তোমায় চেয়েছি পুরোটাই পর্ব -১৭+১৮

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ১৭
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

উত্তপ্ত শরী*রে একটা ছেলের স্পর্শ আমিও আর উপেক্ষা করতে পারছি না।মূহূর্তেই ঠোঁ*টে উষ্ণ একটা ছোঁয়া পেলাম।

আমার সারা শরীরে মনে হচ্ছে কারেন্ট বয়ে যাচ্ছে।কি এক অনুভূতি।আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। বিষন্ন একমনে আমার ঠোঁ*ট নিজের দখলে নিয়ে আছে।লজ্জায়,ভয়ে আমি পাথরের মতো দারিয়ে রইলাম।

বিষন্ন একটু সরে দারালো।আমি এখনো চোখ বন্ধ করে আছি।মনে হচ্ছে কেন থেমে গেলো সব?এই মুহূর্ত জন্মজন্মান্তর চলতে থাকুক।বিষন্ন আমার কপালে আলতো করে চু’মু একে দিলো।সঙ্গে সঙ্গে আমার সারা শ রীর শিউড়ে উঠলো।জীবনের প্রথম কোনো ছেলের স্পর্শে আমি যেন মোমের মতো গলে যাচ্ছি।এবার লজ্জার মা’থা খেয়ে আমি নিজেই বিষন্নকে জরিয়ে ধরলাম।আমার ন’খ বসে গেলো বিষন্নের পি*ঠে।পায়ের পাতায় ভর করে বিষন্নের ঠোঁ’টে ঠোঁ’ট মিলিয়ে দিলাম।বিষন্ন ওর দুই হাত আমার গালে রেখেছে।বেশ কিছুক্ষণ পর বিষন্নকে ছেড়ে একটু দূরে সরে গেলাম।

এটা কি করলাম আমি? কি হলো এটা?।আমি নিজেই কিনা বিষন্নের ! এতোটা লজ্জা এবং নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে যে ইচ্ছে করছে ছাঁদের ওপর থেকে লা’ফিয়ে পড়ি।বিষন্ন এক পা এক পা করে আমার কাছে এলো।এক হাত আমার থুতনিতে রেখে মুখ তুলে ধরলো।বিষন্নের চোখের দিকে তাকালাম।এতো মায়াবি চোখ।চোখ বেয়ে ঠোঁ’টে নজর পড়তেই দেখলাম ওর ঠোঁ’টে লাল লিপস্টিকের স্পর্শ ভরে আছে।চোখ সরিয়ে নিলাম।বু’ক প্রচন্ড গতিতে ওঠানামা করছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি ফে’টে যাবে।বিষন্ন মুচকি হাসলো,আমার কপালে আবারো আলতো একটা চুমু খেয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো।আমি সেখানেই ঠাঁই দারিয়ে রইলাম।আমার বিন্দুমাত্র নড়াচড়া করার ক্ষমতা নেই।

____________

” স্যার পুলিশ এসেছিলো, আপনার কথা মতো ওনারে টাকা দিয়ে দিছি ”

” ভালো করেছো।বিষন্ন অফিসে এসেছে? ”

” ছোট সাহেব তো এখনো আসেননি,একটু আগে ফোন দিয়েছিলাম,বললো আর দশ মিনিট লাগবে, ”

” আচ্ছা, ”

” স্যার একটা কথা ছিলো ”

” নিজের ছেলের অপরাধ ঢাকতে কেন টাকা খাওয়ালাম সেটাই তো? ”

ম্যানেজার হাত কচলাতে কচলাতে বললো ” জি স্যার,আমার দেখা মতে কোনো বাবা এমনটা করে না,অন্তত নিজের ছেলেকে রাগ হয়,,আপনি সেটাও করলেন না ”

” আমার মতে আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি।এইসব মা*তালদের জন্য দেশে এতো মেয়ে ধ*র্ষনের শিকার হচ্ছে।আইনে যদি এদের তুলে দেওয়া হতো তাহলে নিশ্চিত মৃত্যুদন্ড হতো,কি হতো না?!”

