#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ২৬
🍂🍂🍂
জীবনে কি হচ্ছে কিছু জানা নেই শুভ্রতার। কেমন অনুভূতি হচ্ছে নিজেও জানে না। বাবার এমন রূপের সাথে পরিচিত হওয়ায় সে রাগ নাকি দুঃখী তাও ঠাওর করতে পারছে না। মা জানতে পারলে তাকে কি বলবে সে? মায়ের অগোচরেই যদি বাবা ফিরে আসে তবে আর মাকে জানাবে না সে। কিন্তু যদি না আসে? এসব চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। হটাৎ ই মিহি কণ্ঠে বলে উঠলো,
~আড়াল থেকে বেরিয়ে সামনে আসো রেনু আপা।
শুভ্রতার ডাকে রেনু কেপে উঠলো। সে যে এখানে তা শুভ্রতা টের পেলো কি করে? এখন নিশ্চই তার ওপরও রাগ ঝাড়বে সে? শুভ্রতার আবারো ডাক পড়তেই রেনু ধীর পায়ে ঘরে প্রবেশ করলো। শুভ্রতা আগের ন্যায় মাথা চেপে বিছানার এক কোণে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। রেনু সামনে এসে দাঁড়াতেই শুভ্রতা মাথা তুলে তাকালো। চোখজোড়া লাল হয়ে আছে। একটু আগে ঘুম থেকে উঠেছে বলে নাকি সে কান্না করতে চাইছে? শুভ্রতাকে কখনোই কান্না করতে দেখেনি সে। সবসময় হাসি মুখে নয়তো গম্ভীর। রেনু ভেবেই নিয়েছিল শুভ্রতাকে কাঁদতে দেখা আর ভর দুপুরে আকাশে তারা দেখা একই সমান। সেই শুভ্রতার চোখে আজ জল টলমল করছে। আবসারের জন্য মুহূর্তেই রেনুর মনে একরাশ ঘৃনা জন্মালো।
~সব কথা শুনেছো রেনু আপা?
রেনু মাথা নুয়ে চুপ রইলো। শুভ্রতা একটু হাসলো। রেনু আড়চোখে একবার দেখলো শুভ্রতাকে। মাথার চুল এলোমেলো, ঠোঁট জুড়ে মায়াময় হাসি, চোখজোড়া লাল হয়ে জল টলমল করছে যেনো পলক পড়লেই গাল গড়িয়ে পড়বে। শুভ্রতা ঠোঁট নাড়িয়ে ধীর কণ্ঠে বলল,
~যা শুনেছো নিজের মনের মাঝেই দাফন করে দাও রেনু আপা। এ তো আগুন যা আমাদের সংসার পুড়িয়ে ছারখার করে দিবে। তার আগেই এই আগুনে মাটি দাও রেনু আপা।
রেনু ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। শুভ্রতা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর প্রয়াস চালাচ্ছে। নিচ থেকে আবারো উমার ডাক পড়তেই শুভ্রতা উঠে দাড়ালো। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে চলে গেলো মায়ের কাছে।
________________________________
~তোর কি মন খারাপ?
মায়ের প্রশ্নে খাবার রেখে মাথা তুলে তাকালো শুভ্রতা। তড়িৎ গতিতে মাথা নাড়িয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে,
~মন খারাপ কেনো হবে?
~জানি না। মনে হলো তাই জিজ্ঞেস করলাম।
শুভ্রতা আবারো নাস্তা করায় মনোযোগ দিলো। এর মধ্যেই মামীর কল। শুভ্রতা প্রচন্ড বিরক্ত হলো। কল রিসিভ করে কানে রাখতেই মামীর উৎকণ্ঠা স্বর,
~শুভ্রতা কেমন আছিস? তোর মা কই? দে তো একটু কথা বলি।
শুভ্রতা চোখ মুখ কুচকে মায়ের দিকে ফোন এগিয়ে দিলো। তার মা এর ফোন থাকতেও মায়ের সাথে কথা বলার জন্য তার ফোনেই কেনো কল দেয় সবাই? মুখে খাবার নিয়ে মায়ের দিকে চোখ পিটপিট করে চাইলো। বেশ উৎফুল্ল হয়ে গল্পে মশগুল। উৎফুল্লতা দেখেই বুঝা গেলো ঘণ্টা কয়েকের আগে আজ আর ফোন ফেরত পাবে না সে। দ্রুত ভার্সিটি যেতে হবে। আজকের ক্লাসটা খুব জরুরী। না গেলে সমস্যা। শুভ্রতা সোফায় অনেকক্ষণ বসে অপেক্ষা করলো মা আর মামীর কথা শেষ হওয়ার। কিন্তু তাদের কথা শেষই হচ্ছে না। ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলো দেরি হয়ে যাচ্ছে। সে মাকে বলে ফোন না নিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। সন্ধ্যার মধ্যেই চলে আসবে। গল্পে মশগুল উমা আদৌ কি তার কথা শুনেছে কিনা কে জানে?
