#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ০৯
শীতের সকালে মিষ্টি রোদের উত্তাপে মধ্যে বাড়ির সামনের বাগানে চৌধুরী বাড়ির সবাই চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে পড়েছে। যে যার মত আড্ডা মাতিয়ে রেখেছে। সকলের ব্যস্ততার কারণে বছরে দু’একবার সময় পায় পরিবারের সকলের সাথে মিলে আড্ডা দেওয়ার। তাই সেই সময়গুলোতে হাসি আনন্দের কোন কমতি রাখে না কেউ। মিরান হেঁটে ওদের দিকে এলে অনু মিরান কে দেখে বলল,
—-” এই তো আমার ছোট বাবা চলে এসেছে।”
মিরান ওর ফুপির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে। মিরান চেয়ার টেনে বসে সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” গুড মর্নিং এভরিওয়ান।”
তানভীর মির্জা মানে মিরানের পাপার ফুপির বড় ছেলে মিরানের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলল,
—-” গুড মর্নিং ইয়ং মেন। তা কেমন চলছে তোমার দিনকাল?”
মিরান মৃদু হেসে বলল,
—-” বেশ ভালো আঙ্কেল।”
মিরান চোখ সরিয়ে ওর মাম্মার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” মাম্মা তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল!”
মিরা কফি কাপ এর থেকে চোখ সরিয়ে মিরানের দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয়?”
মিরান হাত বাড়িয়ে কফি মগ নিয়ে বলল,
—-” খানিকটা তাই।”
মিরা কপাল ভাঁজ করে মিরানের দিকে তাকায়। তা দেখে মিরান ধীরতার সাথে বলল,
—-” আমার পরিচিত একজন ডক্টর, ডক্টর হাবিব। তার ফুপার খুব ক্রিটিকাল অবস্থা। কিন্তু হাবিব তার অপারেশন করতে সাহস পাচ্ছে না। তাই সে আমাকে রিকোয়েস্ট করেছে অপারেশনটা করে দেওয়ার জন্য। একজন ডক্টর হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব। তাই আমি কথা দিয়ে ফেলেছি এই অপারেশন টা আমি করবো। তার জন্য আমি দুপুরের পর সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হবো। আজ সন্ধ্যা সাতটায় অপারেশন হলে কাল সকাল কিংবা দুপুর এর মধ্যে আমি ময়মনসিং চলে আসব। এতে তোমার কোন অসুবিধা নেই তো মাম্মা।”
মিরানের কথা শুনে মিরা কপালে ভাঁজ সোজা করে মিহানের চোখের দিকে তাকায়। মিহান মিরার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে দেয়। মিরা উঠে গিয়ে মিরানের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল,
—-” দূর বোকা ছেলে অসুবিধা হওয়ার কী আছে? মাঝেমধ্যে আমি তোর দায়িত্ববোধ দেখে খুব অবাক হই। তোর পাপাও যেমন কখনো কোনো দায়িত্ব কর্তব্য থেকে পিছপা হয়নি ঠিক তেমনি তুইও তোর পাপার মত হয়েছিস!”
মিরার কথা শুনে মিরানের মুখে হাসি ফুটে উঠে। মিরান আর কিছুক্ষণ বাড়ির আড্ডা দিয়ে বাড়ির গেটের দিকে যায়। গেটের কাছে মিরানের সব কাজিনরা আড্ডা দিচ্ছে। মিরান কে ওদের দিকে আসতে দেখে সবাই চুপ হয়ে যায়। মিরান শান্তর পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
—-” কাজের জন্য দুপুরের পর শহরের বাইরে যাচ্ছি। তুই এই বাঁদর বাহিনীর খেয়াল রাখিস। শুনলাম এরা নাকি সন্ধ্যার পর কোন অনুষ্ঠানে যাবে? তুই দেখে শুনে নিয়ে যাস এদের।”
মিরানের কথা শুনে মিরানের কাজিন মিমি কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বলল,
—-” এটা কিন্তু ভালো হচ্ছে না ভাইয়া। তুমি আমাদের বাঁদর বাহিনী বলে অপমান করছো?”
