প্রেম পর্ব -০৫

প্রেম ❤️ (Love has no limits)

#পর্ব : ০৫

স্পর্শিয়া আর আরাধ্য, দুজনের হাতেই আংটি দেওয়া হলো। স্পর্শিয়াকে ভাবি হাত বাড়িয়ে দিতে বললে ও হাত বাড়িয়ে দিল। ওর মনের ভেতর তুফান চলছে। বুক ধড়ফড় করছে। হাতও কাপছে। স্পর্শিয়ার হাত কাপা আরাধ্যর নজড় এড়ালো না। বুঝতে পারলো স্পর্শিয়া অনেক নার্ভাস। আরাধ্য স্পর্শিয়ার হাত ধরলো আংটি পড়ানোর জন্য। স্পর্শিয়াকে প্রথমবার ছুলো আরাধ্য। ওর মনে অন্য রকম এক অনুভুতি হচ্ছে। স্পর্শিয়ার হাত দেখে আরাধ্য হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। এত ছোট আর চিকন হাত হয় নাকি মানুষের। একদম ছোট্ট একটা পাখির বাচ্চার পায়ের মতো লাগছে দেখতে। আরাধ্য স্পর্শিয়াকে আংটি পড়িয়ে দিল। স্পর্শিয়া আরাধ্যকে আংটি পড়ানোর সময় ওর হাত কাপা আরও দ্বিগুন হয়ে গেল। আরাধ্য আস্তে করে বলল,
– আংটি পড়ে যাবে। হাত কাপাকাপি কমাও।
আরাধ্যর কথা শুনে স্পর্শিয়া একবার ওর দিকে তাকালো, এরপর হাত শক্ত করে আংটি ধরে আরাধ্যকে পড়িয়ে দিল।
সাবাই চিৎকার করে হাত তালি দিল। আংটি পড়ানোর সাথে সাথে স্পর্শিয়ার সায়ানকে মনে পড়লো। আজ ও সারাজীবনের জন্য সায়ানকে হারিয়ে ফেললো ভাবতেই কলিজাটা চিপ মেরে উঠলো ।

… …. … …. … …

খাওয়ার সময় স্পর্শিয়া আর আরাধ্যকে পাশাপাশি বসানো হলো। আরাধ্য ওর প্লেট থেকে খাবার তুলে স্পর্শিয়ার মুখের সামনে নিল। টেবিলে বসা সব কাজিন আর ফ্রেন্ডরা একসাথে চিৎকার করে “হাও রোমান্টিক ” বলে উঠলো। স্পর্শিয়া লজ্জা পেয়ে গেল। ভাবতে লাগলো এ আবার কেমন ছেলে। বেশরমা একটা। এভাবে কেও ফ্যামিলির সবার সামনে খাইয়ে দেয় নাকি। আরাধ্য মুখের সামনে স্পুন ধরে বসে আছে। সবার নজর স্পর্শিয়ার উপর। ও না পেরেই খাবার মুখে নিল। অর্ধেক খাবার স্পর্শিয়ার মুখে গেল বাকী অর্ধেক ওর প্লেটে পড়ল।
আরাধ্য বলল,
– এভাবে খাও বলেই তো পাখির বাচ্চার মতো হাত পা। এমন খাবার খেলে শক্তি হবে কি করে, আর শরীরেই বা মাংস হবে কি করে। তখনো রিং পড়ানোর সময় কাপাকাপি করছিলে দেখলাম। আরেকটু হলে তো হাতগুলো ভেঙে পড়েই যেত।

স্পর্শিয়ার রাগ উঠল। ওর খাওয়া দাওয়া নিয়ে কথা বলার এই ছেলে কে। বিয়ে ঠিক হতে না হতেই স্বামীগিরী ফলাতে এসেছে। হুহ!
স্পর্শিয়ার খাবার খাওয়া স্পুন দিয়ে আরাধ্য খেতে পারছে এ ভাবনাটাই আরাধ্যর মনে প্রশান্তি বয়ে দিল।

