হিয়ার মাঝে পর্ব ৪৬+৪৭+৪৮

#হিয়ার_মাঝে
৪৬.
#WriterঃMousumi_Akter

বর মশাই কে কল দিয়েই যাচ্ছি কড়া রোদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছি ভার্সিটির সামনে তার কোনো পাত্তাই নেই।আমাকে বলে দিয়েছে সে না এলে যেনো আমি অপেক্ষা করি।কারণ কয়েক দিন শরীর খুব উইক তাই উনি আমাকে একা যেতে নিষেধ করেছেন।নিরব তো কখনো লেট করার মানুষ নয়।আজ ও এমন হয় নি ও কথা দিয়ে কথা রাখে নি।টেনশনে আমার প্রেসার হাই হয়ে যাচ্ছে।প্রায় চল্লিশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পরে উনার বাইক নিয়ে আগমণ হলো।গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি।গাড়ি থামিয়ে দুই কান ধরে বাইকে বসে আছেন উনি।চারদিকে লোকজনে ভরপুর।আমি হাল্কা ধমক দিয়ে বললাম কান ছাড়ুন বলছি মানুষ জন দেখছে বলেই মুখ গোমড়া করে আবার দাঁড়িয়ে রইলাম।

“নিরব আমার দিকে তাকিয়ে কান ধরে থেকে বললো,দেখুক আগে হাসো তুমি।”

“আমি গম্ভীর মুখে বললাম,আমার হাসি আসছে না।”

“রাগ করেছো। ”

“না।”

“আচ্ছা মৃথিলা কবে আমার উপর রাগ দেখিয়ে দুই চার টা বকা শোনাবে বলো তো।আমার কারণে হাজার টা কষ্ট পেলেও চুপ হয়ে থাকো।মুখ ফুটে বলো না যে রাগ করেছো তুমি।”

“রাগ না হলে কিভাবে বলবো।”

“এই যে কড়া রোদে দাঁড়িয়ে ছিলে। তাও রাগ করো নি।এত সময় অপেক্ষা করিয়েছি তাও রাগ করো নি।”

“চোখ দিয়ে দু ‘ফোটা পানি ফেলে দিলাম।”

“আমি জানিতো রাগ হলে বড় জোড় দু’ফোটা পানি ফেলো তুমি কিন্তু আমার উপর টর্চার করো না কেনো বলো তো।”

“আপনি কোথায় ছিলেন বলুন তো।আমার রাগ না চিন্তা হচ্ছিলো।আমি জানি আপনি ইচ্ছা করে এমন করবেন না।নিশ্চয় ই কিছু হয়েছিলো বলুন আগে কি হয়েছিলো।বলেই কেঁদে দিলাম।”

“সরি মিথু আর এমন হবে না। প্লিজ সরি।মুনতাহা তো প্রেগন্যান্ট। তাই রিক বললো আমি যেনো একটু ওদের সাথে যায়।সব দোষ এই টাচ ফোনের জানপাখি।কিভাবে অফ হয়েছে বুঝতে পারিনি।আমি যে বলবো সে খেয়াল ই ছিলো না।বলো মাফ করেছো তাহলে কান ছাড়বো।”

“আচ্ছা এত দিন বিয়ে হয়েছে আমাদের আপনার এই বাচ্চামো টা কবে যবে শুনি।দিন দিন পাগলামো বেড়েই চলেছে তোমার।আমি কি তোমার নতুন বউ নিরব।”

“মাত্র চার বছর বিয়ে করেছি আমি মিথু।এর ই মাঝে আমার বউ পুরনো হয়ে গেলো।আমার বউ এর ডিমান্ড এত কম নাকি হুম।আমার তো মনে হয় গতকাল ই বিয়ে করেছি আমি।”

“হ্যাঁ দিন দিন রোমান্টিক তা বেড়েই চলেছে আপনার।”

“কি যে বলো না।তুমি ছোট তাই সব রোমান্স নিজের ভেতরে আটকে রেখেছি।এখন তুমি ভালোই বড় হয়েছো।এখন থেকে ফুল রোমান্স করা যাবে।”

“এই রাস্তায় দাঁড়িয়ে এসব বলছেন। বলেই বাইকে উঠলাম আমি।”

“নিরব আমার ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে লোক জনের মাঝে প্রায় চুমু দিয়েই দিবে এমন একটা ভাব কোনো ভাবে আটকালাম।”

“নিরব বাইক স্ট্যার্ট দেওয়ার আগে বললো প্রমিজ করো বাসায় গিয়ে একটানা ত্রিশ মিনিট কিস করবে নইলে এই লোকজনের মাঝেই কিস করে দিবো কিন্তু।আমার মাথায় হেলমেট থাকবে আমার অত লজ্জা লাগবে না।তোমার কিন্তু মুখ খোলা।”