” জি স্যার হতো ”

” আইন অব্দি না গিয়েই যদি কাজটা হয়ে যায় তাতে মন্দ কি?! ”

” স্যার এতে তো ছোট সাহেব অপরাধে জড়িয়ে পড়বে ”

” আমার ছেলেকে আমি চিনি,সে কখনোই তার বাবার ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে এরকম কাজ আর কখনোই করবে না ”

” তবুও স্যার বিষয়টা কেমন যেন লাগছে ”

” এখানে ভালোর স্থান নেই, আমি নিজেও অনেক ভালো ছিলাম।বিনিময়ে সবাই আমায় ঠকিয়েছে।আমি চাইনা আমার ছেলের ক্ষেত্রেও সেটা হোক। যদি আমার কাছে ওর কাজটা অপরাধ মনে হতো তাহলে আমি নিজেই ওকে পুলিশের হাতে দিয়ে দিতাম ”

__________

বাবার অফিসে এই নিয়ে আমার পাঁচবার কি ছ’বার হলো আসার।নিতান্তই প্রয়োজন না হলে বাবা তার অফিসে আমায় ডাকেন না।লাস্ট এসেছিলাম দুই বছর আগে।বাবার সামনে বসতেই বাবা গম্ভীর স্বরে বললেন

” এতো দেরি হলো যে ”

বাবাকে আমি এমনিতেই ভয় পাই।আর যখন আমি নিশ্চিত যে বাবা ওই খু*নের বিষয়টা নিয়ে বলবেন তখন থেকে ভয়টা আরো প্রবল হচ্ছে। কাঁপা কাঁপা স্বরে বললাম

” বাবা রাস্তায় জ্যাম ছিলো,”

” জ্যাম থাকলেও এতোক্ষণ লাগার কথা না।শুনলাম গাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছো? ”

” হ্যা বাবা।হেঁটে হেঁটে এসছি,”

” দেখো বিষন্ন।আমার আবেগ নেই,তুমি আমার ছেলে,তোমারও আবেগ বলতে কিচ্ছু থাকবে না।তুমি গাড়ি রেখে হেটে হেটে চলে এলে।এরকম প্রকৃতির প্রতি আবেগ রাখা যাবে না,বুঝতে পারছো? ”

” পারছি বাবা ”

” তোমার পড়ালেখা কেমন চলছে? কলেজে টেস্ট পরিক্ষা কি হয়েছে? ”

আমি বুঝতে পারলাম না বাবা অন্য প্রসঙ্গে কেনো কথা বলছেন।তিনি কি অন্য কোনো বিষয়ে বলার জন্য ডেকেছেন?। স্বাভাবিক ভাবেই বললাম

” এখনো হয়নি,সামনের সপ্তাহ থেকে শুরু ”

” আচ্ছা।তুমি যে কাজটা করেছো সেটা ভুল ছিলো।তবে পরেরবার থেকে এরকম ভুল করবে না। যে মেয়েটাকে নিয়ে এসেছো সেসব মেয়েদের বাঁচানোর কোনো মানে হয়না।তাদের কাজটাই ওইটা।তুমি ছোট,তাই বুঝতে পারোনি।এইসব মেয়েদের কাছে ওরকম মা*তালরা কাস্টমার ”

” বাবা আমি ওই মেয়েটার জন্য এসব করিনি।ওরা মিষ্টির সাথে অসভ্যতামি করেছিলো ”

” মিষ্টি মানে? ও তোমার সিনিয়র, নাম ধরে ডাকছো কেন ”

কি বলবো বুঝতে পারলাম না।চুপ করে রইলাম।বাবা বললেন

” ওই মেয়েটা কি আমার বাড়িতেই থাকবে? ”

” যদি তুমি না চাও তাহলে থাকবে না ”

বাবা আর কিছু বললো না।ল্যাপটপের কিবোর্ডে কি যেন টাইপ করতে লাগলো।আমি ওখান থেকে চলে আসলাম।বাড়িতে আসতেই মা ডাইনিং টেবিল থেকে ডাকলেন

” কিরে বিলু,সকাল সকাল কোথায় চলে গিয়েছিলি? ”

আমি কিছু না বলে চেয়ার টেনে বসলাম।আমার সামনের চেয়ারে মিষ্টি বসে আছে।পদ্মকে কোথাও দেখতে পেলাম না।আশেপাশে তাকাতেই দেখলাম ও চুপটি করে কিচেনে দারিয়ে আছে।ওকে ডাকলাম।পদ্ম কাছে এলো।বললাম