… … … … … …

বাসায় এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিল স্পর্শিয়া। চোখ লেগে আসছিল চেঁচামেচির শব্দে ও চোখ খুলল। সব ফ্রেন্ডরা ওর রুমে এসে হৈ চৈ করছে। আজ আর ওর শান্তি নেই। ওরা আজ এখানেই থাকবে আর ওর মাথা খাবে।
রিনা: বুঝলি স্পর্শিয়া, জামাই কে এখন থেকেই হাত করে নে।
সানায়া: এই জামাইকে হাত করতে হবে না। জামাই এমনিতেই বউ পাগলা। দেখলি না খাবার টেবিলে বসে কি করলো।
সবাই খিকখিক করে হেসে উঠলো। ওদের হাসি সহ্য হচ্ছে না স্পর্শিয়ার। সারাদিনই হাসে ওরা। কেও পা পিছলে কাদায় পড়ে গেলেও ওরা হাসে, আবার কারও বিএফ ছেড়ে চলে গেলেও ওরা হাসে! অনেক সময় মন খারাপের সময়ও ওরা খ্যাকখ্যাক করে হেসে দেয়। ওদের কাজই এটা। স্পর্শিয়া নিজেও হাসে ওদের সাথে তাল মিলিয়ে সারাদিন, কিন্তু আজ ওর কিছুই ভালো লাগছে না।
রিমি: এই স্পর্শিয়া, জিজুর ফ্রেন্ড গুলা কি সুন্দর। একটার সাথে সেটিং করিয়ে দে না আমার।
সানায়া: আরে ফ্রেন্ডের কথা বাদ দে। জিজু কি সুন্দর উফফফফ!! আমি তো ফিদা। দেখে মনেই হয় না এই দেশের উনি। মনে হয় যেন পাকিস্তানি।
সারা: আমি তো উনার ব্লু লেন্স আর খোচা খোচা দাড়ির উপর ক্রাশড।
বলেই স্পর্শিয়ার উপর পরে যাওয়ার ভান করলো সারা। স্পর্শিয়া ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল সারাকে। বলল,
– অন্যের হাজব্যান্ডের উপর নজর দিস, লুচু মহিলা কোথাকার।
সবাই চিৎকার দিয়ে উঠে বলল, “ও…. হাজব্যান্ড ”
স্পর্শিয়া : ওইটা তো আমি এমনি বলেছি।
সবাই আবারো হিহিহি করে হেসে উঠলো।
রিমি: হুম, আমরা বুঝি সব। হিহিহি।
স্নিগ্ধা : তোরা আর যাই বলিস না কেন, স্পর্শিয়ার শ্বাশুড়িটা কিন্তু জোস।
সারা: হ্যা, ঠিক। সি ইজ স্টিল সো ইয়াং। উনার দুটো নাতনী আছে কেও বিলিভ ই করবে না। শ্বশুর টাও ড্যাম হট!
স্পর্শিয়া: ওরে তোরা বুড়া লোকটাকেও ছাড়লি না।
রিমি: বিয়েতে ইচ্ছা নাই, কিন্তু উনি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। ঢং দেখলে বাচি না।

স্পর্শিয়া আর বসলো না ওদের সামনে। উঠে চলে আসলো অন্য রুমে। একটু পরে স্নিগ্ধা ওর পাশে এসে বসলো। বলতে লাগলো,
– এটা তোর বর্তমান, আর যা ফেলে এসেছিস সেটা তোর অতীত। এখন আর চাইলেও অতীতে ফিরে যেতে পারবি না। তোর অতীত ভুলে এখন তোর নতুন জীবন শুরু করতে হবে। আরাধ্য ভাইয়ার বিহেভে মনে হল সে তোকে খুব ভালবাসে। সামনে আগা, নয়তো তুই নিজেতো সুখী হবিই না, তার সাথে ওই ছেলেটাকেও কষ্ট দিবি।
স্পর্শিয়ার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। নাক টানতে টানতে বলল,
– হ্যা, ঠিকই বলেছিস। এটাই আমার জীবন। কষ্ট হলেও এই বাস্তবতা যে আমার মানতেই হবে। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো সায়ানকে ভোলার। যেই পথ নিজে বেছে নিয়েছি সেখান থেকে পিছপা হবো না আশা করি।

