#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_এগারো
[#প্রেম পর্ব]
নিষিদ্ধ কিছু চাওয়া গুলো যেন বেড়ে গিয়েছে শ্রাবণের।
ষোলো বছরের যে চঞ্চল মেয়েটিকে একসময় তার বিরক্তিকর লাগত। আজ মনেহয় এই মেয়েটিকে কেন সে আগে ভালো করে দেখল না? মেয়েটি যখন কোচিং সেন্টার থেকে বেরিয়ে ফুচকার দোকানে বান্ধবীদের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলে। মেয়েটির সেই মুহূর্তের হাসির উজ্জলতা, আর সারল্যতা যেন মুগ্ধ করে তাকে।
মেয়েটি যখন ঘন কালো চুলগুলোকে বিনুনী করে কলেজ ড্রেসে বান্ধবীদের সঙ্গে দুষ্টুমি করে তখন মেয়েটার মধ্যে উচ্চমাধ্যমিকে পড়া কোন মেয়ে নয় বরং মনে হবে সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া কোন মেয়ে। কিন্তু এই মেয়েটাই বাড়িতে এলে একদম বদলে যায়।তার মাঝে আর খুজেঁ পাওয়া যায় না সেই চঞ্চলতা।কেমন যেন গুমোট স্বভাবের হয়ে গিয়েছে সে। চট্টগ্রামের সেই চঞ্চল স্নিগ্ধা আর সে নয়। মনে হবে এ অন্যকোন স্নিগ্ধা।
________________________________
ছুটির দিন খাবারের টেবিল ঘুছিয়ে পুষ্পিতা সবাইকে ডেকে আনছেন। কর্ম ব্যস্ততায় সবাই পুরো সপ্তাহে একই টেবিলে খাওয়ার সময় পায় না। ছুটির দিনটাই একটা দিন যেদিন পুরো খাবার টেবিল জমে উঠে। খাবার টেবিলে বসেছে সবাই, সাজ্জাদ সাহেব নিজে উঠে রান্নাঘর থেকে খাবারের বাটিগুলো টেবিলে সাজিয়ে দিচ্ছেন। সঙ্গে অনেক কথা বলছেন তারমধ্যে অফিস, পরিবার নিয়েই বেশি পুষ্পিতা ও তার কাজের কথা বলছে। শুধু বলছে না স্নিগ্ধা, স্নিগ্ধা কথাগুলোর একটি ও শুনছে না শ্রাবণের মনে হলো কারন সাজ্জাদ সাহেব যে কথাগুলো বলছেন সবগুলোই হাসানোর জন্য বলছেন। শ্রাবণ ও মাঝে মাঝে পেট চেপে হাসছেন।
সাজ্জাদ সাহেব বলতে লাগলেন
—” শুন, আমাদের অফিসের একজন পুরাতন চৌকিদার ছিল যে ঠিক ভাবে উচ্চারণ করতে পারতো না।”
–” তো আমাদের কোম্পানিতে বিভিন্ন পদের লোক থাকে চার্জ হ্যান্ড, স্টোর ম্যান, ডেলিভারি ম্যান, লিফটম্যান, সুপারভাইজার, আরও অনেকে আর অন্যান্য পোশাক শ্রমিক তো আলাদা।তো চৌকিদার মানি রমিজ সাহেব সব সময় সবার পদবীকে বিকৃত করে বলত, যেমন সুপার ভাইজারকে ডাকত -” শুয়োর ভাইজার!” চার্জহ্যান্ডকে -” চারজন!”
এই দুজনের পদবীগুলো সে সবচেয়ে বেশি বিকৃত করেছে।তো আমি আবার বলে দিয়েছি আমাকে এমন ভাবে না ডাকতে আমাকে ছোট স্যার ডাকলে চলবে।
বলা যায় না তখন আবার সিও স্যারর জায়গা চিকা বা অন্যকিছু ডাকে কিনা।”সাজ্জাদ সাহেবের কথায় পুষ্পিতা,শ্রাবণ হেসে ফেলেছে।কিন্তু স্নিগ্ধা ও হাসলো তবে এ নিয়ে কোন আলোচনা করল না। তার খাওয়া শেষ হলে সে টেবিল ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। শ্রাবণ ও খেয়ে উঠে চলেগেল তার রুমে।
সাজ্জাদ সাহেবের ফোনে কল এলো। ফোন ধরেই কথা বলতে লাগলেন –
–” হ্যা বাবা সব ঠিক, নাতি-নাতনির কথা বলছো?
তারাও খুব ভালো আছে। ”
—” আমি আর তোর মা কিছুদিনের জন্য ঢাকায় আসছি।”
–” কবে আসবে?”