শান্ত মিরানের কথাকে সমর্থন করে বলল,
—-” মিরান একদম ঠিক কথা বলেছে। কোথাও তো এক দন্ড শান্ত হয়ে বসিস না তোরা। সারাক্ষণ বাঁদরের মতো লাফালাফি করে বেড়াস।”
শান্তর কথা শুনে মিরান মৃদু হেসে বলল,
—-” পরে ঝগড়া করিস তোরা আগে আমার কথা শোন। এদেরকে দেখে শুনে ঠিক ভাবে নিয়ে যাবি অনুষ্ঠানে আবার দেখে শুনে ঠিকভাবে নিয়ে আসবে বাড়িতে। আর কোনোভাবেই এদেরকে একা ছাড়বি না তুই। কারণ বাঁদর বাহিনীকে একা ছাড়লে কতদূর বাঁদরামি করতে পারে তা তোর অজানা নয়।”
মিরানের কথা শুনে শান্ত শব্দ করে হেসে দিয়ে বলল,
—-” তুই এতক্ষণে এদের ঠিকঠাক বায়ো ডাটা দিতে পারলি।”
শান্তর কথা শুনে সবাই রাগি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকায়। মিরান সবার দিকে একনজর তাকিয়ে বলল,
—-” আচ্ছা তোরা কথা বল ততক্ষণে আমি গিয়ে আমার ব্যাগটা গুছিয়ে নেই।”
মিরান চলে আসার সময় চোখ পড়ে টিয়ার উপর। মেয়েটা কেমন চুপচাপ মনমরা হয়ে আছে। মিরান আর না ভেবে চলে যায় বাড়ির ভিতরে।
মিরান রুমে এসে দেখে ওর মাম্মা ওর ব্যাগ গোছাচ্ছে। মিরান কে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিরা বলল,
—-” এসে গেছিস তুই, দেখ আর কিছু নিবি কী না?”
মিরান মিরার পাশে বসে মৃদু স্বরে বলল,
—-” এতো জামাকাপড় নিয়ে আমি কী করবো? যাবো তো শুধু একদিনের জন্য। তাহলে? আমার শুধু কিছু ডাক্তারি জিনিসপত্র নেওয়ার আছে।”
মিরা চোখ ছোট ছোট করে বলল,
—-” তুই এক জামাকাপড়ে কদিন থাকবি তাহলে?”
মিরান ওর মাম্মার সামনে থেকে ব্যাগ সরিয়ে ওর মাম্মার কোলে মাথা রেখে বলল,
—-” কোথায় ক’দিন? কালই তো চলে আসবো।”
মিরা মিরানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
—-” সাবধানে যাবি আর….
মিরা কে আর বলতে না দিয়ে মিরান বলল,
—-” জানি আমি সাবধানে যাবি আর দেখে শুনে আসবি।”
মিরানের কথা শুনে মিরা ফিক করে হেসে দেয়।
______________________________
শান্ত বাঁদর বাহিনীকে নিয়ে টাঙ্গাইলে আসে। শান্ত ওদের নিয়ে সামনের দিকে সিটে বসিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে কনসার্ট শুরু হয়ে যায়। অনন্যার পাশে বসে ওর কাজিন রাজিব বলল,
—-” জানিস নওশীন তোহা আমার পছন্দের সিঙ্গারদের মধ্যে একজন।”
অনন্যা মৃদু হেসে বলল,
—-” এখন চুপ করে বসো গান শুরু হবে এখনই।”
অনন্যার কথা শুনে রাজিব চুপ করে স্টেজের দিকে তাকায়। তোহা স্টেজে এসে নিজ ছন্দে একেরপর এক গান গাইতে শুরু করে।
প্রেমে পড়া বারণ, কারণে অকারণ
আঙুলে আঙুল রাখলেও হাত ধরা বারণ
প্রেমে পড়া বারণ, কারণে অকারণ
আঙুলে আঙুল রাখলেও হাত ধরা বারণ
প্রেমে পড়া বারণ
তোমায় যত গল্প বলার ছিল
তোমায় যত গল্প বলার ছিল
সব পাপড়ি হয়ে গাছের পাশে ছড়িয়ে রয়ে ছিল
দাওনি তুমি আমায় সেসব কুড়িয়ে নেওয়ার কোনো কারণ
প্রেমে পড়া বারণ, কারণে অকারণ
ওই মায়া চোখে চোখ রাখলেও ফিরে তাকানো বারণ
প্রেমে পড়া বারণ
শূন্যে ভাসি, রাত্রি এখনো গুনি
তোমার আমার নৌকা বাওয়ার শব্দ এখনো শুনি
শূন্যে ভাসি, রাত্রি এখনো গুনি
তোমার আমার নৌকা বাওয়ার শব্দ এখনো শুনি
তাই মুখ লুকিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে বসন্তের এই স্মৃতিচারণ
প্রেমে পড়া বারণ, কারণে অকারণ
মনে পড়লেও আজকে তোমায় মনে করা বারণ
প্রেমে পড়া বারণ, প্রেমে পড়া বারণ!