স্পর্শিয়ার উত্তর শুনে স্নিগ্ধা খুশিই হলো।

… … … … … … …

রাত ১২টা।
স্পর্শিয়ার সব বান্ধবী আর কাজিনরা মিলে ছাদে আড্ডা দিচ্ছে। জোৎস্না রাতে ওদের পছন্দের একটা জিনিস হচ্ছে ছাদে সবাই মিলে আড্ডা দেওয়া। নিচ থেকে সামির দৌড়ে এসে হাপাতে লাগলো। সামির স্পর্শিয়ার সেজ কাকার ছেলে। স্পর্শিয়ার আরেক কাকাতো ভাই রিফাত জিজ্ঞেস করলো,
– কিরে তুই হাপাচ্ছিস কেন?
– বড় আপুনির কল এসেছে।
স্পর্শিয়া জিজ্ঞেস করলো,
– কার কল?
– আরাধ্য ভাইয়া।
স্পর্শিয়ার চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল। এই ছেলে নাম্বার পেল কই ভাবছে স্পর্শিয়া। স্নিগ্ধা চিমটি কাটতেই ফোন টা হাতে নিল। আশেপাশের সবাই ফোন লাউড স্পিকারে দেওয়ার জন্য খোচাচ্ছে। ওদের কথা না শুনলে ওরা এমনই করবে। তাই বাধ্য হয়েই ফোন স্পিকারে দিল ও। আর সবাই খুশিতে হাহা হিহি শুরু করলো।
স্পর্শিয়া ফোন হাতে নিয়ে চুপ করে বসে আছে। ওপাশ থেকে আরাধ্য বলল,
– লুকোচুরি খেলে লাভ কি। তোমার নিঃশ্বাসের শব্দটাও আমি বুঝি ।
সবাই চিতকার করে উঠলো। স্পর্শিয়া ভাবতে লাগলো এই ছেলের মাথায় নির্ঘাত কোন গন্ডগোল আছে। নয়তো কেও এভাবে কথা বলে নাকি।
স্পর্শিয়া এখনো চুপ। আরাধ্য জিজ্ঞেস করলো,
– কি করছ?
– তেমন কিছুনা।
– আমি কি করছি জানো?
স্পর্শিয়া মনে মনে ভাবছে ব্যাটা তুই কি করছিস আমি কি জানতে চাইছি নাকি। নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো,
– না। আমি কি করে জানবো?
– একটা চাঁদ দেখছি, আরেক চাদের সাথে কথা বলছি।
সবাই চিতকার দিয়ে উঠলো। রিমি স্পর্শিয়ার হাত থেকে ফোন নিয়ে নিল।
রিমি: ভাইয়া, চাদের আশেপাশে কিন্তু তারা রাও আছে।
আরাধ্য : ও! আমার দুষ্টু শালিকারা সব শুনছিল তবে।
রিফাত : সাথে শালারাও আছে ভাইয়া।
আরাধ্য : আরে বাবা! আমার সব ভালোবাসা গুলো দেখি একসাথে।
আলিয়া: তা ভাইয়া, এত রাতে রোমান্টিক কথা বলতে কল দিয়েছিলে বুঝি। হুমম??
পাশ থেকে স্নিগ্ধা ওর কান টেনে দিয়ে বলল,
– ওরে পাকনি। এত কথা শিখেছিস। বাচ্চা আছিস, বাচ্চার মতো থাক।
আর সবাই হাহা করে হেসে উঠলো। ওদের হাসিতে আরাধ্যও যোগ দিল।
আরাধ্য : ভালই হল, চাঁদ তারা সব একসাথে ফ্রি পেলাম।
সানায়া: ফ্রি কই? চাঁদ তো তোমারই, কিন্তু তারাদেরও ডিমান্ড আছে।
আরাধ্য : তো, তারাদের ডিমান্ড টা কি, বলো শুনি।
স্নিগ্ধা: তারাদের ডিমান্ড তারা চাইনিজে যাবে।
আরাধ্য : ব্যস? এইটুকুই? বল কবে যেতে চাও?
সবাই চিতকার দিয়ে বলে উঠলো – কালকেই যেতে চাই।
আরাধ্য : ওকে ডান। তবে কালকে ডিনারে?
সবাই: হ্যা, ডান।
স্পর্শিয়া ভ্রু কুচকে আছে। রাক্ষস গুলি সারাদিন শুধু খাই খাই করে। কি এক জ্বালা, এখন আবার কালকে ওই গাধা ব্যাটার সাথে দেখা হবে।
আরাধ্য : এবার কি আমি আমার বিবিজানের সাথে কথা বলতে পারি?
সারা: ইস! বিয়ে না হতেই বিবিজান! বুড়ার শখ কত।
আরাধ্য : হেই… হেই.. হু ইজ বুড়া? আম অনলি টুয়েন্টি ফাইভ।
সবাই একসাথে বলে উঠল – বুড়াআআআআআআ

