প্রেম পর্ব -০৬+৭

প্রেম ❤️ (Love has no limits)

#পর্ব: ০৬

স্পর্শিয়াকে অনেকক্ষণ যাবতই ওর আম্মু বকছে। ও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সোফার উপর পা তুলে বসে একমনে মুরগীর হাড্ডি চিবুচ্ছে, আর টিভি দেখছে। এটা খুবই পছন্দের একটা খাবার ওর। মুরগীর হাড্ডি চিবুতে নিলে আর কিছুর খেয়াল থাকে না ওর। ওর আম্মু বকতে বকতে হল রুমে চলে আসলো।
– কিরে, সবাই রেডি হয়ে গেল আর তুই এখনো হাড্ডি খাচ্ছিস। মাগরিবের আজান দিয়ে দিয়েছে। ছেলেটা তো এসে অপেক্ষা করবে।

স্পর্শিয়া ভাবতে লাগলো পরের ছেলের জন্য ওর আম্মুর কত দরদ। ছেলেটাকে সহ্যই হয় না ওর। আজ শান্তিতে খেতেও পারছে না এই ছেলের জন্য।
– আম্মু, যাও তো। দুই মিনিট লাগবে খেতে। আসছি।

জাহানারা রহমান রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলেন।

আরাধ্য স্পর্শিয়ার বাসার সামনে এসে দেখলো বাড়ির হল রুমে ঢোকার দরজা খোলা। বাড়িটা বেশ সুন্দর। দরজার সামনে দাড়িয়েই পেছনের চারদিকে নজর বুলালো ও। আশেপাশের অনেক জায়গা জুড়ে খালি আছে, আর ছোট ছোট গাছ আর ফুলের টব দিয়ে ভর্তি । দরজার সামনে দাড়াতেই আরাধ্য হল রুমের ভেতরে দেখতে পেল। হল রুমটাও বেশ বড়। রুমে টিভি অন। টিভিতে ডোরিমন চলছে। স্পর্শিয়া যে সোফায় বসেছে, সে সোফাটা বেশ উঁচু। তাই আরাধ্য আর দেখতে পেল না যে রুমে স্পর্শিয়া আছে।
কাওকে না দেখতে পেয়ে আরাধ্য বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখছিল কাওকে দেখা যায় কি না। ভাবলো, কাশি দেবে। তাহলে হয়তো আওয়াজ শুনে কেও আসবে। কাশি দিতে নেবে এমন সময় বাম পাশে নজর যেতেই দেখল স্পর্শিয়া সোফায় দুই পা তুলে বসে আছে। কোলে একটা বাটি। বাটিতে অনেকগুলো মুরগীর হাড়। স্পর্শিয়া একমনে হাড্ডি চিবুচ্ছে, আর ডোরেমন দেখে খিলখিল করে হাসছে।
ইস! মেয়েটা আসলেই বাচ্চা। কিভাবে খাচ্ছে আর কার্টুন দেখছে। স্পর্শিয়াকে দেখে আরাধ্যর হাসিও পাচ্ছে। কিন্তু ও হাসলে বাচ্চা মেয়েটা লজ্জা পাবে তাই খুব কষ্টে হাসি কন্ট্রোল করে আছে। আরাধ্য হালকা কাশি দিয়ে বললো,
– কি করছো সোনামণি?
স্পর্শিয়া আওয়াজ শুনে ডান পাশে মাথা ঘুরাতেই আরাধ্যকে দেখে ফ্রিজ হয়ে গেল। ব্লু কালারের পাঞ্জাবী পড়ে কালকের গাধাটা ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ও কি করবে বুঝতে পারছে না। কি এক অবস্থায় দেখলো ওকে এই ছেলে। কিছু ভাবতে না পেরেই “আম্মুউউউউউউ” বলে চিৎকার দিয়ে দিল এক দৌড়। আরাধ্য ভয় পেয়ে গেল। এই মেয়ে যেভাবে চিৎকার দিল বাসার সবাই কি না কি ভাববে। ভাবতে ভাবতে সব কাকীরা এসে হাজির হল রুমে।
ছোট কাকী: কেমন আছ আরাধ্য?
ভয়ার্ত গলায় আরাধ্য উত্তর দিল,
– জ্বি, হ্যা, ভালো।
সেজ কাকী: তুমি কিছু মনে করো না বাবা। স্পর্শিয়াকে এমন অবস্থায় তুমি দেখেছ তো, তাই ও একটু লজ্জা পেয়ে গেছে। আমাদের মেয়েটা একটু এমনি বাবা।
আরাধ্য : না, না। আমি বুঝতে পেরেছি।
বড় কাকী: তুমি বস। আমি বাচ্চাদের কে পাঠাচ্ছি।
আরাধ্য : জ্বি , আচ্ছা।
কিছুক্ষনের মধ্যেই আরাধ্যর সব শালা শালিরা হল রুমে এসে হাজির। আরাধ্য ওদের সাথে গল্প শুরু করে দিল। এরই মধ্যে স্পর্শিয়াকে উপরে যেতে দেখেছে ও। বুঝতে পারলো ওর রুম উপরে। আরাধ্য অপেক্ষা করছে কতক্ষনে স্পর্শিয়া আসবে।

হঠাৎ সামির বলল,
– ভাইয়া চলো তোমাকে আমাদের বাসা ঘুরিয়ে দেখাই।
– হ্যা, অবশ্যই। চলো।
সামির আরাধ্যর হাত ধরে হাটছে আর এ রুম ওই রুম ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে। উপরে যখন রুম দেখাতে গেল তখন সামির আরাধ্যকে স্পর্শিয়ার রুমও দেখিয়ে দিল। স্পর্শিয়ার রুমের দরজা বন্ধ।
আরাধ্য ভাবল ভালই হলো রুম চিনে নিল। পরে হয়তো কাজে লাগবে।

