গল্পটা_পুরনো পর্ব ৫

# গল্পটা পুরনো
পর্ব – ৫
মুনিরা জলী

***
হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন পর্দার ফাঁক গেলে ভোরের প্রথম সূর্য কিরণ ধরণীর বুকে আছড়ে পরল। গুটি গুটি পায়ে খুব আয়োজন করে শীতের পরশ প্রকৃতিকে একটু একটু করে ছুয়ে দিয়ে যাচ্ছে। সারা রাত্রি জুড়ে শিশিরের বৃষ্টিতে গাছের পাতাগুলো ভিজে আছে। হালকা সোনা রঙা রোদ পরে সবুজ ভেজা পাতাগুলো চিকচিক করছে। জানালার ফাঁক দিয়ে হেমন্তের সকালের মিষ্টি রোদের স্পর্শে তোয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায় । পিটপিটে চোখে জানালার দিকে তাকায় সে। কি মিষ্টি একটা রৌদ্রোজ্জ্বল সকাল। মনটা নিমেষেই ঝলমলে হয়ে ওঠে। গায়ের কম্বল সরিয়ে উঠে বসল তোয়া। হাত দুটো মাথার উপরে তুলে আড়মোড়া ভেঙ্গে খাটের কিনারায় জানালার পাশে চলে আসে। বাইরে তাকিয়ে মনটা খুশি হয়ে ওঠে। জানালার পাশেই একটা শিউলি ফুলের গাছ। গাছের নিচে শত শত শিশির ভেজা শিউলি ফুল ঝরে পরে আছে। তার পাশেই আরেকটি হাসনাহেনা ফুলের গাছ।
অনেক রাত অবধি এই জানালার পাশে বসে ছিল সে। রুহী ঘুমিয়ে পরেছিল। কিন্তু নতুন জায়গা বলে হয়তোমতোয়ার সহজে ঘুম আসছিল না। সারাদিন ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ওর মনের মাঝে একটা ছোট খাটো আলোড়ন তুলছিল। জীবনে প্রথম একা জার্নি ওর। তারপর সারাদিন কেটেছেও অন্য রকম ভাবে। সবচেয়ে বেশি ভাবিয়েছে রাদীব। ওর এই ছোট্ট জীবনে ছেলে মানুষের আনাগোনা বলতে গেলে নেই। গার্লস স্কুল ও কলেজ পড়েছে সে। নিজের ভাই আর আত্মীয় পুরুষ ছাড়া বাইরের পুরুষের সাথে মিলামিশার সুযোগ বলতে গেলে হয়নি ওর। তাই রাদীবের সামনে সে ভিষন সংকোচ ও লজ্জা বোধ করছিল। আর সেই ছেলেটার সঙ্গে একাকী কোথাও বের হওয়া মোটেও সহজ ব্যপার নয়। এসব ভেবে সে ভিষন অস্থিরতায় ভুগছিল। কিছুতেই দুচোখের পাতা এক করতে পারছিলনা। বাইরে হাল্কা ঠান্ডা থাকলেও তোয়া সব জানালা বন্ধ করে ঘুমাতে পারেনা। ওর দম বন্ধ লাগে। তাই জানালার একটা কপাট খুলে রেখেছিল।আর সেই সময় হাসনাহেনার সুবাশ ভেসে এসে পুরো ঘর মম করছিল। কি মিষ্টি সেই সৌরভ। মাতাল করা সেই সৌরভই এক সময় ওর দুচোখের পাতায় ঘুম নামিয়ে এনেছিল।
রুহী এখনো ঘুমিয়ে আছে। তোয়া আস্তে ধীরে খাট থেকে নেমে আসে। বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এসে শালটা গায়ে জড়িয়ে নেয় সে,ওড়নাটা মাথায় পেচিয়ে নেয়। ডাইনিং রুমে বেরিয়ে এসে টের পায় মামী কিচেনে নাস্তা তৈরী করছে। কিচেনের দড়জায় গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে সে,

” মামি আমি একটু বাসার সামনে থেকে হেঁটে আসি।”

তোয়ার গলা শুনে পিছনে ফিরে তাকায় শাহানা, বলেন, ” কিরে এতো সকালে উঠে পরেছিস? ”