” খেয়েছো? ”

” না খাইনি,আপনি বাইরে ছিলেন তো তাই,, ”

” বসো খেয়ে নাও।আর আমি বাইরে থাকার সাথে তোমার খাওয়ার কি সম্পর্ক। ”

মা বললো ” ওকে কতোবার বললাম বসতে,কিছুতেই রাজি হলো না।”

নীলুপু বললো ” তুই ওকে পদ্ম ডাকছিস কেন? ওর নাম তো পরী ”

আমি পদ্মর দিকে তাকালাম। ওর মুখে অপরাধবোধের চাহনি।পদ্ম বললো

” আপনে আগে খান।আমি পড়ে খেয়ে নিবো,”

” পড়ে কেন? এখন খেতে সমস্যা কি? ”

পদ্ম মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো” খালা,সাহেবরে একটু বলেন যে আমি পড়ে খাবো, এখন আমার খিদা নাই ”

মা বললো ” ও পড়ে খেয়ে নিবে বিলু,তুই খেয়ে নে ”

সবার খাওয়া শেষ। বিষন্ন নিজের ঘরে চলে গেছে।তিশা আর ঈশা চলে গেছে।মিষ্টি যেতে চেয়েছিলো কিন্তু নীলু আটকে রেখেছে।কাজের বুয়া যখন সবার এঁটো প্লেট সরাচ্ছে তখন পদ্ম গিয়ে বিষন্নের প্লেটটা হাতে নিয়ে ওনাকে বললো

” এইটা রেখে যান,এখানে আমি খাবো ”

বুয়া রহিমের মা যেন আকাশ থেকে পড়লেন।তিনি বললেন

” কি কও ছেরি,এইডা তো ছোট বাবু খাইছে,এঁটো থালে কেন খাইবা, ছাপ পেলেট দিতাছি ”

পদ্ম বললো ” লাগবে না,আমি এখানেই খাবো,অন্য প্লেট মাখানোর কি দরকার? আমি এখানেই খেয়ে নিবো।আমার কোনো অসুবিধা হবে না৷ ”

রহিমের মা আশ্চর্য হয়ে পদ্মর খাওয়া দেখছেন।পদ্ম কতো আত্নরিকভাবে বিষন্ন যে প্লেটে খেয়েছে সেখানেই খাচ্ছে। রহিমের মায়ের বিষয়টা সুবিধার মনে হলো না।

__________

” কিরে মিষ্টি, কি হয়েছে তোর? এভাবে চুপচাপ হয়ে আছিস কেন? ”

” কই তেমন কিছু না।নীলু আমি হোস্টেলে যাবো,প্লিজ আমায় আটকাস না ”

” আরেকটু থাক না দোস্ত ”

” প্লিজ নীলু,এরকম করলে কিন্তু আমি আর এই বাড়িতে আসবো না”

” আচ্ছা ঠিক আছে যাবি,এতো রাগের কি আছে।”

ছোট্ট ব্যাগটা নিয়ে নিচে নামলাম।আন্টি কয়েকবার থেকে যাওয়ার জন্য বললো,আমি পরিক্ষার অযুহাত দিয়ে বাসা থেকে বেড় হলাম।একটা রিকশাকে ডাকলাম।রিকশাওয়ালা এলেন।চুল ধবধবে সাদা। সামনে রিকশা দার করিয়ে বললেন

” আফা কই যাইবেন? ”

” ফার্মগেটে যাবেন? ”

কথাটা বলার সাথে সাথে বৃদ্ধ লোকটি আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলেন।কারনটা কি? বুঝলাম না।ওনাকে বললাম

” কি হলো মামা? এমনে কি দেখেন? যাবেন কি না সেটা বলেন”

” আফা এইটাই তো ফার্মগেট ”

মাথা চুলকাতে লাগলাম।আরেহ সত্যিই তো।আমিতো ফার্মগেটেই আছি।সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেছে।কিছু না বলে রিকশায় উঠলাম।কোথায় যাবো সেটাই মনে করতে পারছি না।রিকশা মামা কয়েকবার বললেন ” আফা কই যাইবেন?”। উত্তরে বললাম আপনি যান,আমি থাকতে বললে থামবেন।গন্তব্যহীন যাত্রা।