____________________________________
রাত বাজে ৭ টা কি ৮ টা। রাস্তায় দাড়িয়ে রিকশা খুঁজছে শুভ্রতা। ভার্সিটির পর পরই রিদিতার বাড়ি গিয়েছিল কিছু নোটস আনতে। গাড়িটাও আসার সময় আনেনি। পার্কিং করতে গেলে ক্লাসে দেরি হয়ে যেতো। রিকশা খুঁজতে খুঁজতে বেশ দূরে চলে এসেছে সে। ফোনটা আনলে বাড়িতে কল করে বলতো ড্রাইভার চাচা যেনো গাড়ি নিয়ে আসে। কিন্তু ফোন না আনায় চেয়েও কিছু করতে পারছে না। এদিকটা কেমন জনমানবশূন্য। আকাশেও মেঘ জমেছে। যখন তখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামতে পারে। শুভ্রতা দ্রুত পা চালালো, আরেকটু এগিয়ে গেলেই হয়তো রিকশার দেখা মিলবে। কিছুদূর আসতেই পা থেমে গেলো শুভ্রতার। সামনেই কিছু ছেলে দাড়িয়ে আছে। দুর থেকেই বুঝা গেলো এরা নেশা করে। তাদের মধ্যে একজনের নজর শুভ্রতার দিকে পড়তেই একে একে সবাই শুভ্রতার দিকে তাকালো। এই নজর যে কতটা বাজে তা বুঝতেই শুভ্রতার অন্তর আত্মা কেপে উঠলো।
~মামা! এইটা ওই মাইয়া ডা না?
~হ! অরেই তো কাইল ওই এমপির পোলার লগে রেস্টুরেন্টে দেখছিলাম।
ছেলেগুলো শুভ্রতার দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই শুভ্রতা পেছন ফিরে ছুট লাগালো। মনে স্মরণ করতে লাগলো আল্লাহকে। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে। ছেলেগুলো তার পেছনে পাগল কুকুরের ন্যায় ছুটছে। হাতের নাগালে পেলেই যেনো খুবলে খাবে তাকে। হঠাৎই একটা গাড়ি শুভ্রতার সামনে ব্রেক করলে শুভ্রতা ভয়ে দু হাতে চোখ মুখ চেপে দাড়িয়ে যায়।
~শুভ্রতা? ঠিক আছো তুমি?
