অজানা তুমি পর্ব ৭+৮

#অজানা_তুমি
#রুবাইতা_রুহি
#পর্ব – ৬

বিকালের দিকে সিদ্ধান্ত নিলাম যে NGO থেকে সব বাচ্চাদের আনবো।তাহলে আর আজকে সারাদিন একা একা থাকা লাগবে না।যেই ভাবা সেই কাজ রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলাম।কিন্তু একটা কথা আমার বিল্ডিংয়ের গেটের আশে পাশে আর কোনোদিন ওই বৃদ্ধা মহিলাকে দেখতে পাই নি।যাক ভালো!

NGO

বাচ্চাদের নিয়ে বের হওয়ার পর হঠাৎ করেই খালা বলে উঠলো

খালা– আরে তোর বাসায় যাবো পরে আগে তোর বাসাটার সামনে একটা ভুতুড়ে বাড়ি আছে না?ওইখানে সবাই যাই চল।মজা হবে!

সাথে সাথে সব বাচ্চারা লাফিয়ে উঠল।

ডাবলু — হ্যা আমরা ওইখানে সবাই এডভেঞ্চারে যাবো।গিয়ে দেখবো কোনো ভুত আছে কি না!

খালাও তালে তাল মেলাতে লাগলো।কিন্তু আমার চিন্তা হচ্ছে জায়গাটা তো একদম সুবিধার না।আমি কিছুটা চিন্তিত মুখ করে খালাকে বললাম

– খালা শোনো যেতে হবে না।তোমাকে তো আমি বলেছিলাম ওখানে রাতে কি হয়?জায়গাটা নিরাপদ না।তোমাদের কারো ক্ষতি হয়ে গেলে??

খালা কোমড়ে হাত মুখ বাকিয়ে বলতে লাগলো

— আরে তোদের এই রেহানা খালা থাকতে কি মনে হয়?তোদের কোনো কিছু হতে দেবে?আরে চিন্তা করিস না তো!চল!জীবনে একটু রোমাঞ্চর কিছু করা দরকার যাতে ভবিষ্যৎ এ নাতী নাতনিদের বলতে পারি।আর ওইসব রাতে হয় এই দিনের আলোতে তো হয় না!

বলে খালা নাকের নিচের ঘামটুকু মুছে নিলো।

– কিন্তু খালা একটু বোঝার চেষ্টা……

খালা – তোর যেতে হবে না।তুই গিয়ে তোর বই পড়।মুল্লুক কোথাকার!!

– কি বললে আমি মুল্লুক?

খালা — এ তুই যাবি?নাকি আমরা একাই চলে যাবো?

আমি মুখ ভেংচি দিয়ে টেক্সি দেখতে লাগলাম। একটা পেয়েও গেলাম।সবাই তো উঠে পড়লো কিন্তু এরা যে জেদ ধরেছে তাতে আমার প্রচন্ড ভয় করছে।ঘুরে ফিরে ওই বাড়িটাই?আর কিছু পেলো না?

খালা – কিরে কি এতো ভাবছিস?উঠ!

খালার কথায় আমার ধ্যান ভাঙে। গিয়ে উঠে পড়লাম। উইন্ডো সাইডের সিটে বসলাম।বাইরে তাকিয়ে দেখি বিকাল পেরিয়ে প্রায় সন্ধা হয়ে যাচ্ছে।চারদিকে আলো ধীরে ধীরে কমে আসছে।সূর্যও আসতে আসতে পশ্চিম আকাশে অস্ত যাচ্ছে।কি একটা অবস্থা!বিপদআপদ কিছু একটা হয়ে গেলে??



