ভুলবোঝার শেষপ্রান্তে পর্ব ২

#ভুলবোঝার_শেষপ্রান্তে🥀
#লাবিবা_ওয়াহিদ
#পার্ট_০২
.
🍁
.
বলেই আমি স্নেহার হাত থেকে নাইফ টা কেড়ে নেই এবং দূরে কোথাও ফেলে দেই। স্নেহা কাঁদতে কাঁদতে আমায় জড়িয়ে ধরে এবং বলতে লাগে,

স্নেহা- দি তোর দুটো পায়ে পড়ি আর আমার জীবন টাকে শেষ করিস না প্লিজজজ।(কাঁদতে কাঁদতে)

স্নেহার এতো আকুতি মিনতি শুনে আর রাজি না হয়ে পারলাম না। তবে কিছু সর্ত দেই,

আমি- ঠিক আছে আমি সব ব্যবস্থা করবো তবে হ্যা আমার কিছু সর্ত আছে সেগুলা যদি মানতে পারিস তাহলে আমি সব মেনেজ করবো।

স্নেহা কিছুটা খুশি হয়ে বলে,

স্নেহা- হ্যা হ্যা আমি সব করতে রাজি এখন তো বল রিদকে।

আমি- আমি এখনো তো কিছুই বলিনি। তবে যাই হোক শোন প্রথম সর্ত হচ্ছে তোর এই ফেক রিলেশন, নাইটক্লাব, ফূর্তি, আজেবাজে খরচ সব বন্ধ করতে হবে।

স্নেহা- হ্যা হ্যা আমি সব ছেড়ে দিবো।

আমি- পুরো কথা টা তো শোন। আজ থেকে এসব ড্রেস চলবে না সুন্দর পরিপাটি হয়ে বাসা থেকে বের হবি কি রাজি তো??

স্নেহা- হ্যা আমি রাজি সব করতে রাজি এখন বল রিদ কে বলবি আমার কথা?

আমি- যদি সর্ত মানতে রাজি থাকিস তাহলে অবশ্যই বলতে হবে তাইনা।(হেসে)

স্নেহা উত্তেজিত হয়ে বলবো,

স্নেহা- ওওওওও দি লাভ ইউউউ সোওঅঅঅঅ মাচ।(বলেই জড়িয়ে ধরলো)

সেদিনের এই সিদ্ধান্ত নেওয়াই হয়তো আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো। যাই হোক আমিও রিদ ভাইয়াকে অনেক কস্টে রাজি করালাম স্নেহার সাথে রিলেশনশিপ জড়াতে। ভাইয়া আমার জোড়াজুড়ি তে বাধ্য হিয় রিলেশন করতে। ভাইয়া প্রথমে পাত্তা না দিলেও পরে স্নেহার কাজ গুলো তে অনেক মুগ্ধ হয়ে তাকে ভালোবেসে ফেলে। এভাবেই চলে যায় তিন বছর। ওদের ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না খোজও নেইনি ভাবতাম এইটা ওদের পার্সোনাল মেটার সো আমার কি করার আছে। তো একদিন স্নেহা কাদতে কাঁদতে মামি কে এসে বলতে লাগলো,

স্নেহা- মা এই মেয়ে কে বিয়ে দাও এই কাজের মেয়ে টা বাইরে সবাইকে রটিয়ে বেড়াচ্ছে আমি নাকি খারাপ এবং অনেক তুচ্ছ। সবাই আমায় কটু কথা বলছে। আমি আর পারছি না মা একে বিদায় করো নইলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো।

মামি- একদম চুপ কর এগুলা কি বলছিস তুই? মাইরায়ায়ায়ায়া।(কড়া গলায়)

মামির কড়া কন্ঠ শুনে আমি তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম এবং বলতে লাগলাম,

আমি- ক.. কি হয়েছে মামি ডাকছো কেন??(কাপা কাপা গলায়)

মামি এসে ঠাটিয়ে এক চড় বসিয়ে দিলো আমার গালে। আমি গালে হাত দিয়ে মামির দিকে ছলছল চোখে তাকালাম।

