তুমিময় বসন্ত পর্ব -২৭+২৮

#তুমিময়_বসন্ত
২৭.
#Mousumi_Akter

রৌদ্রজ্জ্বল দুপুর চারদিকে ভীষণ উত্তাপ,ঝলমলে রোদ এ বাতাসেও যেনো গরম হাওয়া দিচ্ছে বন্দি ঘরের ভেতরে।উঠানে বালতিতে পানি রাখা আছে।কোথা থেকে দুইটা শালিক উড়ে এসে বালতির উপর বসলো।তাদের মনে হয় ভীষণ পানি তেষ্টা পেয়েছে।শালিক দুইটা পানি একবার ঠোঁটে নিয়ে আর নিলো না।কেননা রোদের তাপে পানি আগুনের মতো গরম হয়ে আছে।ইস শালিক দুইটার বোধহয় ভীষণ পানির পিপাসা পেয়েছে।আমি দ্রুত একটা মাটির বাসন ঘর থেকে নিয়ে তাতে একটু ঠান্ডা পানি নিয়ে আমগাছের নিচে ছায়ায় রাখলাম।কিন্তু ভীষণ মুশকিল শালিক সে পানি চোখেই দেখছে না।শালিকের নজরে পানি দেখানোর ভীষণ চেষ্টা করলাম কিন্তু শালিক তা দেখছেই না।পরে গিয়ে যেদিকে পানি রেখেছি শালিক দুটোকে সেদিকে তাড়া দিলাম।কিন্তু তাতে শালিক উড়ে গিয়ে আমগাছের উঁচু ডালে বসলো।চেষ্টা করেও আর তাদের নামানো গেলো না।

“বারান্দা থেকে আয়াসের আম্মা অয়ন কে বলছে দেখ তোর ভাবি কি করছে।পাখিদের খাওয়ানোর জন্য নিজে রোদে দাঁড়িয়ে আছে।”

“আরহী বলছে,এটা ওর ছোট বেলার অভ্যাস।পাখিদের খাবার খাওয়াতে ওর খুব ভালো লাগে।”

“অয়ন আমাকে ডেকে বললো,ভাবি রোদে থেকো না। গরম লেগে যাবে। চলে এসো শালিখ পাখি আমি তোমাকে কিনে এনে দিবো। ”

“আয়াস এসে বললো,মা মুগ্ধতার মন কত ভালো দেখো।পাখির কষ্ট দেখেও ও সহ্য করতে পারেনা।”

“এইজন্যই তো তুই বিয়ে করতে চাস নি।”

“মা আমাকে এখন এসব বলে মুগ্ধতার সামনে ফাঁসিয়ে দিও না।আমি সব সময় চেয়েছি বিয়ে করতে।”

মা ছেলের মজার ঝগড়া দেখে আমি হাসছি।

শালিক পাখির জন্য অপেক্ষা না করে বারান্দায় চলে এলাম।গরমে চুলে কখনো তেল ইউজ না করতে করতে চুল কেমন উস্কো খুসকো হয়ে গিয়েছে।মাথার অবস্থা একদম কাকের বাসা।সামনে কিছু ছোট চুল গজিয়ে সে গুলো বার বার উড়ে সামনে আসাতে বেশী গরম লাগছে আমার।বার বার হাত দিয়ে সামনে আসা চুল গুলো উচিয়ে মাথার উপরে দিচ্ছি।শ্বাশুড়ি আম্মা মাথার এমন অবস্থা দেখে আমার হাত ধরে টেনে এনে নিচের সিঁড়িতে বসিয়ে দিলেন আর নিজে উপর সিঁড়িতে বসলেন।শ্বাশুড়ির হাতে একটা স্টিলের বাটি যার মধ্য তেল রাখা আছে।এই দিকে তেল দেখলে ভয় পাওয়া আমি।কিছুতেই তেল ব্যবহার করিনা গরমকালে।তেলে যেনো গরম আরো বেশী লাগে।

“শ্বাশুড়ি মাকে বললাম,আম্মা তেল দিয়ে কি হবে।”

আম্মা মাথায় তেল দেওয়া অলরেডি শুরু করে বললেন,

“তোমার মাথায় লাগিয়ে দিবো।তাহলে চুল গুলো আর উড়ে বেড়াবে না।মাথায় নিয়মিত তেল লাগালে মাথা ঠান্ডা থাকে।”