পরিচিত কারো গলার স্বর শুনতে পেয়ে শুভ্রতা মুখ থেকে হাত নামালো। শুভ্রতার ক্রন্দনরত মুখখানা দেখতেই তার বুকটা ধক করে উঠলো। ঝাপসা চোখে দেখলো মুখে মাস্ক পরিহিত একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে। ছেলেটার চোখ দেখে শুভ্রতার চিনতে অসুবিধা হলো না সে চন্দ্র। চন্দ্রকে দেখতেই তার মনে কিছুটা স্বস্তি এলো। দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে ধরলো চন্দ্রকে। হুহু করে কেঁদে উঠলো। প্রচন্ড রকম ভয় পেয়েছে সে। ভয়ে এখনও থরথর কাপছে। সেই কম্পন চন্দ্র বেশ উপলব্ধি করতে পারছে। চন্দ্র কি হয়েছে প্রশ্ন করার আগেই দেখতে পেলো ৪/৫ জন ছেলে তাদের দিকে দৌড়ে আসছে। চন্দ্রের আর বুঝতে বাকি রইলো না শুভ্রতার ভয়ের কারণ।
~এই তুই কেডা? ভালোই ভালোই মাইয়াডা রে রাইখা যা গা। নাইলে কিন্তু বহুত খারাপ হইবো।
~এমপির ছোট পোলার প্রেমিকা রে পাইছি। ওইদিন এমপির দুই পোলায় আমগো অনেক মারছে। এর প্রতিশোধ আজকে তার প্রেমিকারে দিয়া নিমু।
~আজকে এইডা আমগো মাল। ওরে রাইখা চুপচাপ চইলা যা।
ছেলেগুলোর কথা শুনতেই চন্দ্রের রাগ তিরতির করে বেড়ে উঠলো। চন্দ্র তেড়ে যেতে নিলেই শুভ্রতা ভয়ে আরো শক্ত করে চন্দ্রকে জড়িয়ে ধরলো। চন্দ্রও স্বযত্নে তাকে দু হাতে আগলে নিলো। মুখের মাস্কটা খুলতেই ছেলেগুলোর মুখভঙ্গির পরিবর্তন ঘটলো। ভয় পেয়ে মাফ চাইতে লাগলো। হঠাৎই চন্দ্রের গাড়ির পেছনে কয়েকটা গাড়ি এসে থামলো। গাড়ি থেকে গার্ডস নামতেই ছেলেগুলো ভয়ে দৌড় দিলো। চন্দ্র দাম্ভিক কণ্ঠে বলে উঠলো,
~সবকটাকে আমি গোডাউনে চাই। একজনও পালিয়ে গেলে তোদের সব কটার গর্দান যাবে।
গার্ডগুলো ভয় পেয়ে ছেলেগুলোকে তাড়া করতে লাগলো। ওরা যেতেই চন্দ্র পরম যত্নে শুভ্রতার মাথায় হাত রাখতেই শুভ্রতা চন্দ্রের থেকে দূরে সরে আসে। চন্দ্র গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
~ফোন রেখে বাড়ির বাহিরে বের হওয়া মোটেও উচিত হয়নি তোমার শুভ্রতা। তোমার আম্মু কল দিয়ে বললো তুমি ফোন নিয়ে যাওনি। নুরের থেকে জানতে পারলাম তুমি রিদিতার বাসায়। ওখানে গিয়ে শুনলাম তুমি বাড়ি থেকে অনেকক্ষণ আগেই বেড়িয়েছো। বাড়ি না যাওয়ায় আমি কত টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম ধারণা আছে তোমার? আর যখন তোমাকে এই পরিস্থিতিতে দেখলাম তখন তো… আমি আরেকটু দেরিতে পৌঁছালে কি হতো ভাবতে পারছো?
শুভ্রতা ছলছল দৃষ্টিতে চন্দ্রের দিকে তাকালে চন্দ্র তপ্ত শ্বাস ফেললো। নরম কণ্ঠে বললো,
~গাড়িতে উঠো। বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি।
শুভ্রতা দ্রুত গাড়িতে উঠলো। মন থেকে ভয় এখনও কাটেনি। সারাটা রাস্তা চুপ রইলো দুজনে। চন্দ্র আড়চোখে বেশ কয়েকবার শুভ্রতার দিকে তাকিয়েছে তবে কিছু বলেনি। শুভ্রতা তাকে জড়িয়ে ধরে না রাখলে এতক্ষণে ওদের রাস্তায় পিটিয়ে মেরে ফেলতো। এই মেয়েটা তার দুর্বলতা কিনা। শুভ্রতা এমনিই ভয় পেয়ে ছিল। তার হিংস্র রূপ দেখে হয়তো আরো মিইয়ে যেতো। বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই চন্দ্র ভারী কণ্ঠে বললো,
~যাও বাসায় যাও।
শুভ্রতাকে যেতে না দেখে কপাল কুচকে তার দিকে তাকালো। শুভ্রতা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ধীর কণ্ঠে বললো,
~মাহতাব ভাইয়ার সাথে আমার কোনো প্রেমের সম্পর্ক নেই। আমি জরুরী এক কাজে তার সাথে ক্যাফেতে দেখা করতে গিয়েছিলাম। ওরা ভেবেছে আমি তার প্রে… প্রেমিকা।
~জানি আমি। সে তোমাকে আপন বোন মানে কারণ তুমি তাকে রক্ত দিয়েছো। তোমার সাথে তার রক্তের সম্পর্ক আছে এটা সারাবাড়িতে বলে বেড়ায়।
~আমাকে বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ।
চন্দ্রের তৎক্ষণাৎ জবাব এলো,
~আমি নিজের প্রিয় জিনিসে কারো হাত পছন্দ করি না।
শুভ্রতা চোখ পিটপিট করে তার দিকে চাইলো একবার। গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পায়ে বাড়ির ভেতর ঢুকতে নিলেই চন্দ্রের কথায় থেমে যায়,
~মাহতাবের সাথে তোমার রক্তের সম্পর্ক থাকলেও আমার সাথে নেই। আমি ওর মতো তোমাকে আপন বোন মানা তো দূরে থাক দূরসম্পর্কের বোনও মানতে পারবো না।
শুভ্রতা চন্দ্রের দিকে ঘুরে তাকালো। অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,
~কেনো?