” জ্বী মামি ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। আজকের সকালটা কি চমৎকার রৌদ্রস্নাত। আর নীচে কি সুন্দর শিউলি ফুল ফুটে আছে। আমি শিউলি গাছের নিচে থেকে একটু ঘুরে আসি। ” বলে মিষ্টি করে হাসে তোয়া।

শাহানা হাসলেন, ” আচ্ছা যা ঘুরে আয়, ইচ্ছে করলে পুকুরের পারেও হেঁটে আসতে পারিস। কিছুক্ষণ পরই এক এক করে সবাই উঠে পরবে। ততক্ষণে আমার নাস্তা তৈরি হয়ে যাবে। এসে নাস্তা খেয়ে নিস। ”

” ঠিক আছে মামি আসছি। ”

তোয়া সোজা বাইরে বেরিয়ে আসে। নিচে নেমে আসার পরে পায়ে পায়ে সে শিউলি গাছের নিচে এসে দাঁড়ায়। মাটির উপর অজস্র শিউলি ফুল নরম গালিচার মতো বিছিয়ে আছে। তোয়া স্যান্ডেল খুলে রেখে খালি পায়ে নরম মোলায়েম কমলা সাদা ফুলের বিছানার উপর আলতো করে পা রাখে। পায়ের তলায় শিশিরসিক্ত ফুলগুলোর কোমল ছোঁয়ায় ভালো লাগার আবেশ ছড়িয়ে পরে ওর সর্বাঙ্গে।

বাড়ির সামনের জায়গাটা চারিদিকে বাউন্ডারি ঘেরা। শুধু শিউলি আর হাস্নাহেনার গাছই নয় আরও হরেক রকমের ফুল গাছ লাগানো আছে। বারান্দা থেকে তিন ধাপের সিড়ি বেয়ে নিচে নেমেই সিঁড়ির দুপাশে সুন্দর করে ছাটানো ঝাউ গাছ দাঁড়িয়ে আছে। আরও আছে রক্ত জবা, কিছু গোলাপ ফুলের গাছ, আরও কিছু মৌসুমি ফুলের গাছও আছে। এতসব সুরভিত ফুলের মাঝে স্নিগ্ধকর সুবাস প্রাণ ভরে গ্রহণ করে তোয়ার শরীর মন সজিব হয়ে ওঠে। ভিষণ ভালো লাগছে তোয়ার। এমন একটা সুবাসিত সকাল বহুদিন দেখেনি তোয়া। ঢাকায় সেই সুযোগ কোথায় পাবে? তোয়াদের বাড়িতে ছাদ বাগান আছে। নীচে বাড়ির চারপাশে দেবদারু, নিম, রেইন ট্রি সহ আরও কিছু গাছ আছে। তবুও আজকের মতো এতো সজিবতা কখনোই অনুভব করেনি সে। তোয়া এবার উচ্ছ্বসিত মন নিয়ে শিউলি ফুল কুড়িয়ে নিতে বসে যায়।

***
রাদীব জগিং করতে বেরিয়েছে। প্রতিদিন ভোরে সে ফজরের নামাজ পড়ে জগিং করতে বের হয়। কি শীত কি গরম এটা তার প্রতিদিনের রুটিন, কখনও এর হেরফের হয়না। দৌড়াতে দৌড়াতে সে অনেক দুরে চলে এসেছিল। এখন ফেরার পথে সে। পাড়ায় ঢুকেই দৌড়ের গতি কমিয়ে দ্রুতবেগে হাটতে শুরু করে রাদীব। মনে মনে সারাদিন কি কি করবে কোথায় যাবে তার একটা ছক একে ফেলে সে। বাসার কাছাকাছি এসে একেবারেই ধীরে ধীরে হাটতে থাকে। শাহীলদের বাড়ির গেট পেরিয়ে যাওয়ার সময় থমকে দাঁড়িয়ে পরে রাদীব। গেটের ভিতরে তাকিয়ে দেখে সে। শিউলি ফুলের গাছটি একেবারে গেটের পাশেই। তাই গাছের নিচে ঝরে পরা ফুল তুলতে ব্যস্ত তোয়াকে ভালো ভাবেই দেখা যাচ্ছে। তোয়া তখন ফুল তুলতে মগ্ন। এখন এত সকালে বাইরে কেউ নেই। হাটতে বের হওয়া দু একজন ছাড়া কারও থাকার কথাও নয়। যেহেতু নতুন নতুন ঠান্ডা পরছে, তাই এত সকালে তাদের অনেকেই বাইরের ঠান্ডার মধ্যে হাটার চেয়ে চাদর, কম্বলের নিচে আরও কিছুটা সময় মটকা মেরে শুয়ে থাকাটাই বেছে নিয়েছে।