টেক্সি থেকে নেমে সবাই ছুটলো ব্রিজের দিকে।এখান থেকে কালো পুকুরটা পেরিয়ে ওই ভুতুড়ে বাড়িতে যাওয়া যায়।খালা আর বাচ্চারা লাফালাফি,ঝাপাঝাপি করতে করতে হেটে যাচ্ছে।এদিকে আমি সবার পিছনে ধীরেসুস্থে হাতে একটা লাঠি নিয়ে মাটিতে আঘাত করতে করতে যাচ্ছি।চারপাশে গাছপালায় গিজগিজ করছে।কয়েকটা গাছের শিকড় এমনভাবে ঝুলে আছে যেনো ভুলবশত একবার ওইখানে পা পড়লেই পেঁচিয়ে নিয়ে যাবে।বড় বড় তেতুল গাছ।ছোট থাকতে দাদির কাছে শুনেছি তেতুল গাছে নাকি পেতনি থাকে।সত্যি এখন দাদিকে অনেক মনে পড়ছে।দাদি বেচে থাকলে আরো কতো ভুতুড়ে গল্প বলতো।



খালা – কিরে কচ্ছপের মতো হাটছিস কেনো?জোরে আয়।



খালার দিকে তাকিয়ে একটা বিরক্তিকর নিশ্বাস ফেলে চশমাটাকে নাকের ডগা থেকে উঠিয়ে আবারও কচ্ছপের মতোই হাটতে লাগলাম।খালারা প্রায় অনেক দূরে এগিয়ে গেছে।আমি চারদিকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছি।ভুতুড়ে বাড়িটা সামনেই আর বেশি দূরে নয়।যত সামনে এগোচ্ছি ততোই বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যাচ্ছে।শরীর ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।মাটিতে এতো জোরেই আঘাত করছি যে মাটি ছিটকে ছিটকে দুই তিন হাত দূরে গিয়ে পড়ছে।আমি আনমনা হয়ে হাটছিলাম হঠাৎ একটি কালো বিড়াল আমার পায়ের কাছে ছিটকে পড়লো।আমি ঘাবড়ে পায়ের দিকে তাকিয়ে হালকা ভয় পেয়ে গেলাম।বিড়ালটা হিংস্র মুখ ভঙ্গি করে হাতের নখগুলো দিয়ে আমার পায়ের আঙ্গুল খামচে ধরছে। আমি বিরক্ত নিয়ে লাথি দিয়ে বিড়াল টাকে দূরে সরিয়ে দিলাম।দাদি বলেছিলো কালো বিড়ালদের মধ্যে নাকি অদৃশ্য শক্তি থাকে।এরা খুবই বিপদজনক।কিন্তু আমি এইসবে বিশ্বাসী নই।বিড়াল তো বিড়ালই।পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি বড় আঙ্গুল আর একদম শেষেরটা ছিলে গেছে।অফ বেশিক্ষণ এভাবে থাকলে ইনফেকশন হয়ে যাবে।খালাকে এখন আমার চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে।দেখো দিব্বি নাচানাচি করছে।



সবাই হাটতে হাটতে অবশেষে এই ভুতুড়ে বাড়িটার সামনে এসে হাজির হয়েছি।আমি তো কাচুমাচু হয়ে লাঠি হাতে দাড়িয়ে আছি।খালা কোন সময় থেকে হাত ধরে টানাটানি করছে আর বলছে – ভিতরে চল,ভিতরে চল।

কিন্তু আমি তো আমিই।যাবো না মানে যাবো না।খালা এবার বিরক্ত হয়ে হাত ছেড়ে দিয়ে বলতে লাগলো

– যাবি না?

– না।

– সত্যি যাবি না?

– ইসস বললাম তো যাবো না।কতবার বললাম শুনতে পাচ্ছো না?তোমরা ঢেং ঢেং করতে করতে এডভেঞ্চারে এসেছো যখন তোমরা যাও!আমাকে টানছো কেন??আর শোনো কোনো বিপদে পড়লে তখন আমাকে ডেকো না।হুহ!কতবার করে বললাম এসো না!এসো না!যাওও এখন!