সামির আরাধ্যকে ছাদে নিয়ে গেল ছাদ দেখাতে। ছাদটাও বেশ বড় আর সুন্দর। ছাদের চারপাশে ফেইরি লাইট। এমন সুন্দর একটা ছাদ পেয়েছে বলেই হয়তো কাল এত রাতেও আড্ডা দিচ্ছিল ওরা ছাদে বসে।
পুরো বাড়ি দেখানো শেষ করে সামির আবার আরাধ্যর হাত ধরে নিচে চলে আসলো। দোতলায় আসতেই সামির বলল,
– ভাইয়া তুমি যাও। আমি এক্ষুনি আসছি।
বলেই আরাধ্যর হাত ছেড়ে দৌড় দিল। আরাধ্য একা একাই সামনে আগাতে লাগলো। হঠাৎ লাইট চলে গেল। পুরো ঘর অন্ধকার হয়ে গেল। নিচ থেকে সবার হৈ চৈ এর আওয়াজ উপরে আসছে।
হঠাৎ স্পর্শিয়ার চিৎকারের আওয়াজ পেল আরাধ্য। ভয় পেয়ে গেল, স্পর্শিয়ার আবার কি হল। পিছনে ফিরলো স্পর্শিয়ার রুমে যাওয়ার জন্য। ওর চিৎকারের আওয়াজ স্পষ্ট হচ্ছে। বুঝতে পারলো স্পর্শিয়া এদিকেই আসছে। ও সামনে আগাতেই স্পর্শিয়ার সাথে ধাক্কা খেল। আরাধ্যর বুঝতে বাকি রইলো না স্পর্শিয়া লাইট চলে যাওয়াতে ভয় পেয়ে চিতকার করছিল আর দৌড়াচ্ছিল।
স্পর্শিয়ার কাজকর্ম আরাধ্যর কাছে দারুন ইন্টারেস্টিং লাগছিল। ওকে ভয় দেখানোর জন্যই নিজের ভয়েস মোটা করে আরাধ্য বললো
-আমি তো খবিসের বাদশা। তোমাকে নিতে এসেছি।
আরাধ্যর কথা স্পর্শিয়ার কানে যেতেই ও ঘোরের মধ্যে তাই সত্যি ভেবে নিল। আরও জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগলো ও।
স্পর্শিয়া সরে যেতে নিতেই আরাধ্য ওর দুই হাত শক্ত করে ধরলো। স্পর্শিয়া চোখ বন্ধ করে ওর দুই হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর ভুত ভুত বলে চিৎকার করছে।
এক পর্যায়ে ভয়ে কেদেই দিল স্পর্শিয়া।
স্পর্শিয়ার কান্না দেখে আরাধ্য আর মজা করার সাহস পেল না। আলতো করে ওর গাল দুটো ধরে গলার স্বর নরম করে বলল,
– এই মেয়ে, কাদছো কেন? আমিই তো। তোমার আরাধ্য।
স্পর্শিয়া এবার চোখ খুলে উপরে তাকালো। আবছা আলোতে আরাধ্যকে খুব বেশি বুঝা যাচ্ছে না। কিন্তু ওর সামনে একজন মানুষ আছে, ভুত নয়, এটা ভেবে শান্তি পেয়েই ও জড়িয়ে ধরলো আরাধ্যকে। মুখ গুজে দিল আরাধ্যর বুকে।
আরাধ্য খুব শকড হয়। স্পর্শিয়া ওকে জড়িয়ে ধরবে, তাও এমন একটা সিচুয়েশনে ও চিন্তাই করেনি। ওর মনে প্রশান্তির ঢেউ খেলে যাচ্ছে। নিজের ভালোবাসাকে এভাবে বুকে রাখাতে যে কি সুখ, তা শুধু যারা উপভোগ করেছে তারাই জানে। আরাধ্যর ইচ্ছে করছিল এ সময় যাতে থেমে যায়, এই সুখের মুহূর্ত যেন কখনো শেষ না হয়।

আরাধ্যর সুখের মুহূর্তে পানি ঢেলে হঠাৎই লাইট চলে আসলো । আরাধ্যর রাগ উঠলো। ভাবতে লাগলো, আরেকটু পরে লাইটটা আসলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত। খেয়াল করে দেখল স্পর্শিয়া এখনো মুখ গুজে আছে ওর বুকে। ভয়ে কাপছে মেয়েটা। নিচ থেকে কেও দেখে ফেললে কি না কি ভাববে, তাই ও নিজেই বললো,
– স্পর্শ, চোখ খোল। লাইট চলে এসেছে।
আরাধ্যর কথায় স্পর্শিয়ার হুশ এল যে ও আরাধ্যর বুকে মাথা দিয়ে রেখেছিল এতক্ষণ। চোখ খুলতেই আরাধ্যকে ধাক্কা দিয়ে কয়েক কদম পেছনে চলে গেল স্পর্শিয়া।
চোখ মুছে আরাধ্যকে বলল,
– আপনি তো খুব খারাপ মানুষ। মিথ্যা বলে ভয় দেখিয়েছেন।
– কেন? তুমি কি জানো না ভুত বলতে যে কিছু নেই?
-আ… আ… আমি জানি আর না জানি ইটস নান অফ ইউর বিজনেস। আপনি আমাকে ভয় দেখিয়েছেন এটাই মেইন কথা।
– তুমি নিজেও তো ভুতের ভয়ের ভান করে আমার নরম বুকে মাথা রেখে ভালই মজা নিয়ে নিলে।