তোয়া কিছুটা ঝুকে মাটিতে বিছিয়ে থাকা ফুলগুলো তুলে নিতে ব্যস্ত । এতটাই মগ্ন হয়ে ফুল কুড়চ্ছিলো সে কোনো দিকেই তার নজর নেই। তোয়ার মুখের একটা পাশ দেখা যাচ্ছে। রাদীব তার অজান্তেই বিভোর হয়ে দেখছে। কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই তার। একসময় তোয়ার ফুল তোলা শেষ হয়। দুহাতের আজলা ভরে ফুলগুলো নিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। তখনই তার চোখ পরে রাদীবের উপর। বিস্ময়ে চোখদুটো বড়সর হয়ে ওঠে। ঠোঁট দুটো ইষৎ খোলা। তোয়ার অবাক মুখাবয়ব দেখে রাদীবেরও এবার হুশ হয়। খেয়াল হয়, যে কাজ সে তার এই জীবনে কখনও করেনি আজ তাই করছে। একটা মেয়ের দিকে নির্লজ্জভাবে ড্যাবড্যাবে চোখে তাকিয়ে দেখছিল ! কি লজ্জা ! চোখ সরিয়ে নিয়ে অস্বস্তিতে এদিক সেদিক দেখছে , লাজুক হেসে মাথা চুলকায় সে। নিজকে সামলে নিয়ে এবার মুখ খুলে রাদীব। জিজ্ঞেস করে ,

” কি করছিলা এতো সকালে গাছের নিচে বসে? ” তারপর তোয়ার হাত ভরা ফুলের উপর নজর যেতে আবার বলে সে, ও ফুল তুলছিলা? ফুল বুঝি খুব পছন্দ তোমার? ”

তোয়া এতক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়েছে । অনেকটা স্বাভাবিক কণ্ঠে হেসে বলল, ” জ্বী ফুল তুলছিলাম। আর ফুল কার না ভালো লাগে বলেন? ”

” হুম, তাও ঠিক। ফুল তো সবাই পছন্দ করে। ” একটু থেমে আবার বলে রাদীব , ” তুমি দেখছি অনেক সকালে উঠ। বেশ ভালো অভ্যাস। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠা স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারি। ”

জবাবে তোয়া মিষ্টি করে হাসে। ওর ফর্সা গালে টোল পরে। রাদীব সেই দৃশ্য মুগ্ধ হয়ে চেয়ে দেখে। তোয়া এবার লজ্জায় মাথা নিচে নামিয়ে নেয়। তার টোল পরা গালে লালচে আভা ফুটে ওঠে। রাদীব কিছু বলছেনা। ওভাবেই তাকিয়ে আছে দেখে তোয়ার মন চাইছে দৌড়ে পালিয়ে যেতে। কিন্তু ও জোর করে নিজের সংকোচকে কাটিয়ে উঠে লাজুক কণ্ঠেই জিজ্ঞেস করে,

” আপনি জগিং করতে গিয়েছিলেন বুঝি? ”

” হ্যাঁ। আমি ফজরের নামাজ পড়েই বেরিয়ে পরি। এতে করে জগিং এর উপকার তো হয়ই আর সাথে ভোরের ফ্রেশ ও তাজা বাতাস ফুসফুসে ভরে নিতে পারি। এর ফলে সারাদিনের সমস্ত কাজ নির্বিঘ্নে করার জন্য যথেষ্ট এনার্জি অর্জন করতে পারি। ”

” বাহ্ ! খুব ভালো অভ্যাস। “হাসি মুখে বলে তোয়া।

” তোমারও ভোরে উঠে পরার অভ্যাস যখন , তো বাইরে মর্নিং ওয়াক করতে বের হওনা? ”