—” তোর মা একটু অসুস্থ হয়ে পরেছে, ডাক্তার দেখাতে হবে। তাই ভাবলাম ঢাকায় আসি, ভালো কোন ডাক্তার দেখিয়ে চলে যাবো। ব্যাবসা কেমন চলছে?শ্রাবণকে নিয়ে যাস মাঝে মাঝে ক্লাস না থাকলে কাজ বুঝে আসবে।”
—” চিন্তা করো না, আজকাল কার ছেলেরা সব বুঝে যায়। পড়াশুনা শেষ করে কাজে ডুকক।এখন ডুকে পরলে কাজে মজা পাবে না।আর তাছাড়া এই সময়টা একটু আড্ডা দিবেই।
–” তুই আর ওকে মাথায় তুলিস না।”
কয়েকদিন পরের কথা,,,
বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে স্নিগ্ধা, খুব রাগ লাগছে তার কিছুক্ষণ আগেই নানাভাই আর নানু এসেছে। দুজন শ্রাবণের রুমে আছে এখন। স্নিগ্ধার রুমে শ্রাবণ,সে এখন বিছানায় বসে বসে মোবাইল টিপছে আর স্নিগ্ধার দিকে উকি দিচ্ছে। স্নিগ্ধা সবই বুঝতে পারছে শ্রাবণের মতলব।স্নিগ্ধা সেই দুঃখে বেলকনি থেকে রুমে আসেনি।
ভিতর থেকে শ্রাবণ ডেকে উঠল-
—” কেউ কি রুমে আসবে? বেলকনি থেকে মশা গুলো যে ঘরের ভিতর প্রবেশ করছে সে খেয়াল কি কারো আছে? মশাগুলো সব আমার রক্ত চুষে চুষে খাচ্ছে।
শ্রাবণ খানিকটা মশা তাড়ানোর ভঙ্গিতে হাতে তালি দিয়ে উঠল। না স্নিগ্ধা তারপর পর ও ফিরে তাকালো না।
শ্রাবণ বেলকনিতে তাকিয়ে দেখল স্নিগ্ধা খোলা চুলগুলো পিঠে ছড়িয়ে আছে। খয়েরী রঙ্গের ফতুয়ার সাথে মিলিয়ে জিন্সের প্যান্ট পরেছে স্নিগ্ধা। শ্রাবণ বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো তারপর বেলকনিতে এসে দাড়িয়ে পরল।
স্নিগ্ধার হাতে তখন লিলিফুল, সে শ্রাবণের রাগ গুলো ফুলের উপর মিটিয়েছে। ফুল গুলোকে ছিড়ে নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেছে। শ্রাবণ আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখল স্নিগ্ধার হাতের মুঠোয় ফুলগুলো এখনো। শ্রাবণ নিচে বসে ফুলের পাপড়ি গুলোকে তুলে নিল। কিভাবে ফুলের পাপড়িগুলো ছিড়ে ফেলল।এত কোমল, এত সুন্দর ঘ্রাণ যেই ফুলের সেই ফুল কিভাবে এই মেয়েটি ছিড়ল? মেয়েটির কি কোন মায়া নেই?
শ্রাবণ স্নিগ্ধার ঘাড়ে কাপা কাপা হাত নিয়ে রাখল।
হঠাৎ করে কারো শীতল স্পর্শ ঘাড়ে পেতেই স্নিগ্ধার ভিতরটা কেমন অজানা আতংকে কেপে উঠেছে। পিছনে দাড়ানো ব্যক্তিটির উদ্দেশ্যে পিছন ঘুরেই দেখল শ্রাবণ দাড়িয়ে আছে। শ্রাবণ এখনো তার কাধে হাত দিয়ে রেখেছে। স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে কাধে রাখা শ্রাবণের হাতটার দিকে তাকালো। শ্রাবণ স্নিগ্ধার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাড়াতাড়ি হাতটা সরিয়ে ফেলল।
স্নিগ্ধার আতংকিত মুখটা কেমন রাগি মুখ ধারণ করেছে।স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।শ্রাবণ তার সামনে মুঠো করে ধরে রাখা সেই ফুলগুলো তুলে ধরল।
—” তুই তো বড্ড নিষ্ঠুর কালি!”
স্নিগ্ধা শ্রাবণের হাতে রাখা ফুলগুলোকে দেখে নিল। সেগুলোকে শ্রাবণের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বাইরে ফেলে দিয়ে বলল-
—” আমার গায়ে হাত দিয়েছেন কোন সাহসে?”
—” তুই আমার বউ! বউয়ের গায়ে হাত দিতে সাহস লাগে?”