অন্য সময় হলে পার্কে বসে থাকা ছেলেমেয়েদের দেখলে বিরক্ত লাগতো,রিকশায় পাশাপাশি দুটো ছেলেমেয়ে গা ঘেঁ’ষে বসলে সেটা দেখে বিরক্ত লাগতো।কিন্তু এখন কেন জানি সেগুলি দেখতে ভিষন ভালোলাগছে।চোখ পড়লো একটা রিকশায়,হুট তুলে দিয়ে প্রেমিক প্রেমিকা যাচ্ছে।প্রেমিকার হাত প্রেমিকের কোলে।সেটা দেখে আমারো মনে হতে লাগলো,আচ্ছা আমার সাথে যদি এখন বিষন্ন থাকতো তাহলে কেমন হতো? ও কি যত্ন করে আমার হাতে হাত রেখে মুগ্ধ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো? নাকি পার্কে বসে থাকা প্রেমিক প্রেমিকার হাত ধরে যেমন করে হাটছে তেমনি করে হাটবে? ।হুট করে যদি আবদার করে বসি যে,ওই গাছটা থেকে কৃষ্ণচূড়া ফুলটা এনে দিবা?। তখন কি বিষন্ন ছুটে গিয়ে ফুল পেরে আমার চুলে গুঁজে দিবে?। রিকশা হঠাৎ থেমে গেলো।রিকশার সামনে একটা ছেলে।ছেলেটা চেক শার্ট পড়েছে,হাতা ফোল্ডিং করে কনুই পর্যন্ত গোটানো।ছেলেটা বললো

” পরী শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা? ”

ছেলেটার দিকে ভালোভাবে তাকালাম।ছেলেটাকে একটু চেনা চেনা লাগছে কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছি না।ছেলেটা আবারো বললো

” কি হলো চিনতে পারছেন না? ”

” না পারছি না ”

” ওই যে কাল রাতে পার্টিতে দেখা হলো,আেনি সিঁড়ি থেকে পড়তেই আমি ধরে ফেলি,”

” ওহহ হ্যা মনে পড়েছে ”

” কোথায় যাচ্ছেন আপনি? ”

” কোথাও না,এমনিই ঘুরছি,কোথায় যাবো মনে করতে পারছি না,তাই ঘোরা ”

” ওহ আচ্ছা। কফি খাবেন? ”

” না খাবো না।”

” প্লিজ চলুন, এখানকার একটা দোকানের কফি খুব সুন্দর হয় ”

অনেক রিকুয়েষ্ট করার পর ওনার সঙ্গে যেতে রাজি হলাম।কেন জানি আজকে কাউকে কষ্ট দিতে ইচ্ছে করছে না।অন্যদিন হলে এই ছেলেকে কড়া গলায় কথা বলতাম কিন্তু আজ বলতে পারছি না।কেন পারছি না? কি হয়েছে আমার? কালকের বিষন্নের স্পর্শের পর থেকে এমন কেন হচ্ছে আমার?।

” পরী, পরী ”

লোকটা আমার সামনে চেয়ারে বসা।হাত ইশারা করে ডাকছে।আমি বুঝতে পারছি না ছেলেটা কেন বারবার পরী পরী বলে ডাকছে।আমি বললাম

” বারবার পরী পরী করছেন কেন? আমার নাম মিষ্টি ”

” আপনার নাম মিষ্টি? তবে কাল যে বললেন পরী? ”

” পরী নাম বলেছি? ”

” হ্যা ”

” ভুলে বলেছি ”

” ভুল করে অন্য নাম বলেছেন? আচ্ছা বাদ দিন।আপনাকে খুব অন্যমনস্ক লাগছে ”

” কখনো প্রেমে পড়েছেন? ”

ছেলেটা লজ্জার ভঙ্গিতে বললো ” প্র…প্রেমে? হ্যা পড়েছি,কেন বলুন তো ”

” আমিও প্রেমে পড়েছি।পিচ্চি একটা ছেলের কথা আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।প্রেমে পড়লে কি এমন হয়? এই যে আপনি বসে আছেন, মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে আপনিই সেই পিচ্চিটা।এমনকি রিকশা মামা যখন বারবার পেছন তাকাচ্ছিলো তখনও মনে হচ্ছিল পিচ্চিটা রিকশা চালাচ্ছে। ”

