হৃদমাঝারে শুধু তুমি পর্ব ১১

#হৃদমাঝারে_শুধু_তুমি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পার্ট:১১

নির্ঘুম রাত পাড় করলো চারটি প্রাণ।সকালে বিথীর মা বড় রকমের ঝটকা খেলেন।

বিথীর মা:আরে আরে,কি করছেন?প্যান্ডেল এর কাজ না করে আপনারা চলে যাচ্ছেন যে?

অর্গানাইজার:বিয়ে নাকি হবে না,আমাদের তো চলে যেতে বলা হলো ।কাজের পেমেন্ট ও দিয়ে দিয়েছে!

বিথীর মা:বলে কি!!

বিথীর মায়ের চিৎকার এ সবাই এসে পড়লো।
বিথীর বাবা:কি হয়েছে?

অরিন ,আদ্রিয়ান,বিথী,সোহা,আকাশ সবাই উপস্থিত হলো।

বিথীর মা: দেখো না এদের নাকি কে বলেছে বিয়ে হবে না তাই চলে যাচ্ছে।

বিথীর বাবা:এই তোমাদের কে বলেছে বিয়ে হবে না।
মধ্য দিয়ে বিথী বলে উঠলো,
বিথী: আমি!

সবাই চমকে তাকালো,
বিথীর মা :কেনো?

বিথী:আমি আদ্রিয়ানকে বিয়ে করতে চাই না মা!!

মাঝে দিয়ে মেজো মনি বলে উঠলো,
মনি:বিয়ের দিন বলছিস বিয়ে করবি না?আরে আদ্রিয়ান এর মত ছেলে লাখে একটাও পাওয়া যায় না।আর তুই ওকে বিয়ে করবি না বলছিস।

বিথী:তোমরা বলো না বিয়ে অনেক পবিত্র একটা বন্ধন।এই বন্ধনেই সারাজীবন আবদ্ধ হয় দুটি প্রাণ।কিন্তু যদি সেখানে ভালোবাসা না থাকে তাহলে দুটি প্রাণ বেঁচে গিয়েও মরে থাকবে।

অরিন ,আদ্রিয়ান চমকে গেলো।আর সবাই ও অবাক হলো।
লামিয়া:মানে?

বিথী কিছু না বলে অরিন এর কাছে গেলো,অরিন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।হুট করেই বিথী অরিনকে জোরে থাপ্পর মারলো।অরিন গালে হাত দিয়ে ছল ছল চোখে তাকিয়ে রইলো।
বিথী:কি ভেবেছিস হ্যাঁ?তুই মহান ব্যাক্তি,নিজের সব কিছু উৎসর্গ করে মহান হতে চাইছিস?

অরিন:তুই কি..

বিথী:চুপ একটা কথাও বলবি না!!তুই ভাবলি কি করে তুই আদ্রিয়ানকে ভালোবাসিস জেনেও আমি চুপচাপ বিয়ে করে নিবো।
অরিন বিস্ফোরিত চোখে তাকালো।বিথী জানলো কিভাবে?

বিথী: ভেবেছিলি কি?আমি জানতে পারবো না।একবার বলেই দেখতি।এই বিথী তোকে সব দিয়ে দিত। তা না মহারানী নিজের ভালোবাসা বিসর্জন করতে গিয়েছে।
অরিন মাথা নিচু করে কাঁদছে।বিথী এবার আদ্রিয়ান এর দিকে তাকালো।
বিথী: ও নাহয় আমার কথা ভেবে বলে নি।কিন্তু তুমি তো বলতে পারতে?নাকি ভেবেছো সব কিছু জানার পরও চুপচাপ থাকবো।
অরিন:বিথী!

বিথী:তুই কোনো কথা বলবি না!কালকে ছাদে তোদের কথা আর মমি না বললে জানতেই পারতাম না।
অরিন মমির দিকে তাকালো।মমি কিছু বললো না।
অরিনের মা:বিথী অরিন কি করেছে?

বিথী:তোমার মেয়ে মহান হতে গিয়েছে।

মেজো মনি: ক্লিয়ারলি বল।

বিথী:শোনো অরিন আর আদ্রিয়ান একে অপরকে ভালোবাসে।এখন থেকে না সেই তিন বছর ধরে।কিন্তু আমার সাথে আদ্রিয়ান এর বিয়ে ঠিক হয়েছে বলে অরিন চাই নি আমাদের মান হানি হোক।তাই সব কিছু থেকে গুটিয়ে নিয়ে আদ্রিয়ানকে আমায় বিয়ে করতে বলেছে।আর মূল কারণ তোমরা।কারণ একবার ছোট মনির জন্য তোমরা বাড়ি ছেড়েছো।এবার ও চায় না ওর জন্য তোমাদের সম্মান হানি হোক।

বিথীর বাবা:আদ্রিয়ান কে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ও কাওকে ভালোবাসে কিনা তখন কেনো বলে নি?