বলেই আরাধ্য পিছনে ঘুরে সিড়ি দিয়ে নেমে চলে গেল। স্পর্শিয়া হা করে তাকিয়ে রইল। কি সাংঘাতিক খারাপ ছেলেরে বাবা। কি বলে গেল!এত বছর বাইরে থাকা ছেলেগুলা এমনই হয়।
ভাবতে ভাবতেই রাগে ফুসতে লাগলো স্পর্শিয়া। এই ছেলে কে শিক্ষা দিতেই হবে।
লাইট কেন গেল সেটা মনে করতেই ওর মনে পড়লো ওদের ইলেক্ট্রিসিটি ঠিক করা হচ্ছে । বেশ কয়েকটা বকা ইলেক্ট্রিসিটিকেও দিল স্পর্শিয়া।
প্রেম 💜 (Love has no limits)

#পর্ব : ০৭

রেস্টুরেন্টে স্পর্শিয়া আর আরাধ্য পাশাপাশি বসেছে। স্পর্শিয়ার ইচ্ছা ছিল না আরাধ্যর সাথে বসার। কিন্তু স্নিগ্ধার জোড়াজুড়িতে বসতে হলো। স্নিগ্ধাকে পেটাতে ইচ্ছে করছে স্পর্শিয়ার। এই গাধা ব্যাটার জন্য এত দরদ কেন স্নিগ্ধার । এত দরদ থাকলে ও ই বিয়ে করে নেক। বাসায় গিয়েই স্নিগ্ধাকে বলবে এই ব্যাটা আজকে কি করেছে। তারপর দুজন মিলে প্ল্যান করে এই ব্যাটাকে শিক্ষা দিবে। পরক্ষনেই মনে হল স্নিগ্ধা এই ব্যাটাকে শিক্ষা দেওয়ার বদলে যদি উল্টো ওকে বকাঝকা করে? উফফফফ! আর ভাল্লাগেনা ওর এসব। যা করার ওর নিজেকেই করতে হবে। কিন্তু কি করবে!

এতক্ষণ যাবত এসবই ভাবছিল ও। ক্ষুধার আলাপ পেতেই স্পর্শিয়া সবার কথা শোনায় মনোযোগ দিল খাবার এখনো দিচ্ছে না কেন তা জানতে। যতটুকু বুঝলো রোহান আসবে তাই এখনো খাবার অর্ডার করা হয়নি। অথচ এদিকে ক্ষুধায় ওর নাড়িভুড়ি প্যাচ লেগে যাচ্ছে। পেটের ভেতর থেকে গুড়গুড় আওয়াজ হচ্ছে বেশ জোরে জোরে। এত জোরে আওয়াজ হচ্ছে যে আরাধ্য আবার শুনে ফেলছে না তো? শুনলে ও লজ্জায় মাটিতেই মিশে যাবে। এমনিতেই তখন হাড্ডির কাহিনি নিয়ে কম ফালুদা হয়নি ইজ্জতের। আরাধ্য ওর পেটের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না কি সেটা বুঝার জন্যই আস্তে আস্তে আড়চোখে আরাধ্যর দিকে তাকালো স্পর্শিয়া। সাথে সাথেই আরাধ্য ওর দিকে ফিরে বেশ জোরেই বলে উঠলো,
– বাবু, আমি তো তোমারই। আমাকে এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার কি আছে? ভালো করে দেখো।
স্পর্শিয়া কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। আর সবাই হেসে উঠলো।
স্পর্শিয়া বললো,
– আমি আপনাকে দেখিনি। অন্যকিছু দেখছিলাম।
– কি দেখছিলে?
– আমি পাশের টেবিলের কাপল দেখছিলাম।
– আমার দিকে তাকিয়ে?
স্পর্শিয়া রাগে ফুসতে লাগলো।
আরাধ্য সবাইকে বলতে লাগলো,
– বুঝলে তোমরা, বউ আমার ছোট বাচ্চা হলেও ভালবাসে আমাকে প্রচুর। নয়তো এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে নাকি? পাতিপ্রেম যাকে বলে! শালিকারা তোমরা সবাই তোমাদের বিয়ের আগে আমার বিবিজানের থেকে ট্রেনিং নিয়ে নিও স্বামীকে কিভাবে ভালবাসতে হয় সে ব্যাপারে ।
সবাই আরও এক দফা হেসে নিল।

আরাধ্য খুবই মিশুক প্রকৃতির হওয়াতে খুব সহজেই সবার সাথে ফ্রেন্ডলি হয়ে গেল। ব্যাপারটা স্পর্শিয়ার নজর এড়ালো না। বাসায়ও খেয়াল করেছে কাকীদের সাথে ও খুব মজা করেই কথা বলছিল, কাকীরাও হাসাহাসিতে ব্যস্ত ছিল ওর সাথে। এখানেও তাই হচ্ছে। ওর নিজের কথা যেন কারও মনেই নেই আরাধ্যকে পেয়ে।

একটু পরেই রোহান আসলো। রোহান আসার সাথে সাথেই খাবার অর্ডার করলো। খাবার টেবিলে আসতেই স্পর্শিয়ার গরম মাথা ঠান্ডা হলো। আর যাই হোক খাবারের সাথে নো কম্প্রোমাইজ।