গান শেষ হতে না হতেই করতালিতে মুখরিত হয়ে পড়ে পরিবারে। সবার চোখের আড়ালে অনন্যা আর টিয়া ওখান থেকে সরে পড়ে। কিছুক্ষণ পর ওদের সবাই খোঁজ করতে শুরু করে। হঠাৎ করে মিমি শান্ত কে বলল,
—-” ভাইয়া ওদের ফোন করে দেখো ওরা কোথায় আছে।”
ওর কথা শুনে শান্ত টিয়ার ফোনে করে। টিয়া ফোন রিসিভ করে তাড়াতাড়ি করে বলল,
—-” ভাইয়া আমরা পার্কিং সাইটে।”
এইটুকু বলে টিয়া তাড়াতাড়ি করে ফোন কেটে দেয়। শান্ত মিমিদের দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” চলো পার্কিং সাইটে।”
ওরা এগিয়ে এসে বলল,
—-” কিন্তু টিয়া অনন্যা?”
শান্তর বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বলল,
—-” ওরা ওখানেই আছে।”
শান্ত আর কিছু না বলে ওখান থেকে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। শান্তর পিছন পিছন ওরা সবাই বেরিয়ে আসে। পার্কিং সাইডে এসে সবাই একবার অনন্যা আর টিয়ার দিকে তাকাচ্ছে আরাকবার পাশে থাকা ব্যক্তির দিকে তাকাচ্ছে। অনন্যার কাজিনরা চোখ বড় বড় করে হতবাক হয়ে দাঁড়ায়।
#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ১০
মাঝরাতে এমন চমক অনেকটা অবাঞ্ছিত। কনসার্ট শেষ টিয়া আর অনন্যার খুঁজতে বাইরে আসে সবাই। সিঙ্গার নওশীন তোহা টিয়া আর অনন্যার সঙ্গে কথা বলছে তা অনন্যার কাজিন দের কাছে অনেকটা বিস্ময়কর ব্যাপার। ওদের এমন অবস্থা দেখে অনন্যা মৃদু স্বরে বলল,
—-” এখন আসার সময় হলো তোমাদের? সেই কখন থেকে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি আমরা।”
শান্ত অনন্যার কথা কানে না দিয়ে ধমকের সুরে বলল,
—-” তোদের কোনো কান্ডজ্ঞান নেই? অনুষ্ঠানে শেষে যে বেরিয়ে এলি আমাদের একবারও জানানোর প্রয়োজন বোধ করি না?”
টিয়া কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,
—-” আমি কী করবো মিরু তো আমাকে টেনে হিঁচড়ে এখানে নিয়ে এসেছে।”
শান্তর নিজেকে কিছুটা ঠান্ডা করে অনন্যার দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বলল,
—-” এমন আর কক্ষনো করবিনা মিরু। তোর ভাইয়া তোকে আমার ভরসায় এখানে পাঠিয়েছে। তোর ভাইয়া যদি জানতে পারে আমি তোর ঠিকমতো খেয়াল রাখতে পারিনি তাহলে তোর ভাইয়া কতটা কষ্ট পাবে বুঝতে পারছিস তুই?”
অনন্যা বুঝতে পারেনি তার এমন ছেলেমানুষি সবাইকে চিন্তায় ফেলে দেবে তাই অনন্যা মন খারাপ করে বলল,
—-” সরি ভাইয়া আমি বুঝতে পারিনি আমার জন্য তোমরা সবাই এতো চিন্তায় পড়ে যাবে।”
ওদের কথার মাঝে তোহা মৃদু স্বরে বলল,
—-” ভাইয়া ওদের বকবেন না। ওদের কোন দোষ নেই। আমি ওদের ডেকে পাঠিয়েছি।”
তোহার কথা শুনে শান্ত তোহার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,
—-” তুমি ডেকে পাঠিয়েছে মানে?”