“এটা কিসের তেল আম্মা।”

“এটা খাঁটি নারকেল তেল মা।গাছের নারকেল থেকে তেল।”

“আমাদের বাড়ি তো নারকেল গাছ নেই আম্মা।তাহলে খাঁটি নারকেল তেল কোথায় পেলেন।”

“আমার বাবার বাড়ি নারকেল গাছের অভাব নেই।বিশাল বড় বাড়ি,নারকেল বাগান,সুপারি বাগান।আমার বাবার অনেক সম্পত্তি ছিলো।”

“এখন ও বাড়িতে কে থাকে আম্মা।”

আয়াসের আম্মা ভীষণ দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছাড়লেন।এখনি যেনো কেঁদে ফেলবেন।কষ্টে যেনো বুক ফেঁটে যাচ্ছে উনার।কিছুক্ষণ দম নিয়ে বললেন,

কেউ নেই মা ওখানে।একটা দূর্ঘটনা সব কিছু তছনছ করে ফেলেছে।

মামা আর মামিকে খু*/ ন কেনো করেছিলো আম্মা।কিসের শ/ত্রু/তা ছিলো।

আমার ভাই ছিলো অত্যান্ত ভালো একটা ছেলে।কারো সাথে কোনো ঝামেলা ছিলো না।ভাই রিলেশন করে নিজে পছন্দ করে বাড়িতে না জানিয়ে দুজনে বিয়ে করেছিলো।আমার বাবা এলাকার চেয়ারম্যান ছিলো।বাবা একজন সম্মানীয় মানুষ।জানোই তো মানুষ একটু বদনাম এর সুযোগ পেলে আর ছাড়ে না।এলাকায় বাবার সম্মানের একটা ব্যাপার ছিলো।মানুষ জন ছিঃ ছি করছিলো।হঠাত বাবা ব্যাপার টা মেনে নিতে পারেনি।ভাই কে বাড়িতে উঠতে দেয় নি।তবে আমার সাথে যোগাযোগ ছিলো।ভাই এর বিয়ের বছরেই নির্বচন ছিলো।বিরোধী পক্ষ হেরে যায় নির্বচন এ।বাবা জিতে যাবার পরেই আমাকে বলেছিলো আমার ভাই আরমান শরীফ কে আবার ও ধুমধামের সাথে বিয়ে দিবে।সেরকম ই কথা বার্তা এগোচ্ছিলো।ভাই এর শ্বশুর বাড়িতে বাবা-মা আমরা সবাই যাওয়ার জন্য দিন তারিখ ঠিক করলাম।তার আগের দিন রাতেই কেউ একজন আমার ভাই কে খবর দেয় আমার ভাই যেনো তার বউ কে নিয়ে বাবার সাথে দেখা করে।বাবা দেখা করতে চাইছে তবে কেউ যেনো না আসে।আমার ভাই অত্যান্ত খুশী মনে তার বউ কে নিয়ে সন্ধ্যার পরে দেখা করার উদ্দেশ্য রওনা হয়।কিন্তু আমার কোনো খবর দেয় নি।সে রাতেই ভাই আর ভাই এর বউ কে নির্মম ভাবে খু*৷ ন করা হয়।পরের দিন এলাকার লোক জড় হয়ে যায় চেয়ারম্যান এর ছেলের লা* শ দেখে।সেদিনের পর থেকে চোখের পানি আজ ও মুছে নি আমার।আমার বাবা আর মা ভাই এর মৃ* ত্যুর এক বছরের মাঝেই মারা যান স্ট্রোক করে।একমাত্র ছেলের মৃ* ত্যুর আঘাত সহ্য করতে না পেরে আমার মা বাবা মা*রা যান।বাবার শুধু একটায় আফসোস ছিলো কেনো মানুষ, সমাজ আর সম্মানের কথা ভাবলাম।আজ যদি ছেলের ভালোবাসা মেনে নিতাম তাহলে ছেলেকে হারাতে হতো না।মা সারাক্ষণ বাবাকে দোষারোপ করে গিয়েছেন।বাবা নিজেও অনুশোচনায় ভুগেছেন।নিজ চোখে আমার বাবা-মা ভাইকে ধ্বং *স হতে দেখেছি।জানো মুগ্ধতা আজ এতগুলো বছরে আমি আজ ও স্বাভাবিক হতে পারিনি।চোখের সামনে এক এক করে সবাইকে শে*ষ হতে দেখেছি।আমি বাবার বাড়িতে যায় তিনবার।ভাই আর ভাই এর বউ এর মৃত্যু বার্ষিকী তে আর মা -বাবার।এই দিন গুলো আমার জীবনের সব থেকে কষ্টের মুহুর্ত।আপণ জন হারানোর মতো যন্ত্রণা এই পৃথিবীতে কোথাও নেই। বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হয়।রাত হলেই আমি ঘুমোতে পারিনা।তোমার শ্বশুর আমাকে নিয়ে ভয়ে থাকতেন আমি নিজের কোনো ক্ষতি না করে ফেলি সেই ভয়।