“আমাকে ব্লাকমেইল করা হচ্ছে তাইনা?আজ বাসায় চলো এক টানা ত্রিশ বছর কিস করবো।”

“নিরবের ঘাড়ে হাত দিয়ে বাইকের পেছনে বসে রইলাম আমি।হঠাত রাস্তায় দেখি সুপ্তি আর রিফাত ভাইয়া বাইকে।হঠাত দেখা হবে ভাবতে পারি নি।নিরব আর রিফাত ভাইয়া দুজনে স্লোলি বাইক চালাচ্ছে।আমি আর সুপ্তি গল্প করতে করতে যাচ্ছি।রিফাত ভাইয়া আর সুপ্তি ও হসপিটালে গেছিলো মুনতাহা আপুর জন্য।মুনতাহা আপুকে রিক ভাইয়া গাড়িতে করে বাসায় নিয়ে গিয়েছে।”

সেই দুষ্টু মিষ্টি সুপ্তি আজ প্রাণ খুলে হাসতে পারে।রিফাত ভাইয়ার মুখে আজ অনাবিল হাসি।আসলে সুপ্তি আর রিফাত ছাড়া অন্য কাউকে মানায় না।দুজনে দুজনের জন্য ই সৃষ্টি। জীবনের অনেক বড় বিষাদময় সময় পার করেছে ওরা দুজনে।ওরা দুজন আমাদের জীবনের সব থেকে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী। রিফাত ভাইয়া আর সুপ্তি বন্ধুত্ত্বের এক দৃষ্টান্ত মূলক উদাহরণ।

সেদিন দেখেছিলাম কোর্টে ওদের দুজনের আবেগময় আকুতি।দুজনের দুজন কে পাওয়ার ইচ্ছা। দুজন ছাড়া দুজন কতটা অপরিপূরক।আদালতে বেশ কিছুদিন কেস টা চলার পর সব দিক বিবেচনা করে আদালত জরিমানা সহ মা কে পনেরো বছরের জেল, বাবাকে প্রতারনার দায়ে আর বাবার আমি এবং আমার মায়ের সাথে করা অন্যায় বিবেচনা করে পনেরো বছরের জেল আর আপুকে সাত বছরের কারাদন্ড দেয়।সেদিন পেয়েছিলাম ভীষণ তৃপ্তি।এমন ই তৃপ্তি যে তৃপ্তিতে মনের মাঝে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু কষ্ট গুলো বিলীন হয়ে গেছিলো।রিফাত ভাইয়া আর সুপ্তির ধুমধাম করে বিয়ে ও হয়ে যায়।জীবনের সমস্যা গুলোর ইতি সেখানেই ঘটেছিলো।ফাইনালি আজ ভালো আছি আমরা সবাই।

“বাসায় এসে ড্রেস চেঞ্জ করে বিছানায় সুয়ে পড়লাম। এরই মাঝে নিরব ভাত মাখিয়ে এনে আমাকে তুলে মুখে তুলে দিলো।নিরবের দিকে তাকিয়ে বললাম একটুও খেতে ইচ্ছা করছে না।নিরব এক ধমক দিয়ে বললো না খেয়ে আর পড়াশুনা করা লাগবে না মিথু।আমার তুমি চায়।জানো আমার কত চিন্তা হয় তুমি জানো।ইদানিং সব সময় উইক থাকো তুমি।এত রাত জেগে পড়াশোনা করো আবার সংসার করো স্বামি সামলাচ্ছো।”

“আমি লেখাপড়া করি তোমার জন্য নিরব।তোমার স্বপ্ন পূরণের জন্য।আর শোনো মোটেও আমি তোমাকে সামলাচ্ছি না তুমি আমাকে সামলাচ্ছো।”

“তাই না ম্যাডাম চট করে খেয়ে নাও তো।”

“আচ্ছা নিরব তুমি বিরক্ত হও না ক্যানো বলোতো।এই যে আমার যেদিন ক্লাস থাকে তুমি আমার জন্য রান্না করে রাখো।আমি তো এসেও রান্না করতে পারি তাইনা।তুমি বিজনেস সামলাচ্ছো আবার কত কাজ থাকে এদিকে রান্না ও করো।মানুষ জানলে কি বলবে বলোতো।”

“আমাদের এই ছোট্ট সংসারের কথা বাইরে জানানোর কোনো প্রয়োজন আছে বলো।তোমার আর আমার কাটানো সময় গুলো একান্তই আমাদের বুঝেছো।আর এটা কোনো রুলস নয় মৃথিলা যে ওয়াইফ কে মাঝে মধ্য রান্না করে খাওয়ানো যাবে না।”

“নিরব তুমি ম্যাজিক করে সব ছেলেদের তোমার মতো করে দাও।তাহলে কেউ ই আর কষ্ট পাবে না তাইনা।”

“নিরব হেসে দিয়ে বললো তোমার মতো লক্ষি বউ যেনো সব ছেলেরাই পায়।”

