প্রেম 💙 (Love has no limits)

#পর্ব : ০২

এক বছর আগে…

সবে মাত্র এস.এস.সি পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছিল স্পর্শিয়া। স্পর্শিয়ার দাদা খুব অসুস্থ ছিল তখন। ক্যান্সার ছিল। দাদা একদিন তার চার ছেলে, আর সবার স্ত্রী দের ডাকলেন স্পর্শিয়ার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলার জন্য।

সবাই খুব অবাক। স্পর্শিয়া এখনো অনেক ছোট। ওকে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা কারও মাথায় আসেও নি। দাদা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন –
– আমি জানি আমাদের স্পর্শিয়া এখনো ছোট। আমি কতদিন বাচবো জানিনা। আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে। এখনো কোন নাতি নাতনীর বিয়ে দেখতে পারলাম না। স্পর্শিয়া আমার বড় নাতনী, আমার আদরের নাতনী। আমি ওর জামাইকে দেখে মরতে চাই। আমার সবসময়েরই ইচ্ছা ছিল আমি আমার বড় নাতনীটার বিয়ে দিব নিজের পছন্দের ছেলের সাথে। আমি বলছি না ওকে এখনি বিয়ে দিতে। বিয়েটা ঠিক করে রাখি এখন । আমার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়েটা ঠিক করে রাখতে পারলেই আমি শান্তিতে মরতে পারবো। আমি জানি তোরা সবাই অনেক কিছুই ভাবছিস। আমি তো আর আমার নাতিনের খারাপ চাই না। শেষ বয়সে আমার এই কথাটা কি তোরা রাখবি না?
এ কথা বলেই উনি কেদে উঠলেন।
– বাবা আপনি আমাদের স্পর্শিয়ার জামাই দেখতে চান ঠিক আছে। কিন্তু ও যে খুব ছোট। এইটুকু মেয়ে নিজেকে সামলাতে পারে না সংসার কি করে সামলাবে?
– আমি কি তোদের বলেছি নাকি এখন বিয়ে দিতে? আরেকটু বড় হলে বিয়ে দিস। এখন বিয়ে ঠিক করে রাখ।
স্পর্শিয়ার সেজ কাকা বললেন,
– তবে কি আপনি চাচ্ছেন এখন আমরা ছেলে দেখা শুরু করি?
– ওরে বোকারা! ছেলে আমার হাতে আছে বলেই তো আমার আদরের নাতনির বিয়ের কথা ভাবছি।
– ছেলে কে বাবা? (মেজ কাকী)
– আমার বন্ধু আজিজুর কে তো চিনিস তোরা?
– আজিজুর চৌধুরী?
– হ্যা। ওর নাতি আরাধ্য। মাস সাতেক আগে অষ্ট্রেলিয়া থেকে এম.বি.এ করে দেশে ফিরেছে। এখন বাবার বিজনেস দেখাশুনা করছে বাবা আর বড় ভাইয়ের সাথে। ছেলে পছন্দসই। আর ওদের বংশ পরিচয় সম্পর্কে তো জানিসই তোরা। আজিজুর নিজ থেকেই স্পর্শিয়ার কথা বলেছে, আমিও এতো ভালো ছেলে হাত ছাড়া করতে চাচ্ছি না।
– হ্যা, ওরা তো খুব ভালো ফ্যামিলির। কিন্ত স্পর্শিয়া? ও রাজি হয় কি না সেটাও তো ব্যাপার।
– ওর মতামত নিয়েই সব হবে। আর যেহেতু এখন বিয়ে হচ্ছে না আমার মনে হয় না ওর এতে আপত্তি থাকবে। বড় বউ, যাও স্পর্শিয়াকে ডেকে আন।

পানি নেওয়ার জন্য স্পর্শিয়া ডাইনিং রুমে এসেছিল। পাশের রুমে ওকে নিয়ে কথা হচ্ছে শুনেই কান পাতল।এতক্ষনের সব কথাই শুনেছে ও। ওর হার্টবিট বেড়ে গেছে। কপালে ঘাম জমেছে বিন্দু বিন্দু। ওকে ডাকার কথা শুনেই দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল। খাটে চুপচাপ বসে রইল। কি হচ্ছে বুঝার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে ওর আম্মু এসে ওকে বলল –
– তোকে তোর দাদা ডাকছে। জরুরি কথা আছে। আয় মা!