” ঢাকায় বাইরে হাটতে যাবার মত পরিবেশ কোথায়? দিনে রাতে সব সময় রাস্তায় গাড়ি চলছে। ধোয়া, পলিউশন আর সেই সাথে ফ্রী তে আছে ছিনতাই কারি। তাই ভোরে মেয়েদের একা হাটতে যাওয়া মোটেও সেফ নয়। ” একটু থেমে হাসল তোয়া। তারপরে বলল, ” তবে আমি ছাদে যাই হাটতে। ”

বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাদীব। ভাবছে , মেয়েটাতো কথা ভালোই বলে? হালকা হেসে বলে ,

” বাহ্! এইতো বেশ কথা বলতে পার দেখছি ! আমি তো ভাবলাম তুমি বোধহয় কথাই বলতে পারনা। ”

তোয়ার এতক্ষনে খেয়াল হয়, ও বেশ সহজ হয়ে কথা বলছিল। রাদীবের কথা শুনে আবার ও আড়ষ্ট হয়ে গেল। লজ্জায় মাটির দিকে চেয়ে নখ দিয়ে মাটি খুচিয়ে তুলতে লাগল। টোল পরা গাল দুটোতে গোলাপী বর্ণের ছোপ পরল।

রাদীবের এবার বেশ মজাই লাগে। ‘মেয়েটা বোকা নয়, কথায়ও বেশ চটপটে । তবে একটু বেশিই লাজুক। লাজুক লতা ‘। ভাবছিল রাদীব মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে। তারপর বললো সে,

” আরে আমি তো মজা করে বললাম। এতো সংকোচ বোধ করার কিছু নেই। বি ইজি, ওকে? ”

তোয়া এবার চোখ তুলে তাকায়। চারচোখ মিলিত হলো। কয়েক সেকেন্ড কারও চোখের পলক পরলনা। তারপর রাদীব অস্বস্থি নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে পুকুরের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেদিকে চেয়েই প্রসঙ্গ পাল্টে জানতে চাইল ,

” ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছ? ”

তোয়া তখনও রাদীবকে দেখতে ব্যস্ত। জগিং করে এসেছে, তাই কপালে ঘামে ভেজা চুল লেপ্টে আছে, নাকের ডগায় ঘাম শিশির বিন্দুর মত চকচক করছিল। উজ্জ্বল শ্যামলা মুখটা এত মায়াময়, তোয়া চোখ ফেরাতে পারছিলনা। রাদীবের প্রশ্ন শুনে সদ্বিত ফিরে চোখ সরিয়ে নেয় সে। তারপর বলে,

” জ্বী। দিবনা কেন। অবশ্যই দিয়েছি। ”

রাদীব এবার তোয়ার দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল,” তো এখানে পরীক্ষার জন্য কেমন প্রস্তুতি নিলে? ”

” ভর্তি গাইড পড়েছি । বাকি আল্লাহর ইচ্ছা। ”

” রাজশাহীর কোনো সাজেশন পাওনি? ”

” না, পাইনি। ”

” তোমার লাগবে? যদিও অন্য ডিপার্টমেন্ট, আমি জোগাড় করতে পারব মনে হয়। ”

” আপনার ঝামেলা হবে না? থাক। ”

রাদীব হেসে বলল, ” আরে নাহ্ , কিসের ঝামেলা? ”

” আচ্ছা। পেলে ভালোই হয়। পড়েছি তো,যেকদিন সময় আছে, চোখ বুলিয়ে নিলেই হবে। ”

রাদীব তোয়ার হাতে ধরা ফুলগুলো দেখে বলল,

” অনেক ফুল কুড়িয়েছ দেখছি, কি করবে এতো গুলো ফুল? ”

” একটা পানি ভর্তি কাচের বোলে ফুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে ঘরের এক জায়গায় রেখে দিব, সারা ঘরে ফুলের গন্ধে ভরে উঠবে, আপনি নিবেন? ”

তোয়ার হঠাৎ এমন প্রস্তাবে হেসে ফেলে রাদীব। বলে, ” তুমি এতো কষ্ট করে কুড়িয়েছ, আমায় কেন দিবে?”