বিথী:বলছি শোন,
বিথী হৃদিতার নাম গোপন রেখে পুরা ঘটনা বললো,ওদের বিচ্ছেদের কারণ আর সত্যিটা।সব শুনে সবাই অবাক।মেজো মনি অরিনের কাছে গেলো,
মেজো মনি:এই পাগলী,তোকে এত কিছু কে ভাবতে বলেছে?হুমম?তোর মনে হয় তোর ভালোবাসার থেকে আমাদের সম্মান বড়?

বিথীর মা:একে আরো দুইটা চর দেও।ওর মায়ের ভালোবাসার জন্য বাড়ি ছেড়েছি,আর ওর ভালোবাসার জন্য কিছু করবো না ভাবলো কি করে।

বিথীর বাবা:আদ্রিয়ান আর অরিনের বিয়ে হবে এবার।
অরিনের মা চুপ করে আছে।
মেজো মনি: কিরে ছোট,আদ্রিয়ান কে কি মেয়ের জামাই হিসেবে পছন্দ না।

অরিনের মা: তা নয়।কিন্তু বিথী গ্রামের মেয়ে।কালকে বাইরে বের হলে ওকে শুনতে হবে তোর বিয়ে ভেঙ্গে গেছে।আমি বিথী আর অরিন কে কোনো অংশেই আলাদা দেখি না।সেখানে ওকে এসব কথা শুনতে হবে।

বিথী:কেনো শুনবো?বিয়ে তো আমারও হবে!

সবাই সরু চোখে তাকালো।ভাবছে বিয়ে ভাঙার চক্করে এই মেয়ে পাগল হয়ে গেলো নাকি?
বিথীর বাবা:ঠিক আছিস তুই?

বিথী:উফ বাবা।

লামিয়া:কাকে বিয়ে করবি তুই?

বিথী:কেনো তোমার ভাই কে!

আকাশের কাশি উঠে গেলো,যেই সেই কাশি নয় মারাত্বক রকমের কাশি।বিথী জলদি করে পানি নিয়ে আকাশকে দিল।
বিথী:আরে হবু জামাই এভাবে কাশছো কেনো?আমি কি যক্ষ্মা রোগীকে বিয়ে করবো বলেছি নাকি?
আকাশ অবাক চোখে তাকালো।মূলত হজম হচ্ছে না।বিথী আকাশকে এক চোখ টিপী দিল।তাতে আকাশের মাথা ঘুরানোর উপক্রম।
মেজো মনি:তাহলে তো হয়েই গেলো,বিথী হবে আমার আকাশের বউ আর অরিন আদ্রিয়ানের।
আদ্রিয়ানের মা:আমার কোনো আপত্তি নেই?
মাঝখান থেকে আরিফা বলে উঠলো,
আরিফা:ইয়ে,এবার অরিন আপু হবে আমার ভাবি..ওয় হাট যাও সামনে সে,মেরি ভাবি আরাহি হে।
তনয়া:আর আদ্রিয়ান ভাইয়া আমার দুলাভাই হবে ইয়েস!!
সবাই ওদের কাণ্ডে হেসে দিল।হৃদিতা আর মমিও খুশি হয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো। লামিয়ার চোখে জল।অবশেষে তার ভাই তার ভালোবাসার মানুষকে পাবে। সামান্তাও খুশি খুব। সে তো দেখেছে তার বোনটা আদ্রিয়ান কে ছাড়া কি রকম ছিল।
সোহা:মাঝখান দিয়ে আমাকে সবাই ভুলে গেছে।যাও রাগ করছি(গাল ফুলিয়ে)
তনয়া আর আরিফা গিয়ে ওর গাল টেনে দিল।সোহা নিজের গাল ডলে,আবার গাল ফুলালো।
ছাদে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছে আকাশ।সবাই মিলে ঠিক করেছে এক সপ্তাহ পর আদ্রিয়ান অরিন আর বিথী আকাশের বিয়ে দিবে। এখান থেকেই।কিন্তু আকাশের মনে প্রশ্ন বিথী সবাইকে রেখে আকাশকেই কেনো বললো বিয়ে করবে?
বিথী: জি এফ এর কথা ভাবছো বুঝি?
বলতে বলতে আকাশের কাছে এসে দাড়ালো।
আকাশ:উহু,মনের মানুষের কথা!

বিথী:কাওকে ভালোবাসো?

