অপেক্ষার শেষ প্রহর পর্ব -০৫

#অপেক্ষার_শেষ_প্রহর
#পর্বঃ৫
#লেখনীতেঃহৃদিতা_ইসলাম_কথা

–উম্ উম্ ম..।

শালা হারামি আমার মুখটা এমনভাবে চেপে আছে মনে হয় দম আটকে মারা পরবো আমি। একে তো আমি ছাড়ছি না।সকালে এত কিছু করলো আর এখন একেবারে বাথরুমে ঢুকে গেছে।এর জীবনে যদি তান্ডব না করতে পারছি তো আমার নামও কথা না হুহ।মনে মনে এসব আবল তাবল ভেবে যাচ্ছি। আর রাগে ফুসছি কেননা একটু আগে যা ঘটলো মেনে নেওয়া মুসকিল।

তখনকার ঘটনা,,
আমি জামার ফিতাটা বাধতেই পারছিলাম না। আর গায়ে ওড়নাও ছিল না। এমন সময় খট করে দরজাটা খুলে গেল।এমন সময়ে দরজা খোলার আওয়াজে আতকে উঠলাম আমি তাই হুট করেই পিছনে ঘুরে সামনে অবস্থানরত ব্যক্তিকে দেখে আমি আটকে গেছি।বড়বড় চোখে দেখছি শুধু মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না।সামনের মানুষটিও অবাকতার শেষ পর্যায়ে অবস্থান করছে।হয়তো ভাবেনি এমন কিছু ঘটতে পারে বা এরকম কিছু দেখবে।যতই হোক তার বন্ধুর ওয়াশরুমে এমন একটা মেয়ে যে কিনা সকালে তাকে এভাবে হেনস্তা করছে তাকে সে একদমই আশা করেনি তাও আবার এমন পরিস্থিতিতে। হুশ ফিরতেই যেইনা চিৎকার করবো ওমনি উনি দরজা ছেড়ে এসে আমার মুখ চেপে ধরলেন।আন্দাজ করতে পেরেছিলেন যে আমি চিৎকার করবো আর সেটা যে ভয়ংকর রকমের চিৎকার সেটাও সে ভালোই বুঝতে পেরেছিলো কারন তার এক্সপেরিয়েন্স আছে ওনার।হুট করেই উনার এভাবে কাছে চলে আসায় খানিকটা ভড়কে গেলাম আমি।সাথে অনেকটা অস্বস্তি ঘীরে ধরলো আমায়। জানি না এই লোকটার এভাবে হুটহাট কাছে চলে আসলে কি হয় আমার।আটকে যায় আমি, অস্বস্তি, অস্থিরতা, কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত অনুভূতি হয় যা আগে কখনো হয় নি।এই দুদিনে আমাদের এমন দ্বিতীয় ঘটনা। দম আটকে আসছে।নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মরে যাবো মনে হচ্ছে। তাই উম্ উম্ করছি।একে তো গায়ে ওড়না নেই আমার তাই আরো বেশি কেমন একটা লাগছে। কিন্তু আমি তো এমন না।লেডিস শার্ট টপস জিন্স এসবে অভ্যস্ত তাই এমন হবার কথা না।অবশ্য বাড়িতেই বেশি পড়ে বাইরে গেলে শালীনভাবে বেরোনোটাই আব্বু পছন্দ করেন।তাই সবসময় গলায় স্কার্ফ ঝুলানো থাকবেই।যাই হোক উনি এবার একবার দরজার দিকে তাকিয়ে বললেন,

–ছাড়তে পারি কিন্তু এক শর্তে চেচানো যাবে না।এইখানে এইভাবে আমাদের দুজনকে দেখে খারাপ ভাববে সবাই তাই একদম চুপ।

উনি চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলেন ছাড়বেন কিনা।আমিও মাথা নেড়ে সায় দিলাম।আর যাই হোক উনি ঠিকই বলেছেন।এটা আমার মাথায় ছিল না কেন? তখন যদি আমি চিৎকার করতাম তবে তো কেলেঙ্কারি হয়ে যেত।তবে যাই হোক এভাবে একটা মেয়ের ওয়াশরুমে ঢোকার মানে কি? এই লোক বড্ড বাজে, নির্লজ্জ বেহায়া খালি মেয়ে দেখলে ঢলে পড়তে ইচ্ছে করে।আগে ছাড়ুক মুখটা ধুয়ে দেব একেবারে। হুহ। আমার সাথে কেচাল করতে আসা।তার বাপ দাদা চৌদ্দ পুরুষের নাম ভুলিয়ে দিব আমি।উনি এবার আমার মুখ ছেড়ে দিলেন।