খালা মুখ ভেঙিয়ে বাচ্চাদের বলতে লাগলো- এই চলতো তোরা।এই মুল্লুক থাকুক এখানে।

বলে খালা নায়িকা স্টাইলে ওরণা নাচিয়ে নাচিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে চলে গেলো ভিতরে।আবার মুল্লুক?উফ মনের ভিতর ভয় ডর বলতে কিচ্ছু নেই!নিজের নেই তো নেই!বাচ্চাগুলোকেও নিজের সাথে নাচাচ্ছে।রাগে গা হাত পা জ্বলছে।এদিকে আমি লাঠি মাটির সাথে দাড় করিয়ে বুড়িদের স্টাইলে দাড়িয়ে আছি।একা একা দাড়িয়ে থাকতেও কেমন যেনো ভয় ভয় লাগছে।হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সন্ধা ৫:৩০ বেজে গেছে।চারপাশে অন্ধকার অন্ধকার ভাব।এখানে আগে কখনো আসি নি।ওই একটু আধটু আমার রুমের বারান্দা দিয়ে যেটুকু দেখা যায় সেইটুকুই।তাই হালকা একটু কৌতুহল জন্মাচ্ছে।দুইটা বড় বড় বটগাছের মাঝখানে বাড়িটা।হঠাৎ বাড়িটার উঠানে চোখ পড়তেই দেখতে পেলাম কালো ময়লাযুক্ত একটি চাদর ফ্লোরে বিছানো।চাদর?এখানে হয়তো কেউ থাকে!কিন্তু কে?পাগল?যদি থাকেও হয়তো একটু পরে চলে আসবে।যাই হোক ওদিকে লাফাঙ্গা দলের কারোর বের হওয়ার নাম গন্ধও পাচ্ছি না।ভিতরে এতো কি করছে?এডভেঞ্চার করতে গিয়ে ঘুমিয়ে গেলো নাকি?

আচমকা মনে হলো কেউ আমার চুলের মুঠি শক্ত করে চেপে ধরেছে।

-#অজানা__তুমি
#রুবাইতা__রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব – ৭

(নিচের কথাগুলো পড়ার অনুরোধ রইলো।কষ্ট করে একটু পড়বেন)

আচমকা অনুভব করলাম পিছন থেকে কেউ শক্ত করে আমার চুলের মুঠি চেপে ধরেছে।আমি ঘাবড়ে হাতটাকে পিছনে নিয়ে যে ধরেছে তার হাত কে স্পর্শ করলাম।আবারও চমকে গেলাম।আমার মস্তিষ্ক যেটা বলছে সেটা হলো এইটা সেই বৃদ্ধা মহিলাটি।আমি চিৎকার করে পিছন থেকে আমার চুল ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম

– আহহহহহহ ছাড়ুন আমাকে।আমার চুল ধরেছেন কেন??কে আপনি।



কিন্তু পিছন থেকে কোনো সাড়াশব্দ এলো না।উল্টো সে আরও জোরে চেপে ধরলো।আমি চিৎকার করে খালাকে ডাকতে লাগলাম।

– আহহ ছাড়ুন আমাকে!ছাড়ুন!

এতো জোরেই ধরেছে যে চুলের গোড়া অবশ হয়ে যাচ্ছে।মাথা ঝিনঝিন করে ঘুরছে।হাত পা বরফের ন্যায় ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।প্রচন্ড ভয় লাগছে।কেনো এভাবে ধরলো আমাকে?আমি হাতের লাঠি দিয়ে ওই মহিলাকে আঘাত করতে চাইলে সে আমার হাত থেকে লাঠিটি নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলো।আগের থেকে দ্বিগুন শক্ত করে চেপে ধরে সামনের দিকে পা বাড়ালো।এদিকে আমি তীব্র ব্যাথায় কাতরাচ্ছি।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়েই যাচ্ছে।বারবার বলছি “ছাড়ুন আমাকে” কিন্তু সেই ব্যাক্তির এই বাক্যটি কান পর্যন্ত পৌঁছেছে নাকি বুঝতি পারছি না।দুই হাত দিয়ে সেই মহিলাটির আমার চুল ধরে থাকা হাত খামচে ধরলাম।ব্যাথা সাইডে রেখে তীব্র ক্ষোভ নিয়ে বলতে লাগলাম