ওখান থেকে উঠে আসলাম।আজকের দিনটা একদম অন্যরকম।কফি হাউজ থেকে বেড় হয়ে বিষন্নকে ফোন দিলাম। ওপাশ থেকে বললো

” তুমি নাকি চলে গেছো?আমায় বলে যাওনি কেন? ”

” বলবো সব বলবো,তুই কি এখন আসতে পারবি? ঠিকানা মেসেজে বলছি, চলে আয় ”

চলবে?#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ১৮
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

মিষ্টি হঠাৎ ফোন দিয়ে দেখা করার কথা বলছে? আমার বিশ্বাস’ই হচ্ছে না।ফোনটা রেখে একটা পাঞ্জাবি পড়লাম।ঘড়িটা হাতে পড়তে পড়তে বেড় হচ্ছি তখন’ই মা এসে উপস্থিত।মা বললো

” কিরে বিলু,কোথায় যাচ্ছিস? ”

” ব..বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি ”

” বন্ধুর সাথে? এই ভরদুপুরে পাঞ্জাবি পড়ে বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাবি? ”

” হ্যা মা,এতে সমস্যা কি? ”

” সমস্যা আছে,,সেই বন্ধুটা নিশ্চই মেয়ে, তাই না? ”

” মা তুমি কি যে বলো না,মেয়ে আসবে কোত্থেকে ”

” বন্ধুর সাথে দেখা করতে পাঞ্জাবি পরবি,আর আমি সেটা মেনে নিবো? সত্যি করে বল মেয়েটা কে ”

” মা আমি সত্যি বলছি, আমি এখন আসি।পরে বলবো ”

বলেই চলে এলাম।একটা রিক্সা নিলাম।রিক্সায় বসে বসে ভাবছি,আচ্ছা মা কিভাবে বুঝলো? এর আগেও তো পাঞ্জাবি পড়ে বেড় হয়েছি,তখন তো কিছু বলেনি।রিক্সা থামলো।ভাড়া দিয়ে পার্কে চলে আসলাম।

পার্কের একটা বেঞ্চে মিষ্টি বসে আছে।ওর হাতে দুইটা বেলুন।একটা কালো,অন্যটা সাদা।ওর পাশেই বসে আছি আমি।মিষ্টি ওর হাত আমার হাতের ওপর রাখলো।আমি কিছুটা অবাক হলাম।মিষ্টি বললো

” এতোক্ষণ লাগলো আসতে? ”

” কই এতোক্ষণ, ২০ মিনিট লেগেছে শুধু ”

” চল ”

বলেই আমার হাত ধরে টেনে তুলে হাঁটতে লাগলো।আমি বললাম

” কোথায় যাচ্ছো? ”

” গেলেই বুঝতে পারবি,হাত ধরেছি জন্য রাগ করিস নি তো? রাগ করলেও বা কি, তোর রাগের পরোয়া আমি করি নাকি? ”

আমি কিছু বললাম না।কি হয়েছে মিষ্টির? এমন তো কখনো করে না।ব্যাস্ত শহরে দু’জন পাশাপাশি হাটছি।মিষ্টি আমার হাত ধরে হাটছে।ওর হাতে সাদা বেলুন,আর আমার হাতে কালো বেলুন।মিষ্টি একটা রিকশা থামালো।রিকশায় উঠে এক হাত বাড়িয়ে দিলো আমার দিকে।আমি হাত ধরে রিকশায় উঠলাম।রিকশার হুট তুলে দিলো।যেমন চলছে চলুক না, ভালোই তো লাগছে।

মিষ্টি আমার বুকে মাথা রেখে বাচ্চাদের মতো চোখ বন্ধ করে আছে।এখনো আমার হাত ধরে আছে। এক মুহূর্তের জন্যও ছাড়লো না।মিষ্টি বললো

” এই একটা গান বলতো ”

” গা…গান?.কি বলছো, রিকশায় বসে গান বলবো?!