এতক্ষণ আমি যেনো কোনো গভীর ভাবনায় ছিলাম।ভাবনার অতলে হারিয়ে গিয়েছিলাম আয়াসের আম্মার কথা শুনে।এতটা কষ্ট সহ্য করে কিভাবে বেঁচে আছেন তাহলে আম্মা।গভীর ভাবে ভেবে আমার নিজের ই কাঁন্না চলে এসছে।খুব কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

” আম্মা ওরা কারা ছিলো?”

“বাবার বিরোধী দলে যারা ছিলো তারা ই।”

“তাদের কোনো শাস্তি হয় নি।”

“এখানেই বড় কষ্ট মা।আমরা জানি অপরাধী কারা কিন্তু উপযুক্ত প্রমানের অভাবে কিছুই করতে পারিনি।”

“কি বললেন আম্মা।এত বড় পাপের পরেও অপরাধী ঘুরে বেড়াচ্ছে।”

“ঘুরুক মা।ইহকালে মানুষ কে ফাঁকি দিতে পারবে।কিন্তু পরকালে কি হবে।সেখানে কেউ ছাড় পাবে না।এই কালের হিসাব সেই কালে হবেই।”

ভীষণ খারাপ লাগলো আয়াসের আম্মার কথা শুনে।উনার জীবনে কত কষ্ট।নিজেকে কিভাবে সামলান উনি।বেশ মন খারাপ করেই বসে আছি আমি আর আয়াসের মামা-মামির ঘটনা ভেবে যাচ্ছি।এরই মাঝে অয়ন টিউশনি থেকে ফিরে এলো।হাতে কয়েক টা চকবার।অয়ন আমার হাতে আইসক্রিম এর প্যাকেট দিয়ে বললো,

“ভাবি তোমার বোন কে দুইটা দিও।”

“দুইটা কেনো?”

“সে দুইটা চেয়েছে।”

“চেয়েছে?”

“আমি টিউশনি যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করেছিলাম কি খাবেন।উনি বললেন দুইটা চকবার খাবেন।তাই আর কি।”

“অয়নের হাতে তিনটা চকবার দিয়ে বললাম,তোমার উনিকে তুমি তোমার নিজ হাতে দিয়ে এসো ভাই যাও।”

“অয়ন আইসক্রিম নিয়ে বেশ লজ্জামাখা সুরে বললো,আমার উনি মানে ভাবি ব্যাপার টা মোটেও তা নয়।”

“তাহলে কি অয়ন ব্যাপার টা।আরু টা কী?”

“কোন আরু।”

“দেখলাম খাতায় ছবি একে লিখেছো আরু।”

“ওহ ওইটা!ওইটা আমার এক পাড়াতো ফুপ্পি ভাবি।ফুপ্পি বলেছিলো একে দিতে তাই।”

“ওহ আচ্ছা!যাও চকবার গলে যাচ্ছে।”

অয়ন কে তাড়া দিয়ে আমি চকবার নিয়ে আমাদের রুমে এলাম।রুমে ঢুকেই দেখি আয়াস গায়ের গেঞ্জি খুলছে।আমাকে দেখেই বললো,

“ঠিক এই টাইমেই তোমাকে আসতে হলো।”

“কোন টাইমে।”

“আমার জামা কাপড় খোলার টাইমে।এসেই যখন পড়েছো কাম ফার্স্ট ডিয়ার মিসেস।উন্মুক্ত বুক তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।হাগ মি বেবিডল।”
#তুমিময়_বসন্ত
২৮.
#writer_Mousumi_Akter