আরাধ্যর খুব ইচ্ছা করছিল স্পর্শিয়াকে প্রথম খাবার টুকু মুখে তুলে দিবে। কিন্তু বেশ কয়েকবার চেস্টা করেও ও ভয়ে পারল না করতে। কারন ও ভালভাবেই বুঝতে পেরেছে যে স্পর্শিয়া ওর ওপর রেগে আছে। তার সাথে এই দুদিনে আরাধ্যর এটাও বুঝতে বাকী নেই যে স্পর্শিয়া এই এ্যাঙ্গেজমেন্টে খুশি নয়। হয়তো এত অল্প বয়সে, আর হুটহাট করে এ্যাঙ্গেজমেন্ট টা হয়ে যাওয়াতেই স্পর্শিয়া সবকিছু বুঝে উঠতে পারছে না। আর এ জন্যই হয়তো ওর মন খারাপ, এমনটাই ধারনা আরাধ্যর। ও ডিসাইড করলো স্পর্শিয়াকে ও যথেষ্ট টাইম দেবে সবকিছু বুঝে ওঠার। হয়তো ওকে খাইয়ে দিতে পারলে ওর নিজের কাছে ভালো লাগবে, কিন্তু স্পর্শিয়ার এটা পছন্দ নাও হতে পারে। তাই আরাধ্য আর সাহস করলো না ওর মুখে খাবার তুলে দেওয়ার।

সবাই খাচ্ছে আর গল্প করছে। হঠাৎ স্পর্শিয়ার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপল। ও ওয়েটারকে ডাকছে।
আরাধ্য : তোমার কি লাগবে আমাকে বলো। আমি বলে দেই।
স্পর্শিয়া: এক বাটি শুকনো মরিচ ফাকি লাগবে।
আরাধ্য : এক বাটি! কি করবে?
স্পর্শিয়া : খাব। শুকনো মরিচ নিশ্চয়ই মুখে মাখবো না।
আরাধ্য : এক বাটি খাবে?
স্পর্শিয়া : হ্যা।
আরাধ্য ওয়েটারকে বললো এক বাটি শুকনো মরিচ ফাকি আনতে। ওয়েটার নিয়ে এল। আরাধ্য ভয় পাচ্ছে স্পর্শিয়াকে বাটিটা এগিয়ে দিতে। এমনিতেই রেগে আছে, মরিচ ফাকি টা স্পর্শিয়া ওর মুখে ছুড়ে মারবে না তো?

স্পর্শিয়া বাটির সবটুকু মরিচ ফাকি নিজের স্যুপের বাটিতে ঢেলে নিল। সবাই চোখ বড় বড় করে স্পর্শিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। স্পর্শিয়া স্নিগ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– কিরে স্নিগ্ধা, সেদিন তুই বলেছিলি না আমি এক বাটি মরিচ খেতে পারলে ট্রিট দিবি। নে, আমি খাচ্ছি।
স্নিগ্ধা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আরাধ্য বলল,
– তুমি খেতে পারবে না। মুখ পুড়ে যাবে।
– না, পারবো। আমি অনেক ঝাল এমনিতেও খেতে পারি।
– সেটা তো আমিও খাই, কিন্ত…
– ধুর, মিথ্যে কথা। আপনি পারেন না খেতে।
– আমি পারি।
– তবে খেয়ে দেখান এই বাটির সব স্যুপ।
– ওকে ডান।
স্পর্শিয়া যেন এতক্ষণ এই অপেক্ষাতেই ছিল। মুখে হাসি ফুটে উঠলো ওর।

আরাধ্য খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো যে স্পর্শিয়া কাজ টা ইচ্ছে করেই করেছে, ওর ওপর ক্ষোভ থেকে করেছে। কিন্তু এত ক্ষোভ ওর উপর স্পর্শিয়ার সেটা আরাধ্য চিন্তাও করেনি।

আরাধ্য স্পর্শিয়ার স্যুপের বাটিটা নিয়ে নিল। সবাই বেশ কয়েকবার মানা করলো আরাধ্যকে খাওয়ার জন্য। কিন্তু ও শুনলো না।

এখন সবাই অবাক হয়ে আরাধ্যকে দেখছে। স্পর্শিয়ার মজাই লাগছে । যাক ব্যাটাকে শিক্ষা দিতে পারছে তবে।

আরাধ্য সুপের বাটি থেকে স্যুপ নিয়ে খাওয়া শুরু করেছে। ৩ চামচ খাওয়ার পরেই আরাধ্যর চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। পুরো মুখ ঘেমে গেছে। ওর ফর্সা গালগুলোতে যেন রক্ত জমে গিয়েছে। ওর অবস্থা দেখে সবাই বেশ ভয় পেয়ে যায়। কয়েকবার মানা করেছে সবাই কিন্তু ও শুনছে না। রোহান একবার হাত থেকে স্যুপের বাটিটা নিতে চাইলে আরাধ্য কঠিন গলায় বলে দিয়েছে
– আমার ইচ্ছা আমি খাচ্ছি, আমার বউয়ের কথায় আমি খাচ্ছি, তুই আমাকে মানা করার কে?