–” অবশ্যই লাগে, যে সম্পর্কটা আমি মানি না, সেই আমিই কি করে আমার গায়ে আপনার ছোয়া মেনে নিতে পারি?”
—” কিন্তু আমি মানি,”
–” আপনি মানলে ও আমি মানি না।”
—” তোর মেনে নেওয়া না নেওয়া কোন কিছুতেই আমার যায় আসেনা!”
–” আপনি কিন্তু বেশি করছেন শ্রাবণ ভাই!”
শ্রাবণ হুটকরে স্নিগ্ধাকে টেনে কাছে নিয়ে এলো, টেনে আনতে আনতে একদম রুমে নিয়ে এলো, তারপর বুকে জড়িয়ে নিল, অশান্ত বুকটা কেমন ঠান্ডা হয়েগেল তার।
এরই নাম কি ভালোবাসা? এ কি মায়া? এই অল্প কিছুদিনের মায়ায় এতটা গভীরভাবে কারো মায়ায় জড়ানো যায়?
শ্রাবণ স্নিগ্ধার মুখখানা বুক থেকে তুলল, স্নিগ্ধা চোখগুলো বন্ধ, শ্রাবণের হুট করে এমন আক্রমণ সে নিতে পারছেনা।স্নিগ্ধা ভয়ে ভয়ে চোখ জোড়া খুলতেই দেখল শ্রাবণ তার দুচোখ দিয়ে স্নিগ্ধাকে প্রাণ ভরে দেখছে। শ্রাবণ স্নিগ্ধার কপালের কাছের চুলগুলোকে সরিয়ে কপালে একটা চুমু বসিয়ে দিল। ঘোর লেগে গিয়েছে শ্রাবণের, এই মুহূর্তটা তার কাছে অন্যরকম লাগছে। আরেকটু নিচু হয়ে স্নিগ্ধার ঠোটে স্পর্শ দিল। স্নিগ্ধার চোখ থেকে টপ টপ করে জল গড়িয়ে পরল। শ্রাবণ আরও প্রগাড় ভাবে স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে ধরে স্নিগ্ধার মাঝে ডুবে গিয়েছে। এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পরই শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে ছেড়ে দিল সাথে। স্নিগ্ধা তখন ও পাথরের মত একই জায়গায় দাড়িয়ে আছে।
ঘোর যে তার লেগেছে, ভিষণ লেগেছে। শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে ছেড়ে স্বাভাবিক হয়ে বিছানায় বসে রয়েছে। কিন্তু এই দিকে স্নিগ্ধা যেন একদম স্তব্ধ হয়েগেছে। শ্রাবণ কি করল এটা তার সাথে? এমন একটা মুহুর্তে এমন কিছু করে বেড়াবে স্নিগ্ধা ভাবতেই পারেনি। শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বলল –
–” দাড়িয়ে থাকবি ওখানে না শুতে আসবি?”
স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে না ফিরে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলেগেল। শ্রাবণ স্নিগ্ধার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। কেমন লজ্জায় পরেছে মেয়েটা।
স্নিগ্ধা রুম থেকে বেরিয়ে যেন আরও বিড়াম্বনায় পরেছে।
নানু মামির সঙ্গে কথা বলছিল স্নিগ্ধাকে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে তিনি চেয়ে আছেন। কাছে ডেকে বললেন
—” রাত তো কম হলো না, ঘুমাও নি কেন? ঘুরছো কেন?”
–” এমনই ঘুম আসছিল না,”
–” যাও! রুমে যাও!”
স্নিগ্ধা নানুর কথায় মন খারাপ করে রুমে চলেগেল। গিয়ে দেখল শ্রাবণ শুয়ে আছে। শ্রাবণের শুয়ে থাকার ভঙ্গি তার ভালো লাগল না। আবার কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পরতেই স্নিগ্ধার ভয় লাগল। আজ তো নানাভাই আর নানু আছে ওনারা তো কখনোই আলাদা থাকতে দিবে না।স্নিগ্ধা দরজাটা বন্ধ করে আস্তে করে। তারপর লাইট টা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পরল। শ্রাবণের পাশ থেকে কিছুটা দূরে। শ্রাবণ আরেকটু কাছে আসলে স্নিগ্ধা বলল-
–” কি শুরু করেছেন এগুলো?”
–” কি করছি?”
–” কাছাকাছি আসছেন কেন?”
–” তাহলে কি করবো?”
–” দূরে থাকুন,”
–” পারবো না,”
স্নিগ্ধা বিছানা থেকে উঠতে চাইলে শ্রাবণ হাত ধরে বলল -“শুয়ে পর আমি কিছু করবো না!”
চলবে।
পেজ রিচ কমেগেছে, সবাই বেশি বেশি করে শেয়ার করুন।