প্রেম পর্ব -০৩

প্রেম 💙 (Love has no limits)

#পর্ব: ০৩

আজ স্পর্শিয়ার এ্যাঙ্গেজমেন্ট। আরাধ্যর বাসা থেকে জোড় করায় খুব তাড়াতাড়ি ই এ্যাঙ্গেজমেন্ট করতে হচ্ছে স্পর্শিয়ার ফ্যামিলির। সকাল থেকেই বাসার সবাই খুব ব্যস্ত। ১২টায় ঘুম থেকে উঠেছে স্পর্শিয়া। সবার এত ব্যস্ততার উপর আলতো করে ও নজর বুলিয়ে নিল। কলেজে যাওয়া হচ্ছে না আজ ৩ দিন যাবত। মা বলেছে ওকে এ্যাঙ্গেজম্যান্টের পর থেকে কলেজে যেতে।

অন্যসময় কলেজে যেতে না পারলেও ওর কোন মাথা ব্যথা থাকে না। কারন, কলেজ/ ক্লাস এসব ওর এমনিতেও ভালো লাগে না। কলেজে গেলে অধিকাংশ সময় কাটায় বান্ধবীদের সাথে দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি, কোন স্যারের মাথায় চুল কম, কোন ম্যাডাম ক্লাসে এসে ঘুমায়, কোন মেয়েটা ক্যাম্পাসে এসে লুকিয়ে লুকিয়ে বয়ফ্রেন্ডের সাথে ফোনে কথা বলে, কোন ছেলেটা একসাথে তিন / চারটা রিলেশন করছে এসব পর্যবেক্ষণ করেই দিন কাটে। কলেজে না গেলে যে ওর বাসায় থাকতে বোরিং লাগে তা নয়, তখন সারাদিন ঘুমিয়ে আর কাজিনদের সাথে হৈ হুল্লোর করতে করতে কাটিয়ে দেয়।

এখন ওর কাজিনরা সবাই লাফালাফি, হৈ চৈ এ ব্যস্ত। বাড়ির বড়রা কাজে ব্যস্ত। কেও কেও রাতে কি পড়বে, কোথা থেকে সাজবে তা নিয়ে ব্যস্ত। অন্য কোন ফাংশন হলে ও নিজেও সবার সাথে এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। কিন্তু আজ ভালো লাগছে না সবার এত ব্যস্ততা দেখতে। ইচ্ছে করছে সব ছেড়ে চলে যেতে।

হঠাৎ স্পর্শিয়ার দাদা এসে ওর পাশে বসল। ও দাদার দিকে নজর দিয়ে দেখল তার চেহারাটা মলিন দেখাচ্ছে। কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে ওমনি দাদা ওকে জিজ্ঞেস করছে –
– একটা সত্যি কথা বলবিরে আপু?
– হ্যা, দাদা। তোমাকে কখনো মিথ্যা বলেছি?
– বিয়েতে কি তোর মত নেই?
স্পর্শিয়া চমকে উঠল। দাদা এ কথা কেন জিজ্ঞেস করছে। ও বলল,
– দাদা এ কথা বলছো কেন?
– তোকে সেদিন বিয়ের কথা বলার পর থেকে কেমন যেনো মনমরা লাগছে। তুই আমাদের প্রেশারে পড়ে বিয়ে করছিস না তো?
– না রে বুড়া! কি যে বল না! প্রেশারে পড়ে বিয়ে করবো কেন? হঠাৎ করেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তাই কেমন যেন ফিল হচ্ছে।
এই প্রথম দাদার সাথে কোন মিথ্যা বলল স্পর্শিয়া। কিন্তু কি করার, দাদার মন তো আর ও ভাঙতে পারবে না।
– বিয়ে কই হচ্ছে রে পাগলি? শুধু তো এ্যাঙ্গেজম্যান্ট হচ্ছে।
– সব খুব জলদি জলদি হচ্ছে তো তাই এমন লাগছে। আবার তোমাদের ছেড়ে চলে যাব তাই ভেবেও কেমন যেন লাগছে।
– আমাদের ছেড়ে যেতে অনেক দেড়ি এখনো। আর যদি এতই মিস করিস আমাদের তাহলে বিয়ে করে নে আমাকে তবেই তো হলো। দূরে যেতে হবে না আর।
বলেই হো হো হো করে হাসতে লাগলেন ৭০ বছর বয়সী আবিদুর রহমান।