“ঠিক এই টাইমেই তোমাকে আসতে হলো।”

“কোন টাইমে।”

“আমার জামা কাপড় খোলার টাইমে।এসেই যখন পড়েছো কাম ফার্স্ট ডিয়ার মিসেস।উন্মুক্ত বুক তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।হাগ মি বেবিডল।”

“আপনার কি মাথায় সারাক্ষণ এসব ই চলে। ডাকবো বলবো আপনার আম্মাকে আপনি সারাদিন আমাকে এসব অসভ্য কথা বলেন।”

“প্লিজ বলো,অনেক উপকার হবে।”

“বললাম কিন্তু।”

“আচ্ছা আমি তোমাকে হেল্প করছি।বলেই আয়াস ওর আম্মাকে ডাকলো।মা,আম্মা,আম্মুউউউউউউ তোমার বউমা তোমাকে ডাকছে।কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলবে।প্লিজ দ্রুত এসো।”

মানে আয়াস সত্যি সত্যি তার আম্মাকে ডাকলো।আমি চোখ বড় বড় করে আয়াসের দিকে তাকিয়ে আছি।সিরিয়াসলিই সে চাইছে আমি তার আম্মাকে এসব বলি।মুহুর্তের মাঝে আয়াসের আম্মা আমাদের রুমে প্রবেশ করলো।আর আয়াস সাথে সাথে ওয়াশ রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিলো।কত্তবড় ফাজিল হলে আমাকে এমন বিপদে ফাঁসিয়ে দিয়ে নিজে ওয়াশ রুমে গিয়ে লুকিয়ে আছে।আকি তো তাকে এমনি ভয় দেখাচ্ছিলাম।এসব কি কেউ কোনদিন কারো সাথে শেয়ার করে।এখনি মনে চাচ্ছে ওয়াশ রুমের দরজা ভেঙে আয়াস কে বের করে এনে বলি আম্মা আমি না আপনার এই অসভ্য ছেলে কিছু বলতে চাইছে আপনাকে।

আয়াসের আম্মা আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,

“কি হয়েছে মুগ্ধতা।কিছু বলবে মা?”

আসলে আমিতো কিছুই বলবোনা।এখন এই আয়াস টাকে কি করা উচিত।মুখে অনিচ্ছাকৃত হাসি এনে বললাম,

“ইয়ে আম্মা বলছিলাম যে।”

“কি বলবা মা বলো।”

“আম্মুদের বাড়িতে কি আগামিকাল যাবো।”

“হ্যাঁ মা আগামিকাল ই যেও।আজ তোমার বাবা বিকালে মার্কেটে যাবে তোমার আম্মু-বাবা,খালা-খালু সবার জন্য কাপড় কিনে পাঠাবে।তাছাড়া দুইটা চার বাটির টিফিনবক্স কিনতে বলেছি।রান্না করে পাঠাবো।”

“আম্মা এসবের কি দরকার।”

“সব কিছুর ই দরকার আছে মা।”

“আপনার ছেলে আপনাকে মা,আম্মা,আম্মু সব এক সাথে ডাকে।”

“ছোট বেলা থেকেই আয়াস যখন যা ইচ্ছা তাই বলেই ডাকে।মা, আম্মা,আম্মু খেয়াল খুশি মতো ডাকে।”

আয়াসের আম্মা চলে আমি ওয়াশ রুমের দরজা খুব জোরে ধাক্কা মারতে মারতে বললাম,

“এক্ষুণি দরজা খুলে বাইরে আসুন। আজ আপনার একদিন কি আমার একদিন।আমাকে এইভাবে ফাঁসিয়ে ওয়াশ রুমে গিয়ে লুকিয়েছেনে।”

আয়াস বুঝতে পেরেছে আমি ভীষণ রেগে আছি।এক্ষুণি ঝগড়া শুরু করবো।আসলেই রেগে আছি। বেরোক একবার সাতদিন কথা বলবো না।ভয়ানক রাগি মুডে বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি আমি।কিন্তু আমার রাগ নিমিষেই ভালবাসায় পরিণত হয়ে গেলো।আয়াস দরজা খুলে বেরিয়েই চমৎকার একটা হাসি দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আয়াস খালি গায়ে আমাকে দুই হাতে জড়িয়ে নিয়ে আমার মাথা ওর বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললো,