এরকম কড়া ভয়েস শুনে যেন স্পর্শিয়াও ভয় পেয়ে যায়। ছেলেটার চোখমুখ লাল হয়ে গিয়েছে। নাহ, খুব বড় একটা শাস্তি হয়ে গেল এটা। ওর ধারনা ছিল দুই এক চামচ খেয়ে আর খাওয়ার সাহস করবে না আরাধ্য। কিন্তু ও যেভাবে খাচ্ছে, মনে হচ্ছে সব শেষ করেই ছাড়বে। ওর নিজেরই এখন খারাপ লাগছে। প্রায় অর্ধেক বাটি স্যুপ খাওয়া শেষ। এর মধ্যে একবারও ছেলেটা পানি খায় নি। আল্লাহ ই জানে কি হবে।

রোহান স্পর্শিয়াকে বললো,
– ভাবী তোমার কথা ছাড়া ও থামবে না। প্লিজ ওকে থামাও। অনেক সমস্যা হয়ে যাবে ওর।

স্পর্শিয়া নিজেই এবার আরাধ্যকে বলল,
– প্লিজ থামুন। আর খেতে হবে না।
আরাধ্য তবুও খেয়েই চলছে।
– আপনাকে আমি থামতে বলছি। আপনি আমার কথায় খাওয়া শুরু করেছেন যেহেতু, তবে এখন আমার কথাতেই থামুন।
আরাধ্য তবুও খেয়েই চলেছে। স্পর্শিয়ার বুঝতে আর বাকী রইলো না যে আরাধ্য জিদ করেই খাওয়া শুরু করেছে। ও এবার বলেই ফেললো,
– আপনি খাওয়া না থামালে আমার যেন কোন ক্ষতি হয়ে যায়।

আরাধ্য সাথে সাথে থেমে গেল। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরাধ্য স্পর্শিয়ার দিকে। ওর চোখের দিকে তাকাতেও ভয় করছে স্পর্শিয়ার। লাল টকটকে চোখ। আর সে চোখে যেন ক্ষোভ, জিদ, কষ্ট সব একসাথে মিশে আছে। আরাধ্য চোখের পলক ফেলছে না।

স্পর্শিয়া পানি এগিয়ে দিল আরাধ্যর দিকে। আরাধ্য এখনো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্পর্শিয়ার দিকে। স্পর্শিয়া বলল,
– নিন পানিটা খান।
আরাধ্য পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা খেয়ে ফেলল।
সবাই আরাধ্যর দিকে খুব অবাক আর ভয়ার্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। ব্যপারটা বুঝতে পেরেই আরাধ্য সবাইকে উদ্দেশ্য করে হেসে বললো,
– দেখলে তো শ্যালক শ্যালিকারা, আমি কত ঝাল খেতে পারি? আমার বিবিজান মানা না করলে তো আমি পুরোটাই শেষ করে দিতাম।
তারপর কলার টানতে টানতে বললো,
আরাধ্য কেন ডু এনিথিং।
সবাই এবার গম্ভীরতা কাটিয়ে হেসে উঠলো। কিন্তু স্নিগ্ধা আর রোহানের বুঝতে বাকী রইলো না যে সামথিং ইজ রং।

সবাই খাওয়া দাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো আবার। আরাধ্য স্পর্শিয়ার পাশে ফিরে আস্তে করে বললো,
– আমাকে এতটা অপছন্দ তোমার, আমি বুঝতেই পারিনি।
স্পর্শিয়া চমকে গিয়ে আরাধ্যর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আরাধ্য এ ব্যাপারটা আচ করতে পারবে এটা ওর চিন্তার বাইরে ছিল। এমন একটা কথার জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
মাথায় অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে স্পর্শিয়ার। ছোট বলে একটুতেই সবকিছু গুলিয়ে ফেলে। ওর মনে হচ্ছে আরাধ্য যদি বাসায় গিয়ে সবাইকে ওর এসব কির্তীকালাপ, আর ওর যে আরাধ্যকে পছন্দ না তা যদি বলে দেয় তবে কি হবে? ভয় হচ্ছে ওর খুব। খাবার নাড়ছে, মুখে দিচ্ছে, কিন্তু গলা দিয়ে খাবার আর নামছে না।

… … … … … … …

বাসায় ফেরার সময় স্নিগ্ধা আরাধ্যকে বললো,
– ভাইয়া তুমি আর স্পর্শিয়া এক গাড়িতে যাও। আমরা আমাদের গাড়িতে যাই।
– তাহলে রিমি, সানায়া, আর তোমার অন্য সব ফ্রেন্ডরা কি করে যাবে? ওরাও কি তোমাদের বাসায় যাবে?
স্নিগ্ধা এবার চিন্তায় পড়ে গেল। রোহান নিজ থেকেই বলল,
– যদি ওদের কোন সমস্যা না থাকে তবে আমি ওদেরকে আমার গাড়িতে নিয়ে যাই। যার যার বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি। আর আলিয়া, স্নিগ্ধা, আর ওরা সব কাজিনরা মিলে ওদের গাড়িতে চলে যাক, তুই আর ভাবী তোর গাড়িতে যা।

রোহান বুঝতে পেরেছিল আরাধ্য আর স্পর্শিয়ার মাঝে কোন সমস্যা হয়েছে , সেজন্যই ওদের একসাথে পাঠানোর জন্য নিজেই স্পর্শিয়ার সব বান্ধবীদেরকে বাসায় পৌছে দেওয়ার দায়িত্ব নিল।
স্পর্শিয়াও কিছু বললো না। কারণ ওর নিজেরই খারাপ লাগছিল আরাধ্যর জন্য। গাড়িতে একসাথে গেলে আরাধ্যর সাথে হয়তো কিছু কথা বলা যাবে সেটা ভেবেই কিছু বললো না স্পর্শিয়া।

