#পর্ব_১৬
#আতিয়া_আদিবা
শিহাব রেহণুমাকে বলল,
আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মা। আমি বর্ষাকে বিয়ে করবো।
রেহণুমা অবাক দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাঁকিয়ে আছেন। আজ সকালে তার ছেলে ফিরে এসেছে। গতকাল ফোনে কথা বলার সময় শিহাব তাকে বলেছিলো সে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তটা কি তা আঁচ করা যায় নি। আঁচ করতে না পারলেও রেহণুমার সন্দেহের ছিপে এমন কোনো অপ্রত্যাশিত বিষয় ধরা পরেনি। এমতাবস্থায় রেহণুমার প্রতিক্রিয়া ঠিক কি হওয়া উচিত তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তাকে এখন অবশ্যই কোনো বুদ্ধিমান মায়েদের মত প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে। কিন্তু একজন বুদ্ধিমান মা এরকম পরিস্থিতিতে ঠিক কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতেন তা রেহণুমা জানে না। তার তিপান্ন বছরের জীবনদশায় এই প্রথম তার নিজেকে গর্দভদের রাণী বলে মনে হচ্ছে।
তবুও তিনি ধরে নিলেন বুদ্ধিমান মায়েরা এমন অবস্থায় ঠান্ডা মাথায় শীতল কণ্ঠে কথা বলেন।
তিনি তাই করলেন। বললেন,
হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ?
কারণ জানি না মা।
তোমার মাথায় এতদিন পর হঠাৎ বর্ষাকে বিয়ে করার ইচ্ছে কেনো জাগলো? তোমাদের ফোনে কথা হয়?
না। তবে যে প্রজেক্টের কাজে আমি এতদিন ছোটাছুটি করছিলাম সেই প্রজেক্টে গিয়ে বর্ষার সাথে আমার আবার দেখা হয়েছে।
তারপর?
তারপর কিছু না।
এটা কেমন কথা? তারপর কিছুই হয় নি?
নাথিং স্পেশাল হ্যাপেন্ড।
তোমার ঘরে একটা বাংলা ব্যাকরণের বই দেখলাম। তুমি বাংলা শিখছো?
শিহাব হেসে ফেললো।
রেহণুমা শীতল কণ্ঠে বলল,
আমি কি হাসির কিছু বলেছি?
সরি মা। আসলে বাংলা শেখার চেষ্টা করছি।
তোমার তো বাংলা শেখার প্রতি আগ্রহ ছিলো না।
ইয়েস, আই ওয়াজেন্ট ইন্টারেস্টেড। বাট রাইট নাউ আই এম হেভিং ফান!
বাংলা শেখার কথা কি তোমাকে বর্ষা বলেছে?
শিহাব আবারো হাসলো।
রেহণুমা বড় করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর বলল,
শোনো শিহাব। কোনো মা বাবা তার সন্তানের খারাপ চায় না। আমি এবং তোমার বাবাও কখনো চাইবো না।
হু।
বিয়ে একটা পবিত্র চুক্তি। সারাজীবন মানুষটার সাথে থাকবে। তার ভরণপোষণ এর দায়িত্ব নিবে। এটা অনেক বড় একটা দায়িত্ব। উপযুক্ত জীবনসঙ্গিনী বাছাই করা জটিল কাজ। হুটহাট করে বিয়ে করে ফেলা যায় না।
মা, তুমি চাচ্ছো না আমি বর্ষাকে বিয়ে করি?
রেহণুমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
তোর বাবা মেয়েটার সম্পর্কে আরো খোঁজ নিয়েছেন। যতটুকু শুনেছি মেয়েটার বিয়ে হয়েছিলো। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলো।
শিহাব বলল,
মা একটা মেয়ের পাস্ট থাকতেই পারে। আমার কোনো সমস্যা নেই।
রেহণুমা কঠিন স্বরে বলল,
পাস্ট থাকা খারাপ কিছু নয়। তবে এরকম পাস্ট থাকা অন্যায়। আমি অবশ্যই চাইবো না, আমার ছেলের বউ দুশ্চরিত্রা হোক। তুমি বর্ষাকে বিয়ে করছো না।
ঠিকাছে মা। করবো না।
জার্নি করে এসেছো। গতকাল অনেক ধকল গিয়েছে। যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। টেবিলে খাবার লাগাতে বলছি।
মা, অনেক টায়ার্ড লাগছে। ঘরে খাবার পাঠিয়ে দিও।
ঠিকাছে।
শিহাব উঠে চলে গেলো।
চলবে…