” হ্যা বলবি,আমি বলেছি তাই বলবি ”

” তুমি বললেই বলতে হবে নাকি? ”

” হ্যা বলতে হবে।তুই শুধু আমার কথা শুনবি।এখন একটা গান বল ”

” এখন গান বললে লোকে দেখলে হাসবে ”

” হাসুক,আমি তো হাসবো না।অন্যদের হাসিতে আমাদের কি আসে যায়?নে শুরু কর, ”

বেশ কিছুক্ষণ মাথা চুলকে একটা গান বললাম।রিকশাওয়ালা মামা বারবার পেছনে তাকাচ্ছেন।রাস্তার কি মানুষও আমাদের দিকে তাকাচ্ছিলো।

মিষ্টি হঠাৎ কেমন নড়েচড়ে বসলো।আমায় দেখে এমন একটা ভাব করলো যেন সে ভীত দেখে ফেলেছে।রিকশাওয়ালাকে রিকশা থামাতে বললো। রিকশা থামতেই প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি নেমে গেলো।আমি বললাম

” মিষ্টি কি হয়েছে? নেমে যাচ্ছো কেন? ”

মিষ্টি কিছু বললো না।রিকশা থেকে নেমে আরেকটা রিকশা নিলো।আমিও ওর পিছু নিলাম।মিষ্টি ওর হোস্টেলের সামনে রিকশা দার করালো।ছুটে চলে গেলো হোস্টেলে।লক্ষ্য করলাম যখন যাচ্ছিল তখন ওর চোখে জল ছিলো।হাতের উল্টে পিঠ দিয়ে জল মুছতে মুছতে ভেতরে চলে গেলো।কয়েকবার ফোন দেওয়ার পর ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।বিষয়টা কিছুতেই বুঝতে পারছি না,মিষ্টির হঠাৎ কি হলো?

পরেরদিন সকালে খাবার টেবিলে সবাই বসেছি ব্রেকফাস্ট করবো এমন সময় বাবা খবরের কাগজে মুখ গুজিয়ে রেখেই বললেন

” নীলু,”

নীলুপু বললো ” হ্যা বাবা ”

” মিষ্টির হোস্টেলে নাকি কাল রাতে একটা খু*ন হয়েছে।ফোন দিয়ে শুনো তো ”

বাবার কথায় যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।মিষ্টিরও তো কাল থেকে ফোন বন্ধ। রাতে ফোন দিয়েছি তখনও ফোন বন্ধ।আজ সকালেও কয়েকবার দিলাম, তখনও বন্ধ।

টেবিল থেকে উঠে বাইকের চাবিটা নিয়ে বেড় হলাম মিষ্টির হোস্টেলের দিকে।দশ মিনিটের মধ্যে হোস্টেলের সামনে পৌঁছালাম।হোস্টেলের সামনে বড় বড় দুটি পুলিশের গাড়ি দার করানো।হোস্টেলের সামনে বেশ কয়েকজন পুলিশ জটলা বেঁধে দারিয়ে আছে।বাইক স্টান্ড করে হোস্টেলের গেইের সামনে যেতেই দেখলাম তিনজন কনস্টেবল দারিয়ে চা খাচ্ছেন আর নিজেদের মধ্যে গল্প করছে।ওদের কাছে যেতেই ওদের একজন বললো

” এইহানে কি চাই? ”

” শুনলাম এই হোস্টেলে একটা খু*ন হয়েছে,আমি সেই বিষয়ে জানতে এসেছি,আপনারা যা জানেন সাফ সাফ বলুন ”

আমার কথা শুনে ওরা একে অপররের দিকে তাকাচ্ছে।মনে হচ্ছে আমার কথায় তারা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েছে।ওদের মধ্যে একজন বললো

” আপনেরে কেন বলবো? কে আপনে? ”

” আমি গোয়েন্দা বিভাগ থেকে এসেছি তদন্ত করতে।পুলিশ ঠিকঠাক কাজ করছে কি না সেটা দেখতে হবে।খু*ন বিষয়ে যা জানো বলো ”

ওরা বিষয়টা সত্যি সত্যি ভেবে নিয়েছে।তিনজন একসাথে স্যালুট করলো।একজন একটু নীচু স্বরে বললো

” ঘটনা এখনে তেমন জানা হয়নাই স্যার,ওসি স্যার তদন্ত করছেন। আপাতত জানতে পারছি দুইটা মেয়েরে রে*প করা হইছে।তাদের একজনকে রে*প করে ফ্যানের সাথে আ*টকে দিছে,আরেকটা মেয়ে এখন হসপিটালে।অবস্থা খুন খারাপ ”

” মেয়ে দুইটার নাম কি?”