“গরমে টায়ার্ড লাগছে খুব।ভার্সিটি সাত দিনের জন্য অফ আছে।এই সাত দিনে বাড়ির অগোছালো জিনিস গুলো গোছাবো বলে ভাবলাম।এমন সময় নিরব এসে আমাকে বলে কি ভাবছো সেই ত্রিশ মিনিটের কথা।”

“আমি নিরবের দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম কোন ত্রিশ মিনিট।”

“নিরব শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললো ওয়েট আমি বোঝাচ্ছি কোন ত্রিশ মিনিট।”

“আমি সন্দিহান দৃষ্টি নিয়ে নিরবের দিকে তাকিয়ে বললাম এ কি আপনি শার্ট খুলছেন কেনো?”

“এই গরমে কি ঘরের মাঝে বোরকা পরতে বলছো?”

“নিরবের চোখে মুখে ভীষণ দুষ্টুমির ছড়াছড়ি দেখছি।ওর মতলব খুব একটা ভাল লাগছে না।মাঝে মধ্য এমন দুষ্টুমি শুরু হয় ওর মাঝে।”

“বিছানা থেকে এক লাফ দিয়ে উঠলাম আমি।নিরব ও বিছানায় উঠে দাঁড়ালো।আমি বিছানা থেকে নেমে ছোটাছুটি শুরু করলাম।নিরব ও আমার পিছে ছুটছে। দশ মিনিট পরে ক্লান্ত হয়ে গেলাম।রুমের মধ্য আমার কোমরে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে।নিরব স্হির ভাবে দাঁড়িয়ে আছে ঠোঁট কামড়ে ধরে মিটি মিটি হেসে যাচ্ছে।ও স্হির থাকলেও আমি স্হির থাকতে পারছিলাম না কারণ সুড়সুড়ি লাগছিলো খুব।এই ছেলেটা ইচ্ছা করেই এমন করে।আঙুল দিয়ে কোমর স্লাইড করছিলো।আমার নড়াচড়া দেখে নিরব বলে,এত নড়া চড়া করছো কেনো?আস্তে করে বললাম আমার অসুবিধা হচ্ছে ছাড়ুন বলছি।”

“নিরবের গরম ঘন নিঃশ্বাস চোখে মুখে উপচে পড়ছিলো আমার।উনি আমার কানের কাছে এসে কানে আলতো চুমু দিয়ে বলেন অসুবিধা তো আমার ও হচ্ছে। তোমার কথা রাখো না হলে এভাবেই ধরে রাখবো।”

“কি কথা।”

“চুমু দেওয়ার কথা।”

“ওর মাঝে রোমান্টিকতার ভীষণ ছড়াছড়ি ছিলো।নিজেও কিছুটা অন্য জগতে চলে গেছিলাম।ওর স্পর্শ আমাকে বার বার নতুন ফিলিংস তৈরি করে দেয়।নিরব খানিক টা উচু আমার থেকে তাই ওকে নাগাল পাওয়া টা ইজি হচ্ছিলো না।ওর ধবধবে ফর্সা পায়ে কিছুটা পশমের আবরণ।ওর পায়ের পাতায় নিজের পা তুলে গলা জড়িয়ে ধরে ওর ওষ্টতে ওষ্ট মেলালাম”

কিছুক্ষণ পরে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে লজ্জায় ছুটে পালালাম।ইস কি লজ্জা।মাঝে মাঝে কত বাড়াবাড়ি করে ফেলি।

নিরব আমাকে বললো ব্যাগ গুছিয়ে নাও আগামিকাল কক্সবাজার যাচ্ছি আমরা।

রিফাত ভাইয়া সুপ্তির মাঝের সেই দুষ্টুমি আজ ও রয়েছে।রিফাত ভাইয়া সুপ্তিকে ডাকছে,

“মিস সুপ্তি আপনার স্বামি আপনাকে ডাকছে।”

“আমার স্বামি যে বউ পাগল সেটা সবাই জানে।এভাবে জানানোর কি আছে।”

“একটু কাছে এসো তো আদর করি।”

“কাছে এসে আর কি হবে একদিন তো মরেই যাবো।”

“কাছে আসবা আদর করবো। ”

“আদর করে আর কি হবে একদিন তো মরেই যাবো।”

“তোমাকে বেবির মা হওয়ার জন্য জন্য আদর নিড।”

“বেবির মা হয়ে আর লাভ কি একদিন তো মরেই যাবো।”

তোর কি মরার খুব শখ হইছে ডায়নি মহিলা।তোর আম্মুকে কল দিচ্ছি ওয়েট।
#হিয়ার_মাঝে
৪৭.
#WriterঃMousumi_Akter