… … … … … … … …

বেশ অনেকক্ষন যাবত জ্যামে বসে আছে আরাধ্য আর স্পর্শিয়া।
গাড়ির এফএম এ গান হচ্ছে “ইসমে তেরা ঘাটা,মেরা কুছ নেহি যাতা,
যেয়াদা পেয়ার হো যাতা, তোহ মে সেহনেহি পাতা”
গানটা স্পর্শিয়ার পছন্দের গানগুলির মধ্যে একটি। কিন্তু এই মুহূর্তে গান টা ওর পছন্দ হচ্ছে না। কেন যেন বার বার মনে হচ্ছে গান টা ওকে ডেডিকেট করে প্লে করেছে আরাধ্য।

স্পর্শিয়ার ইচ্ছে করছে একটা বালটিতে পানি নিয়ে অনেকগুলো বরফ দিয়ে, সে পানিতে মাথা ডুবিয়ে রাখতে। ওর যখন খুব রাগ হয় তখন ওর এমন করতে ইচ্ছা করে। কিন্তু ওর আজীবনের আফসোস এই ইচ্ছাটা ও কখনওই পূরণ করতে পারে না।

আরাধ্য এ পর্যন্ত ওর সাথে কোন কথা বলেনি। স্পর্শিয়া মনে মনে ভাবছে, এমনিতেই তো সারাদিন কত বকবক করে আর এখন এত সাইলেন্ট মুডে কেন। একটু ঝাল ই তো খেতে বলেছি এমন করার কি আছে। সাথে সাথেই মনে হলো, নাহ! এই জিনিসটাই খুব খারাপ হয়েছে। একটু ঝাল হলে ব্যপার ছিল না। কিন্তু এটা একটু ঝাল না। স্পর্শিয়া বলে উঠলো,
– আই এম সরি।
আরাধ্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
– সরি ফর হোয়াট?
– ওই যে তখন আমার কথায় এতগুলো মরিচ ফাকি খেতে হলো আপনার তাই।
– হুমম।

বলেই আরাধ্য চুপ হয়ে গেল। আরাধ্য কিছু বলবে ভেবে স্পর্শিয়া বেশ কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। নাহ! আরাধ্য কিছুই বলছে না। আবার নিরবতা। স্পর্শিয়ার ভালো লাগছেনা। মানুষটাকে যতটুকু সময় দেখেছে শুধু কথা ই বলতে দেখেছে, হাসতে দেখেছে। একজন হাস্যোজ্জ্বল মানুষ হঠাৎ এভাবে মুখ গোমরা করে রাখলে কেমন যেন লাগে। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে বলেই আবারো নিরবতা ভেঙে স্পর্শিয়া নিজেই বলল,
– ভাইয়া আপনি কি রাগ করেছেন?
বলেই সাথে সাথে দুই হাতে মুখ চেপে ধরল।
আরাধ্য কয়েক সেকেন্ড ওর মুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাহা করে হেসে উঠলো।
– কে তোমার ভাইয়া?
– কেও না।
– তাহলে বললে কেন?
– ভুলে। আসলে সবাইকে ভাইয়া ডাকতে ডাকতে…

আরাধ্য আবারো হেসে উঠলো। আরাধ্য নরমাল হয়েছে দেখে স্পর্শিয়াও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজেই আরাধ্যর হাসিতে তাল মিলালো।
আরাধ্য এই মেয়ের বাচ্চামি দেখে আর হাসে। এই পিচ্চি নাকি ওর হবু বউ। ভাবতেই আবারো হাসি পেল ওর। এই পিচ্চিকে বড় করতেই আরও ৫/৬ বছর লেগে যাবে। হঠাৎই কিছু একটা মনে পড়তেই আরাধ্য স্পর্শিয়াকে বললো,
– স্পর্শ?
– হুম।
– একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
– জ্বি, করুন।
– তোমার কি কারও সাথে রিলেশন আছে?
স্পর্শিয়া আরাধ্যর কথা শুনে স্ট্যাচু হয়ে গেল।
আরাধ্য ওর কথা ক্লিয়ার করার জন্য আবারও বললো,
– আই মিন টু সে, তুমি কি এই সম্পর্কে খুশি না? তোমার কি কারও সাথে কোন সম্পর্ক….ইউ নো হোয়াট আই মিন।
স্পর্শিয়া অনেকক্ষণ চুপ করে ছিল।
আরাধ্য নিজেই বললো ,
– প্লিজ ভয় পাবে না। যদি সম্পর্ক থাকে তুমি বলতে পারো। ভালবাসি তোমাকে। জোড় করে শুধুমাত্র একটা বন্ধনের কারনে নিজের কাছে রাখতে চাই না। অথবা অন্য কোন কারন থাকলে সেটাও বলতে পার। আমাকে তোমার পছন্দ না হলে সেটাও ডিরেক্ট বলতে পার।
স্পর্শিয়া এবারও কিছুক্ষণ চুপ থেকে কাপা কাপা গলায় বললো,
– আপনি হঠাৎ এ কথা কেন জিজ্ঞেস করছেন?
– আমার কথায় হার্ট হবে না প্লিজ। তুমি কষ্ট পেলে আমার জান টা বের হয়ে যায়। সেবার যখন অ্যাক্সিড্যান্ট এ…
এটুকু বলেই আরাধ্য চুপ হয়ে গেল। স্পর্শিয়া আরাধ্যর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।

আরাধ্য আবারো বলল,
– আসলে, কালকে আমাদের এ্যাঙ্গেজমেন্ট ছিল, প্রতিটা মেয়ের জন্যই এই দিনটা খুব স্পেশাল হয়। তোমাকে কালকে আমি যতটুকু অবজার্ভ করেছি, তোমার মন খুব খারাপ ছিল। একটা মেয়ের এ দিনে নিশ্চয়ই অনেক খুশি থাকার কথা কিন্তু তুমি খুশি ছিলে না বললেই চলে। যেটুকু হাসি ছিল তোমার ঠোটে তা আমার কাছে ফেক মনে হয়েছে। কারন তোমার রিয়েল হাসিটা আমি চিনি। এমনকি আমার দিকেও তুমি ঠিকমতো তাকাওনি। সব মিলিয়েই আমি বুঝতে পেরেছিলাম তুমি খুশি না। স্পর্শ, ট্রাস্ট মি আমি তোমাকে হার্ট করতে কথাগুলো বলিনি। আমার যা মনে হয়েছে শুধু তা ই বলেছি।

স্পর্শিয়া চুপ করে আছে এখনো । আরাধ্য ডাক দিল ওর নাম ধরে,
– স্পর্শ!