মামি- তোর সাহস কি করে হয় আমার মেয়ের সম্পর্কে উল্টাপাল্টা কথা বলার?? হ্যা তোকে খাইয়েছি পড়িয়েছি কি এই দিন দেখার জন্য?? কালসাপ পুষেছি এতোদিন কালসাপ।

বলেই আরেক চড় দিলো।

আমি- মা.. মামি আমি তো কিছুই করিনি তাহলে আমায় মারছো কেন?(কাঁদতে কাঁদতে)

মামি- এহ আসছে কচি খুকি। তোকে তো আজ মেরেই ফেলবো।

বলেই মামি আমার দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই স্নেহা মামি কে আটকায়।

স্নেহা- মা থামো করছো কি ওকে বিয়ে দিয়ে দাও কোনো হাবলার কাছে তাহলেই তো এই কালসাপটা এই বাড়ি থেকে বিদায় হবে তাইনা?

আমি স্নেহার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম। যাকে এতোটা বিশ্বাস,ভরসা, স্নেহ করতাম ছোট বোনের মতো সে আজ আমায় এভাবে বলবে কখনো ভাবতে পারিনি।

আমি- ক.. কিসব বলছিস তুই বোন? আ.. আমি তো….

স্নেহা- ওই চুপ জ্ঞান দিতে আসবি না মা একে ঘরে বন্দি করে রাখো তো যত্তোসব ঢং।

এই কথা যেনো আমি আকাশ থেকে পরলাম। কি বলছে স্নেহা? কই এতোদিন তো করেনি তাহলে এখন এমন করছে কেন? কি দোষ আমার??

স্নেহার কথা মতোই মামি আমায় টেনে হেচড়িয়ে রুমে নিয়ে এসে আমায় বাইরে থেকে বন্ধি করে দিলো। আমি এতো আকুতি মিনতি করার পরেও আমার প্রতি তার একটুও মায়া বোধ হলো না। সেইদিন সারাদিন না খেয়ে ছিলাম এক মুঠো ভাত পর্যন্ত খেতে দেয়নি। সারাদিন কান্না করেই কাটিয়ে দিলাম। রাতে হঠাৎই কল আসলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম রিদ ভাইয়া কল করেছে। আমি তাড়াতাড়ি রিদ ভাইয়ার কল রিসিভ করলাম আর কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলাম,

আমি- ভাইয়া আমায় বাচান আমায় ওরা ওরা….

আর বলতে পারলাম না পেছন থেকে কেউ মাথায় কোনো শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করলো যার ফলে আমি তখনই জ্ঞান হারাই। যখন জ্ঞান ফিরে তখন ফজরের আযান শুনতে পাই। আস্তে আস্তে উঠার চেষ্টা করলাম কিন্তু মাথা প্রচন্ড ব্যথা করছে। তবুও কষ্ট করে ওয়াসরুমে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এসে নামাজে বসলাম। নামাজে অনেকক্ষণ কাঁদলাম আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলাম। এভাবেই ২দিন কেটে যায়। সারাদিনে ১বার খেতে দিতো। সেদিন দুপুরে বিছানায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম হঠাৎই কিছু মেয়ে এসে আমায় সাজিয়ে দিতে লাগলো। এতো এতো জিনিস দেখে আমি অবাক। লাল বেনারসি দেখেই বুঝতে পারলাম আজ আমার বিয়ে। কাউকে কিছু বললাম না বুকের মধ্যে কস্টগুলো চেপে রাখলাম।
,
,
,
ঘন্টাখানেক বসে আছি সেই যে সাজিয়ে গেছে এখনো কারো কোনো খবর নেই। হঠাৎ নিচ থেকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনলাম তাই এগিয়ে গিয়ে দেখতে নিলাম হচ্ছে টা কি এমন সময়ই কেউ পেছন থেকে নাকে রুমাল চেপে ধরলো। তৎক্ষণাৎ আমি জ্ঞান হারাই। জ্ঞান যখন ফিরে এই অন্ধকার নিভু নিভু আলোর ঘরে নিজেকে আবিষ্কার করি তাও কাঠের চেয়ারে হাত পা বাধা অবস্থায়। চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম কি সব বক্স, পুরোনো জিনিস দিয়ে ভরা। বোঝাই যাচ্ছে এটা কোনো পুরোনো জিনিসপত্র রাখার রুম। চিল্লাতে নিতেই অনুভব করলাম আমার ঠোঁটের কোণা দিয়ে তরল কিছু গড়িয়ে পড়ছে। বুঝতে বাকি রইলো না সেটা রক্ত। হাত ছাড়া পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু হলো উল্টো টা। হাত খোলার বদলে চুড়ি কয়েকটা ভেঙ্গে হাতে ঢুকে যায়। এমন সময়ই কেউ রুমে প্রবেশ করলো অন্ধকারে তাকে স্পষ্ট দেখতেও পারছি না। যখনই সে নিভু নিভু আলোর সামনে আসলো তাকে দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। এ আমি কাকে দেখছি? উনি তো রিদ ভাইয়া বড় ভাইয়া আফ্রাজ। তাকে রিদ ভাইয়া ছবিতে দেখিয়েছিলো আমায়। উনি এখানেই বা কেন আর আমার এখানেই বা কি করছে? তাহলে কি উনিই আমায় এখানে এনেছে?কিন্তু কেন আমি তার কি ক্ষতি করেছি??