ঘড়িতে সকাল আট টা বাজে ফোনের টুংটাং সাউন্ডে ঘুম ভেঙে গেলো।ফোনের স্ক্রিনে ভেষে উঠা নাম্বার টা দেখে ভীষণ খুশি হলাম আমি কারণ ফোন টা আমার মা মানে আমার নিরবের আম্মুর ছিলো।যে আমার মায়ের অভাব টা পূরণ করেছে।আমি নিজের মায়ের মতো করেই তাকে তুমি করে ডাকি আর সে আমাকে তুই করেই ডাকে।নিরবের বাবা ও আমাকে তুমি, তুই যেটা ইচ্ছা বলে ডাকে।সারাদিন ই তাদের সাথে কথা হয় আমার।মা ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠলেন,কিরে মিথু এখনো ঘুম ভাঙে নি তোর।

–আড়মোড়া দিয়ে উঠে বললাম,মা কাল রাতে জেগে পড়াশুনা করেছি তাই লেট হয়েছে উঠতে।

–চোখ মুখ এমন শুকিয়ে গিয়েছে ক্যানো তোর।শুধু পড়াশোনা করা হচ্ছে নাকি খাওয়া দাওয়া ও হচ্ছে।নিরব টা কই থাকে তোর যত্ন নিচ্ছে না ঠিক ভাবে তাইনা।

–মা তোমার ছেলে ঘুমোচ্ছে। সে কি বারোটার আগে উঠবে।

–মা মিথু রোজ ডিম,দুধ, ফল ঠিক ভাবে খাস মা।না খেয়ে থাকলে শরীর খারাপ হলে বই পড়তে পারবি না।

–ঠিক আছে মা। কিন্ত তোমাদের ভীষণ মিস করছি কবে আসবা মা।

–নাতি নাতনি হওয়ার আগেই চলে আসবো মা।

–মা তুমি যে কি বলো।বাবা কোথায়?

–তোর বাবার একটু বুকে ব্যাথা হয়েছে সুয়ে আছে।

–বলো কি মা বাবার শরীর কি খুব খারাপ।

–এত উত্তেজিত হস না তো।তোরা আজ কক্সবাজার যাচ্ছিস তো।মন দিয়ে ইনজয় করবি।

–ঠিক আছে মা।ওখানে গিয়ে ফোন দিবো।

–কক্সবাজার যাওয়ার প্লান ছিলো আগেই।আমাদের ছয়জনের।রিফাত সুপ্তি, রিক ভাইয়া মুনতাহা আপু, আমি আর নিরব।মুনতাহা আপু প্রেগনেন্ট তবুও যাচ্ছে আমাদের সাথে।কারণ বিমানে ঢাকা টু কক্সবাজার যাওয়া জার্নিতে বেশী প্রব্লেম হবে না।বেলা বারো টায় বাসা থেকে বেরোলাম ছয়জনে বেলা দুইটায় পৌছে গেলাম।বিমানের ছোট্ট জানালা দিয়ে আকাশ দেখছিলাম।আকাশে মনে হলো মেঘের জগতে প্রবেশ করেছি।ইচ্ছা করছিলো সাদা মেঘের মাঝে আজন্ম কাটিয়ে দেই।বিমান থেকে নেমে রিফাত ভাইয়া আমাদের প্রচুর সেল্ফি তুলে নিলো।রিক ভাইয়া মুনতাহা আপুকে ধরে হাঁটছেন।যেতে যেতে রিফাত ভাইয়া আর সুপ্তি টার ঝগড়া আবার ও শুরু।ওদের এই মিষ্টি ঝগড়া দেখলেই ভাল লাগে।

–যেখানে আমরা সবাই সানগ্লাস পরেছি সেখানে সুপ্তি ইচ্ছা করেই রিফাত ভাইয়া কে বলছে মেয়েদের দেখে স্টাইল দেওয়া হচ্ছে তাইনা।

