প্রেম পর্ব -০৪

প্রেম 💙 (Love has no limits)

#পর্ব: ০৪

নিজের ছেলের বউকে দেখে খুশিতে ওর গাল দুটো ধরে কপালে চুমু একে দিলেন নিশাত চৌধুরী। স্পর্শিয়া অবাক করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মিসেস চৌধুরীর দিকে। ঠিক যেন মমতাময়ী মায়ের অনুভুতি পেল ও। মিসেস চৌধুরী পাশের মেয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন স্পর্শিয়ার।
– এটা আরাধ্যর বড় ভাবী পায়েল চৌধুরী।
পায়েল বলতে লাগলো-
– তোমার কথা এতদিন শুনেই গিয়েছি, আর ছবিতে দেখেছি, আজ বাস্তবেও দেখে নিলাম।
নিশাত চৌধুরী পায়েলের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন,
– মাশাল্লাহ! যেন কোন ডানা কাটা পরী তুমি। সেদিন আরাধ্যর আব্বু, আর দাদা দাদী যখন তোমাকে এসে দেখে গেলেন আমাদের খুব আফসোস হয়েছিল আসতে পারিনি বলে। আমরা দুজনেই দেশের বাহিরে ছিলাম তখন। তারা তো তোমাকে দেখে গিয়ে যা প্রশংসা! আমিও তো বলি শুধু শুধুই কি আমার ছেলে পাগল হয়েছে। দেশ বিদেশ ঘুরে যে ছেলের নজর কোন মেয়ের দিকে আটকালো না, সে কি না ঘায়েল হল বাঙালী কন্যার রুপে।
বলেই শ্বাশুড়ি আর বউ দুজনেই হাসতে লাগলেন। স্পর্শিয়া মাথা নিচু করে রইলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো –
– উনার ছেলে ঘায়েল হয়েছে মানে? উনার ছেলে কি যেন নাম ফারাধ্য না বরাধ্য, সেই ছেলে কি আগে থেকে আমাকে চেনে? কিন্তু কিভাবে সম্ভব? ছেলে নাকি অস্ট্রেলিয়া ছিল এত বছর? উফফ! অসহ্য। কিছুই মাথায় ঢুকছে না। সাথে সাথেই আবার ভেবে বসলো , আরে! আমি এত ভাবছি কেন, ওই ব্যটা চিনলে চিনুক, তাতে আমার কি।

পায়েল জিজ্ঞেস করল-
– কি ব্যাপার? কিছু ভাবছ? টেনশনে মনে হচ্ছে।
– না, ভাবী। এমন কিছু না।
– আরে বল, আমরা তো তোমার আপনজন ই।
– না আসলে.. আসলে.. হয়েছে কি..
স্পর্শিয়া বলার জন্য কিছুই পাচ্ছিল না। না পেয়ে যা মাথায় আসলো তাই বলে দিল।
আসলে জীবনে প্রথমবার বিয়ে করছি তো তাই একটু নার্ভাস লাগছে এই আর কি।

বউ শ্বাশুড়ি দুজন দুজনের দিকে একবার তাকিয়েই হা হা করে হেসে দিল।
তাদের হাসি শুনেই স্পর্শিয়া বুঝতে পারলো কত আজগুবি একটা কথা বলে ফেলেছে ও। নিজেকে এখন ওর কাপিল শারমা শো এর এন্টারটেইনার মনে হচ্ছে, আর উনারা দুজন অডিয়েন্স।
নিশাত চৌধুরী বললেন-
– বিয়ে, এ্যাঙ্গেজমেন্ট এগুলো তো সবার জীবনে একবারই হয়। নাকি তোমার আরও দু চার বার করার ইচ্ছা আছে?
বলেই আবারো হেসে ফেললেন দুজন। স্পর্শিয়া এখনো মুখ নিচু করে আছে।
-এই বাচ্চাকে তো আগে কথা শেখাতে হবে দেখা যাচ্ছে।
-টেনশন বা নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। আমরা সবাই তোমার আপন মানুষ। আমাদের কাছে লজ্জারও কিছু নেই। (নিশাত)
– আচ্ছা তুমি এখন রেস্ট নাও, আমরা আসি।
তারা চলে গেলেন। স্পর্শিয়া ভাবতে লাগলো প্রথম মিটেই ওর ইজ্জতের ফালুদা হয়ে গেল।