– যাও শয়তান। তোমার বউ কে এখনি বলছি দাড়াও।
– আহা! ওইটা তো আমার বউ না। তোরা কি যেনো পেত্নীদের বলিস, ও হচ্ছে “চুইরেল! চুইরেল”
– চুইরেল না, চুড়েল।
– হ্যা, সেটাই তো বলছিলাম চুইরেল।
– আরে চুইরেল না তো…

পেছন থেকে সাহানা বেগমের গলার শব্দ শুনা গেল –
– কি বললা তুমি আমাকে?
আবিদুর রহমান পিছনে ফিরেই ভয় পেয়ে বললেন-
– কই কিছু বলি নাই তো।
– আমি শুনেছি নিজে।
– বুড়ো হয়ে গেছ তাই ভুল শুনেছ।
– কাকে বুড়ো বললা?
– আর কাকে? নিজেকেই বললাম। বলছিলাম আর কি, আমি এত বুড়া বয়সেও এত সুন্দরী একজন মহিলা, মানে এত সুন্দরী একটা জুয়ান মেয়ের জামাই, ভাবতেই খুব গর্ব হয়।
সাহানা বেগম খুশি হয়ে গেলেন স্বামীর কথায় যদিও তার স্বামী যে তাকে খোচা মারছে তা তিনি ভালো ভাবেই বুঝতে পারছেন।

স্পর্শিয়া ওর দাদা দাদীর খুনসুটি দেখতে লাগলো। এই বয়সেও তাদের মধ্যে কত ভালোবাসা, কত দুষ্টুমি ভরা ঝগড়া। নিজেও একসময় এই স্বপ্নই দেখতো সায়ানকে নিয়ে। কিন্তু কষ্ট হচ্ছে এখন আর এসব নিয়ে ও ভাবতে পারবে না।

… … … …

সন্ধ্যায় পার্লার থেকে সরাসরি ভেন্যুতে গেল স্পর্শিয়া। সাথে স্নিগ্ধা আর ওর মেজ কাকার ছোট মেয়ে আলিয়া ছিল। ভেন্যুতে গিয়ে দেখলো বাসার সবাই চলে এসেছে। অল্প কিছু গেস্ট এসেছে। স্পর্শিয়ার পড়নে ধবধবে সাদা রঙের গাউন। মুখে হালকা মেকাপ। দেখে মনে হচ্ছে কোন সাদা পরী। ওদের দেখেই স্পর্শিয়ার সেজ কাকী এগিয়ে এলেন। বলতে লাগলেন-
– তোরা কি কখনো শুধরাবি না? এত দেড়ি কেও করে? গেস্ট আসা শুরু হয়ে গেছে অলরেডি আর তোরা…
ছোট কাকী এসে ওদের বকা থেকে বাচালো। সেজ কাকী চলে যেতেই তাকে স্নিগ্ধা আর আলিয়া বকতে লাগলো-
– এই মহিলা একটা কালো বেগুন ভর্তা, পচা কাঠালের খোসা, ঝালওয়ালা বোম্বাই মরিচ। এত খারাপ কেন এই মহিলা?
– লবন ছাড়া তরকারীও এই মহিলা।
– এই কি বলছিস এসব? (ছোট কাকী)
– আর কি বলবো? দেখো না অকারনেই বকে? সাজ শেষ না করেই কি চলে আসবো নাকি?
– আহা! তোরা জানিস ই তো যে উনি একটু এমন। উনার সামনেই কেন পড়তে গেলি। যাহ এখন, স্পর্শিয়াকে রেস্ট রুমে রেখে আয়। গেস্ট আসা শুরু হয়ে গেছে। ছেলেপক্ষ কল দিয়েছিল, কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে।
.
.
.