–বউ থাকতে অন্য মেয়ে দেখে স্টাইল দিবো ক্যানো শুনি।আমার কি চরিত্র খারাপ নাকি।

–খারাপ ছাড়া কি ঘরের মাঝে যা করেন সেটা তো আর কাউকে বলা যাচ্ছে না।

–নিরব হেসে দিয়ে বললো আমি বুঝতে পারছি শালিকা ও কি করে।ওর চরিত্রে মহা সমস্যা আছে।

–হ্যাঁ এমনি তোর শালি সারাক্ষণ বাঁশ দিতে থাকে সাথে তুই ও যোগ দে ভাই।

এটা বেশ কিছু সময় হাসাহাসি করলাম আমরা।

অতঃপর সমুদ্র কণ্যার দেশে প্রবেশ করলাম আমরা।কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পা রাখতেই মনে হলো অন্য কোনো জগতে এসেছি। কারণ এই প্রথম বার আমার বাইরে কোথাও ঘুরতে আসা।সমুদ্র দেখার শখ আমার অনেক আগে থেকেই ছিলো।নিরব যে এভাবে সারপ্রাইজ দিবে ভাবতেই পারি নি আমি।হোটেলের তিন টা রুম আমরা বুকিং করেছি।যে যার রুমে যার যার ব্যাগ পত্র নিয়ে প্রবেশ করলাম।কিন্তু আমার রুমে থাকতে একটুও ভাল লাগছে না।মনে চাইছে এক্ষুণি সমুদ্রে গিয়ে পা ভেজায় কিন্তু নিরব এই রোদে কিছুতেই যেতে দিবে না।প্রচন্ড গরমে রুমের ভিতরে কালো প্লাজু আর সাদা গেঞ্জি পরে রইলাম।এসি চলছিলো যার জন্য গরম টা খুব বেশী সহ্য করা লাগে নি।নিরব ওয়াশ রুমে গিয়েছে এই সুযোগে আমি চেঞ্জ করে নিয়েছি।নিরব ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে দেখে যে আমি সাদা গেঞ্জি আর কালো প্লাজু পরা।নিরব কেমন একটা করে তাকিয়ে আছে। নিরব কে বললাম আমাকে কি খুব বিশ্রি লাগছে এভাবে তাকিয়ে আছো যে।নিরব মাথা ঝাকি দিয়ে বললো,না মানে অসুস্থ লাগছে আমার বউ এর হট লুক দেখে।নিরব কে বালিশ দিয়ে কয়েক ঘা মেরে দিয়ে বললাম আমি ঘুমোচ্ছি একটু ও বিরক্ত করবা না।আমি বালিশ নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম আর নিরব টিভি অন করে বেডে রেস্ট নিচ্ছিলো।আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি সূর্য প্রায় ডুব ডুব অবস্থা। বিশাল বড় একটা ঘুম দিয়েছি।

ঘুম থেকে উঠে দেখি গায়ে গেঞ্জি নেই কালো একটা কামিজ পরা আবার গায়ে ওড়না ও পেচানো।কাহিনী টা কি হলো তাহলে আমি তো গেঞ্জি পরেই ঘুমিয়েছিলাম।।নিরব কে বললাম এই তুমি এত খারাপ হয়েছো কেনো বলো তো।আমি ঘুমিয়েছি সেই সুযোগে।নিরব দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,জেগে থাকতে সুযোগ দাও না তাইতো ঘুমোলে নিতে হয়।

তোমার মতো ফাজিলের সাথে আর ঘুমোনো যাবে না। সুযোগ খুজেন শুধু উলটা পালটা কাজের জন্য।

নিরব গায়ে পারফিউম মাখতে মাখতে বললো,আরে এসি নষ্ট হয়েছিলো।ইঞ্জিনিয়ার এসছিলো রুমে।আমি কি আমার বউ কে এভাবে দেখতে দিতাম।তাই বাধ্য হয়েই চেঞ্জ করে দিয়েছি বুঝলে খুকি।অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না।আর অন্য কিছু হলেও আমার জন্য জায়েজ আছে। তুমি চাইলে কেস করতে পারো আমার নামে।

–তোমার নামে শ্বাশুড়ির কাছে বিচার দিবো আমি।

–কি বলবা শুনি।

–বলবো যে আপনার ছেলে শুধু ডিস্টার্ব করে।

–আম্মুর এই নিষ্পাপ ছেলেকে অসভ্য বানিয়েছো তুমি।আম্মু জানে তার ছেলে কত ইনোসেন্ট। তোমার প্রেমে পড়েই আমার এ অবস্থা হয়েছে।

–ইস রে আম্মু যদি জানতো কত ইনোসেন্ট তাহলে আর বলতো না।

–আম্মু এখনো জানে তার ছেলে ইনোসেন্ট আর নিষ্পাপ।

–কিভাবে জানে শুনি।বিয়ের পর কোনো ছেলেই আর নিষ্পাপ থাকে না এটা সব আম্মুরাই জানে।

–আম্মু আমাকে নিষ্পাপ জানে তার কারণ আম্মুর এখনো নাতি নাতনি আসে নি।নাতি নাতনি যতদিন না আসে ততদিন তার ছেলে নিষ্পাপ আর ইনোসেন্ট।

আপনার না খবর আছে আজ।বলেই নিরব কে একটা দৌড়ানি দিলাম।সমুদ্রের পানিতে নিরব আর আমি দৌঁড়াচ্ছি।নিরব কে মারাত্মক সুন্দর লাগছে দেখতে।ওর গায়ে কালো কলার এর গেঞ্জি জিন্স হাঁটু পর্যন্ত ভাজ করে রাখা ওর ফর্সা পায়ের প্রেমে মুগ্ধ হলাম আমি।আমার গায়ে পানি ছেটাচ্ছে আর হাসছে ওর হাসি দেখে তৃপ্তির একটা হাসি দিয়ে খানিক টা ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর হাত ধরলাম।সমুদ্রের তীরে দুজনে বসে রইলাম হাতে হাত ধরে। সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ পেলাম এই প্রথম বার।সূর্য তার অস্ত যাওয়ার শুনানি দিয়ে দিলো চারদিকে তার কমলা রঙের আভা ছড়িয়ে নিস্তেজ হয়ে গেলো।গোল আকৃতি টা ডিমের কুসুমের ন্যায় যেনো সমুদ্রে ডুব দিলো একটু একটু করে।নিরবের কাধে মাথা দিয়ে এই সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করছি আমি।