আফ্রাজ- কি আমায় চিনেছো? উমমম…মেয়বি চিনতে পারো নি আমি হলাম আফ্রাজ খান রিদ খানের বড় ভাই।

আমি কিছুই বললাম না শান্ত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর কাপা কাপা গলায় বললাম,

আমি- তা.. তাহলে আপনিই আমায় এখানে এনেছেন?

আফ্রাজ- ইন্টালিজেন্ট গার্ল হ্যা আমিই তোমায় এখানে এনেছি।

আমি- কেন? আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি যার জন্য আপনি আমায় এভাবে তুলে এনে বেধে রেখেছেন?

আফ্রাজ- ও আচ্ছা রিজন জানতে চাও? কেন তুমি জানো না আমি তোমায় কেন এখানে আনতে পারি?

আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম কি বলতে চাইছেন উনি? আমার এমন দৃষ্টি দেখে আফ্রাজ অদ্ভুত ভাবে হেসে বললো,

আফ্রাজ- ওকে ফাইন কোনো ব্যাপার না আমিই বলি কেন এনেছি? তো শুনো আমি তোমায় এনেছি আমার ভাইকে খুন করার অন্যায়ে। আমিও তোমায় অনেক কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলবো।

বলেই ভিলেইনি হাসি হাসতে লাগে।

আমি- মানে কি রিদ ভাইয়া কে আমি মেরেছি?? আর রিদ ভাইয়া? ওনার কি হয়েছে প্লিজ বলুন আমি কেন তাকে মারতে যাবো?

আফ্রাজ- কারণ তোর কার্যকলাপ আমার ভাই জেনে গিয়েছিলো তাই তুই তাকে খুন করে দিয়েছিস। কেন রে কিভাবে পারলি তুই আমার ভাইকে ঠকাতে?? কি দোষ ছিলো ওর শুধু তোকে ভালোবেসেছিলো বলে? ওকে তো বারণও করে দিতে পারতি কিন্তু তুই টাকার লোভে ওর সাথে মজা নিতে শুরু করলি যখন টাকা হাতাতে নিলি তখনই আমার ভাইকে মেরে দিলি এতো নিচ তুই??

আফ্রাজের কথায় আকাশ থেকে পড়লাম। মানে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। যাকে নিজের বড় ভাই হিসেবে মেনেছি তাকে খুন করা তো দূর কখনো ভাবতে পারিনা। এমন কথা শুনলে কেই বা মেনে নিতে পারবে? যেমন টা আমি পারছি না।

আমি- কিসব যা তা বলছেন আপনি? উনি আমার ভাই ছিলো। আমি রিদ ভাইয়াকে নিজের বড় ভাই হিসেবে মানি।(কাঁদতে কাঁদতে)
,
,
,
,
,
চলবে❤️

(বেশি লিখতে পারলাম না। এতো দিন লিখতে না পারার জন্য সরি। আসলে লেখার সময় টাই আমি পাইনা। কাল থেকে আবার ইক্সাম শুরু কি জানি কি হবে। প্লিজ প্রে ফর মি🥺 এনিওয়েস গল্প টা কেমন লেগেছে তা অবশ্যই জানাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here