তোহা শান্তর দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বলল,
—-” আমার জানা মতে মিরু আর টিয়া ময়মনসিংহে ওদের দাদার বাড়িতে থাকার কথা ছিল। কিন্তু ওদের টাঙ্গাইলে কনসার্টে দেখে আমি বেশ অবাক হই। গানের মাঝে কিছু বলতে পারিনি বিধায় পরে গান শেষে যারা এই কনসার্ট আয়োজন করেছিল তাদের বলি মিরু কে ডেকে দিতে। তারপর মিরু আর টিয়াকে নিয়ে এখানে নিয়ে আসি।”
অনন্যা ওদের থামিয়ে দিয়ে বলল,
—-” হয়েছে এখনও সব কথা থাক। এখন শোনো তোহা আপু তুমি এখন আমাদের সাথে আমাদের বাড়িতে যাবে।”
তোহা নিচু স্বরে বলল,
—-” কিন্তু….
আর বলতে না দিয়ে অনন্যা বলল,
—-” কোন কিন্তু নয়। তুমি এত রাতে একা একা বাড়ি ফিরবে কী করে?”
তোহা অনন্যা নাক টিপ দিয়ে বলল,
—-” আমি একা কোথায় ড্রাইভার তো সাথে আছে। আমি ঠিক চলে যেতে পারবো।”
অনন্যা তোহার কথা কানে না দিয়ে বলল,
—-” না না আমি তোমার কোন কথাই শুনছি না। তুমি এখন আমাদের সাথে চাচ্ছ এটাই ফাইনাল।”
অনন্যা ওর কাজিনদের দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” কিরে তোরা চুপ করে আছিস কেন? তোরা তো কিছু অন্তত বল।”
অনন্যার কথা শুনে মিমি এগিয়ে এসে উত্তেজনা চেপে রেখে বলল,
—-” মিরু যখন এত করে বলছে তখন চলুন না আমাদের সাথে।”
অনন্যা ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” দেখছো তখন থেকে আমি বকবক করেই যাচ্ছি পাগলে মত। তোমাদের কারো সাথে আমি তোহা আপুর পরিচয় করিয়ে দেই নি। যাক কোন ব্যাপার না এখন পরিচয় করিয়ে দেই তোমাদের।”
অনন্যা ওর কাজিনদের দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” তোমরা সবাই তোহা আপুকে চেনো। বর্তমান সময়ের একজন নামকরা সিঙ্গার। আমার সাথে তার একটা অনুষ্ঠানে আলাপ হয় তখন থেকেই আমার সাথে তার পরিচয়।”
এবার অনন্যা তোহার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” মিরান ভাইয়ার পর কাজিন দের মধ্যে বড় রাজিব ভাইয়া। তার বোন মিমি। মেঘা, মেঘ, অনি, রাসেল ভাইয়া। আরো কাজিন আছে কিন্তু তারা আমাদের সাথে এখানে আসেনি।”
তোহা ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” হ্যালো এভরিওয়ান! কেমন আছো তোমরা সবাই?”
অনন্যার কাজিনরা একে আছে তোহার সাথে কথা ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসা করে। শান্ত ওদের তাড়া দিয়ে বলল,
—-” এসব কথা পরে বলা যাবে। এখন গাড়িতে উঠ সবাই না হলে বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভোররাত হয়ে যাবে।”
তোহা অনন্যার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” তোমরা গাড়িতে ওঠো। আমি না হয় আমার ড্রাইভারকে বলছি তোমাদের গাড়ি ফলো করতে।”
শান্ত তোহা দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” এত রাতে একা মেয়ে মানুষ একা একা আসা লাগবে না। তোমার সাথে রাজিব, অনন্যা, টিয়া ওর না হয় আসুক।”
অনন্যা খুশি হয়ে বলল,
—-” ঠিক আছে ভাইয়া তুমি তাহলে ওদের নিয়ে ওই গাড়িতে যাও। আমরা তোহা আপুর গাড়িতে আসছি।”
শান্ত মাথা নাড়িয়ে অন্যদের নিয়ে গাড়িতে ওঠে। রাজিব অনন্যার কানের কাছে গিয়ে বলল,
—-” আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আমার ফেভারিট সিঙ্গারের সাথে করে আমি এক গাড়ি করে যাবো।”
অনন্যা রাজিবের হাতে চিমটি কেটে বলল,
—-” এবার বিশ্বাস হয়েছে তো? নাকি আবারো চিমটি কাটবো?”
