাটা কি আপনার লিখা?’
কোলের উপর কোলবালিশটা নিয়ে বাম হাতটা গালে রাখলো বর্ষণ। মেয়েটার চোখে মুখে সব সময়ই ফুটে উঠে জানার অদম্য ইচ্ছা। সব তথ্যই যেন ওর কাছে গুরুত্বপূর্ণ!
-‘ হয়তো।’
-‘ কবিতার চরণগুলো আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আপনি কি কবিতা লিখেন?’
-‘ উত্তর হবে হ্যাঁ আবার না। আমি প্রফেশনাল না। এই মাঝে মাঝে যখন মাথায় ট্রাফিকজ্যাম লাগে তখন কবিতা লিখতে বসি। এতে জ্যাম ছুটে যায়। ‘
তাপৌষি বর্ষণের পড়ার টেবিলের চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসলো। দিশার ঘরের মতোই এই ঘরটা শুধু আসবাবপত্র ভিন্ন। একপাশে একটা পড়ার টেবিল আর একটা ওয়ারড্রব আছে। ঘরটা হালকা নীল রঙে আবৃত করা হয়ে। প্রতিটি দেয়ালে নীলের ছোঁয়া। একটুকরো আকাশ যেন নেমে এসেছে ঘরটিতে। কেমন যেন শান্তি শান্তি লাগছে এখানে বসে। এই ঘরেও অনেক বই। একপাশের দেয়াল জুড়ে কাঠের তাক বানানো হয়েছে। এরা সবাই মনে হয় খুব বই পড়ুয়া। এত বই এদের, একটা লাইব্রেরি করে নিলেই পারতো।
একটু উশখুশ করে তাপৌষি বললো,
-‘গতকালকে থেকে একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে। আমি কি আপনাকে প্রশ্নটি করতে পারি?’
-‘ হ্যাঁ করতে পারো তবে তোমাকে একটা ছোট কাজ করতে হবে।’
-‘ কী কাজ?’
-‘ তুমি এখন দিশার ঘরে যাবা। ও যদি ঘুমিয়েও থাকে তাহলেও ওকে ডেকে তুলে এখানে নিয়ে আসবে। ও আসলেই আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিব।’
-‘ দিশা আপু যদি না আসে আমি তখন রৌদ ভাইয়াকে ডেকে আনতে পারবো?’
-‘ না। দিশাকেই ডেকে আনতে হবে। রৌদ না। আর যদি দিশা ঘুম থেকে না উঠে তাহলে তুমি সোজা নিজের ঘরে যেয়ে ঘুম দিবা। কালকে নিজের প্রশ্ন করবা। আমি কালকেই উত্তর দিব।’
এ কোন মসবতে ফেলল বর্ষণ? দিশা যদি এখন ঘুমিয়ে থাকে! ঘুমন্ত মানুষকে ডেকে তুলতে হবে তখন। প্রশ্নটা না করলে গত কালকে রাতের মতো আজ রাতেও ঘুম হবে না তাপৌষির।
.
দিশা আর অথৈ বিছানা ঝাড়ছিল। ঘুমানোর আগাম প্রিপারেশন নিচ্ছে দুজন।তাপৌষি ঘরে ঢুকে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। যাক ঘুমায় নি কেউ।
-‘ কিছু বলবে তাপৌষি?’
-‘ আপু এগুলো দিতে এসেছিলাম। আর..’
তাপৌষির হাত থেকে পায়েল আর ব্লাউজটা নিতে নিতে দিশা ফিরতি প্রশ্ন করে বসলো,
-‘ আর?’
-‘ আপু তোমাকে আমার সাথে এখন যেতে হবে। ভীষণ দরকার যাওয়া।’
-‘ আচ্ছা। তবে কোথায় যেতে হবে সেটা তো বলো।’
-‘ আগে চলো।’
-‘ একটু দাড়াও। অথৈ তুই যাবি? ‘
-‘ না তোরা যা। আমার এখন খুব ঘুম দরকার।’
.
তাপৌষি যাওয়ার পরপরই বর্ষণ স্যার আলবেয়ার কাম্যু’র ” দি আউটসাইডার ” বইটি খুলে বসেছে। এই বইটি মুনতাসীর মামুন অনুবাদিত। তাপৌষি আর আসবে না নিশ্চিত হয়েই সে বইটি হাতে নিয়েছে। কারন দিশা এখন গভীর ঘুমে থাকে। ওকে নাড়ানো যাবেনা এই সময়। তাপৌষি মেয়েটার থেকে ও পালাতে চাচ্ছে এটা সত্য। ছোটবেলা থেকেই কোন কিছু ঘটার আগেই বর্ষণ কীভাবে যেন তা টের পেয়ে যায়! ওর মন বলছে তাপৌষিকে নিয়ে ওর জীবনে কিছু ঘটতে চলেছে। তবে তা ভালো না খারাপ তা সে জানে না।
তাপৌষিকে দিশার কাছে পাঠানোর দুটো কারন। প্রথমটা হলো, তাপৌষিকে নিজের থেকে দূর রাখা। তাপৌষি যখন দেখবে দিশা ঘুমাচ্ছে তখন ও নিজের ঘরে যেয়ে ঘুমাবে। আর দ্বিতীয়টি হলো, এত রাতে কখনো একা একটা ঘরে কোন যুবতী মেয়ের সাথে থাকা উচিত নয়। বিয়ে বাড়ি হওয়ায় এখন ওদের বাড়িতেও আত্মীয়স্বজন থাকছে। কেউ দেখলে কথা রটতে বেশি সময় লাগবে না।
-‘ ভাইয়া ডাকছিলে?’
-‘ জেগে আছিস যে এত রাতে?’
-‘ ঘুমাতে যাচ্ছিলাম। তাপৌষি ডেকে নিয়ে আসলো। কিছু বলবে?’
-‘ তোর হাতে ত্রিশ মিনিট সময় হবে? সময় হলে একটু বস।’
-‘ সে না হয় বসলাম। কিন্তু কী হয়েছে?’
-‘ তাপৌষি আমাকে কিছু প্রশ্ন করবে। তুই আর আমি সেই প্রশ্নগুলো এখন শুনবো। বুঝলি?’
দিশা বুঝতে পেরেছে বর্ষণ কেন তাপৌষিকে দিয়ে ওকে ডাকতে পাঠিয়েছে। দিশা জানে ওর ভাইয়েরা প্রচণ্ড আত্ম-মর্যাদাবান মানুষ। কোন মেয়ের সম্মানে আঘাত লাগুক এমন কাজ ওরা কখনো করবে না। দিশা যেয়ে বর্ষণের পাশে বসলো।
তাপৌষি ও দিশাকে একবার দেখে নিয়ে বর্ষণ বললো,
-‘ তো তাপৌষি শুরু করো তোমার প্রশ্ন। প্রশ্নের উত্তরদাতা এখন উত্তর দিতে প্রস্তুত।’
তাপৌষির নার্ভাস ফিল হচ্ছে। আবার মন আর মস্তিষ্কের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। খানিকক্ষণ সময় নিয়ে তারপর তাপৌষি প্রশ্ন করলো,
.
.
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here