চন্দ্র মুচকি হাসলো। জবাব না দিয়েই গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। শুভ্রতা ভাবুক দৃষ্টিতে চন্দ্রের যাওয়া দেখলো। পরক্ষনেই মুচকি হেসে বাড়ি ফিরে এলো। মা টেনশন করবে বলে কাউকে কিছুই বলে না।
____________________________________
“শুভ সকাল শুভ্রপরী,
কেমন আছো? ঠিক মতো ওষুধ আর খাবার খাচ্ছো? এত জ্বর বাঁধালে কি করে বলোতো। ইদানিং নিজের প্রতি এত অযত্ন হচ্ছে কেনো? শাশুড়ি মাকে বলো আমার বউয়ের খেয়াল রাখতে। নয়তো আমি তোমায় নিয়ে আসছি। যদি চাও আমি তোমায় তুলে নিয়ে আসি তবে আরো করো অযত্ন…।
ইতি
তোমার হবু বর”
সকালে ঘুম থেকে উঠেই এই চিরকুট পরে চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে শুভ্রতা। সামনেই লাজুক ভঙ্গিতে রেনু হাসছে। চিরকুটটা যেনো শুভ্রতার জন্য নয় বরং তার জন্যই এসেছে। আগে মাসে একটা চিরকুট আসতো আর আজ এসেছে মাসের মধ্যবর্তী সময়ে। ব্যাপারটা অদ্ভুত ঠেকলো শুভ্রতার কাছে। সেদিনের ঘটনার আজ তিনদিন। ভয়ে রাতে গা কাপানো জ্বর উঠেছিল। টানা দুদিন পর আজ জ্বর কমেছে তার। তবে দুর্বল ভাবটা যায়নি। ঘুম থেকে উঠতেই রেনু চিরকুট নিয়ে হাজির। সকালে নিউজপেপার এর সাথে পেয়েছে। বর্তমানে রেনুর উৎফুল্লতা দেখে তপ্ত শ্বাস ছাড়লো শুভ্রতা। দুর্বল কণ্ঠে বলল,
~এই মানুষটার প্রতি এত কি আগ্রহ তোমার রেনু আপা? আদৌ মানুষটা কে, কি তার পরিচয় তা তোমার বা আমার কারোই জানা নেই। মানুষটাকে নিয়ে তোমার এত আগ্রহ আমার ভালো লাগছে না।
রেনুর মন খারাপ হলো। স্নিগ্ধ মুখখানায় যেনো অমাবস্যা নেমে এলো ক্ষণিকের মধ্যেই। শুভ্রতা কিছু বললো না। যা বলেছে তাই যথেষ্ট। এতেই রেনুর ভাবনার পরিবর্তন ঘটবে। সে চায়না একটা অচেনা মানুষকে নিয়ে কেউ কোনো আগ্রহ রাখুক। সে নিজেও রাখে না। ওদের কথার মাঝে ঘরে প্রবেশ করলেন অনিকা। এসেই শুভ্রতার কপালে হাত রাখলেন।
~জ্বর কমেছে আলহামদুলিল্লাহ্। নাস্তা করেছিস?
শুভ্রতা মাথা নাড়াতেই তিনি রেগে গেলেন। ধমক দিয়ে বললেন,
~খাসনি মানে? বেলা কয়টা বাজে সেই খবর আছে?