“আই লাভ ইউ বেবিডল।ভেরি সরি ফর প্রাঙ্ক।ভালবাসবো তোমাকে,আদর করবো তোমাকে,প্রাঙ্ক করবো তোমার সাথে,ঝগড়া করবো তোমার সাথে, মান -অভিমান সবটায় তোমাকে ঘিরে।”

কিছু মুহুর্ত হঠাত করেই ভীষণ প্রিয় হয়ে যায়।আয়াসের দরজা খুলে বেরিয়ে হাসিমুখ ছিলো এই বিশ্বের শ্রেষ্ট হাসি। আর আমাকে অভিযোগ করার সুযোগ না দিয়ে সোজা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আই লাভ ইউ জানপাখি বলাটা এতটায় চমৎকার আর মায়ামাখা ছিলো নিমিষেই তার প্রতি ভালোবাসা,ভালোলাগা কয়েকগুন বেড়ে গেলো।আমার ঠোঁটের কোনে তার প্রতি ভালবাসার লাজ্জামাখা হাসি।

এভাবে কিছুক্ষণ কেটে যাবার পরে আয়াস কে বললাম,

“চকবার খান,গলে যাচ্ছে।”

“কে দিলো?”

“দেবরজি।”

আয়াস আমার হাত থেকে একটা চকবার নিয়ে বললো,

“আমার এখান থেকে একটু খাও তারপর তোমার ওখান থেকে আমি একটু খাবো।”

আয়াস এর চকবার থেকে আমি কোনরকম একটু নিলাম।কিন্তু আয়াস আমার টা থেকে অনেকখানি নিলো।চকবার টা প্রায় গলে গিয়েছিলো।তাই আয়াস দু’বার নিয়েই শেষ করে ফেললো।আয়াসের টা তো আয়াসের হাতেই আছে আমার টা আর নেই।

আয়াসের দিকে তাকিয়ে বললাম,

“সারাজীবন শুনেছি মেয়েরাই ছলনা করে এটা আপনার কেমন ছলনা ছিলো।”

“ছলনা কোথায়?তোমাকেও সুযোগ দিয়েছিলাম তুমি নাও নি কেনো বেশী?”

“এইবার দিন।”

“না আর দিবো না।”

“আমাকে কি আগে বলে নিয়েছিলেন।”

“এটাই বুদ্ধি বলবো কেনো?”

গাল ফুলিয়ে বসে পড়লাম বিছানায়।আয়াস দুষ্টমি করেই এমন করেছে।আমিও ইচ্ছা করেই গাল ফুলিয়েছি।আয়াস সব খেলেও আমার কখনো রাগ হবেনা।
তবে এ রাগ ছিলো আয়াসের রাগ ভাঙানোর কারণ হওয়ার জন্য।আয়াস আমার সমনে বসে চকবার আঙুল দিয়ে আমার নাক আর দুই গালে লাগিয়ে দিয়ে বললো,

“আমার বউ এর জন্য বস্তা বস্তা আইসক্রিম আসবে প্রয়োজনে।জীবনে আইসক্রিম ই ফুরাবে না।মুগ্ধতার জামাই এর কি সাহস আমার বউ এর আইসক্রিম খেয়ে নেয়।নাওতো বেবিডল তুমি আমার হাতের টা খাও।”বলেই আমার গালে আইসক্রিম দিয়ে দিলো।আমিও হেসে আইসক্রিম খেলাম।তার সাথে এই অভিমান টা করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে।

পরের দিন আম্মা দুপুরের রান্না বারোটার মাঝেই শেষ করেছেন।আমি অনেক বার বলার পর ও আমাকে রান্না করতে দেন নি।

আম্মাকে গিয়ে বললাম,”আম্মা আমি রান্না করি আজ।”

“আম্মা বললেন,বাসায় একাই রান্না করো আজ মায়ের হাতের রান্না খাও।মা যখন আর পারবে না তখন এমনিতেই তোমাকেই আমাকে খাওয়াতে হবে।”