সত্যি বলা স্পর্শিয়ার পক্ষে সম্ভব না। আর তাছাড়া ওর তো সায়ানের সাথে এখন কোন সম্পর্কও নেই যে ও বলবে ওর রিলেশন আছে। স্পর্শিয়া বলল,
– আসলে.. আপনি যা ভাবছেন এমন কিছু নয়। আমাকে কেও জোড় দেয়নি বিয়ের ব্যপারে। বরং সবকিছু আমাকে জিজ্ঞেস করেই করা হয়েছে। কিন্তু, সব কিছু এত জলদি হয়ে যাবে আমি ভাবিনি। তাই একটু কেমন যেন মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমি খাপ খাওয়াতে পারছি না পরিস্থিতির সাথে। সব এলোমেলো লাগছে আমার কাছে।

কথাগুলি বলতে বলতেই স্পর্শিয়ার কান্না চলে আসলো। দু ফোটা পানি গাল বেয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ল।

আরাধ্য গাড়ি থামিয়ে দিল। স্পর্শিয়ার হাত ধরে বলল,
– প্লিজ ডোন্ট ক্রাই। প্লিজ। আই কান্ট টলারেট ইউর পেইন। সরি আমি তোমাকে হার্ট করে ফেলেছি। প্লিজ কেদো না। সব দোষ আমার। কেন যে তোমাকে এসব বলতে গেলাম।
বলেই গাড়িতে জোরে একটা ঘুষি দিল আরাধ্য। স্পর্শিয়া ভয় পেয়ে গেল। স্পর্শিয়ার দিকে নজর পড়তেই আরাধ্য নিজের সিট থেকে সরে ওর দিকে এগিয়ে গেল। হাত ছোয়ালো স্পর্শিয়ার গালে। ওর চোখের পানি মুছে দিল। আরাধ্য স্পর্শিয়ার এত কাছে আসাতে স্পর্শিয়ার বুক ধুকধুক করছে। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ও।

আরাধ্য হাত দিয়ে স্পর্শিয়ার দুই গাল ধরে বলল,
– প্রথমত আমি সরি তোমাকে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করার জন্য। আসলে খুব ভালবাসি তো তোমাকে তাই ভয়টাও বেশিই কাজ করে। এন্ড টেক ইউর টাইম। ব্যপারটা এমন না যে আমরা এখনই সংসার শুরু করে দিচ্ছি। সিচুয়েশনের সাথে কো-অপারেট করার জন্য অনেক টাইম আছে। আমাকে এখনি ভালোবাসতে হবে এমন কোন কথা না। যখন ভালবাসবে তখন আমি এমনিতেই বুঝবো। প্লিজ আর কখনো এভাবে মন খারাপ করো না। আমার কষ্ট হয়।
স্পর্শিয়ার গাল বেয়ে আরও দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। আরাধ্য ওর শীতল ছোয়ায় পানিটুকু মুছে দিল।
আরাধ্য স্পর্শিয়াকে ছেড়ে আবার নিজের সিটে বসলো। স্পর্শিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
– কখনো যদি এমন মনে হয় যে আমাকে ভালবাসতে পারছ না, অথবা আমার সাথে এই বন্ধনে তুমি থাকতে চাও না, আমাকে জানাবে। আমি তোমাকে এ বন্ধন থেকে মুক্তি দিয়ে দিব, আর তোমার উপরে কোন দোষও পড়তে দিব না।
কথাগুলো বলার সময় আরাধ্যর গলা ধরে যাচ্ছিল তা স্পর্শিয়া খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারলো ওর ভয়েস শুনে।

কিছুক্ষনের জন্য দুজনেই চুপ হয়ে গেল। আরাধ্য স্বাভাবিক স্বরেই বললো,
– বাসায় যাবে না? নাকি আজ রাত গাড়িতেই কাটিয়ে দিবে?
আরাধ্যর কথা শুনেই স্পর্শিয়া ওর দিকে তাকালো। খেয়াল করলো ওরা বাসার গেইটের বাইরে।
তখন তাহলে বাসায় চলে আসাতেই আরাধ্য গাড়ি থামিয়ে দিয়েছিল? স্পর্শিয়া ভাবতে লাগলো।

আরাধ্য গাড়ি থেকে বের হয়ে দরজা খুলে দিল স্পর্শিয়াকে বের হওয়ার জন্য। গাড়ি থেকে বের হয়ে দুজনেই স্পর্শিয়ার বাসায় গেল।
বাসায় ঢুকতেই স্পর্শিয়ার দাদী আরাধ্যর হাত ধরে বললেন,
– এই ছেলে, বিয়ে করবা আমাকে?
স্পর্শিয়ার সব কাজিন, ওর আব্বু, আম্মু, কাকা, কাকীরা সবাই হল রুমেই ছিল। সবাই একসাথে হেসে উঠলো।
আরাধ্য দাদীর গাল ধরে বললো,
– এত সুন্দর বউ কেও আবার হাত ছাড়া করে না কি?