আমি বড়সড় করে শ্বাস টেনে নিচ্ছি।মনে তো হচ্ছিল দম আটকে মরে যাবো।যাই হোক এবার একে কথা শোনানোর পালা।খুব করে কথা শোনাবো বলে মুখ খুলতেই যাচ্ছিলাম,

— শুনুন আপনার এসব বাজে কথা বলার চেষ্টা করবেন না একদমই। আর থ্রেট তো ভুলেই দিবেন তবে খবর করে ছাড়বো চেনেন না আপনি আমায়।তাই ভদ্র মেয়ের মত এই টপিকটাকে এইখানেই রফাদফা করুন।আপনার মানসম্মান না থাকলেও আমার আছে।

আমার রক্ত টগবগ করছে। এই লোক আমাকে ইনসাল্ট করছে কতবড়ো সাহস। আমার চাচ্চুর বাড়িতে দাড়িয়ে তাও আবার এভাবে ওয়াশরুমে এসে কিনা আমাকে থ্রেট করছেন উনি।আজ এর একদিন কি আমার যতদিন লাগে।হুহ।আমি এবার তেতে উঠে বললাম,

–হাউ ডেয়ার ইউ? আপনার এত সাহস কো করে হয় আমার বাড়িতে আমার ওয়াশরুমে দাড়িয়ে আমাকে থ্রেট দিচ্ছেন।সেদিন সকালে এভাবে অসভ্যতামি করেছেন। কি ভেবেছেন কি? যে আপনাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিব।আমাকে চোর ও বলেছেন এবার এসব কিছুর শাস্তি হন।

–হেই! হোয়াট আর ইউ সে?আমি ফয়সাল আহমেদ স্রোত। আর তুমি আমাকে শাস্তি দেবে! হাউ ফানি! বাই দা ওয়ে সেদিন সকালের জন্য তোমারও শাস্তি পাওনা আছে।সেদিন ষাঁড়ের মত চেচিয়ে আমার কান পচিয়ে দিয়েছো।

–ছিঃছিঃ! আপনা৷ কান পঁচা আর এই পঁচা কান নিয়ে আপনি ঘুরে বেড়ান লজ্জা করে না।মানুষের সামনে কেমনে যান আপনি? আর লজ্জা করবেই বা কি বেহায়া লোক। এক নাম্বারের লুচ্চা লাফাঙ্গা টাইপ ছেলে দেখেই বোঝা যায়। দিনদুপুরে মেয়েদের সাথে অসভ্যতা লজ্জা করে না আপনার। তাও একবারে বাথরুমে ঢুকে।কি পেয়েছেন কি আপনি! আমি এখুনি ডাকছি ভাইয়াকে ও এসেই আপনার মত নির্লজ্জ গায়েপড়া ছেলেকে টাইট দিবে। এমন পেটাবে না যে বাপের জন্মে ভুলবেন না।ভাই…..

বলতেই বলতেই উনি আবারো আমার মুখ চেপে ধরলেন। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম উনার দিকে।কিন্তু উনার কোনো ভাবান্তর নেই।আমি এতে খানিকটা অবাক হলাম।কারন চেচিয়ে ভাইয়কে ডেকে বলতাম এই ছেলে আমার সাথে অসভ্যতামি করেছে। আমার গায়ে হাত ও দিয়েছে আমাকে মেরেছেও আরো অনেক কিছু বানিয়ে বলে এর গুষ্টির তুষ্টি করবো। কিন্তু একি হলো এ আমার মুখ চেপে ধরেছে।আওয়াজ ও তো বের করতে পারছি না।কি জ্বালা!ইচ্ছে তো করছে একে ফ্রাইং পেনে বসিয়ে কড়া করে ভেজে বাড়ির বিড়ালদের খাদ্য বানিয়ে দেই।বিড়ালগুলো ও হয়তো মুখে তুলবে না এই কুখাদ্যকে।এসব উদ্ভট ভাবনা ঘুর পাক খাচ্ছে মাথায়।এর মধ্যেই উনি বাঁকা হেসে বললেন,

–কি বলবেন বাড়ির লোককে আমি আপনার সাথে অসভ্যতামি করেছি।এমনও বলবে গায়ে হাত দিয়েছি ঢলে পড়েছি মেরেছিও তাইতো।আরও যা কিছুই ভেবেই থাকো কোন লাভ নেই কারন কেউ আপনাকে বিশ্বাস করবে না।সবাই আমার সাপোর্ট করবে কারন তারা জানে আমি কেমন।আমার মত ভদ্র ছেলে এই নড়াইলে আর কেউ খুজে পাবে না।