নিরবের কাঁধে মাথা দিয়ে বললাম নিরব তুমি বা কোথায় ছিলে এতদিন আর আমি বা কোথায় ছিলাম বলোতো।মানুষ বলে,ভালবাসা নাকি খারাপ দিনে বদলে যায় এটা কি সত্যি।কেউ কি ভালবাসলে কাউকে ভুলতে পারে।

কপালে আলতো চুমু খেয়ে বললো,হিয়ার মাঝে সারাক্ষণ যার বিচরণ তাকে কখনো ভুলে যাওয়া যায় না।একজীবনে একজন মাত্র মানুষ হিয়ার মাঝে দখল করে নিতে পারে।এই ক্ষমতা সবার থাকে না।যার থাকে সে ওই মানুষ টার মনের রাজ্য দখল করে নিতে পারে।একমাত্র তার ই রাজত্ত্ব চলে বুঝলে।
#হিয়ার_মাঝে
৪৮.
#WriterঃMousumi_Akter

একজন কেয়ারিং স্বামি থাকলে সেটা রিক ভাইয়া ই আছে।উনাকে দেখে সত্যি অবাক হয়ে যায় আমি।নিরবের মতো রিফাত ভাইয়ার মতো এত পাগলামো নেই উনার মাঝে তবে মুনতাহা আপুকে ভাল রাখার মতো সব কিছু আছে উনার মাঝে।কখনো আপুর হাত ছাড়েন না কি সুন্দর ভাবে আপুর হাত ধরে আপুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।মুনতাহা আপুর মনে এক ভীষণ চাপা কষ্ট ছিলো নিরব কে নিয়ে।যে কষ্টের কথা রিক ভাইয়া জানতো। কিন্তু মুনতাহা আপুকে কখনো সেটা নিয়ে প্রেসার দেন নি।ধীরে ধীরে আপুর মনের অন্ধকার মুছিয়ে দিয়ে সেখানে নিজের ভালবাসার প্রদীপ জ্বালিয়েছে রিক ভাইয়া।আসলে ভালবাসা টা একেক জনের কাছে একেক রকম।একেক জনের প্রকাশের ধরণ একেক রকম।যে যার জায়গা ভীষণ ভালবাসে এটাই সত্য।

সমুদ্রের পাড় দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি মাঝে মধ্য জল আমার পা ছুয়ে যাচ্ছে।খানিক টা দূরে নিরব পানিতে বসে কিছু একটা করছে। কি করছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। আমি ধীরে ধীরে ওর দিকেই এগিয়ে গেলাম।ওর কাছে যেতেই দেখি বালুর মাঝে আই লাভ ইউ মৃথিলা লিখেছে।সাইড থেকে একজন শুনছে ভাই আপনার প্রেমিকা নাকি। নিরব হালকা হেসে উত্তর দিলো দুটোই।ছেলেটি অবাক হয়ে বললো,দুটোই মানে।নিরব বললো,আগে প্রেমিকা ছিলো এখন আমার বউ হয়েছে।ছেলেটি বললো খুব ভালবাসেন তাইনা ভাই।নিরব আবার ও হেসে উত্তর দিলো হুম। ওর ওই হুমের মাঝে অনেক গভীরতা ছিলো।

–আমি নিরবের সামনে যেতেই আমাকে দেখেই স্বভাব সুলভ মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে,চোখ বন্ধ করো তো জান পাখিটা।

–আমি হেসে দিয়ে বললাম ক্যানো?

–আগে করোই না।

–চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি।নিরব আমার পায়ের মনে হলো কিছু একটা পরিয়ে দিচ্ছে।কিন্তু কি সেটা অনুমান করতে পারছিলাম না।গলা,হাত, কান, মাথা সব খানেই কিছু পরিয়ে দিলো।নিরব আমাকে ওখান থেকে কোলে করে রুমের মাঝে প্রবেশ করলো। আয়নার সামনে এনে চোখ টা খুললে বললো।চোখ খুলে নিজেকে চিনতেই পারছিলাম না।রঙ বেরঙের শামুক ঝিনুক দিয়ে গহনা বানিয়ে দিয়েছে।পায়ের পায়েল,মাথার টায়রা,হাতের চুড়ি, কোমরের বিছা,গলার মালা সব কিছু মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো।নিরব আমার কাছে এসে বলে আমি নিজ হাতে বানিয়েছি পছন্দ হয়েছে তোমার।এখানে কত শত দামি গিফট আছে তার মাঝ থেকে ও নিজে ভেবে আমাকে খুশি করার জন্য বিশেষ কিছু খুজে বের করেছে।প্রিয়জনের হাতে বানানো গহনা সব দামী গহনা কে হার মানায়।নিরবের বুকে মাথা রেখে ওর হার্টবিট এর স্পন্দন শুনছিলাম আর আস্তে করে বললাম খুব পছন্দ হয়েছে।