একটু পরে ওর বান্ধবীরা রুমে ঢুকল। রুমে ঢুকেই বলতে লাগলো –
রিমি: ধুর! আমাদের জিজুর দেখাই তো পেলাম না।
সানায়া: হ্যা, মন টাই খারাপ হয়ে গেল। কি এমন কাজ উনার যে নিজের এ্যাঙ্গেজম্যান্টেও আসতে লেট করে।
সারা: সব দোষ স্পর্শিয়া শয়তান্নীর। ওর বিয়েতে ইচ্ছা নেই সেজন্যই দেখতে পারলাম না জিজুকে।
স্পর্শিয়া: ওই.. ওই… কি বলিস তোরা? দেখতে না পারার সাথে আমার বিয়েতে ইচ্ছা না থাকার কি সম্পর্ক?
পিউ: আর যাই বলিস না কেন, জিজুর ফ্রেন্ড গুলা কিন্ত জোস!
সানায়া: হ্যা ,অস্থির। সব হ্যান্ডসাম ছেলেগুলো এক সার্কেলেই এসে জয়েন করেছে।
স্পর্শিয়া : হ্যা, যা। এবার তোরা একেকজন একেকটারে গিয়ে ধর। বদমাইশ গুলি।
এমন সময় স্নিগ্ধা রুমে এসে বলল স্পর্শিয়াকে স্টেজে নিতে বলেছে। সবাই মিলে স্পর্শিয়াকে স্টেজে নিয়ে গেল।

স্টেজে একটা বড় সোফা, আর বড় সোফার দুপাশে দুটো ছোট সোফা। পুরোটা ভ্যেনু ব্লু আর সাদা রঙের ফুল দিয়ে সাজানো। সবাই স্পর্শিয়াকে স্টেজে বসিয়ে দিল। স্পর্শিয়া চারদিকে নজর বুলাতেই ওর চোখ ছলছল করে উঠলো। গত কয়েকদিনের ব্যস্ততায় সায়ানকে মাথায় আনার সময় পায়নি ও। কিন্তু এই মুহুর্তেই মনে পড়ছে, কাকে নিয়ে আজকের দিনের স্বপ্ন দেখেছিল, আর কার সাথে সেই স্বপ্ন পূরন হচ্ছে ভাবতেই কলিজাটা চিপ মেরে উঠল।
স্নিগ্ধা ওর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে ওর পাশে এসে বসে ওর হাত চেপে ধরল। স্পর্শিয়া স্নিগ্ধার দিকে এক নজর তাকালো। এই মেয়েটাই আজকের দিনে সবচেয়ে খুশি থাকার কথা, সবচেয়ে আনন্দ করার কথা, অথচ বোনের কষ্টে এই মেয়েটাও আজ মনমরা।

হঠাৎ স্পর্শিয়ার সামনে কেও এসে দাঁড়ালো। স্পর্শিয়া চোখ তুলে উপরে তাকালো। লম্বা, ফর্সা, গোলগাল মুখের গড়নের ব্ল্যাক স্যুট পড়া এক ছেলে ওর সামনে দাড়ানো। মুখের হালকা চাপদাড়ি এই ছেলের রুপ আরও কয়েক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে। পিছন থেকে বান্ধবীরা স্পর্শিয়াকে চিমটি দিতেই ও বুঝতে পারলো এই সেই ছেলে যার সাথে ওর আজকে এ্যাঙ্গেজমেন্ট। স্পর্শিয়া খেয়াল করে দেখলো ওর ফ্রেন্ডরা একেকজন হা করে আরাধ্যকে দেখছে।
আরাধ্য জিজ্ঞেস করলো,
– কি খবর স্পর্শিয়া?
স্পর্শিয়া কিছুক্ষন চুপ করে ভাবছে কি উত্তর দিবে।
আরাধ্য ওকে চুপ থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
– কি ব্যাপার? চিনতে পেরেছ তো আমাকে?
স্পর্শিয়া দ্রুত উত্তর করলো,
– জ্বী পেরেছি। আপনি কেমন আছেন?
– এতক্ষণ মোটামুটি ভালো ছিলাম, আর এখন তোমাকে দেখেছি বলে অনেক ভালো আছি।
স্পর্শিয়ার সব বান্ধবীরা পেছন থেকে চিৎকার দিয়ে বলে উঠল “ও…ও….ও….”
স্পর্শিয়া ভাবতে লাগলো এ কেমন ছেলে! প্রথম মিটে কেও এ কথা বলে নাকি!
স্নিগ্ধা ওর জায়গা ছেড়ে আরাধ্যকে বসতে দিল। আরাধ্যর সব ফ্রেন্ডরা সামনে আসতেই ওরা স্পর্শিয়ার সাথে ছবি তুলতে চাইলো। আরাধ্য ওর ফ্রেন্ডদের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিল। আর স্পর্শিয়ার সব ফ্রেন্ড আর কাজিনরা নিজে নিজেই আরাধ্য আর ওর ফ্রেন্ডদের সাথে পরিচিত হতে লাগলো।
আরাধ্যর আম্মু সামনে এসে বলল,
– সবার সাথেই তো পরিচয় হয়েছে তোমার। কিন্তু আমার বড় ছেলে, দুই নাতিন আর ছোট মেয়ের সাথে পরিচয় হয়নি।
উনি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন স্পর্শিয়ার।
হঠাৎ রোহান সামনে এসে মিসেস চৌধুরীকে বললো,
– ওহ! আর আমাকে ভুলে গেলা ছোট আম্মু! তুমি তো অনেক পচা।
– তোকে কি আর ভুলা যায়। আমি তো সিরিয়ালি পরিচয় করাচ্ছিলাম।
– যাও। মিথ্যে বলো না। সব ভালোবাসা আরাধ্যর জন্য, আর আমার জন্য ঘোড়ার আন্ডা।
– বাবা তোর আন্ডা খেতে ইচ্ছে করছে আগে বলবি না? দাড়া এক্ষুনি আনাচ্ছি।
– ছোট আম্মুউউউউউউউউউউউ…
-আচ্ছা আচ্ছা চুপ কর। পরিচয় করাচ্ছি।