শ্বাশুড়ি মা যে এই মুহুর্তে আমাকে রান্না করতে দিবেন না সেটা ভালোই বুঝতে পারলাম আমি।আমি রান্নাঘরেই দাঁড়িয়ে আম্মার সাথে গল্প করে যাচ্ছি।বিকালে আম্মুদের বাসায় যেতে হবে।আম্মু,বাবা,খালামনি, খালু সবাই ফোন দিচ্ছে ঘন্টায় ঘন্টায়।খালামনিদের বাসা এখান থেকে হেঁটেই যাওয়া যায়।আরহী বিকালে ওদের বাড়িতে চলে যাবে।আর আমরা আমাদের বাড়িতে যাবো।

আয়াস এই গরমে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে দক্ষিণা জানালা খুলে।আয়াস বেশীরভাগ ই ফ্যান অফ করেই ঘুমোয়।ফ্যানের বাতাসের থেকে প্রকৃতিক বাতাস ই নাকি আয়াস কে বেশী তৃপ্তি দেয়।আম্মা বলেছে আমি যেনো কিছু লেবু ছিড়ে নিয়ে আসি।আম্মুদের বাড়িতে পাঠানোর জন্য আমার শ্বাশুড়ি অনেক কিছু রান্না করছে।সাথে বাড়ির গাছের ই লেবু ছিড়ে নিয়ে যেতে বলেছে।বাড়ির ওয়ালের সাথে বড় লেবু গাছ টার ডালপালা চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।গাছ টা আয়াসের রুমের সাথেই মিশে আছে।আমি লেবু গাছের নিচে গিয়ে লেবু ছিড়ছি।লেবু গাছের নিচে ফোনের গান লাউড লি প্লে করে দিয়ে লেবু ছিড়ছি।গানের শব্দে আয়াসের ঘুম ভেঙে গেলো।আমি জানালার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে লেবু ছিড়ছি।আয়াস জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে আমার জামার কলার টেনে ধরলো।হঠাত করে পিঠ আর ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে চিৎকার দিলাম।পেছনে তাকাতেই দেখি ঘুম ঘুম চোখে আয়াস বালিশে থুতনি ঠেকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।বুকে হাত দিয়ে কয়েক টা ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিয়ে আয়াস কে হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম আশ্চর্য ব্যাপার আপনি।আরেক টু হলে আমি ভয় পেতাম।

আয়াস ভ্রু উঁচিয়ে বললো,

“আরেকটু হলে তুমি ভয় পেতে।”

“তো এইভাবে কেউ ভয় দেখায়।”

“কই ভয় দেখালাম।বউ কে একটু কাছে টেনেছি আর কি বা করেছি।”

“না বলে কয়ে এইভাবে জামা ধরে টান দিলে কে না ভয় পায়।আরেক টু হলে মারাত্মক ভয় পেয়ে যেতাম।”

“ভয় না পেয়েই যে বউ এইভাবে চিৎকার দিতে পারে।ভয় পেলে কি করতো।নিশ্চয়ই আমাকে জড়িয়ে ধরতো।এই তুমি ভয় পেলে না কেনো বলোতো।”

“না মানে একটু পেয়েছিলাম। ”

“আমিও ভয় পেয়েছি মুগ্ধ।”

“কেনো?”

“ভর দুপুরে প*রী দেখে।”

“প* রী কই দেখলেন।এ বাড়িতে প* রী আছে নাকি।আমি তাহলে আর একদিন ও এ বাড়িতে থাকবো না।”

“আছে তো লেবু গাছে আছে।”

এমনিতেও আমার এসবে প্রচন্ড ভয়।ভর দুপুরে এমন একটা কথা শুনে লেবু গাছের দিকে তাকিয়ে ওড়নায় রাখা লেবু গুলো ফেলে দিয়ে দৌড়ে বাড়ির ভেতরে আসার চেষ্টা করতেই আয়াস আমার হাত টেনে ধরে বললো,

“আছে মুগ্ধ নামক প* রী।তোমাকে একদম আস্ত একটা প *রী লাগছে।লেবু গাছের নিচে আমার বউ প* রীটা।”

আয়াস আমার দুই হাতের আঙুলের ভাজে আঙুল দিয়ে আলতো পরশে আঙুল চেপে ধরে জানালা দিয়ে দিয়ে মুখ বাড়িয়ে হাতে চুমু দিয়ে মৃদু হাসছে।আয়াসের মৃদু হাসি ভীষণ সুন্দর। সদ্য ঘুম থেকে ওঠা ছেলেটার মাঝে এত প্রেম কিভাবে যে আসে।বেশ লজ্জা পেলাম।কথা ঘোরাতে বললাম,