জানিনা কিভাবে বার বার নতুন কোনো সারপ্রাইজ নিরব রেডি রাখে আমার জন্য।

নিরব কে ভালবাসার পরে বুঝি নির্দিষ্ট কারো মায়ায় পড়ে গেলে সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসা যায় না।

“হঠাত ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে কেউ।।দরজা খুলে দেখি সুপ্তি অগ্নিরূপ ধারণ করে আছে।আমি বললাম কি হয়েছে,এত রেগে আছিস কেনো?”

“ভীষণ রাগি মুডে বললো,আমি এক্ষুণি চলে যাবো এখান থেকে।”

“কপালের চামড়া ভাজ করে ভ্রু কুচকে বললাম কেনো?কি সমস্যা হয়ে সুপ্তি।”

“সমস্যা রিফাত মানেই সমস্যা।ও এখানে এসছে কি বউ নিয়ে নাকি মেয়েদের সাথে ভাব নিতে।”

“খুব কষ্টে হাসি থামিয়ে বললাম,কেনো রিফাত ভাইয়া কি করেছে।”

“তোর রিফাত ভাইয়া দেখ হাফ প্যান্ট করে মহিলাদের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে।ওই মহিলারা কারা শুনি।”

“তুই যে রাগ করেছিস এটা রিফাত ভাইয়া জানে।”

“না জানে না।তাকে জানানোর প্রয়োজন নেই।”

“তুই যে রাগ করেছিস এটা না জানলে তার রাগ ভাঙবে কিভাবে।”

“নিরব বললো,সুপ্তি তুমিও যাও ওই মহিলাদের হজবেন্ড দের সাথে গল্প করো ব্যাপার টা দারুন হবে।”

রিফাত ভাইয়ার সাইডে গিয়ে সুপ্তি রিফাত ভাইয়া কে পাত্তা না দিয়ে ছেলেদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।রিফাত ভাইয়া ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার বউ এর কি মাথায় সমস্যা হয়েছে নাকি।নিজের বউ অন্যর সাথে কথা বলছে ব্যাপার টা কোনো ছেলেই মেনে নিতে পারবে না।রিফাত ভাইয়া সুপ্তিকে জোর করে পাজা করে তুলে ঘরের দিকে রওনা দিলেন।

“সুপ্তি রাগান্বিত ভাবে বলছে ছাড়ো আগে আমায়।আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো তুমি।”

“রিফাত ভাইয়া বললেন,ঘরে নিয়ে যাচ্ছি।”

“ক্যানো?”

“ইয়ে পেয়েছে তাই।”

“ইয়ে পেয়েছে ওয়াশ রুমে যান।আমাকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছো ক্যানো?”

“আরে ওই ইয়ে না ফুলসজ্জা পেয়েছে।”

“কিসের ফুলসজ্জা ওই মহিলাদের সাথে করো যাও বলছি।”

“আরে ওরা আমার কাছে হেল্প চাইছিলো তাই একটু হেল্প করছিলাম আর কিছু না বিলিভ মি।”

“দুনিয়াতে কি আর কেউ নেই যে সব মহিলারা তোমার কাছে হেল্প চাইতে যায়। অদ্ভুত।”

“আচ্ছা বাবা আর কেউ ডাকলেও যাবো সরি। ”

“গেলে যান আটকাচ্ছে কে? ”

“আল্লাহ বউ পেয়েছি না সিসি ক্যামেরা পেয়েছি।”

ওদের এই খুনসুটি বোধহয় আজন্মকাল চলবে।
———————————————————

পরের দিন দুপুরে নিরব কে আমি খাবার খাইয়ে দিচ্ছি রুমে বসে।

হঠাত মায়ের ফোনে নিরব থমকে গেলো।আমি পাশেই ছিলাম।বাবার শরীর টা আরো খারাপ হয়ে পড়েছে। বাবাকে নাকি আইসিউ তে রাখা হয়েছে।মা ভীষণ কাঁন্নায় ভেঙে পড়েছে।মা ওখানে একা আছে কিভাবে সামলাবে একা সব কিছু।নিরবের মুখ টা মলিন হয়ে আছে।নিরবের চোখে পানি টলমল করছে।হোটেলের রুমে মাথা নিচু করে বসে আছে। অতি কষ্টে ঘন ঘন দীর্ঘঃনিশ্বাস নিচ্ছে।মায়ের জন্য আরো বেশী কষ্ট হচ্ছে নিরবের।মা কি করবে একা আরো ভেঙে পড়বে।