– এই বুড়ি ছাড় আমাকে।কি চাস তুই?চুল ধরেছিস কেন?উফফ আহহ

মহিলাটি এবার দুইহাত দিয়ে আমার সম্পূর্ণ চুল নিজের হাতে পেঁচিয়ে জোরে জোরে পায়ের কদম ফেলতে লাগলো।আমি মহিলাটিকে থামানোর জন্য পায়ের হাটু ভাজ করে মাটিতে বসে পড়লাম আর চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম।মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা করছে।চিল্লাতে চিল্লাতে গলা থেকে আর আওয়াজ বের হচ্ছে না,গলা ভেঙে গেছে।


— আহ-হ ছা-ড়ুন আমা-কে!কি চান আপ-নি!


মহিলাটির শরীর থেকে প্রচন্ড দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।এতে আমার ভিতরে থেকে সব উল্টে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে।মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছি আর নিজের চুল ছাড়াতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ছি।মহিলাটি সেই অবস্তাতেই আমাকে টেনে হিচড়ে সামনে একদম গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করছে আর পিছন থেকে আমি চিৎকার,কান্না,লাথি,খামচি সব ওই মহিলাকে অনবরত দিয়েই যাচ্ছি।কিন্তু তার কিছুই হচ্ছে না।



হঠাৎ উনি একটি জায়গায় এসে থেমে গেলেন।আমি চুল ছাড়াতে ছাড়াতে চরপাশে চোখ বুলিয়ে দেখি একদম গভীর থেকে গভীরতর জঙ্গলে আমাকে এনে ফেলেছে।চারদিকে অন্ধকার।সন্ধা থেকে রাতে পরিনত হয়েছে যেনে।গাছপালায় চারপাশে গিজগিজ করছে।মাটি সেঁতসেঁতে, ভেজা সেগুলোর উপর দিয়ে কেঁচো, ছোট ছোট সাপ দৌড়ে মাটির ভিতর প্রবেশ করছে।আমার শরীরের পশম দাড়িয়ে গেছে এইসব দেখে।একদম আমার পাশেই একটা বড় মাপের সাপের খোলশ দেখতে পেলাম।কি করবো এখন?কোথায় নিয়ে এসেছে আমাকে? নিজেকে এখন অনুভূতিহীন লাগছে।কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেছে। আমি বসা অবস্তাতেই আচমকা মহিলাটি আমাকে টেনে নিজের সামনে নিয়ে একটি খোঁড়া কবরস্থানের দিকে মুখ করে ধাক্কা মেরে ফেললো।আমি ছিটকে ওই কবরের সাইডে পড়ে গেলাম।

কবরের দিকে নজর পড়তেই একটি বিশ্রী পচে যাওয়া কংকাল দেখতে পেলাম।সেটার উপরে মাছিরা ভো ভো করে ঘুড়ছে।দেখে সারা মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। পুরো শরীর ছেড়ে আসতে হলো।মাথা ঘুরে উঠে চোখ দুটো ধীরে ধীরে বন্ধ হতে লাগলো।








মুখের উপরে কারো পানির ছিটায় ধীরেধীরে চোখ খুললাম।ঝাপসা ঝাপসা চোখে সামনে খালাকে বোতল হাতে উত্তেজিত অবস্তায় দেখা যাচ্ছে।কানে অল্প অল্প শব্দ আসছে।খালা জোরে জোরে বলছে

– এই রুহি উঠ!এভাবে জ্ঞান হারালি কেন?কি হয়েছিলো?

আমি কোনোমতে শোয়া থেকে উঠে বিছানায় হেলান দিয়ে বসলাম।চুলের গোড়া প্রচন্ড ব্যাথা করছে।হঠাৎ ওই কবর স্থানের কথা মনে পড়তেই শিউরে উঠলাম।হাত কাঁপতে লাগলো।খালা পুনরায় চিন্তিত মুখে প্রশ্ন করলেন

– কিরে এভাবে কাঁপছিস কেন?আবার শরীর খারাপ লাগছে?কই দেখি!