“এই গরমে ঘেমে চোখ মুখ বিশ্রী দেখা যাচ্ছে তাইনা?এইজন্য এসব বলছেন তাইতো।”

“তোমাকে কি কখনো বিশ্রী লাগতে পারে।তবে মুখ ভীষণ লাল হয়ে গিয়েছে।যার জন্য তোমাকে গোলাপি গোলাপি লাগছে।”

“বাড়িতে অনেক মানুষ আছে হাত ছাড়ুন। কেউ দেখে ফেলবে।”

“এদিকে এ টাইমে কেউ আসে না প্রিয়তমা। বাবা বাড়িতে নেই মা ওদিকে বিজি আছে।”

“কেউ বাসায় নেই বলে একজন জানালার ওপাসে আর কেউ জানালার এ পাশে দাঁড়িয়ে থাকবো।”

“তুমি ভেবে দেখো কত্ত রোমান্টিক একটা মুহুর্তে দুজন দাঁড়িয়ে আছি।”

এমন সময় অয়ন এদিকে এগিয়ে এসে বললো,

“ভাবি কি হয়েছে এভাবে চিৎকার দিলে কেনো?”

অয়ন এর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আমাকে আর আয়াস কে এইভাবে হাতে হাত ধরে থাকতে দেখে।ছেলেটা এমনিতেই ভীষণ লাজুক, তাতে আমাদের এ অবস্থায় দেখে বোধ হয় পৃথিবীর সব লজ্জা অয়ন এর উপর ভর করলো।অয়ন দ্রুত নিজের হাত মাথায় চালিয়ে দিয়ে মাথা নিচু দিকে তাকিয়ে দ্রুত পেছন ফিরে চলে গেলো।আয়াস এখনো হাত ধরেই রেখেছে।

“আয়াস কে বললাম,সব আপনার জন্য হয়েছে। অয়ন কি ভাবলো বলুন তো।”

“ভাবলেও ভেবেছে তার ভাই আর ভাবি ছিলো।এখানে অন্য কেউ ছিলোনা।”

“এইবার বাবা এসে দেখলে তবেই কি হাত ছাড়বেন।ওইযে বাবা আসছে।”

বাবা আসছে কথাটা শুনেই আয়াস বিদ্যুৎ গতিতে আমার হাত ছেড়ে দিলো।

আমি মুচকি হাসি দিয়ে লেবু গুলো তুলে নিয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলাম।লেবু গুলো আম্মার কাছে দিয়ে দিলাম আম্মা একটা ব্যাগে দিয়ে দিলো।

বিকালে আলমারি থেকে অনেক গুলা শাড়ি বের করলাম।আজ আম্মুদের বাড়ি শাড়ি পরে যাবো।আয়াসের শাড়ি খুব পছন্দের।আমি শাড়ি পরলে আয়াস শাড়ির কুচি ধরবেই।আয়াসের নাকি আমার শাড়ির কুচি ধরতে খুব ভালো লাগে।অনেক গুলা শাড়ি বের করে আয়াস কে বললাম,

“দেখুন না কোনটা পরবো।আমাকে কোন শাড়িতে ভালো লাগবে।”

আয়াস ল্যাপটপ চাপছে মন দিয়ে।শাড়ির দিকে না তাকিয়েই বললো,

“তুমি যেটা পরবা ভালো লাগবে।”

“আপনি একটা চয়েজ করে দিন না প্লিজ।”

“বললাম তো একটা পরলেই হবে।তোমাকে সব কালারে সুন্দর লাগবে।”

“আচ্ছা থ্রি পিছ পরছি।”

“আয়াস সাথে সাথে ল্যাপটপ এর সাটার অফ করে আমার পাশে এসে একটা গোলাপি শাড়ি নিয়ে বললো এটা পরো।আমি পরিয়ে দেই।শাড়ি,গহনা, সব ই আমি পরিয়ে দিবো।”

আমিও ঠিক এটায় চাইছিলাম।আয়াস শাড়ি আর গহনা পরিয়ে দিয়ে বললো,”এইবার মেকাপ তুমি করো।আমি ওটা পারি না বেবিডল।”

“ছোট আয়না আয়াসের হাতে দিয়ে বললাম,এটা আমার সামনে ধরুণ।আমি কাজল পরবো।”

চলবে?

তে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here