রাজিব হাত ডলতে ডলতে বলল,
—-” উফ! তাই বলে আমার হাতে চিমটি কাটবি? শাকচুন্নি কোথাকার!”
অনন্যা তেড়ে গিয়ে বলল,
—-” কী বললে তুমি?”
রাজিব অনন্যা কে শান্ত করার জন্য বলল,
—-” কিছুনা, বলেছি তুই খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। এবার চল গাড়িতে ওঠ।”
অনন্যা আর রাজীবকে কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসে। রাজীব ও অনন্যার পিছন পিছন গাড়িতে উঠে বসে।
______________________________
রাত তিনটা বাজে বাজে অবস্থা। তোহাদের গাড়ি থামিয়ে দেখে শান্তরা সবাই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অনন্যা ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
—-” কী হলো ভাইয়া তোমরা বাড়ির ভেতরে না ঢুকে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
শান্ত অনন্যার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলল,
—-” দাঁড়িয়ে আছি কী আর সাধে? তোর মাম্মা হল রুমে বসে আছে।”
অনন্যা শুকনো গলায় ঢোঁক গিলে বলল,
—-” বলো কী?”
তোহা ওদের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
—-” কী হলো তোমরা বাড়িতে না ঢুকে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
রাসেল মৃদু স্বরে বলল,
—-” মিরা আন্টি হল রুমে বসে আছে। এখন আমরা ঢুকলেই আমাদের ক্লাস নেওয়া শুরু করবে।”
তোহা ভ্রু কুঁচকে বলল,
—-” কেন?”
মেঘ ভীতু গলায় বলল,
—-” মাইমা আমাদের রাত বারোটার আগে ফিরতে বলেছিল। কিন্তু এখন বাজে রাত তিনটে।”
তোহা ওদের অবস্থা বুঝতে পেরে মৃদু হেসে বলল,
—-” তা আমরা কী সারারাত এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো?”
টিয়া আমার দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
—-” আন্টি বকলে বকবে কিন্তু আমি আর এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মশার কামড় খেতে পারব না। আমি….
টিয়ার কথা সম্পন্ন হওয়ার আগেই অনন্যার ফোন বেজে ওঠে। মেঘ সন্দেহের গলায় বলল,
—-” নিশ্চয়ই মাইমা ফোন করেছে।”
মেয়ের কথা শুনে সবাই অনন্যা দিকে তাকায়। অনন্যা চোখের ইশারায় হ্যাঁ বলে ফোন রিসিভ করে। ওপাশ থেকে মিরা গম্ভীর গলায় বলল,
—-” বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে না থেকে বাড়ির ভিতরে এসো।”
এইটুকু বলে মিরা ফোন কেটে দেয়। ফোন স্পিকারে দেয়া ছিল বিধায় সবাই মিরার কথা শুনতে পায়। সবার শুকনো গলায় ঢোক গিলে একেঅপরের মুখের দিকে তাকায়। অনন্যা ওদের আশ্বাস দিয়ে বলল,
—-” আরে তোমরা এত চিন্তা করছো কেন? তোহা আপুকে আমাদের সাথে দেখলে মাম্মা আর আমাদের কিছু বলবে না।”
অনন্যার কথা শুনে সবাই একটু ভরসা পায়। একে একে সবাই বাড়ির ভিতরে ঢুকে। ওদের সবাইকে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে মিরা গম্ভীর হয়ে বলল,
—-” এত তাড়াতাড়ি এলেন যে আপনারা? আর একটু পর আসলেই তো পারতেন। একেবারে না হয় ভোর হলে বাড়ী ফিরতেন আপনারা।”
অনন্যা আমতা আমতা করে বলল,
—-” আসলে মাম্মা।”
মিরা উঠে এসে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
—-” আসলে কী?”