আরাধ্যর কথা শুনে ৬০ বছর বয়সী সাহানা বেগম খুশিতে গদগদ হয়ে উনার স্বামীর দিকে ফিরে বললেন,
– শুনেছ? কত সুন্দর জোয়ান ছেলে আমাকে বিয়ে করতে চায়। তুমি তো শুধু শুধুই বলো আমি নাকি বুড়ো হয়ে গেছি। যাও, তোমাকে আর লাগবে না আমার, আমার আরাধ্যই আছে এখন থেকে।
সবাই হেসে উঠলো একসাথে।
আরাধ্য বললো,
– তোমাকে কিন্তু আমার তিন নম্বর বউ হতে হবে।
– কেন? তিন নম্বর কেন?
– আমার প্রথম বউ তো আমার দাদী সাজেদা সুইটহার্ট, দ্বিতীয় বউ স্পর্শিয়া, আর তৃতীয় বউ হবে তুমি।
– তোর স্পর্শিয়ার কথা ভুলে যা। আবিদুর নামের আমার একটা জামাই আছে না? ওই বুড়াই তো তোর বউকে নিজের বউ বানিয়ে রেখেছে।
– ওওওও? জেলাসি?
– কিসের জেলাসি ফেলাসি? তোমার মতো সুন্দর ছেলে থাকতে আর কি লাগে আমার?

স্পর্শিয়া ওর দাদী আর আরাধ্যর কথা শুনছে আর হাসছে। ছেলেটা কত মিশুক, কত সহজেই সবাইকে আপন করে নিয়েছে এটাই ভাবছে।

… … … … … … … …

আরাধ্য চলে যেতে চাইলেও চলে যেতে পারেনি। স্পর্শিয়ার সব কাজিনরা ওকে ঘিরে ধরেছে এখনি যেতে দিবে না। সবাই ওকে নিয়ে ছাদে গিয়ে গোল হয়ে বসে আড্ডা জুড়ে দিয়েছে। স্পর্শিয়া আর আরাধ্য পাশাপাশি বসে আছে। বেশির ভাগ কথা আরাধ্যই বলছে। ও বেশ কয়েকটি দেশে ট্যুর দিয়েছে, কোথায় গিয়েছে, কোথায় কি কি দেখেছে সে সব বিষয়েই কথা হচ্ছে, আর সবাই মনযোগ দিয়ে আরাধ্যর কথা শুনছে।
স্পর্শিয়ার খালাতো বোন নাদিয়া বলে উঠল,
– বাহ! তাহলে স্পর্শিয়ার তো লাক খুবই ভালো দেখা যায়। ওর ও তো ট্রাভেলিং এর কত শখ! ভালই হবে, বিয়ের পর তোমরা দেশ বিদেশে ঘুরে ঘুরে সংসার করবা।

আরাধ্য বললো,
– হ্যা, আমার তো খুব ইচ্ছা স্পর্শিয়াকে নিয়ে অনেক ট্রাভেল করবো । আর অনেকদিনের ইচ্ছা স্কুবা ডাইভিং করার। কিছুদিন আগে মেক্সিকোতে একটা সুযোগ পেয়েছিলাম স্কুবা ডাইভিং এর। কিন্তু তখন ইচ্ছে করেই সুযোগ টা হাত ছাড়া করেছিলাম স্পর্শিয়ার সাথে স্কুবা ডাইভিং করবো বলে। আগে একাই করার প্ল্যান ছিল, কিন্তু ও লাইফে আসার পর থেকে ওকে নিয়েই সব স্বপ্ন পূরনের উইশ করি।

স্পর্শিয়া জিজ্ঞেস করলো,
– স্কুবা ডাইভিং কি?
ওর চোখে মুখে এক্সাইটমেন্ট। জিজ্ঞেস করেই সাথে সাথে মনে মনে ভাবতে লাগলো – কি জিজ্ঞেস করলাম এটা? জানার কি দরকার ছিল? এই ছেলে এখন নিশ্চয়ই ভাববে আমি কিছু জানিনা।
শিহাব বলে উঠল,
– আরে তুই স্কুবা ডাইভিং বুঝিস না? শোন স্কুবা ডাইভিং হচ্ছে..
স্পর্শিয়া এই প্রথম এত আগ্রহ নিয়ে আরাধ্যর কাছে কিছু জানতে চাইছে। তাই শিহাব কে থামিয়ে দিয়ে আরাধ্য বললো,
– টিভিতে কখনো দেখেছো পানির নিচে সমুদ্রে মানুষ যায়?
– হ্যা, দেখেছি।
– সেটাই স্কুবা ডাইভিং।
আরাধ্যর কথা শুনেই স্পর্শিয়ার চোখেমুখে ভয়ের ছাপ দেখা দিল। ও ভাবতে লাগলো, এই ছেলে এত ডেন্জারাস টাস্ক ওকে সাথে নিয়ে করার কথা ভাবলো কি করে!
আরাধ্য স্পর্শিয়ার চোখে ভয় দেখে বললো,
– আরে ভয় পেতে হবে না। তুমি এখনো পিচ্চি। আগে এ্যাডাল্ট হও, নয়তো তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্নই পূরণ করতে পারবো না।
আরাধ্যর কথা শুনে সবাই স্পর্শিয়ার উপর হাসতে লাগলো । আর স্পর্শিয়া রাগ করে মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।

(চলবে)

লিখা: Dewan Oishi
(চলবে)

লিখা: Dewan Oishi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here