আকাশ:হুমম,বাসি তো!

বিথী মুচকি হেসে বলল,
বিথী :ভুলে যাও তাকে।
আকাশ চোখ ছোট ছোট করে বললো,
আকাশ:মানে?
বিথী:বললাম তাকে ভুলে যাও।
আকাশ:কেনো?অরিন আদ্রিয়ান কে ভালোবাসে বলে আদ্রিয়ান কে ছেড়ে দিলে,আর আমার বেলায় ভুলে যাও কেনো?

বিথী :কারণ আমি তোমার মনের রানী!
আকাশ চমকে তাকালো।বিথী মুচকি হেসে ডায়রি এগিয়ে দিল।আকাশ অবাকের শেষ প্রান্তে ।
বিথী:সরি না বলে তোমার ডায়রি পড়ার জন্য ।
আকাশ দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
আকাশ :ওহ এই জন্যই দয়া!
বিথী মাথা নিচু করলো, ও জানে আকাশ ভাবছে যে সম্মানের জন্য ওকে বিয়ে করতে চাচ্ছে।বিথী দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের হাত দুটি নিজের মূষ্টিতে নিল।আকাশের চোখে চোখ রেখে বললো,
বিথী:না কোনো দয়া আর না সম্মানের ভয়। যা বলছি মন থেকে আর স্বজ্ঞানে বলছি। হ্যাঁ এটা ঠিক আমি আদ্রিয়ান কে ভালোবাসি কিন্তু সে আমাকে না অন্য কাওকে ভালোবাসে।আর জোর করে কখনো ভালোবাসা পাওয়া যায় না।আমি তার কাছে কেন যাবো যে আমায় বিন্দু পরিমাণ ভালোবাসতে পারবে না।আর যে আমাকে পাগলের মত ভালোবাসে তাকে কি হেলায় ফেলে দিবো।জানি না কিভাবে নিবে তাও বলবো আদ্রিয়ান আর অরিনের ভালোবাসার কথা যখন জেনেছি তখনই মুছে ফেলেছি ।কারণ সে অন্য কারোর।তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার অধিকার আমার নেই।তোমার লিখা আমাকে নিয়ে প্রতিটা কথা আমার হৃদয়ে আছে।এমন টা নয় তোমাকে ভালোবাসি না।হয়তো বাসি কিন্তু নিজেই বুঝতে পারছি না।আমার হৃদমাঝারে তোমাকে নিয়ে কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুভুতি আছে।সেই অনুভূতি কে ভালোবাসায় রূপান্তর করার সুযোগ আমায় দিবে না?আমি কথা দিচ্ছি ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবো।মনের মাঝে তোমার নাম রোপণ করবো। যেখানে প্রতিটি স্পন্দন বলবে,হৃদমাঝারে শুধু তুমি আর তুমি। দিবে না সেই সুযোগ?
আকাশ কিছু না বলে পরম আবেশে বিথীকে নিজের বুকে আগলে নিল। বিথীও চোখ বন্ধ করে মুহুর্তকে অনুভব করতে লাগলো।

পুকুর পাড়ে বসে আছে আদ্রিয়ান আর তার কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে অরিন।
অরিন:অবশেষে এক হব আমরা!

আদ্রিয়ান:হুমম,ঠিকই বলেছিলে আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।

অরিন:আমি বিথীর সাথে অন্যায় করলাম নাতো?

আদ্রিয়ান নিজেও চুপ রইলো,কারণ ওর মনেও একই প্রশ্ন।অরিন বুঝতে পারলো।তাই আর কিছু বলল না।

আদ্রিয়ান:জানো অরি পাখি!তোমার থেকে চিরকালের মত আলাদা হয়ে যাবো ভেবেই বুকটা কেঁপে উঠলো। এমনিতেই ওই ঘটনার জন্য ২ টা বছর আমরা আলাদা ছিলাম।আর সত্যি জানার পরেও কোনো কিছু না করতে পেরে বিষিয়ে যাচ্ছিলাম।আমার এই হৃদয়ে যে শুধুই তোমার নামটি লিখা,অরি পাখি। হৃদমাঝারে শুধু তুমি।

অরিন:আমার হৃদমাঝারে শুধু তুমি..তুমি ছিলে,আছো আর থাকবে।আর কিছু আমাদের আলাদা করতে পারবে না।বহু কষ্টে পেয়েছি।আর হারাতে দিবো না।

আদ্রিয়ান শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো অরিন কে। হ্যাঁ অবশেষে পূর্ণতা পাবে ওদের ভালবাসা।

#চলবে…

(নেও বাচ্চারা আর কান্না করো না😁)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here