” অসুবিধা নেই, আপনি নিতে পারেন। আরও কত পরে আছে দেখেন। আমি আবার কুড়িয়ে নেব । ” বলেই নিচে পরে থাকা ফুলগুলো ইশারায় দেখায় তোয়া।

রাদীব ইতস্ততভাবে বললো, ” আবার কষ্ট করে কুড়াবে? ”

” সমস্যা নাই। নিন ধরুন। বলে হাত বাড়িয়ে ধরে সে।

” আচ্ছা দাও তবে। একদিন ঘরে ফুল রেখে দেখাই যাকনা , কেমন ন্যাচারাল ফ্রেসনারের কাজ করে। ”

এতক্ষন সে গেটের ওপাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। লোহার গেট, নেটের মতো বড় বড় খোপ। সেই খোপে হাত ঢুকিয়ে পকেট গেটটা খুলে ভিতরে ঢুকে রাদীব। হাত দুটো এক করে বাড়িয়ে ধরে তোয়ার সামনে,

” কই দাও। ”

তোয়া সবগুলো ফুল রাদীবের হাতে অঞ্জলি দেয়ার মতো করে ঢেলে দেয়। ঢেলে দিতে গিয়ে দুজনের হাতে ছুয়ে যায়। তোয়ার মনে হয় যেন হাত দুটো বেয়ে একটা অদ্ভুত শিহরণ তার সর্বাঙ্গে, শরীরের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিদ্যুৎ তরঙ্গের মত ছড়িয়ে পরছে। কেমন অবশ হয়ে যাচ্ছে তার হাত পা। তোয়া ছিটকে এক পা পিছনে সরে আসে। এ কেমন অনুভুতি বুঝতে পারেনা সে। রাদীবের ঠিক একই অনুভুতি হয়েছে। কিছুক্ষণ কেউ কোনো কথা না বলে স্থির দাঁড়িয়ে থাকে । কিন্তু রাদীব ব্যপারটাকে পাত্তা না দিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে ,

” অনেক দেরি হয়ে গেছে। এবার আমি আসি। ” তারপর পাশের গেট দেখিয়ে বলে , ” এইযে পাশেই আমার বাসা , তুমি বাসায় এসো কেমন? তুমি তো ফুল পছন্দ কর , আমাদের বাসার উঠানে বকুল আর কামিনী ফুলের গাছ আছে। তুমি চাইলে বকুল ফুল নিয়ে আসতে পারো ”

তোয়ার হাত এখনো মৃদু কাপছে। তাই কোনো রকম মাথা নেড়ে মৃদু স্বরে বলে , ” আচ্ছা। ”

বলেই সে প্রায়ই দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। রাদীব অবাক হয়ে তোয়ার যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ ঠায় তাকিয়ে থাকে। তারপর ঘুরে গেটের দিকে পা বাড়ায়।

তোয়া প্রায় দৌড়ে যখন সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে আসে তখন ওর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত গতিতে চলছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠে দড়জার সামনে প্রথমেই প্রশস্ত বারান্দা। পুরো বারান্দায় সারিবদ্ধভাবে নানারকমের পাতাবাহার গাছের টব সাজিয়ে রাখা আছে। তোয়া প্রায় হাঁপাতে হাঁপাতে বারান্দার কিনারায় গিয়ে গ্রীল ধরে নীচের দিকে তাকায়। রাদীব তখন গেট খুলে বাইরে বেরিয়ে যেতে গিয়ে হঠাৎ থেমে গেল। কি ভেবে মুখ তুলে বারান্দার দিকে তাকালো। রাদীব এভাবে উপরে তাকাবে ভাবেনি তোয়া। তাই সে থতমত খেয়ে গেল। কি করবে ভেবে না পেয়ে বিব্রত ভঙ্গীতে হেসে ফেললো। তোয়াকে হাসতে দেখে রাদীবও জবাবে হাসলো। তারপর গেটের বাইরে বেরিয়ে গেল।
এদিকে তোয়া ঘুরে দাঁড়িয়ে গ্রীলে পিঠ ঠেকিয়ে আনমনে হাসছিল। তখনই দড়জাটা খুলে যেতে চমকে উঠে সেদিকে তাকায় সে।

চলবে ইনশাআল্লাহ।

ial

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here