এরমধ্যে তোহা সবার পিছন পিছন বাড়ির ভিতরে ঢুকে। তোহা কে দেখে মিরা বিস্ময় চোখে তাকায়। অনন্যা সুযোগ বুঝে ওর মাম্মা কে বলল,
—-” তোমাকে আমি তোহা আপুর কথা বলেছিলাম না মাম্মা। আজ যার গান শুনতে গিয়েছিলাম আমরা সবাই! অনুষ্ঠান শেষে আপুর সাথে কথা বলতে গিয়ে দেরি হয়ে যায়। আসলে আপু এত রাতে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা ব্যাক করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা জোর করে আপুকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছি।”
মেয়ের কথা শুনে মিরা হালকা হেসে বলল,
—-” খুব ভাল কাজ করেছিস।”
তোহা ওদের দিকে এগিয়ে এসে বলল,
—-” আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
মিরা তোহার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো তুমি মামনি?”
তোহা ঠোঁটে হাসি টেনে বলল,
—-” ভালো, আপনারা সবাই কেমন আছেন আন্টি?”
মিরা মৃদু হেসে বলল,
—-” আমরাও ভালো আছি।”
মিরা অনন্যাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বস তোরা আমি তাদের খাবার দিচ্ছি।”
শান্ত মিরার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” আন্টি আমরা আসার পথে খেয়ে এসেছি। তুমি গিয়ে এখন শুয়ে পড়ো।”
মিরা মৃদু স্বরে বলল,
—-” ঠিক আছে তোরা যে যার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়। আর মিরু তুই তোহা কে তোর ভাইয়ার রুমটা দেখিয়ে দেয়। তোহা না হয় আজ মিরানের রুমেই থাক। তোমার কোন অসুবিধা হবে না তো তোহা মিরানের রুমে থাকতে?”
তোহা তাড়াতাড়ি করে বলল,
—-” না না আন্টি কোন অসুবিধা হবে না।”
মিরা তোহার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে ওর রুমের দিকে চলে যায়। আর তোহা বিড় বিড় করে বলল,
—-” অসুবিধা একটু হবে আন্টি। মানুষটা যে আমার কাছে নেই।”
______________________________
সকালে সবাই একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠে। বাড়ির অন্য সবাই সকাল সকাল সিঙ্গার নওশীন তোহা কে বাড়িতে দেখে অবাক হয়। পরে মিরা ওদের সবকিছু খুলে বলে। অনন্যাদের মত বাড়ির আর অন্য সবাই তোহা কে অল্প সময়ের মধ্যে আপন করে নিয়েছে। সবাই একসাথে মজা করে ব্রেকফাস্ট করে নেয়। ব্রেকফাস্ট করার পর বাড়ির ছোটরা বাড়ির বাগানে খেলতে চলে যায়। তোহা খুজঁতে খুজঁতে মিরানের মাম্মার রুমে যায়। তোহা কে নিজের রুমে দেখে মিরা বলল,
—-” তোহা মামনি তুমি আমাদের রুমে? কিছু বলবে আমায়?
তোহা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। মিরা মৃদু স্বরে বলল,
—-” বলো কী বলবে আমায়!”
তোহা মাথা নিচু করে মৃদু স্বরে বলল,
—-” আন্টি আমি জানিনা আপনি কথাটা কিভাবে নিবেন। কিন্তু আমি কথাটা না বললে পারছিনা। আমি আপনার ছেলে মানে মিরান কে ভালোবাসি বলতে পারেন একতরফা ভালোবাসি। একথাটা মিরান বা অন্য কেউ জানে না। প্রথম আমি আপনার কথাটা আপনাকে বললাম। মিরান কে এই কথাটা বলবো বলবো করেও বলতে পারছিনা। মিরান….
তোহার কথা সম্পূর্ণ করার আগে মিহার রুমে ঢুকে ঠোঁটে হাসি টেনে বলল,
—-” বাহ! বাহ! এই না হলে আমার বৌমা। একদম আমার মনের মত আমার বৌমা। আমার তরফ থেকে ফুল সাপোর্ট আছে তোমার জন্য।”
মিরা হতবাক চোখে তাকায় তোহা আর মিহানের দিকে দু’জনের দিকে তাকিয়ে দেখে দু’জনের ঠোঁটে হাসি ফুটি আছে। একজন এসে ছেলেকে প্রপোজ না করে শাশুড়িকে প্রপোজ করেছে, আর একজন তো তাকে বৌমা হিসেবে মেনেও নিয়েছে।
চলবে….
#চলবে….
( লেখার পর পরবর্তীতে আর পড়া হয়নি। ভুল হলে মাফ করবেন। পরবর্তী পর্বে বড়োসড়ো ধামাকা আছে।)