আরাধ্য লজ্জা পেয়ে গেল।
– টুয়েন্টি ফাইভে কি কেও বুড়া হয়?
স্নিগ্ধা: আমার বোন অনলি সিক্সটিন। তাহলে সেই হিসেবে তুমি তো বুড়া ই।
আরাধ্য : এটাই তো আফসোস। এত বছর পর বিয়ে করছি, তাও কপালে জুটলো পিচ্চি মেয়ে, যে এখনো ডিম ফুটেই বের হলো না।

স্পর্শিয়া রেগে গিয়ে বললো,
– আমি কি কাওকে বলছি নাকি ডিমের ভেতরে থাকা মুরগীকে বিয়ে করতে? উনি একজন আশি বছরের বুড়িকে বিয়ে করুক আমার কোন আপত্তি নেই।
আরাধ্য : আরে… আরে.. আমার বিবিজান তো রাগ করলো। আমি তো মুরগীর ডিমের কথা বলিনি। মানুষের ডিমের কথা বলেছি। আচ্ছা বিবিজান সরাসরি ঝগড়া হবে। গুড নাইট। প্রথম কল আমি ঝগড়ায় কাটাতে চাই না।
স্পর্শিয়াকে চুপ করে থাকতে দেখে স্নিগ্ধা ধাক্কা দিল হালকা। ধাক্কা খেয়েই ও “গুড নাইট” বললো।

আরাধ্য সবার থেকে বিদায় নিয়ে কল কেটে দিল। আজ আর আরাধ্যর ঘুম আসবে না। গত দু রাতও ঘুম হয়নি আজকের জন্য এক্সাইটেড ছিল বলে। আজও আসবে না। কতক্ষনে সন্ধ্যা হবে, কতক্ষনে স্পর্শিয়াকে দেখবে। আরাধ্য ফোন টা হাতে নিয়ে স্ক্রিনের উপর হাত ছোয়াল। ওয়ালপেপারে স্পর্শিয়ার ছবি। লাল টুকটুকে একটা জামা পড়ে আছে স্পর্শিয়া। ছবিটা স্পর্শিয়ার ফেসবুক থেকে ডাউনলোড করেছিল ও। আরও বেশ কিছু ছবি আছে ওর কাছে। লাল রঙ টা তে বেশ মানায় স্পর্শিয়াকে। ওকে একটা লাল টুকটুকে শাড়ি গিফট করবে ভাবলো আরাধ্য। কালকেই গিফট করবে। নাহ, কালকে গিফট করলে খুব জলদি হয়ে যায়। কোন এক স্পেশাল দিনে গিফট করতে হবে। আজ ও স্পর্শিয়ার ছবি দেখেই রাত পার করবে। এমন কত রাত স্পর্শিয়ার ছবি দেখে পার করেছে হিসেব নেই। আজকেও তেমনি এক রাত।

(চলবে)

লিখা: Dewan Oishi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here