চুলে হাত চালিয়ে ভাব নিয়ে বললেন কথা গুলো।
উনার এসব ভাবে গায়ে আগুন ধরে গেল আমার।

— হুহ।ভদ্র না ছাই।শয়তানের ম্যানেজার। করেননি আপনি আমার সাথে অসভ্যতা?গায়ে হাত দেননি। আমার সাথে বাজে বিহেব করেননি।সকালে আমাকে কত আজেবাজে কথা বলেছেন। আর আপনি ভাবছেন আমি আপনাকে কিছু বলবো না।

— হ্যাঁ হ্যাঁ বলেন বলেন। আমার সমস্যা নাই ভালোই হবে।সবাই ধরে বেধে বিয়ে দিয়ে দেবে।তাড়াতাড়ি বউ পেয়ে যাবো তারপর সারাদিন রোমান্স করবো।আহা! আপনাকে দিয়ে একটা কাজের কাজ তো হবে।দেখে তো মনে হয় না মানুষের কাজ বিগড়ানো ছাড়া কাজ ঠিক করতে পারেন।

উনার আজব আর জটিল কথা কিছুই বুজলাম না।বউ পেয়ে যাবেন মানে বউ কি রাস্তা ঘাটে পড়ে থাকে? আর তার সাথে আমার কি সম্পর্ক? আমি কাউকে কিছু বললে উনার বিয়ে কেনো দেবে তাও আবার ধরে বেধে এ আবার কেমন কথা? মাথায় ঢুকছে৷ না কিছুই পিথাগোরাসের উপপাদ্যের মত সবটা গুলিয়ে যাচ্ছে আমার। তবে একটা কথা বেশ বুঝতে পারছি আর তা হলো আমায় অপমান করলেন উনি।ভাবতেই রাগ যেনো তরতর করে বেড়ে চলেছে। এত অপমান তাও এই লোকটা করছে আমার জীবনে আমি কখনো কারো দুইটা বাজে কথা শুনি নাই আর এই লোক রীতিমতো আমাকে এইরকম বাজে ভাবে অপমান করলো।উনি আমাকে ছেড়ে কিছুটা দুরে দাঁড়িয়ে আছেন।আমি তেতে উঠে উনাকে বলতে একপা এগোতেই পিছলে উনার গায়ে উপর পড়ে গেলাম।আর উনিও একহাতে আমার কোমর জরিয়ে ধরেছেন।পড়া থেকে বাচার জন্য উনার শার্ট দুহাতে খামচে ধরেছি।আজ একটা স্কাই ব্লু কালারের মধ্যে চেক শার্ট পড়েছেন উনি। হুট করেই ফোনটা বের করে ফটাফট দুটো পিক তুলে নিলেন ওই অবস্থার তারপর বললেন,

–হুম।দেখে বুঝাই যাচ্ছে কে গায়েপড়া।নিজের চারিত্রিক গুনগুলো আমার উপর চাপিয়ে দিতে চাইছিলেন।এবার প্রমান আছে সবাইকে দেখাতে পারবো আমি কেমন ইচ্ছে করে আপনি আমার গায়ে এসে পড়েন আর আমাকে বিয়ে করার জন্যই এসব অজুহাতে আমাকে ফাঁসাতে চাইছেন।

আমি হা করে চেয়ে আছি। এই লোক কি বললো এসব আর কি করলো? কিছুই মাথায় ঢুকছে না সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আমি কিকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে ওভাবেই।উনি ওভাবে থেকেই শয়তানি হেসে বললেন,

— কি হলো মিস ছাড়তে মন চাইছে না নাকি পারমানেন্টলি এই জায়গাটা বুক করে নিতে চাইছেন যে সরতেই চাইছেন না।আমার বুকে মনে হচ্ছে হাজারটা হাতি ভর দিয়ে আছে।

আমি রাগে ফুসছি ঝট করে ছেড়ে দিয়ে বললাম,

— বেরোন এক্ষুনি।

উনি কিছু না বলেই চুপচাপ বেরিয়ে গেলেন।তার কিছুক্ষণের মধ্যে আবার ফিরে এলেন।মাত্রই দরজা আটকাতে গেছি ওমনি দরজা ধরে হাসি মুখে বললেন,

— মিস পরের বার ডোরটা ভালো করে লক করে নিবেন। নাহলে কখন কি দেখা হয় বলা তো যায় না।আজ যা দেখলাম হয়ত তার…..

আর বলতেই না দিয়ে নাকের উপর ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে রাগে ফুসছি।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here