পৃথিবীতে সব বাবা তো আর এক রকম হয় না।আমার বাবা আর নিরবের বাবা পার্থক্য অনেক।নিরবের বাবা নিরবের হাত ধরে নিরব কে বাঁচতে শিখিয়েছে এই পুরা পৃথিবী ঘুরে দেখিয়েছে। নিরব কে ঠিক বলা উচিত এই মুহুর্তে আমি জানিনা।নিরবের পাশে গিয়ে ওর ঘাড়ে হাত দিতেই আমাকে জড়িয়ে ধরেই ভীষণ কাঁন্নায় ভেঙে পড়লো।নিরবকে শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে বললাম বাবা সুস্থ হয়ে যাবেন তুমি ভেঙে পড়ো না।আর মায়ের সামনে কেঁদো না প্লিজ।তুমি ভেঙে পড়লে মা কে সামলাবে কে?

জিনিস পত্র গুছিয়ে আমরা রাতেই ঢাকা ফিরে এলাম।নিরবের মুখে এক বিন্দু হাসি নেই।আমি,রিফাত ভাইয়া,রিক ভাইয়া নিরব কে বুঝিয়েই যাচ্ছি কিন্তু সন্তানের মন কি কখনো বাবার অসুস্থতায় কোনো বুঝ মানে।সারারাত পায়চারী করেছে নিরব।ওর চোখে এক বিন্দু ঘুম নেই।আমার ও ঘুম আসছে না।দুঃচিন্তায় চার দিক অন্ধকার হয়ে আসছে।বাবার কিছু হয়ে গেলে কিভাবে সামলাবো সব।আমার কাছেও বাবা মানে নিরবের বাবা।কখনো তার ছেলের বউ সে নজরে আমাকে দেখেন নি বাবা।

মায়ের একটা মেসেজ এ থমকে গেলো সব কিছু যেনো।বাবা আইসিইউ তে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।তখন রাত প্রায় তিনটা।নিরব স্হির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো বেলকনিতে।না আছে ওর মুখে কোনো কথা,না কোনো রিয়্যাক্ট। কাঁদতেও পারছে না কথা ও বলতে পারছে না।আমি নিজেই নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না কিভাবে নিরব কে সামলাবো।নিরবের ফুপ্পি,ওর মামা বাড়ি,আমার মামা বাড়ি সব জায়গা ফোন দিলাম।সকালে হওয়ার আগেই সবাই আমাদের বাসায় পৌছে গেলো।নিরব কে সামলানো টা আমার জন্য অনেক কঠিন ছিলো।বাবা অসুস্থ শুনে যেভাবে কেঁদেছিলো মারা যাওয়াতে কাঁদতে পারলো না।

বাসায় সবাই আত্মীয় রা নিরব কে ঘিরে কাঁন্নায় ভেঙে পড়েছে।আমি চাইছিলাম নিরব কাঁদুক ও না কাঁদলে যে ভেতরের কষ্ট বের হবে না।নিরবের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কিন্তু কোনো সাউন্ড করছে না।নিরব কে নিয়ে বেশী ভয় লাগছিলো আমার।এভাবে থাকলে নিরবের ও কিছু হতে পারে।

বিদেশ থেকে লাশ আসতে দশ দিন টাইম লাগবে।এতদিন মা একা কি করবে।মা কথা বলার অবস্থাতেও নেই।মায়ের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছে।

দশ দিন কেটে গিয়েছে আজ বাবার লাশ আসবে। বিকালে বাবার লাশ পৌছাবে ঢাকায়।নিরবের চোখের নিচে কালো হয়ে গিয়েছে।এই দশ দিনে কতশত বার সেন্স লেস হয়েছে। রিফাত ভাইয়া, রিক ভাইয়া সব সময় নিরবের সাথেই আছে।

আজ চার বছর বাবাকে দেখে না নিরব।আজ শেষ বারের মতো দেখবে তাও জীবীত নয়।এমন দেখা বাবা আর সন্তানের মাঝে কারো যেনো না হয়।যে দেখায় বাবা ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিতে পারে না যে দেখায় বাবা ছেলেকে বুকে জড়িয়ে বলতে পারে না কেমন আছো বাবা সে দেখা না হওয়ায় ভালো।পৃথিবীর সব থেকে করূন আর হৃদয়বিদারক দৃশ্য প্রিয়জনের মৃত্যু। বাবার লাশ আসার আগ মুহুর্তে নিরব আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে মৃথিলা তোমার মা নেই এটা ভেবে এত দিন কষ্ট লাগতো কিন্তু এত গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে পারিনি এই কষ্টটা কতটা অসহনীয় যন্ত্রণার।এত গুলা বছর কি ভীষণ যন্ত্রণা বহন করেছো তুমি।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here