নিশাত চৌধুরী রোহানের সাথে আরাধ্যর পরিচয় করালেন,
-স্পর্শিয়া, যদিও আরাধ্যর ফ্রেন্ড হিসেবে অলরেডি রোহানের সাথে তোমার পরিচয় হয়েই গেছে, তবুও আমি আবারো পরিচয় করাচ্ছি । এটা আরাধ্যর বেস্ট ফ্রেন্ড রোহান, আর আমার আরেক ছেলে। রোহান আর আরাধ্য ছোটবেলার বন্ধু , অস্ট্রেলিয়াতেও ওরা একসাথেই লেখাপড়া করেছে। এখন রোহান ওর বাবার বিজনেস দেখাশোনা করছে। মনে রেখ, সারাদিন কিন্তু ওর হাজারো জ্বালা যন্ত্রনা তোমাকে সহ্য করতে হবে। সো, বি প্রিপেয়ার।

স্পর্শিয়ার কেন যেন মনে হতে লাগলো ও আরাধ্যকে চেনে। কোথাও দেখেছে। কিন্তু কোথায় দেখেছে মনে করতে পারছে না। আরাধ্যকে একটু ভালো মত দেখার জন্য ওর দিকে তাকাতেই দেখলো আরাধ্য হাবলার মতো ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। স্পর্শিয়া এই সিচুয়েশনের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ইতস্তত বোধ করল ও। আরাধ্য আর স্পর্শিয়া দুজনেই লজ্জা পেয়ে নজর ফিরিয়ে নিল।

ওইদিকে আরাধ্যর বড় ভাই আরিয়ান এ্যাঙ্গেজমেন্টের অ্যানাউন্সমেন্ট করছে।
একটু পরে রিং বদলের জন্য আরাধ্য আর স্পর্শিয়াকে মুখোমুখি দাড় করানো হল। আরাধ্য স্পর্শিয়ার ঝুকানো নজর দেখছে। একটা মেয়ে এত সুন্দর কি করে হয়। আর আজ তো যেন কোন স্বর্গের অপ্সরী ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে বলে ওর মনে হচ্ছে। চোখ ই সরাতে ইচ্ছে করছে না এই পিচ্চিটার উপর থেকে। গোলগাল ছোট্ট একটা মুখ, বিশাল বড় বড় দুটো চোখ, পাতলা ঠোট, আর বোচা নাক। আরাধ্য একমনে দেখেই চলছে স্পর্শিয়াকে। ও ভাবছে, ভালই হলো মুখোমুখি দাড়া করানোতে। এতক্ষন ও ভালো মত দেখতে পাচ্ছিল না, এখন দেখতে পারছে।

আরাধ্যর পেছনে ভাবী এসে দাঁড়িয়ে আছে আংটি নিয়ে। ওকে একমনে স্পর্শিয়াকে দেখতে দেখে বললো,
– দেবর সাহেব, বউ পরে দেখো অনেক সময় আছে বউ দেখার। আগে আংটি তো বদল কর।

সবাই হেসে উঠল। আর এই ছেলের এমন কির্তীকলাপ দেখে স্পর্শিয়া অবাক হচ্ছে।

(চলবে)

লিখা: Dewan Oishi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here