স্পর্শিয়া জানে জরুরি কথাটা কি। খুব সাহস করে সবার সামনে গেল। সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। এখন এই রুমটায় সব কাজিনরাও এসে ভীড় জমিয়েছে। বাসার সব ডিসিশন ছোট বড় সবাইকে সামনে রেখেই নেয়া হয়। দাদা নিজেই সব ডিটেইলসে বলার পরে স্পর্শিয়ার মতামত জানতে চাইলেন। স্পর্শিয়ার চোখ ঠেলে কান্না আসছে। তবুও ঠোট কামড়ে চোখের পানি চেপে বসে আছে ও। সায়ানকে খুব মনে পড়ছে স্পর্শিয়ার । কি জবাব দিবে বুঝতে পারছে না।

দাদাকে স্পর্শিয়া খুবই ভালবাসে। দাদার খুবই আদরের নাতনী ও। সব কাজিনরাই ওর প্রতি খুব জেলাস ও দাদার এত ভালোবাসা পায় বলে। সেই দাদাই আজ স্পর্শিয়ার কাছে কিছু চেয়েছে, ও মানা করবেই বা কি করে।
নাহ! দাদাকে ও কষ্ট দিতে পারবে না। অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল –
-তোমরা যেটা ভালো মনে কর তাই কর। আমার কোন আপত্তি নেই।
এ কথা বলেই ও উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
সবাই “আলহামদুলিল্লাহ ” বলে উঠল। যওয়ার সময় কথাটা ওর কানে গেল।

রুমে এসে খাটে বসে পড়ল ও। এসির নিচে বসেও ঘামছে। কি হচ্ছে ওর সাথে? কেন হচ্ছে? ভেবে পাচ্ছে না ও। কান্না করে দিল স্পর্শিয়া।
স্নিগ্ধা রুমে ঢুকলো হনহন করে। ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিল। স্নিগ্ধা স্পর্শিয়ার মেজ কাক্কুর মেয়ে। স্নিগ্ধা স্পর্শিয়ার ৪ মাসের ছোট। আর এ জন্যই ওরা বোন কম, বান্ধবী বেশি।

– স্পর্শিয়া এটা তুই কি করলি?
– আর কি করতাম?
– মানা করে দিতি সবাইকে।
– দাদা এই প্রথম কিছু চেয়েছে আমার কাছে। আমি এটা পারতাম না কখনওই।
– আর সায়ান?
– প্লিজ ওর কথা তুলিস না। আমার ভালো লাগছে না।
– সায়ানকে জানাবি না? তুই না পারলে আমি বলি সায়ানকে?
– খবরদার এমন কিছু করবি না। ওকে জানাতে হলে আমিই জানাবো। প্লিজ একা থাকতে দে আমাকে।

স্নিগ্ধা চলে গেল রুম থেকে, কারণ ও জানে এখন এ ব্যাপারে ওর সাথে কথা বলে কোন ভালো জবাব পাওয়া যাবেনা । আর স্পর্শিয়া মুখ গুজে কাদতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়ল মনে নেই। অনেকক্ষন যাবত কেও দরজা ধাক্কাচ্ছে। সেই আওয়াজেই ঘুম ভাঙল। দরজা খুলে দেখে ওর আম্মু দাঁড়িয়ে আছে। স্পর্শিয়ার চোখ দেখে তিনি বললেন-
– কিরে ঘুমিয়েছিলি নাকি?
– হ্যা।
– ঘুমিয়ে নে, এখন তো নিজের ইচ্ছামত যখন তখন ঘুমাতে পারিস। বিয়ে হলে কি করে যখন তখন ঘুমাস দেখবো।
কথাটা বলেই জাহানারা রহমানের চোখ ছলছল করে উঠল। চেহারাটা মলিন হয়ে গেল। এইটুকুন মেয়ের এত জলদি বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে তিনি কখনো চিন্তাও করেন নি। পরমুহূর্তেই নিজেকে এই বলে শান্তনা দিলেন যে আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। বিয়ে দেওয়ার কথা উঠলে তিনি নিজেই মানা করে দিতেন। যেহেতু শুধু এ্যাঙ্গেজমেন্টের কথা উঠেছে আবার ছেলেও ভালো সেজন্যই তিনি রাজি হলেন।

– তুমিও এখন বিয়ে নিয়ে কথা বলা শুরু করে দিলা আম্মু!
– আচ্ছা.. আচ্ছা.. আর বলবো না। ইনভেলপ টা খুলে দেখ।
– কি এটায়?
– আরাধ্যর ছবি আর বায়োডাটা।
– আরাধ্য কে?
– ওরে আমার পাগলী মেয়েরে! নিজের হবু জামাইয়ের নামই জানেনা।
একথা বলেই জাহানারা বেগম রুম থেকে চলে গেলেন।

স্পর্শিয়ার শরীরে আগুন ধরে গেল। বিয়ে না হতেই জামাই জামাই শুরু করে দিয়েছে। ভালো লাগেনা এসব! ইনভেলপটা খাটের উপর ফেলে রাখল। এই ছেলেকে দেখার কোন ইচ্ছাই নেই ওর। সায়ানকে একটা কল দিবে নাকি ভাবতে লাগল। আচ্ছা শায়ানকে কি এসব বলা জরুরি? কেমন রিয়্যাক্ট হবে ওর? পরমুহূর্তেই ভাবল, কোন কারন নেই ওকে কল দেওয়ার। সায়ান যা করেছে তার শাস্তি এটাই যে শায়ানকে ও জানাবেই না ওর বিয়ের ব্যাপারে কিছু!

(চলবে)

লিখাঃ Dewan Oishi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here