বলে খালা আমার কপালে আর গলায় হাত ছোঁয়ালো।আর কেপে উঠে চোখ মুখ কুঁচকে বললো

– এই তোর তো জ্বরে সারা শরীর পুরে যাচ্ছে।হঠাৎ জ্বর উঠলো কেন??আমরা সবাই বেরিয়ে তোকে এভাবে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম।আচ্ছা এভাবে অজ্ঞান হয়ে গেছিলি কিভাবে?ভয় পেয়েছিলি?আসলে আমারই ভুল হয়েছে তোকে এভাবে জোর করে নিয়ে যাওয়াটা।ক্ষমা করে দে রে মা!!

বলে খালা অনুতপ্ত হতে লাগলো নিজের এই কর্মের জন্য।আমি অবাক হয়ে দূর্বল দৃষ্টিতে তাকালাম খালার দিকে।আমি তো জঙ্গলে জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম!!তাহলে আমাকে খালা বেরিয়ে দেখলো কিভাবে?তাহলে আমি যেখানে দাড়ানো ছিলাম সেখানেই খালারা আমাকে অজ্ঞান হওয়া অবস্থায় দেখেছে!কিন্তু কিভাবে সম্ভব এটা??আর ওই মহিলা??ওই মহিলা আমাকে ওইখানে কেন নিয়েছিলো?নাকি এটা আমার ইলিউশান??কিন্তু কিন্তু আমার চুলের গোড়ায় যে ব্যাথা করছে!!না এটা মিথ্যা নয়।আমি খালাকে কাপাকাপি হাতে তার দুই বাহু ধরে প্রশ্ন করলাম

– তো তোমরা আমাকে কোথায় পেয়েছো?

– আরে ওই তুই যেখানে দাড়িয়ে ছিলি সেখানেই তোকে পেয়েছি!কিন্তু কেন?

– কি কিন্তু আমি তো জঙ্গলে জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম?ওই একটা পাগল মহিলা আ আমাকে নি নিয়ে গেছিলো টে টেনে!

– কি বাজে বকছিস এসব?জ্বরে পাগল হয়ে গেছিস একদম!দারা আমি জ্বল পট্টি নিয়ে আসি।তুই শুয়ে থাক উঠবি না একদম।

বলে আমার দুই হাত ছাড়িয়ে উঠে গেলো খালা।আমি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলাম।প্রচন্ড পরিমাণে দূর্বল লাগছে।কথা বা নড়াচড়া করার শক্তি পাচ্ছি না।কিন্তু মনে এক গাদা প্রশ্নাবলী রয়েই গেলো।হঠাৎ নিজের হাতের দিকে নজর পড়তেই কিছুটা অবাক হলাম।আমার ঘড়িটা উধাও!হয়তো ওইখানে কোথাও পড়ে গেছে।এখনো প্রচন্ড ভয় লাগছে।নিজের পাশে কেউকে প্রয়োজন,খুব করে।নাহলে এভাবে আমি রাত্রে একা একা থাকতে পারবো না।ভয়তে হয়তো হার্ট আট্যাক করে মরেও যেতে পারি।আমি মাথা চেপে ধরে আমার শুয়ে পড়লাম।এই মুহুূর্তে ভীষণ হাড় কাপানো শীত আমাকে জেকে ধরেছে।কাচুমাচু হয়ে শুয়ে পড়লাম।আমি আমার রুমেই আছি।দেয়ালে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১০টা বাজে।আমার পুরো রুমে শুধু টেবিল ল্যাম্পটি হালকা হালকা হলদেটে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।ঘড়ির টিকটক আওয়াজ।সারা রুম জুরে নিরবতা।মাথার উপরে মাঝারি গতিতে ফ্যান চলছে।শীতে এখন আমার নিচের দাঁতের পাটি উপরের পাটির সাথে বারি খাচ্ছে।কটকট করে শব্দ হচ্ছে। আমার জীবনটা যে পুরো রহস্যময় হয়ে গেলো। কি হচ্ছে আমার সাথে এসব??আমি জঙ্গলে জ্ঞান হারিয়ে কি উড়ে উড়ে আবার নিজের জায়গায় ফেরত এসেছি নাকি??নইলে কে আনবে?ওই মহিলা নয়তো?আচ্ছা ওই বুড়ি আমার পিছে কেনো এভাবে আটার মতো লেগে আছে??উনি কি আমার কাছে কোনোভাবে সাহায্য চাইছেন?কিন্তু কোথাও একটা “কিন্তু” রয়েই যাচ্ছে।