অনেকক্ষন যাবত স্পর্শিয়া রুমে একা বসে আছে। সেই যে ওর বান্ধবীরা বর দেখার জন্য গেল এখনো এল না। বর কে দেখতে গিয়েছে নাকি ওরাই বিয়ে করতে গিয়েছে ও বুঝতে পারছে না। একটা কাজিনও রুমে আসছে না। সবাই ওই পরায়া ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত। রাগ হচ্ছে ওর। ফোনটা হাতে নিয়ে একবার স্ক্রিন আনলক করছে, একবার লক করছে। হঠাৎ ইচ্ছে হল সায়ানকে একবার কল দিতে। দিবে নাকি না সেই দোটানায় আছে ও। পরমূহুর্তে নিজেই চিন্তা করল না, নাহ! কি ভাবছে ও। যে মানুষ ওর খোজ নেওয়ার কোন প্রয়োজন মনে করে না, যে মানুষের লাইফে ওর কোন ভ্যালু নেই সে মানুষকে কল দেওয়ার কথা ও কেন ভাবছে। ফোনটা ছুড়ে দূরে ফেলে দিল। অনেক কিছু ভাবতে ভাবতেই দরজায় নক পড়ল। তাকিয়ে দেখে ডার্ক ব্লু কালার জরজেট শাড়ি পড়া মধ্যবয়সী এক মহিলা, কিন্তু চেহারায় মাধুর্য আছে। আর দেখে মনে হচ্ছিল হেলদি ডায়েট মেইনটেইন করে, খুব স্লিম। তার সাথে সাতাশ /আটাশ বছর বয়সী ডার্ক মেরুন নেটের শাড়ি পড়া এক মেয়ে। উনিও বেশ সুন্দরী। স্পর্শিয়া ভাবতে লাগলো এগুলা আবার কোন আত্মীয়। কোথায় দেখেছে বা, কোন সাইডের আত্মীয় মনে করতে পারছে না ও। মেজাজ আরও খারাপ হচ্ছে ওর। যাদের জন্য বসে আছে তাদের দেখা নেই, এরা আবার কারা এসেছে ওর মাথা খেতে।
ভদ্রমহিলা ভেতরে এসে বললেন –
– আমি নিশাত চৌধুরী।
স্পর্শিয়ার এমনিতেই মেজাজ খারাপ, আর এ মহিলা এসে নিজের বিবরণ দিচ্ছে। ওর বলতে ইচ্ছে করছিল আপনি নিশাত নাকি অন্য কেও তা জেনে আমি কি করবো। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও বলতে পারলো না।
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে স্পর্শিয়াকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিশাত চৌধুরী মুচকি হেসে নিজেই বললেন –
– আমি আরাধ্যর মা ।

আরাধ্য কে সেই চিন্তা করতে লাগলো স্পর্শিয়া। নাম টা শুনেছে বলে মনে হচ্ছে। হঠাৎই মনে হলো আরে এটা তো সেই ছেলেরই নাম যার সাথে আজ ওর এ্যাঙ্গেজম্যান্ট। কথাটা মনে পড়তেই স্পর্শিয়া বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। ধুর ছাই, কি যে করে না ও। নিজের জামাইয়ের নাম নিজেরই মনে থাকে না। আবার নিজেই ভাবল, ওরই বা কি দোষ, যেই আজব নাম তাই মনে থাকে না। নিশাত চৌধুরীকে ভালো মত স্ক্যান করলো স্পর্শিয়া। সত্যিই কি উনার ছেলের সাথে স্পর্শিয়ার এ্যাঙ্গেজম্যান্ট, নাকি মজা নিচ্ছেন উনি। এত স্মার্ট শ্বাশুড়ি! আচ্ছা, ও এখনো দাঁড়িয়ে আছে কেন ভ্যাবলার মতো, সালাম তো করলই না। মুহূর্তের মধ্যেই এতকিছু ভেবে ফেললো ও। তারপর যেই পা ছুতে যাবে নিশাত চৌধুরী ওকে ধরে উঠিয়ে দিলেন আর বললেন,
– আরে করছো কি তুমি। মেয়েরা মায়ের বুকে থাকে।
বলেই জড়িয়ে ধরলেন। স্পর্শিয়ার গাল দুটো ধরে কপালে চুমু একে দিলেন। স্পর্শিয়া অবাক করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মিসেস চৌধুরীর দিকে।

(চলবে)

লিখাঃ Dewan Oishi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here