রেনুকে ঝাড়ি দিয়ে বললো,
~হা করে দাড়িয়ে না থেকে দ্রুত নাস্তা নিয়ে আয়। সাথে তোর খালাম্মাকেও। এত বেলা হয়ে গেলো মেয়েকে নাস্তা করায়নি। কই থাকেন উনি?
শুভ্রতা শান্ত করার চেষ্টা করলো,
~আহহা! মামী! রেগে যাচ্ছেন কেনো? আমি মাত্রই ঘুম থেকে উঠেছি। আম্মু নাস্তা করতে ডেকেছিলো আমি উঠিনি। আপনি শান্ত হন।
অনিকা শান্ত হয়েও যেনো শান্ত হলেন না। রেনুকে তখনও দাড়িয়ে থাকতে দেখে পুনরায় ধমকে উঠত আগেই রেনু ছুটে গেলো উমার কাছে।
🍂🍂🍂
~হ্যা রে! আজ একটা দাওয়াত আছে। তুই কি যাবি? (অনিকা)
শুভ্রতা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
~কিসের দাওয়াত?
~অরণ্যের বেস্ট ফ্রেন্ড আহনাফ আছে না! তার বোন রাত্রির এনগেজমেন্ট আজ। আমাদের ইনভাইট করেছে। (উমা)
~তোমরা যাও। আমি যাচ্ছি না। (শুভ্রতা)
~সে কি! কেনো? ওরাতো পুরো পরিবার দাওয়াত দিয়েছে। (অনিকা)
~বেস্ট ফ্রেন্ড তো অরণ্য ভাইয়ার তাহলে আমাদের পরিবারকে দাওয়াত দিলো কেনো? (শুভ্রতা)
~তুই মাহতাবকে রক্ত দিয়ে সাহায্য করেছিলি তাই হয়তো। (উমা)
~সাহায্য আমি না নুর ওরা করেছে। আমি শুধু রক্ত দিয়েছি। এই সূত্রেই যদি দাওয়াত দিতো তবে আমাকে একা না বরং সবাইকেই দাওয়াত দেওয়ার কথা ছিল। (শুভ্রতা)
~উফ!!! এত কিছু জানি না বাপু। তুই যাবি কিনা সেটা বল। তোর মা বলেছে তুই না গেলে সেও যাবে না। তোরা না গেলে আমরাও যাচ্ছি না। (অনিকা)
~তো যেও না। বাসায় বসে সবাই চা, কফির আড্ডা বসাবো। দারুন মজা হবে। (শুভ্রতা)
অনিকার মুখখানা চুপসে গেলো। এই মেয়েকে কোনো ভাবে ব্ল্যাকমেইল করাই যায় না। সে শুভ্রতার কানে ফিসফিসিয়ে সত্যটা বলেই দিলো,
~আহনাফের মা আর তোর মা বেস্ট ফ্রেন্ড। বিয়ের পর দুজনের দেখা হয়ে উঠেনি না। সেদিন ফ্যামিলির ছবি দেখে আহনাফের মা জানতে পেরেছে। তিনি চাইছেন অনুষ্ঠানে নিয়ে সারপ্রাইজ দিতে। তুই না গেলে তোর মাও যাবে না বলে বেকে বসেছে। এমন করলে হয় বল দেখি!
শুভ্রতা মামীর সব কথা শুনলো। মা ওদের ফিসফিসানি দেখে চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে আছেন। শুভ্রতা নড়ে চড়ে বসলো,
~আচ্ছা আমি যাবো। তবে…
~আবার তবে? (অনিকা)
শুভ্রতা বাঁকা চোখে তাকাতেই উমা বললো,
~তবে কি?
~জামা সিলেক্ট করে দিতে হবে।
উমা হাসলেন। মেয়েটা এখনও ছোটবেলার মত কোথাও যেতে হলেই বলবে “জামা কোনটা পড়বো ঠিক করে দাও”। শুভ্রতার খাওয়ার মাঝেই তার বাবা এসে চেয়ার টেনে বসলো। আজ শুক্রবার হওয়ায় তিনি বাসায়ই রয়েছেন। বাবাকে দেখতেই শুভ্রতার মুখভঙ্গি কঠিন হয়ে এলো। কোনোমতে খাবার শেষ করে ঘরে চলে এলো।
~~~
চলবে~