খালা – দেখি দেখি কপালে জল পট্টি দিয়ে দেই।

বলে খালা কপালে পট্টি দিয়ে দিলো।

– খালা বাচ্চারা কোথায়??

খালা – ওদের সবাইকে পাঠিয়ে দিয়েছি।

— আচ্ছা।খালা আজকে প্লিজ আমার সাথে থাকবে রাতটা??

খালা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো

– হ্যা এর জন্যই এতো সময় আছি।তুই ঘুমা।চিন্তুা করিস না আজকে রাতে আমি থাকবো তোর সাথে!!আচ্ছা তুই কি কোনোকিছু দেখে ভয় পেয়েছিলি?নইলে হঠাৎ জ্বর উঠলো আর জ্ঞান হারালি কেন!

আমি কিছুই বলছি না।চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিশ্বাস নিচ্ছি শুধু।খালার আর কোনো প্রশ্ন করলো না।চুপচাপ মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।আমি এক সময় ঘুমিয়ে পড়লাম।





গভীর রাত
৩টা বাজে।আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারছি না।শ্বাস প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।রুমে নিভি নিভি আলো।বাইরে থেকে হালকা পাতলা শীতল বাতাস বইছে।সারা রুম জুরে নিস্তব্ধতা।আমি ভাঙা ভাঙা ঘুমাচ্ছি।পাশে খালা বেঘোরে নাক ডেকে ঘুমিয়ে চলেছে।নড়াচড়া করায় মাথা থেকে জ্বল পট্টিটা নিচে পড়ে গেলো।আমি প্রচন্ড দূর্বল শরীর নিয়ে চোখ খুলতে পারছি না।তাই পুনরায় চোখ বন্ধ করে গায়ে কম্বল চেপে কাত হয়ে শুয়ে রইলাম।হঠাৎ মনে হলো কেউ বারান্দার গ্লাসটাকে সরাচ্ছে।আমি পিট পিট করে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি কেউ ধীরে ধীরে পা টিপে আমার রুমে প্রবেশ করছে।আমি ঘাবড়ে গেলাম।নড়াচড়া বন্ধ করে খালাকে এক হাত দিয়ে ধীরে ধীরে ধাক্কাতে লাগলাম।এই অন্ধকারে অবয়বটি খুবই সপ্তপর্ণ ভাবে এগিয়ে আসছে।বিন্দু মাত্র শব্দ হচ্ছে না।তাহলে এটাই কি সেই লোকটি?যে প্রতি রাতে আমার রুমে এসে নিজের লালসাকামনা মিটিয়ে যায়?হঠাৎ মস্তিষ্ক একটা কথা বলতে লাগলো যে এটাই সুযোগ একে হাতে- নাতে ধরার!আমি চুপচাপ শুয়ে থেকে চোখ হালকা খোলা রেখে তার পরবর্তী কাজের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।লোকটি এখন একদম আমার সন্নিকটে।তার শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ আমি শুনতে পাচ্ছি।সে একদম কাছে এসে হাটু ভাজ করে আমার মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে নিংশব্দে হেসে দিলো।চোখ বন্ধ করা অবস্তাতেই অনুভব করতে লাগলাম।



♣______চলবে______♣


[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here