” নামটা যেন কি,,ও হ্যা মনে পড়ছে।মাইয়া দুইটার নাম সিনথিয়া আর ইভা ”

” পো’স্টম’র্টেমের রিপোর্ট এসেছে? ”

” অহনো আসে নাই স্যার।গ্যাং রে*প স্যার,কয়েককন মিইললা একসাথে…..”

ওখান থেকে একটু সরে আসলাম।হোস্টেলে কিভাবে এটা হতে পারে?।আশেপাশের রুমের কেউ কিচ্ছু বুঝতে পারলো না?। মিষ্টিকে ফোন দেওয়ার জন্য ফোন বের করলাম।ফোন দিতেই মিষ্টি ফোন রিসিভ করলো।কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো

” হ্যা..হ্যালো ”

” কোথায় তুমি? কাল রাত থেকে ফোন বন্ধ করে রেখেছো কেন? ”

ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ ভেসে এলো।মিষ্টি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আচমকা এমন কান্নার শব্দে বু’কটা কেমন কেঁপে উঠলো।হ্যালো হ্যালো করছি কিন্তু মিষ্টি কিচ্ছু বলছে না,শুধু কেদেই চলেছে।এক পর্যায়ে ফোন কেটে গেলো।একটুপর মিষ্টি আবারে ফোন দিলো।ফোন রিসিভ করতেই

” হ্যালো বিষন্ন ”

কন্ঠ শুনে মনে হলো এটা তিশাপু।বললাম ” হ্যা,তওশা আপু,তোমরা ঠিক আছো? ”

” হ্যা ঠিক আছি।কিন্তু মিষ্টি ভয়ে অস্থির হয়ে গেছে ”

” আমি হোস্টেলের নিচে দারিয়ে আছি,মিষ্টিকে নিয়ে নিচে এসো ”

” আচ্ছা তুমি দারাও, আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি ”

ফোনটা পকেটে রাখতেই কেউ একজন তার হাত আমার কাঁধে রাখলো। পেছন ফিরতেই দেখলাম ওসি।ওসি হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো

” কি ব্যাপার বিষন্ন,তুমি এখানে? ”

” এখানে আমার কাজিন আছে,ওকে নিতে এসেছি ”

” এখন তো কোথাও নিয়ে যেতে পারবে না,ইনভেস্টিগেশন চলবে ”

” স্যার ও এই বিষয়টায় খুব ঘাবড়ে গেছে।একটু সময় দিন আমাদের ”

” আচ্ছা তুমি বলছো যখন তখন যাও,,তবে জিগ্যাসাবাদ করতে হবে ”

” ধন্যবাদ স্যার ”

তিশা মিষ্টিকে ধরে ধরে নিয়ে আসছে।মিষ্টিকে দেখে আমার কেমন যেন লাগছে।এইটুকু সময়কই কি অবস্থা হয়েছে।কান্না করতে করতে চোখ মুখ ফুলে গেছে।দূর থেকে আমায় দেখেই মিষ্টি আবারে কান্না শুরু করলো।ওর কাছে যেতেই জরিয়ে ধরে সে কি কান্না!।

পার্কের বেঞ্চে বসে আছি।বু’কে মাথা রেখে মিষ্টি সমানতালে কেদেই চলেছে, এতো শান্তনা দিচ্ছি কিছুতেই কান্না থামছে না।এমনকি কান্নার সাথে সাথে ওর পুরো শরীর কাঁপছে।তিশা বলল

” বিষন্ন জানো, কাল রাত থেকে এভাবে কেঁদেই চলেছে। কিছুতেই কান্না থামছে না।তুমি দেখো কান্না থামাতে পারো কি না,আমি কিছি খাবার নিয়ে আসি,কাল থেকে কিচ্ছু খায়নি মেয়েটা ”

তিশাপু চলে গেলো।মিষ্টির চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললাম

” এই মিষ্টি, আমার কথা একটু শুনো? ভয়ের কিছু নেই,আমি আছি তো,চোখ তোলো,তাকাও আমার দিকে,”

মিষ্টি তাকালো।চোখের জল মুছে দিয়ে বললাম

” এখনো ভয় পেয়ে আছো? ”

মিষ্টি মাথা নাড়লো।অর্থ এখনো ভয় পাচ্ছে।ওর হাতে হাত রেখে বললাম

” আমি আছি তোমার সাথে,,কোনে ভয় নেই, মনে করো কাল রাতে কিচ্ছু হয়নি।মানুষ জীবনে অনেক ভয়ঙ্কর ঘটনার সম্মুখীন হয় কি হয় না? আবার তো সেটা কাটিয়েও ওঠে তাই না? ”

মিষ্টি এখন কিছুটা স্বাভাবিক। একটু আগে এক স্লাইস রুচি আর এক কাপ চা খেয়েছে।তিশাপু বললো

” এই ঘটনা শোনার পর বাড়ি থেকে বলে দিয়েছে আমায় বাইরে রাখবে না ”

” মানে কি? তাহলে কোথায় রাখবে? ”

” বাড়িতেই রাখবে,শুধু পরিক্ষা দিতে আসবো।সম্ভবত বাবা কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে আমায় নিয়ে যাবে।তখন মিষ্টি একা একা কিভাবে থাকবে সেটাই ভাবছি ”

” তুমি চিন্তা করো না তিশাপু,,মিষ্টি আমাদের বাড়িতে থাকবে।নীলুপুর সাথে থাকবে ”

” তাহলে তো ভালোই হলো।তুমি ওকে একটু স্বাভাবিক করে তোলো।আমি হোস্টেলের দিকে যাই,দেখি কি হচ্ছে ”

তিশাপু চলে গেলো।মিষ্টি চুপ করে বসে আছে,দৃষ্টি স্থির।ওকে বললাম

” চলো ”

মিষ্টি আমার দিকে তাকিয়ে বললো ” কোথায়? ”

” আহা চলোই না,গেলেই দেখতে পাবে ”

মিষ্টিকে নিয়ে রিকশায় উঠলাম।একটু ঘোরাঘুরি করলে যদি মনের ভয় ভাবটা একটু কেটে যায়।পাশেই একটা দোকান থেকে ফুসকা খেলাম।সেখান থেকে চলে আসলাম নদীতে।নৌকা ভাড়া করলাম।নৌকায় শুধু মিষ্টি আর আমি।আমি বৈঠা দিয়ে নৌকা নিয়ে যাচ্ছি। মিষ্টি এখন বেশ স্বাভাবিক। টুকটাক কথা বলছে।কিছুক্ষণ আগে বললো

” তুই নৌকা চালাতে পারিস? ”

” না পারিনা,আজকেই প্রথম ”

” মানে কি? তাহলে একা একা মাঝ নদীতে নিয়ে এলি যে? ”

” কিভাবে যে চলে এলাম বুঝতে পারছি না।মনে হচ্ছে নৌকাটা উল্টে যাবে,তুমি সাঁতার পারো তো?!”

” উল্টে যাবে মানে? আমি একদম সাঁতার পারিনা,প্লিজ পাড়ে নিয়ে চল, আমার খুব ভয় করছে ”

” আমিও সাঁতার পারিনা, ভালোই হলো, ”

মিষ্টি তখন হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।ওর মুখটা দেখে খুব হাসি পাচ্ছিলো।বাচ্চাদের মতো ভয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ছিলো।ওকে ভয় দেখানোর কারন হলো একটা ভয়কে কাটানের জন্য মস্তিষ্ককে অন্য বিষয়ে ব্যাস্ত রাখতে হয়।এতে প্রথমের ভয়টা কেটে যায়।মিষ্টির ক্ষেত্রে বিষয়টা কাজে দিয়েছে।নৌকা ডুবে যাওয়ার বিষয়টা ও সত্যি সত্যিই বিশ্বাস করেছে।তাই বর্তমানের ভয়ের চাপে হোস্টেলে ঘটে যাওয়া ভয়টা এখন তার ম’স্তিষ্কে আর নেই।পাড়ে আসতেই হন্তদন্ত হয়ে মিষ্টি নামলো

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here